ইনসাইড থট

গুরুর সব ভালো, গুরুই ভগবান

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ৩১ জানুয়ারী, ২০২২


Thumbnail গুরুর সব ভালো, গুরুই ভগবান

বাংলায় গুরুশিষ্যের পরম্পরা। গুরু যতই অন্যায়-অনাচার করুক, শিষ্যরা মুখ বুজে মেনে নেয়। তারা মৃত্যুকে বরণ করে নেবে, কিন্তু গুরুর দোষ ধরিয়ে দেবে না। গুরু কোনও দোষ করতে পারে না, গুরুর সব ভালো, গুরুই ভগবান। এভাবেই শিষ্যদের মগজধোলাই হয়। এ কারণেই পীর আর বাবার ছড়াছড়ি বাংলায়। শিষ্যরা ঠকে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়, তারপরও টনক নড়ে না।

শুধু ধর্মগুরু নয়, এ অঞ্চলে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীগুরুও আছে। ধনী আর বিখ্যাত লোকদেরও গুরু মানা হয়। তাদেরও একই রকম পুজো করা হয়, ভগবানকে যেমন করা হয়। তাদেরও সাত খুন মাফ করে দেওয়া হয়। সারা পৃথিবীতে মীটু আন্দোলনের জালে অনেকে ধরা পড়লেও, এই বাংলায় গুরু সম্প্রদায়ের ধর্ষক আর যৌনহেনস্থাকারিরা বহাল তবিয়তে বাস করতে পারে।

আপাদমস্তক বদমাশ লোকেরাও ভালো কবিতা লিখতে পারে, নাটক লিখতে পারে, অভিনয় করতে পারে, গান গাইতে পারে, ছবি আঁকতে পারে। মুশকিল হলো, সুমনগুরু খিস্তি করলেও শিষ্যদের কানে তা মধুর শোনায়, যেহেতু এককালে তিনি ভালো গান করতেন। সুনীলগুরুর যৌনহেনস্থা নিয়ে কোনও ভিকটিম মুখ খুললে শিষ্যরা তাকে পগারপার করে ছাড়ে। সমরেশগুরুর মিথ্যেচার আর প্রতারণাকে শিষ্যরা দেখেও দেখে না।

সৈয়দগুরুর পারভারসানের কথা প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। হুমায়ূনগুরুর অনৈতিকতার কথা কেউ উচ্চারণ করলে তাকে জ্যান্ত কবর দিয়ে দেয় শিষ্যরা। এই চলছে। নারীগুরুও আছেন। তবে তা রাষ্ট্রের বা রাজ্যের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাদের সম্পর্কে কোনও কটূসত্যকথা কোনও শিষ্যই বরদাস্ত করে না। এখনও শিল্প সাহিত্যের জগতে নারীদের গুরু বলে মানার চল শুরু হয়নি। যতদিন পুরুষতন্ত্রের জয়জয়কার, ততদিন শুরু হবেও না।

কোনও লেখক বা গায়কের লেখা বা গান যদি ভালো লাগে, তাহলে বলুন তাদের লেখা বা গান ভালো লাগে। আর তাদের যৌন হয়রানি, বদমাইশি, স্বার্থপরতা, অসভ্যতা, কূপমণ্ডুকতা, ক্ষুদ্রতা, নৃশংসতা ভালো না লাগলে তা বলুন। কারও গান ভালো লাগলে তার গু-গোবরও কেন ভালো লাগতে হবে? একটি মানুষের ভালো এবং মন্দ দুই দিকই থাকতে পারে। মানুষকে গুরু নয়, মানুষ হিসেবে দেখুন।

ওদিকে আবার কোনও নারী-লেখককে যেহেতু গুরু বলে মানার নিয়ম নেই, নারী-লেখকদের গুণগুলোকে আড়াল করে তাদের সম্পর্কে গু -গোবর প্রচার করে নারীবিদ্বেষী লোকেরা। তাদের শত্রু যদি থাকে শতকরা ৯৯.৯৯ ভাগ, আর ০.০১ ভাগ যদি সমর্থক, তাহলে বারবার ওই ০.০১ ভাগকে সাবধান করে দেওয়া হয়, যেন তারা আবার ভুল করে শিষ্য না হয়ে যায়। নারী-লেখককে যেন কোনভাবেই গুরু ভেবে না ফেলে। ফেললে সাড়ে সব্বনাশ।

এটিই আমাদের দুই বাংলার গুরু-শিষ্য কাহিনী।

তসলিমা নাসরিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই


Thumbnail

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।

বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো। 

তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন। 

একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া। 

যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।


সিপিবি   হায়দার আকবর খান রনো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করবে অন্যরা


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।

কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।

বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক

গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ

এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।

আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র‌্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   গণতন্ত্র   মানবাধিকার   কমিউনিটি ক্লিনিক   দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন