নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০১ পিএম, ৩০ জুন, ২০২০
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমি বহু বছর ধরে চিনি। আমরা ডব্লিউএইচও সভা এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বহুবার একসাথে অংশ নিয়েছি। সাভারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র আয়োজিত একটি সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন তিনি। এরপর পারিবারিক অনুষ্ঠানে আমি তাঁর মেয়েকে জানতে পারি। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আমি সবসময়ই খুব শ্রদ্ধা করি। তাঁর কাজ, উত্সর্গ এবং কৃতিত্বের জন্য তাকে নিয়ে আমি গর্বিতও বটে। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় কোনো সম্মেলন বা অনুষ্ঠানে বা যেকোনো উপলক্ষে দর্শকদের কাছে তাঁর এবং তাঁর অর্জন সম্পর্কে কথা বলে আমি সম্মানিত বোধ করি। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি, এর প্রথম কারণ হলো তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। ভারতের আগরতলায় বাংলাদেশ ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়েছিলেন তিনি। ড্রাগ প্রোগ্রামে তার অবদানের জন্যেও তাকে আমি শ্রদ্ধা করি। তাছাড়া ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য তাঁর সামাজিক স্বাস্থ্য বীমা সবচেয়ে উদ্ভাবনী কর্মসূচির একটি। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্বের প্রথম কয়েক জনের একজনও বটে। এই বীমার ফলে তার সেন্টারে মানসম্পন্ন স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। তিনি অনেক পুরষ্কার এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছেন। যাই হোক, আমরা অনেক সময় শ্রদ্ধার সাথে তাঁর কিছু দৃষ্টিভঙ্গি এবং কৌশল সম্পর্কে অসম্মতি জানাতেও সম্মত হয়েছি। যথাযোগ্য সম্মানের সাথে এবং অনেকটা আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধেই বলছি যে, গত কয়েক বছরে তার কার্যক্রমগুলো বিশেষ করে, টিভি টকশো, মিডিয়া ব্রিফিং এবং সদ্যই কোভিড-১৯ ডায়াগনস্টিক কিট নিয়ে মিডিয়ায় যা চলছে তাতে করে একজন জনস্বাস্থ্য নেতা এবং একজন বিজ্ঞানী হিসাবে ডা. জাফরুল্লাহর নিষ্ঠার বিষয়ে আমার সন্দেহ জাগছে। এর কারণগুলো আমি একটু ব্যাখ্যা করছি-
বিজ্ঞান এবং বাস্তবতা
১. কভিড -১৯ অত্যন্ত সংক্রামক। প্রতিরোধের যথাযথ ব্যবস্থা ছাড়া যেমন- বাড়িতে থাকা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বা বাইরে গেলে মাস্ক ব্যবহার না করলে একজন সংক্রমিত ব্যক্তি গড়ে আরও দুই থেকে তিন জন সুস্থ ব্যক্তিকে আক্রান্ত করতে পারে। এটি সাধারণ ফ্লুর চেয়ে দ্বিগুণ সংক্রামক।
২. ভাইরাসটি ছড়ানোর সময়কাল হলো ১৪ দিন পর্যন্ত। এই সময়কালে কোনও লক্ষণ ছাড়াই ভাইরাসটি খুব সহজে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি সংক্রামিত লোকদের অন্যকে সংক্রামিত করার ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করে। করোনার বাহক কোন উপসর্গ দেখা দেওয়ার ৪৮ ঘণ্টা আগেই ভয়ানকভাবে এটি ছড়িয়ে দিতে পারে। অতএব, যাদের হালকা সর্দি-কাছি ছে কেবল তারাই এই ভাইরাস ছড়াতে পারে, এমনটা নয়।
৩. আমি যদি সঠিক হই, তবে বাংলাদেশে যাদের লক্ষণ রয়েছে বা যাদের কনট্যাক্টে এসেছেন তাদের সবারই পরীক্ষা হয়। পরীক্ষার সুবিধা এবং ক্ষমতা বাংলাদেশে সীমিত। তাই এমন অনেকেই থাকতে পারেন যারা সংক্রমিত, কিন্তু পরীক্ষা হচ্ছে না। অতএব এমন অনেকেই থাকতে পারেন যারা লক্ষণ উপসর্গ ছাড়াই আমাদের মাঝে ঘুরছেন। তারা অবচেতনভাবেই এই রোগটি ছড়িয়ে দিচ্ছেন।
৪. সংক্রমণের হার (যারা পরীক্ষায় পজিটিভ হয়েছেন) ২০-২৩% এর মধ্যে থাকাটা এটাই ইঙ্গিত করে যে, বাংলাদেশে বিস্তৃত আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। অনুমান করা হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ করোনার বাহক আছেন, যারা পরীক্ষার আওতায় আসছেন না। করোনা প্রতিরোধের জন্য যে নির্দেশনাগুলো রয়েছে, তা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণই মানছে না বা তাদের মানতে বাধ্য করা যাচ্ছে না, বা কোনো কারণে তা মানাতা সম্ভব হচ্ছে না। এই বাস্তবতাগুলো সমক্রমণ নিয়ন্ত্রণকে আরও কঠিন করে তোলে।
৫. বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কৌশল হলো পরীক্ষা, ট্রেস এবং বিচ্ছিন্নতা। ডব্লিউএইচও দেশগুলোকে সর্বাধিক নির্ভুল ডায়াগনস্টিক কিট দিয়ে পরীক্ষার ক্ষমতা বাড়াতে পরামর্শ দিচ্ছে। ডায়াগনস্টিকস কিটের করোনা শনাক্তকরণের সক্ষমতার কমতির ফলে বহু মিথ্যা নেগেটিভ কেস দেখা দেবে। এটা উপসর্গ সহ এবং উপসর্গ ছাড়া সব ধরনের মানুষের জন্যই কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, আইসোলেশনে নেওয়া এবং বিচ্ছিন্নতাকরণকে আরও কঠিন করে তুলবে। এর ফলে সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়বে। বহু মিথ্যা পজিটিভ কেসের পাশাপাশি বহু মিথ্যা নেগেটিভ কেসও দেখা দেবে। ভুলভাবে যাদের পজিটিভ বলা হবে, তাদের সেবা দিতে গিয়ে দেখা যাবে সত্যিকারের পজিটিভ কেসের চিকিৎসা সেবা দেওয়া আরও কঠিন হয়ে পড়বে। এই পুরো বিষয়টিই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বোঝা আরও বাড়িয়ে তুলবে। রাষ্ট্রের এবং ব্যক্তিপর্যায়ে আর্থিক বোঝা বৃদ্ধির পাশাপাশি এটা অনেকের মানসিক চাপও বাড়াবে।
উপরের এই বাস্তবতা বিবেচনা করে, পরীক্ষার কিটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেশকে অবশ্যই যত্নবান হতে হবে। কোভিড-১৯ ডায়াগনস্টিক কিটগুলোর অবশ্যই সঠিকভাবে কেস সনাক্তকরণে উচ্চ সংবেদনশীলতা এবং সুনির্দিষ্টতা থাকা উচিত। যাতে করে এটা স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক বোঝার পাশাপাশি কোভিড-১৯ সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণ করতেও সহায়তা করে। অন্যদিকে নিম্নমানের পরীক্ষার কিটগুলো ভ্রান্ত সুরক্ষা দেবে। সেই সঙ্গে জনসাধারণের আস্থা এবং সরকারের প্রচেষ্টাকেও ক্ষুণ্ন করবে। যার আর্থ-সামাজিক পরিণতি হবে ভয়াবহ।
আমি সেই প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু কথা বলি যেটা কোনও চিকিত্সা ডিভাইস বা ডায়াগনস্টিক টেস্ট কিট বাছাই এবং নিবন্ধনের জন্য ডব্লিউএইচও, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান এবং বহু দেশ সুপারিশ করেছে-
১. পরীক্ষা কিটের সংজ্ঞা
পরীক্ষা কিটের বিবেচিত বিষয়গুলোর মধ্যে থাকতে হবে- কী রোগ বা কন্ডিশন শনাক্ত করবে, একক পরীক্ষা বা একটি অ্যালগরিদম প্রয়োজন কিনা; এবং পরীক্ষাগুলো একটি গুণগত বা পরিমাণগত ফলাফল প্রদান করতে পারে কিনা। এছাড়াও সর্বোত্তম ক্লিনিকাল ইউটিলিটির জন্য, অবশ্যই পরীক্ষার স্থানটি বিবেচনা করতে হবে (বৃহৎ পরীক্ষাগার নাকি ছোট স্বাস্থ্য কেন্দ্র); এবং এন্ড ইউজার (ভাল প্রশিক্ষিত ম্যাবরেটরি টেকনিশয়ান নাকি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী দরকার হবে)।
২. মার্কেট রিভিউ
প্রস্তাবিত পরীক্ষার কিট স্পেসিফিকেশনে প্রয়োজনীয় নমুনার ধরণের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে; পরীক্ষার অপারেটিং শর্তসমূহ; অতিরিক্ত কী কী সরঞ্জাম প্রয়োজন; এবং কিটটি কতদিন ব্যবহার করা যাবে।
৩. নিয়ন্ত্রক অনুমোদন
কিটের প্রি কোয়ালিফিকেশন নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা উচিত-
- পণ্য অ্যাপ্লিকেশন পর্যালোচনা; পণ্য পরীক্ষাগার মূল্যায়ন; উত্পাদন সাইট পরিদর্শন।
পরীক্ষার পারফরম্যান্স এবং উত্পাদন মানের দুটোই মূল্যায়ন করতে এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।
৪. অপটিমাল ডায়গনস্টিক আক্যুরেসি
আদর্শগতভাবে একটি পরীক্ষার পারফরম্যান্স সর্বোত্তম কার্যকারিতা নির্দেশ করে। এই ধরনের মূল্যায়ন কেবলমাত্র পরীক্ষার ডায়াগনস্টিক নির্ভুলতার জন্যই নয় তবে এর রিপিট্যাবিলিটি, পুনঃউৎপাদন এবং ব্যাপক হারে পণ্য ব্যবহার করা যাবে কিনা সেটা সম্পর্কেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারে। এসব তথ্য ব্যবহারকারীদের বাস্তব জীবনে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে পরীক্ষা কিট নির্বাচন করতে সক্ষম হবে কিনা তা বুঝতে সহায়তা করে।
৫. প্র্যাকটিসে ডায়াগনস্টিক নির্ভুলতা
ভিট্রো ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার প্রকৃত কর্মক্ষমতা এবং তাদের ব্যবহারের সহজতা উভয়ই নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিবেচনা করা উচিত। সর্বশেষ ব্যবহারকারী স্তরের মূল্যায়ন বাস্তব জীবনের পরীক্ষার কার্যকারিতা এবং গুরুত্ব প্রকাশ করতে পারে।
৬. মনিটরিং পারফর্মেন্স
গুণমান নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা পরীক্ষা এবং শেষ ব্যবহারকারীদের তদারকি নিয়মিত হওয়া উচিৎ এবং নথিভুক্ত করা উচিত। দীর্ঘমেয়াদী গুণগত নিশ্চয়তার আরেকটি উপাদান বিপণন পরবর্তী নজরদারি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) এর টেস্ট কিট মূল্যায়ন কমিটি গণস্বাস্থ্যের কিট সুপারিশ করেনি এবং কম সেন্সিটিভিটি (১১-৪০%) পেয়েছে শুনে শয্যাশায়ী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন, ‘কী লজ্জা!’
বিএসএমএমইউ এর মূল্যায়নের ফলাফলের ভিত্তিতে কিটের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তটি কি সত্যিই লজ্জাজনক ছিল? ডা. চৌধুরী যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার করোনা পরীক্ষার কীটের বাছাই ও নির্বাচন প্রক্রিয়ার সাথে একমত হন তবে আমি তাকে শ্রদ্ধার সাথে নিম্নলিখিত প্রশ্নগুলো করতে পারি-
১. গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিটটি উপরের প্রাথমিক পাঁচটি ধাপ কি পেরিয়েছিল? যদি তা হয় তবে সেই তথ্য প্রকাশ্যে পাওয়া যাচ্ছে কি?
২. অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডি টেস্টিং বা উভয়ই সেটা সংজ্ঞায়িত করার ব্যাপারে কেন মিক্স আপ ছিল?
৩. আমি প্রিন্ট মিডিয়া থেকে জেনেছি যে কোনও সরকারী কর্মকর্তার উপস্থিতি ছাড়াই ডঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী প্রাথমিকভাবে আমেরিকার সিডিসিতে পরীক্ষার কিট সরবরাহ করেছিলেন। আমরা কি সিডিসি, মার্কিন মূল্যায়ন রিপোর্ট পেয়েছি?
৪. তিনি মিডিয়াকে বলেছিলেন যে তিনি নিজের কিটস রেজিস্ট্রেশন করতে কাউকে কোনও টাকা দেবেন না! একটি টিভি টকশোতে তিনি তার অর্থ কী তা বোঝাতে ব্যর্থ হন এবং বার বার ইতস্তত করতে থাকেন যে, নিবন্ধন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হবে বা ব্যয় খুব বেশি হবে বলেই আইসিডিডিআরবি বা বিএসএমএমইউকে কিট সরবরাহ করতে রাজি হননি কিনা।
একজন জনস্বাস্থ্য নেতা হিসাবে তিনি কি জনগণকে নিম্ন সংবেদনশীল টেস্ট কিট ব্যবহারের ফলে বিপুল সংখ্যক মিথ্যা পজিটিভ কেস তৈরি করতে এবং মানুষের জীবনকে বিপদে ফেলতে পারেন? সেটাও আবার শুধু এই কারণে যে, কিট মূল্যায়নের প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল বা বিলম্বিত হবে? সরকার যদি তার কিটের দাবির সাথে একমত হত এবং প্রয়োজনীয় মূল্যায়ন না করত, তবে কীভাবে এটা বিজ্ঞান, উদ্ভাবন, পণ্য বিকাশ এবং এর বিশ্বব্যাপী আস্থা অর্জনে বাংলাদেশকে সহায়তা করতো?
৫. গণস্বাস্থ্যের কিট ব্যবহার করে তার পজিটিভ রেজাল্ট আসাটাকে তিনি কিটের যথার্থতা বলে প্রমাণ করছেন? তার পরীক্ষাটা কি তার কিটের ১১-৪০% সংবেদনশীলতার মধ্যে পড়তে পারে না?
আমি সবসময় আমার দেশের যে কোনও উদ্ভাবন এবং বিকাশের জন্য গর্ববোধ করি। উন্নত স্বাস্থ্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকারের পাশাপাশি এদেশের অনেক প্রতিষ্ঠান, এনজিও এবং সুশীল সমাজের কাছ থেকে বিশ্ব অনেক কিছু শিখতে পারে। আমি জানি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আন্তরিকতার সাথে বাংলাদেশকে মহামারী কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য সর্বোত্তমভাবে অবদান রাখতে চেয়েছিলেন। একইভাবে, চীন থেকে কাঁচামাল আনতে সরকার আন্তরিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং দ্রুত ও ব্যাপকভাবে এই কিট ব্যবহার করে কম খরচে বেশি সংখ্যক মানুষকে পরীক্কখার আওতায় আনার প্রত্যাশা করছিল।
দুঃখের বিষয়, সমস্ত কঠোর পরিশ্রম এবং আন্তরিক প্রচেষ্টা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল দেয় নি! আমি বলব না যে এটি ব্যর্থতা। আমাদের সকলকে অবশ্যই একমত হতে হবে ভুল টেস্ট কিট কোনো সমাধান নয়। একটি ভুল টেস্ট কিট নির্বাচন করে সরকার মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে না এবং জাতীয় অর্থনীতিকে বিপদে ফেলতে পারে না।
আমি জানি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছিলেন সরকার ‘অন্ধকার ঘরে একটি কালো বিড়াল’ ধরার চেষ্টা করছে। কেন এই জাতীয় মিডিয়া সেনসেশন বিজ্ঞান এবং এর বিধিবিধানের প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা করছেন! বিশ্বের অনেক সংস্থাই টেস্ট কিট তৈরিতে বিনিয়োগ করে এবং অনেক সময়ই সফল হয় না। মানসম্পন্ন অ্যান্টিবডি টেস্ট কিট না থাকার কারণে যুক্তরাজ্য তার অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় অনেক বেশি বিলম্ব করেছে।
কোনো মিডিয়া সেনসেশন বা কেবল আত্মপ্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া কারও সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা উচিৎ নয়, যখন কিনা এর সঙ্গে জনগণের জীবন ও দুর্ভোগ জড়িত থাকে।
আমি একমত যে, ভুল হতে পারে। এ থেকে অবশ্যই শিক্ষা নেওয়া উচিৎ। একটি সুন্দর বর্তমান এবং ভবিষ্যতের জন্য আমাদের অতীতের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ তার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে কোভিড -১৯ এর বিধ্বংসী অভিজ্ঞতা এবং বিশাল দুর্ভোগের বিষয়ে যা বলেছিলেন, আমি সেটাই এখানে তুলে ধরছি-
“আমরা আমাদের দেশে যা করেছি তাতে আমরা গর্বিত হতে পারি। অবশ্যই এই চ্যালেঞ্জটি আমাদের দুর্বলতা, অন্য অঞ্চলের উপর আমাদের নির্ভরতা প্রকাশ করে দিয়েছে। একই সঙ্গে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর জটিলতা এবং আমাদের সামাজিক ও আঞ্চলিক বৈষম্যও সামনে নিয়ে এসেছে। আমি এই সমস্ত কিছু থেকেই শিক্ষা নিতে চাই।’
আমাদের সবারও কি এ রকম আত্মপোলব্ধি এবং বিনয় প্রকাশ করে আত্মপ্রচারণা এড়ানো উচিত নয়? আমাদের লক্ষ্য অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং জীবন বাঁচানো। আমাদের চিকিৎসা পেশাজীবি, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং বিজ্ঞানীদেরও অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উপযুক্ত প্রমাণ দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
ডা. চৌধুরী, স্বাস্থ্য ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে আপনার অবদান উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ ও এদেশের জনগণের এখনও আপনাকে দরকার ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী! আমরা আপনার প্রতি আমাদের আস্থা রাখতে চাই। আমি কোভিড -১৯ থেকে আপনার দ্রুত এবং সম্পূর্ণভাবে মুক্তির জন্য প্রার্থনা করছি।
লেখক: সিনিয়র স্পেশালিস্ট, লিভারপুল স্কুল অব ট্রপিকাল মেডিসিন, যুক্তরাজ্য।
সাবেক পরিচালক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
থাইল্যান্ড ও নামিবিয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক প্রতিনিধি।
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।