[তৃতীয় ও শেষ পর্ব]
মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে বঙ্গবন্ধুর
ডাকে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্ন উপস্থিত হয়। সে সময়ে
বঙ্গবন্ধুর বিচক্ষণ নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় পেয়ে খোদ দলের মধ্যেই অভূতপূর্ব
উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়। সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ
দফায় দফায় বঙ্গবন্ধুর সাথে বৈঠকে মিলিত হতে থাকেন ও সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর
কাছ থেকে নির্দেশনা নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা করেন। উল্লেখ্য যে, অসহযোগ
আন্দোলন চলাকালে জনসাধারণ বিশেষতঃ সর্বস্তরের সরকারী-বেসরকারী কর্মচারী-কর্মকর্তাদের
দেশব্যাপী আশু করণীয় বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রায় প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত
হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যাখ্যার প্রয়োজন হয়ে উঠে ও কোথাও কোথাও সমন্বয়হীনতার
সৃষ্টি হয়। একদিকে প্রশাসন, অপরদিকে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর করণীয় নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক
নির্দেশনার প্রয়োজন হলে বঙ্গবন্ধু সে সকল বিষয়ের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন ও ১৪
মার্চ ১৯৭১ তারিখে একটি পূর্নাংগ কর্মসূচী ও নির্দেশনা প্রদান করেন যা পরেরদিন (১৫
মার্চ) সকল দৈনিক পত্রিকায় ছাপা হয়।
এর আগে, ১১ মার্চ আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ দেশের অর্থনীতি সমুন্নত রাখতে একটি বিবৃতি দেন যাতে তিনি সুস্পষ্ট
করে উল্লেখ করেন, আমাদের আন্দোলন একটি অভূতপূর্ব উচ্চ মাত্রায় পৌঁছাতে পেরেছে কারণ
দেশের প্রতিটি মানুষ নিজেদের কর্তব্যকাজে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনাগুলো মেনে চলছেন। সর্বস্তরে
আন্দোলিত মানুষের মধ্যে প্রখর দায়িত্ববোধের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে যা আমাদের সকলের জন্যে
অনুপ্রেরণামূলক। আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি বাংলাদেশের উৎপাদন অর্থনীতি
সমুন্নত রাখতে সর্বশক্তি নিয়োজিত রাখতে হবে’
(সূত্রঃ দ্য ডন, ১১ মার্চ ১৯৭১)। এই বিবৃতিতে জনাব তাজউদ্দীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরে
ব্যাঙ্কগুলো খোলা রাখা ও লেনদেন মাত্রা, সময়সূচী সম্পর্কে কিছুটা প্রশাসনিক পরিবর্তনের
কথাও জানান। এই বিবৃতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন যথাযথ
সময়ে পরিশোধের বিষয়ে; যেখানে তিনি বলেন কেবলমাত্র সম্পর্কিত কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণই
বেতন পরিশোধের কাজে অফিসে আসবেন ও কর্তব্য পালন করবেন। জেলখানা, জেল ওয়ার্ডেন ও জেল
অফিস যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। বিদ্যুত ও পানি সরবরাহে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে
নিয়োজিত দপ্তরগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এমনকি সব বীমা কোম্পানীগুলোও যথাযথভাবে
কাজ করবে।
১১ মার্চের নির্দেশনা ছিল মূলত আন্দোলনের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি যেন কোনভাবেই স্থবির না হয়ে পড়ে ও জনসাধারণের দৈনন্দিন চাহিদায় যেন কোথাও ঘাটতি পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। দলের প্রতি বঙ্গবন্ধুর এইসব নির্দেশনা সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন সকল মহলে পৌঁছাবার ব্যবস্থা করেন যার ফলে আন্দোলন ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে ও পাশাপাশি সাধারণ মানুষের মনে এই আন্দোলনের প্রতি গভীর আস্থা জন্মায়।
১৪ মার্চ করাচীর এক জনসভায় পিপলস পার্টি
প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তনের ‘দুই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের হাতে’ ক্ষমতা হস্তান্তরের পরামর্শ দেন (সূত্রঃ
দৈনিক পাকিস্তান, ১৫ মার্চ ১৯৭১)। নরম সুরে ভূট্টো বলেন, “দেশের দুইটি সংখ্যাগুরু দল
জাতীয় স্বার্থে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে, পশ্চিম পাকিস্তনের জনসাধারণ সেটাই কামনা
করে। ভুট্টো বলেন, আওয়ামী লীগ প্রধানের সাথে আলোচনা করার জন্য তিনি এখনো পূর্ব পাকিস্থানে
যেতে রাজী আছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সংখ্যাগুরু দল বলেই তিনি তার দলের সাথে কথা বলার
জন্য শেখ মুজিবের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন। বর্তমান সংকট সমাধানের জন্য তাদের এক সাথে
চলার সময় এখনও রয়েছে”।
ভুট্টোর এই চতুর ভাষণে একটি বিষয় স্পষ্ট যে ৭ মার্চের দেয়া বঙ্গবন্ধুর ভাষণের মূল বক্তব্যের
প্রতি ভুট্টো কোন প্রকার গুরুত্ব না দিয়ে তার নিজের অংশে তার দলের সংখ্যাগরিষ্ঠের অজুহাত
ক্রমাগত দিতেই থাকে্ন। অথচ বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সমগ্র পাকিস্তানের নির্বাচনে
সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে ইতোমধ্যে আসন তৈরি করে নিয়েছে। বাংলাদেশের তখনকার ভূখন্ডে যেসব
দমন-পীড়ন, অত্যাচার ও রক্তপাত ঘটে চলছিল ভুট্টো সেসব প্রসঙ্গ একেবারেই এড়িয়ে চলেছেন
যেন তিনি কিছুই জানেন না এমনভাবে করাচীর সভায় বক্তব্য রেখেছেন। রাজনৈতিক ক্ষমতার দাবীদার
হলেও পূর্ব পাকিস্তনের সাধারণ মানুষের প্রতি অন্যায়-অবিচারের প্রতি ভুট্টো কখনওই সোচ্চার
হননি। ফলে পাকিস্তান সামরিক চক্র ভুট্টোকেই তাদের অন্যতম সমর্থক ও প্রেরণাদাতা হিসেবে
গণ্য করে তাদের অন্যায়ের মাত্রা ক্রমশ বাড়াতেই থাকে।
সঙ্গত কারণেই ১৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু একটি
পূর্নাংগ ঘোষণাপত্র জারী করা ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না যেখানে প্রকৃতই তিনি গণমানুষের
প্রাণের নেতা হিসেবে দেশের মানুষকে আশ্বস্ত করেন। শুরুতেই তিনি বলেন, “আজ বাংলাদেশের
প্রতিটি নারী-পুরুষ এমন কি শিশু পর্যন্ত মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার সাহসে বলীয়ান। নগ্নভাবে
শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে দলিত করার কথা চিন্তা করেছিল যারা, তাঁরা নিশ্চিতই পরাভূত
হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি স্তরের মানুষ – সরকারী কর্মচারী, অফিস আর কলকারখানার শ্রমিক,
কৃষক আর ছাত্র সবাই দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছে – তাঁরা আত্মসমর্পণের চেয়ে মরণ বরণ করতেই
বদ্ধ পরিকর”।
এই বিবৃতি বঙ্গবন্ধুর মার্চ আন্দোলন
জীবনের সেরা বিবৃতি হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে যেখানে তিনি মোট ৩৫টি নির্দেশ জারি করেন।
পটভূমিতে তিনি উল্লেখ করেন, “এ বড় দুঃখজনক যে, এমন পর্যায়েও কিছু অবিবেচক মানুষ সামরিক
আইন বলে নির্দেশ জারি করে বেসামরিক কর্চারীদের একাংশকে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে।
কিন্তু আজ এদেশের মানুষ সামরিক আইনের কাছে মাথা নত না করার দৃঢ়তায় একাট্টা। আমি তাই,
সর্বশেষ নির্দেশ যাদের প্রতি জারি করা হয়েছে, তাঁদেরকে হুমকীর কাছে মাথা নত না করার
আবেদন জানাই। বাংলাদেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ তাঁদের ও তাঁদের পরিবারের পেছনে রয়েছে।
তাঁদের ত্রাসিত করার উদ্দেশ্যে এই যে চেষ্টা তা বাংলাদেশের মানুষকে রক্তচক্ষু দেখাবার
অন্যান্য সাম্প্রতিক চেষ্টার মত নস্যাৎ হতে বাধ্য”।
এখানে উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধু এই বিবৃতির
মাধ্যমে সাড়ে সাত কোটি মানুষের জাতিকে দল ও মত
নির্বিশেষে একটি বিষয়ে আওতাভুক্ত করেছিলেন আর তা হল সমগ্র জাতিই নিপীড়িত মানুষের
ও তাঁদের পরিবারবর্গের পেছনে আছে। বিশ্বের খুব কম নেতাই এমন দুর্দিনে দেশের সব মানুষকে
একে অপরের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে সমর্থ হয়েছিলেন।
১৫ মার্চের দেয়া বঙ্গবন্ধুর নতুন কর্মসূচী
নির্দেশাবলী আকারে জারি করা হয়। উল্লেখ করা হয় যে, “নির্দেশাবলী কার্যকরী হওয়ার সঙ্গে
সঙ্গে পূর্ব ঘোষিত সকল নির্দেশ, অব্যাহতি ও ব্যাখ্যাসমূহ বাতিল বলে বিবেচিত হবে”। নতুন কর্মসূচিকে ১ নং নির্দেশ, ২
নং নির্দেশ এইভাবে ৩৫ নং নির্দেশ পর্যন্ত ভাগ করে অনেকটা পরিপত্র বা সার্কুলার আকারে
জারি করা হয়। পৃথিবীর মুক্তিকামী দেশগুলোর রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রামের ইতিহাসে এই রকমের
নির্দেশনামা জারি করে কোন নেতা দেশের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন তার দৃষ্টান্ত বিরল।
বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পরিপত্রে প্রথমেই
ঠাই পায় সরকারী সংস্থাসমূহের করণীয় যেখানে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সেক্রেটারিয়েটসমূহ,
সরকারী ও বেসরকারী অফিসসমূহ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানসমূহ, হাইকোর্ট এবং
বাংলাদেশের সকল কোর্ট হরতাল পালন করবেন। ২য় নির্দেশে তিনি বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দেন। ৩য় নির্দেশে আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় ডিসি ও এসডিও-দের অফিস না
খুলে নিজেদের এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালনের কথা বলেন। পুলিশের সাথে প্রয়োজনে
আওয়ামী লীগের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে যোগ দিতে পরামর্শ দেন। বলা হয় জেল অফিস খোলা থাকবে
ও আনসার বাহিনী তাঁদের দায়িত্ব পালন করবে। ৪র্থ নির্দেশে অভ্যন্তরীণ বন্দরগুলো পরিচালনার
নির্দেশনায় উল্লেখ করেন খাদ্য সাহায্য বা মাল খালাসের নিয়মিত কাজ অব্যাহত থাকলেও সৈন্য
ও সমরাস্ত্র আনা-নেয়ার কাজে বন্দর ব্যবহার করা যাবে না। ৫ম নির্দেশে আমদানী শুল্ক পরিচালনার
জন্যে বলা হয় ইস্টার্ণ ব্যাঙ্কিং কর্পোরেশন লিমিটেড ও ইস্টার্ণ মার্কেন্টাইল ব্যাঙ্ক
লিমিটেডের বিশেষ একাউন্ট খুলে কাস্টমস কালেক্টরগণ যেন সেগুলো পরিচালনা করেন। আওয়ামী
লীগের নির্দেশ অনুযায়ী সেসব একাউন্টে কাস্টমস কালেক্টরগণ আদায়কৃত শুল্ক জমা রাখবেন,
কোন মতেই তা কেন্দ্রীয় সরকারের নামে জমা হবে না।
একে একে নির্দেশে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে,
সড়ক পরিবহন, পোস্ট অফিস-টেলিগ্রাম-মনি অর্ডার, স্থানীয় ও আন্ত-জেলা ট্রাংক টেলিফোন
পরিচালনার নির্দেশ দেন। ১১ নং নির্দেশে সুস্পষ্ট নির্দেশে বলেন, “বেতার, টেলিভিশন ও
সংবাদপত্রগুলি কাজ চালিয়ে যাবেন। তাঁরা গণ আন্দোলন সম্পর্কিত সকল বক্তব্য, বিবৃতি,
সংবাদ ইত্যাদি প্রচার করবেন। যদি না করেন তবে এই সব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যাক্তিরা
সহযোগিতা করবেন না”।
পরবর্তি নির্দেশগুলোতে হাসপাতাল, বিদ্যুত, গ্যাস-পানি, ইট ও কয়লা সরবরাহ, ধান-বীজ-সার
ও কীটপতংগ নাশক ওষুধ সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ঘোষণা দেন। পাওয়ার পাম্প, সেচ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ,
উন্নয়ন ও নির্মাণ কার্য, সাহায্য পুনর্বাসন, যাবতীয় কলকারখানা, বেতন ও পেনশন প্রদান,
ব্যাঙ্কিং সময়, ট্রাভেল এজেন্ট, ফায়ার ব্রিগেড, পৌরসভা এমন কি কর আদায় পর্যন্ত নিয়মের
মধ্যে বেঁধে দেন। ৩৪ নং নির্দেশে তিনি আদেশ দেন, “সকল বাড়ীর শীর্ষে কাল পতাকা উত্তোলিত
হবে”। সর্বশেষ ২৫ নং নির্দেশে বঙ্গবন্ধু
সংগ্রাম পরিষদগুলোকে এ সকল নির্দেশ যথাযথভাবে বাস্তবায়নের কথা বলেন।
জগতের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ যখন কোন দেশের
রাজনৈতিক সংগ্রামের একাডেমিক বিশ্লেষণ করেন জানিনা তাঁদের মনে কোনও ধারণা আছে কী না
বাংলাদেশের জাতির পিতা হয়ে উঠা এই রাজনীতিবিদ মুক্তিসংগ্রামের অনবদ্য এক দায়িত্বশীল
ইতিহাস রচনা করেছেন ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম তিন সপ্তাহেই। তাঁদের সেই বিশ্লেষণে
যাই-ই বেরিয়ে আসুক, বাংলাদেশের মানুষের গৌরব গাঁথা অস্বীকার করে কোন বই বা তত্ত্ব রচনা
কোনদিনও সম্ভব হবে না। কারণ বঙ্গবন্ধুর মতো এমন দূরদর্শী নেতৃত্ব সংগ্রামের স্বপ্নগাঁথায়
বোনা যে দেশ তার ঠাই হয়ে আছে মহাকালের স্বপ্নগৌরব ছুঁয়েই।
--
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।