ইনসাইড থট

'শেখ হাসিনা' শূন্য থেকে সম্পূর্ণ বাংলাদেশ


Thumbnail

২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭, দিনটি ছিল রবিবার। পাকিস্তান আন্দোলনের সাহসী ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান লেখাপড়ার কারনে তখন ছিলেন কলকাতায়। রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে লেখাপড়ার পাশাপাশি কলকাতার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা নিরসন এবং লাঞ্চিত, বঞ্চিত বাঙালি মুসলমানদের অধিকার আদায়ে তিনি তখন প্রচন্ড ব্যস্ত। এমন সময় শেখ মুজিবুর রহমান এবং বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব দম্পতির ঘর আলোকিত করে টুঙ্গিপাড়ার নিভৃতপল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন ফুটফুটে এক শিশু। নাম রাখা হয় শেখ হাসিনা। পিতা মুজিবকে টেলিগ্রাম করে জানানো হয় নিজের প্রথম কন্যা সন্তানের পৃথিবীতে আগমণের সুসংবাদ। পিতা মুজিব তখন এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, টেলিগ্রাম মারফত নিজের প্রথম কন্যা সন্তানের জন্মের খবর পেয়েও আসতে পারেন নি। এসেছিলেন বেশ কিছুদিন পরে। সেদিনের সেই ছোট্ট শিশু হাসু আজকের সফল রাষ্ট্রনায়ক, জননেত্রী শেখ হাসিনা। 

সদ্য স্বাধীন হওয়া পাকিস্তান রাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার জন্য মোটেই সুখকর ছিল না। বসতে শেখার আগেই শিশু শেখ হাসিনাকে ৫ মাস ১৪ দিন বয়সে পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হতে হয়! ১৯৪৮ সালের ১১ ই মার্চ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে গ্রেফতার হন শিশু শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। ৫ দিন জেল খাটার পর মুক্তি পান তিনি। এরপর কখনো ভাষার জন্য, কখনো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীদের অধিকার আদায়ের জন্য আবার কখনো বা পূর্ব বাংলায় দূর্ভিক্ষের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বারবার পিতা মুজিবকে জেল খাটতে দেখেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা তখন কেবলই এক অবুঝ শিশু। অতপর ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৫২ সালের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা ২৬ মাস পিতা মুজিবের জেলজীবন ছিল ২৭ মাস বয়সী শেখ হাসিনার জন্য এক মস্ত বড় ধাক্কা। কেবল পিতাকে চিনতে শেখা, বাবা বলে ডাকতে শেখা শেখ হাসিনার জীবন সংগ্রাম সেই যে শুরু, আজ অবধি শেষ হয়নি।

বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ (ইডেন কলেজ) এর জনপ্রিয় ছাত্রলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা যখন ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে কলেজ ছাত্রীসংসদ নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন তখনো পিতা মুজিব কারাগারে বন্দি। ১৯৬৭ সালে পিতা মুজিব জেলে অন্তরীণ অবস্থায় ১৭ ই নভেম্বর ডক্টর এম ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিবাহ সম্পন্ন হয় শেখ হাসিনার। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭১’র ২৭ শে জুৃলাই হানাদার বাহিনীর নিরাপত্তা প্রহরীর নজরদারীতে থাকা অবস্থায় হাসপাতালে পুত্র সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়ের প্রসব! তখন ও পিতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার আসামি হিসেবে বন্দী। বন্দী মাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব কেও হাসপাতালে আসার অনুমতি দেয়নি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা। জীবন সংগ্রাম যেন কিছুতেই তার পিছু ছাড়ে না। ১৫ ই আগস্ট পিতামাতা সহ পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকান্ডের পর বিদেশে ৬ বছর অনেক সংগ্রাম করে নির্বাসিত জীবন অতিবাহিত করতে হয়েছে তাকে। 

কথিত আগামির রাষ্ট্রনায়ক জীবন বাঁচাতে মুচলেকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে পলাতক জীবন বেছে নিয়েছে। আপন ছোট ভাইয়ের অকাল মৃত্যু, গর্ভধারিণী মায়ের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে জেলে যাওয়া কিংবা চরম অসুস্থতায় ও দেখতে আসার মত সৎ সাহস হয় নি তার। সরকার চাইলেও তিনি দেশে আসেন নি। আর বঙ্গবন্ধু কন্যা পিতামাতা সহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্যকে হারিয়েও এতটুকু ভেঙে পড়েন নি, সাহস হারান নি। ১৯৮১ সালের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর অবৈধ সামরিক শাসক, খুনীদের পৃষ্ঠপোষক জেনারেল জিয়ার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে ১৭ ই মে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বীরের বেশে দেশের মাটিতে ফিরেছেন। বঙ্গবন্ধুর রক্তের যোগ্য উত্তরসুরির সাথে অন্যদের পার্থক্য এখানেই। সেদিন বিমানবন্দর থেকে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মানুষ ঝড়, বৃষ্টি উপেক্ষা করে সরকারি বাধা মোকাবিলা করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাকে অভ্যর্থনা জানিয়েছিল। জেনারেল জিয়ার সামরিক সরকার সেদিন শেখ হাসিনাকে ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবনে প্রবেশ করতে দেয় নি। রাস্তায় বসে তাকে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল পড়তে হয়েছে। সেদিন থেকেই শেখ হাসিনার গণতন্ত্র, আইনের শাসন, ন্যায় বিচার এবং ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম শুরু। 

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তেইশ বছরের আন্দোলন সংগ্রাম এবং বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে চার জাতীয় নেতার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর নামে পরিচালিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয় বাঙালির সহস্র বছরের আকাঙ্খিত স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী বঙ্গবন্ধু মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে 'যুদ্ধ বিধ্বস্ত শূন্য বাংলাদেশ' পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেন। তবে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চক্রান্তে তা হোঁচট খায় বঙ্গবন্ধু কে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। এরপর শুরু হয় এক ভিন্ন বাংলাদেশের যাত্রা। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী খন্দকার মোশতাক, জেনারেল জিয়া এবং জেনারেল এরশাদরা পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ কে পরিচালনা করেন পাকিস্তানি ভাবধারায়। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে অর্জিত সংবিধান ক্ষত-বিক্ষত করা হয়। নিজেদের অপকর্ম জায়েজ করতে এবং স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করতে করা হয় "ইনডেমনিটি আইন"।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৫ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জনতার ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রথম বারের মত রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হন বঙ্গবন্ধুর রক্তের যোগ্য উত্তরসুরি শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে মোশতাক-জিয়ার করা কালাকানুন 'ইনডেমনিটি আইন' বাতিল করে দেশ এবং জাতির ললাট থেকে কলঙ্ক মোচন করেন তিনি। শুরু হয় বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যার বিচার, দেশে ফিরে আসে আইনের শাসন। ১৯৯৬ সালের ১২ ই ডিসেম্বর গঙ্গানদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের লক্ষ্যে ভারতের সাথে 'গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি' সম্পাদন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। ১৯৯৭ সালের ২ রা ডিসেম্বর 'পার্বত্য শান্তি চুক্তি' বাস্তবায়নের মাধ্যমে দীর্ঘ ২৩ বছরের অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে শান্তি ফিরিয়ে আনেন তিনি। শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো কর্তৃক "হুপে- বোয়ানি" শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন শেখ হাসিনা। ১৯৯৭ সালে শান্তি এবং দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় 'নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু স্মৃতি পুরস্কার' পান তিনি।

খাদ্য ঘাটতির বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেন শেখ হাসিনা। ১৯৯৯ সালে কৃষিক্ষেত্রে উন্নয়ন এবং ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা তাকে 'দ্যা সেরেস মেডেল' প্রদান করে। ২১ শে ফেব্রুয়ারীকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্তি শেখ হাসিনা সরকারের কুটনৈতিক সাফল্যের ফসল। তার সরকারের এসব অর্জন বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে। পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরে যাওয়া বাংলাদেশে তার যোগ্য নেতৃত্বে আবার ফিরে আসে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। ২০০১ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতার মেয়াদ শেষে সাংবিধানিক উপায়ে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নজির সৃষ্টি করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। পহেলা অক্টোবরের নির্বাচনে দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে স্থূল ভোট কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ক্ষমতায় আসীন হয় খালেদা-নিজামীর নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার।

খালেদা-নিজামীর নেতৃত্বে দেশ দূর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়। পাঁচ বার দূর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। রাষ্ট্রীয় মদদে ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট শেখ হাসিনার জনসভায় নারকীয় গ্রেনেড হামলা করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সহ আওয়ামী লীগের প্রথম সারির নেতৃবৃন্দকে হত্যা করে আওয়ামী লীগকে চিরতরে নেতৃত্বশূন্য করা। এর মাধ্যমে রাষ্ট্রক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। এ ধরণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। খালেদা-নিজামীর জোট সরকার মেয়াদ শেষে ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করে। জনমতকে উপেক্ষা করে ভূয়া ভোটার সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেদের নিয়োগকৃত বিতর্কিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমে একটি যেনতেন নির্বাচন করে পুনরায় রাষ্ট্রক্ষমতায় বহাল থাকার দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকে তৎকালীন সরকার। 

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে গড়ে ওঠে দূর্বার গণআন্দোলন। গণআন্দোলনে ভেস্তে যায় যেনতেনভাবে ক্ষমতা দখলের পরিকল্পনা। ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রিত ১/১১ সরকার। শুরু হয় বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়। পুনরায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে তীব্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে কারামুক্ত করে ওয়ান ইলেভেন সরকারকে নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়। ইতিহাসের নজিরবিহীন নিরপেক্ষ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হয়ে যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার দন্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। 

দেশী-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র এবং বাঁধা মোকাবিলা করে নিজস্ব অর্থায়নে বাঙালির অর্ধ শতকের স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছেন শেখ হাসিনা। পদ্মা সেতু শেখ হাসিনার সাহস এবং সক্ষমতার প্রতীক। ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হয়েছে। যানজটের নগরী ঢাকার মানুষ মেট্রোরেল এবং এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে প্রতিনিয়ত। চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আগামী ২৮ অক্টোবর উদ্বোধন করবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পাবনার 'রুপপুর নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্র' নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা ফোর লেন, ঢাকা-রংপুর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং ঢাকা-সিলেট সিক্স লেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সহ অসংখ্য মেগা প্রকল্পের বেশিরভাগই সম্পন্ন হয়েছে। কোনো কোনোটির কাজ শেষ পর্যায়ে। 

শিক্ষা, যোগাযোগ, কৃষি সহ সকল ক্ষেত্রে শেখ হাসিনার টানা তিনবারের রাষ্ট্রক্ষমতার মেয়াদে দেশে ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সরকার ১৯৭৩ সালে ৩৬,১৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারীকরণ করেছিল। পরবর্তীতে আর কোনো সরকার এ ধরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। শেখ হাসিনার সরকার দীর্ঘ বছর পর একসাথে ২৬,১৯৩ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করেছে। ২০১০ সাল থেকে ১ম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন শিক্ষামাতা শেখ হাসিনা। কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সনদের ব্যবস্থা করেছেন 'কওমি জননী' শেখ হাসিনা। সারাদেশে দৃষ্টিনন্দন মডেল মসজিদ নির্মাণ করে শান্তির ধর্ম ইসলামের প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করেছেন তিনি। কয়েক লক্ষ গৃহহীন মানুষকে সরকারি অর্থায়নে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি করে দিয়ে নজীর স্থাপন করেছে শেখ হাসিনার সরকার।

দেশের ৩৭ টি সরকারি মেডিকেল কলেজের ২০ টিই শেখ হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ১ টি সরকারি ও ৫ টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সবকয়টি শেখ হাসিনা সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠিত! দেশের ১৭ টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ টিই শেখ হাসিনার টানা তিন মেয়াদে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের সফল কুটনৈতিক তৎপরতায় আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বিজয়ী হওয়ার মধ্য দিয়ে ভারতের কাছ থেকে বঙ্গোপসাগরের ১৯,৪৬৭ বর্গকি.মি এবং মায়ানমারের কাছ থেকে ১ লক্ষ ১১ হাজার বর্গকি.মি সমূদ্রসীমার অধিকার অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার সফল কুটনৈতিক প্রচেষ্টায়  বাংলাদেশের জন্য সমূদ্র সীমা বিজয় এক বিশাল অর্জন। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট 'ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট' বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহলবাসীর ৬৮ বছরের সমস্যার সমাধান করে কুটনৈতিক সফলতার পরিচয় দেন বঙ্গবন্ধু কন্যার সরকার। এর ফলে ৬৮ বছরের পরিচয়হীন, রাষ্ট্রহীন ছিটমহলবাসী নাগরিকত্ব লাভ করেন। 

শেখ হাসিনা বিশ্বশান্তি রক্ষায় ২০১১ সালে জাতিসংঘের সাধারন পরিষদের ৬৬ তম অধিবেশনে আন্তর্জাতিক শান্তি মডেল উপস্থাপন করে আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রশংসিত হন। শেখ হাসিনার যোগ্য নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত বাংলাদেশ আজ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ। মহাকাশে এখন আছে বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। এসব অর্জনের সুফল ভোগ করছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক 'গ্লোবাল সামিট অব উইমেন ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নারী শিক্ষা ও উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্ব দানের জন্য শেখ হাসিনাকে 'গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড' প্রদান করেন। মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে আসা প্রায় ১০ লক্ষ অসহায় রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধিতে ভূষিত হন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে তার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং মানবিকতার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী 'আইপিএস ইন্টারন্যাশনাল এ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড' এবং 'স্পেশাল ডিসটিংশন অ্যাওয়ার্ড ফর লিডারশীপ' পদক পান। 

বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সুদূরপ্রসারী কাজের জন্য পলিসি লিডারশীপ ক্যাটাগরিতে ২০১৫ সালে জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ পুরস্কার 'চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ' পুরস্কারে ভূষিত হন রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। পাশাপাশি একই বছরে জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে আইসিটির ব্যবহারে প্রচারণার জন্য ‘আইসিটি সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন তিনি। ২০১৪ সালে নারী ও শিশু শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে তার সরকারের বিশেষ ভূমিকার জন্য শেখ হাসিনা ‘ট্রি অব পিস’ পদক পান। তথ্য-প্রযুক্তি সেবার সম্প্রসারণ, স্বাস্থ্য খাতে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার হ্রাস এবং ক্ষুধা ও দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ২০১৩ ও ২০১৪ সালে তিনি দু'বার সাউথ-সাউথ কো-অপারেশন ভিশনারি'  পুরস্কারে ভূষিত হন।

নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেন ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ’ পুরস্কার ও ‘প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ পদক প্রদান করে। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১৯ সালে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কার দিয়েছে গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন অ্যান্ড ইমিউনাইজেশন। যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, স্কটল্যান্ড, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, রাশিয়া, এবং ফ্রান্স সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অসংখ্য নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান এবং বিভিন্ন সম্মাননা পদকে ভূষিত করেছে বিভিন্ন সময়ে। এই অর্জন বঙ্গবন্ধু কন্যার একার নয়, এই অর্জন সাড়ে ১৬ কোটি বাঙালির। 

রাষ্ট্র পরিচালনায় শুধু নয়, বরং বিরোধী রাজনৈতিক দল ও জোটের রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র সফলভাবে মোকাবিলা এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড শক্ত হাতে প্রতিহত করে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রেখেছেন সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। নিজ দল ও সরকারের দূর্নীতিবাজ নেতা, এমপি, মন্ত্রী, জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন তিনি। ১৯৮১-২০২৩ দীর্ঘ ৪২ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি ১৯ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। বারবার তার উপর গ্রেনেড, গুলি, বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে বাঙালির দীর্ঘ আকাঙ্খিত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দেশ ও জনগণের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘ কর্তৃক 'এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার' এ ভূষিত হয়েছেন তিনি। এভাবে বারবার তিনি যেমন সম্মানিত হয়েছেন তেমনি দেশকে বিভিন্ন অর্জনে করেছেন সমৃদ্ধ। 

১৯৭২-৭৫ মাত্র তিন বছরের শাসনামলে একটি ক্ষুদ্র এবং গরীব রাষ্ট্রের প্রধান হলেও বঙ্গবন্ধু তার বিশাল ব্যক্তিত্ব, নেতৃত্বগুণ এবং অসাধারণ বাচনভঙ্গির কারনে বিশ্বমঞ্চে সকলের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছিলেন। সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন, যা বিশ্ব মোড়লদের মাথাব্যথার কারন হয়ে দাঁড়ায়। এ কারণে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ যাতে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না  পারে সেজন্য আন্তর্জাতিক এবং মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত দেশীয় শক্তির যোগসাজশে বঙ্গবন্ধু কে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। আজকে বঙ্গবন্ধু কন্যার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ যখন উন্নয়ন এবং অর্জনে সমৃদ্ধির চূড়ান্ত শিখরে, বাংলাদেশ যখন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা অর্জন করেছে তখন আবার দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার উপর ওরা হস্তক্ষেপ করতে চায়। ইনশাআল্লাহ্ শেখ হাসিনার বিচক্ষণ নেতৃত্বে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ণ রেখে চলমান প্রগতির পথে এগিয়ে যাবে!

শেখ হাসিনা প্রবল অন্ধকারে আলোর দ্যূতি; যিনি আইনের শাসন বিহীন বাংলাদেশে আইনের শাসন ফিরিয়ে এনেছেন, বিদ্যুতের আলো বিহীন অন্ধকারাচ্ছন্ন বাংলাদেশকে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত করেছেন। রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষা, তথ্য, যোগাযোগ এবং প্রযুক্তিতে পিছিয়ে থাকা পশ্চাৎপদ বাংলাদেশকে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেছেন তার ভিশনারী নেতৃত্বগুনে। তিনি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কৃষি, শিল্প, সংস্কৃতি এবং অর্থনীতি সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তার চাওয়া এখন স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ। এই লক্ষ্যে ২০২২ সালের ২৪ ডিসেম্বর, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ-২০৪১ রূপকল্প’ ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশের সাহসি অভিযাত্রার এক অবিকল্প সারথি, সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সোসাইটি, স্মার্ট ইকোনমি ও স্মার্ট সরকার প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়েই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভিশন-২০৪১ এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে  আজকের উন্নত, সমৃদ্ধ, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ এক স্মার্ট বাংলাদেশ! ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, দেশরত্ন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৭ তম শুভ জন্মদিনে এই প্রত্যাশা।

 

মোঃ নজরুল ইসলাম, কলামিস্ট এবং তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ১৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, খুলনা মহানগর।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন