ইনসাইড টক

‘স্বাস্থ্য মানেই শুধু চিকিৎসক না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১০ জুলাই, ২০২০


Thumbnail

‘আমরা বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটা আসলে প্রত্যাশিত নয়, এখানে আমাদের আসার কথা ছিলো না। আমরা যদি মার্চ-এপ্রিলে সঠিকভাবে সাধারণ ছুটি পালন করতাম তাহলে আজকে আমরা বিশ্বের অনেক দেশের মতো করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারতাম। যেকোন বাস্তবতায় আমরা সেটা করতে পারিনি। বর্তমানে আমাদের আক্রান্তের হার বাড়ছে এবং আমরা লকডাউন শিথিল করে সাধারণ জীবনযাত্রায় ফিরে আসছি। তাই এটা আমাদের জন্যে এই মুহুর্তে কিছুটা ঝুকিপূর্ণ। সামনে ঈদ আসছে এবং এই ঈদে আবার লোকজন গ্রামের বাড়িতে যাবে, ঈদকে কেন্দ্র করে কোরবানির হাঁটেও সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়বে। তাই এই মুহুর্তে আমরা খুব ভালো অবস্থানে নেই।’

বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় কথাগুলো বলছিলেন ফাউন্ডেশন ফর ডক্টরস সেইফটি, রাইটস অ্যান্ড রেসপনসিবিলিটিজ (এফডিএসআর)-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন। যিনি নর্দার্ন ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক হেলথ- এ অধ্যাপকের দায়িত্বও পালন করছেন।

বর্তমান করোনা পরিস্থিতির পেছনের কারণ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্যর্থতা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মহামারি ঠেকানোর জন্য জনসচেতনতা তৈরি করতে হয়। এর আগেও আমরা যতগুলো জনস্বাস্থ্যের সমস্যা নিয়ে কাজ করেছি, আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচী নিয়ে কাজ করেছি। এবারে কিন্তু আমরা সেই কাজগুলো দেখেনি। তৃণমূল পর্যন্ত কমিউনিটি সচেতনতা তৈরির জন্য অতীতে যে কর্মসূচীগুলো নেওয়া হয়েছে, করোনার ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু সেগুলো দেখিনি। আমরা অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিলাম ফেসবুক বা মোবাইল ফোনে একটা ক্ষুদে বার্তার উপরে, কিন্তু মানুষের আচরণ পরিবর্তন এবং জনসচেতনতা তৈরির জন্য যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচীগুলো নেওয়া উচিত সেগুলো যথাযথভাবে নেওয়া হয়নি। কাজেই স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে যদি ব্যর্থতার কথা বলেন তাহলে সেটা অবশ্যই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।’

ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন মনে করেন, ‘করোনা একটি বহুমাত্রিক সমস্যা। এটা শুধু স্বাস্থ্যগত সমস্যা নয়। এর সঙ্গে অর্থনীতি, রাজনীতি এবং সমাজনীতি জড়িত। যদি অর্থনৈতিক বিষয়গুলো দেখেন তাহলে আমি বলবো যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষতা এবং বিচক্ষনতার সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে সামাল দিয়েছে। এর সঙ্গে স্বাস্থ্যখাতকে ঠিকভাবে নিয়ন্ত্রন করতে পারলে এখন আমরা অনেক ভালো অবস্থানে থাকতাম।’

স্বাস্থ্যখাতকে আমরা স্বাস্থ্যখাত হিসেবে দেখিনি বলে তিনি বলেন যে, আমরা মনে করতাম চিকিৎসক মানেই স্বাস্থ্য, স্বাস্থ্য মানেই চিকিৎসক। এই চিকিৎসাকেন্দ্রিক যত সমস্যা ছিল সবাই অভিযোগের আঙ্গুল চিকিৎসকদের দিকেই তুলতো। কিন্তু আরো দুই যুগ আগে থেকে পৃথিবীতে ‘হেলথ সিস্টেম এপ্রোচ’ চালু হয়েছে। যেখানে প্রথমেই খুব জরুরী হলো যে একজন লিডার থাকবেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এবং গভর্নেন্সটা খুব জরুরী। নেতৃত্ব এবং সুশাসন হলো স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের প্রধান শর্ত। নেতৃত্ব যদি দক্ষ এবং স্বপ্নচারী না হয় তাহলে স্বাস্থ্যখাতকে বের করা কষ্টকর। এখানে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি যোগ করেন,‘স্বাস্থ্যখাতের ৬ টি কম্পোনেন্ট আছে। তাঁর মধ্যে একটি হলো ওয়ার্কফোর্স। এই ওয়ার্কফোর্সে হচ্ছে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাকি পাঁচটি কম্পোনেন্ট নিয়ে আমরা খুব কম কথা বলি। আমরা শুধু চিকিৎসকদের নিয়ে কথা বলি। সুতরাং স্বাস্থ্যখাতের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। আমাদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রিক যে দর্শন সেই দর্শনে একটি ঘাটতি রয়েছে। এই ঘাটতিটা দলগতভাবে সরকারের ভেতরেও রয়েছে। কারণ আপনি যদি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দেখেন, তাহলে সেখানে দেখবেন যে, শিক্ষা, ডিজিটালাইজেশন ইত্যাদি নিয়ে খুব বিস্তারিত লেখা আছে। কিন্তু স্বাস্থ্য নিয়ে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি নিয়ে মাত্র ১ পৃষ্ঠার মতো দায়সারা গোছের দিয়ে রেখেছে। অর্থাৎ আমরা স্বাস্থ্যখাতকে সিস্টেম হিসেবে কখনো অনুধাবন করতে পারেনি এবং এই সীমাবদ্ধতা আমাদের সবার। সেখান থেকেই স্বাস্থ্যখাতকে আমরা চিকিৎসক কেন্দ্রিক দেখি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিক না হয় তাহলে কিনতি দুর্নীতিসহ অন্যান্য বিষয় চলে আসে। যার সঙ্গে জড়িত সুশাসনও। এমনিভাবে আমরা স্বাস্থ্যখাতকে কখনো সামগ্রিকভাবে দেখিনি। এই সমস্যা কিন্তু নতুন নয়। শুধু করোনার কারণে এটা উন্মোচিত হয়েছে। এই সমস্যাটা শুধু আওয়ামী লীগ সরকারের নয়, এটা দশকের পর দশক থেকে বাড়তে বাড়তে আজ এই অবস্থায় এসেছে।’

সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্যখাতে অবাধ দুর্নীতির কারণ হিসেবে সুশাসনের ঘাটতিকে দায়ি করছেন ড. আবুল হাসনাৎ মিল্টন।  তিনি বলেন যে, অসংখ্য অধিদপ্তর থাকার পরেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মতো অগোছালো অধিদপ্তর আরেকটা পাওয়া যাবেনা। এখানে ব্যবস্থাপক হিসেবে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন অধ্যাপক বা চিকিৎসকদের। যারা হয়তো শিক্ষক ছিলেন। তাই তাঁদের তো ব্যবস্থাপনার দীর্ঘ যে প্রশিক্ষণ তা নেই। এজন্য আমরা বলি যে, স্বাস্থ্যখাতের ক্যাডারটাকে দুইভাগে ভাগ করা উচিত। একটি ক্লিনিক্যাল ক্যাডার, যারা রোগী দেখবেন, শিক্ষকতা করবেন। আরেকটি ব্যবস্থাপনা ক্যাডার। যারা এডমিনেস্ট্রশন দেখবেন, অধিদপ্তর চালাবেন, সিভিল সার্জন হবেন, উপজেলা হেলথ অফিসার হবে এবং জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিও দেখবেন। আমরা যদি এভাবে স্বাস্থ্যখাতকে দুইটি বা তিনটি ক্যাডারে ভাগ করতে পারি যেমন ক্লিনিক্যাল ক্যাডার, ব্যবস্থাপনা ক্যাডার এবং আরো বিস্তারিত করলে হেলথ এডুকেশন। অর্থাৎ আমাদের একটি ব্যবস্থাপক গ্রুপ চিকিৎসকদের ভেতর থেকে করতে হবে। আপনি যদি বাইরে থেকে কাউকে এনে এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে বসান তাহলেও সমস্যা। এটা তো খুব টেকনিক্যাল বিষয়, তাই বাইরে থেকে যত দক্ষ আমলাই আপনি নিয়ে আসুন না কেন, সে এটাকে ভালো বুঝতে পারবে না। কারণ এমন একজন ব্যবস্থাপক লাগবে যিনি টেকনিক্যাল বিষয়টিও বোঝেন।’

পাশের দেশ ভারতের তামিনাড়ুর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে, সেখানে এই পদ্ধতি খুব আগে থেকে চলে আসছে। চিকিৎসকরা যখন শুরুতে সরকারি চাকরিতে ঢোকে তখন তাঁরা দুটো ভাগে ঢোকে। এডমিন এবং অন্যটি ক্লিনিক্যাল সাইডে। সেক্ষেত্রে এই ম্যানেজমেন্টগুলো ভালো হয়। আর দুর্নীতি তো অনেক দিন যাবৎ আছে। এটা একটি শিল্পের পর্যায়ে চলে গেছে। আবার দুর্নীতি নিয়ে কিছু কিছু অতিকথনও রয়েছে। এখন এমন একটি অবস্থা হয়েছে যে, যা কিছু হয় আমরা দুর্নীতির কথাই ভাবি। দুর্নীতি আছে এবং কিছু কিছু সিন্ডিকেটের কথা যে আমরা শুনি তা আছে এবং তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটা ব্যবস্থাপনা, সুশাসনের ঘাটতি এর অন্যতম কারণ।’

বর্তমান করোনা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় হিসেবে তিনি বলেন, এখন আমাদের লকডাউন দেওয়ার মতো বাস্তবতা নেই। এখন আমাদের দরকার জনসচেতনতা বাড়ানো। একদম তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত জনসচেতনতা বাড়ানোর ক্যাম্পেইন করতে হবে। সেই ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য হবে যে, আমরা প্রতিটি মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করি। আমরা যদি নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে লকডাউন না করেও এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব। সেখানে কিছু ঝুঁকিও অবশ্য থাকবে। কিছু মানুষ অসুস্থ হবে এবং কিছু মানুষের হয়তো জটিল অবস্থা সৃষ্টি হবে, কিন্তু সবার আগে আমাদের নিজেদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। এই মুহুর্তে স্লোগান হবে, ‘নিজে বাঁচুন এবং অন্যকে বাঁচান’। অন্যান্য জনস্বাস্থ্যের সমস্যায় আমরা দেখেছি যে, একটি মসজিদের ইমাম, একজন শিক্ষক, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ইত্যাদি সোশ্যাল এলিটদের মাধ্যমে যদি তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি বাড়ি বাড়ি এই বার্তাটা পৌঁছে দিতে পারি, হাতে হাতে লিফলেট দেওয়া, বিলবোর্ডে ছেয়া ফেলা এবং নিশ্চিত করি যে সবাই যেন মাস্ক পরে, সামাজিক দুরত্ব নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। আরেকটি কর্মসূচী যেটা রাজনৈতিক দলগুলোর নেওয়া উচিত তা হলো বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ। কারণ মাস্ক নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিন চলতে হবে যতদিন না আমরা ভ্যাকসিন পাই বা একটি সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা পাই। তবে বর্তমান বাস্তবতায় আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে এবং অন্যান্য অসুখের মতো কোভিড-১৯ কে সাথে নিয়েই আমাদের চলতে হবে।’



মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘নতুন কারিকুলাম অনুসারে তীব্র তাপদাহেও স্কুল খোলা না রেখে উপায় নাই’

প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেছেন, এপ্রিল মাসে তীব্র তাপদাহ যাচ্ছে। এটা একটু কষ্টদায়ক বটে। তবে মে মাসেও তো আবহাওয়া এমন থাকবে এবং সে সময় প্রচন্ড গরম থাকবে। কিন্তু তাই বলে তো আর স্কুল, কলেজ বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এত লম্বা সময় ধরে বন্ধ রাখা যায় না।

দেশে চলমান তাপপ্রবাহের মধ্যে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। 

অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, আমাদের নতুন যে কারিকুলাম সেটা বাস্তবমুখী শিক্ষা। সে অনুযায়ী স্কুলে উপস্থিত থাকার বিষয়টি এখানে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্কুলে না গিয়ে শেখার উপায় নেই। এছাড়াও করোনার সময় এমনতেই আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় একটা বড় ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তাছাড়া কিছুদিন আগে ঈদের ছুটি, পয়লা বৈশাখের ছুটি সব মিলিয়ে একটা বড় সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই দেশের তাপমাত্রা কমে আসবে। এখন যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে সেজন্য আমরা মনিং স্কুল চালু করতে পারি। এখন হয়ত সকাল ৮টায় ক্লাস শুরু হয় সেখানে আমরা এখন থেকে সকাল ৭টায় ক্লাস শুরু করতে পারি এবং ১১ টার মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। যেমন, আজকে সকালে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ছিল। তাছাড়া দেশের সব জাগয়ায় তাপমাত্রা একই রকম না। যেমন সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহে তুলনামূলক তাপমাত্রা কম এবং এই অঞ্চলগুলো গত দুদিন ধরে বৃষ্টি হয়েছে। এরকম অবস্থায় স্কুল বন্ধ রাখলেও তো আবার তাদের জন্য ক্ষতি।

তীব্র তাপপ্রবাহের বাস্তবতা মেনে নিয়ে আমাদের পাঠ্যক্রম এগিয়ে নিতে হবে উল্লেখ্য করে অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান  বলেন, যেহেতু তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে সেজন্য আমরা কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে পারি। যেমন, এ সময় আমাদের স্কুলগুলোতে পযাপ্ত আলো-বাতাস বিশেষ করে এ সময় যেন লোডশেডিং না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। গ্রামের স্কুলগুলোতে যেন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ থাকে সে ব্যাপারে আমাদের বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি’

প্রকাশ: ০৪:০৫ পিএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, যারা দলের নির্দেশনা মানতে পারেননি, তারা তো না পারার দলে। দল থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না। এটা ছিল দলের বৃহত্তর স্বার্থে। সেজন্য সেটা পালন করা সবাই নৈতিক দায়িত্ব ছিল। কিন্তু যখন কেউ কেউ সেই নির্দেশ মান্য করেননি সেটার দায়-দায়িত্ব তাকেই বহন করতে হবে। দলের প্রতি তাদের কমিটমেন্ট নিয়ে আমার বড় প্রশ্ন রয়েছে।

কোন মন্ত্রী-এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনেরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন না—এমন নির্দেশনা থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি কোন কোন এমপির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনেরা। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতা করেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। পাঠকদের জন্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ। 

তিনি বলেন, দল করলে আপনাকে দলের সিদ্ধান্ত, গঠনতন্ত্র, শৃঙ্খলা ইত্যাদি বিষয়গুলো মানতেই হবে। সেটা না করলে আপনি রাজনীতিতে কখনও ভালো করতে পারবেন না। এটা শুধু রাজনীতিতে নয়, যে কোন সেক্টরে এটা প্রযোজ্য। আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন নির্দেশ দিলেন তখন সেটা অমান্য করার প্রশ্নই আসে না। এরপরও যারা দলের সিদ্ধান্তকে মানলেন না তাদের আদর্শ নিয়ে তো বড় প্রশ্ন আছে। কারণ নির্দেশ অমান্য করা দলের নীতি আদর্শের সাথে যায় না। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ তাদের মধ্যে কতটুকু আছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন। তবে এখনও সময় ফুরিয়ে যায়নি। যারা এখনও মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তাদের উচিত হবে অনতিবিলম্বে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া।

নির্দেশনা অমান্য করা ক্ষেত্রে দলের কৌশলের ভুল আছে কিনা বিশেষ করে এর আগে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে একাধিকবার বহিষ্কার করে আবার দলে ফিরিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে—এমন প্রশ্নের জবাবে বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, এটা থেকে যদি কেউ অনুপ্রাণিত হয় তাহলে তাদের রাজনৈতিক ভবিষ্যত ভালো হবে না এটা নিশ্চিত। আমি বলব তারা ভুল রাজনৈতিক কৌশল গ্রহণ করেছে। এরা অচিরেই রাজনীতিতে হারিয়ে যাবে। দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে বা গঠনতন্ত্র উপেক্ষা করে কেউই এখন পর্যন্ত রাজনীতির চরম শিখরে পৌঁছাতে পারেনি। বরং যিনি দলের প্রতি অবিচল থেকেছেন, দলের সিদ্ধান্তকে মান্য করেছেন, দলের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি তারা ধাপের ধাপে রাজনীতিতে উন্নতি করেছেন দেশের জন্য অবদান রাখতে পেরেছেন, জনগণের নেতাতে পরিণত হয়েছেন, রাজনীতিতে অমরত্ব লাভ করেছেন। কিন্তু যারা এর ব্যতিক্রম করেছেন তারা সেই স্বাদ পাননি।

তিনি আরও বলেন, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে কেউ হয়তো সাময়িক ভাবে লাভবান হতে পারেন কিন্তু একটা সময়ের পর রাজনীতিতে থেকে জীবনের জন্য হারিয়েছে যাবেন। রাজনীতিতে তারা অপাঙ্ক্তেয় হয়ে পড়বেন। জনগণের কাছে তাদের মযার্দার আসন হারাবেন, জনগণ দ্বারা প্রত্যাখান হবেন। কেউ যদি সে পথে পা বাড়ান সেটার দায়-দায়িত্ব তার নিজের।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ত্যাগী কর্মীদের অনুপ্রাণিত করেছে’

প্রকাশ: ০৫:০৩ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে স্বজনদের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এর মধ্য দিয়ে একটি স্পষ্ট হয়েছে যে, রাজনীতির মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রীর উত্থান হয়েছে এবং তিনি যে দল ও ত্যাগী নেতাদের ভালোবাসেন, তাদের প্রতি যে তার মমত্ববোধ সেটি প্রকাশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই সিদ্ধান্তের কারণে দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা রাজনীতিতে নতুন আলোর সঞ্চার দেখছেন এবং তারা নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন যে, রাজনীতি রাজনীতিবিদদের কাছেই থাকবে।

আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশের যৌক্তিকতা এবং দলের অবস্থান সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে আলাপচারিতায় জাহাঙ্গীর কবির নানক এসব কথা বলেন।

আওয়ামী লীগের অনেকে আছেন যারা উত্তরাধিকারে সূত্রে রাজনীতিতে এসেছেন এবং তারা স্ব স্ব অবস্থানে ভালো অবদান রাখছেন তাহলে এখন কেন আওয়ামী লীগ এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিলো—এমন প্রশ্নের উত্তরে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, রাজনীতির বিষয়টি ধন-সম্পদের মত বিষয় নয়। কোন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান উপজেলা নির্বাচন করছে সেটা নিয়ে কোন প্রশ্ন নেই। যিনি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করছেন বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন তিনি নির্বাচন করতেই পারেন। নির্বাচন করা তার অধিকার। কিন্তু বাস্তবতা হলো কোন কোন এমপি বা মন্ত্রীর সন্তান কিংবা স্বজনেরা সরাসরি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থাকলেও তাদের সন্তান, শ্যালক, ভাগ্নে বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের নির্বাচনে দাঁড় করানো হয়েছে। অথচ তিনি হয়তো কোনদিনই একবারের জন্যেও জয় বাংলা স্লোগান দেননি কিংবা দলের প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করেননি। এরকম যাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতাকর্মীদের ক্ষোভ। উত্তরাধিকার সূত্রে রাজনীতি করা বা আসা সেটা মূখ্য নিষয় নয়। কারও পরিবারতন্ত্রের কারণে যেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত না হন সেটার জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা। 

কোন কোন উপজেলায় এমপিরা একক প্রার্থী ঘোষণা করেছেন সেটি দলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, এটি অবশ্যই সাংঘর্ষিক। কারণ উপজেলা নির্বাচনে দল থেকে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি যে সিদ্ধান্ত বা নির্দেশনা দিয়েছেন সেটি অমান্য করার কোন প্রশ্নই আসে না। কারও অধিকারও নেই এই নির্দেশ অমান্য করার। এমনকি এ ধরনের মনোবৃত্তি দেখানোরও কোন সুযোগ নেই। আমি মনে করি যিনি নেত্রীর সিদ্ধান্তকে অনুসরণ করবে না তিনি এই দলের জন্য কোন ভাবেই মঙ্গলজনক হতে পারে না।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘কেউ হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দ্রুত ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে’

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেছেন, কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে তাকে যত দ্রুত সম্ভব ছায়াযুক্ত স্থানে নিতে হবে। ঘরে থাকলে ফ্যান ও এসি চালু করে তাকে ঠান্ডা স্থানে রাখতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। বেশি বেশি পানি, ফলের জুস পান করাতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির প্রেশার কমে যাওয়া, প্রস্রাব বন্ধ, পালস কমে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে গেলে দ্রুত আক্রান্ত ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

গত কয়েক দিন ধরে সারা দেশের ওপর বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপদাহ। আবহাওয়া নিয়ে সহসাই কোনো সুসংবাদ নেই। এরকম তাপদাহ আগামীতে আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ রকম এক অস্বস্তির মধ্যে কীভাবে নারী পুরুষ, বৃদ্ধ, শিশু কিশোর সুস্থ্ থাকতে পারে সে ব্যাপারে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, রোদে যারা কাজ করেন, তাদের একটানা দীর্ঘক্ষণ রোদে কাজ করা যাবে না। এতে মাথাব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যা থেকে হিটস্ট্রোক হয়। হিটস্ট্রোক হলে যে কেউ মারাও যেতে পারেন। হিট স্ট্রোকের মূল ঝুঁকি মূলত যারা অনেকক্ষণ রোদে কাজ করে তাদের। মানব দেহে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রচণ্ড গরমে মানুষের শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে প্রবল। এ অবস্থায় শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হয়। শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে ১০৫-এর উপর উঠলে ঘাম হয় না, মাথা ব্যথা, অস্থিরতা, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ হয়। এক সময় অজ্ঞান হওয়ার মতো অবস্থা হয়, অজ্ঞানও হয়ে যায় অনেকে। এটি বিপজ্জনক। এটি খুবই সিরিয়াস, সাথে সাথে চিকিৎসা না দিলে রোগী মারাও যেতে পারে। 

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, দেশে বর্তমানে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে গেছে। এ তাপমাত্রা শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। এখন সুস্থ থাকতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। অপ্রোয়জনে একদম বাইরে ঘোরাঘুরি করা যাবে না। যারা কাজের জন্য বাইরে থাকেন, তাদের ছাতা ব্যবহার বা মাথায় কাপড় দিতে হবে। কাজের ফাঁকে এক-দুই ঘণ্টা পর পর ১০-১৫ মিনিটের জন্য ছায়াযুক্ত স্থানে বসবেন। একটানা রোদের মধ্যে থাকা যাবে না। লবণ মিশ্রিত পানি খেলে ভালো হয়, স্যালাইন খেতে পারেন। ডিহাইড্রেশন যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

আরেকটা জরুরী বিষয় হলো, ঢিলেঢালা কাপড় পরতে হবে। জিন্স না পরাই ভালো। 

বয়স্ক এবং যারা ডায়বেটিস, কিডনিসহ বিভিন্ন ক্রনিক রোগে ভোগেন, তাদের জন্য ঝুঁকিটা বেশি। তারা অপ্রয়োজনে বাইরে যাবেন না। 

শিশুদের বিষয়ে ডা. আবদুল্লাহ বলেন, গরমে বাচ্চাদের জন্যও ঝুঁকি বেশি। এখন স্কুল বন্ধ তাই বাচ্চাদের বাইরে বের না করাই ভালো। বাচ্চাদের বেশি বেশি পানি খাওয়াতে হবে। তারা যেন রোদের মধ্যে অনেক বেশি দৌড়ঝাঁপ না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, হিট স্ট্রোকের পাশাপাশি গরমে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জন্ডিস বাড়ছে। অ্যাজমা, হাঁপানি যাদের আছে, গরমের কারণে তাদের শ্বাসকষ্ট ওঠানামা করছে। তাদেরও সতর্ক থাকতে হবে।

পানিশূন্যতা গরমে সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ্য করে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এই অধ্যাপক বলেন, এই গরমে পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। ওরাল স্যালাইন খাওয়া ভালো। এছাড়া পানিতে লবন মিশিয়েও খাওয়া যাবে। তবে রাস্তায় বিক্রি হওয়া লেবু পানি, আখের জুস খাওয়া যাবে না। অস্বাস্থ্যকর, বাসি কোনো খাবারও পরিহার করতে হবে। শিশু ও বয়স্কদের যতটা সম্ভব ঘরে রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, শিশু, নারী ও বয়স্কদের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এসব রোগীর হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড টক

‘বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রশাসনের এখতিয়ারে নেই’

প্রকাশ: ০৪:১১ পিএম, ০১ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না বলেছেন, বুয়েটে শুধু ছাত্রলীগ ছাত্ররাজনীতি চায় না। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোও তো ছাত্ররাজনীতি চায়। তাহলে কেন শুধু এখন সামনে ছাত্রলীগের নাম সামনে আসছে। বুয়েটে যারা ছাত্ররাজনীতি চাচ্ছে তাদের প্রথম পরিচয় তারা বুয়েটের ছাত্র। আর বুয়েট কর্তৃপক্ষ যেটা করেছে যে, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করেছে, এটা বুয়েট প্রশাসন করতে পারে না। তাদের এখতিয়ার নেই। দেশের প্রচলিত মৌলিক আইন যেখানে আমাকে অধিকার দিয়েছে বুয়েট সেটা নিষিদ্ধ করতে পারে না। আইনে বলা হয়েছে, দেশের প্রচলিত আইন এবং নিয়মের মধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালিত হবে। সেখানে বুয়েট তো বাংলাদেশের বাইরের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়। দেশের নিয়মেই তো বুয়েট চলার কথা। কিন্তু সেখানে বুয়েট প্রশাসন কীভাবে আমার মৌলিক অধিকার রহিত করে? আমার ক্যাম্পাসে আমি মুক্ত চিন্তায় ঘুরবো, আমি কথা বলবো, আমি স্লোগান দিবো, আমি বক্তৃতা দিবো, আমি পড়াশুনা করবো। এটা থেকে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কীভাবে আমাকে বঞ্চিত করতে পারে।

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ এবং ছাত্ররাজনীতি আবার ফিরিয়ে আনার প্রসঙ্গে নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ইসহাক আলী খান পান্না এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য ইসহাক আলী খান পান্না এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।

ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, যারা প্রগতির কথা বলেন না, মৌলবাদ বা জঙ্গিবাদের কথা চিন্তা করে তারাই তো আজ ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে চায়। আপনি দেখেন, একটি জলালয়ে যদি পানির কোন ঢেউ না হয়, সেটা যদি কোন কারণে ব্যবহার না হয় তাহলে সেখানে মশা মাছি আর্বজনা জন্মায়। সেখানে থেকে এক সময় দুর্গন্ধ ছাড়ায়। ঠিক তেমনি ভাবে বুয়েটে যদি আপনি মুক্ত চিন্তার চর্চা না করতে দেন তাহলে এর অন্তরালে মৌলবাদী শক্তির উত্থান ঘটবে, ধর্মান্ধের উত্থান ঘটবে। যারা স্বাধীনতাকে এখনও মেনে নেননি আপনি তাদেরকে শক্তিশালী করবেন। অথচ প্রগতির কথা যারা বলে সেটা  ছাত্রলীগ হোক কিংবা ছাত্র ইউনিয়ন হোক এমনকি ছাত্রদলও যদি হয় তাহলে তারা সেখানে কথা বলতে পারবে না কেন।

তিনি বলেন, আপনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা পড়াশুনা করেছি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ছাত্ররাজনীতি করেছি, এই ক্যাম্পাসে আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলেছি, স্বাধীনতার কথা বলেছি, গণতন্ত্রের কথা বলেছি, স্বৈর শাসকের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। সেখানে শিবির কোন দিন স্লোগান মিছিল কিছু পরিচালনা করতে পারেনি, করেনি। তারা বুয়েট এবং ঢাকা মেডিকেলে তাদের কার্যক্রম করেছে। একই ভাবে সেই বুয়েটে এখনও তাদের কর্মকাণ্ড চলে। আর ছাত্রলীগ সহ অন্যান্য সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড চলবে না সেটা তো হতে পারে না। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আপনার শুধু ছাত্রলীগ টার্গেট কেন? ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা ছাত্ররাজনীতি করে তারাও তো বুয়েটের ছাত্রছাত্রী। তাহলে বুয়েটের শিক্ষার্থীদেরও তো কথা বলার অধিকার রয়েছে, তারও হলে থাকার অধিকার রয়েছে। তাহলে কেন আপনি তাকে এসব থেকে বঞ্চিত করছেন। বাংলাদেশের সকল অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক, স্বৈরচারী মনোভাবের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগ সব সময় কথা বলেছে। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। এখন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং তার নির্দেশে বাংলাদেশে স্বৈর শাসনের পতন, মৌলবাদের পতন এবং সকল আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে ছাত্রলীগ। সেই ছাত্রলীগ বুয়েটে মৌলবাদের যে চর্চা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলেছে। সুতরাং এবং অবশ্যই সেটা সঠিক করেছে। অনতিবিলম্বে বুয়েটের সকল ছাত্রছাত্রীদের সবার মুক্ত বিচরণের সুযোগ করে দেয়া দরকার। তারা যেন প্রগতির কথা বলতে পারে, মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে পারে, গণতন্ত্রের কথা বলতে পারে সেই পরিবেশ তাদের দিতে হবে। এখন বুয়েটকে নিয়ে যে খেলা চলছে প্রকারন্তে বাংলাদেশে এরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পালন করছে। এটা হতে পারে না। আপনি বুয়েট কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেন আমাদের স্বাধীনতা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা বৈশাখ, বুদ্ধিজীবী দিবস তারা এগুলো পালন করে কিনা। এগুলো অবশ্যই তাদের করতে হবে। বুয়েট স্বাধীনতা বাংলা ভূখন্ডে বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান না। অতএব ছাত্রলীগ যে দাবি তুলেছে বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হবে এটা যুক্তি যুক্ত।

সাবেক ছাত্রলীগ এই নেতা বলেন, বুয়েটে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলোর আমরা অবশ্যই নিন্দা জানাই। এর সঙ্গে যারা জড়িত আইনের মাধ্যমে তাদের বিচার হবে, একাডেমিক কাউন্সিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কিন্তু ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করে বুয়েটকে অন্ধকারে রেখে মৌলবাদী শক্তিকে পৃষ্টপোষকতা করার কোন সুযোগ নাই বুয়েট কর্তৃপক্ষের। অনতিবিলম্বে এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে বুয়েটকে সকলের জন্য উন্মূক্ত এবং সুন্দর একটি পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।

দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ব্যানারে যারা অপকর্ম করেছে তাদের দায় সংগঠন নিবে না উল্লেখ্য করে ইসহাক আলী খান পান্না বলেন, কোন ব্যক্তি, কোন ছাত্র যদি কোন ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হয়ে থাকে এটা তার ব্যক্তিগত অপরাধ। কারণ ছাত্রলীগ কোন ধরনের অপরাধকেই সমর্থন করে না। যারা ইতোমধ্যে কোন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়েয়ে সংগঠন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। সুতরাং এগুলোকে অজুহাত দেখিয়ে রাজনীতি বন্ধ করা যাবে না। 



মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন