ইনসাইড থট

"মনোযোগের প্রতি মনোযোগী হোন"


Thumbnail

এরিক আর্থার ব্লেয়ার (১৯০৩-১৯৫০) কালউত্তীর্ণ  সাহিত্যিক ও রাজনৈতিক লেখক। ব্রিটিশভারতে জন্মগ্রহণকারী "এনিমেল ফার্ম" খ্যাত এই ইংরেজ লেখক জর্জ অরওয়েল ছদ্মনামেই সমধিক পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস "1984" প্রকাশিত হয় ১৯৪৯ সালে। এই বিখ্যাত উপন্যাসটিতে যে সকল সংকটের কথা কল্পনা করা হয়েছিল এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি হচ্ছে তথ্যের স্বল্পতা। ভবিষ্যতের শাসকরা আরো বেশি করে তথ্য আটকে রাখবে, তথ্য পাওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে এমনটি ঘটেনি। তথ্যের স্বল্পতা ১৯৮৪ সালে প্রকট হয়নি। আর এখন তো সবচেয়ে সহজে যা পাওয়া যায়, সেটা হচ্ছে 'তথ্য'। অন্যান্য পণ্যের মতো তথ্যও উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ করা যায়। পণ্য হচ্ছে, "anything that can be offered to a market for attention, acquisition, use or consumption that might satisfy want or need" (Kotler, 2022)। পণ্যের সংজ্ঞায় দখল, ব্যবহার এবং ভোগের আগেই 'মনোযোগ' শব্দটি গুরুত্ব পেয়েছে। William James তাঁর Principles of Psychology (1980) বইয়ে মনোযোগের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে লিখেছেন, "attention is the taking possession by the mind, in clear and vivid form, of one out of what may seem several simultaneously possible objects of trains of thought ... It implies withdrawal from something in order to deal effectively with others. 

" মনোযোগ বলতে নির্দিষ্ট একটা বিষয়কে ফোকাস করাকে বুঝায় না, একই সাথে এটা অসংখ্য প্রতিযোগী তথ্য এবং উদ্দীপককে অগ্রাহ্য করাকেও বুঝায়। যা এ মুহূর্তে প্রাসঙ্গিক নয় সেটাকে এড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের প্রতি আকর্ষিত হওয়াই মনোযোগ ( Kendra Cherry, 2022)। কোন পণ্যকে ভোক্তা কিভাবে মূল্যায়ন করবে সেটা অনেকাংশেই তাঁর প্রত্যক্ষণের উপর নির্ভর করে। মনোযোগ হচ্ছে প্রত্যক্ষনের একটি পূর্বশর্ত। কোন নির্দিষ্ট উদ্দীপকের প্রতি ইন্দ্রিয় বা ইন্দ্রীয় সমূহকে নিবদ্ধ করার নামই হলো মনোযোগ। যে মানসিক ক্রিয়ার মাধ্যমে একাধিক বিষয় থেকে চেতনাকে সম্পূর্ণ সরিয়ে নিয়ে একটি বিশেষ বিষয়ে চেতনাকে কেন্দ্রীভূত করা হয় তাকে মনোযোগ বলে। ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণের খরচ গত দুই দশকের ৭ থেকে ৯ গুন বেড়ে গেছে। ব্র্যান্ডের প্রতি ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণ করা মার্কেটিংয়ের কাজ। মার্কেটিংয়ের চুম্বকীয় বার্তাকে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সেটা ক্রেতার মনোযোগ দখল করতে পারে। এই প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েও কোন লাভ হবে না, চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কোন বিকল্প নেই (Rebecca Riserbalo,2021)। "মনোযোগ বারজাতকরণ" শব্দবন্ধ প্রথম ব্যবহার করেন Steve Jerry, পরবর্তীতে এটাকে জনপ্রিয় করে তোলেন Seth Godin. মনোযোগ বাজারজাতকরণের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Rebecca Riserbalo বলেন, '"Attention marketing is the concept that marketing is all about capturing and engaging your audience's attention. This is usually done through non-invasive means, like social media. With attention marketing you'll focus on how to capture someone's limited attention"(Rebecca Riserbalo, "Attention Marketing", 2021)। Microsoft এর এক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে গড়ে ব্যক্তির মনোযোগের স্থায়িত্বকাল ৪ সেকেন্ডে নেমে এসেছে। ২০০০ সালে একজন মানুষ একটানা গড়ে কোন বিষয়ে ১২ সেকেন্ড মনসংযোগ করতে পারতেন, ২০১৫ সালে এটা ছিল ৮ সেকেন্ড। এর মানে হচ্ছে বাজারজাতকরণকারীকে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণ করতে হবে, অন্যথায় সে স্করল (scorl) করে অন্যদিকে চলে যাবে। মনোযোগ হল কোন বিশেষ তথ্যের উপর কেন্দ্রীভূত মানসিক সংযোগ। তথ্য আমাদের  চেতনায় আসে। আমরা বিশেষ কোনো তথ্যের প্রতি মনোযোগ দেই এবং এরপর সিদ্ধান্ত নেই কোন পদক্ষেপ নিব কি, নিব না (Davenport & John, 2001)। মনোযোগ একটি সীমিত সম্পদ, যার অর্থনৈতিক মূল্য আছে (Crawford ,2015)। এক সাথে অনেকগুলো বিষয়ে মনোযোগ দেয়া প্রায় অসম্ভব। দানবীয় তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো (যেমন google, মেটা, Apple, আমাজন, মাইক্রোসফট) প্রায় বিনামূল্যে তথ্য সেবা দিচ্ছে। আর আমরা মনোযোগ দিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাভবান করছি। (একই প্রক্রিয়ায় দেশে বিদেশে অবস্থানকারী কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইউটিউবারের (বাটপার) মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্ভট কন্টেন্ট দেখে দর্শকরা তাদের ভরণপোষণ করছে।

কেউ কেউ গত দুই দশকের অর্থনীতিকে "তথ্য অর্থনীতি" না বলে "মনোযোগের অর্থনীতি" হিসেবে অভিহিত করেছেন। মনোযোগের অর্থনীতি কথাটি বহু পুরাতন। আজ থেকে প্রায় সিকি শতাব্দী আগে, ১৯৯৭ সালে মাইকেল গোল্ডহেবার "Wired" সাময়িকীতে প্রকাশিত তাঁর "Attention Shoppers" নিবন্ধে প্রথম মনোযোগ অর্থনীতির বিষয়টির অবতারণা করেন। কোন অর্থনীতিতে অনেক মানুষ যখন তথ্য ব্যবস্থাপনা করে জীবিকা নির্বাহ করে সেটাকে তথ্য অর্থনীতি বলে। 

গোল্ডহেবার বলেন, তথ্য অর্থনীতি কথাটি সঠিক নয়। অর্থনীতি হল কোন সমাজ তার দুষ্প্রাপ্য সম্পদগুলো কিভাবে ব্যবহার করবে তার চর্চা। ("Economics is the science which studies human behaviour as a relationship between ends and scarce means which  have alternative uses"- Lionel Robbins)। আজকের দিনে তথ্য কোন দুষ্প্রাপ্য সম্পদ নয়। যেটা দুষ্প্রাপ্য সেটা হচ্ছে মনোযোগ। ইন্টারনেটের দুনিয়ায় অর্থনীতির মূল নির্ধারক মুদ্রা হল মনোযোগ, তথ্য নয়।

মানব ইতিহাসের সিংহভাগ জুড়ে তথ্য ছিল দুষ্প্রাপ্য। কয়েক দশক আগেও বেশিরভাগ মানুষ লেখাপড়া জানতো না। আধুনিক যুগে সবাই সবকিছু প্রায় বিনামূল্যে পড়ছে। মানুষের সময় এবং তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ক্ষমতা একটুও বাড়েনি। মনোযোগ একটি সীমিত মানসিক সম্পদ। একটি বিষয়ে মনোযোগ দিলে অন্যটির প্রতি মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। প্রচুর তথ্য সম্পদ মনোযোগের দারিদ্র্য তৈরি করে। ১৯৭১ সালে অর্থনীতিতে নোবেলবিজয়ী মনোবিজ্ঞানী হারবার্ট সাইমন ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, "একটি তথ্য সমৃদ্ধ বিশ্বে তথ্যের প্রাচুর্যের ফলে অন্য কিছুর ঘাটতি সৃষ্টি হবে, যা হলো তথ্য যা ভোগ করে। তথ্য কি ভোগ করে? এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান তথ্য তার গ্রাহকের মনোযোগ ভোগ করে। মার্কেটিংয়ে তথ্য নিজেই একটি পণ্য, অপরদিকে এটি একটি মার্কেটিংয়ের কৌশলগত হাতিয়ার। মনোযোগ হচ্ছে বিনামূল্যে পাওয়া তথ্যের জন্য প্রদেয় ক্রেতার মূল্য (Herbert Simon, 1971)। তথ্য বিস্ফোরণ (information overload) বাজারজাতকরণকে সহজ করার পরিবর্তে জটিল করে তুলেছে। "Information overload is the difficulty in understanding an issue and effectively making decisions when one has too much information (TMI) about that issue,  and is generally associated with the excessive quantity of daily information". ১৯৭০ সালের প্রকাশিত বেস্ট সেলার বই "Future Shock" এর লেখক Alvin Toffler তথ্য বিস্ফোরণ বা information overload বিষয়টি নিয়ে সবাইকে মাথা ঘামাতে বলেন। মানুষের তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ক্ষমতার অতিরিক্ত তথ্য যখন তাঁর নিকট চলে আসে তখনই তথ্য বিস্ফোরণ ঘটে (infobesity), এর ফলে সিদ্ধান্তের মান কমে যায়। খুব বেশি তথ্য নিয়েই বরং ক্রেতা সমস্যায় পড়ে যায় (information anxiety), সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগে অথবা শেষ পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে পারেনা (Alvin Toffler,1970)।

বাজারজাতকরণকারীর সরবরাহকৃত তথ্য যাতে প্রতিযোগিতা করে অন্য কোম্পানির তথ্যের চেয়ে বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে সেজন্য তথ্যকে প্রাসঙ্গিক, আগ্রহজনক এবং ব্যক্তিবিশেষের আগ্রহ অনুযায়ী নির্বাচন ও উপস্থাপন করতে হবে। তথ্যের মাধ্যমে ক্রেতা আকর্ষণ করতে হলে তাঁকে একটা সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতা প্রদান করতে হবে। বিক্রেতাকে অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ তথ্য প্রদানের মাধ্যমে ক্রেতার সাথে ঘনিষ্ঠতা (engagement) বাড়াতে হবে। মনোযোগ হচ্ছে প্রত্যক্ষনের পূর্বশর্ত। একই পরিস্থিতিকে বিভিন্ন লোক বিভিন্নভাবে প্রত্যক্ষণ করে। ভিন্ন প্রত্যক্ষণের কারণ হচ্ছে যদিও আমরা প্রত্যেকেই পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তথ্য (উদ্দীপক) গ্রহণ করি, কিন্তু এ ইন্দ্রিয়ে সাড়া জাগানো তথ্যগুলোকে আমরা নিজেদের মতো গ্রহণ, সংগঠন এবং ব্যাখ্যা করি। প্রত্যক্ষন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে ব্যক্তি জগতের অর্থবহ চিত্র (উদ্দীপক) থেকে তথ্য নির্বাচন, সংগঠন এবং ব্যাখ্যা করে। একই উদ্দীপক বিভিন্ন ব্যক্তির নিকট বিভিন্ন প্রত্যক্ষণ সৃষ্টি করার কারণ হচ্ছে তিনটি প্রত্যক্ষণ প্রক্রিয়া (perceptual process): নির্বাচিত প্রভাবাধীন হওয়া( selective exposure), নির্বাচিত বিকৃতকরণ (selective distortion) এবং নির্বাচিত ধারণ (selective retention)। প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতিদিন অসংখ্য উদ্দীপকের মুখোমুখি হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একজন ব্যক্তি প্রতিদিন গড়ে কয়েক শত বিজ্ঞাপনের সম্মুখীন হয়। কোন ব্যক্তির পক্ষেই সবগুলো বিজ্ঞাপনের (উদ্দীপকের) প্রতি মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। বেশিরভাগই পর্দার অন্তরালে চলে যায়। বাজারজাতকরণ যোগাযোগকারীর প্রকৃত চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কোন্ উদ্দীপক মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারবে সেটা ঠিক করা। গবেষণা থেকে দেখা গেছে মানুষ তার বর্তমান প্রয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট উদ্দীপকটির প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয়। যে যেই সমস্যায় থাকে সে সেই সমস্যার সমাধানের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। ভুক্তভোগীর প্রত্যেকটি সমস্যার এক একটি সমাধানই হচ্ছে 'পণ্য' (product is a solution to customers problem)। তাঁরা প্রত্যাশিত উদ্দীপকের প্রতি বেশি মনোযোগী হয়। নির্বাচিত প্রভাবাধীন হওয়ার কথাটির তাৎপর্য হচ্ছে বাজারজাতকরণকারীকে ভোক্তা মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিশেষ করে চেষ্টা চালাতে হবে। তাঁদের অফার(offer) হয়তো এমন ব্যক্তিদের মাঝে হারিয়ে যেতে পারে যারা পণ্য গ্রহণের বাজারে নেই। অন্যদের অফারের সমুদ্রে নিজের অফারকে স্বাতন্ত্র্য (পৃথকীকরণকৃত) করতে না পারলে বাজারে অবস্থানকারী সম্ভাব্য ক্রেতাদেরদেরও মনোযোগ আকৃষ্ট হবে না। এমনকি যেসব উদ্দীপক ভোক্তার দৃষ্টি কাড়ে তাও আবার সব সময় সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয় না। প্রত্যেক ব্যক্তি আগত তথ্যকে তাঁর পূর্বস্থিরকৃত মনের অবস্থা (মনের মাধুরী মিশিয়ে) দিয়ে মিলাতে চেষ্টা করে। নির্বাচিত বিকৃতকরণের অর্থ হচ্ছে তথ্যের ব্যক্তিগত অভিযোজন প্রবণতা। যোগাযোগকারী যাই বলুক না কেন বা দেখাক না কেন ভোক্তা তাঁর নিজের পূর্বস্থিতরকৃত মনের অবস্থা দ্বারা উপসংহারে আসবে। মানুষ উদ্দীপককে এমনভাবে ব্যাখ্যা করতে চায় যা সে ইতিমধ্যেই বিশ্বাস করে তা যেন সমর্থিত হয়। ধর্ম, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, পোশাক, সংগীত, খাদ্য এসকল প্রায় সব ব্যাপারেই মানুষের একটা মনোভাব থাকে। মনোভাব দ্বারা ব্যক্তির কোন ধারণা সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে দৃঢ় (consistent )মূল্যায়ন, অনুভূতি এবং প্রবণতা নির্ধারিত হয়। মনোভাব মানুষের মনে এমন একটি মানসিক কাঠামো তৈরি করে যার দ্বারা সে কোন কিছুকে পছন্দ করে ওই দিকে এগিয়ে যায় অথবা দূরে সরে আসে। নির্বাচিত বিকৃতকরণের তাৎপর্য হচ্ছে বারজাতকরণকারীকে ভোক্তার মনের পূর্বকথা এবং এগুলো কিভাবে বিজ্ঞাপন ও বিক্রয় তথ্যকে প্রভাবিত করবে তা অনুধাবন করা।

মানুষ যা শিখে তার অনেক কিছুই ভুলে যায়, যা তাদের বিশ্বাস এবং মনোভাবকে সমর্থন করে ওইসব তথ্য মনে রাখার প্রবণতা মানুষের মধ্যে বেশি থাকে। নির্বাচিত ধারণ( মনে রাখা) প্রবণতার কারণে ভোক্তা কোন পণ্যের ভালো গুণগুলোই বেশি মনে রাখবে,  প্রতিযোগী পণ্যের গুণাগুণ গুলো ভুলে যাবে। ক্রেতা তাঁর পছন্দের পণ্যের ভালো পয়েন্টগুলো মনে রাখে এবং পণ্য পছন্দের সময় ওই কথাগুলোই বারবার স্মরণ (rehearses) করে। তিনটি প্রত্যক্ষন উপাদান- নির্বাচিত প্রভাবাধীন হওয়া, বিকৃতকরন এবং ধারণের তাৎপর্য হচ্ছে বাজারজাতকরণকারীকে তার বার্তা সঠিকভাবে পৌঁছাতে হলে কঠোর অনুশীলন করতে হবে। এই উপাদানগুলো দ্বারা অভীষ্ট বাজারে বার্তা প্রেরণের পৌন:পুনিকতা, এবং নাটকীয়তার সামর্থনে ব্যাখ্যা দেয়া যায় । আরেকটি কৌতুহরী ব্যাপার হচ্ছে যদিও বেশিরভাগ বাজারজাতকরণকারী তাঁর আবেদন ভোক্তারা আদৌ প্রত্যক্ষণ করবে কিনা এ ব্যাপারে সন্দিহান থাকে, একই সময়ে একদল ভোক্তাও আবার শঙ্কিত থাকে এজন্য যে, তেমন কিছু না জেনেই বাজেজাতকরণ বার্তা দ্বারা সে ক্ষতিকরভাবে প্রভাবিত হবে কিনা।

মনোযোগ বরজাতকরণের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রথম কাজ হচ্ছে যাদের নিকট তথ্য পৌঁছানো হবে তাদের ব্যবহৃত সুনির্দিষ্ট তথ্য প্লাটফর্মটি নির্বাচন করা। তারপরের কাজ হচ্ছে অতি সুস্পষ্ট একটি বার্তা তৈরি করা। ক্রেতারা যে সকল বিষয়কে মূল্যবান( value) মনে করে কেবলমাত্র সেই বিষয়গুলোকেই অন্তর্ভুক্ত করা। এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট ভ্যালু বিবৃতি তৈরি করতে হবে। বিবৃতি তৈরীর সময় যে ফরমেটটি এক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয় সেটি হচ্ছে,  "To...our.. is ..that"  ফরম্যাট । এক্ষেত্র "To" হচ্ছে সুনির্দিষ্ট টার্গেট অডিয়েন্স । "our" হচ্ছে ব্র্যান্ডের নাম, "is" হচ্ছে জিনিসটি কি? আর "that" হচ্ছে এই জাতীয় অন্যান্য অফারের সাথে কোম্পানির অফারের পার্থক্য(POD)। বার্তা প্রেরণের জন্য একাধিক মাধ্যম ব্যবহার করলে এগুলোর মধ্যে সমন্বয় থাকতে হবে । বিভিন্ন 

মিডিয়ায় প্রচারিত বার্তায় একটি গল্প থাকতে হবে যার মধ্যে  বাজারজাতকরণের আবেগীয় আবেদনের উপাদান থাকতে হবে। কোম্পানির সাথে প্রতিযোগিতা করছে না এমন অন্য ব্র্যান্ডকেও ক্রেতার মনোযোগ মনোযোগ আকর্ষণের কাজে সহযোগী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে(co-branding)। যেহেতু দেশের প্রায় ৭০% লোক ইন্টারেক্টিভ অনলাইনে সংযুক্ত অতএব মানুষের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য একটি আকর্ষণীয় ওয়েবসাইট থাকতেই হবে। মনোহারী যোগাযোগ এবং অন্যান্য উপায়ে ক্রেতার মনে অবস্থান( position) তৈরি করার বিষয়টি স্বীকার করেও বলা যায়, ক্রেতার মনোযোগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে স্থান(place) এবং প্যাকেজিং এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ । ওয়ালমার্টের একটি সুপারসেন্টারে প্রায় ১ লক্ষ ৪২ হাজার আইটেম থাকে। ক্রেতারা পণ্য ক্রয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতি চারটির মধ্যে তিনটি সিদ্ধান্ত দোকানে গিয়ে গ্রহণ করে,  এবং এসময়ে তাঁরা প্রতি মিনিটে তিনশোটি আইটেম অতিক্রম করে। অসংখ্য প্রতিযোগী পণ্যের মধ্যে 

দোকানী আপনার পণ্যটি কোন্ রেকে (shelf) এবং রেকের কোন্ অবস্থানে (রেকের নিচের দিকে, চোখের সমান উচ্চতায়, মাথার উপরে) রেখেছে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এমন প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশে বিক্রেতার জন্য ক্রেতার মনোযোগের আকর্ষণের সর্বশেষ হাতিয়ার হতে পারে পন্যের প্যাকেট। আকর্ষণীয় প্যাকেট মনোযোগ ছাড়াও পণ্যের সাথে ক্রেতার এংগেজমেন্ট বা ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে দেয়,  যা অন্য কোন মাধ্যমে সম্ভব নয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন