আমাদের মনে রাখতে হবে বঙ্গবন্ধু হত্যা প্রচেষ্টার
পেছনে ছিল দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। আমরা লক্ষ্য করেছি ১৯৪৮ সালেই বঙ্গবন্ধু যখন পাকিস্তানের
স্বাধীনতাকে ‘গণ আজাদী নয়” বলে একটি বিবৃতি দিলেন তখনই
তাঁর সুস্পষ্ট প্রতিপক্ষ তৈরি হয় যারা বস্তুতপক্ষে সুবিধাবাদী ও বঙ্গবন্ধুর ভাষায় ‘প্রতিক্রিয়াশীল’।
১২ অগাস্ট ১৯৪৮ সালে দেয়া এই বিবৃতি পরদিন দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকায় ছাপা হয় এই শিরোনামে,
“পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা দিবস, ছাত্র সম্প্রদায়ের কর্ত্তব্য – বিশিষ্ট লীগ কর্ম্মী শেখ
মুজিবর রহমানের বিবৃতি (ঢাকা অফিস হইতে প্রাপ্ত)। ঢাকা, ১২ই আগস্ট- অধুনা বিলুপ্ত
বঙ্গীয় প্রাদেশিক লীগ কাউন্সিলের সদস্য ও পূর্ব্ব-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক রাষ্ট্রভাষা
আন্দোলনের অন্যতম নেতা শেখ মুজিবর রহমান নিম্নোক্ত বিবৃতি দিয়াছেনঃ-
১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট আমরা যে ‘আজাদী’ লাভ করিয়াছি, সেটা যে গণ আজাদী নয়, তা’ গত একটি বছরে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হইয়াছে। ‘জাতীয় মন্ত্রিসভা’ দীর্ঘ একটি বছরে জনগণের দুইশ’ বছরের পুঞ্জীভূত দুঃখ-দুর্দ্দশা মোচনের কোন চেষ্টা ত করেনই নাই, বরঞ্চ সেই বোঝার উপর অসংখ্য শাকের আটি চাপাইয়াছেন। ভুখা, বিবস্ত্র, জরাগ্রস্ত ও শত অভাবের ভারে ন্যুব্জ জনসাধারণের ভাত, কাপড়, ওষুধ পত্র ও অন্যান্য নিত্য-ব্যবহার্য্য দ্রব্যের কোন ব্যবস্থা তাঁরা করেন নাই; বরঞ্চ পাট, তামাক শুপারী ইত্যাদির উপর নয়া ট্যাক্স বসাইয়া ও বিক্রয়-কর বৃদ্ধি করিয়া জনগণের দৈনন্দিন জীবন দুর্ব্বিসহ করিয়া তুলিয়াছেন। বিনা খেসারতে জমিদারী বিলোপের ওয়াদা খেলাপ করিয়া তাঁরা জমিদার ও মধ্যস্বত্বভোগীদিগকে পঞ্চাশ ষাট কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করিতেছেন। নুতন জরীপের নাম করিয়া তাঁরা জমিদারী প্রথার সম্পূর্ণ বিলোপ আট বছর স্থগিত রাখার ষড়যন্ত্র করিতেছেন। শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার অছিলায় তাঁরা অনেক দেশভক্ত লীগ-কর্ম্মীকেও বিনা বিচারে কয়েদখানায় আটকাইয়া রাখিতেছেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে মুসলিম ছাত্র সমাজের উপর এবং আরও কতিপয় ক্ষেত্রে জনতার উপর লাঠিচার্জ্জ, কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহার ও গুলি চালনা করিয়া তাঁরা আজাদীকে কলঙ্কিত করিয়াছেন। আজ সেই মন্ত্রীসভাই আজাদী উৎসবের সাময়িক সমারোহের দ্বারা নিজেদের অথর্ব্বতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতা ঢাকিবার প্রয়াস পাইতেছেন” (এ উদ্ধৃতিতে মূল বানান হবহু রাখা হয়েছে)।
এই বিবৃতির উদ্ধৃত বাক্যগুলোয় প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর জীবনের সংগঠিত আদর্শই প্রকাশিত হয়েছে যা থেকে মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্ত তিনি একবিন্দু বিচ্যুত হননি। দুইশ’ বছরের ব্রিটিশ অপশাসনের পর প্রাপ্ত স্বাধীনতা যে মাত্র এক বছরে বাংলাদেশের মানুষকে হতাশ করেছিল তার বিবরণ আছে ২৮ বছর বয়সের শেখ মুজিবর রহমানের এই বিবৃতির প্রতিটি শব্দ ও উচ্চারণে। দেখা যাচ্ছে তিনি তখনকার সরকার, মন্ত্রীসভা এমনকি জমিদারী প্রথা বিলোপের অঙ্গীকার থেকে সরে আসা নিয়েও ক্ষোভ জানাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের প্রতি ভালোবাসায় অঙ্গীকারাবদ্ধ এই যে দেশপ্রেমিক অথচ বিদ্রোহী চরিত্রের শেখ মুজিব তাঁর মৃত্যুর পরোয়ানা তখনই জারি হয়েছিল। তখন মনের মধ্যে একটি অপবিশ্বাস লুকিয়ে রেখে ওই চক্র এই ভেবে হয়তো অপেক্ষা করেছে ‘দেখি মুজিব কী করতে পারে’! কিন্তু একই বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু যে নতুন স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্খার ঘোষণা দিয়ে ফেলেছিলেন অশিক্ষিত সুবিধাবাদী কুচক্রের পক্ষে সে বক্তব্যের তাৎপর্য অনুধাবন করা সম্ভব ছিল না। বঙ্গবন্ধু বিবৃতির শেষ পর্যায়ে বলেছিলেন, “বস্তুতঃ গণ-আজাদীর পরিবেশ সৃষ্টি না করিয়া আজাদী উৎসব করিতে যাওয়া এবং বন্যাক্লিষ্ট, দুর্ভিক্ষ-পীড়িত মরণোন্মুখ জনগণকে সেই উৎসবের শরীক হইতে বলা নিষ্ঠুর পরিহাস ছাড়া আর কিছু নয়। এই প্রহসনে আত্মপ্রতারিত ‘নেতারাই’ সন্তুষ্ট থাকিতে পারেন, জনগণ -বিশেষ করিয়া সচেতন ছাত্র ও যুব-সমাজ উহা দ্বারা বিভ্রান্ত হইবে না। তারা ‘আজাদী দিবস’ অবশ্যই পালন করিবে, কিন্তু সেটা উৎসবের দিন হিসাবে নয়, উৎপীড়নের নিগঢ় ছিন্ন করার সংকল্প নেওয়ার দিবস হিসাবে পালন করিবে”।
বঙ্গবন্ধুর এই “উৎপীড়নের নিগঢ় ছিন্ন করার সংকল্প” ১৫ অগাস্ট ১৯৭৫ সালের শেষদিন পর্যন্ত তাঁর প্রধান আদর্শ ছিল। সে আদর্শের সাথে তিনি কোন আপোষ করেননি বলেই ১৯৪৮ থেকে ’৭৫ পর্যন্ত ২৭ বছর পদে পদে মৃত্যু পরোয়ানা নিয়ে দেশ মাতৃকার সেবা করতে পেরেছেন, নতুন একটি ভুখন্ড এনে দিয়ে বাঙ্গালী জাতিকে পরাধীনতার ‘নিগঢ় ছিন্ন’ করাতে পেরেছিলেন। আর তার প্রতিশোধ হিসেবে সেই কুচক্র যারা ১৯৪৮ সাল থেকে প্রমাদ গুণেছেন তারা ও তাদের দোসরেরাই ১৫ অগাস্টের ঘটনা ঘটিয়ে সে পৈশাচিক ঘটনার বিচার না করার দায়মুক্তি পর্যন্ত দিতে পেরেছে।
আগের পর্বে আমরা উল্লেখ করেছি বঙ্গবন্ধু তার ৫ অগাস্টের (১৯৭৫) সাক্ষাৎকারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে তার আদর্শের আনুপূর্বিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এই আদর্শ ছিল তখনকার মার্কিন নীতির পরিপন্থী। তারা খাদ্য ও অন্যান্য সাহায্য দিচ্ছিল বটে কিন্তু বাংলাদেশকে বাঁধতে চেয়েছিল নানারকম কূট-বন্ধনে। সে সময়ের মার্কিন দলিল-পত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় শেখ মুজিবের হাতে বা নেতৃত্বে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতির ঠিক কোন পর্যায়ে আসীন হবে এই নিয়ে তাদের যথেষ্ট উদ্বেগ ছিল। মার্কিন বন্ধু পাকিস্তান তাদের প্রত্যক্ষ মারণাস্ত্র সহায়তা পেয়েও যুদ্ধ ও রাজনৈতিক কৌশলে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর কাছে পরাজিত হয়েছে, এই যন্ত্রণা পাকিস্তানের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোন অংশে কম ছিল না। পাকিস্তানের অপর বন্ধু চীনও বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নেয়নি এমনকি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ লাভে প্রকাশ্য আপত্তি করেছে ও বাধা দিয়েছে। ফলে স্বাধীনতা উত্তরকালে নানারকম রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপেও যখন বঙ্গবন্ধু নতি স্বীকার না করে বলেন, ‘আমি সমাজতান্ত্রিক কিন্তু সেটা আমার নিজস্ব মতে’ বা যদি বলেন, ‘আমি সব দেশের বন্ধু হ’তে চাই কিন্তু তার মানে এই নয় যে, কোন দেশ ভাবুক আমাকে কী করতে হবে সেটা সে বলে দেবে’ তখন সে অক্ষশক্তির হাতে আর কোন উপায় থাকে না যদি না বঙ্গবন্ধুকে নিশ্চিহ্ন করে পরিবার পরিজনসহ নির্মূল করে দেয়া যায় যাতে তাঁর রোপিত আদর্শের ছিটেফোঁটাও খুঁজে না পাওয়া যায়। যদিও পরে ইতিহাস সত্য পথে বাঁক নিয়ে তার উপযুক্ত জবাব দিচ্ছে।
এরকম এক বিশাল ব্যাক্তিত্ব, ২৭ বছরের রাজনৈতিক অনুশীলনের জীবনে যে মানুষ একটি দেশের ভৌগোলিক, নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক ও সোনার বাংলার অর্থনৈতিক পরিচয় বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে পেরেছিলেন তাঁকে যারা হত্যা করার মতো নৃশংস ক্ষমতা রাখে পুরস্কার হিসেবে তাদের দায়মুক্তি দেয়া মূল কুচক্রের জন্যে স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু সে দায়মুক্তির সুবিধা কি কেবল সেসব হত্যাকারী কতিপয় সদস্যই ভোগ করেছেন, এ প্রশ্ন এখন আমরা করতেই পারি। যারা তাদের দায়মুক্তির আইন করেছিলেন, অব্যাহত রেখেছিলেন তারাও এর অংশীদার ছিলেন বলে বিবেচিত হওয়া উচিত কারণ রাষ্ট্রক্ষমতা ও ক্ষমতাভোগের সব রকমের সুবিধা নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রকে ধারাবাহিকভাবে তারা সন্তুষ্ট করতে সচেষ্ট ছিলেন। শুধু তাই-ই নয়, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের বিলোপ সাধনে বংশ-পরপম্পরায় তাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি ছিল না। এমনও দেখা যায়, হত্যাকান্ডের পরে মোশতাক সরকার রাষ্ট্রাচারে বেশ অনেকগুলো পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। "জয় বাংলা" শ্লোগান পরিবর্তন করে এর স্থলে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" শ্লোগান চালু করেন। একই সময় তিনি "বাংলাদেশ বেতার" এই নাম পরিবর্তন করে রেডিও পাকিস্তানের আদলে "রেডিও বাংলাদেশ" করেন। ধীরে ধীরে, একুশ বছরে বাংলাদেশকে তার মূল নীতি থেকে সরিয়ে নেবারও সব রকমের চেষ্টা করা হয়। আমরা মনে করি, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত নীতি নির্ধারণের যারা জীবন বাঁচাবার অজুহাতে ও চাকুরী ঠিক রাখার অভিপ্রায়ে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার মৌলিক আদর্শ জলাঞ্জলি দিতে সামান্য দ্বিধা করেননি তাঁদেরও ইতিহাসের কাঠগড়ায় একদিন দাঁড়াতে হবে।
কাগজ-পত্র ও ইতিহাসের দলিলগুলো নিয়ে বসলে আমরা বিচলিতবোধ করি। এমনও অনেক মানুষ আছেন ১৯৭১ সালে যারা গৌরবময় ভূমিকা রেখেছিলেন, পরবর্তিতে বঙ্গবন্ধু সরকারের সব সাফল্যের সুবিধা নিয়ে বড়ো বড়ো পদে আসীন হয়েছেন, তাঁরা ‘৭৫ সালের ঘটনার সাথে সাথে ভোল পাল্টে ফেলেছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়মুক্তির দায় থেকে এদের কেন আমরা বাদ দিতে যাবো? এটা কি স্বতঃসিদ্ধ ছিল যে বঙ্গবন্ধুর পর এভাবেই ইতিহাসের চাকা পেছনে ঘুরিয়ে দেয়া যাবে আর সে রথযাত্রায় অংশ নিতে কেউ কেউ তৈরিই ছিলেন?
প্রসঙ্গত যদি আমরা কূটনীতিক হোসেন আলী-র কথা বলি যে হোসেন আলী ’৭১ সালে কোলকাতা মিশনে পাকিস্তানের উপ-রাষ্ট্রদূত ছিলেন ও ১৮ এপ্রিল পাকিস্তানের পক্ষ ত্যাগ করে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। তিনিই বিদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মিশনের যাত্রা শুরু করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রথমে অস্ট্রেলিয়া ও পরে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেন (জানুয়ারী ১৯৭৩)। অথচ রাষ্ট্রদূত হিসেবে এই হোসেন আলীই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের পর, ১৯ অগাস্ট ১৯৭৫ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী সচিব আলফ্রেড আথারটনের সাথে দেখা করেন। সেদিনই কিসিঞ্জার এই সাক্ষাতের একটি সারমর্ম ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে পাঠান, যেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী স্বীয় উদ্যোগে এই সাক্ষাত করে বাংলাদেশের মোশতাক সরকারের পররাষ্ট্র নীতি ব্যাখ্যা করেছেন ও যুক্তরাষ্ট্রসহ সকল সুপার পাওয়ার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার বিশেষ গুরুত্বের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলবে বলে আশা করছে। শুধু তাই-ই নয়, রাষ্ট্রদূত হোসেন আলী আথারটনের সাথে আলাপকালে উল্লেখ করেন যে, ১৯৭১ সাল থেকেই মোশতাকের সাথে তাঁর ঘনিস্ট বন্ধুত্ব রয়েছে ও মোশতাককে একজন ধার্মিক, সৎ ও স্পষ্টবাদী মানুষ বলে বর্ণণা করেন (Drawing on his close friendship with new President Khondakar Mushtaque Ahmed during 1971 in Calcutta, he described him as “pious honest and straight forward”)। এটা কেমন করে হলো? আমাদের মনে এই প্রশ্ন এমন অনেক ঘটনা ও মানুষ সম্পর্কে, যেসবের উত্তর মিলে না কিন্তু মহাকালের জন্যে খারাপ বিবেচনার দায় থেকে আমাদের প্রিয় এই মাতৃভূমি কেমন করে কখন মুক্ত হবে সে চিন্তা থেকে আমরা বিরত থাকতে পারিনা।
এসব কারণেই দলিলপত্র, ইতিহাস ও এ
যাবত প্রকাশিত গোপন দস্তাবেজ বিশ্লেষণ করে আমাদের সঙ্গত চিন্তা এই যে, বঙ্গবন্ধু হত্যায়
যারা অস্ত্র চালনা করেছে তাদের বিচার না হবার দায়মুক্তি দিয়ে বরঞ্চ এই ঘটনার
পরিকল্পক কুচক্র তাদের সহায়তাকারী, দেশী ও বিদেশী ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষক তথাকথিত এক
শ্রেণীর রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ক্ষমতালোভী রাজনীতিক-সামরিক-বেসামরিক আমলা, সুবিধাবাদী
সাংবাদিক ও পরের সময়ের সুবিধাভোগী শ্রেণী নিজেদের পাপকার্য থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখতে
এই দায়মুক্তির সবরকম সুবিধা নিয়েছেন। ফলে দায়মুক্তি সংঘটনে ও ২১ বছর তা অব্যাহত রাখতে
এইসব সুবিধাভোগীদের ভূমিকা ছিল না বা দায় নেই একথা বলা যায় না।
রেজা সেলিম, পরিচালক, আমাদের
গ্রাম গবেষণা প্রকল্প
e-mail: rezasalimag@gmail.com
বঙ্গবন্ধু হত্যা ষড়যন্ত্র দায়মুক্তি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।