ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, সব দেশেরই প্রতিরক্ষার বিষয়ে কোন একটা দেশের উপর নির্ভরশীল হতে চায় না। বিশেষ করে যেসব দেশ অস্ত্র নিজে উৎপাদন করে না, বাহির থেকে যারা নেয়। যেহেতু আমরা বড় আকারে অস্ত্র উৎপাদন করি না এবং সেই ধরণের অস্ত্রের গবেষণাও আমাদের দেশে এখনো হয়নি। তো আমরা বাহির থেকে কিনি। সে হিসাবে একটা দেশের উপর সব অস্ত্রের নির্ভরশীল হওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। কোন সন্দেহ নেই, আমাদের এখন যত বেশি পার্টনার হবে তত এটা সুবিধা।
স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত ‘জলবায়ু পরিবর্তন শীর্ষ সম্মেলন কপ-২৬’ এ বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলন শেষে ফ্রান্সের সঙ্গে হওয়া তিনটি চুক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীর সফরের ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কেমন হবে এইসব বিষয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।
অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, তবে দ্বিতীয়টা হলো এই যেটা আরো গুরুত্বপূর্ণ যে, যতটা না আমরা আগ্রহী এ ব্যাপারে তার চেয়ে ফ্রান্স আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এমনকি এর আগে ইউকেও নৌ-জাহাজ দিতে চেয়েছিল, যদিও আমরা ওটা আপাতত একসেপ্ট করিনি। অন্য দেশগুলো বাংলাদেশকে এ ব্যাপারে সাহায্য বা লোন দেয়ার ব্যাপার, এক ধরণের টেকনোলজি ট্রান্সফারে তারা আগ্রহী। এর একটা বড় কারণ হলো যে, বাংলাদেশের অর্থনীতি যেহেতু মোটামুটি একটা ভালো অবস্থায় এসেছে এবং অনেকেই মনে করেন যে ভবিষ্যতে একটা ভালো ট্র্যাক যেহেতু আছে সেখানে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা আরো বাড়বে এতে কোন সন্দেহ নেই। যেকোনো দেশ যত বেশি তার ডেভেলপমেন্ট হয়, তার প্রতিরক্ষাও সেইভাবে বাড়ে।
ফ্রান্সের আগ্রহটা বেশি হওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি মনে করি যে, যেহেতু সে কিছুদিন আগে অনেকটা হোঁচট খেয়েছে যে, আমেরিকা, ইউকে এবং অস্ট্রেলিয়া -এই তিন দেশ যেভাবে একত্রিত হয়েছে ফ্রান্সকে বাদ দিয়ে এবং ফ্রান্সের যে চুক্তি ছিলো অস্ট্রেলিয়ার সাথে সেটাও বাদ পড়েছে। এই হোঁচট খাওয়ার ফলে যেটা হয়েছে, ফ্রান্সও চাইবে সরাসরি এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক করার। কারণ, সে বুঝতে পেরেছে যে আমেরিকা অত নির্ভরশীল না এবং বিশেষ করে আমেরিকা, ইউকে এবং অস্ট্রেলিয়া -এই তিন দেশ এক হওয়ায় ফ্রান্স ভালো করে বুঝতে পেরেছে এটা ইংরেজি ভাষার তিনটা রাষ্ট্র এক হয়েছে। সেখানে তার মধ্যে স্বাভাবিকভাবে এক ধরণের চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক যেটা হয়তো ইতিহাসেও এক সময় ছিলো। তো ওই হোঁচট খাওয়ার ফলে ফ্রান্সও চাইবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক করা এবং এশিয়ায় একটা উপস্থিতি যেন থাকে, সেটা যেন আমেরিকার মাধ্যমে যেন না হয় বা অন্য দেশের মাধ্যমে যেন না হয়। সে হিসবেও তারা মনে করে যে, বাংলাদেশের সাথে, যেহেতু বাংলাদেশের একটা জিও পলিটিকাল ইম্পোর্ট্যান্স দিন দিন বাড়ছে, সে হিসেবে তার সাথে যদি একটা প্রতিরক্ষার সম্পর্ক করতে পারে তাহলে তার দিক থেকে তার যে জাতীয় স্বার্থ সেটাও রক্ষা হলো। তো সব মিলিয়ে আমি মনে করি যে এটা একটা ভালো জিনিস। কারণ, কোন একটা দেশের উপর এককভাবে নির্ভরশীল হওয়াটা প্রতিরক্ষার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তো সেই যায়গা থেকে আমি মনে করি একটা পজিটিভ স্টেপ।
ফ্রান্সের সঙ্গে প্রতিরক্ষা চুক্তির ফলে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নে অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ফ্রান্সের সাথে চীনের কোন দ্বন্দ্ব নেই। যেই দ্বন্দ্ব আছে আমেরিকা, ব্রিটেনের সাথে। এখন অস্ট্রেলিয়াও হয়তো ঢুকেছে। ফ্রান্স বা ইউরোপের সাথে বড় আকারে চীনের সঙ্গে সেই রকম কোন কম্পিটিশন না। মনে রাখতে হবে যে অস্ত্রের বিভিন্ন দিক থাকে। তো সেই হিসেবে ফ্রান্স থেকে যেটা আনা হবে সেটা আনলেই যে চীন চিন্তিত হয়ে যাবে এমন নয়। কারণ আমাদের ফরেন পলিসি কখনোই একটা দেশের সাথে অন্য দেশের মিলাই না। তো চীনের বন্ধু যারা চীনের বন্ধু, চীনের শত্রু যারা চীনের শত্রু। এমনকি ফ্রান্সের শত্রু ফ্রান্সের শত্রু, তারা বাংলাদেশের শত্রু না। তো সেই হিসেবে আমার মনে হয়না যে এখানে চীনের চিন্তার কোন কারণ আছে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এবং বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশীদ বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। আমি এর কোনো সম্ভাবনা দেখি না। কারণ রাজনৈতিক দলগুলোর যে সন্দেহের প্রাচীর তৈরি হয়েছে তাতে সে সম্ভাবনা নেই। তবে এক দফা আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল শেষ চেষ্টা হিসেবে তফসিল পেছানোর জন্য তৎপরতা চালাতে পারে। কিন্তু তফসিল পেছানোর নামে যদি আবার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে কেউ প্রশ্ন বিদ্ধ করে ফেলে তাহলে আরেকটা অরাজকতার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। কাজেই নির্বাচন কমিশন এবং সরকারকে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। নির্বাচনী রোডম্যাপ বিপন্ন হয় এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। তবে তফসিল পেছানোর সম্ভাবনা দেখি না।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেছেন, সরকার এবং নির্বাচন কমিশন যদি জনমত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচনের দিকে যায় তাহলে চলমান যে সংঘাতময় পরিবেশ চলছে সেটাকে আরও উস্কে দেওয়া হবে। সেটা সাধারণ জনগণের জন্যও ভালো হবে না, সরকারের জন্যও ভালো হবে না। দেশের সাধারণ মানুষ এখন একটা সংকটের মধ্যে আছে। দ্রব্যমূল বৃদ্ধি সহ দুর্নীতি, লুটপাট, অব্যবস্থাপনা আগামীতে অর্থনৈতিক সংকটকে আরও তীব্রতর করতে পারে এমন আভাস অর্থনীতিবিদরা দিচ্ছেন। এ রকম পরিস্থিতিতে জনমত উপক্ষো করে এবং নির্বাচন কমিশনের কোনো কর্মকাণ্ড যেমন গ্রহণযোগ্য হবে তেমনি আমাদের দেশের সংকটকে আরও বাড়িয়ে দেবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের ‘টু প্লাস টু’ বৈঠকে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, যেভাবে আমেরিকা চাচ্ছিল যে বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতও যেন আমেরিকার সাথে একই সুরে কথা বলে কিন্তু সেটা যে হবে না তা পরিষ্কার হয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারত যে আমেরিকার কথা শুনবে না সেটি তারা স্পষ্ট করেছে। এখন আমেরিকা কি করবে সেটা তারা ভালো জানে। তবে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আমেরিকা সারা বিশ্বের মধ্যে প্রচন্ড সমালোচনার মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে ইসরায়েল ইস্যুতে তারা প্রচন্ড প্রতিরোধের মুখে পড়েছে। আমেরিকা তার নিজ দেশেই প্রতিরোধের মুখে পড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেছেন, অনেক দিন ধরে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছিল। রাস্তা-ঘাট বন্ধ না করে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছিল। সাধারণত নির্বাচনের আগ দিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ে। নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কি করবে না করবে, নির্বাচনী ইশতেহার কেমন হবে ইত্যাদি। কিন্তু রাস্তা-ঘাট বন্ধ করে দিয়ে হরতাল-অবরোধ করা কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর উচিত না।