ইনসাইড থট

রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত ড. ইউনূসের নোবেল প্রাইজ সংবিধানের লঙ্ঘন!

প্রকাশ: ১০:৪০ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৩


Thumbnail রাষ্ট্রপতির অনুমতি ব্যতীত ড. ইউনূসের নোবেল প্রাইজ সংবিধানের লঙ্ঘন!

বিদেশি খেতাব প্রভৃতি গ্রহণ, নিষিদ্ধকরণ সম্পর্কিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতির পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোনো নাগরিক কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নিকট হইতে কোনো উপাধি, সম্মান, পুরস্কার বা ভূষণ গ্রহণ করিবেন না।’

সংবিধানে এ শব্দাবলীর স্পষ্টত, নির্দেশনা হইতেছে, বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমতি লইয়াই যে কোনো নাগরিককে বিদেশি রাষ্ট্রের উপাধি অথবা পুরস্কার গ্রহণ করিতে হইবে। বাংলাদেশের এ যাবৎকালের ইতিহাসে এ বিষয়ে কী সন্নিবেশিত হইয়াছে, কিংবা কী সংযোজন ঘটিয়াছে, তাহা আমার নখদর্পণে নেই। অবশ্য, আমার ক্ষুদ্রজ্ঞান ভাণ্ডারে সঞ্চিত তথ্য-উপাত্ত বলিতেছে, বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব বলিয়া খ্যাতিমান নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ও তার গ্রামীণ ব্যাংককে ২০০৬ সালের ১ অক্টোবর নরওয়ের নোবেল শান্তি কমিটি যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনিত করিলেও তাহা বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজউদ্দিন আহমেদকে অবগত করা হয়নি। অন্য লোক-সাধারণের মতনই মহামান্য, গণমাধ্যম হইতেই নোবেলজয়ের খবরখানা অবগত হইয়াছেন। পাঠকসমাজের মনে প্রশ্নের উদ্রেক করিতে পারে যে, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন প্রয়াত হইয়াছেন, সুতরাং আমার উত্থাপিত অভিযোগের বিষয়বস্থ প্রমাণ অযোগ্য। এই ছলাকলায় পাঠকসমাজকে করজোড় প্রার্থনা করিব, আপনারা আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গী বঙ্গভবনের দিকেই ফিরাইতে পারেন। কেননা, রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ প্রার্থী দেশি-বিদেশি সকল ব্যক্তিবিশেষের উপস্থিতিই বঙ্গভবনের নথিপত্রে অন্তর্ভুক্ত হইয়া যায়, এবং ইহা বঙ্গভবনের চিরাচরিত একটি প্রবেশমান রেওয়াজ। ১৩ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি টাকায় ১৯ কোটি ৭২ লাখ) লাভকারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস, হয়তোবা তাহার নোবেল জয়কে ‘বিশ্বজয়’ মনে করিয়া বাংলাদেশের সংবিধানে আরোপিত নাগরিক দায়িত্ব কর্তব্যের বিধিনিষেধকে হয় ভূলিয়া গিয়াছিলেন, নয় ‘গুরুত্বহীন বস্থ’ বলিয়া একে মস্তিষ্কেই প্রবেশাধিকার দেন নাই। এটাই তাহার বেলায় স্বাভাবিক হইতে পারে, কেননা নরওয়ের রাজধানী অসলোর সিটি হলে বিশ্ববরেণ্য বিদগ্ধজন এবং বহু রাষ্ট্রপ্রধানের সুরভিত উপস্থিতির রাজকীয় বর্ণাঢ্যের অভিজাত মিলনমেলা বলিয়া কথা। আলফ্রেড নোবেলের মহাপ্রয়াণ দিবসে অর্থাৎ ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের ১০ ডিসেম্বর ড. ইউনূস নোবেল পুরস্কারটি দুই হস্তে কব্জা করিয়া অভিষিক্ত হইবার মুহূর্তে স্বদেশের মাটি ও মানুষের কথা ভূলিয়া যাইতেই পারেন। সাধারণের অজানা থাকিতে পারে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট সুশীলরা অবশ্যই জানিয়া থাকিবেন, নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হইবার পূর্বে মনোনীত হইতে হয়। এজন্য অনেকে মনোনীত হইয়াও তাহা অধিকার করিতে পারেন নাই। এরকম ঘটনার উদহারণ দেওয়ার পূর্বে ড. ইউনূস প্রসঙ্গেই বলিয়া নেই। তিনি নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হইয়াছিলেন, ৩ ডিসেম্বর আর পুরস্কারটি তাহার হস্তে তুলিয়া দেওয়া হয়, ১০ ডিসেম্বর, সেই হিসাবে পুরো সপ্তাহখানেক পরে। প্রসঙ্গক্রমে বলিয়া ফেলি, অহিংসবাদের প্রবক্তা মহাত্মা গান্ধীও নোবেল শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হইয়াছিলেন কিন্তু পুরস্কারের ভূষণ গায়ে জড়াইয়া বিশ্ববাসীর অভিনন্দন কুড়াইবার পূর্বেই মুসলিম বিদ্বেষী চরমপন্থি নথুরাম গডসে তাহার প্রাণ কাড়িয়া লয়। নোবেল উইলপত্র-এ ‘মরণোত্তর’ পুরস্কারদানের বিধি আরোপিত না হইবার কারণে মহাত্মা গান্ধীকে মনোনীত হওয়ার আনন্দ লইয়াই ঈশ্বরের কৃপায় অগ্নিকুণ্ডে জ্বলিয়া অমরত্ব লাভ করিতে হইয়াছে। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিতে কাউকেই নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় নাই, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ওরফে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী রবীন্দ্রনাথের উপাধিসিক্ত ‘মহাত্মা’র প্রতি শ্রদ্ধাবনত: এক বাণী প্রচার করিয়া।

রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে ড. ইউনূসের সম্মুখে সময়ের কোনোপ্রকার অভাব ছিলো না। তিনি চাহিলেই নোবেল পুরস্কারে মনোনীত বা ভূষিত হইবার বিষয়টি স্বদেশের রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করিতে পারিতেন। পুরস্কারটি বিদেশের হইলেও নাগরিক হিসাবে স্বদেশকে উপেক্ষা করিবার কী কারণ থাকিতে পারে তাহা আমার বোধগম্য নহে। বরং এমন একটি বিশ্বজয়ের পুরস্কার, স্বদেশের মানুষকেই তো উৎসর্গ করিবার কথা। আর সেটাকেই তো মনে করা হইয়া থাকে, স্বদেশপ্রেম- দেশাত্মবোধ। যে দেশাত্মবোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটাইয়াছেন রবীন্দ্রনাথ তাহার ‘স্বদেশ’ কবিতাখানায়। ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ সে তো ‘স্বদেশ’ কবিতাখানার অন্তরেরই আদূরে পঙ্ক্তিমালা। যাহা লিখিয়াছেন, ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে, লর্ড কার্জনের প্রস্তাবে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ‘বঙ্গভঙ্গ’ আইন পাস করিয়া বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ ঘটাইলে। গান্ধীর স্বদেশী আন্দোলনের মহীরুহ হইয়া উঠিয়াছিলেন, রবীন্দ্রনাথ। ‘আমি কান পেতে শুনি বাংলাদেশের হৃদয় হতে যখন আপনি... রচনাকালও স্বদেশী আন্দোলনকালীন। বঙ্গদেশের শাসক শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ‘বঙ্গ’-কে ‘বাংলা’ নামে রূপান্তর করিয়া প্রকারান্তরে বাংলা ভাষাকেও সুষমামণ্ডিত করিয়াছিলেন। বিবিসি বাংলা জরিপে ইলিয়াস শাহের নামখানা উচ্চারিত না হইলেও তিনি সেইকালে ‘শাহ বাঙালিয়ান’ উপাধিতেই ভূষিত হইয়াছিলেন। ইলিয়াস শাহের সেই বাংলা প্রদেশকে যিনি প্রথম ‘বাংলাদেশ’ নামে ডাকতে বাঙালির হৃদয়ে সঙ্গীতের সুর তুলিয়া দিয়াছেন, তিনি রবীন্দ্রনাথ। ১৯০৫ সালের ২৩ অক্টোবর ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি- তুমি এই অপরূপে বাহির হলে জননী।’ সঙ্গীতখানা রচনার আট বৎসরের মাথায় তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাইয়া বাঙালি জাতিকে বিশ্বের দরবারে পরিচয় করাইয়া দেন। আর তিনিও হইয়া উঠিলেন বিশ্বকবি। বিশ্বকবির সেই হৃদয়ের সুরকে আরো শ্রুতিমধুর করিয়া তুলিয়াছেন, কবি নজরুল ইসলাম ‘বাংলাদেশ’ নামক প্রবন্ধখানা রচনা করিয়া।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রবীন্দ্র-নজরুলকে একীভূত করিয়া রাখিয়াছেন, স্বদেশের নাম বাংলাদেশ নামকরণ করিয়া, স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মা করিয়া। নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্বই বটে, কিন্তু আজঅবধি তাহারে দেখিতে পাইলাম না, কোনো বীরোচিতবেশে।

জাতীয় কবির রণসঙ্গীতের ধ্বনিতে- তালে তালে হাঁটিবার কোন সামরিক কুচকাওয়াজের অনুষ্ঠানে আর লালসবুজের জাতীয় পতাকা হাতে, জাতীয় সঙ্গীতের কণ্ঠধ্বনিতে! দেখিলাম না, ভাষা-শহীদদের স্মরণে শহীদ মিনারের প্রভাতফেরিতে, কণ্ঠে তুলিতে আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরীর ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভূলিতে পারি’- এই অমর ভাষাসঙ্গীতখানা!

রবীন্দ্রনাথ ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’ এ দুইখানা সঙ্গীত রচনার ১৫ বৎসর পর শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম। নজরুলের রণসঙ্গীতখানা ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে রচিত ও সুরারোপিত সন্ধ্যা কাব্যগ্রস্থের অন্তর্গত একটি সঙ্গীত।

আর আমার সোনার বাংলা ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউনহলে পরিবেশিত হয় বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে। বিবিসি জরিপে সেরা বিশটি বাংলা গানের মধ্যে এটা প্রথম স্থান দখল করে। ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিতে স্থান দিয়াছেন শহীদ বুদ্ধিজীবী জহির রায়হান। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে অংশগ্রহণকারী ২০৫টি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের বিচারে দৈনিক গার্ডিয়ানের জরিপে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়া লয়। উরুগুয়ের জাতীয় সঙ্গীতখানা হইয়াছিল প্রথম। রবীন্দ্র-নজরুলের সেই ‘বাংলাদেশ’কে যিনি রক্তের আক্ষরে স্বাধীনতার মানচিত্রে আঁকিয়া দিয়াছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর প্রতি নোবেল জয়ের পরিপ্রেক্ষিতে কিংবা কোন দিবসে ড. ইউনূস, কখনো- কোনোদিন ন্যূনতম শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিয়াছেন, এমন দৃশ্যের অবতারণ ঘটিয়াছে বলিয়া আমার জানা নাই। জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা জানাইতে কিংবা তাহার হত্যাকাণ্ডে শোকার্ত হইতে যে ব্যক্তির হৃদয় সায় দেয় নাই, সেই ব্যক্তি নোবেল প্রাইজ পাইতে পারেন, ইহা বৈদেশিক বিষয়, কিন্তু তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পদক লাভের অধিকারী হইতে পারেন না। কিন্তু ইহাও সম্ভব হইয়াছে।

সর্বদলীয় সংগ্রামে অগ্নিগর্ভ ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দ। ওই বৎসর ড. ইউনূস সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের বন্দনা করিয়া ‘স্বাধীনতা পদক’ হাতাইয়া লইলেন। যে বৎসর বিদ্রোহী যুবক নূর হোসেন সদম্ভে বুকে-পিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তিপাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’ লিখিয়া পুলিশের গুলিকে আলিঙ্গন করিলেন। এরশাদের কাছ থেকে গ্রামীণ ব্যাংক করাইয়া নেওয়া ড. ইউনূস ১৯৭৮ সালে আরেক সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছ হইতে ‘রাষ্ট্রপতি পদক’ অধিকার করিয়া লন।

ইউনূস সেন্টার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭৮ সাল হইতে অদ্যাবধি ড. ইউনূস প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করিয়াছেন। সর্বশেষ পাইয়াছেন জাতিসংঘ ফাউন্ডেশনের ‘চ্যাম্পিয়ন অব গ্লোবাল চেঞ্জ’ পুরস্কার। গত ৯ই ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘উই দ্য পিপলস’ অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে এই সম্মাননা প্রদান করা হইয়াছে। পূর্বেই বলিয়াছি, নোবেল বিজয়ী দুই হস্তে কব্জা করিবার পরও বাংলাদেশের মহামান্যের সান্নিধ্য লইতে বঙ্গভবনে ছুটিয়া যান নাই। হয়তোবা অসীম ভাবমূর্তিতে উচ্ছ্বসিত হইয়া মনস্তাত্ত্বিকভাবে এমন আকাশসম অবস্থানে অবতরণ করিয়া ফেলিয়াছেন যে, তাহার কাম্য হইয়া উঠিয়াছিলো- তিনি কেনো মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে ছুটিয়া যাইবেন? বরং স্বয়ং রাষ্ট্রপতিই তো তাহার স্বদেশে ফিরিবার খবর পাইয়া বিমানবন্দরে পৌঁছাইয়া যাইবেন এবং রাষ্ট্র তাহার সম্মানে বিছাইয়া রাখিবে বিমানবন্দর হইতে বঙ্গভবন পর্যন্ত লালগালিচা। যাহার উপর পা রাখিতেই বর্ষিত হইতে থাকিবে ফুলবৃষ্টি। বঙ্গভবনের গালিচায় কেবল নহে, গোটা রাজধানীর পুষ্পকাননে ফোটা সকল রংবেরঙের প্রজাতির ফুল তাহাকে শুভেচ্ছায় সুসিক্ত করিবে। কিন্তু বাস্তবে তাহা হয় নাই। হয়তো এই অপ্রাপ্তি হইতেই তাহার মাঝে রাজনীতিতে প্রবেশের ইচ্ছা অঙ্কুরিত হইতে দেখিয়াছি ওয়ান-ইলেভেনের সময় ইয়াজউদ্দিন-ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের মাথার উপরে ভর করিয়া।

নোবেল পুরস্কার পৃথিবীর সবচেয়ে গৌরবসূচক ও সম্মানজনক পুরস্কার। ১৯০১ খ্রিষ্টাব্দ হইতে দেওয়া অর্থাৎ প্রায় ৯৫ বছরের মধ্যে এ পর্যন্ত তিনজন বাঙালিকে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করিয়াছে সুইডিশ একাডেমি। এর সূচনা হইয়াছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যের মাধ্যমে ১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পাইয়াছেন অমর্ত্য সেন এবং ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করিয়াছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

তন্মধ্যে ড. ইউনূস একটু ব্যতিক্রম। নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ক্ষেত্রে শুধু নহে, ড. ইউনূসের মার্কিন ক্ষমতার মূলে যে বিল ক্লিনটন ও হিলারি, সেই তাদের লইয়াই একটা কথা বলি। আশা করি সকলেরই মনে রহিয়াছে, শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের শাসনামলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন বাংলাদেশ সফরে আসিয়াছিলেন। তিনি নিশ্চয়ই জানিতেন যে, ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রশ্নে পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভূমিকার কথা। তাহার এটাও অজানা থাকিবার কথা নেহে যে, বাঙালি নিধনকল্পে মার্কিন সপ্তম নৌবহর আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়া বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত পৌঁছাইয়াছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের অষ্টম নৌবহরের হুমকিতে পশ্চাদপসারণ ঘটিয়াছিল। (পরবর্তীতে সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকেই মার্কিন আদালত আড়ি পাতা আইনে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করিয়াছিল) যাহাই ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ঘটুক না কেনো, ১৯৯৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন যখন বাংলাদেশ সফরে আসিলেন, তখন তাহাকেও ছুটিয়া যাইতে হইয়াছিলো সাভার স্মৃতিসৌধে। স্বাধীনতার বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করিতে। কিন্তু নোবেল বিজয়ের পর ড. ইউনূস ছুটিয়া গেলেন না স্মৃতিসৌধে- শহীদদের শ্রদ্ধা জানাইতে! ১৯৮৭ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি এরশাদ কর্তৃক এরশাদ স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হইবার পরও কোনোদিন স্মৃতিসৌধে গিয়াছেন এমন তথ্য কেহ দিতে পারিবেন না। কী বলিব ড. ইউনূস মুক্তিযুদ্ধকালে দেশেই ছিলেন না। আর যিনি স্বাধীনতা পদক দিয়াছেন, সেই এরশাদও মুক্তিযুদ্ধকালীন ছিলেন ভূমিকাহীন। তবে মৃত্যুর আগে অনুতাপ করিয়া গেছেন। জাতীয় সংসদে দাঁড়াইয়া বলিয়া গিয়াছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে আমি সেনাপ্রধান হতে পারতাম না, রাষ্ট্রপতি হতে পারতাম না, আমার দুঃখ নিয়ে মরতে হবে, আমারই কিছু লোকের বিরোধিতার কারণে আমি বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা ঘোষণা করতে পারিনি।’

কিন্তু এ সকল আচার-ব্যবহারে কোনোপ্রকার ফল লাভের কিছু নাই। এই সামরিক শাসক এরশাদই পূর্বসূরি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনূসরণ করিয়া ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতাবিরোধী শর্ষীনার পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেন। জেনারেল জিয়া ওই স্বাধীনতাবিরোধী আবু সালেহকে স্বাধীনতা পদক দেন ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে। ‘স্বাধীনতা পদক’ পাওয়া সেই শর্ষিনার পীর সমাজ ও শিক্ষায় কী সাংঘাতিক অবদান রাখিয়া ছিলেন, সেটা একটু বলছি। একাত্তরের নরঘাতক টিক্কা খানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করিয়া তার মাদ্রাসার সকল ছাত্রকে রাজাকার বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করিয়া দিয়াছিলেন। একাত্তরের ১২ নভেম্বর পাঁচ শতাধিক রাজাকারসহ শর্ষিনার পীর সালেহ মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে প্রাণ ভিক্ষা চাহিয়াছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে ২৫৬ পৃষ্ঠার পীর ও মওলানাদের সম্পর্কে লিখিতে গিয়া বলিয়াছেন, পূর্ব বাংলার বিখ্যাত আলেম মওলানা শামসুল হক সাহেব আমার ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করেছেন। আমার ধারণা ছিলো তিনি ইলেকশনে আমার বিরুদ্ধে যাবেন না। কিন্তু তিনি মুসলিম লীগে যোগ দান করলেন। জনসাধারণ তাকে খুবই ভক্তি করতো। কিন্তু স্পিডবোট নিয়ে ঘুরতে শুরু করলেন এবং এক ধর্মসভা ডেকে ফতোয়া দিলেন, আমাকে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না। ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। শর্ষিনার পীর সাহেব... বরগুনার পীর সাহেব, শিবপুরের পীর সাহেব, রহমতপুরের শাহ সাহেব আমার বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়া বলিলেন, আমাকে যে ভোট দিলে ইসলাম থাকবে না, ধর্ম শেষ হয়ে যাবে। শর্ষীনার পীর স্বাধীনতা পদক পাওয়ার পর স্মৃতিসৌধে যেমন শহীদদের শ্রদ্ধা জানাইতে যান নাই, ঠিক তেমনি ড. ইউনূসও যান নাই। তবে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসিতে ঝুলে মৃত্যু হওয়া জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী ও সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোজাহিদ মন্ত্রী হিসাবে শপথগ্রহণ করিবার পর গাড়িতে জাতীয় পতাকা উড়াইয়া স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করিয়াছিলেন।

প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান যখন বাংলাদেশে আসিয়াছেন, তাহারা স্বাধীনতার শহীদদের স্মরণ করিতে স্মৃতিসৌধে ছুটিয়া গিয়াছেন। এটাই রাষ্ট্রীয় শিষ্টাচার কিংবা কূটনৈতিক সংস্কৃতি। ব্যতিক্রম শুধু ড. ইউনূস। তিনি নিজেকে কখনো বাঙালি বলিয়া অভিষিক্ত করিয়াছেন কি না, তাহা অবগত হইতে পারি নাই। বরং বহু তথ্যউপাত্ত ঘাটাঘাটি করিয়া ক্লান্ত শ্রান্ত হইয়া পড়িয়াছি। আজব এক মানুষ তিনি। মাতৃগর্ভ হইতে তিনি তো মাতৃভূমিতেই ভূমিষ্ট হইয়াছেন- কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের মাটিতে নহে। প্রথম ‘মা’ বলেই কণ্ঠে স্বর তুলিয়াছেন। কিন্তু সেই মায়ের ভাষার জন্য যাহারা জীবন দিয়াছেন, তাহাদের কী কখনোই শ্রদ্ধা কিংবা স্মরণ করিয়াছেন? বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা। এ তো এক সুমহান মর্যাদা। কিন্তু ড. ইউনূস শহীদ মিনার চত্বরে গিয়াছেন কী?

২০০৭ সালে বাংলাদেশে ওয়ান ইলেভেন সংঘটিত করিয়াছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদ। তিনি রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিনকে হটানোর প্রধান উপদেষ্টা পদে ড. ইউনূসকেই বসাইতে চাহিয়াছিলেন। কিন্তু তাহা নাকচ করিয়া দিয়াছিলেন ড. ইউনূসই। রাজনৈতিক দল গঠনের অভিলাষ ব্যক্ত করিয়াছিলেন। কিন্তু ব্যর্থতায় পর্যদস্থ হইয়া পড়েন। সাম্প্রতিক চারদিকের রটনা-রচনা, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসিবার জন্য তিনি মার্কিন মুল্লুক চষে বেড়িয়েছেন। কিন্তু তাহার বিরুদ্ধে মামলার ছড়াছড়ি। বিচার চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাহার পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন ড. ইউনূসের বিচার স্থগিতকরণের দাবি জানান। এমনকি নোবেল বিজয়ীরা সেই দাবির দাবিদার। কী অদ্ভুত বিশ্বের শক্তিধর রাষ্ট্রের গণতন্ত্র!

জন মার্শাল যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিমকোর্টের প্রথম প্রধানমন্ত্রী বিচারপতি। মানুষের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে একটি মামলায় তাহার একটি অবিস্মরণীয় উক্তি প্রণিধানযোগ্য। অধিকারের অর্থ এই নয় যে, একজন অধিকার প্রয়োগ করবেন, আরেকজন অধিকার হরণ করবে। অর্থাৎ ‘যে কোনো ব্যক্তি প্রতিপক্ষের উপরে অধিকার প্রয়োগের পূর্বে যেনো শতবার ভেবে নেন, তার অধিকার যেনো হরণ না হয়ে যায়।’

জন মার্শালের দেশের সহিত বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের পথে ড. ইউনূসকে বড় কাঁটা মনে করা হইতে ছিলো। কিন্তু এক সেলফিকলা উদ্ভাবনের মাধ্যমে মনে করা হইতেছে যে, বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিন মুল্লুকের হুঁশ ফিরিয়া আসিয়াছে। জাতির মনও প্রফুল্ল হইয়া উঠিয়াছে। অপসারণ ঘটিয়াছে মনটার উপর জগদ্দল পাথর হইয়া চাপিয়া থাকা আতঙ্ক-আশঙ্কা। ইহাতে মস্তিষ্কের কোষগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চালন শুরু হইয়াছে। কারণ বাঙালিরা চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র ভীতসন্ত্রস্ত হইয়া অগ্রসরমান অভিযাত্রায় বারবার হোঁচট খাইয়া আসিতেছে। সংক্রামক ব্যাধির ন্যায় সেইসকল চক্রান্ত বাঙালিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধিয়া রাখিয়াছে, যুগের পর যুগ। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুমতিতে সেইসকল অনিষ্টের অপসারণ ঘটাইয়া গেলো। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক সৌহার্দ্যের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করিয়া দিয়াছে। জো বাইডেনের ‘সেলফি’ তো নহে এ যেন দ্বিপক্ষীয় সাংস্কৃতিক সম্প্রীতির যে শিল্পকলা, ঠিক তাহারই ন্যায় এটিও এক ‘সেলফিকল’। জো বাইডেন তাহার মুখাবয়বে যে হাসির ফল্গুধারা ছড়াইয়া দিয়াছ, তাহার মাঝেই অন্তর্নিহিত রহিয়াছে বাংলাদেশের জন্য এক সমীহবার্তা। যাহা নির্বাচনমুখী গণমানুষের মাঝে প্রবল আশার সঞ্চার করাইয়া দিয়াছে। সেলফিখানা নিছক মামুলি বিষয় নহে। ইহা কেবলই আমেরিকার দৃষ্টিগোচরিত এক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছায়া। বিলম্বে হইলেও বাইডেনের মনোজগতে উপলব্ধ হইয়াছে যে, ‘শেখ হাসিনার মতন করিয়া বাংলাদেশটাকে কেহই ভালোবাসিতে পারিতেছে না। সুতরাং, শেখ হাসিনাই তাহার অবশিষ্ট লক্ষ্য পূরণের পথে হাঁটুক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হইতে বিশ্ব গণমাধ্যমে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই অভিনব ‘সেলফিকলা’ বাংলাদেশের রাজনীতির ওপর বিরাট ইতিবাচক প্রভাব পড়িয়াছে। দেশবিদেশের গণমাধ্যমেও এটি একখানা বিরাট সমাচার এখন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হাতের মুঠোয় লইয়া এতদিনকার যে বিএনপি ঘরনার রাজনীতিতে সরীসৃপের ফোঁসফোঁস শব্দ আনাচে-কানাচেতে শোনা যাইতো, সেই তাহাদেরও সেলফি কান্ড রাশ টানিয়া ধরিয়াছে। বাইডেন খুব করেই যেন কথিত মিত্রদের তাজ্জবনে পাঠাইয়া দিয়া, তাহাদের কর্ণগহীনে নির্বাচনি বার্তাটাই ঢুকাইয়া দিয়াছেন। আর নহে অগ্নিসন্ত্রাসে সাধারণ নরনারী হত্যা, আর নহে সংখ্যালঘু ধর্ষণ, আর নহে রাজনৈতিক হত্যা। সর্বোপরি কোনোভাবেই আর নহে ‘পনেরো আগস্টে’র পুনরাবৃত্তি। নহে কোন আর কোন ‘একুশে আগস্ট’।

আসন্ন নির্বাচনের পূর্বে ইহা শেখ হাসিনার পক্ষে শক্তি সঞ্চারিত একটি অমোঘ মন্ত্র। উন্নয়নের মহাসড়কে প্রদীপ্তি না নিভাইয়া সৌহার্দ্যরে সৌন্দর্যেই শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়ানোর কথাও উচ্চারিত হয়েছে ওই একঝলক কথোপকথনেই।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের এই সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যমূলক আচরণের মূলে অগ্নিমন্ত্রের কাজ হইয়াছে ভারতীয় ক্ষমতাসীন দল বিজিপির বাংলাদেশের পক্ষে বাইডেন প্রশাসনকে দেওয়া সাম্প্রতিক চিঠি। মার্কিন প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ তথা শেখ হাসিনা প্রশ্নে ভারত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকা তো রহিয়াছেই। উচ্ছ্বসিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদি ও শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠক এতটাই ফলপ্রসূ হইয়াছে যে, তাহা দুই প্রধানমন্ত্রীর চেহারা-সুরাতেই প্রোজ্জ্বল হইয়া উঠিয়াছে।

এটা না বুঝিবার আর কারণ নাই যে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে প্রকারান্তরে ভারত সরকারের মতন মার্কিন প্রশাসনেরও শেখ হাসিনার পক্ষে চূড়ান্ত অবস্থানের এক কূটনৈতিক বার্তা।

বাংলাদেশ প্রশ্নে তথা শেখ হাসিনার বিষয়ে ঘূর্ণায়মান সংশয় ও সন্দেহের অবসান প্রশ্নে দ্বিপক্ষীয় আপস-মীমাংসা সেলফির মাঝেই নিহিত। সর্বোপরি বাংলাদেশের মানুষের রুদ্ধশ্বাসের আনুষ্ঠানিক অবসানের অবিশ্বাস্য কার্যকরণ হইল বাইডেনের এই সেলফিকলা। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ করছেন কীভাবে, তাহা তিনিই কেবল জানেন। বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বিশ্বাস-অবিশ্বাসের দ্বন্দ্বের সূত্রধর তো তিনি। বিশ্বময় অবিস্মরণীয় বিচরণ তার। তার সুবিশাল ভাবমূর্তি ফুটিয়া উঠিয়াছে দেড় শতাধিক বিশ্ব ব্যক্তিত্বের শিশুতোষ আবদারে। আসলে বৃদ্ধ হইয়া গেলে নাকি মানুষ শিশু মনোবৃত্তিতে প্রত্যাবর্তন করিয়া বসে। বিবেক-বুদ্ধি, বিবেচনা, শিক্ষা লোপ পাইয়া যায়। তাহারা শিশুর মতো অবুঝ হইয়া পড়িয়াছেন কি না, জানা নাই। কিন্তু শিশুর মতোই তাহাদের দাবি। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্রে। ইহার সংবিধান রহিয়াছে, আইন রহিয়াছে। কার্যবিধি রহিয়াছে। কেহ অপরাধ কর্ম সংঘটিত করিলে প্রচলিত আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তি বিচারে সোপর্দ হইবেন। এটাই স্বাভাবিক। অপরাধী কি না, তাহার ফয়সালা হইবে নিজস্ব গতিতে চলয়মান বিচারিক আদালতে। কিন্তু বহু নোবেল বিজয়ী বন্ধু সাজিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা স্থগিত করিবার জন্য বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করিবার দৃষ্টান্ত স্থাপন করিয়াছেন। তাহারা একটিবারও ভাবিয়া দেখিলেন না যে, এইটা নেহাৎ নীতিবিরুদ্ধ কাজ। একটি ভিন দেশের প্রশ্নে নীতিবিগর্হিত আচরণ। একটি রাষ্ট্রের উপর সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের নামান্তর। ঔদ্ধত্যমূলক অসংবেদনশীল হস্তক্ষেপ বটে। না জানিয়া, না বুঝিয়া স্রেফ ব্যক্তিপ্রেমে সমষ্টির সর্বনাশ করিবার উদভ্রান্ত নীতি তো মধ্যযুগীয় বর্বরতা। বাংলাদেশের বিচারিক আদালত ইউনূসের মামলা স্থগিতাদেশের দাবির প্রতি শুনানি করিতে গিয়া বিব্রতবোধ করিবেন কি না জানি না, তবে পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের বিচারিক আদালত এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হইলে সমুচিত প্রতিত্তোর তাহারা পাইতেন। সাম্প্রতিক ড. ইউনূসের মামলা-মোকদ্দমার আইনি ভিত্তিমূল নিয়া বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন ওঠায় অনেক দিন পর সংবিধানের দিকে চোখ রাখিলাম। আর তাতেই কয়েকটি অনুচ্ছেদের ভাষা-পরিভাষার মর্মমূল আঁচ করিতে গিয়া বিস্মিত হইলাম। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।’

প্রসঙ্গত জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে বিচারিক আদালতের সোপর্দ হইতে দেখিলাম দিন কতক পূর্বে। ঘণ্টা দেড়েক হাজতও খাটিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনের শাসন আমাদের জন্য শিক্ষনীয়। আমাদের অন্ধকার চোখে আলোকচ্ছটা ছড়াইয়া দেয় তাহাদের বিচারকার্য।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও লিওনিস্কি পরকীয়া প্রেমের পরিণতিও বিশ্ববাসী পরিলক্ষণ করিয়াছে। অভিশংসনের দাবি উত্থাপিত হইয়াছিল। সিন্ডিকেট ও সিনেট কক্ষে প্রধান বিচারপতি বসিয়া শুনানি অনুষ্ঠিত করিয়াছিলেন। ক্লিনটন দোষী সাব্যস্ত হইয়াছিলেন। দোষ স্বীকার করিয়া তিনি হাতজোড় করিয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিয়া ছিলেন। তখন তাহাকে ক্ষমা প্রদর্শন করিলেও ধিক্কার জানানো হইয়াছিল। আমেরিকার মতো ভারতেও আইনের শাসন বিশ্ববাসীর জন্য অনুসরণীয়। ভারতের এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিদ্যুৎ দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হইয়াছিলেন। দণ্ডে দণ্ডিত হইয়াছিলেন, যাহা অবিস্মরণীয় এক রায়। ভারতের সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের কারাদণ্ডের পরিবর্তে এই মর্মে রায় প্রদান করিয়াছিলেন যে, অভিযুক্ত মন্ত্রীকে প্রতিদিন ভারতীয় জাতীয় গ্রস্থাগারে গিয়া মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, নেতাজী সুভাসচন্দ্র বোস, নওরোজী দাদাভাই, গোপাল কৃষ্ণ গোখলে, ভ্রাতৃদ্বয় মওলানা মোহাম্মদ আলী ও মওলানা রহমত আলীর জীবনীগ্রন্থ পড়তে হবে। সকাল ৯ ঘটিকা হইতে বিকাল ৫ ঘটিকা পর্যন্ত। পুলিশি প্রহরায় ভারতীয় সেই মন্ত্রী ৫ বছর যাবত জাতীয় গ্রন্থাগারেই গ্রন্থ পড়িবার মাধ্যমেই তার শাস্তি ভোগ করিয়া প্রায়শ্চিত্ত করিয়াছিলেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিনয়ে বলিতেছি, আপনারা যাহারা বিশ্বনেতা তাহারা বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির দেনদরবারে উপবিষ্ট। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মহা মিলনমেলায়। আপনাদের প্রতিই মনোযোগ বিশ্ববাসীর। কেন না, কেবল মার্কিন মুল্লুকের শুধু নহে, সাড়ে সাত শত কোটি আদম বা অ্যাডাম সন্তানের শ্বাসনিঃশ্বাসের নিশ্চয়তা পরাশক্তি নামক অক্সিজেনের উপর। আপনারা আগ্নেয়গিরি, আপনারা পারমাণবিক, যাহার উপরে দণ্ডায়মান বিশ্বের প্রতিটি প্রাণ। জো বাইডেন নিঃশব্দে সুচিন্তিত এক নজির স্থাপন করিয়া, নোবেলীয় বা ইউনূসীয় গোলকধাঁধায় না জড়াইয়া, সর্বোপরি ওবামা-হিলারির পথে না হাঁটিয়া যে বার্তাখানি- সেলফিকলার দ্বারা ছড়াইয়া দিয়াছেন। তাহা নিশ্চয়ই বাইডেনের বিজ্ঞানমনষ্ক চিন্তাধারার দ্রুততম প্রতিফলন। এই কর্মসম্পাদন করিয়া বাইডেন রিপাবলিকানদেরই কূটনৈতিক কর্মশৈলীতে সুনিপুণ শিল্পকলার সংযোজন ঘটাইয়া নবতর এক কৌশলের অবতারণ ঘটাইয়াছেন।

বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের অহেতুক টানাপড়েনের মূলে যে ইউনূসীয় প্রশ্ন বিষবৃক্ষের মতো বিশ্ব পরিমণ্ডলে নানাবিধ চক্রান্ত ষড়যন্ত্র কিংবা সংশয় সন্দেহের আমাদানি ঘটাইয়াছিল, তাহার মুখোশ উন্মোচন হইয়া গিয়াছে। জো বাইডেন এরকম একখানা কর্মসম্পাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতমনস্ক চিন্তাধারার মসনদে বসিয়া পড়িয়াছেন। অভিবাদন, জো বাইডেন।


ড. ইউনূস   নোবেল প্রাইজ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন