ঈদ উৎসবের ন্যায় কুরবানিকেও সঙ্গীত-ছন্দে সুরারোপিত করেছেন, কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
১৯৩৭ সালে অনবদ্য এক রচনা তাঁর, "ও মোর রমজানের এই রোজাশেষে এলো খুশীর ঈদ"...
তারপর কুরবানি নিয়ে তাঁর রচনা,
"তোরা ভোগের পাত্র ফেলরে ছুঁড়ে ত্যাগের তরে হৃদয় বাঁধ।"
ঈদুল ফিতরের সঙ্গীতটিতে ছিলো, কবির স্ব-কন্ঠেরই সুর। কণ্ঠশিল্পী আব্বাসউদ্দীনের অনুরোধেই লিখেছিলেন, অপূর্ব ওই সঙ্গীতটি।
এছাড়াও অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের ‘কুরবানি’ কবিতায় জাতীয় কবি নজরুল বলেছেন,
"ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন/
এই দিনই মীনা ময়দানে পুত্র স্নেহের গর্দানে ছুরি হেনে খুন ক্ষরিয়ে নে
রেখেছে আব্বা ইবরাহিম সে আপনা রুদ্র পণ/
ছি ছি! কেঁপো না ক্ষুদ্র মন
আজ আল্লার নামে জান কুরবানে ঈদের পূত বোধন/
ওরে হত্যা নয় আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন।...
কবি নজরুল যখন ইসলামি সঙ্গীত লেখা শুরু করেন, তখন বাংলার রাজধানী কলকাতায় হিন্দু শিল্পীদের জয়জয়কার। তাই মুসলিম নামধারণ করে তারাই হিন্দুরাই তাঁর গান গাইতেন।
কবির ঈদুল ফিতরের সঙ্গীতটিই ছিল, ইসলামি সঙ্গীত রচনার ক্ষেত্রে 'মাইলফলক'।
বিশেষ করে তখনকার ভারতীয় মুসলিম সমাজ, হিন্দু শ্যামাসংগীত রচনায় জন্য যে নজরুলকে "কাফের" বলতো, সেই সমাজই ক্রমে তাঁকে সানন্দে গ্রহণ করলো। বছর ঘুরে মুসলমানদের জন্য ঈদ-কুরবানি এলে নজরুলের এ সঙ্গীত ও রচনা ধ্বনিত, প্রতিধ্বনিত হয়ে আকাশে-বাতাসে অনুরণনের সৃষ্টি করে চলতে থাকে, সে কেবল বাংলাদেশে নয়,পশ্চিমবাংলাসহ সারা দুনিয়ার বাংলা-ভাষাভাষী প্রবাসী বাঙালীদের হৃদয়ে। সত্যিই কবি ঈদুল ফিতরের ন্যায় ঈদুল আজহার তাৎপর্যকেও মহিমান্বিত করেছেন, কাব্যিক ছন্দে, সুরের ফল্গুধারায়।
"কুরবানি কি এবং কেনো?"
পবিত্র কোরআনে "কুরবান" শব্দ ব্যবহৃত হলেও ফারসী ও হিন্দি-উর্দুতে শব্দটিকে "কোরবানি" রুপ দেয়া হয়েছে। অর্থ, 'নৈকট্য'। অর্থাৎ চিত্তশুদ্ধির ও পবিত্রতার প্রধান মাধ্যম হলো, কোরবান বা কুরবানি। কুরবানি বা কোরবান শব্দটি ‘কুরবুন’ মূলধাতু থেকে উদ্ভূত। যার বঙ্গানুবাদ সান্নিধ্যলাভ বা নৈকট্য অর্জন করা। অর্থাৎ বান্দা হিসেবে তার প্রিয়বস্তুকে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। ঈদুল ফিতর একটি সামাজিক উৎসব, সমষ্টিগতভাবে আনন্দের অধিকারগত উৎসব। অপরদিকে, ঈদুল আজহা উৎসবের একটি অঙ্গ হচ্ছে কোরবানি। কুরবানি হল চিত্তশুদ্ধির এবং পবিত্রতার মাধ্যম। এটি সামাজিক রীতি হলেও আল্লাহর জন্যই এ রীতি প্রবর্তিত হয়েছে।
কাফির- মুশরিকরা তাদের দেব-দেবী ও কবর-বেদীতে পুজো দেয় এবং মূর্তির সম্মানে পশু বলী দেয়। প্রতিবাদস্বরূপ সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হযরত ইব্রাহিম (আঃ)কে তাঁর উদ্দেশ্যে বা সমীপে 'ছালাত' আদায়ে কোরবান বা কুরবানি করার আদেশদান করেন। কোরআনে বর্ণনা অনুযায়ী হযরত ইব্রাহিম (আ.) হচ্ছেন, মুসলিম জাতির পিতা। ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক তাঁর শিশুপুত্র ইসমাঈল (আ.) -কে আল্লাহর রাহে বা নামে কুরবানি দেন। মক্কানগরীর জনমানবহীন মিনাপ্রান্তরে আল্লাহর আত্মনিবেদিত দুই বান্দা ইব্রাহিম ও ইসমাঈল আল্লাহর কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মাধ্যমে তুলনাহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ফলে তা কুরবানি দেয়ার অনুসরণে "সুন্নাতে ইব্রাহিমী" হিসেবে চালু হয়। আল্লাহ বলেন, ‘আর আমরা তার (ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কোরবান। আমরা এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছাফফাত ১০৭-১০৮)। আল্লাহ আরও বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করো এবং কুরবানি করো’ (কাওছার ২)। আল্লাহর প্রেরিত রাসূল মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানি করলো না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’। প্রচলিত অর্থে ঈদুল আজহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঈ তরীকায় যে পশু যবহ করা হয়, তাকে ‘কুরবানি’ বলা হয়’। সকালে রক্তিম সূর্য উপরে ওঠার সময়ে ‘কুরবানি’ করা হয় বলে এই দিনটিকে ‘ইয়াওমুল আযহা’ বলা হয়ে থাকে। আল্লাহই একমাত্র বিধাতা প্রতিমুহূর্তেই যাঁর করুণালাভের জন্য মানুষ প্রত্যাশী। আমাদের বিত্ত, সংসার এবং সমাজ তাঁর উদ্দেশ্যেই নিবেদিত এবং কুরবানি হচ্ছে, সেই নিবেদনের একটি প্রতীক। কুরবানি মুসলমানদের জন্য একটি ধর্মীয় ইবাদতও। যিলহজ্জ মাসের দশ থেকে বারো তারিখের মধ্যে এই ইবাদত পালন করতে হয়। কুরবান হচ্ছে, হযরত ইব্রাহিম (আ.) বিবি হাজেরা ও ইসমাঈলের এক পরম ত্যাগ র্পরম্পরায় এরপর থেকে কুরবানি দিয়ে আসেন পরবর্তী নবীগণও। আল্লাহর জন্যই এই রীতি প্রবর্তিত হবার পর এটি মুসলিম সমাজে সামাজিক রীতি হিসেবে চালু রয়েছে। ঈদুল আজহার দিন সমগ্র মুসলিম জাতি "ইব্রাহিমী সুন্নাত" পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রাণপণ চেষ্টা করে। কুরবানির স্মৃতিবাহী যিলহজ্জ মাসে হজ্জ উপলক্ষে সমগ্র পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হয় ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদীনায়। তাঁরা ইব্রাহিমী আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন। হজ্জ্ব মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ।
