‘‘কাটায়ে উঠেছি ধর্ম—আফিম—নেশা/
ধ্বংস করেছি ধর্মযাজকী পেশা,/ ভাঙি মন্দির, ভাঙি
মসজিদ/ ভাঙিয়া গির্জা গাহি সঙ্গীত,/ এক
মানবের একই রক্ত মেশা/
কে শুনিবে আর ভজনালয়ের হ্রেষা!’’
‘‘পূজিছে
গ্রন্থ ভণ্ডের দল মূর্খরা সব
শোন মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন।’’
‘‘গাহি
সাম্যের গান— মানুষের চেয়ে
বড় কিছু নাই, নহে
কিছু মহিয়ান। নাই দেশ—কাল—পাত্রের ভেদ, অভেদ ধর্মজাতি,
সব দেশে সব কালে
ঘরে—ঘরে তিনি মানুষের
জ্ঞাতি।’’
‘‘মানবতার
এই মহান যুগে একবার/গণ্ডী কাটিয়া বাহির হইয়া আসিয়া বল যে,/তুমি
ব্রাহ্মণ নও, শূদ্র নও,
হিন্দু নও, মুসলমানও নও,/তুমি মানুষÑ তুমি
ধ্রুব সত্য।’’
উপরের উদ্ধৃতিগুলো স্মরণে রেখে কাজী নজরুল ইসলামের(১৮৯৯—১৯৭৬) ১২৪তম জন্ম—জয়ন্তীতে তাঁর প্রবন্ধে প্রকাশিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা সম্পর্কে আলোকপাত করা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে খুবই তাৎপর্যবহ। এদেশ এখনো সাম্প্রদায়িক অপশক্তি থেকে মুক্ত হতে পারেনি। কিন্তু যে দায়িত্ব রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাঁধে নিয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ছিল তাও সম্পন্ন হয়নি। এজন্য একমাত্র ভরসা রবীন্দ্রনাথ—নজরুল। বিশেষত নজরুলের জীবনব্যাপী(সুস্থ ছিলেন ১৯৪২ পর্যন্ত) সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে বলে যাওয়ার মধ্যে রয়েছে অনুপ্রেরণার অজেয় উৎস। কেবল তাঁর কবিতা—গান নয় প্রবন্ধে রয়েছে বিবেক জাগানিয়া অনন্যসব ভাবনাসমূহ। সান্ধ্য দৈনিক নবযুগ, অর্ধসাপ্তাহিক ধূমকেতু, সাপ্তাহিক লাঙল, গণবাণী, সওগাত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য—পত্রিকা প্রভৃতি পত্রিকায়Ñ এ সম্পর্কে নজরুলের সম্পাদকীয় প্রবন্ধ এবং অভিভাষণের বক্তব্য প্রকাশিত হয়। পরে সেগুলো যুগবাণী, রাজবন্দীর জবানবন্দী, দুর্দিনের যাত্রী, রুদ্র—মঙ্গল গ্রন্থে প্রবন্ধ সংকলনে স্থান পায়। বলাবাহুল্য তাঁর অধিকাংশ প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সমকালীন প্রসঙ্গ নিঃসৃত। আর এই সমসাময়িক প্রসঙ্গের অবতারণার জন্য তাঁর প্রবন্ধসমূহ মূল্যবান হয়ে উঠেছে। ১৯৪২ সাল পর্যন্ত বিশ্ব পরিমণ্ডল ও ভারতবর্ষের সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক ইতিহাস নজরুল—সাহিত্যকে আলোড়িত করেছে। তবে তিনি তাঁর অভিমতসমূহ ব্যক্ত করার সময় সর্বজনীন মানুষের কল্যাণকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ সা¤প্রদায়িক বিভেদ ও বিদ্বেষের বিপরীতে তিনি সম্প্রীতির প্রত্যাশায় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন। একইসঙ্গে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থেকে ধর্ম, শিক্ষা ও সমাজ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করেছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটেও তাঁর ভাবনাসমূহ গুরুত্ব বহন করে।
অধ্যাপক
ড. বিশ্বজিৎ ঘোষ নজরুলের অসাম্প্রদায়িক
চেতনা সম্পর্কে লিখেছেনÑ‘উপনিবেশকে আঁকড়ে রাখার মানসে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ সুচতুর
কৌশলে সাপ্রদায়িক বিভেদ
সৃষ্টি করেছিল ভারতবর্ষে ভারতের দুই বৃহৎ ধর্ম—সাপ্রদায় পরস্পর
বিভেদে জড়িয়ে পড়েছে বারবার। এর পশ্চাতে ছিল
একাধিক রাজনৈতিক দলের ইন্ধন। এই
সাম্প্রদায়িক বিভেদ নজরুলকে ব্যথিত করেছে। তাই তিনি সচেতনভাবে
হিন্দু—মুসলিমের মধ্যে সম্প্রদায়—নিরপেক্ষ
স¤প্রীতি প্রত্যাশা করেছেন। সত্য—সুন্দর—কল্যাণের
পূজারি নজরুল চেয়েছেন স¤প্রদায়ের উর্ধ্বে
মানুষের মুক্তি। বস্তুত, সাম্যবাদী চিন্তা তাঁর মানসলোকে সম্প্রদায়—নিরপেক্ষ মানবসত্তার জন্ম দিয়েছেÑহিন্দু
ও মুসলমান বৈপরীত্যের দ্যোতক না হয়ে তাঁর
চেতনায় হতে পেরেছে জাতিসত্তার
পরিপূরক দুই শক্তি।’ (উত্তর—ঔপনিবেশিক তত্ত্ব ও নজরুলসাহিত্য, সৃষ্টি
সুখের উল্লাসে, ২য় খণ্ড, পৃ
৩৩৬) সম্প্রদায়ে
সম্প্রদায়ে বিভেদ ও অনৈক্য সম্পর্কে
নজরুল ইতিবাচক চিন্তা করেছেন। সা¤প্রদায়িক কলহের
দুর্বলতা দিয়ে ভারতের মুক্তি সম্ভব নয়। নজরুল এ—কারণেই ভারতীয়দের শক্তির দুর্বলতর সূত্রগুলি ‘যুগবাণী’ ও অন্যান্য পর্বের
সম্পাদকীয় রচনায় বিশ্লেষণ করেছেন। তিনি জানতেন হিন্দু
মুসলমানের ঐক্যবদ্ধ শক্তির দুর্বার আঘাতেই ব্রিটিশ শাসনশৃঙ্খল ভাঙা সম্ভব। নজরুল
আহ্বানও জানিয়েছেন ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের।
তিনি
হিন্দু—মুসলমান উভয়ের ইতিহাস—ঐতিহ্য—চিন্তা—চেতনার ভাব বিনিময়ে গুরুত্বারোপ
করেছিলেন। ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম
এডুকেশন (মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা, রুদ্র—মঙ্গল) সোসাইটির প্রতিষ্ঠা উপলক্ষে অনুষ্ঠানের সভাপতির ভাষণে নজরুল বলেছেন : ‘ভারত যে আজ
পরাধীন এবং আজো যে
স্বাধীনতার পথে তার যাত্রা
শুরু হয়নি শুধু আয়োজনেরই ঘটা
হচ্ছে এবং ঘটাও ভাঙছে
তার একমাত্র কারণ আমাদের হিন্দু—মুসলমানের পরস্পরের প্রতি হিংসা ও অশ্রদ্ধা।’
হিন্দু—মুসলমানের মিলন কামনার এই
তীব্রতা নজরুলের মানবতাবোধ থেকে উৎসারিত। তাঁর
সাহিত্যচিন্তার অন্যতম স্তম্ভও এটি ছিল। এজন্য
তাঁর ‘আমার সুন্দর’ প্রবন্ধের
একটি অংশ স্মরণীয়Ñ ‘আমার
কেবলই যেন মনে হত
আমি মানুষকে ভালোবাসতে পেরেছি। জাতি—ধর্ম—ভেদ
আমার কোনদিনই ছিল না, আজও
নেই। আমাকে কোনোদিন তাই কোনো হিন্দু
ঘৃণা করেনি। ব্রাহ্মণেরাও ঘরে ডেকে আমাকে
পাশে বসিয়ে খেয়েছেন ও খাইয়েছেন। এই
আমি আমার যৌবন—সুন্দর,
প্রেম—সুন্দরকে দেখলাম।’
নিজে
মুসলিম হয়েও হিন্দু নারী প্রমীলাকে বিবাহ
করা এবং একাধিক ঘনিষ্ঠ
বন্ধু সনাতন ধর্মাবলম্বী হওয়ায় নজরুলের পক্ষে এ ধরনের কথাই
স্বাভাবিক। তিনি সাম্য ও
মানবকল্যাণে বিশ্বাসী ছিলেন। ফলে সর্বপ্রকার বন্ধন
ও অধীনতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন। সমাজজীবনের অনাচার অসঙ্গতি তিনি অন্তর দিয়ে
উপলব্ধি করেছিলেনশুধু রাজনৈতিক সূত্র
থেকে তা অর্জন করেননি।
সমাজকে ভেঙে গড়বার স্বপ্ন
ও উদ্যম ছিল তাঁর ক্লান্তিহীন।
‘মোহররম’ প্রবন্ধে মাতম—অভিনয়কে ধিক্কার
দিয়ে সত্যের পক্ষ নিয়ে নির্যাতনের
প্রতিবাদে রক্ত দেবার আহ্বান
জানিয়েছেন নজরুল। প্রথার অন্তরে নিহিত সত্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। লিখেছেনÑ‘এস ভাই হিন্দু!
এস মুসলমান! এস বৌদ্ধ! এস
ক্রিশ্চিয়ান! আজ আমরা সব
গণ্ডি কাটাইয়া, সব সঙ্কীর্ণতা, সব
মিথ্যা, সব স্বার্থ চিরতরে
পরিহার করিয়া প্রাণ ভরিয়া ভাইকে ভাই বলিয়া ডাকি।’
‘মন্দির
ও মসজিদ’ আর ‘হিন্দু—মুসলমান’
নামে দুটি রচনাতে ভারতবর্ষের
প্রধান দুই সম্প্রদায়ের পরস্পর
বিদ্বেষ এবং হানাহানিকে নজরুল
তীব্রভাবে আক্রমণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি
সবসময়ই সচেতন ছিলেন। ‘মন্দির ও মসজিদ’—এ
দাঙ্গা নিয়ে তাঁর বেদনাঘন কথা
আছে। মানবতার দিকে যারা ফিরেও
তাকায় না তারা ছোরা
আর লাঠি নিয়ে নিজের
ধর্মস¤প্রদায় রক্ষা করে! নজরুলের মতে,
‘ইহারা ধর্মমাতাল। ইহারা সত্যের আলো পান করে
নাই, শাস্ত্রের অ্যালকোহল পান করিয়াছে।’ শাস্ত্রীয়প্রথাকে
নজরুল সবসময়ই মানবতার নিচে স্থান দিয়েছেন।
তাঁর মতে, ‘মারো শালা যবনদের!’
আর ‘মারো শালা কাফেরদের!’
হাঁক ছেড়ে মাতালের চিৎকার দিয়ে তারা নাকি আল্লাহ্র
এবং মা কালীর ‘প্রেস্টিজ’
রক্ষা করে। আর মারণ
আঘাতে লুটিয়ে পড়লে তারা সকলেই আল্লাহ্
বা মা কালীকে না
ডেকে ‘বাবা গো, মা
গো’ বলে চিরকালের বাঙালির
মতো একইভাবে কাতরায়! ‘হিন্দু—মুসলমান’ লেখাতেও রবীন্দ্রনাথের বরাত দিয়ে নজরুল
বলেছেন, ‘যে ন্যাজ বাইরের,
তাকে কাটা যায়, কিন্তু
ভিতরের ন্যাজ কাটবে কে?’ টিকি আর
দাড়ি হচ্ছে মানুষের সেই ন্যাজ। এ
ন্যাজ মাথায় আর মুখে নয়,
গজিয়েছে মনের গভীরে; তা
থেকেই এত বিদ্বেষ। আর,
দাড়ি কামানো খায়রু মিয়া ছুরি খেলে, কিংবা
‘তুর্কিছাঁট—দাড়ির শশধর বাবু’ ছুরি
খেলে প্রথম ক্ষেত্রে মুসলমান আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে
হিন্দু শব নিয়ে কবরস্থান
বা শ্মশানে ছোটে না। দুঃখ
এই, ‘মানুষ আজ পশুতে পরিণত
হয়েছে, তাদের চিরন্তন আত্মীয়তা ভুলেছে। পশুর ন্যাজ গজিয়েছে
ওদের মাথার ওপর, ওদের সারা
মুখে। ওরা মারছে... টিকিকে,
দাড়িকে। বাইরের চিহ্ন নিয়ে এই মূর্খদের মারামারির
কি অবসান নেই!’
আসলে
‘হিন্দু—মুসলমান ঐক্য’ নজরুলের অন্যতম প্রিয় বিষয় ছিল। যৌবনের প্রতি
এই কবির আবেদন, ‘আমার
ধর্ম যেন অন্য ধর্মকে
আঘাত না করে, অন্যের
মর্মবেদনার সৃষ্টি না করে।’ একই
দেশের ফুলে—ফসলে পুষ্ট
দুই স¤প্রদায়ের বিরোধ
অত্যন্ত নিন্দনীয়। অথচ সা¤প্রদায়িক—রাজনৈতিক নেতারা নিজ নিজ স¤প্রদায়কে ‘ধর্মের নামে উগ্র মদ
পান’ করিয়ে অযথা মাতাল করে
তুলে বিরোধ সৃষ্টি করছেন। আর শিক্ষা—বঞ্চিত
সাধারণ মানুষকে করে তুলেছেন নিজেদের
হাতের পুতুল। রাজনৈতিক নেতারা চারপাশে ‘ভাড়াটিয়া মোল্লা মৌলবি পণ্ডিত পুরুত’ জুটিয়ে নিয়ে তাদের দিয়ে আপন আপন স¤প্রদায়ের পক্ষে ওকালতির ব্যবস্থা করেন। নজরুলের কথা, তরুণরা যেন
‘কদর্য’ হানাহানির ঊর্ধ্বে থাকে। স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, ‘ইসলাম ধর্ম কোনো অন্য
ধর্মাবলম্বীকে আঘাত করিতে আদেশ
দেন নাই। ইসলামের মূলনীতি
সহনশীলতা। পরমত সহনশীলতার অভাবে
অশিক্ষিত প্রচারকদের প্রভাবে আমাদের ধর্ম বিকৃতির চরম
সীমায় গিয়া পৌঁছিয়াছে।’ যুবসমাজের উদ্দেশে বলেছেন, ‘মানুষকে মানুষের সম্মান দিতে যদি না
পারেন, তবে বৃথাই আপনি
মুসলিম।’ মুসলমানদের ভুল আর পশ্চাদ্পদতা
বিষয়ে লেখকের ওই দুর্ভাবনা এ
যুগের জন্যেও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। নজরুলের ‘শেষকথা’, ‘আমরা যৌবনের পূজারী,
নব—নব সম্ভাবনার অগ্রদূত...।’ পৃথিবীর অগ্রগামী
পথিকদের সঙ্গে সমতালে পথ চলব। পরস্পর
যাবতীয় বিভেদ ভুলে সঙ্ঘবদ্ধতায় উদ্বুদ্ধ
করবার চেষ্টা করেছেন তিনি।
কাজী
নজরুল ইসলাম লক্ষ করেছেন ভারতবর্ষের
অগ্রগতি বারবার বাধাগ্রস্ত হয়েছে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, আভিজাত্যবোধের কারণে। হিন্দু—মুসলমানের ঐক্য সাধনের মাধ্যমে
অগ্রগতি ত্বরান্বিত করায় নজরুল ছিলেন আন্তরিক। হিন্দু—মুসলমান বিরোধের মূলে উভয় স¤প্রদায়ের পারস্পরিক জ্ঞানবিমুখতাকে নজরুল চিহ্নিত করেছেন। সমাজ—অন্তর্গত একটি
স¤প্রদায়ের মানুষ কুসংস্কার, গেঁাড়ামি, বৈষম্য, সংঘাত, দাঙ্গায় সভ্যতা—সমাজ—সময়—রাষ্টে্রর
গতিশীলতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে
ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে; নজরুল সেই স¤প্রদায়—অন্তর্গত সকল মানুষকে রক্ষণশীল
কুসংস্কারাচ্ছন্ন জগত থেকে আলোকিত
পৃথিবীতে পদচারণার আহ্বান জানিয়ে বলেছেনÑ ১. আজ বাঙালি
মুসলমানদের মধ্যে, একজনও চিত্রশিল্পী নাই, ভাস্কর নাই,
সঙ্গীতজ্ঞ নাই, বৈজ্ঞানিক নাই,
ইহা অপেক্ষা লজ্জার আর কি আছে?’(তারুণ্যের সাধনা) ২.
দেয়ালের পর দেয়াল তুলে
আমরা ভেদ—বিভেদের জিন্দাখানার
সৃষ্টি করেছি; কত তার নাম
সিয়া, সুন্নি, শেখ, সৈয়দ, মোগল,
পাঠান, হানাফি, শাফি, হাম্বলি, মালেকি, লা—মাজহাবি, ওহাবি
ও আরো কত শত
দল। ... সকল ভেদ—বিভেদের
প্রাচীর নিষ্ঠুর আঘাতে ভেঙ্গে ফেল।’(বাংলার মুসলিম বাঁচাও)
এভাবেই
উভয় স¤প্রদায়ের বিরোধের
প্রাচীর ভেঙে ফেলতে চেয়েছেন
কবি। নজরুল অন্য ধর্মের কূপমণ্ডুকতা,
কুসংস্কার আর প্রাচীন প্রথার
অবরোধগুলো উন্মোচন করে মানুষের পারস্পরিক
মিলনের মাধ্যমে সম্প্রীতি তৈরি করতে চেয়েছেন।
হিন্দুসমাজের অস্পৃশ্যতা সম্বন্ধে কবির অভিমতÑ ‘হিন্দু
ধর্মের মধ্যে এই ঘূত্মা্করূপ কুষ্ঠ
রোগ যে কখন প্রবেশ
করিল তাহা জানি না,
কিন্তু ইহা যে আমাদের
হিন্দু ভ্রাতৃদের একটা বিরাট জাতির
অস্থিমজ্জায় ঘুণ ধরাইয়া একেবারে
নির্বীর্য করিয়া তুলিয়াছে, ...।’(ছঁুৎমার্গ)
আবার
কবি মুসলিম সংস্কৃতির চর্চা প্রবন্ধে দেখিয়েছেন, হিন্দু যেমন আরবি—ফারসি—উর্দু জানে না, তেমনি
সাধারণ মুসলমান বাংলাও ভালো করে আত্মস্থ
করে না, সেখানে আরবি—ফারসি শিক্ষার প্রশ্ন অবান্তর। প্রিন্সিপাল ইব্রাহীম খাঁকে লিখিত একটি পত্রে নজরুল
জানিয়েছেনÑ ‘হিন্দু—মুসলমানের পরস্পরের অশ্রদ্ধা দূর করতে না
পারলে যে, এ পোড়া
দেশের কিছু হবে না...।’ সা¤প্রদায়িক
সম্প্রীতির জন্য নজরুল সাহিত্য
পাঠের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন। কোনো স¤প্রদায়ের
সমাজে তিনি মানুষকে বন্দি
করেননি। শৃঙ্খলিত—নিপীড়িত মানুষের সংগ্রাম, হতভাগ্যের জাগরণ, পদানত—শোষিত মানুষের মুক্তি—প্রত্যাশায় তিনি মানুষকে জাতি—ধর্ম—সমাজ মন্দির—মসজিদ ও গ্রন্থের ঊর্ধ্বে
তুলে ধরেছেন, মানবতার সপক্ষে বাজিয়েছেন সাম্যের সুরধ্বনি। ১৯২৬ সালে হিন্দু—মুসলিম দাঙ্গার সময় অসা¤প্রদায়িক
চেতনায় বিশ্বাসী নজরুলের হৃদয়—উৎসারিত বাণী হলোÑ‘যিনি
সকল মানুষের দেবতা, তিনি আজ মন্দিরের
কারাগারে, মসজিদের জিন্দাখানায়, গীর্জার মধ্যে বন্দী। মোল্ল¬া—পুরুত, পাদরী—ভিক্ষু জেল—ওয়ার্ডের মত
তাহাকে পাহারা দিতেছে। আজ শয়তান বসিয়াছে
¯্রষ্টার সিংহাসনে।... মানুষের কল্যাণের জন্য ঐ—সব
ভজনালয়ের সৃষ্টি, ভজনালয়ের মঙ্গলের জন্য মানুষ সৃষ্টি
হয় নাই। আজ যদি
আমাদের মাতলামির দরুন ঐ ভজনালয়ই
মানুষের অকল্যাণের হেতু হইয়া উঠেÑ
যাহার হওয়া উচিত ছিল কল্যাণের।
সেহেতু ভাঙ্গিয়া ফেল ঐ মন্দির—মসজিদ!’(মন্দির ও মসজিদ)
ধর্মের
ব্যাপারে নজরুল ছিলেন উদার। ড. আহমদ শরীফ
লিখেছেনÑ‘নজরুল ইসলাম কোন বিশেষ ধর্মের
অনুসারী ছিলেন বলা যায় না।
তিনি দেশ জাতি ধর্ম
বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সমান
উদারতায় ভালবাসতে পেরেছেন।’ (বিচিত্র—চিন্তা) এক ধর্মের সত্য—সন্ধানীরা অন্য ধর্মকে ঘৃণা
করতে পারে না বলে
তিনি অভিমত ব্যক্ত করেছেন। মুসলমান সমাজে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য তাঁর আন্তরিকতার
প্রকাশ রয়েছে ‘আমার লীগ কংগ্রেস’
প্রবন্ধে। নজরুল তাঁর এক ভাষণে
বলেছিলেন, ‘কেউ বলেন, আমার
বাণী যবন, কেউ বলেন,
কাফের। আমি বলি ও
দুটোর কিছুই নয়’। অসা¤প্রদায়িক চেতনায় উদ্বোধিত নজরুল হিন্দু—মুসলিম মিথকে একইসঙ্গে প্রবন্ধের বক্তব্যে ব্যবহার করেছেন। যেমনÑক) আজ
নারায়ণ আর ক্ষীরোদসাগরে নিদ্রিত
নন। (নবযুগ) খ) ঐ শোনো
মুক্তিপাগল মৃত্যুঞ্জয় ঈশানের মুক্তি—বিষাণ। ঐ শোনো মহামাতা
জগদ্ধাত্রীর শুভ—শঙ্খ! ঐ
শোনো ইসরাফিলের শিঙ্গায় নব সৃষ্টির উল্ল¬াস ঘন রোল!
(নবযুগ)। এ সম্পর্কে
কবি লিখেছেনÑ‘আমি হিন্দু—মুসলমানের
পরিপূর্ণ মিলনে বিশ্বাসী; তাই তাদের এ
সংস্কারে আঘাত হানার জন্যই
মুসলমানী শব্দ ব্যবহার করি,
বা হিন্দু দেব—দেবীর নাম
নিই। অবশ্য এর জন্য অনেক
জায়গায় আমার কাব্যের সৌন্দর্যহানি
হয়েছে। তবু আমি জেনেশুনেই
তা করেছি।’
বস্তুত
বিশ শতকজুড়ে হিন্দু—মুসলমানে দিনরাত হানাহানি, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ, যুদ্ধবিগ্রহ, মানুষের জীবনে একদিকে কঠোর দারিদ্র্য, ঋণ,
অভাব; অন্যদিকে লোভী মানুষের ব্যাংকে
কোটি কোটি টাকা পাষাণস্তূপের
মতো জমা হয়ে থাকাÑ
এই অসাম্য, এই ভেদজ্ঞান দূর
করতেই নজরুল বাংলা সাহিত্যে আবিভূর্ত হয়েছিলেন; কবিতা ও প্রবন্ধে সাম্য,
কল্যাণ ও ঐক্যের বাণী
শুনিয়েছিলেন। নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার সেই প্রচেষ্টাকে স্মরণে
রেখে, অনুশীলন করে একুশ শতকে
সামনে এগিয়ে যেতে হবে। গড়ে
তুলতে হবে সাম্যবাদী সমাজ।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।