১৯৮০ এর দশকে আমি তখন বতসোয়ানায় ছিলাম। জেলার সিনিয়র প্রধান মেডিকেল অফিসার হিসাবে জেলার মানুষের স্বাস্থ্যের দায়িত্বে কাজ করছিলাম। আমাদের জেলার মেডিকাল দল একটি অত্যন্ত সফল যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ প্রোগ্রাম পরিচালনা করায় দেশে ভিতর আর বাহিরে অনেকের মনোযোগ সৃষ্টি করেছিল। একদিন একজন মার্কিন পরামর্শদাতা আমার দপ্তরে আমাদের প্রোগ্রাম এবং তার সাফল্য সম্পর্কে আরো জানতে আসেন। তিনি একজন আফ্রিকান আমেরিকান ছিলেন। আমি সত্যিই অবাক হয়ে শুনলাম তিনি আমাকে তার পরিচয় দেওয়ার প্রথমে জোর দিয়ে বললেন “আমাকে একজন আমেরিকান, আফ্রিকান আমেরিকান হিসাবে বিবেচনা করবেন। আমাদের নামে চালানো অনেক কিছুর জন্য আমি দায়ী নই”। আমি তার চোখে আমেরিকায় একজন আফ্রিকান হওয়ার কারণে তার দ্বন্দ্ব এবং কষ্ট দেখতে পেয়েছিলাম।
আমরা শ্বেতাঙ্গ আমেরিকার ইতিহাস এবং আফ্রিকান দাসদের সংগ্রামের কথা জানি, আরো জানি সমান অধিকার পাওয়া আর তাদের মানুষ হিসেবে সমানভাবে বিবেচনা করার জন্য তাদের লড়াই ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। ১৭ এবং ১৮ শতক জুড়ে, আফ্রিকা মহাদেশ থেকে মানুষ অপহরণ করা হয়েছিল, আমেরিকায় আর আমেরিকান উপনিবেশগুলিতে দাসত্বে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের তামাক এবং তুলার মতো ফসল উৎপাদনে কাজ করার জন্য অমানবিক আচরণ আর শোষণ করা হয়েছিল।১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে, আমেরিকার পশ্চিমমুখী সম্প্রসারণ এবং বিলুপ্তি আন্দোলন দাসপ্রথা নিয়ে একটি মহান বিতর্ককে উস্কে দিয়েছিল যা রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধে জাতিকে বিচ্ছিন্ন করে। যদিও ইউনিয়নের বিজয় দেশটির চার মিলিয়ন ক্রীতদাস মানুষকে মুক্ত করেছিল, আশ্চর্যজনক বিষয় হল আজও দাসত্বের উত্তরাধিকার আমেরিকার ইতিহাসকে প্রভাবিত করে চলেছে, মুক্তির এক শতাব্দী পরে আজও তাদের সমান নাগরিক অধিকারের আর আচরনের জন্য আন্দোলন করতে হচ্ছে। আজও সেখানে দৃশ্যমান অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্য রয়েছে। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন আমরা বিখ্যাত টিভি সিরিজ, “রুটস” দেখে বোঝার চেষ্টা করতাম এবং নিজেদেরকে প্রশ্ন করতাম কীভাবে তথাকথিত সভ্য বিশ্বে এমন মানবিক অসম্মান ঘটতে পারে! কি করে একটি তথাকথিত সভ্য সমাজ এমন কাজ করতে পারে! আমরা এই বিবেচনায় বড় হয়েছি যে প্রতিটি মানুষ সমান এবং প্রত্যেকেরই সমান অধিকার রয়েছে। সেই চিন্তা ধারায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমার এখনও মনে আছে স্কুলে থাকাকালীন আমরা দক্ষিণ আফ্রিকা এবং রোডেশিয়ায় (জিম্বাবুয়ে) বর্ণবৈষম্য ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছিলাম। আমি নামিবিয়ার মুক্তির জাদুঘরে, বাংলাদেশ পতাকা আর পুলিশের পোশাক দেখে গর্বিত হয়েছিলাম যারা ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের অধীনে সংখ্যাগরিষ্ঠ কালো মানুষের স্বাধীনতার জন্য প্রথম সংসদীয় নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে গিয়েছিলেন।
যখন আমরা মার্টিন লুথার কিংকে দেখি - আমরা মানবতা, সমান অধিকার এবং সমতা দেখি - প্রত্যেকের সাথে সমান আচরণের গুরুত্বের সংগ্রাম দেখি। যখন আমি একজন আফ্রিকান আমেরিকানকে দেখি, আমি ন্যায়বিচার এবং সমান আচরণ এবং সুযোগের জন্য সংগ্রাম এবং লড়াই করার বিষয়ে অবিচল হই। আমি যখন দেখি যে কোনও আফ্রিকান আমেরিকান, যেহেতু তিনি ধনী শক্তিশালী দেশ থেকে এসেছেন বলে, কারও মর্যাদা, সার্বভৌমত্ব এবং সমান অধিকারকে ক্ষুণ্ণ বা হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে তখন আমি বিস্মিত হই এবং তা আমাকে অনেক কষ্ট দেয়।
কয়েক বছর আগে যখন আমি নামিবিয়ায় WHO প্রতিনিধি হিসেবে ছিলাম, তখন অনেক রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনারের সাথে কাজ করার এবং বন্ধুত্ব গড়ে তোলার অনন্য সুযোগ পেয়েছি। তাদের সাথে এখনও যোগাযোগ করি। তাদের কাছে কূটনীতির শিল্প আর কীভাবে একজন কূটনীতিকের আচরণ করা উচিত তা শিখেছি। আমি তাদের সম্মান করেছি এবং সমানভাবে তাদের সম্মান অর্জন করেছি। আমার বাসায় আমেরিকান, ব্রিটিশ, রাশিয়ান, চীন, ভারতীয়, স্পেনীয়, জার্মান, ব্রাজিলিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান এবং কেনিয়ার রাষ্ট্রদূত এবং হাই কমিশনার এবং তাদের সহধর্মিদের সাথে সবাই একসাথে খাবার টেবিলের চারপাশে বসে আমার রান্না করা বাংলাদেশী খাবার উপভোগ করার সুযোগ পেয়েছি, ঘন্টার পর ঘন্টা ভাল সময় কাটার সুযোগ পেয়েছি। সেই সমস্ত রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারা তাদের বাসভবনে প্রাইভেট ডিনারে সমানভাবে আমাকে অনেকবার আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। তাদের সাথে মিশে আমি কূটনীতি, আচরণ এবং শালীনতার ভাষা শিখেছি। আরো শিখেছি কীভাবে মাস্টার হিসাবে নয় সমান অংশীদার হিসাবে, কোন দেশের সরকার, নিয়ম এবং সিদ্ধান্তকে সম্মান করতে হয়। সাহায্যের হাত প্রসারিত করতে হয়।
আজকে যখন দেখি বাংলাদেশে শক্তিশালী এবং ধনী দেশের কিছু রাষ্ট্রদূত নির্বাচন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের নিয়ে নেতিবাচক কথা বলছেন, তখন আমি অবাক হই। হ্যাঁ, প্রত্যেকেরই তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে, কিন্তু তা করবেন কূটনৈতিক শালীনতা এবং নিয়মের মধ্যে। তারা যে সকল মানুষের সমস্যা ও দুর্ভোগ তুলে ধরার প্ল্যাটফর্ম নেই তাদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠতে পারেন। একটি স্বাধীন ও গর্বিত জাতি হিসেবে সরকার তাদের পরামর্শ এবং সমর্থন স্বাগত জানায়। মানবাধিকারের উন্নয়ন, বাক স্বাধীনতা, তথ্য আর সংবাদপত্রের স্বাধীনতা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কূটনীতিকরা পরিবর্তন আনতে মাস্টার হিসাবে নয়, সমান অংশীদার হিসাবে সরকারের সাথে কাজ করতে পারেন। আরও ভাল করার জন্য, আদেশ বা হুমকি না দিয়ে একজন অংশীদার হিসাবে সরকারি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পারেন দেশের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে। হ্যাঁ, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল জাতি হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ তাদের মতো সম্মান ও মর্যাদার সাথে কোনো হুমকি, হস্তক্ষেপ ও হুকুম ছাড়াই নিজের ভালোটা বিবেচনা করে নিজের মত বাঁচতে চায়।
আমি অনুরোধ করবো আপনি বাংলাদেশের দিকে আঙুল তোলার আগে দয়া করে আপনার দিকে তাকান। আফগানিস্তান, লিবিয়া আর ইরাকে আগ্রাসন ও ধ্বংস, সেটা কি আন্তর্জাতিক আইন মেনে এবং সার্বভৌম অধিকারকে সম্মান জানিয়ে করা হয়েছিল? বিশ্বব্যাপী পরিবেশন ( rendition - সন্ত্রাসবাদে সন্দেহভাজন বিদেশী নাগরিকদের জর্ডান, ইরাক, মিশর, ডিয়েগো গার্সিয়া, আফগানিস্তানে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ সুবিধায় নেয়া), আবু ঘরায়েবে বন্দীদের নির্যাতন, গুয়ানতানোমো বে কারাগারে বছরের পর বছর মানুষদের পশুর মতো বিচার অধিকার ছাড়া বন্দী করা, তাদের অধিকারের কী হবে? ২০০১ সাল থেকে দেশপ্রেমিক আইন (patriot act) কীভাবে সংবাদপত্র এবং ব্যক্তি স্বাধীনতাকে প্রতিফলিত করে? কিছু তেল সমৃদ্ধ দেশের মত একটি অগণতান্ত্রিক, যেখানে মানবাধিকার এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অনুপস্থিত সেই দেশকে কীভাবে আপনারা সমর্থন করতে পারেন? মিশর বা থাইল্যান্ডে সামরিক স্বৈরশাসককে কেন সমর্থন করেন? সে দেশ গুলোতে আপনার সমর্থনের নৈতিক ব্যবস্থা আর শর্তাবলী নির্দেশ করার সাহস কেন করেন না? আপনার নিজের স্বার্থ বাঁচানোর জন্য ভেনেজুয়ালা থেকে আপনার আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অপসারণ করার সাথে সাথে আপনি কীভাবে অন্যান্য দেশকে হুমকি বা নির্দেশ দেওয়ার নৈতিক কর্তৃত্ব রাখেন? আপনি কীভাবে সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলেন যখন অনেক আফ্রিকান বা অশ্বেতাঙ্গদের ভোট দেওয়ার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, যখন পরাজিত ব্যক্তি এখনও দাবি করেন যে ভোট কারচুপি বা চুরি হয়েছে? হ্যাঁ, আমরা আপনাদের মতামতকে সম্মান করি। আমরা সবার সাথে সমান অংশীদারের হিসাবে এবং পারস্পরিক সম্মান ও মর্যাদার সাথে কাজ করতে চাই।
কিন্তু আমাদের সাথে রাষ্ট্রদূতদের আচরণ আর সাহস দেখে রাষ্ট্রদূত আমি আপনাদের দোষ দেই না। আমি নিজেদের দোষারোপ করি যখন আমি দেখি আমাদের অনেক রাজনৈতিক দলের নেতারা, নাগরিক সমাজের সদস্য, বুদ্ধিজীবীরা বার বার দৌড়ে সমর্থনের জন্য আপনাদের দরজায় কড়া নাড়ছেন এবং আপনাদের হস্তক্ষেপের অনুরোধ করছেন। আমি যখন দেখি আমাদের সাংবাদিকরা আপনাদের আমন্ত্রণ পেয়ে এবং আপনাদের উপস্থিতিতে পার্টিতে যোগ দিতে এত গর্বিত বোধ করেন। আমরা আমাদের নিজেদের লড়াই নিজেরা চেষ্টা না করে, আমাদের নোংরা কাপর ধোয়ার জন্য আপনার জায়গায় ছুটে যাই। আমরা যদি নিজেদেরকে সম্মান না করি, আমদের যা আছে তা নিয়ে সন্তুষ্ট বা গর্বিত বোধ না করি এবং স্বাধীন গর্বিত দেশের নাগরিক বলে গর্ববোধ না করি, এমনকি আমাদের গর্ব এবং মর্যাদা বিক্রি করতে দ্বিধা না করি তখন আমি কীভাবে আপনাদের দোষ দিতে পারি?
তবুও আমি আপনাদের অনুরোধ করব আমাদের সাথে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করুন এবং দয়া করে কূটনৈতিক সুবিধার সুযোগ গ্রহণ করবেন না। আপনার দ্বৈত নৈতিকতা পরিত্যাগ করুন। অনুগ্রহ করে আপনার স্বার্থ এবং মুনাফা পেতে শুধুমাত্র যারা দরিদ্র বা দুর্বল তাদের উপর আপনাদের ইচ্ছা এবং নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দেবেন না। আমরা আপনাদের বাণিজ্য দেই এবং আমরা আপনাদের দেশে বাণিজ্য করি। আমরা আপনাদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি না। আমাদের যেমন আপনাদের প্রয়োজন, আপনাদেরও আমাদের প্রয়োজন। আসুন আমরা সমর্থনকারী বন্ধু হই এবং স্বৈরশাসক না হই। আমরা আর তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ নই, আমরা একটি গর্বিত জাতি। দয়া করে আমার ঘাড়ে আপনার হাঁটু রাখবেন না এবং দয়া করে আমাকে স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে দিন। সমানভাবে এবং মর্যাদার সাথে বাঁচতে দিন। সমান অংশীদার হিসাবে একসাথে সমৃদ্ধি এবং বিকাশ করতে দিন।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।