সুন্নাতে ইব্রাহিম" হিসেবে রাসুলুল্লাহ (সা.) সয়ং মদীনায় প্রতিবছর আদায় করেছেন। সাহেবিরাও তাঁর পথ অনুসরণ করেন। অতঃপর অবিরত ধারায় মুসলিম উম্মাহ সামর্থবানদের মধ্যে এটা চালু হয়। কুরবানির স্মৃতিবাহী যিলহজ্জ মাসে হজ্জ উপলক্ষে সমগ্র পৃথিবী থেকে লাখ লাখ মুসলমান সমবেত হয় ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতি বিজড়িত মক্কা-মদিনায়। তারা ইব্রাহিমী আদর্শে আদর্শবান হওয়ার জন্য জীবনের সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করেন। হজ্জ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য, সংহতি ও ভ্রাতৃত্ববোধের এক অনন্য উদাহরণ।
আল্লাহ বলেন, আর কুরবানির পশু সমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে’ (হজ্জ ৩৬)।
মানুষ আল্লাহর জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করবে, এই শিক্ষাই ইব্রাহিম (আ.) আমাদের জন্য রেখে গেছেন। মহানবী মুহাম্মাদ (সা.) আমাদের জন্য ঐ ত্যাগের আনুষ্ঠানিক অনুসরণকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে গেছেন। আর ঈদুল আজহার মূল আহ্বান হল সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ আনুগত্য প্রকাশ করা। সকল দিক হতে মুখ ফিরিয়ে এক আল্লাহর দিকে রুজু হওয়া। সম্পদের মোহ, ভোগ-বিলাসের আকর্ষণ, সন্তানের স্নেহ, স্ত্রীর মুহাববত সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহর সন্তুষ্টি প্রতি আত্মসমর্পণ করে দেওয়াই হল ঈদুল আজহার মূল শিক্ষা। ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর হুকুমে পুত্র কুরবানি করেছিলেন। মূলতঃ তিনি এর দ্বারা পুত্রের মুহাব্বতকে কুরবানি করেছিলেন। আল্লাহর ভালোবাসার চাইতে যে পুত্রের ভালোবাসা বড় নয়, এটিই প্রমাণিত হয়েছে তার আচরণে। আল্লাহ এটাই চেয়েছিলেন। আর এটাই হল প্রকৃত তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি। ইব্রাহিম (আ.) তার প্রিয়পুত্র ইসমাঈল (আ.)-কে কুরবানি করে এক বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যাতে অনাগত ভবিষ্যতের অগণিত মানুষ আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণের বাস্তব শিক্ষা লাভ করতে পারে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যারা আল্লাহ ও পরকালের ভয় কর তাদের জন্যে ইব্রাহিম ও তার অনুসারীদের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’ (মুমতাহিনা ৪-৬)। কুরবানি কেবল পশু কুরবানি নয়। নিজের পশুত্ব, নিজের ক্ষুদ্রতা, নীচতা, স্বার্থপরতা, হীনতা, দীনতা, আমিত্ব ও অহংকার ত্যাগের কুরবানি।
একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, তাঁর ইচ্ছা ও সন্তুষ্টির প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনই প্রকৃত মুমিনের কাজ এবং তাতেই নিহিত রয়েছে অশেষ কল্যাণ ও প্রকৃত সফলতা।
১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশে মুসলিম অধিকারে এলে এদেশে কুরবানির প্রচলন শুরু হয়। সে বিষয় আলোচনার আগে কুরবানির প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে একটু তাকানো যেতে পারে।
ঈদ অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে তার বেশ কিছু আগে থেকে। কারণ বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগ থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ, সাধকরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আস্তানা গড়েন। অন্যদিকে আরবীয় ও অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে বণিকরা চট্টগ্রামের বন্দর হয়ে বাংলার সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি করেন এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য প্রচার করেন। সেই থেকে পূর্ব বাংলার ওপর একটি মুসলিম সংস্কৃতি তথা ধর্মীয় প্রভাব পড়ে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর বাঙালির ‘ঈদ’ উৎসবের সূচনাও ঠিক এভাবেই হয়েছে বলে ধারণা করা হয় এবং সময়ের পরিক্রমায় অনেক মুসলিম অনুষ্ঠানের মধ্য থেকে ‘ঈদ’ পরিণত হয় এক বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসবে। ঈদুল আযহা বা কুরবানি ঈদে বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা সাধারণত উট, দুম্বা, ভেড়া, বকরি বা ছাগল, মহিষ, গরু ইত্যাদি কুরবানি দিয়ে থাকনে। তবে আদিকালে আমাদের দেশে কুরবানির জন্য ছাগল বেশি জনপ্রিয় ছিল, কেননা তখন গরু কুরবানি করা খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিলনা। এর কারণ হিসেবে একটি তথ্যে দেখা যায়, ১০০-১৫০ বছর আগে বাংলাদেশে গরু কুরবানি দেয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। কুরবানি যদি কেউ দিতে চাইত তাহলে খাসি বা ছাগলই দিতো। তৎকালীন বিখ্যাত সাহিত্যিক-রাজনীতিক আবুল মনসুর আহমদ তার আত্মজীবনীতে সে সময় ঈদুল আযহা সর্ম্পকে র্বণনা দিয়েছেন, ‘বকরা ঈদে কেউ গরু কুরবানি করতো না। সে আমলে পরাক্রমশালী জমিদারদের তরফ থেকে গরু কুরবানি কড়াকড়ভিাবে সর্বত্রই নিষিদ্ধ ছিল। শুধু বকরি কুরবানি করা চলতো। মোগল যুগে বাংলাদেশে ঈদুল আযহা কিভাবে উদযাপন করা হতো তা জানা যায়নি। এমনকি উনিশ শতকের শুরুতে ঈদুল আযহার তেমন কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। আরকেটি গুরুত্বর্পূণ সত্য হলো, ১০০-১৫০ বছর আগে ঈদ মুসলমানদরে প্রধান উৎসব হিসাবে উদযাপতি না হওয়ার মূল কারণ ছলি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া। এছাড়াও বত্তিহীদরে দরদ্র্যিতার কারণে মানুষরে স্বতঃর্স্ফূত আশা-আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ না ঘটা।"
এছাড়াও সকালে বিশুদ্ধ ইসলাম সর্ম্পকে অজ্ঞ ছলি সাধারণ মানুষ। যদওি এ অবস্থার পরর্বিতন এনেছিল ফরায়েজী আন্দোলন (১৮১৫ খ্রি.)। উনশি শতকরে গোড়ায় যখন রাজনৈতিকভাবে মুসলিম স্বাতন্ত্রবাদী আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন থকেইে গুরুত্ব পেয়েছে ঈদ। তবে খানকিটা জাঁকজমকরে সঙ্গে দুটি ঈদ উদযাপনের মধ্যে আছে বিত্তের সর্ম্পক। স্বাভাবকিভাবেই শহর, মফস্বলে ও গ্রামাঞ্চলে যারা ধনী, বিত্তবান তাদের ঈদ আর সাধারণ মানুষের ঈদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। ইসলাম প্রচারের শুরুতে অর্থাৎ আদিতে বাঙালি মুসলমানরা কিভাবে ঈদ উদযাপন করতেন তা জানা আজ অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তবে এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যায়, অতীতে মুসলমানদরে ঈদুল ফিতর যেমন বাংলাদেশে বড় কোনো র্ধমীয় উৎসব হিসবে উদযাপতি হয়নি, তেমনি উদযাপতি হয়নি ঈদুল আযহাও। আজকে আমরা স্বতঃর্স্ফূতভাবে আনন্দ ও ধুমধামের সঙ্গে ঈদুল আযহা উদযাপন করি তা মাত্র ৬০-৭০ বছররে ঐতহ্যি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানেরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবাম্ভীর্য বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঈদুল আযহা পালন করে থাকেন। এ ঈদে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে পশু কুরবানি দেওয়া নিয়েও থাকে এক ধরনের বিশেষ ব্যস্ততা। এছাড়াও এ সময় ছোট থেকে বড় সবাই নতুন পোশাক পরে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিদের বাড়িতে সাক্ষাৎ করতে যায় এবং কুশল বিনিময় করে। ঈদের সময় প্রত্যেক বাড়িতেই সাধারণ খাবারের পাশাপাশি উন্নতমানের খাবার প্রস্তুত হয়। শুধু মুসলমান ই নয় অন্য ধর্মাবলম্বীরা বন্ধু-বান্ধবদেরও নিমন্ত্রিত হয়ে এ উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায়। দেশের সকল স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদুল ফিতরের মতে ঈদুল আজহা উপলক্ষেও কয়েকদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। অনেকেই নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঈদুল আজহা উদযাপন করে। বিভিন্ন মসজিদ-ময়দানে ঈদের মতো কুরবানিতেও নামাজ আদায় করা হয়। রেডিও-টেলিভিশনগুলো বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে এবং পত্র-পত্রিকাসমূহ ঈদুল আযহার তাৎপর্য তুলে ধরে মূল্যবান বিশেষ নিবন্ধাদি প্রকাশ করে। ঈদুল আযহার লক্ষ্য হচ্ছে সকলের সাথে সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং বিনয়-নম্র আচরণ করা। মুসলমানদের জীবনে এই সুযোগ সৃষ্টি হয় বছরে দু’বার। ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা একই কাতারে দাঁড়িয়ে পায়ে পা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই রাকাত নামায আদায়ের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যায়। পরস্পরে কুশল বিনিময় করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়, জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং আন্তরিক মহানুভবতায় পরিপূর্ণ করে। মূলত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে দৈন্য, হতাশা তা দূরীকরণের জন্য ঈদুল আযহার সৃষ্টি হয়েছে। যারা অসুখী এবং দরিদ্র তাদের জীবনে সুখের প্রলেপ দেওয়া এবং দারিদ্রের কষাঘাত দূর করা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানদেরই কর্তব্য। সকলেরই সেসব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
কোরবানির ইতিহাস ততোটাই প্রাচীন যতোটা প্রাচীন মানব অথবা ধর্মের ইতিহাস। আল্লাহ রাহে কুরবানি মানবজাতির প্রতি আল্লাহপ্রদত্ত সকল শরীয়তেই কার্যকর ছিলো। সকল নবীর উম্মতকেই কুরবানী করতে হয়েছে। প্রত্যেক উম্মতের ইবাদতের এ ছিল একটা অপরিহার্য অংশ। আল্লাহতায়ালার এ বিধান মানব জাতির সৃষ্টিলগ্ন থেকেই কার্যকর হয়।
"সর্ব প্রথম কুরবানি"
মানব ইতিহাসের সর্বপ্রথম কুরবানী হযরত আদম (আঃ)এর দু’পুত্র হাবিল ও কাবিলের কোরবানী। এ ঘটনাটি বিশুদ্ধ ও শক্তিশালী সনদসহ বর্ণিত হয়েছে। ইবনে কাসীর একে ওলামায়ে মোতাকাদ্দেমীন ও ওলামায়ে মোতায়াখ্খেরীনের সর্বসম্মত উক্তি বলে আখ্যা দিয়েছেন। ঘটনাটি এই : যখন আদম ও হাওয়া (আঃ)পৃথিবীতে আগমন করেন এবং সন্তান প্রজনন ও বংশবিস্তার আরম্ভ হয়, তখন প্রতিগর্ভ থেকে একটি পুত্র ও একটি কন্যা এরূপ যমজসন্তান জন্মগ্রহণ করত। তখন একশ্রেণীর ভাইবোন ছাড়া হযরত আদমের আর কোন সন্তান ছিলনা। অথচ ভাইবোন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না। তাই মহান আল্লাহ উপস্থিত প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে আদম (আঃ) এর শরীয়তে বিশেষভাবে এ নির্দেশ জারি করেন যে, একই গর্ভ থেকে যে যমজপুত্র ও কন্যা জন্মগ্রহণ করবে, তারা পরস্পর সহোদর ভাই-বোন গণ্য হবে। সুতরাং তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হারাম হবে। কিন্তু পরবর্তী গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী পুত্রের জন্য প্রথম গর্ভ থেকে কন্যা সহোদরা বোন গণ্য হবে না। তাই তাদের পরস্পর বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ হবে। কিন্তু ঘটনাক্রমে কাবিলের সহজাত সহোদরা বোনটি ছিল খুবই সুশ্রী-সুন্দরী তার নাম ছিল ‘আকলিমা’ আর হাবিলের সহজাত বোনটি ছিল তুলনামূলক কম সুন্দরী তার নাম ছিল ‘গাজা’।
বিবাহের সময়ে হলে নিয়মানুযায়ী হাবিলের সহজাত অসুন্দরী কন্যা কাবিলের ভাগে পড়ল। এতে কাবিল অসন্তুষ্ট হয়ে হাবিলের শত্রু হয়ে গেল। সে জেদ ধরল যে, আমার সহজাত বোনকেই আমার সঙ্গে বিবাহ দিতে হবে। হযরত আদম (আঃ) তাঁর শরীয়তের আইনের পরিপ্রেক্ষিতে কাবিলের আবদার প্রত্যাখ্যান করলেন। অতঃপর তিনি হাবিল ও কাবিলের মতভেদ দূর করার উদ্দেশ্যে বললেন, তোমরা উভয়েই আল্লাহর জন্য নিজ নিজ কুরবানী পেশ কর। যার কুরবানী গৃহীত হবে, সে-ই উক্ত কন্যার পানিগ্রহণ করবে। হযরত আদম (আঃ) এর নিশ্চিত বিশ্বাস ছিল যে, যে সত্যপথে আছে, তার কুরবানীই গৃহীত হবে। তৎকালে কুরবানী গৃহীত হওয়ার একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল এই যে, আকাশ থেকে একটি অগ্নিশিখা এসে কুরবানি করে আবার অন্তর্হিত হয়ে যেত। যেমন মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ঐ কুরবানী যাকে আগুন গ্রাস করে নিবে”।(সূরা আলে ইমরান-১৮৩) আর যে কুরবানীকে অগ্নিভস্মীভূত করত না, সেটাকে প্রত্যাখ্যাত গণ্য করা হত।
কুরবানীর এ তরীকা খাতামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর যুগ পর্যন্ত সকল পূর্বেকার নবীর যুগে বলবৎ ছিল। হাবিল ভেড়া, দুম্মা ইত্যাদি পশুপালন করত। সে একটি উৎকৃষ্ট দুম্বা কুরবানী করল। কাবিল কৃষি কাজ করত। সে কিছু শস্য, গম ইত্যাদি কুরবানীর জন্যে পেশ করল। (তাফসীরে ইবনে কাসীর, সূত্র হযরত ইবনে আব্বাস রা. কর্তৃক বর্ণিত) অতঃপর নিয়মানুযায়ী আকাশ থেকে অগ্নিশিখা অবতরণ করে হাবিলের কুরবানীটি ভস্মীভূত করে দিল এবং কাবিলের কুরবানী যেমন ছিল তেমনি পড়ে রইল। এ অকৃতকার্যতায় কাবিলের দুঃখ ও ক্ষোভ বেড়ে গেল। সে আত্মসংবরণ করতে পারল না। তাই সে হাবিলকে হত্যা করার সংকল্প করল এবং এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করে ফেলল।
হাবিল ও কাবিলের কুরবানীর ঘটনা পবিত্র কুরআনে এ ভাবে বর্ণিত হয়েছে-
“আপনি তাদেরকে আদমের দু’পুত্রের ঘটনাটি ঠিকভাবে শুনিয়ে দিন। (তা হচ্ছে এই যে,) যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করলো, তখন তাদের একজনের কুরবানী গৃহীত হল আর অপর জনের কুরবানী গৃহিত হলোনা। তখন সে ভাইকে বলল- অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব। সে উত্তরে বলল আল্লাহ তো মুত্তাকীদের কুরবানীই কবুল করেন। যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে আমার দিকে হস্ত প্রসারিত কর, তবে আমি তোমাকে হত্যা করতে তোমার দিকে হস্ত প্রসারিত করব না। নিশ্চয়ই আমি বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহকে ভয় করি। আমি চাই যে, আমার পাপ ও তোমার পাপ তুমি নিজের মাথায় চাপিয়ে নাও। অত:পর তুমি দোযখীদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে যাও। এটাই অত্যাচারীদের শাস্তি। অতঃপর তার অন্তর তাকে ভ্রাতৃ হত্যায় উদ্বুদ্ধ করল। অনন্তর সে তাকে হত্যা করল। ফলে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে গেল। আল্লাহ এক কাক প্রেরণ করলেন। সে মাটি খনন করছিল যাতে তাকে শিক্ষা দেয় যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সে কিভাবে সমাহিত করবে। সে বললো, আফসোস! আমি কি এ কাকের সমতুল্যও হতে পারলাম না যে, আপন ভ্রাতার মৃতদেহ সমাহিত করি! অত:পর সে অনুতাপ করতে লাগল”।(সূরা আল মায়িদাহ, ২৭-৩১ আয়াত)।
উল্লেখ্য যে, হযরত আদম (আঃ) এর পর সকল উম্মতের মধ্যেই অবিচ্ছন্নভাবে কুরবানীর ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।
এই তথ্য পাওয়া যায় যে, ১২০৪ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গদেশে মুসলিম অধিকারে এলে এদেশে নামাজ, রোজা ও ঈদ অনুষ্ঠানের প্রচলন হয়েছে তার বেশ কিছু আগে থেকে। কারণ বঙ্গদেশ যুদ্ধবিগ্রহের মাধ্যমে মুসলিম অধিকারে আসার বহু আগ থেকেই মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে মুসলিম সুফি, দরবেশ, সাধকরা ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারত হয়ে পূর্ব বাংলায় আস্তানা গড়েন। অন্যদিকে আরবীয় ও অন্যান্য মুসলিম দেশ থেকে বণিকরা চট্টগ্রামের বন্দর হয়ে বাংলার সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক তৈরি করেন এবং ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য প্রচার করেন। সেই থেকে পূর্ব বাংলার ওপর একটি মুসলিম সংস্কৃতি তথা ধর্মীয় প্রভাব পড়ে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আর বাঙালির ‘ঈদ’ উৎসবের সূচনাও ঠিক এভাবেই হয়েছে বলে ধারণা করা হয় এবং সময়ের পরিক্রমায় অনেক মুসলিম অনুষ্ঠানের মধ্য থেকে ‘ঈদ’ পরিণত হয় এক বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসবে। ঈদুল আযহা বা কুরবানি ঈদে বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা সাধারণত উট, দুম্বা, ভেড়া, বকরি বা ছাগল, মহিষ, গরু ইত্যাদি কুরবানি দিয়ে থাকনে। তবে আদিকালে আমাদের দেশে কুরবানির জন্য ছাগল বেশি জনপ্রিয় ছিল, কেননা তখন গরু কুরবানি করা খুব একটা সহজ ব্যাপার ছিলনা। এর কারণ হিসেবে একটি তথ্যে দেখা যায়, ১০০-১৫০ বছর আগে বাংলাদশেে গরু কুরবানি দেয়া ছিল প্রায় অসম্ভব। কুরবানি যদি কেউ দিতে চাইত তাহলে খাসি বা ছাগলই দিত। তৎকালীন বিখ্যাত সাহিত্যিক-রাজনীতিক আবুল মনসুর আহমদ তার আত্মজীবনীতে সে সময় ঈদুল আযহা সর্ম্পকে র্বণনা দিয়েছেনে, ‘বকরা ঈদে কেউ গরু কুরবানি করিত না। সে আমলে পরাক্রমশালী জমিদারদের তরফ থেকে গরু কুরবানি কড়াকড়ভিাবে সর্বত্রই নিষিদ্ধ ছিল। শুধু বকরি কুরবানি করা চলত। মোগল যুগে বাংলাদেশে ঈদুল আযহা কিভাবে উদযাপন করা হতো তা জানা যায়নি। এমনকি উনিশ শতকের শুরুতে ঈদুল আযহার তেমন কোনো বিবরণ পাওয়া যায়নি। আরকেটি গুরুত্বর্পূণ সত্য হলো, ১০০-১৫০ বছর আগে ঈদ মুসলমানদরে প্রধান উৎসব উদযাপতি না হওয়ার মূল কারণ ছিলো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পাওয়া। এছাড়াও বত্তিহীদরে দরদ্র্যিতার কারণে মানুষরে স্বতঃর্স্ফূত আশা-আকাঙ্ক্ষার স্ফুরণ না ঘটা। এছাড়াও সকোলে বশিুদ্ধ ইসলাম সর্ম্পকে অজ্ঞ ছলি সাধারণ মানুষ। যদওি এ অবস্থার পরর্বিতন এনেছিল ফরায়েজী আন্দোলন (১৮১৫ খ্রি.)। উনশি শতকরে গোড়ায় যখন রাজনতৈকিভাবে মুসলিম স্বাতন্ত্রবাদী আন্দোলন শুরু হয়েছিল তখন থকেইে গুরুত্ব পেয়েছে ঈদ। তবে খানকিটা জাঁকজমকরে সঙ্গে দুটি ঈদ উদযাপনের মধ্যে আছে বিত্তের সর্ম্পক। স্বাভাবকিভাবেই শহর, মফস্বলে ও গ্রামাঞ্চলে যারা ধনী, বিত্তবান তাদের ঈদ আর সাধারণ মানুষের ঈদের মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। ইসলাম প্রচারের শুরুতে র্অথাৎ আদিতে বাঙালি মুসলমানরা কিভাবে ঈদ উদযাপন করতেন তা জানা আজ অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। তবে এ কথা নিঃসংশয়ে বলা যায়, অতীতে মুসলমানদরে ঈদুল ফিতর যেমন বাংলাদেশে বড় কোনো র্ধমীয় উৎসব হিসবে উদযাপতি হয়নি, তেমনি উদযাপতি হয়নি ঈদুল আযহাও। আজকে আমরা স্বতঃর্স্ফূতভাবে আনন্দ ও ধুমধামের সঙ্গে ঈদুল আযহা উদযাপন করি তা মাত্র ৬০-৭০ বছররে ঐতহ্যি। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানেরাও যথাযথ ধর্মীয় ভাবাম্ভীর্য বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনায় ঈদুল আযহা পালন করে থাকেন। এ ঈদে স্রষ্টার উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দেওয়া নিয়েও থাকে এক ধরনের বিশেষ ব্যস্ততা। এছাড়াও এ সময় ছোট থেকে বড় সবাই নতুন পোশাক পরে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশিদের বাড়িতে সাক্ষাৎ করতে যায় এবং কুশল বিনিময় করে। ঈদের সময় প্রত্যেক বাড়িতেই সাধারণ খাবারের পাশাপাশি উন্নতমানের খাবার প্রস্তুত হয়। শুধু মুসলমান ই নয় অন্য ধর্মাবলম্বীরা বন্ধু-বান্ধবদেরও নিমন্ত্রিত হয়ে এ উৎসবে যোগ দিতে দেখা যায়। দেশের সকল স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সহ সকল সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদ উপলক্ষে কয়েকদিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রবাসীদের অধিকাংশই নিজ নিজ গ্রামের বাড়ি গিয়ে আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ঈদ উদযাপন করে। বিভিন্ন মসজিদ-ময়দানে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় রেডিও-টেলিভিশনগুলো সপ্তাহব্যাপী বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে এবং পত্র-পত্রিকাসমূহ ঈদুল আযহার তাৎপর্য তুলে ধরে মূল্যবান বিশেষ নিবন্ধাদি প্রকাশ করে। ঈদুল আযহার লক্ষ্য হচ্ছে সকলের সাথে সদ্ভাব, আন্তরিকতা এবং বিনয়-নম্র আচরণ করা। মুসলমানদের জীবনে এই সুযোগ সৃষ্টি হয় বছরে মাত্র দু’বার। ধনী-দরিদ্র, রাজা-প্রজা একই কাতারে দাঁড়িয়ে পায়ে পা এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দুই রাকাত নামায আদায়ের মাধ্যমে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে যায়। পরস্পরে কুশল বিনিময় করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়, জীবনকে স্বাচ্ছন্দ্যময় এবং আন্তরিক মহানুভবতায় পরিপূর্ণ করে। মূলত আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যে দৈন্য, হতাশা তা দূরীকরণের জন্য ঈদুল আযহার সৃষ্টি হয়েছে। যারা অসুখী এবং দরিদ্র তাদের জীবনে সুখের প্রলেপ দেওয়া এবং দারিদ্রের কষাঘাত দূর করা প্রতিটি সামর্থ্যবান মুসলমানদেরই কর্তব্য। সকলেরই সেসব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত।
লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।