জিয়াউর
রহমান ১৯৭৯ সালের ৯
জুলাই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করেন।
সেদিন সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মধ্যে দিয়ে তাঁর আমলে
বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার বাধাগ্রস্ত করা হয়। ইনডেমনিটি
অধ্যাদেশকে আইনে রূপান্তর করে
জিয়া প্রমাণ করেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের
রক্ষাকারী এবং এই হত্যার
ষড়যন্ত্রের মূল কুশিলবদেরই একজন।
জিয়াউর
রহমান Indemnity
Ordinance- কে বৈধতা দিয়ে কলঙ্কিত করেন
সংবিধানকে, কলুষিত করেন রাজনীতিকে। হাস্যকর
সংসদের দ্বারা সংশোধিত আইনে এ আইনটি
বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয় যা
পঞ্চম তফসিলের ১৮ নং অনুচ্ছেদে
সংযুক্ত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারবর্গকে
যারা হত্যা করেছিল বা তার সঙ্গে
জড়িতদের আইনি ব্যবস্থা থেকে
অনাক্রম্যতা বা শাস্তি এড়াবার
ব্যবস্থা প্রদানের জন্য “ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ” আইন প্রণয়ন করা
হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ২৬
সেপ্টেম্বর তারিখে খুনি খন্দকার মোশতাক
আহমেদ এ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি)
অধ্যাদেশ জারি করেন।
এটি
১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০ নামে
অভিহিত ছিল। পরে ১৯৭৯
সালে জিয়া কর্তৃক এটি
অনুমোদিত হয়। যার ফলে
এটি একটি আনুষ্ঠানিক আইন
হিসেবে অনুমোদন পায়। জিয়াউর রহমান সংশোধনীর নামে সংবিধানকে পাকিস্তানি
চেতনায় বদলে দিয়েছিলেন। তাঁর
করা পঞ্চম সংশোধনীর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-সংবিধানের প্রারম্ভে
‘বিস্মিল্লাহির-রহ্মানির রহিম’
সংযোজন। বাঙালি জাতীয়তাবাদ বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশী
জাতীয়তাবাদ’-এর সূচনা করা।
চার মূলনীতির ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রের পরিবর্তন
আনা। ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ‘মহান আল্লাহতালার প্রতি
পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ সংযোজন
করা। সমাজতন্ত্রের পরিবর্তে ‘সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার
অর্থে ‘সমাজতন্ত্র’ প্রতিস্থাপন করা হয়। এ
সংশোধনী ছিল সংবিধানের মৌলিক
কাঠামোগত পরিবর্তন ও পাকিস্তানিকরণ। যা
২০০৫ সালের ২৯ আগস্ট হাইকোর্টের
এক রায়ে বাতিল হয়ে যায়।
আসলে
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির
পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে
সপরিবারে হত্যার পর খুনিদের রক্ষার
জন্য বাংলাদেশের সংবিধান জুড়ে এক অদ্ভুত
কেলেঙ্কারির ইতিহাস রচিত হয়। প্রণীত
হয় ইনডেমনিটি বিল। ইনডেমনিটি হলো
কোনো বিচারকার্যকে বাঁধা প্রধান সংক্রান্ত অধ্যাদেশ বা আইন। কোনো
অভিযান বা অভ্যুত্থানের ক্ষয়ক্ষতি
আদালতের বহির্ভূত রাখার জন্য আইনসভা যে
বিল পাস করে তাকেই
ইনডেমনিটি বিল বলে। এই
শব্দের অর্থ শাস্তি এড়াইবার
ব্যবস্থা অর্থাৎ ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ হলো সেই অধ্যাদেশ
যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের শাস্তি এড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। জিয়ার
দ্বারা সংবিধানে কলঙ্ক লেপনের এই দিনটি কেন
আমরা স্মরণ করছি? কারণ এটি প্রণয়ন
করেছিল খুনিদের প্রধান খলনায়ক খন্দকার মোশতাক আহমেদ আর বৈধতা দিয়েছিলেন
আরেক খুনি জিয়া। অর্থাৎ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বপরিবারে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
হত্যা হলে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের
আইনি ব্যবস্থা থেকে শাস্তি এড়ানোর
জন্য বাংলাদেশে এ আইন করা
হয়েছিলো।
তখন
বাংলাদেশে সংসদ অধিবেশন না
থাকায় আওয়ামী লীগের একজন প্রতারক রাজনৈতিক
সহযোগী হয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে
বিশ্বাসঘাতক করে মোশতাক আহমেদ
অধ্যাদেশ আকারে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫
সালে এ আইন প্রণয়ন
করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পরে খন্দকার মোশতাকই
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির পদ গ্রহণ করেছিলেন।
আগেই বলা হয়েছে, আইনটি
১৯৭৫ সালের ৫০ নং অধ্যাদেশ
হিসেবে অভিহিত ছিলো। ১৯৭৯ সালের ৯
জুলাই বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর
সংশোধিত আইনে বাংলাদেশ সংবিধানে
অন্তর্ভুক্ত করা হলে বঙ্গবন্ধু
হত্যাকাণ্ডের বিচার একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ১৯৯৬ সালের ১২
নভেম্বর সপ্তম জাতীয় সংসদে আইনটি বাতিল হয়। যার ফলে
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের পথ আবার খুলে
যায়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি
মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট সংবিধানের ৫ম সংশোধনীকে অবৈধ
ঘোষণা করে।
ইনডেমনিটি
অধ্যাদেশ যেদিন স্বাক্ষরিত হয় সেদিন ছিলো
শুক্রবার। ‘দি বাংলাদেশ গেজেট,
পাবলিশড বাই অথরিটি’ লেখা
অধ্যাদেশটিতে খন্দকার মোশতাক স্বাক্ষরিত। মোশতাকের স্বাক্ষরের পর অধ্যাদেশে তৎকালীন
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক
মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এইচ
রহমানের স্বাক্ষর আছে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী
ও সংসদ নেতা শাহ
আজিজুর রহমান পঞ্চম সংশোধনী বিলটি পেশ করেন। এই
ব্যক্তি রাজাকারদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। অধ্যাদেশটিতে দুটি অংশ আছে।
প্রথম অংশে বলা হয়েছে,
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে
বলবৎ আইনের পরিপন্থি যা কিছুই ঘটুক
না কেন, এ ব্যাপারে
সুপ্রিমকোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা,
অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি
প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয়
অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি
উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন
করবে তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো অর্থাৎ তাদের
বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা,
অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি
প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। সংবিধানের
গণতন্ত্র বিষয়টা খর্ব হবে বলে
অনেকে বিরোধিতা করলেও রাষ্ট্রপতি একক ক্ষমতা বলে
সংশোধনী বিল পাস করান।
১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর মেজর জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭৬ সালের ২৯ এপ্রিল জিয়া রাষ্ট্রপতি সায়েমের কাছ থেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়ে নেন। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করায় এবং নিজে রাষ্ট্রপতি হন।প্রহসনের হ্যাঁ-না ভোটের আয়োজকও তিনি। তিনি তখনো একজন সামরিক শাসক। সেনাবাহিনীতে দৃশ্যত তাঁকে চ্যালেঞ্জ করার মতো কেউ ছিল না। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক বিরোধীরা বিভক্ত, বিচ্ছিন্ন এবং দিশেহারা। তারপরেও জিয়াউর রহমানকে প্রমাণ করতে হবে, তাঁর পেছনে জনসমর্থন আছে; আর বন্দুকের জোরতো আছেই। তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি না, তা যাচাইয়ের জন্য ১৯৭৭ সালে হ্যাঁ-না ভোট নেয়া হলো।
নির্বাচন কমিশন জানাল, দেশের ৮৮.৫০ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে ৯৮.৯ শতাংশ হ্যাঁ ভোট দিয়েছে। ভোটার উপস্থিতির এ হার মোটেও বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। গণভাটের মাধ্যমে রাজনৈতিক বৈধতার একটি ছাড়পত্র তৈরি করেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সব অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে আইনি বৈধতা পায়। সংসদে উত্থাপিত আইনটির নাম ছিলো সংবিধান (সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯। এটি সংবিধানের চতুর্থ তফসিলের ১৮ অনুচ্ছেদে সংযুক্ত হয়েছিলো, যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বিলুপ্ত হয়েছে।
পঞ্চম সংশোধনীকে বৈধতা না দিলে জিয়াউর রহমানের আমলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যেত কিন্তু জিয়াউর রহমান তা করেননি। এই সামরিক জান্তা বরং খুনিদের সুবিধা দিয়ে চাকরি দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার, এইচ এম এরশাদ এবং ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলেও ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল বা রহিত করা হয়নি। ফলে দায়মুক্তি পেয়ে খুনিরা হত্যার কথা প্রকাশ্যে বলে বেড়াত।
এরশাদ ক্ষমতায় আসীন হলে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বরের ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল না করে আবার নিজের সুবিধার জন্য দ্বিতীয়বার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে যা ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে পাস হয় এবং সংবিধানের সপ্তম সংশোধনীতে এটি অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ৯ নভেম্বর পর্যন্ত এরশাদ সরকারের জারিকৃত সকল প্রকার সামরিক আইন, অধ্যাদেশ, বিধি নির্দেশ ইত্যাদি বৈধতাদানের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়। পরে চারদলীয় জোট সরকারের সময় ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৩ ‘যৌথ অভিযান দায়মুক্তি বিল ২০০৩’ নামে সবশেষে ইনডেমনিটি আইন পাস হয়।
বাংলাদেশে মোট তিনবার ইনডেমনিটি আইন পাস করা হয়। ২০১০ সালে এসব অধ্যাদেশকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এ ইনডেমিনিটি ছিল এমন একটি আইন যা ইতিহাসে লজ্জাজনক। বঙ্গবন্ধু ছাড়াও আব্রাহাম লিংকন, মহাত্মা গান্ধী, রাজিব গান্ধী, ইন্দিরা গান্ধী, বেনজির ভুট্টো, বন্দর নায়েককে গুলি করে হত্যা করা হলেও সেসব দেশে ইনডেমনিটি আইন জারি করা হয়নি কিন্তু বাংলাদেশে এমনটি করা হয়েছিল। পৃথিবীর কোনো সংবিধানে লেখা নেই যে, খুনিদের বিচার করা যাবে না। বাংলাদেশেই প্রথম ঘটেছিলো এমনকি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর ২০ বছর পার হলেও কোন রাষ্ট্রপতি বা সরকার প্রধান সেটি বাতিল না করে উল্টো নিজেদের সুবিধা নেওয়ার জন্য ইনডেমনিটি বহাল রাখে। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিলের জন্য ‘দি ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬’ নামে একটি বিল উত্থাপন করেন।
১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর মাসে মানবতা ও সভ্যতা বিরোধী কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়। পরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে শুরু হয়। উল্লেখ্য, জিয়া সরকার খুনিদের বিচার না করে সরকারি উপর মহলে এবং বিদেশের দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করে। তারা পালিয়ে যায়; এখনও অনেকে পালিয়ে আছে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত চারদলীয় জোট সরকার যারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারির সমর্থক তারা ক্ষমতায় এলে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে, বিচারকরা বিব্রত হতে থাকেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার আবার এ বিচারকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে। ২০০৯ সালে লিভ-টু-আপিল-এর মাধ্যমে এ বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপিল শেষে বারো জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন মহামান্য আদালত।
কলঙ্কিত এদিনে জিয়াসহ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ঘৃণা জানাচ্ছি। ওই ঘাতকদের তালিকা হলো- লে. কর্নেল শরিফুল হক (ডালিম), লে. কর্নেল আজিজ পাশা, মেজর এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ, মেজর বজলুল হুদা, মেজর শাহরিয়ার রশিদ, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর শরিফুল হোসেন, কর্নেল কিসমত হাশেম, লে. খায়রুজ্জামান, লে. নাজমুল হোসেন, লে. আবদুল মাজেদ। বিচারের আগেই মৃত্যু ঘটে খন্দকার মোশতাক আহমদ, মাহবুব আলম চাষী, ক্যাপ্টেন মোস্তফা, রিসালদার সৈয়দ সারওয়ার হোসেন, লে. ক. মোহাম্মদ আজিজ পাশা (বিচার চলাকালে পলাতক অবস্থায় তার মৃত্যু হয়)। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর ৫ ঘাতকের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। এরা হলো মহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান এবং এ কে এম মহিউদ্দিন। ২০২০ সালে কলকাতা থেকে ঢাকায় এলে ধরা পড়ে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলেছে ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদের। অবশ্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ জন আসামি এখনও পলাতক৷ এরা হলো- খোন্দকার আব্দুর রশিদ, নূর চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, রিসালদার মুসলেহ উদ্দিন, রাশেদ চৌধুরি এবং আবুল হাশেম মৃধা৷ তাদের গ্রেফতার করার জন্য ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে৷ বঙ্গবন্ধুর এই পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেওয়ার দিনটি আরো বেশি সার্থকভাবে পালন করতে চাই আমরা।
ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ সম্পর্কে ২০১৯ সালের আগস্ট মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ১৯৯৬ সালে যখন ইনডেমিনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করি তখন সমালোচনা করা হয়েছিল, অনেকেই বলেছিল আমি প্রতিশোধ নিচ্ছি। বিএনপি সেদিন খুনীদের রক্ষা করতে হরতাল ডেকেছিল। বিচারপতির পরিবারের ওপর হামলা হয়েছিল। একজন সাধারণ মানুষের হত্যার বিচার যেভাবে হয়, জাতির পিতার হত্যার বিচারও সেভাবেই হয়েছে।’ কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার সম্পন্ন হলেও কয়েকজন খুনি এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ১৯৯৬- এ আওয়ামী লীগ শাসনামলে বঙ্গবন্ধুর ২০ খুনিকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন বঙ্গবন্ধুর আবাসিক সহকারী মুহিতুল ইসলাম৷ এরপর মামলা চলে প্রায় ১৩ বছর৷ বিচারিক আদালত ১৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট ১২ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে৷ দীর্ঘ ২১ বছর বিচার বন্ধ থাকার মূল কারণ ছিল কুখ্যাত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ। যা বাতিল হওয়ার ফলে খুনিদের বিচারকার্য সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে এবং এজন্যই সে দিনটি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার উজ্জ্বলতম দিন, গৌরবময় দিন ছিল। অন্যদিকে আজকের দিনটি জিয়ার কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কের দিন।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।