ইনসাইড থট

আঞ্চলিক বাংলা ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু


Thumbnail আঞ্চলিক বাংলা ভাষা, মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু

প্রাককথন

বাংলা ভাষা রক্ষায় ইতিহাসের বীর পুরুষগণের বাংলা ভাষার আন্দোলনের ইতিহাস অনেক মসৃণ নয়।  অবদান রয়েছে বাংলা ভাষার উৎকর্ষের সকল জ্ঞানপিপাসুদের। কালের বিবর্তনে ভাষাকে আমরা স্থান-কাল-পাত্র ও ক্ষেত্র বিশেষ নানান ভাবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং হাস্যরসের খোরাক করেছি ও করছি, যার প্রভাবে অদূর ভবিষ্যতে দৃশ্যমান হতে পারে একটি অমর্যাদাকর ভাষাগত সামাজিক অবস্থার, যেখানে জন্মস্থানের মায়ের বুলিতে মনের ভাব প্রকাশের সুস্থ ব্যাবস্থাকেও খুজে পাওয়া দুর্বোধ্য হতে পারে। বিষয়টি আমাদের মনের ও অস্তিত্তের মৌলিক চিন্তাশক্তিকে নাড়া দিচ্ছে কি না সন্দেহ আছে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, স্বাধীনতা পরবর্তী সময় পঞ্চাশের কোঠায় পা রেখে মাত্র যে তিনটি প্রজন্মের পার্থক্য আমাদের হয়েছে তা লক্ষণীয় এবং সামাজিকভাবে আশঙ্কাজনক ভাবে চিন্তনীয়। বোধ করি পাঠকের বুঝতে আজ কষ্ট হচ্ছে না এই প্রজন্মগত পার্থক্যের।       
সোজা কোথায় আমাদের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের পূর্বের দুই প্রজন্ম ও পরবর্তী প্রজন্মের অভিজ্ঞতা, আবেগ, চর্চা ও শ্রদ্ধাবোধের ব্যাবহাররিক দিকের পার্থক্য আজ লক্ষণীয়। উদাহারণ স্বরূপ বলা যায় এই ভাষাগত অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীতেই আঞ্চলিক ভাষার একটি শিল্প, সাহিত্য বা সৃষ্টি ব্যাপক জনশ্রুতি ও ভালোবাসা পেলেও একি অঞ্চলের ভাষাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য এবং হাস্যরসের ঢাল তরবারি হিসেবেও ব্যাবহার করছি আমাদের সমাজব্যাবস্থায় বেড়ে উঠা অনেকেই, যে ব্যাবস্থা একটি দুমুখো বিষধর ... এর ন্যায়। আমাদের প্রতিটি জেলার ভাষাই বৈচিত্র্যপূর্ণ। প্রত্যেক জেলার রয়েছে নিজস্ব উপভাষা। উপভাষায় কথা বলা মোটেও দোষের নয়। উপভাষা হলো মায়ের মতো। মাকে আমরা শ্রদ্ধা করি, নিজ-নিজ উপভাষাকে আমাদের শ্রদ্ধা ও সম্মান করতে জানতে হবে।  ভুলে গেলে চলবে না, স্বাধীন বাংলাদেশে আজও পর্যন্ত বিভিন্ন পূজা পার্বণে, নবান্নে, ধর্মীয় উৎসবে আঞ্চলিক ভাষার গান বাজনা, সয়ার পয়ার, পট, গাজীর গান, হারের গান ও অষ্টোক গান, রাম যাত্রা, পালা, কীর্তণে আঞ্চলিক ভাষায় গীত হয়ে আসছে। উদাহারণ স্বরূপ আঞ্চলিক ভাষার একটি গানের অংশ নিন্মরুপ। 
আশ্বিন গেল কাততিক আ’লো
মা লক্ষ্মী ঘরে আ’লো
ধান সত খায় রে হৈ।
‘‘ধান পড়েছে গড়ায়ে
শিয়েল গেল নড়োয়ে’’
ধান সত খায় রে হৈ। 

আঞ্চলিক ভাষার অপর নাম উপভাষা। 

ভৌগোলিক ব্যবধান, যোগাযোগ ব্যবস্থা, সমাজগঠন, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ধর্ম, পেশা ইত্যাদি কারণে এক এলাকার ভাষার থেকে অন্য এলাকার ভাষায় পার্থক্যের সৃষ্টি হয়।  এই ব্যবধান বা ভাষাগত অসাম্প্রদায়িক জনগোষ্ঠীর মনের ভাব মুখে প্রকাশের বৈচিত্র্যতা হলো উপভাষা, আঞ্চলিক ভাষা যার অপর নাম।  

একবিংশ শতাব্দীতে সামাজিকভাবে সঙ্গবদ্ধ এইসকল বৈচিত্র্যময় জনগোষ্ঠীর মানুষ, ভাষাভাষী, ভাষিক সম্প্রদায় বা ভাষা সম্প্রদায় (Language Community) বলে  পরিচিত। স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ডে একটি পতাকার অধীন সঙ্গবদ্ধ সম্প্রদায় হিসেবে আমরা যারা বাংলা ভাষায় কথা বলি তারা সকলেই বাংলাভাষী সম্প্রদায়ের অন্তর্গত। সামাজিকভাবে সঙ্গবদ্ধ জায়গাটা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে যাচ্ছি বলেই ভাষার অসাম্প্রদায়িক অনুভূতি আমাদের বিবেকে তুলনামূলক কম জাগ্রত হয়। আবেগের কথা বললে অনেক কথা আসবে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের মূলমন্ত্র ভাষাগত অসাম্প্রদায়িক অনুভূতি, এই একটি জায়গায় আমরা একমত হতে পারলে আমাদের ধর্মীয় অসাম্প্রদায়িক চেতনাতে সহজেই আত্মচেতন অবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। সর্বপ্রথম প্রয়োজন সকল আঞ্চলিক ভাষার প্রতি সন্মান ও আঞ্চলিক ভাষার সুস্থ চর্চার নানাবিদ মাধ্যম ও পাঠ্যপাঠ প্রণয়ন ব্যবস্থা।  
         
মনের ভাব প্রকাশের বাকস্বাধীনতা বা ভাষার মুক্তবিহঙ্গ স্বাধীন বাংলার পতাকায় লাল সবুজের রক্তের ইতিহাসে আঁকা। রফিক, শফি্ক‌ জব্বার ও নাম না জানা অনেক মুক্তিকামী ইতিহাসের শহীদ ও জীবিত বীরগণের এবং আদর্শ পুরূষীদের বীরত্বের অবদান অনস্বীকার্য, স্মরণ করছি স্বাধীন বাংলা ভাষার বিচরণক্ষেত্র সৃষ্টির প্রাণপুরুষ, বাংলা ভাষা রক্ষার প্রতিকৃতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালির জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, বাংলার ভাষা, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির প্রতি যার ছিল অকৃত্রিম ভালোবাসা। 

আসধারন সৃতিশক্তির সাবলিল এই বাংলাভাষী মানুষটি বাংলার সাধারণ মানুষের প্রাণের কাছাকাছি যেতে তাঁর লিখা, বক্তৃতা বা ভাষণে উপভাষার শব্দ/ আঞ্চলিক শব্দের ব্যাবহার করতেন স্থান-কাল-পাত্র ও ক্ষেত্র ভেদে সময় উপযোগী বিস্ময়কর সার্থকতার সহিত। যেকোন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে কেউ দেখা করতে এলেই বলতেন, আরে তুই অমুক গ্রামের অমুকের পোলা না? তোর দাদা কেমন আছে? আঞ্চলিক ভাষার ব্যাবহারে খোঁজ নিতেন সকলের। 

ভাবা যায়? বাংলা ভাষার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে আজ থেকে ৬৭ বছর আগেও বাংলা ভাষার কোন অপমানে আপোষ করতে পারতেন না তিনি।  ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দের ২৫ আগস্ট করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে তিনি বলেন, “...ওরা পূর্ব বাংলা নামের পরিবর্তে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নাম রাখতে চায়। আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে, আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন। ‘বাংলা’ শব্দটির একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য...।”  

মুক্তিযোদ্ধারা শুদ্ধ ভাষা শিক্ষা নেন নি। 

৫২র ভাষা আন্দোলনের মূলভাব ভুলেছি আমরা।  মাতৃভাষা বাংলা রক্ষার আন্দোলন একমাত্র শুদ্ধ বাংলা ভাষার জন্য সংগঠিত হয় নি, এই সরল কথাটাও আমরা ভুলতে বসেছি, চর্চাও করছি ওমনটাই। একবিংশ শতাব্দীতে বাংলার নতুন প্রজন্মের বাংলা ও ইংরেজি ভাষার সংমিশ্রণে বাংলিশ ভাষাও আজ প্রসিদ্ধ। ভুলতে বসেছি গ্রামের সেই মুক্তিযোদ্ধার কথা, যিনি তাঁর জন্মস্থানের ভাষায় ভাবের আদান প্রদানের মাধ্যমেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, বোধ করি তিনি যুদ্ধে যাবার আগে শুদ্ধ ভাষা শিক্ষা নিয়ে যুদ্ধে যান নি। বরং তখনকার লোকসংস্কৃতিতে আঞ্চলিক ভাষায় কত ছন্দ, কবিতা, গান মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধের রসদের মত কাজ করেছিলো। 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন লোককবি ছোরাব আলির আঞ্চলিক জারি গানে ইয়াহিয়ার ও ভুট্টোর কথা উঠে এসেছে এভাবে।

ইয়াহিয়ার গৃহবাস 
ভুট্টো ক্ষেতে করছে সর্বনাশ
ইয়াহিয়া ভুট্টা খাইয়া
করছে এখন হায় হুতাশ।
ভুট্টো যখন ঢাকায় আইল
ইয়াহিয়ারে বুঝাইল
শেখ মুজিবকে বন্ধি কর
বাঙালির প্রাণ কর নাশ। প্রাগুপ্ত, পৃঃ ২৫।  

বঙ্গবন্ধুর ডাকেই সারা দিয়ে যে মুক্তিযোদ্ধারা মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন সে প্রসঙ্গটি উঠে এসেছে এভাবে-

‘শেখের ডাকে সাড়া দিয়্যা 
মুক্তিযুদ্ধে গেনু
যুদ্ধ চলাকালীন বাড়ির
খবরতা পাইনু। ’ প্রাগুপ্ত, পৃঃ ৩৬।  

তাই বলে এমনটা নয় যে শুদ্ধ ভাষা শিক্ষার প্রয়োজন নেই। লক্ষ্য বুঝতে হলে উক্ত বিষয়টির সম্পূর্ণ পাঠ ও অনুধাবন প্রয়োজন। অন্যদিকে ধার করা সংস্কৃতির প্রভাব তো আছেই, যার প্রভাব বাংলা ভাষার তালগোল পাকিয়ে আগত শিশুটিকে বিশ্বায়নের এই যুগে আধুনিকতার ছোঁয়ায়  (আঞ্চলিক প্রবাদে) ‘বাপ দাদার ভাষা’ থেকে অনেক দূরে কোথাও কৃত্রিমত্তার পথ দেখাচ্ছে। 

খালেদ হামিদী ভারত থেকে প্রকাশিত ‘আজতাক বাংলা’ পত্রিকায় ৭ মার্চের ভাষণে সাবলিল শব্দের ব্যাবহার নিয়ে লিখেন ‘৭ই মার্চের ভাষণে কিছু আঞ্চলিক শব্দ এবং ক্রিয়াপদ উচ্চারিত হলেও অধিকাংশতঃই তা সর্বজনবোধ্য প্রমিত ভাষায় প্রদত্ত হওয়ায় সমগ্র জাতিকে জাগ্রত করতে সক্ষম হয়। তাঁর আঞ্চলিক শব্দগুলো অবশ্য তাঁরই সেই আমর্ম আহ্বানকে অলংকৃত করে। কেননা সেই বিশেষ শব্দগুলো এখনো দুর্বোধ্য নয়।’ 

রঞ্জনা বিশ্বাসের লিখা বই, লোকসংস্কৃতিতে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বইয়ের ৩২ নং পাতায় তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের প্রচারনায় গোপালগঞ্জে আয়োজিত সকল নির্বাচনী প্রচারনায় রোকনউদ্দিনের গান গাইতেন এ. কে. এম চাঁদ মিয়া (চাঁন মিয়া)। ‘বঙ্গবন্ধু’ গানগুলো দ্বারা এতটাই আকৃষ্ট হয়েছিলেন যে, গোপালগঞ্জ আওয়ামী লীগকে তিনি নির্দেশ দেন চারণ কবি রোকনউদ্দিনের বই ছাপানর জন্য। গোপালগঞ্জের গোপাল ডাক্তারের পপুলার প্রেস থেকে তাৎক্ষণিক ছাপা হয় ১৬ পৃষ্ঠার বা এক ফর্মার গানের বই।    

৭ মার্চের ভাষণ বঙ্গবন্ধুর চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ইতিহাসের পন্তিমালার গাঁথুনি, যে ভাষণ বিশ্বময় বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। আজ এই বাংলায় বলা ভাষণ ইউনেস্কো "ডকুমেন্টারি হেরিটেজ" (বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য) হিসেবে স্বীকৃতি প্রাপ্ত।    

১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ছয় দফা ‘আমাদের বাঁচার দাবি’ শীর্ষক ‘ছয় দফা’ সম্পর্কে আলাপচারিতায় আঞ্চলিক ভাষায় (ন্যাপ) নেতা অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদকে প্রশ্নের উত্তরে এই মহান নেতা বলেন: ‘দফা তো একটাই, একটু ঘুরাইয়া কইলাম’ 

অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন এস এ টিভির এক সাক্ষাৎকারে বলেন।    

“প্রথম ‘ছয় দফা’ যখন প্রকাশিত হোল, আমাদের হাতে এলো তখন দারুন বিতর্ক শুরু হোল, অনেকে বলতেন এটা ছিল আই এস এর দলিল, অনেকে বলতেন এটা ভারতীয় দলিল, আবার কেউ বলতেন এটা ব্রিটিশরা তৈরি করেছে, নানান কথা, এমেরিকানরা তৈরি করেছে, এমন বিতর্কিত পরিবেশে বঙ্গবন্ধুর প্রায় সমবয়স্ক (ন্যাপ) নেতা (পূর্ব-পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ, তার মুখ থেকে আমার শোনা। মোজাফ্ফর আহমদ একদিন বঙ্গবন্ধুকে প্রশ্ন করলেন” ‘আপনি ৬ দফা দিয়া কি বুঝাইতে চান? লোকজন তো নানান কথা কয়।’ ঐ একি ভাষায় (আঞ্চলিক ভাষায়) বঙ্গবন্ধু বললেন। ‘আরে মিয়া বুঝলা না, দফা তো একটাই। একটু ঘুরাইয়া কইলাম।’   
      
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে রেসকোর্সের ময়দানে বিশাল জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বঙ্গবন্ধু, দীর্ঘ ভাষণে তিনি জাতিকে দিকনির্দেশনা দেন। সেদিন তিনি আবেগে আপ্লূত কণ্ঠে বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও  সন্মানবোধ থেকে বলেন ‘এবং যাবার সময় বলে যাব—জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালি আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’

একই দিন স্বাধীনতা পরবর্তী বিধ্বস্ত বাঙালি জাতিকে আদেশ উপদেশ এবং দিকনির্দেশনা দেবার বেলায় আঞ্চলিক শব্দের ব্যাবহার করে আপন মনে তিনি বলেন। 

‘ভাইয়েরা আমার, যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে, আমার সকল জনগণকে দরকার, যেখানে রাস্তা ভেঙে গিয়েছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু কইরে দাও।  জমিতে জাও ধান বুনাও।’
  
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জানুয়ারি অস্ত্র সমপর্ণ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন ‘ভুট্টূ সাব বড় নারাজ হয়ে গেছে... তুমি রেয়েলিটি মাইনে নাও, তুমি রেয়েলিটি মাইনে নাও এদিক চিন্তাভাবনা না কইরে নিজের মানুষকে বাচাও।’ 

চাষী নজরুল ইসলামের পরিচালনায় সুচন্দা, খসরু ও বঙ্গবন্ধু অভিনীত মুক্তিযুদ্ধের ছবি সংগ্রাম,  মুক্তি পায় ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে। এই চলচ্চিত্রের শেষ দৃশে অভিনয়ের জন্য শুটিংএর অনুমতির ঘটনা ও শুটিং চলাকালীন সময়ে বঙ্গবন্ধুর সাবলিল কথামালা যে কাউকে মুগ্ধ করবে।  
সেই মুহূর্তের কথোপকথন চাষী নজরুল ইসলাম বর্ণনা করেছেন এভাবে -
খসরু: আপনার কাছে একটা কাজে আইছি।
বঙ্গবন্ধু: কী কাজ? ক?
খসরু: আমরা আর্মির মার্চ পাস্টের একটা দৃশ্য করব। আপনি স্যালুট নিবেন।
বঙ্গবন্ধু: চুপ, আমি ফিল্মে অ্যাক্টিং করব না। (ধমকের সুরে)
খসরু: এটা তো অ্যাক্টিং হইল না।
বঙ্গবন্ধু: অ্যাক্টিং হইল না কী? যা, এখান থেকে। (আবারো ধমকের সুরে)
খসরু: না আপনাকে করতেই হবে। আপনি না হলে সিনেমাটা শেষ করতে পারব না।
বঙ্গবন্ধু: মান্নানরে ডাক দেখি। (তখনকার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান)
(স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মান্নান এসে খসরু ও চাষী নজরুলকে নিজের রুমে নিয়ে গেলেন।)
খসরু: বঙ্গবন্ধুরে অ্যাক্টিং করতে হইব।
আবদুল মান্নান: বঙ্গবন্ধু অ্যাক্টিং করব, এ-ও সম্ভব?
খসরু: সম্ভব না হইলে কিন্তু আপনারে অ্যাক্টিং এ দাঁড় করাইয়া দিমু। আপনি বঙ্গবন্ধুরে উল্টাপাল্টা কিছু বইলেন না। শুধু বলবেন, অ্যাক্টিং করা যায়।
(সবাইকে নিয়ে মন্ত্রী আব্দুল মান্নান আবার ফিরে গেলেন বঙ্গবন্ধুর রুমে)
বঙ্গবন্ধু: কী তাইলে?’
আবদুল মান্নান: ওই ঠিকই আছে। তয় করবেন কবে?

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়ে বঙ্গবন্ধু রাজি হলেন কাজটি করে দিতে। খসরুকে বললেন, “যা, করে দেব।”
সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পিলখানায় শুটিংয়ের ব্যবস্থা হল। মার্চপাস্টের বিশাল আয়োজন। একবার মিস হলে সব শেষ। এক চান্সেই শট ওকে করতে হবে। বঙ্গবন্ধু মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ালেন। পেছনে সারি বেঁধে বসলেন জিয়াউর রহমান, কেএম সফিউল্লাহ, খালেদ মোশাররফসহ সেনাবাহিনীর সব শীর্ষ কর্মকর্তারা। মঞ্চের সামনে প্যারেড করে স্যালুট দিয়ে এগিয়ে চলেছে সুসজ্জিত সেনাদল। পরিচালকের কথা মতো স্যালুট গ্রহণের জন্য কপালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন বঙ্গবন্ধু। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অধৈর্যের সুরে পরিচালকের সাথে কথোপকথন –

বঙ্গবন্ধু: এই, কতক্ষণ হাত তুইলা রাখব রে।
চাষী নজরুল: আর অল্প কিছুক্ষণ।
বঙ্গবন্ধু: আরে কী করস না করস তোরা।
এভাবেই ধারণ হল সংগ্রাম ছবির দৃশ্য।    BANGLA INSIDER, প্রকাশ: ১৫ অগাস্ট, ২০১৮।    
‘আমার দেখা নয়াচীন’ গ্রন্থে বাংলা ভাষার প্রতি তাঁর  দায়িত্ববোধ থেকে তিনি তাঁর সুস্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন:   
 ‘.. দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ ভাষার অন্যতম ভাষা বাংলা। আমি দেখেছি ম্যাডাম সান ইয়াৎ-সেন খুব ভালো ইংরেজি জানেন, কিন্তু তিনি বক্তৃতা করলেন চীনা ভাষায়। একটা ইংরেজি অক্ষরও তিনি ব্যবহার করেন নাই। চীনে অনেক লোকের সাথে আমার আলাপ হয়েছে, অনেকেই ইংরেজি জানেন, কিন্তু ইংরেজিতে কথা বলবেন না। দোভাষীর মাধ্যমে কথা বলবেন। আমরা নানকিং বিশ্ববিদ্যালয় দেখতে যাই। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস  চ্যান্সেলর ইংরেজি জানেন, কিন্তু আমাদের অভ্যর্থনা করলেন চীনা ভাষায়। দোভাষী আমাদের বুঝাইয়া দিলো। দেখলাম তিনি মাঝে মাঝে এবং আস্তে আস্তে তাকে ঠিক করে দিচ্ছেন যেখানে ইংরেজি ভুল হচ্ছে। একেই বলে জাতীয়তাবোধ। একেই বলে দেশের ও মাতৃভাষার উপরে দরদ। ’ 

মায়ের মুখের বুলি  

বলছি মায়ের মুখের শেখানো বুলিতে কথা বলার তৃপ্তির কথা। বাংলা, মায়ের শেখানো মধুর বুলি। মধুর এই বুলি কি হারিয়ে যাবে একদিন? তা না হয় একবিংশ শতাব্দীর শহরে বেড়ে উঠা গ্রাম ত্যাগ করে চলে আশা, গ্রামের, অথবা গ্রাম থেকে প্রবাসে পাড়ি দেয়া সেই মা বেড়ে উঠা সেই শিশুটিকে শাসন করে শুদ্ধ বাংলা ভাষা চর্চায় আজ মরিয়া । প্রয়জন আছে এমন চর্চার তাও অস্বীকার করছি না, ভেবে দেখুন মায়ের মুখের শেখানো সেই বুলিতে কথা বলার তৃপ্তিটা কেমন। কালক্ষেপণ চর্চার প্রভাব অনুধাবনের পর প্রবাসে বা শহরে বেড়ে উঠা সেই শিশুটিও একটা সময় আয়ত্ত করে মায়ের বুলি, যাকে আমরা আঞ্চলিক ভাষা বলে থাকি। আমাদের উচিত উপভাষার সঠিক চর্চাকে পুনরুজ্জীবিত, সংরক্ষণ ও সমৃদ্ধি করা।  

স্বাধীন বাংলার ভূখণ্ডে আঞ্চলিক বাংলা ভাষা ও বহির্বিশ্বে এর ব্যাবহার ।

বাঙালির স্বাধীন এই ভূখণ্ডে ক্ষেত্রবিশেষে আঞ্চলিক ভাষার উদ্দেশ্যবিহীন ব্যাবহার, ভাষিক সম্প্রদায় বা ভাষা সম্প্রদায়ের অসাম্প্রদায়িক বিফলতা, অর্জন, একবিংশ শতাব্দীতে বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের মনোভাব এবং অবুঝের মত ‘বাঙালি’ শব্দটির শ্রদ্ধাহীন অমার্জিত অপরিপক্বতার বহিঃপ্রকাশ, এ কয়টি বিষয় নিয়ে ভাবনার সময় এখনি।  

ভারতে ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে আদমশুমারিতে ১,৬৫২ টি আঞ্চলিক ভাষাকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল৷ যদিও পরে তা কমিয়ে আনা হয়েছে৷  জাপানিজদের কথা বলার ভাষা হল নিহন কিন্তু তাদের প্রতিটা প্রদেশে বা প্রিফেকচারে একটা করে নিজেস্ব আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে। লক্ষণীয়- শেরে বাংলা এ-কে ফজলুল হক অখন্ড বাংলার আমলে আইনসভায় বরিশাইলের ভাষায় ভাষণ দিয়েছিলেন এ কথা কজনেরই বা জানা আছে। 

আমাদের জানা উচিত ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রকাশিত এক প্রবন্ধে প্রকাশ পায় বিশ্বের শীর্ষ ১০০টি ভাষার মধ্যে ৯৭ স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশের সিলেট ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষা।, সর্বাধিক কথিত ১০০ ভাষার তালিকায় ১ কোটি ৩০ লাখ ভাষাভাষীর চাটগাঁইয়া ভাষার অবস্থান ৮৮ আর ১ কোটি ১৮ লাখ ভাষাভাষী নিয়ে সিলেটি ভাষার অবস্থান ৯৭তম। বিষয়টা এমনি এমনি ঘুম থেকে উঠে হয়ে গেলো তা কিন্তু নয়। সিলেটী ভাষার একসময়ে আলাদা একটা লিপিও ছিল (সিলেটী-নাগরী)। 

ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কথা বলা হয় ইংরেজি ভাষায়। প্রথম স্থানে থাকা এ ভাষায় কথা বলে ১১৩ কোটি মানুষ। দ্বিতীয় স্থানে মান্দারিন চাইনিজ ভাষায় কথা বলে ১১১ কোটি মানুষ। তৃতীয় স্থানে হিন্দিতে কথা বলে ৬১ কোটি মানুষ। চতুর্থ স্থানে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলে ৫৩ কোটি মানুষ। এ তালিকায় সপ্তম স্থানে রয়েছে বাংলা ভাষা। সারা বিশ্বে প্রায় ২৬ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।  

ভাষা নিয়ে গবেষণা এবং অনুসন্ধানকারী প্রতিষ্ঠান ইথনোলগ এর সর্বশেষ প্রকাশনায় জানানো হয়েছে বাংলাদেশে মোট ভাষার সংখ্যা হচ্ছে ৪২ টি। তারা এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে পৃথিবীর মোট ভাষা, এবং ভাষার বিশ্লেষন সর্ম্পকে বেশ কয়েক ধরনের তথ্য উপস্থাপন করা হয়। প্রকাশনায় বাংলাদেশে প্রচলিত ভাষার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর সংখ্যাও তুলে ধরা হয়। 

বাংলাদেশে মোট উপভাষার সংখ্যা।  

১. বাংলা (২০০১ সালের সেনসাস অনুযায়ী)-১১ কোটি, ২. ডবহারী-২ লাখ ৫০ হাজার, ৩. আসামী-৯ হাজার, ৪. আটং-৫৪০০, ৫. ডবঞ্চুপুরী-৪০ হাজার, ৬. বার্মিজ-৩ লাখ, ৭. চাক-৫৫০০, ৮. চাকমা-১ লাখ ৫০ হাজার, ৯. চীন আসো-২৩৪০, ১০. চীন বাওয়েম-১৩৫০০, ১১. চীন ফালাম-অনুসন্ধান চলছে, ১২. চীন হাকা-১২৬০, ১৩. চীন খুমী-২০৯০, ১৪. চট্টগ্রামের আঞ্চলিক-১ কোটি ৩০ লাখ, ১৫. গাড়ো-১ লাখ ২০ হাজার, ১৬. হাজং-৮ হাজার, ১৭. ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ-অনুসন্ধান চলছে, ১৮. কোচ-৬ হাজার, ১৯. খোসী-অনুসন্ধান চলছে, ২০. কোদা-১৩০০, ২১. কোক বরক-৫ হাজার, ২২. কুরক্স-৪০ হাজার, ২৩. এার্মা-দেড় লাখ, ২৪. মেগাম-৬৮৭০, ২৫. মিটেই-১৫ হাজার, ২৬. মিজু-২৫০, ২৭. মরো-৩০ হাজার, ২৮. সুন্দারী-২৫০০, ২৯. পাঙ্খুরা-২৫০০,৩০. পিনার-৪ হাজার, ৩১. রাখিনি-৩৫ হাজার, ৩২. রংপুরী-১ কোটি (ভারতসহ দেড় কোটি), ৩৩. রিয়াং-৫০০, ৩৪. রোহিঙ্গা-২ লাখ, ৩৫. সাদরী ওরিয়ান-১ লাখ ৬৬ হাজার, ৩৬. সান্তলা-১ লাখ ৫৭ হাজার, ৩৭. সাওরিয়া-৭ হাজার, ৩৮. সিলেটি-৭০ লাখ (ভারতসহ ১ কোটি ৩ লাখ), ৩৯. টান চইঙ্গা-২১ হাজার ৬০০, ৪০. ত্রিপুরা-৮৫ হাজার, ৪১. ও ছৈ-২২ হাজার ৪০০ এবং ৪২. ওয়ার জৈন্তিয়া-১৬ হাজার।

৭ কোটি বাঙালিকে দেয়া বঙ্গবন্ধুর প্রতিশ্রুতি।   

বঙ্গবন্ধু ৭ কোটি বাঙালিকে দেওয়া তাঁর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরপরই, ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি অনুধাবন করেন যে প্রমিত বাংলা ভাষা এর আঞ্চলিক রূপের সঙ্গে শত্রুতামূলক নয়।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ৪ জানুয়ারি, ছাত্রলীগের ২৩ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে, অত্যন্ত ক্ষোভের সাথে বঙ্গবন্ধু বলেন, 'অতীতে বাংলাদেশের গৌরবময় ইতিহাসকে বিকৃত করার সুপরিকল্পিত চেষ্টা করা হয়েছে। বাংলা ভাষা, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমার মুখের ভাষাকে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা আন্দোলন করে তা রুখেছি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামকে বাদ দিয়ে বাংলাভাষা এবং সাহিত্যের কথা ভাবা যায় না। কিন্তু এর ওপর বারবার হামলা এসেছে। ভেবে অবাক হতে হয়- কাজী নজরুলের কবিতার শব্দ পরিবর্তন করা হয়েছে। গানের শব্দ বদল করে রেডিওতে গাওয়া হয়েছে।'

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী ভাষণে তিনি বললেন, 'ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আমি ঘোষণা করছি যে, আমার দল ক্ষমতা গ্রহণের দিন থেকেই সকল সরকারি অফিস-আদালত ও জাতীয় জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে বাংলা চালু করবে। এ ব্যাপারে আমরা পরিভাষা সৃষ্টির জন্যে অপেক্ষা করবো না। কারণ তাহলে সর্বক্ষেত্রে কোনোদিনই বাঙলা চালু করা সম্ভব হবে না। এই অবস্থায় কিছু কিছু ভুল হবে, কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না। এভাবেই অগ্রসর হতে হবে।'

এখানে লক্ষণীয় তিনি বাংলা ভাষাকে সার্বজনীন করার পাশাপাশি সরকারি অফিস-আদালতে এর প্রয়োগ নিয়েও গবেষণা করেন। আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগেই তিনি পরিভাষা ব্যাবহার নিয়ে সঙ্কা প্রকাশ করেন। যা স্বাধীনতা পরবর্তী পঞ্চাশ পেরিয়েও প্রজুক্তি ও শিল্প বিপ্লবের এ যুগেও অপেক্ষা শব্দটায় বন্ধি। দোষটা কি তাহলে আমাদের স্বদিচ্ছার অভাব নাকি সাহসিকতার? আমার মনে হয় স্বদিচ্ছার কারণ বাঙালি বীরের জাতি।    

ইতিকথা

স্বাধীন বাংলায় ভাষাগুলোকে জীবন্ত ও সচল রেখে মৌখিক রূপের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে লিপি ও লেখ্যরূপ গঠনের পক্রিয়া চলমান করতে হবে যদিও তা হবে কষ্টসাধ্য। প্রয়োজনে তৈরি করতে হবে  কাঠামোগত ব্যাকরণ। এসকল ভাষায় তুলনামূলক কম প্রকাশিত লেখা ও বই পাওয়া যায় অন্যদিকে যে সকল উপভাষার তেমন কোন প্রকাশনা নেই তা আমাদের কাছে অশুদ্ধ ও অক্ষরহীন ভাষা বলে পরিচিত। যা কোনমতেই সুশীল চিন্তার বিস্তার নয়। আমাদের খুজে বের করতে হবে বিজ্ঞানসম্মত প্রক্রিয়া যার মধ্য দিয়ে আঞ্চলিক ভাষা উপভাষাগুলো নতুন বটবৃক্ষে রুপ নিবে। 

কালের বিবর্তনে আমরা যেমন করে সাংকেতিক ভাষা বা প্রতীকী ভাষার উৎকর্ষের ফলে আগতরে উজ্জ্বল আলোয় আলকিত করেছি ঠিক তেমনি সময়ের স্রোতে হয়ত একদিন এই সকল আঞ্চলিক উপভাষায় সৃষ্টি হবে কালজয়ী কত সৃষ্টি।        

জাতির পিতা   বঙ্গবন্ধু   শেখ মুজিবুর রহমান   মুক্তিযুদ্ধ   বাঙালি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন