নভেম্বর ১৯৭২- সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ। সরকারবিরোধী সংগঠন হিসেবে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের উত্থান হয়েছে সবে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে দেশকে অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা তাদের। ছাত্রলীগ এবং শ্রমিকলীগের নেতৃস্থানীয় অনেকেই বেরিয়ে গিয়ে যুক্ত হয়েছে তাদের সাথে। সর্বহারার উত্থানে যুবসমাজ উৎকণ্ঠিত। মুক্তিযুদ্ধ ফেরত অসংখ্য কর্মহীন ছাত্র, যুবক ঘুরে বেড়াচ্ছে উদ্দেশ্যহীনভাবে। জাসদের অপপ্রচার আর চটকদার বিজ্ঞাপনে অনেকেই যুক্ত হচ্ছে তাদের সাথে। জড়িয়ে পড়ছে উচ্ছৃঙ্খল কাজে, জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডে। কর্মসংস্থানের অভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া এই বিপথগামী, বিশৃঙ্খল বিশাল যুবসমাজের মধ্যে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা ছিল বঙ্গবন্ধুর সরকারের জন্য একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু ভাবলেন, কিভাবে এই যুবসমাজকে দেশ ও জাতি গঠনের কাজে লাগানো যায়; কিভাবে যুবসমাজকে দেশের ভবিষ্যত নেতৃত্বে আনা যায়। এই ভাবনা থেকেই বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিব বাহিনীর কমান্ডার, মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনিকে নির্দেশ দেন যুবকদের নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলার।
বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ছিলেন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংগঠক, লেখক, সাংবাদিক এবং একজন সুবক্তা। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ১৯৭২ সালের ১১ নভেম্বর তিনি "বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চার মূলনীতিকে ধারণ করে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ এবং যুবসমাজের ন্যায্য অধিকারসমুহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তিনি। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে যুব কনভেশনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় যুবলীগ। পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালে যুবলীগের প্রথম জাতীয় কংগ্রেসে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল হক মণি। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট সৈয়দ আহমেদ। প্রথম কংগ্রেসে নির্বাচিত চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি তার প্রথম মেয়াদ শেষ করার আগেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ হিসেবে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সাথে ঘাতকের নির্মম বুলেটে সস্ত্রীক নিহত হন।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর চরম বৈরি পরিবেশে ১৯৭৮ সালে আওয়ামী যুবলীগের দ্বিতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। এই কংগ্রেসে আমীর হোসেন আমু কে চেয়ারম্যান এবং ফকির আব্দুর রাজ্জাক কে সাধারন সম্পাদক করা হয়। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় কংগ্রেসে মোস্তফা মহসিন মন্টুকে চেয়ারম্যান এবং রংপুরের ফুলু সরকারকে সাধারন সম্পাদক করা হয়। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী সামরিক শাসক জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদের অবৈধ শাসনের বিরুদ্ধে রাজপথের আন্দোলন, সংগ্রামে যুবলীগ সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। ১৯৯৬ সালের চতুর্থ কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন শেখ ফজলুল হক মনির সহোদর শেখ ফজলুল করিম সেলিম এবং সাধারন সম্পাদক হন কাজী ইকবাল হোসেন। ২০০৩ সালের ৫ম কংগ্রেসে জাহাঙ্গীর কবির নানক কে চেয়ারম্যান এবং মির্জা আজম কে সাধারন সম্পাদক করা হয়। ওয়ান ইলেভেনের সেনা নিয়ন্ত্রিত অবৈধ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথে দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং মির্জা আজম নেতৃত্বাধীন যুবলীগ।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর ২০০৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর সংগঠনটির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হলে ওমর ফারুক চৌধুরী যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান। পরবর্তীতে ২০১২ সালের ৬ষ্ঠ কংগ্রেসে তিনি পুনরায় সভাপতি মনোনীত হন এবং সাধারন সম্পাদক হন হারুনুর রশীদ। তবে ২০১৯ সালের শুদ্ধি অভিযানে বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত ওমর ফারুক চৌধুরী কে যুবলীগের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরে যুবলীগের ৭ম কংগ্রেসে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ পুত্র শিক্ষাবিদ অধ্যাপক শেখ ফজলে শামস পরশ কে চেয়ারম্যান করা হয়। সাধারন সম্পাদক করা হয় মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিল কে। তারা দায়িত্ব পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশ সহ সমগ্র পৃথিবীতে করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় স্থবির হয়ে পড়েছিলো। পরশ-নিখিলের নেতৃত্বে করোনা মহামারীর সময় যুবলীগ সারাদেশে মানবিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে সর্বমহলে প্রশংসিত হন।
সংগঠনটির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মী করোনা মহামারীর সময় মানুষকে সচেতন করার নিমিত্তে লিফলেট বিতরণ, মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী বিতরণ, বিনামূল্যে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঔষধ বিতরণ, ফ্রি অক্সিজেন ও এ্যাম্বুলেন্স সেবার ব্যবস্থাকরন সহ নানা প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহন করেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অসহায় গরীব ও দুস্থ মানুষদের জন্য ফ্রী সবজি ও মাছের বাজার ও চালু করেন যুবলীগের অসংখ্য নেতৃবৃন্দ। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যুবলীগ কর্মীরা নিজ উদ্যোগে স্বেচ্ছাসেবক টিম গঠন করে ডাক্তার ও নার্সদের পাশাপাশি করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন। করোনায় মৃত্যুবরণকারী মৃতদেহ হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া, লাশের গোসল, জানাযা ও দাফন করানো সবই করেছেন নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। অথচ সে সময় অনেক সন্তান এবং আত্মীয়, স্বজন ও করোনা আক্রান্ত পিতা, মাতা কিংবা স্বজনদের কাছে আসেন নি; জানাযা, দাফনে অংশগ্রহণ করেন নি। শুধু তাই নয়, যুবলীগের উদ্যোগে "আশ্রয়ন কর্মসূচি" এর আওতায় সারাদেশে শত শত গৃহহীন মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে।
বাঙালির প্রতিটি সংকটে, সংগ্রামে, অর্জনে ও মানবিকতায় যুবলীগ ৫০ বছর ধরে তাদের পাশে আছে ছায়ার মত। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে জাসদ গণবাহিনী ও সর্বহারার নৈরাজ্য ও দেশবিরোধী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে যুবলীগ রুঁখে দাড়িয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু ও শেখ ফজলুল হক মনির নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের পর ইতিহাসের এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যুবলীগ নেতা বগুড়ার খসরু, চট্টগ্রামের মৌলভী সৈয়দ জীবন দিয়েছেন। যুবলীগ কর্মি নূর হোসেন এরশাদের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে জীবন দিয়ে অবৈধ শাসক জেনারেল এরশাদের পতন ত্বরান্বিত করেছিল। ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী দীর্ঘ সামরিক শাসনের অবসানের মধ্য দিয়ে পুনরায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত হয়।
দেশের যুবসমাজের একটা বড় অংশ আজ মাদকের প্রতি আসক্ত। এদেরই একটা অংশ চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি এবং খুন-খারাবির সাথে যুক্ত। এদের অনেকেই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের ছত্রছায়ায় এরা বিভিন্ন অপকর্মের সাথে যুক্ত। সমাজের মানুষ এদের ঘৃণার চোখে দেখে। এদের কারনে সমাজের মেধাবী, শিক্ষিত, আদর্শিক, সৃজনশীল মানসিকতার ভিশনারী যুবসমাজের বড় অংশ রাজনীতিকে ঘৃণার চোখে দেখে। যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব বিশেষ করে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ "আই হেইট পলিটিক্স" প্রজন্মকে রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করার মিশন নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বাঁধা মাদকাসক্তি। মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের এবং আদর্শহীন পেশিশক্তি ও কালোটাকার মালিকদের যুবলীগের রাজনীতিতে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে সৃজনশীল, মেধাবী ও শিক্ষিত তরুণ এবং যুবকদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করতে পারলেই যুবলীগের মিশন সফল হবে। বর্তমান ভিশনারী নেতৃত্বের হাত ধরেই তা সম্ভব বলেই আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
যুবলীগের প্রতিষ্ঠার পর থেকে সর্বশেষ ২০১৯ সালের সপ্তম কংগ্রেস পর্যন্ত কোনো কংগ্রেসই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে হয়নি। ৫০ বছরে যেখানে ১৭ টি কংগ্রেস হওয়ার কথা সেখানে হয়েছে মাত্র ৭ টি কংগ্রেস। যুবলীগের বর্তমান নেতৃত্ব ব্যর্থতার এই বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে সংগঠনকে শক্তিশালী এবং গতিশীল করে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনার ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে অগ্রনী ভুমিকা পালনের উপযোগী হিসেবে সংগঠনকে গড়ে তুলবে বলেই এদেশের রাজনীতি সচেতন যুবসমাজের বিশ্বাস। শুধু যুবলীগের জাতীয় কংগ্রেস-ই নয়, জেলা, মহানগর, উপজেলা শহর, পৌর, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ে ও সংগঠনকে গতিশীল এবং যুগোপযোগী করতে নিয়মিত সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি। আগামি ১১ ই নভেম্বর যুবলীগের সুবর্ণজয়ন্তী। সুবর্ণজয়ন্তীতে দাঁড়িয়ে যুবলীগ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে, যুবলীগের সফলতা, ব্যর্থতা কতটুকু তা পর্যালোচনা করে যুবআকাঙ্খা বাস্তবায়নে আগামীর করণীয় সম্পর্কে ১১ ই নভেম্বর সুবর্ণজয়ন্তীর যুবমহাসমাবেশ থেকে যুবসমাজের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা আসবে বলে আমার প্রত্যাশা। সবাইকে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
লেখক
মোঃ নজরুল ইসলাম
কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক,
১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী
লীগ, খুলনা মহানগর।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।