ইনসাইড থট

নতুন শিক্ষাক্রম নতুন আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯:৫৮ এএম, ০৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২০


Thumbnail

আমি আমার জীবনে মাত্র একবার শিক্ষক-ছাত্রদের নিয়ে সরকারের একটি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার চেষ্টা করেছিলাম। সেই আন্দোলনের কারণে তিন মাসের ভিতর সরকার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিল। আন্দোলন শুরু করার পর দেশের সব পত্রপত্রিকা, টেলিভিশন চ্যানেল, ছাত্র, শিক্ষক-অভিভাবক আমাদের সাহায্য করেছিল। সে জন্য এত তাড়াতাড়ি আমরা আমাদের দাবি আদায় করতে পেরেছিলাম। সেটি ছিল ২০০৫ সাল এবং আন্দোলনটি ছিল একমুখী শিক্ষার বিরুদ্ধে।

একমুখী শিক্ষা বলতে আসলে বোঝানোর কথা ইংরেজি মিডিয়াম, মাদ্রাসা ও বাংলা মিডিয়াম-সবাইকে নিয়ে সমন্বিত একটা শিক্ষাব্যবস্থা। আমরা সবাই সেটা চাই কিন্তু ২০০৫ সালের একমুখী শিক্ষা ছিল এক ধরনের প্রতারণা, সেখানে ইংরেজি মিডিয়াম ও মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার কোনও পরিবর্তন না করে শুধু মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের দেশে এসএসসি পরীক্ষার যে কাঠামোটি ১৯৬৩ সাল থেকে চলে আসছিল, সেখানে নবম দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ভাগ হয়ে যেতো। ২০০৫ সালে একমুখী শিক্ষা চালু করার সময় এই ভাগগুলো তুলে দিয়ে সবাইকে একই বিষয় পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অনেক কারণে এই একমুখী শিক্ষা দেশের শিক্ষকদের বাধার সামনে পড়ে।

প্রথম কারণটি হচ্ছে সরকারের গোপনীয়তা-একেবারে হঠাৎ করে দেশের মানুষ জানতে পেয়েছে যে, পরের বছর থেকে একমুখী শিক্ষা চালু হয়ে যাচ্ছে। এত বড় একটা সিদ্ধান্ত দেশের কোনও মানুষকে না জানিয়ে চালু হতে যাচ্ছে, সেটি ছিল একটি রহস্য। মজার ব্যাপার হলো, আমরা এটি সম্পর্কে না জানলেও গাইড বইয়ের প্রকাশকেরা কিন্তু সেটি ঠিকই জানতো এবং তারা সব গাইড বই ছাপিয়ে ফেলেছিল। (পরে শুনেছি একমুখী শিক্ষা বন্ধ হওয়ার কারণে তাদের নাকি হাজার কোটি টাকার লোকসান হয়েছিল!)।

দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে, একমুখী শিক্ষার বিষয় নির্বাচন, সবার জন্য ১০০ মার্কসের ধর্ম এবং ১০০ মার্কসের ব্যবসায় শিক্ষা বাধ্যতামূলক কিন্তু পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়নের জন্য বরাদ্দ ছিল মাত্র ৩৭.৫ মার্কস করে! অর্থাৎ ছাত্রছাত্রীরা যতটুকু পদার্থবিজ্ঞান (কিংবা রসায়ন) শিখবে তার থেকে তিনগুণ তাদের ধর্ম কিংবা ব্যবসায় শিক্ষা শিখতে হবে। অন্যান্য বিষয়ের গুরুত্বও ছিল খাপছাড়া। যদিও আধুনিক পৃথিবীর ভিত্তি হচ্ছে গণিত আর বিজ্ঞান কিন্তু একমুখী শিক্ষায় পুরো বিজ্ঞান শিক্ষার একেবারে বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।

তৃতীয় কারণ হচ্ছে শিক্ষকদের হাতের ত্রিশ মার্কস। আমরা সবাই জানি শিক্ষকদের হাতে যে মার্কস দেওয়া হয় সেটি কখনও সঠিকভাবে দেওয়া হয় না−এখনো যে ব্যবহারিক পরীক্ষার মার্কস দেওয়া হয়, সেখানে সবাই ঢালাওভাবে সব মার্কস পেয়ে যায়, আসল মূল্যায়নের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। পাস মার্কস ৩৩, কাজেই শিক্ষকেরা যদি মায়া করে তাদের ছাত্রছাত্রীদের ৩০ মার্কস দিয়ে দেন এবং ছাত্রছাত্রীরা পরীক্ষার সময় এমসিকিউ অংশে চোখ বন্ধ করে কিছু গোল্লা ভরাট করে চলে আসে তাহলেই ঘটনাক্রমে কিছু শুদ্ধ গোল্লা ভরাট হয়ে বাকি তিন মার্কস চলে আসবে! অর্থাৎ একেবারে একটি শব্দও না জেনে একজন ছাত্র বা ছাত্রীর এসএসসি পরীক্ষা পাস করে ফেলা সম্ভব!

চতুর্থ কারণ হচ্ছে শিক্ষার ধারাবাহিকতা নষ্ট হওয়া। এসএসসিতে ছেলেমেয়েরা যদি বিজ্ঞান বলতে গেলে কিছুই না শিখে তাহলে এইচএসসি-এর সিলেবাসটিকেও কমিয়ে ফেলতে হবে, দুর্বল করে ফেলতে হবে। অর্থাৎ এই দেশের কোনও ছেলেমেয়েই ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা বিজ্ঞানের কোনও বিষয় শেখার মতো প্রস্তুতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে না।

পঞ্চম কারণ হচ্ছে, যদিও মুখে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়ার চাপ কমানোর কথা বলা হয়েছিল কিন্তু হিসাব করে দেখা গেছে, একমুখী শিক্ষায় প্রয়োজনীয় অপ্রয়োজনীয় মিলে ১৮টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় শিখতে হবে। শুধু তা-ই নয়, ১৮টি বিষয়ের বাইরে এই নতুন পদ্ধতিতে মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের আরবি, হিন্দু ছাত্রছাত্রীদের সংস্কৃত এবং বৌদ্ধ ছাত্রছাত্রীদের পালি ভাষা শিখতে হবে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সংস্কৃত কিংবা পালি ভাষার শিক্ষক কারা হবেন সে বিষয়ে কারো কোনও ধারণা কিংবা পরিকল্পনা নেই। (সেটি ছিল বিএনপি-জামায়াতের কাল, তখন সাম্প্রদায়িকতার একটি চূড়ান্ত রূপ আমরা দেখেছিলাম। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান কিংবা অন্য ধর্মের মানুষের ছেলেমেয়েরা চুলোয় যাক তাদের নিয়ে কেন মাথা ঘামাতে হবে−সেটি ছিল সেই সময়ে দেশের ফিলোসফি!)

তখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র থিওরিও বাজারে চালু ছিল, তার একটি হচ্ছে এরকম: যেহেতু মাদ্রাসা শিক্ষাকে উন্নত করে মাধ্যমিক শিক্ষার সমান করা যাচ্ছে না, তাই মাধ্যমিক শিক্ষাকেই অবনত করে মাদ্রাসা শিক্ষার সমান করে ফেলা হোক। আমি এই থিওরি বিশ্বাস করিনি কিন্তু একজন পরিচিত মানুষের বাসায় গিয়ে টেলিভিশনে হঠাৎ সেই সময়ের শিক্ষামন্ত্রীর একটা কথা শুনে একেবারে ‘থ’ হয়ে গিয়েছিলাম। আমি নিজের কানে শুনলাম তিনি বললেন, স্কুলের শিক্ষাকে মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সমন্বয় করার জন্য একমুখী শিক্ষা চালু করা হচ্ছে। ষড়যন্ত্র থিওরি নয়, রীতিমত ষড়যন্ত্র!

যাই হোক ২০০৫ সালের সেই সময়টিতে একমুখী শিক্ষা নিয়ে এ ধরনের অনেক কিছু ঘটেছিল এবং আমি আন্দোলনের অংশ হিসেবে তখন পত্রপত্রিকায় সেগুলো নিয়ে অনেক লেখালেখি করেছিলাম। সেই লেখালেখিগুলোয় অনেক দিন পরে আমি চোখ বুলিয়ে যাচ্ছি। একজন প্রশ্ন করতেই পারেন পনেরো বছর আগের সেই ঘটনাগুলো নিয়ে আমি আবার এতদিন পর ব্যস্ত হয়েছি কেন?

তার কারণ ২০০৫ সালের সেই একমুখী শিক্ষার মতো আবার মাধ্যমিক শিক্ষায় বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের বিভাজনটি তুলে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পনেরো বছর আগে যে বিষয়টি পরিকল্পনাহীনভাবে পুস্তক ব্যবসায়ীদের নিয়ে করার চেষ্টা করে এই দেশের কোটি কোটি টাকা, অনেক মানুষের শ্রম এবং মেধার অপচয় করা হয়েছিল, সেই ঘটনার যেন আবার পুনরাবৃত্তি না হয় আমি সেই বিষয়টিতে নিশ্চিত হতে চাই।

শিক্ষা সংক্রান্ত কোনও কোনও কমিটিতে আমাকে মাঝে মাঝে ডাকা হয়। তার সব অভিজ্ঞতা যে ভালো সেটা বলা যাবে না। উদাহরণ দেওয়ার জন্য আমি সবসময় শিক্ষানীতির কথা বলি, আমরা মোটেও চারটি পাবলিক পরীক্ষার কথা বলিনি কিন্তু এখন ছেলেমেয়েদের চারটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমরা আট বছর প্রাইমারি শিক্ষার কথা বলেছিলাম, সেটি এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা প্রথম তিন বছর শিশুদের কোনও পরীক্ষা না নেওয়ার কথা বলেছিলাম কিন্তু স্কুলগুলোয় একেবারে দুধের বাচ্চাদেরও পরীক্ষা নেওয়া হয়। আমরা ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা করার কথা বলেছিলাম, গান গাওয়ার কথা বলেছিলাম, ছবি আঁকার কথা বলেছিলাম। কিন্তু তার বদলে ছেলেমেয়েদের খেলাধুলার ওপর তথ্য জানতে হয়, চারু ও কারুকলার তথ্য মুখস্থ করে তার ওপর নিরানন্দ পরীক্ষা দিতে হয়, আনন্দের বদলে এখন তাদের জীবনে নতুন বিড়ম্বনা। অসংখ্যবার সৃজনশীল প্রশ্নের বিশাল ডাটাবেজ তৈরি করে মানসম্মত প্রশ্নের সমস্যার সমাধান করার কথা বলা হয়েছে, কখনও সেই প্রক্রিয়াটি শুরু হয়নি। (যদিও যশোর বোর্ড সেটি করে দেখিয়ে উদাহরণ তৈরি করে রেখেছে!) কেউ যেন মনে না করে এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে আমি হতাশা অনুভব করি। আমি মোটেও হতাশ নই। শিক্ষার পেছনে জিডিপি-এর ৬ ভাগ দেওয়ার কথা, আমরা তার তিন ভাগের একভাগ দিয়ে যে লেখাপড়ার আয়োজন করেছি, আমার ধারণা পৃথিবীর কোনও দেশ এত কম টাকা খরচ করে এত ব্যাপক আয়োজন করতে পারবে না! সত্যি কথা বলতে কী, আমি যখনই চিন্তা করি যে এই দেশে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও সমানভাবে (এমনকী একটু ভালোভাবে) লেখাপড়া করছে, তখনই আমার মন ভালো হয়ে যায়।

শিক্ষাসংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে যেসব কমিটি তৈরি করা হয় সেগুলো লক্ষ করে আমি একটা বিষয় আবিষ্কার করেছি। সেটা হচ্ছে, এই কমিটিগুলোতে যে শিক্ষাবিদেরা থাকেন সেখানে বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং কিংবা মেডিকেলের শিক্ষকের সংখ্যা খুব কম। কাজেই যখনই শিক্ষাসংক্রান্ত কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় সেখানে বিজ্ঞান শিক্ষা একটুখানি কম গুরুত্ব পায় বলে আমার ধারণা হয়েছে। আলাদাভাবে বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগ না রেখে যদি সবাইকে একইভাবে পড়ানো হয় তাহলে মানবিক এবং বাণিজ্য শিক্ষায় খুব বেশি পরিবর্তন হবে না কিন্তু বিজ্ঞান শিক্ষায় একটি অনেক বড় মৌলিক পরিবর্তন হবে। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, আজীবন বিজ্ঞান পড়ে এসেছি বলে এই বিষয়টা অনুভব করতে পারি। কিন্তু আমি সবসময় লক্ষ করেছি, যে শিক্ষাবিদেরা বিজ্ঞানের মানুষ নন তারা এই বিষয়টা সেভাবে অনুভব করেন না। তারা নানা দেশের উদাহরণ দেন, শিক্ষসংক্রান্ত গভীর জ্ঞানের কথা বলেন, অতীতের উদাহরণ দেন কিন্তু আমাদের দুর্ভাবনাটি অনুভব করতে পারেন না।

তখন আমার শুধু বঙ্গবন্ধুর কথা মনে হয়। পাকিস্তানের বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে দেশের মাটিতে পা রাখার সাত মাসের ভিতরে তিনি জাতীয় শিক্ষা কমিশন তৈরি করেছিলেন। সেই শিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব কিন্তু তিনি একজন শিক্ষাবিদকে না দিয়ে একজন বিজ্ঞানী-ড. কুদরাত-এ-খোদাকে দিয়েছিলেন! শিক্ষার ব্যাপারে একজন বিজ্ঞানী কী স্বপ্ন দেখেন, বঙ্গবন্ধুর কাছে সেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ড. কুদরাত-এ-খোদাকে বঙ্গবন্ধু যতটুকু বিশ্বাস করেছিলেন, তিনি তার পুরো মর্যাদা রেখেছিলেন। ৩৬টি অধ্যায়ের ৪৩০ পৃষ্ঠার রিপোর্টটি তৈরি করার জন্য ড. কুদরাত-এ-খোদা ৯০টি প্রশ্ন দশ হাজার মানুষের কাছে পাঠিয়েছিলেন। আমরা কি কখনও ড. কুদরাত-এ-খোদার মতো করে চিন্তা করতে পারি? আমরা সবাই কি ধরে নেই না যে, অন্যের মন্তব্য শোনার কোনও প্রয়োজন নেই, আমি ভাসা ভাসাভাবে যেটা জানি, সেটাই হচ্ছে সারা পৃথিবীর মাঝে একমাত্র গ্রহণযোগ্য একটি সিদ্ধান্ত এবং সেটাকেই অন্যের ওপর চাপিয়ে দেই, মনে করি যেভাবেই হোক সেটাই বাস্তবায়ন করতে হবে।

২০১২ সালে শেষবার আমাদের শিক্ষাক্রম রেডি করা হয়েছিল। প্রতি পাঁচ বছর পরপর সেটাকে পরিবর্তন, পরিবর্ধন এবং পরিমার্জন করার কথা। এই প্রক্রিয়াটি শুরু করা হয়েছে এবং এই শিক্ষাক্রমের আওতায় নানা ধরনের পরিবর্তনের মাঝে একটি হচ্ছে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগকে একীভূত করে ফেলা। ২০০৫ সালের একমুখী শিক্ষার পরিকল্পনার তুলনায় এটি এর মাঝেই অনেক বেশি বাস্তবমুখী পরিকল্পনা, কারণ সামনের বছর সেটি শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির জন্য কার্যকর করা হবে। ছাত্রছাত্রীরা যখন সপ্তম শ্রেণিতে উঠবে তখন সপ্তম শ্রেণির জন্য সেটি কার্যকর হবে, এভাবে নবম দশম শ্রেণির শিক্ষাক্রম কার্যকর করার জন্য আমাদের হাতে এক দিন দুই দিন নয়, চার বছর সময় আছে। এই দীর্ঘ সময়টিতে ঠিকভাবে পরিকল্পনা করা যাবে, আলোচনা করা যাবে, বিশ্লেষণ করা যাবে। সাধারণ মানুষের মন্তব্য শোনা যাবে, শিক্ষকদের বক্তব্য নেওয়া যাবে এবং বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডাক্তারদের বক্তব্যও শোনা যাবে। দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যদি এই অতি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনটি করা হয়, আমার ধারণা এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

নবম দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগে ভাগ না করার জন্য একটা যুক্তি দেওয়া হয় যে, এত অল্প বয়সে তারা কে কোন বিভাগে পড়বে সেটি তখনও বুঝতে শিখে না। এই যুক্তিটির কতখানি সত্যি আমি জানি না−আমার অভিজ্ঞতা ভিন্ন। আমি দেখেছি তাদের ভেতরে যারা বুঝতে পারে, পাস করে তীব্র প্রতিযোগিতা করে মেডিক্যাল কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয় তারা পড়ার সুযোগ পাবে না, তারা বাণিজ্য কিংবা মানবিক বিভাগে যায়। অন্য সবাই বিজ্ঞান পড়তে চায়, কারণ তারা জানে বিজ্ঞান পড়লে ভবিষ্যতে তাদের সব সুযোগ খোলা থাকে। তবে যে কারণেই হোক আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের ধারণা হয়েছে যে বিজ্ঞান পড়তে হলে তাকে অবশ্যই প্রাইভেট এবং কোচিং করতে হবে, সবার সেই আর্থিক ক্ষমতা থাকে না বলে তাদের অনেকে বিজ্ঞান পড়তে সাহস পায় না। শুধু তা-ই নয়, আমার ধারণা ছাত্রছাত্রীরা একা বিভাগ নির্বাচন করে না, তাদের পরীক্ষার ফল দেখে অভিভাবক এবং শিক্ষকেরা মিলে তার বিভাগ নির্বাচন করে দেন।

তবে নবম দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান, মানবিক এবং বাণিজ্য বিভাগে ভাগ করে ফেলার জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে একটা বিষয় নিয়ে সারা জীবন দুঃখ করে এসেছি। আমি বড় হয়ে টের পেয়েছি পূর্ণাঙ্গ মানুষ হওয়ার জন্য পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বা জীববিজ্ঞানের মতো আমার অন্য একটি বিষয়ে অবশ্যই প্রাথমিক কিছু জ্ঞান থাকার প্রয়োজন ছিল, সেই বিষয়টি হচ্ছে অর্থনীতি। আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় সেটি কোনোভাবে সম্ভব নয়, বিজ্ঞান বিভাগের একজন ছাত্র এই অতি প্রয়োজনীয় বিষয়টি সম্পর্কে কোনও ধারণা না নিয়ে তার লেখাপড়া শেষ করে। শুধু তা-ই নয়, নবম দশম শ্রেণির পাঠ্যবইগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে আমি আবিষ্কার করেছি, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা মানবিক বা বাণিজ্য শাখার বিজ্ঞান বইয়ের প্রজনন সংক্রান্ত অসাধারণ একটি অধ্যায় থেকে বঞ্চিত হয়। (শুনেছি স্কুলের শিক্ষকেরা নাকি ক্লাসে এই বিষয়টা পড়াতে সংকোচবোধ করেন, তাই তারা সেটা পড়ান না এবং ছেলেমেয়েরা নিজেরা পড়ে নেয়!)। শুধু তা-ই নয়, তারা যদি জীববিজ্ঞান বিষয়টি না নেয় তাহলে তারা বিবর্তনের মতো বিজ্ঞানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি জানার কোনও সুযোগ পায় না। কাজেই এখন শিক্ষাক্রম সুন্দর করে সাজিয়ে একটা ছেলে বা মেয়েকে একদিকে প্রয়োজনীয় বিজ্ঞান, অন্যদিকে অর্থনীতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শেখানোটা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমি যেহেতু দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়ে এসেছি, তাই মোটামুটিভাবে মাধ্যমিক পাস করে আসা বিজ্ঞান বিভাগের ছেলেমেয়েরা কতটুকু জানে সেটা বলতে পারি। আমার বলতে দ্বিধা নেই আমি আরও বেশি খুশি হতাম যদি তাদের প্রস্তুতিটি আরেকটু ভালো হতো। কাজেই যদি বিজ্ঞান বিভাগের বিভাজনটি উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময়েই করা হয় তাহলে ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞান এবং গণিত শেখার সময় প্রায় অর্ধেক হয়ে যাবে। আশঙ্কা আছে, তাদের যেটুকে শেখার কথা সেটুকু শিখবে না। কাজেই অল্প সময়ে প্রয়োজনীয় সবকিছু শেখানোর জন্য খুবই যত্ন করে শিক্ষাক্রমটি দাঁড়া করতে হবে। আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যেন উচ্চমাধ্যমিক পড়া শেষ করার পর তাদের প্রস্তুতিটি কোনোভাবেই আগের থেকে কম না হয়। যদি নতুন শিক্ষাক্রম দিয়ে আমরা আগের থেকে দুর্বল শিক্ষার্থী তৈরি করে উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠাই তাহলে সেটা মেনে নেয়া খুব কঠিন।

আমরা সবাই জানি আমাদের লেখাপড়ার বিষয়টিতে এখনও নানা ধরনের সমস্যা আছে। দেশের সবাইকে নিয়ে সেই সমস্যার সমাধান করতে হবে, আমরা যেন কখনোই কয়েকজন বেশি আত্মবিশ্বাসী মানুষের সিদ্ধান্ত দিয়ে একটি বড় পরিবর্তনে হাত না দেই! বঙ্গবন্ধু যাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন সেই ড. কুদরাত-এ-খোদাও কিন্তু তার কমিটির কিছু মানুষকে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেননি। সেই ইন্টারনেট-ইমেইলবিহীন সময়েও তিনি দশ হাজার মানুষের মন্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।

এখন তাহলে আমরা কেন অল্পে সন্তুষ্ট হবো?

লেখক: কথাসাহিত্যিক



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন