নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:২২ পিএম, ০৩ জুলাই, ২০২০
পৃথিবীর সব দেশেই শিল্পের প্রতিষ্ঠা ও বিকাশের জন্য লাগে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ী, জমি, অর্থ, শ্রমিক, জ্বালানী, পরিবহণ ব্যবস্থা, পরিসেবা ব্যবস্থা,ইত্যাদি। আধুনিক মানের মাঝারী ও ভারি শিল্প প্রতিষ্ঠায় জ্বালানি হচ্ছে অন্যতম প্রধান উপাদান। তাই দেশের শিল্প বিকাশে বিভিন্ন উপায়ে জ্বালানীর সংস্থান করা হয়ে থাকে যার মধ্যে কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ অন্যতম সস্তা। তাই গোটা বিশ্বের জ্বালানীর প্রায় ৩৮.৩ ভাগ আসে কয়লা উৎপাদিত বিদ্যুৎ থেকে। যার ৭৮% উৎপাদন করে থাকে চায়না, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান, মালয়েশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলংকার মত দেশগুলো।
বাংলাদেশ কেন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হাতে নিয়েছে? তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেখানে উৎপাদন খরচ হয় ৬ থেকে ১২ মার্কিন ডলার প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ। অন্য দিকে কয়লার মূল্য সেখানে ১ থেকে ২ ডলার ( মার্কিন ) প্রতি মিলিয়ন বিটিইউ। এখানে উল্লেখ করা যায় যে, ১ হর্সপাওয়ার ৭৪৬ ওয়াটের সমান যা প্রতি মিনিটে ৩৩,০০০ ফুট–পাউন্ডের সমান । ১০৫৫ জুল = ১ ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (বিটিইউ) যা ১ ঘণ্টায় ১ কিলোওয়াট শক্তির সমান।
বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা ব্যবহারের আরেকটি কারণ হচ্ছে বর্তমান ব্যবহারের হিসাবে, জীবাশ্ম-জ্বালানিগুলির মধ্যে তেল, কয়লা ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ভাণ্ডার নিঃশেষ হবে আনুমানিক যথাক্রমে ৩৫, ১০৭ এবং ৩৭ বৎসরে । এর অর্থ, কয়লা পাওয়া যাবে ২১১২-সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ২০৪২-সালের পর এটি থাকবে একমাত্র জীবাশ্ম-জ্বালানি। অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, বায়ু থেকে বিদ্যুৎ তৈরির সম্ভাবনা বাংলাদেশে নেই। বিদ্যুতের নতুন উৎসের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত আগামীতে কয়লাই হচ্ছে আমাদের একমাত্র ভরসা।
এসব সর্বজ্ঞানীদের অভিযোগ কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পরিবেশ দূষণ হবে। কিছু দূষণ যে হবে তাতে কোনই সন্দেহ নেই। যে কম্পিউটার বা মোবাইল থেকে এই প্রতিবাদ লিপি পাঠানো বা সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে তার একটি ছোট্ট চিপস ১ ঘণ্টায় কয়েক লক্ষ পানি দূষিত করে ফুড চেইন এ ঢুকে পড়তে পারে। যে এসি রুমে বসে কোল্ড টি খেতে খেতে বিবৃতি দিচ্ছেন তসেই এসি বা রেফ্রিজারেটরে কি পরিবেশ দূষণ করে না? করোনা কালে সে কি আপনার ইমিউন সিস্টেম দুর্বল করছে না? সভ্যতার কোন অনুষঙ্গ দূষণ করে না সেটা হিসাব করা তাঁদের জন্য খুব জরুরী।
২০১১-সালে যুক্তরাজ্যের জনৈক non-profit- Carbon Tracker তার রিপোর্ট- Unburnable Carbon-এ বলছে যে, ২-ডিগ্রী সেলসিয়াস সীমার মধ্যে বিশ্বের গড় তাপমাত্রাকে রাখতে হলে বর্তমান শতাব্দীর প্রথমার্ধে জীবাশ্ম-জ্বালানিগুলি থেকে কার্বন-নিঃসরণ সীমায়িত রাখতে হবে ১,৪০০ গিগা-টনের মধ্যে । যেহেতু ২০১৩-সালের মধ্যে আমরা ৪০০ গিগাটন নিঃসরণ করে ফেলেছি, ২০৫০-সালের মধ্যে আমাদের নিঃসরণের সীমা হল ১,০০০ গিগাটন।
আলট্রা-সুপার-ক্রিটিক্যাল ইউনিটে ( গ্রস ) প্ল্যান্ট-কার্যদক্ষতা হয় ৪৬-শতাংশের মতন এবং উন্নত আলট্রা-সুপার-ক্রিটিক্যাল ইউনিটে ( গ্রস ) প্ল্যান্ট-কার্যদক্ষতা হয় ৫০-শতাংশের মতন। চাপ- ও তাপ- বৃদ্ধি হলে কার্যদক্ষতা বাড়ে, কয়লার প্রয়োজন হয় কম এবং ফলে, কমে যায় কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ। দেখা যাচ্ছে, আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল CO2 বন্দীকরণ-সহ প্রযুক্তিতে কার্বন-নিঃসরণ ও বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি মূল্য সব থেকে কম এবং উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার সত্ত্বেও প্ল্যান্টের সার্বিক মূল্য খুব বেশি নয় ।
বাংলাদেশে পরিকল্পনাধীন ও বাস্তবায়নাধীন কয়লাভিত্তিক মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে-মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, রামপাল, বাগেরহাট; আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট, মাতারবাড়ি, কক্সবাজার; মহেশখালী, বিপিডিবি ও সিঙ্গাপুর জয়েন্ট ভেঞ্চার; মহেশখালী, কক্সবাজার; মহেশখালী, বিপিডিবি ও টিএনবি মালয়েশিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চার; মহেশখালী, বিপিডিবি ও সিএইডিএইচকে, চায়না জয়েন্ট ভেঞ্চার; মহেশখালী, বিপিডিবি ও কেপকো, কোরিয়া জয়েন্ট ভেঞ্চার; ও পায়রা, পটুয়াখালী, এনডব্লি ও পিজিসিএল এবং সিএমসি, চায়না জয়েন্ট ভেঞ্চার।
মাতাবাড়ি আলট্রা-সুপার-ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অর্থায়ন বন্ধে জাপানকে ১৮ দেশের ৪৪ সংগঠন চিঠি দিয়েছে।যদিও একই এলাকায় আরও ৬টা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, চীন, মালয়েশিয়া, কোরিয়ান সহায়তায়। তাঁদের কিছুই বলা হচ্ছে না। শুধু চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বাংলাদেশে সর্ব বৃহৎ দ্বিপাক্ষিক দাতা সংস্থা জাইকা, জাপানকে। কারণ জাপানী সাহায্য বন্ধু হলে বাংলাদেশের উন্নয়নের চাকা থমকে যাবে।
বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ বিষয়ক কর্মজোট গত মাসের মাঝামাঝি ই মেইলে পাঠানো এক চিঠিতে এ দাবি জানায়। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোটেগি এবং জাইকা প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিটায়োকার কাছে পাঠানো ওই চিঠিতে মাতাবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্পে মানবাধিকার লঙ্ঘন, স্থানীয় পরিবেশ বিপর্যয়সহ নানা বিষয়ে উদ্বেগ জানানো হয়।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে থ্রি ফিফটি ডট অরগ, গ্রিনপিস, ফ্রেন্ডস অব দ্য আর্থ, এনজিও ফোরাম অন এডিবি, অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনাল, জ্যাকসেস জাপান, ক্লিন বাংলাদেশ। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা (ক্যাপাসিটি) এখন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্থাপিত সক্ষমতার মাত্র ৪৩ শতাংশ ব্যবহৃত হচ্ছে। এটা যে এই মহামারির কারণে তা তাঁরা উল্লেখ না করেই বিবৃতিতে সই করেছেন। তাঁরা মনে করেন যে, জাপান সরকার এর কিছুই জানে না। এর সাথে পরিবেশ দূষণ সহ নানান খোঁড়া যুক্তি তাঁরা উত্থাপন করেছে।
একজন উন্নয়ন কর্মী বলেন, বাংলাদেশ যখন উন্নয়নের মহাসড়কে উঠার পরে দুনিয়াজোড়া করোনা-মহামারীর অংশ হিসেবে অন্যান্য উন্নত দেশের মত চরম নাকাল ঠিক তখন একটি বিশেষ গোষ্ঠী আবার সেই পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বাতিলের ষড়যন্ত্রের মত নতুন নোংরা খেলায় মেতেছেন। একই ভদ্রলোকের নেতৃত্বে আশে পাশের দেশের বেশ কিছু ভুঁইফোঁড় সংগঠন মিলে জাপানী সাহায্যে তৈরি মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য জাপান সরকারকে লিখিত দরখাস্তের মাধ্যমে চাপ দিচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সেই উন্নয়ন কর্মী আরও বলেন, এরা কি তাঁরা যারা ২০১৬ সালে ১ জুলাই হোলি আর্টিজান রেস্তোরাটিতে জঙ্গিদের হামলায় ১৮ জন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জন হত্যায় মদদ দেন, যাদের মধ্যে ৭ জন ছিলেন জাইকার বিশেষজ্ঞ! সে সময় জাপান সরকার বলেছিল যে, “এই অবস্থায় বাংলাদেশে সাহায্য বন্ধ করা মানে ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠীর স্বার্থে কাজ করা, সন্ত্রাসীদের কাছে হেরে যাওয়া; যা তাঁরা কখনোই করবেন না।“ এবারেও তাই হবে জাপান কখনোই মাতাবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজে অর্থায়ন বন্ধ করবে না বলে জাপানের কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে। কারণ বিবৃতিদাতারা দেশ বিরোধী, উন্নয়ন বিরোধী মানুষ, এরা বিশেষ সুবিধার বিনিময়ে সব করতে পারে। জাপান বিশেষ সুবিধা দেয় না বলে এরা জাপানের বিরুদ্ধে লেগেছে, যদিও একই কাজ করছেন অন্যরাও। তাহলে তাঁদের কাছে কী তাঁরা কিছু পেয়েছেন! প্রশ্ন এসেই যায়।
এখানে উল্লেখ্য যে, আমদানি করা কয়লা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হয় প্রতি ইউনিট ৬ টাকার মত। পক্ষান্তরে আমাদের দেশীয় খনির কয়লা ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা গেলে সেই উৎপাদন খরচ হবে মাত্র ৩ টাকা। এতে দেশের মানুষ যেমন কম খরচে বিদ্যুৎ পাবেন, তেমনি দেশীয় সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
কিছু দিন আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালের হিসাব মতে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় ন্যাশনাল পার্কের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ভিয়েতনামের হ্যালং বে (উইনেস্কো ঐতিহ্য) এর মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ১২০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট। কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট যদি এতই দূষণ সৃষ্টি করতো, তাহলে জাপানের মতো দেশ নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিতো না। ক’দিন আগে জাপান সরকার ৭০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। চীনে প্রায় ৩০০ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ কাজ চলছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বা দূষণ ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কোনো কারণ সুদূর আমেরিকায় ঘটলে, তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। তাহলে আমেরিকা, জাপান, চীন, ভারতকে বলুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ রাখতে।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।