ইনসাইড থট

“সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করা” - ২


Thumbnail “সঠিক কাজটি সঠিকভাবে করা” - ২

7-S ফ্রেমওয়ার্কের দ্বিতীয় 'S' টি হচ্ছে Strategy বা কৌশল। যুদ্ধ, রাজনীতি, ব্যবসায় বা খেলার পরিকল্পনার বিস্তারিত পন্থাকেই কৌশল বলে। কৌশল হচ্ছে উদ্দেশ্য অর্জনের উপায় (strategy is the way of gaining objectives)। প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রই একটি যুদ্ধক্ষেত্র, জয়ের জন্য চাই কৌশল। বিশ্বাস, সাহস, মনোবল, দেশপ্রেম, শক্তি ইত্যাদি যুদ্ধ জয়ের জন্য আজও প্রাসঙ্গিক; কিন্তু ঘোড়া বা উটের পিঠে চড়ে তলোয়ারের যুদ্ধের আমলে এগুলো যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল আধুনিককালের যুদ্ধে 'কৌশল' এর চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ  হয়ে দেখা দিয়েছে। অবশ্য আদিকালের চীনা সমরবিদ সান জু (Sun Tzu) যুদ্ধ জয়ের জন্য কৌশলের উপরেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে সান জু রচিত "সুন্চি বিংফা" (The Art of War) কে রণকৌশলের উপর লেখা শ্রেষ্ঠ বই মনে করা হয়। প্রায় আড়াই হাজার বছর পরেও বইটি প্রাসঙ্গিক।

কৌশলের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আগামী দিনে কিভাবে জয়ী হওয়া যাবে তা স্থির করা ('determining how we going to win in the period ahead')। কৌশল বিশেষজ্ঞ মাইকেল পোর্টার (Michael Porter) এর মতে একই বাজারে একই কৌশল অবলম্বনকারীদের নিয়ে 'strategic group' গঠিত হয়। কোন একটি কৌশল যে প্রতিষ্ঠান প্রথম প্রয়োগ করে তাঁরাই বেশি  মুনাফা করে। যেসকল প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট কৌশল থাকে না এবং এ নিয়ে অস্থিরতায় ভুগতে ভুগতে প্রায় সকল কৌশল গ্রহণ করতে দৌড়ঝাঁপ করে তাঁরা সুবিধা করতে পারে না। অনেক প্রতিষ্ঠানই মনে করে সবাই যে কাজটি করছে সেই কাজটি যদি তাঁরা আরো কার্যকরভাবে করতে পারে তাহলেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হবে। প্রচলিত কাজটি করার নৈপুণ্য বা দক্ষতা তাঁদের এগিয়ে রাখবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে প্রতিযোগীরা সহজেই তাঁর নৈপুণ্য বা দক্ষতা নকল করবে এবং তাঁর নৈপুণ্যকে বেঞ্চমার্ক ধরে একই জায়গায় পৌঁছে যাবে, এবং তা অতিক্রম করবে। এতে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানটির কার্যকর দক্ষতার প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ধীরে ধীরে হ্রাস পেতে থাকবে।

মাইকেল পোর্টার এর মতে কৌশল হচ্ছে, "the creation of a unique and valuable position involving a different set of activities"। অর্থাৎ অন্যদের চেয়ে ভিন্ন কিছু করে একটি স্বাতন্ত্র্য ও মূল্যবান অবস্থান তৈরি করা। একটি কোম্পানি তখনই বলতে পারে তাঁদের কৌশল আছে, যদি তাঁরা প্রতিযোগিরা যা করে তার বাইরে কিছু করছে, অথবা প্রতিযোগিরা যেভাবে যে কাজগুলো করছে তাঁরা সেগুলো ভিন্নভাবে করছে (performs different activities from rivals or performs similar activities in different ways)। কৌশল নিয়ে চিন্তা করার প্রারম্ভিক সূচনা বিন্দু হিসাবে মাইকেল পোর্টার তিনটি আদি কৌশলের(generic strategies) প্রস্তাব করেছেন-

(১) সর্বনিম্ন খরচে ব্যবসায় নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা (overall cost leadership) :  উৎপাদন, ক্রয়, বিতরণ, ও অন্যান্য খরচ কমিয়ে ক্রেতাকে মূল্য এবং অন্যান্য সুবিধা দেয়া গেলে সহজেই অধিক মার্কেট শেয়ার দখলে নেয়া যায় ।  চাহিদার সার্বজনীন তত্ত্ব অনুযায়ী, কিছু ব্যতিক্রম বাদে অন্যান্য শর্ত ঠিক রেখে, যে কম দামে পণ্য দিতে পারবে তাঁর পণ্যই বেশি বিক্রি হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে অনেক সময়ই মূল্যের উপর কোন কোম্পানির একক নিয়ন্ত্রণ থাকেনা ।  বাজার মূল্যে কোম্পানিকে পণ্য বিক্রি করতে হয়। বাজার  মূল্যে সবাই পণ্য বিক্রি করলে প্রতিযোগীদের মধ্যে সেই লাভবান হবে যার উৎপাদন ও বন্টন খরচ কম ।  পণ্যের দামের সাথে মানের মনস্তাত্ত্বিক সম্পর্ক থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান এ পথে যেতে চান না ।  তাহলে খরচ হ্রাস পেলে দাম  না কমিয়েও ভ্যালু বৃদ্ধির জন্য বাজারজাতকরণের  অন্যান্য উপাদানে, যেমন- উন্নত বিতরণ ও কার্যকরী প্রমোশনে, উৎপাদন খরচের সাশ্রয়ী অর্থ ব্যয় করে বাজার দখলে নেয়া যেতে পারে । পোর্টারের এই কৌশলটি  Harvard বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছে, তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যবইয়ে  লিপিবদ্ধ হয়েছে ।  আসলে এটা অনেক পুরনো একটা ভারতীয় প্রবচন,  যা কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রেও আছে, "বেচার সময় লাভ করা যায় না, লাভ করতে হয় কেনার সময়" ।  আজকাল মাছ বাজারেও সকল মাছ বিক্রেতা একই দামে মাছ বিক্রি করে ।  তবে  এদের মধ্যে সেই সবচেয়ে লাভবান হয় যে আরিচা ঘাটে মাছ কেনার সময় কম দামে কিনে, বেশি পরিমাণে কিনে, নিজস্ব পরিবহনে ঢাকায় এনে নিজেই মাছ বিক্রি করে, অথবা সারারাত মাছ ধরে (ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ) । কম খরচে উৎপাদন ও ব্যবসায় করার জন্য উদ্ভাবনের কোন বিকল্প নেই ।  কাঁচামাল ও জ্বালানি সংকটের এই দিনে কোম্পানিকে সাশ্রয়ী বিকল্প কাঁচামাল এবং বিকল্প সূত্র থেকে শক্তির যোগান নিতে হবে।  কম খরচে বেশি উৎপাদনের গবেষণায় বিনিয়োগ করতে হবে ।  কৃষি, শিল্প এবং ব্যবসায় সবক্ষেত্রেই খরচ কমানোর জন্য উদ্ভাবনী চিন্তা করতে হবে।

(২)পৃথকীকরণ(differentiation): ভিন্নতা হচ্ছে যুদ্ধ  জয়ের অন্যতম আবশ্যকীয় উপাদান, ভিন্নতা  আপনাকে আনতেই হবে ।  প্রতিযোগিতামূলক দুনিয়ায় ভিন্নতা না থাকলে আপনি কারো নজর কাড়তে পারবেন না। প্রত্যক্ষণ তত্ত্ব  অনুযায়ী ভিন্নতাই মানুষের মনোযোগের প্রথম কেন্দ্রবিন্দু ।  রাস্তা দিয়ে অনেকগুলো রাজহাঁস হেঁটে যাচ্ছে ওই দলে একটা পাতি হাঁসের বাচ্চা থাকলে সবার আগে আপনার দৃষ্টি সেদিকেই যাবে ।  হিন্দি সিনেমায় অনেক সুন্দরী পরিবেষ্টিত অবস্থায় নায়িকাকে ভিন্ন পোশাক পরিয়ে অন্যদের থেকে আলাদা করা হয় ।  কখনো কখনো সহনায়িকারা মূল নায়িকার চেয়ে  সুন্দরী হতে পারে ।  ৫০ বা ১০০ বান্ধবীসহ নায়িকা সমুদ্রসৈকতে ঢেউয়ের তালে তালে নাচছে, এরমধ্যে নায়িকা কোন্ টা ?  দেখবেন, পরিচালক অন্য সকলকে  হাফপ্যান্ট পরালেও নায়িকাকে ফুলপ্যান্ট পরিয়েছে ।  তাঁর কাপড়ের রংও অন্যদের চেয়ে ভিন্ন ।  বাজারে অবস্থান(position) অর্থাৎ ক্রেতর মনে স্থান পেতে এই ভিন্নতা কাজে আসে । আজকাল ব্র্যান্ডিং নিয়ে যত তৎপরতা তার প্রারম্ভিক বিন্দু হচ্ছে পৃথকীকরণের মাধ্যমে ক্রেতার মনে অবস্থান গ্রহণ ।  (বাজারে অবস্থান গ্রহণ বা positioning নিয়ে আমার 'সংকটে মার্কেটিং' পুস্তকে বিস্তারিত উপস্থাপনা আছে । আগ্রহী পাঠক ওই পুস্তকটির দশম অধ্যায়টি পড়লেই পুরো বিষয়টা অনুধাবন করতে পারবেন, বইটি 'রকমারী'তে পাওয়া যায়)।

(৩) ফোকাস(Focus): কোন কোম্পানির পক্ষে সকলকে সন্তুষ্টি করা অসম্ভব। এমনকি সব কোম্পানির চেষ্টার পরও সকল ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করা যাবেনা ।  কিছু অসন্তুষ্ট ক্রেতা থেকেই যাবে, তাঁদের সন্তুষ্টির জন্য 'nichemanship' লাগবে।  কোন কোম্পানিরই সকল ক্রেতাকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করা উচিত নয় ।  বাজারের এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট অংশকেই তাঁকে টার্গেট করতে হবে। ঢাকা শহরে একটা মাইক ভাড়া করে সারাদিন একই কথা বলে, " আমি তোমাদের ভালোবাসি, আমি তোমাদের ভালোবাসি..." মাইকিং করলেও একমাত্র শব্দ দূষণের দায়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকদের হাতে মামলা খাওয়া ছাড়া আর কোনো সাড়া পাওয়া যাবে না।  যাকে ভালোবাসেন তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে মাইক তাক করে নাম ধরে বলতে হবে, " .... (নাম), আমি তোমাকে ভালোবাসি"। তখনই ঋণাত্মক(বদমাশ) অথবা ধনাত্মক(পা গ ল !) যাই হোক না কেন একটা সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা আছে।

(৩) জোট (Alliance): আজকাল ব্যবসায় সফলতার অন্যতম একটি কৌশল হচ্ছে কয়েকটা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান  মিলে জোট গঠন করা (আমাদের দেশের তেল ব্যবসায়ীদের "সিন্ডিকেট" নয়) । অনেকটা নির্বাচনে জেতার জেটের মত। রাজনৈতিক জোট গঠন করে প্রতিপক্ষ দলকে ধরাশায়ী করতে দেখা যায় ।  দেশে দেশে,  বিশেষ করে আমাদের এই অঞ্চলের রাজনীতিতে জোটের প্রভাব বেশি। পাকিস্তানে অতিসম্প্রতি  জোটের রাজনীতির মাধ্যমে ক্ষমতায় উত্থানপতন দেখেছি। জোট গঠনের সূত্রটি আমরা জ্যামিতি থেকে পাই, "ত্রিভুজের যেকোনো দুইটি বাহুর দৈর্ঘ্যের সমষ্টি তৃতীয় বাহু অপেক্ষা বৃহত্তর" (উপপাদ্য- ৪) ।  কৌশলগত অংশীদারিত্ব তৈরীর মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীরা লাভবান হচ্ছে ।  অন্যের সাথে অংশীদারিত্ব ছাড়া পৃথিবীর বৃহত্তম কোম্পানির  পক্ষেও জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব অর্জন সম্ভব নয়।  এক কোম্পানির সম্পদ এবং যোগ্যতা অন্য কোম্পানি ব্যবহার করার পিছনে অন্যতম যুক্তি হচ্ছে, "যে কাজটা আমি ভালো পারি সেই কাজটা নিজেই করব, যে কাজটা অন্য কেউ আমার চেয়ে ভালো পারে বা সাশ্রয়ীভাবে করতে পারবে, তাঁকে দিয়ে সেই কাজটা করিয়ে নেব" ; এতে উভয়পক্ষের লাভবান হওযর সুযোগ থাকে   ( Ricardian  Theory of Competitive Advantage)।  পুরো প্রক্রিয়াটা আজকাল আউটসোর্সিং এর অংশ। এছাড়া অনেক দেশেই বিদেশীরা ব্যবসায় করতে গেলে স্থানীয় একটি কোম্পানিকে  নিয়ে জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানি করতে হয়। এমনকি কোন কোন দেশে স্থানীয় একটি কোম্পানি থেকে কাঁচামাল, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি কিনে ওই দেশ পণ্যটিকে  আভ্যন্তরণীকরন  (internalization)   করে নিতে হয়।  আমাদের দেশে যত বিদেশি ঠিকাদার কাজ করছে তাঁদের প্রত্যেকেরই স্থানীয় একজন অংশীদার আছে ।  স্থানীয় অংশীদার কোম্পানির লোকেরা দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ও আইনি পরিবেশে খাপ খাওয়াতে, তদবির করতে,  ফাইল move করাতে, ঘুষ প্রদান এবং প্রভাব বিস্তারে বিদেশি কোম্পানিকে সাহায্য করে।

নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের নিকট  সেবা ও পণ্যসম্ভার যত বিস্তৃত হচ্ছে এতে জোট গঠনের আবশ্যকতা ততোই বাড়ছে ।   কৌশলগত জোটের আবশ্যকীয়তা অনেক পুরনো প্রবাদ থেকে এসেছে, " if you can't beat 'em, join 'em" । প্রবাদটিকে ইদানীংকালে সামান্য পরিবর্তন করে বলা হয় "Join 'em and you can't be beat."    (J C Mason,1993)। এর অর্থ হচ্ছে প্রতিপক্ষ যদি এতই শক্তিশালী হয় কোন ভাবেই তাকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় তাহলে তাঁদের সাথে মিলে যাওয়াটাই ভালো । এতে মিলিতভাবে জয়ী হওয়া যাবে, না হলে অন্তত পরাজয়টা এড়ানো যাবে । ১৯৩২ সালে "Atlantic Monthly" পত্রিকায় সিনেটর ওয়াটসনের উক্তি হিসেবে এটি বেশ সাড়া জায়গায় , যদিও এটি একটি প্রাচীন প্রবচন ("If you can't lick 'em, jini 'em") ।  বাস্তবতা হচ্ছে নতুন দিনের প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পগুলো জন্মের সময়ই বৈশ্বিক কোম্পানি হিসেবে জন্মগ্রহণ করে ('born global') ।  তাঁরা সবকিছুই বিভিন্ন দেশের কৌশলগত অংশীদারদের সহায়তা নিয়ে করে ।  বিভিন্ন কারণে জোট গঠনের ধারণা আরো জোরালো হচ্ছে-  চলতি বাজারের ও প্রযুক্তির শূন্যতা পূরণ করা, অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহার  করে লাভবান হওয়া, নতুন বাজারে প্রবেশের খরচ  হ্রাস  করা,  নতুন পণ্য বাজারে ছাড়া ত্বরান্বিত করা,  অর্থনৈতিক স্কেল অর্জন অর্থাৎ বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে খরচ কমানো,  ব্যবসায় এবং আইনি প্রতিবন্ধকতা উতরে যাওয়া, বর্তমান কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণ, বাজার থেকে সরে আসার খরচ কমানো  । এক দেশে যখন পণ্যের পতনকাল দেখা যায়, অন্য দেশে সেটা তখনও প্রবৃদ্ধি স্তরে রয়ে গেছে, তখন এক দেশ থেকে পন্য বা উৎপাদন ব্যবস্থা অন্য দেশের স্থানান্তর করা যায় (Stratford Sherman,1992 ) ।  মারকেটিং জগতে প্রচলিত জোটেগুলো হচ্ছে-  পণ্য বা সেবা জোট, প্রমোশন জোট, লজিস্টিক জোট, এবং মূল্য জোট।

রাজনৈতিক জোটে (বিশেষ করে বাম জোটে, কথিত আদর্শগত দ্বন্দ্বের কারণে) যেমন প্রায়ই ভাঙ্গন দেখা দেয় তেমনি ব্যবসায়িক জোটেও ভাঙ্গনের  হার কম নয় । জোটের গঠনের পক্ষে অনেক যুক্তি থাকার পরও এক্ষেত্রে শতকরা হিসাবে ব্যর্থতার হার বেশ উঁচু। McKinsey and Company  একটি গবেষণায় দেখিয়েছেন ৪৯ টি ব্যবসায় জোটের এক তৃতীয়াংশ অংশীদারের প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায়  ব্যর্থ হয়েছে বা ভেঙ্গে গেছে।  এ ধরনের দুঃখজনক অভিজ্ঞতা যেন না হয় সেজন্য বিশ্বখ্যাত পরামর্শক কোম্পানিটির তিনটি সুপারিশ  হচ্ছে- ১) কৌশলগত মিল(strategic fit): কারো সাথে জোট গঠনের আগে কম্পানিকে তাঁর নিজের মৌলিক কর্মক্ষমতাগুলো মূল্যায়ন করতে হবে। এরপরেই তাঁদের অংশীদার হিসেবে ব্যবসায় একই ধারায়, ভিন্ন ভৌগোলিক অবস্থানে অথবা তাদের কর্মদক্ষতার(competencies) সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে এমন অংশীদারি নির্বাচন করতে হবে ।  bkash এবং visa card এর মধ্যে অংশীদারিত্ব কৌশলগত মিলের কারণে অনেকদিন টিকে থাকবে। তাছাড়া দুটি প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে এত লোকের কাছে পৌঁছাতে পারবে  না । (২) দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি (long term focus):  সাময়িক অসুবিধা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে তাৎক্ষণিক লাভের আশায় যেমন সমবায় সমিতি টিকে থাকে না, তেমনি ব্যবসায়ী জোট  স্বল্প দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে তৈরি হলে তাও টিকবে না। সাময়িকভাবে কিছু অর্থ সাশ্রয় অর্জনের বিষয়টি মাথায় না রেখে দীর্ঘমেয়াদী ফলাফলকে গুরুত্ব দিতে হবে । (৩) নমনীয়তা(flexibility): নমনীয় হতেই হয় ব্যবসায়ী জোটকে। নমনীয় জোটিই  টিকে থাকে।  বিশেষ করে বিদেশী অংশীদাররা পারিপার্শ্বিকতার কারণেই বিভিন্ন মোচড় দিতে পারে। মোচড়ের সুযোগ না রাখলে জোট ভেঙে যাবে।

২০০৪ সালে অধ্যাপক ডব্লিউ. চ্যান কিম এবং রেনে মাবার্ণ (W Chan Kim and Renée  Mauborgane) বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সর্বোচ্চ সাফল্যের এক যুগান্তকারী কৌশলের  বর্ণনা করেছেন । তাঁদের "Blue Ocean Strategy: How to Create Uncontested Market Space and Make Competition Irrelevant" বইয়ে প্রতিযোগীদের রক্তে রঞ্জিত মহাসাগরে (Red Ocean) না নেমে এমন সাগরে (বাজারে) নামতে হবে যেখানে প্রতিযোগী নেই, থাকলেও অতি নগন্য ( Blue Ocean ) । তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে মূল্য যুদ্ধ হয় ভয়ঙ্কর ।  যেহেতু অধিকাংশ ক্রেতা যে পণ্যের দাম কম সেটার প্রতি আগ্রহী হয় সেজন্য বেশিরভাগ প্রতিযোগী বাজার দখলের জন্য ধ্বংসাত্মক মূল্য প্রতিযোগিতায় নামে,  এটাই বাস্তবতা  ।  বাজার তাঁদের দখলেই যাবে যারা বেশি মূল্য সুবিধা দিতে পারবে ।  কিন্তু সকল প্রতিষ্ঠানের পক্ষে ধ্বংসাত্মক মূল্য যুদ্ধে নেমে অনবরত মূল্য কমানো সম্ভব নয় ।  বাজার অংশ বৃদ্ধি পেলেও এতে মুনাফা কমে যায় ।  তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে বাজার অংশ বৃদ্ধি  চলমান কালেই  মুনাফা কমতে থাকে । কারণ শেষের দিকের ক্রেতারা 'হার্ড কাস্টমার' অথবা অন্য কোম্পানির কাস্টমার ।  অবিবাহিত কাউকে বিয়ে করার চেয়ে বন্ধুর বউ বা বান্ধবীর স্বামীকে বিয়ে করা বেশ কঠিন ; কষ্ট(cost) বেশি হবে । বাজারজাতকারীর সংখ্যা বেড়ে গেলে ভোক্তার অনুপাত কমে যায়। এভাবেই তৈরি হয় 'রেড ওশান' ।

 বিদ্যমান বাজারের সম্ভাবনা কমে গেলে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে হয় যেখানে প্রতিযোগিতা নেই। ক্রেতা বিভাজিত হবেনা আর দামও কমাতে হবে না । এটাই হচ্ছে 'ব্লু ওশান' , যার অর্থ হচ্ছে নতুন চাহিদা সৃষ্টি করা ।  ক্রেতারা মনে মনে খুঁজছে (Latent demand) অথচ বাজারে নেই এমন জিনিস নিয়ে আসতে পারলেই প্রতিযোগিতা প্রাসঙ্গিকতা হারাবে। ক্রেতার মনে নতুন পণ্যটির ধারনা না থাকলেও ক্রেতা যদি অভিনব (innovative) পণ্যটি সম্পর্কে অবগত হওয়া মাত্রই পণ্যটির প্রয়োজন অনুভব করে তাহলেও সার্থকতা আসতে পারে।  ব্লু ওসান কৌশলের  অন্যতম মর্মার্থ হচ্ছে সাশ্রয়ী দামে পৃথকীকরণ (differentiation at low cost) ‌, অভিনব পণ্য বা সেবা সাশ্রয়ী দামে বাজারে নিয়ে আসা। মাইকেল Porter  কম খরচে ব্যবসায় এবং পৃথকীকরণকে আলাদা কৌশল হিসেবে দেখালেও ব্লু ওশান কৌশলে দুটির সম্মিলিত প্রয়োগ এর উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।  Al Ries এবং Jack Trout কর্তৃক সুপারিশকৃত বাজারে অবস্থান গ্রহণের অন্যতম কৌশল,"খালি জায়গা দখল করার ('to grab an unoccupied position') সাথে এর মিল আছে।  তবে ব্লু ওশান কৌশলের বাস্তব প্রয়োগের অনেক সফলতার কাহিনী আছে। এখানে প্রতিযোগিতা অপ্রাসঙ্গিক। প্রতিযোগীদের বাজার থেকে বের করার চেষ্টা না করে নিজেই এমন জায়গায় চলে যাওয়া যেখানে প্রতিযোগিতা নেই। 'ব্লু ওশান কৌশলে' বলা হয় ক্রেতা যেটাকে  গুরুত্বপূর্ণ মনে করে অর্থাৎ value এবং তাঁর  সাথে সামর্থের মধ্যে যেকোন একটাকে বেছে নেয়ার করার সুযোগ নেই। ক্রেতা যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়  সেটা কিভাবে তার সামর্থ্যের মধ্যে আনা যায় এই দুইটা বিষয়কে সমানভাবে গুরুত্ব দিলেই 'পৃথকীকরণ এবং কম খরচ' দুটিই অর্জন সম্ভব।

(চলবে)


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন