ইনসাইড থট

“ব্যবস্থাপক যাহা করেন তাহাই ব্যবস্থাপনা”


Thumbnail “ব্যবস্থাপক যাহা করেন তাহাই ব্যবস্থাপনা”

তৃতীয় পর্ব

"কৌশলগত পরিকল্পনা"

ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়ার অন্যতম ধাপ হচ্ছে পরিকল্পনা প্রণয়ন। ভবিষ্যতে আপনি কি করবেন তার মানস ছবিকে পরিকল্পনা বলা হয় (planning is the mental picture of the future course of action)। পরিকল্পনা সব সময় কম্পিউটার কম্পোজ করে স্পাইরাল বাইন্ডিং করা নাও হতে পারে। মনে মনেও পরিকল্পনা করা যেতে পারে।  আনুষ্ঠানিক লিখিত পরিকল্পনার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছে পরিবেশের বর্ণনা। বর্তমান অবস্থার একটা বর্ণনা বা প্রেক্ষাপট পরিকল্পনায় থাকতেই হবে। বাজেটকে যদি আমরা সরকারের আগামী বছরের আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা হিসেবে ধরি, তাহলেও দেখব অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতা শুরুর অর্ধেকটা জুড়েই থাকে অর্থনীতির বর্তমান হালচাল। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষিতে আগামী বছরের করণীয় নির্ধারণ করা হয়। 
পরিবর্তনশীল পরিবেশে সৃষ্ট সুযোগে এবং হুমকির সাথে সংগঠনের উদ্দেশ্য, নৈপুণ্য এবং সম্পদের টেকসই মিল তৈরি ও সংরক্ষণের ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়াকে কৌশলগত পরিকল্পনা বলে (strategic planning is the managerial process of developing and maintaining a viable fit between the organisation's objectives, skills, and resources and its changing opportunities and threats)। পরিস্থিতি বিশ্লেষণের উপরেই নির্ভর করে ভবিষ্যতের করণীয়। সমস্যা হচ্ছে, পরিবেশ দ্রুত বদলে যায়। যখন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় আর সেটা যখন বাস্তবায়ন করা হয় এই দুইয়ের মধ্যে সময়ের পার্থক্য তৈরি হয়। সেটা কয়েক মিনিট, ঘণ্টা, দিন, মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে। 

আজকে যে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন হচ্ছে এটার প্রথম প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৯৬১ সালে, ১৯৬৩ সালে অনুমোদিত হয়। ১৯৬৮ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৭২-৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের পর দেশকে আত্মনির্ভর করার তাঁর নেয়া অন্যান্য উদ্যোগের মত এই উদ্যোগটিও থেমে যায়। ১৩ মে ২০০৯ সালে রাশিয়ার ROSATOM এর সাথে বাংলাদেশের এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। ২০ নভেম্বর ২০১৩ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়। যখন ভূমি অধিগ্রহণ করা হয় তখন পাশেই ছিল পদ্মা নদী, কিন্তু দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে পদ্মা নদী চলে গেছে কয়েক কিলোমিটার দূরে। 

"Environment' শব্দটাকে যদি একটা ক্রিয়াপদ(verb) হিসেবে কল্পনা করা হয়, তাহলে এর জন্য উপযুক্ত একটা কাল(tense) হচ্ছে 'present perfect continuous tense', যে কাজ অতীতে আরম্ভ হইয়া এখনো চলিতেছে। 'Environment' শব্দটির অদ্যাক্ষর 'E' লিখে শেষ অক্ষর 't' পর্যন্ত যাওয়ার আগেই এনভায়রনমেন্ট পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। আপনার পরিকল্পনা হয়ে যেতে পারে 'unfit'। আপনার সম্পদ ও সামর্থ্য নতুন পরিবেশে সেকেলে হয়ে যেতে পারে। কোম্পানির সম্পদ এবং সামর্থ্যকে পরিবর্তিত অবস্থায় ফিট রাখার জন্য সামরিক বাহিনীর অভিধান থেকে কৌশলগত শব্দটি ব্যবসায় জগতে ধার করা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সকল পরিকল্পনাই কৌশলগত পরিকল্পনা । পরিবেশের বর্ণনা কৌশলগত পরিকল্পনারও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত আরো কিছু প্যারা বা পৃষ্ঠা যুক্ত করা হয়। যেখানে বিদ্যমান পরিবেশে ভবিষ্যতে কি কি পরিবর্তন হতে পারে এবং সেই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে করণীয় কি হতে পারে তার বর্ণনা থাকে। যার কারণে কৌশলগত পরিকল্পনা কখনো আনফিট হয়না। ধরা যাক, কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা জেএমবি দখল করে নিয়েছে। সেখানে এখন চাঁদ-তারা ঝাণ্ডা উড়ছে এবং মধ্যযুগীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। সরকার থেকে রংপুর সেনানিবাসের জিওসি কে বলা হল নাগেশ্বরী থেকে জেএমবি কে পরাস্ত করে ঝাণ্ডা নামিয়ে পতাকা উত্তোলন করতে। সভ্য দুনিয়ায় ঝাণ্ডার দিন শেষ হয়ে গেছে। সেনাবাহিনী তখন জেএমবির হাত থেকে নাগেশ্বরী মুক্ত করার ছক তৈরি করে: "রাত দশটায় রংপুর সেনানিবাস হইতে যাত্রা শুরু করিয়া রাত ১১ টায় কুড়িগ্রাম শহর অতিক্রম, রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ধরলা নদীর ব্রিজ অতিক্রম, এবং রাত ১২ টা ১ মিনিটে আক্রমণ।" কিন্তু ১১টা ৫৫ মিনিটে নদীর পাড়ে পৌঁছে দেখা গেল নদীর উপর ব্রিজটি জেএমবি আগেই ভেঙ্গে ফেলেছে ( জেএমবি লোকেরাও এখন রসায়ন পড়ে, তাদের সনাতনী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও সিলেবাসের আধুনিকায়ন করা হয়েছে; রসায়ন পড়ানো হচ্ছে) । ধরলা নদীর ব্রিজ ভাঙ্গার পরেও সেনা বাহিনী সময় মতোই আক্রমণ করবে। কারণ রংপুর থেকে রওনা হওয়ার সময়ই সেনাবাহিনী তাদের পদাতিক বাহিনীর সাথে আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরকে সাথে নিয়ে নিয়েছে, যাদের কাছে আগে থেকেই ধরলা নদী পার হওয়ার উপযুক্ত একটা জরুরী ব্রিজ বানানো আছে। তাৎক্ষণিকভাবেই তাঁরা একটি ভাসমান ব্রিজ তৈরি করে ফেলবে এবং তা দিয়ে সেনাবাহিনীর নদী পার হয়ে যাবে এবং সময় মতোই নাগেশ্বরী আক্রমণ এবং নাগেশ্বরী জেএমবি হাত থেকে মুক্ত করবে। নাগেশ্বরী পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নদীর উপর ব্রিজটি ছিল, তা 'বর্তমান পরিবেশ'। প্রতিপক্ষ ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলতে পারে সেটা হল 'পরিবর্তিত পরিবেশ'। পরিবেশের বর্ণনায় সম্ভাব্য পরিবর্তনটি আমলে নিয়ে সেই প্রেক্ষিতে করণীয় নির্দিষ্ট করা ছিল বলেই সেই রাতে সেনাবাহিনী কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েনি বা তাদের সম্পদ ও সামর্থ্য 'আনফিট' হয়ে যায়নি। 
আরো একটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হবে, সেটাও একটি সামরিক বাহিনীর উদাহরণ। ১৫ জুন ২০০১ সাল। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ, যা স্থানীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর মাজার নামে পরিচিত, তার উদ্বোধন অনুষ্ঠান। অত্যন্ত সীমিত সংখ্যক অতিথি যার মধ্যে তিন বাহিনীর প্রধান, বিচারকবৃন্দ, মন্ত্রীবর্গ, সচিবগণ অন্যান্যরা প্রায় সবাই একই পর্যায়ের লোক। সৌভাগ্যক্রমে আমিও এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম। সমাধিসৌধে একটি এম্পিথিয়েটার আছে, সেখানে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল। এই মাজার কমপ্লেক্সটি নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন আর্মি ইঞ্জিনিরিং কোর। (স্মরণ করা যেতে পারে, স্বাধীনতা বিরোধী দেশি-বিদেশি চক্রান্তের ফলে সেনাবাহিনীর কিছু অবসরপ্রাপ্ত, চাকরীচ্যুত এবং বিপথগামী সদস্যের হাতেই বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হয়েছিলেন।) পুরো অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় ছিলেন আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল, যিনি এই প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন। তিনি প্রথমে দাঁড়িয়ে সবাইকে সম্বোধন করে বললেন, " মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ... এই প্রকল্পটি ... একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত, ... সালে প্রথম শুরু হয়, কয়েকবার কাজ বন্ধ হয়ে যায়, এটার ২০০ মিটার লম্বা রাস্তা .. সামনে মসজিদ, ডানে...ইত্যাদি।" এরপরে বললেন, "আমি এখন একটি ম্যাপের সাহায্যে পুরো মাজার কমপ্লেক্সটি আপনাদের দেখাবো।" এই বলেই ব্রিগেডিয়ার সাহেব পকেট থেকে লেজার পয়েন্টার বের করে হাতে নিয়ে ম্যাপের দিকে ধরলেন। দুইবার চেষ্টার পরেও দেখা গেল লেজার পয়েন্টারটি জ্বলছে না। মুহুর্তের মধ্যে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মেজর ব্রিগেডিয়ার সাহেবকে সামরিক কায়দায় সেলুট দিয়ে তাঁর হাতে নতুন একটা লেজার পয়েন্টার দিয়ে অকেজো পয়েন্টারটি ছো মেরে নিয়ে গেল। দ্বিতীয় পয়েন্টারটি কাজ করলো। পুরো ব্যাপারটা এত দ্রুততার সাথে ঘটল যে আমার ধারণা অডিয়েন্সের প্রায় কেউই বিষয়টি আন্দাজ করতে পারেনি। আমি যেহেতু মঞ্চের খুব কাছে বসে ছিলাম, বিষয়টা আমি দেখেছি। আরো লক্ষ্য করে দেখলাম অনতিদূরে একজন সিপাহী একটা লম্বা সাদা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমার ধারণা দ্বিতীয় লেজার পয়েন্টারটি কাজ না করলে ঐ লাঠি নিয়ে সে এগিয়ে আসতো, যা দিয়ে ব্রিগেডিয়ার সাহেব ম্যাপের নির্দিষ্ট স্থানগুলো অতিথিদেরকে দেখাতেন। পুরো ব্যাপারটা দেখে আমি ভাবছিলাম এই কাজ যদি গোপালগঞ্জের স্থানীয় প্রশাসনকে দেয়া হতো সেখানে একটি বিরাট হৈচৈ বেঁধে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কেউ হয়তো বলে উঠতো "এনডিসি কোথায় গেছে? সে টাকা মেরে দিয়েছে, ভালো ব্যাটারি কিনেনি, ... ইত্যাদি ইত্যাদি।" আসলে পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কেউ একজন পূর্বেই বিষয়টি উল্লেখ করেছিল যে লেজার পয়েন্টারে কখনো কখনো নতুন ব্যাটারি লাগানোর সাথেসাথেই শর্ট সার্কিট হয়ে ব্যাটারি অকেজো হয়ে যেতে পারে। সেই জন্যেই তারা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ব্যাকআপ ব্যবস্থাটি রেখেছিল। 

কৌশলগত পরিকল্পনা কেবলমাত্র সামরিক বাহিনীতে ব্যবহৃত হয়, আর সেখান থেকে এনে এখন ব্যবসা-বাণিজ্য কর্পোরেট সেক্টরে এমবিএ পাস করা লোকদের দ্বারা তা অনুশীলন করা হয়, এমনটি নয় । আমি এমন ব্যক্তির কথা বলতে পারি যে কোনোদিন strategic শব্দটিও শোনেননি। কিন্তু সে একজন ভাল strategic প্লানার। পুরনো ঢাকার এক রিকশা গ্যারেজের মালিক। শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজ পাশেই তার রিক্সা গ্যারেজ। রিকশা গ্যারেজের মালিক হলেও হাজী সাহেব ব্রিটিশ আমলে ইংলিশ মিডিয়ামে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। ভালো ইংরেজি বলতে পারেন। এর মধ্যে কয়েকবার ওমরাহ, হজ‍‍‌ ইত্যাদি করে একেবারে পাকাপোক্ত হাজী।  ১৯৮৪ সালের দিকের ঘটনা। ইত্তেফাক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেন, তাঁর গ্যারেজের জন্য "কতিপয় রিক্সা মিস্ত্রি আবশ্যক"। যাহারা মিস্ত্রি হতে আগ্রহী তাদেরকে সরাসরি একটা নির্দিষ্ট দিনে গ্যারেজে চলে আসতে বললেন। ওই নির্দিষ্ট দিনে হাজী চাচা তার সবচেয়ে ভালো পোশাক-আশাক পরে একটা হাতলওয়ালা চেয়ার নিয়ে গ্যারেজে গিয়ে বসলেন। ১৭ জন লোক এসেছিল গ্যারেজের মিস্ত্রী হওয়ার আগ্রহ নিয়ে। চাচা সবার ইন্টারভিউ নিলেন। তবে প্রত্যেকে একটিই প্রশ্ন করলেন, "বাবা, আমনে কি নৌকা বানাইতে পারেন?" উত্তর হচ্ছে, " না চাচা, নৌকা তো বানাইতে পারি না"। "আচ্ছা ঠিক আছে, ওইখানে বাখরখানি আর চা আছে, খাইয়া যান। "তবে এর মধ্যে দুজনকে পাওয়া গেল যাদের বাড়ি চাঁদপুরের দিকে তাঁরা বলল, " হ চাচা, নৌকাও বানাইতে পারি"। ওই দুজনকে আর কোন প্রশ্ন না করে সরাসরি রিকশা গ্যারেজের মিস্ত্রি হিসেবে নিয়োগ দিয়ে দিলেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত এভাবেই চললো।

১৯৮৮ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বন্যায় পুরো ঢাকা শহর ডুবে গেল। প্রায় এক মাস পুরো ঢাকা শহর পানিতে অবরুদ্ধ ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া ঢাকা শহরের একফোঁটা জায়গাও শুষ্ক ছিল না। মতিঝিলের শাপলা চত্বর ছিল প্রকৃতই শাপলা চত্বর, চারিদিকে অথৈ পানির মধ্যে শাপলাটি ভাসছিল। সোনালী ব্যাংকের গাড়ি-বারান্দার ছাদ পর্যন্ত পানি উঠেছিল। মান্ডা, বাড্ডা গুলশান, বনানী, শ্যামলী সবেই পানির নিচে। প্রেসিডেন্ট এরশাদ সাহেব "...আজকের চেষ্টা আমার" সঙ্গীত নিয়ে পানিতে হাঁটতে লাগলেন। জরুরী প্রয়োজনে মানুষকে বের হতে হয়। গাড়ি রিক্সা কিছুই চলছে না। ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, ব্যাংকে আসতে হবে, ইত্যাদি কাজের জন্য প্রত্যেক বাড়িতে একটি করে ডিঙ্গি নৌকা জোগাড় শুরু হয়ে গেল। দুইশ-আড়াইশো টাকা দামের ডিঙ্গি নৌকা এক হাজার থেকে বারোশো টাকায় বিক্রি হতে লাগলো। 

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চাচা তাঁর রিক্সা গ্যারেজে ফ্লাসলাইট জ্বালিয়ে রাতদিন নৌকা বানানো শুরু করলেন। কারণ চাচা আগেই আশঙ্কা করেছিলেন ঢাকা শহরে একদিন পানিতে ডুবে যাবে। তখন রিকশা চলবে না, নৌকাই চলবে। চাচা একমাসেই গত কয়েক বছরের রিক্সা বানিয়ে যা আয় করেছেন তার চেয়ে বেশি আয় করে ফেললেন। শুধু তাই না, রিকশার গ্যারেজে নৌকা বানালে পুলিশ ঝামেলা করতে পারে‌। পুলিশ সবসময়ই কিছু একটা ফাঁকফোকর খুঁজে জরিমানা বা উপরি আদায়ের জন্য । আমি একবার বাসায় একটি আসবাব মেরামতের জন্য সামান্য একটু কাঠ কেনার জন্য মিস্ত্রিকে কাওরান বাজার পাঠিয়েছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর হঠাৎ একটা অচেনা মোবাইল থেকে ফোন আসলো। আমি ফোন ধরলাম, জিজ্ঞেস করলাম, কে? "স্যার আমি আপনার কাঠমিস্ত্রি" কি হইছে? "স্যার আমারে শাহবাগে ট্রাফিক পুলিশে আটকাইয়া ফালাইছে"। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কেন? ট্রাফিকের বক্তব্য কী? " ট্রাফিক বলছে, মিশুক হইল যাত্রীবাহী পরিবহন। তুমি কাঠ কেন উঠাইছো?" আমি অন্যান্য বিড়ম্বনা পরিহারের জন্য তাঁকে একটা ব্যবস্থা করে চলে আসতে বললাম। কিছুক্ষণ পরে মিস্ত্রি চলে আসলো, মিশুকে করে কাঠ নিয়ে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যবস্থা করে আসলা? " স্যার, কাঠ কিন্না ২০ টাকা বাচছিল, হেইডা ট্রাফিক ব্যাটারে দিয়া চইলা আইছি"। গ্যারেজ এর মালিক চাচার মনেও এই আশঙ্কা ছিল। পুলিশ জিজ্ঞেস করতে পারে, "তোমার গ্যারেজে হইল রিক্সার, নৌকা কেন বানাইলা? জরিমানা দাও।" সেজন্য চাচা ১৯৮১ সালে যখন মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নেন তখনই তার গ্যারেজের নাম রাখেন "আরবান ম্যানুয়াল ট্রান্সপোর্ট লিমিটেড"। যার মধ্যে রিক্সা, ঠেলা, ভ্যান, নৌকা সবই অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

ব্যবস্থাপক   ব্যবস্থাপনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন