নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৫৯ এএম, ০৭ জুলাই, ২০২০
পদ্মানদীর ধূধূ বালুচরে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বসতি। কেউবা নিজের জমিতে, কেউবা অন্যের জমিতে। সকল বাড়িতেই সামর্থ্য অনুযায়ী দুই/একটি গরু বা ছাগল লালন-পালন করছে। কৃষিকাজের আধুনিকতায় গৃহস্থরা এখন আর গরু দিয়ে হালচাষ করে না। যারা নিজেদের জমিতে বাড়ি করেছেন, আবাদী জমিজমা রয়েছে, তারা শখের বসে বা দুধ খাওয়ার জন্য দুধেল গাভী পুষেন। যারা সেই অবস্থায় নেই, তাদের অনেকেই কষ্টার্জিত অর্থের কিয়দাংশ সঞ্চয় করে একটি ছোট ষাঁড় বাছুর ক্রয় করে খুবই আদর-যত্নের সাথে লালন-পালন করেন। উদ্দেশ্য, কোরবানীর হাটে ক্রেতাসাধারণ সুস্থ, সুন্দর পশু ক্রয় করতে ভীড় জমাবেন, আর পদ্মাচরের গরীব পরিবারটির অতি আদরে লালিতপালিত পশুটি বিক্রয় করে, ঐ টাকা দিয়ে বাড়িতে টিনের ঘর তুলবেন, মেয়ের বিয়েতে খরচ করবেন, আরও কত কি স্বপ্ন রয়েছে।
গ্রামের অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক, আরও কয়েকজন বেকার বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ায়। হঠাৎ পরিচয় হয় স্থানীয় প্রানীসম্পদ কর্মকর্তাদের সাথে। ধারনা পায় গরু পালনের, আশ্বাস পায় সরকারি সহযোগীতা পাবে গরু মোটাতাজাকরণের। তিন মাস, ছয় মাস বা এক বছর লালনপালন করে কোরবানীর হাটে ভাল দামে বিক্রয় করবে। বেকারত্ব ঘুচাবে। কর্মহীন যুবকেরা খুঁজে পেয়েছে বেঁচে থাকার উপায়। শুরু করেছে, গরু মোটাতাজকরণ খামার।
গ্রামের গরীব কৃষকও গোয়ালের ষাঁড় বাছুরটা বছর দুই যাবত অতি যত্ন সহকারে লালনপালন করছে। দেখতে বেশ নাদুস-নুদুস হয়েছে। কোরবানীর হাটে বিক্রয় করে একটু বেশী দাম পাবে। সেই দাম দিয়ে বন্ধক থাকা জমিটা ছাড়াবে।
ছোট ছোট গরু ব্যবসায়ীরা গ্রামের ৫০-৬০জন গরীব কৃষককে গরু কিনে বর্গায় পালতে দিয়েছে। গরু মোটাতাজকরণ প্রকল্পের অধীনে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এই টাকা বিনিয়োগ করেছে। কোরবানীর হাটে গরু বিক্রয় করে ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করবে, মুনাফা করবে, ঐ বর্গাদার কৃষক ও গরু ব্যবসায়ী পরিবার পরিজন নিয়ে মহা আনন্দ নিয়ে ঈদ করবে।
সরকারি হিসাবে গত বছর বাংলাদেশে প্রায় ৫,৫০,০০০ বেকার যুবক, গরীব কৃষক ও খামারী এই প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত ছিল। গত বছর গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ প্রকল্পের আওতায় কোরবানির জন্য ঢাকা সিটি করর্পোরেশনসহ সারাদেশে গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল সর্বমোট ১,১৭,৮৮,৫৬৩ টি।
এবছরও এ কার্যক্রমের আওতায় মাঠ পর্যায়ের রিপোর্ট অনুযায়ী কোরবানিরযোগ্য ৪৫ লক্ষ ৩৮ হাজার গরু মহিষ, ৭৩ লক্ষ ৫৫ হাজার ছাগল ভেড়াসহ সর্বমোট ১,১৮,৯৭,৫০০টি গবাদিপশুর প্রাপ্যতা আশা করা যাচ্ছে। এবারও কমবেশী প্রায় ৫-৬ লক্ষ বেকার যুবক, গরীব কৃষক ও খামারী এই কাজে জড়িত রয়েছে।
গত কয়েকদিন পূর্বে সচিবালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সাথে আলাপ হলো। করোনার কারণে নিয়মিত অফিস করেন না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সপ্তাহে ২/৩ দিন অফিসে আসেন। খুবই সতর্কতার সাথে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলাফেরা করেন। তার সাথে আলাপ প্রসঙ্গে গত রমজান, ঈদ , আগামী কোরবানী ঈদ ইত্যাদি বিষয়েও আলোচনা করা হলো। পরিবার পরিজন নিয়ে ঘরের ভিতরেই ঈদ-উল-ফিতর উদযাপন করেছেন। ঈদের নামাজ ঘরেই আদায় করেছেন। কোরবানী ঈদের বিষয়ে জানালেন, গতবার ছেলেকে সাথে নিয়ে গরুর হাটে গিয়েছেন, পছন্দমত গরু কিনেছেন, কোরবানী করেছেন। এবার আর সম্ভব হবে না। করোনার কারণে গরুর হাটে যাবেন না। প্রশ্ন করলাম দৈনন্দিন বা নিত্য প্রয়োজনীয় মাছ-তরকারী কিভাবে কি করেন? উত্তরে বললেন, প্রয়োজনের তাগিদে স্থানীয় বাজারে মাঝে মধ্যে গিয়ে থাকেন।
করোনার কারণে সাধারনত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ আদায় করা হয় না, তবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে সাপ্তাহিক জুম্মা নামাজ মহল্লার মসজিদে আদায় করি। এতে মসজিদ কমিটির সাথে মসজিদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলা যায়, এলাকার মুরব্বীদের সাথে মত বিনিময় হয়, এই সুযোগে সংগঠনের নেতাকর্মীদের সাথেও দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয়। গত শুক্রবার জুম্মা নামাজ আদায় করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম, একজন সিনিয়র মুসল্লী পেছন থেকে সামনের কাতারে আসলেন। আমি বিনয়ের সাথে বললাম, এই ফাঁকা জায়গায় দাঁড়ানো যাবে না, স্বাস্থ্যবিধি লংঘন হবে। মসজিদের সম্মানিত ইমাম সাহেব উত্তরে বললেন, সামনেই বাজার রয়েছে, খোঁজ নিন, সকাল-সন্ধ্যা কোন ব্যক্তি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কি?
এবার আসল কথায় আসি। জিলহজ্ব মাসের নির্দিষ্ট তারিখসমূহে, আল্লাহর আদেশে নিজ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)কে আল্লাহর জন্য কুরবানি করার হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ইচ্ছা ও ত্যাগের কথা স্মরণে, মুসলমানগণ আল্লাহ ভীতির অকাট্য পরিচয় দিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী হালাল ও সুস্থ পশু জবেহ করেন এবং জবেহকৃত পশুর মাংস, চামড়া গরীব আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ঈদ-উল-আজহার পূর্বে বিভিন্নভাবে এই পশুগুলো বেচাকেনা হয়ে থাকে। তদ্রুপ বাংলাদেশেও গরুর হাট বসে। এছাড়া জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে অনলাইনে গরু ক্রয় করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। উপরোল্লেখিত সরকারি হিসাবমতে এবছর ৫-৬ লক্ষ বেকার যুবক, গরীব কৃষক ও খামারীর লালন পালন করা কোরবানির যোগ্য (সুস্থ এবং প্রাপ্ত বয়স্ক) সর্বমোট ১,১৮,৯৭,৫০০টি গবাদিপশু দেশের বিভিন্ন হাটে বা অনলাইনে বিক্রয় হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
গত ২৮ জুন আমি বাংলাইনসাইডারে লিখেছি, গবাদিপশুতে COVID-19 হয় না। আমি আরও উল্লেখ করেছি, WHO (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা)-এর ওয়েবসাইটে স্পষ্ট বলা আছে এখন পর্যন্ত গবাদিপশু, পোষা কুকুর- বিড়াল হতে এই নভেল করোনার (SARS COV-2) জীবাণু মানুষে ছড়ানোর কোন প্রমান পাওয়া যায়নি। Kansas State University Veterinary Diagnostic Laboratory-এর পরিচালক বলেছেন, “আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, বর্তমানে মানবদেহে সংক্রমণকারী SARS COV-2 এর সাথে গবাদিপশুর দেহের করোনা ভাইরাসের কোন সম্পর্ক নাই। গবাদিপশু COVID-19 এর জীবাণু বহন করে না এবং গবাদিপশু এই রোগ ছড়ানোর বাহক হিসাবেও কাজ করে না”। অর্থ্যাৎ SARS COV-2 virus মানুষ থেকে মানুষে সংস্পর্শ বা হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, গবাদিপশু এই ভাইরাস বহন করে না। অর্থ্যাৎ গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসলে COVID-19 রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নাই।
যদিও করোনার সংক্রমণরোধে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী দুই মিটার দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা রয়েছে, কিন্তু আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা ভিন্ন। মসজিদ ও অফিস-আদালত ব্যতীত বাকী প্রায় সকল ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে অনুসরন করা হচ্ছে না। আর যেহেতু গবাদিপশুর সংস্পর্শে আসলে COVID-19 রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নাই, সুতরাং সচেতনভাবে গরুর হাটে গিয়ে গবাদিপশু ক্রয় করতে ভীত হওয়ার কোন কারন নাই। এছাড়া অনলাইনেও কোরবানীর জন্য পছন্দনীয় পশু ক্রয় করার সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ও সাবেক সিনিয়র সচিব জনাব সাজ্জাদ হোসেন উল্লেখ করেছেন, সম্পদ এর সাথে দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ প্রত্যক্ষভাবে ৫০% পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত রয়েছে। প্রানীসম্পদ মন্ত্রনালয়ের তথ্যানুযায়ী স্থির মূল্যের ভিত্তিতে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ছিল ১.৪৭%। যা টাকার অংকে প্রায় ৪৩২১২ (১.৪৭%) কোটি টাকা। প্রাণিসম্পদ খাতে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩.৪৭%।
চলতি মূল্যে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে কৃষিজ জিডিপিতে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান ছিল ১৩.৪৬%। চামড়াসহ বিভিন্ন উপজাত পণ্য, মাংস রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনেও এ খাতের গুরূত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে শিল্পোন্নয়নের ফলে দ্রূত অর্থনৈতিক পরিধি বাড়ার কারণে জাতীয় অর্থনীতিতে আনুপাতিক হারে প্রাণিসম্পদ খাতের অবদান কমে আসলেও একক খাত হিসেবে এই খাতের পরিধি দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। জাতীয় রপ্তানি আয়ের প্রায় শতকরা ২.৪৯ ভাগ টাকা আসে বিদেশে চামড়া ও চামড়া জাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে।
বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী চামড়া শিল্পের বাৎসরিক প্রয়োজনীয় ১০ মিলিয়ন চামড়া অর্ধেকেরও বেশী সংগৃহীত হয় কোরবানীর ঈদে।
গত বছর কোরবানীর জন্য ১,১৭,৮৮,৫৬৩টি পশু বিক্রয় হয়েছে। এ বছর ১,১৮,৯৭,৫০০টি গবাদিপশু কোরবানী উপলক্ষে বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। যদি কোন কারণে এ বছর কোরবানীর জন্য প্রস্তুতকৃত গবাদিপশুগুলি বিক্রয় না হয় তবে, প্রত্যক্ষভাবে ৫-৬ লক্ষ বেকার যুবক, গরীব কৃষক ও খামারী ক্ষতিগ্রস্থ হবে। এবং বাংলাদেশের প্রানীসম্পদ ও চামড়াশিল্পে একটি বড় আঘাত আসবে।
হে ধর্মপ্রান মুসলমানগণ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর ইচ্ছা ও ত্যাগের কথা স্মরণে, আল্লাহ ভীতির অকাট্য পরিচয় দিয়ে আল্লাহ সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী হালাল ও সুস্থ পশু কোরবানী করুন। মনে রাখবেন এবারের কোরবানীর সাথে আপনার ওয়াজেব আদায়ের পাশাপাশি অনেক বেকার ও দরীদ্র মানুষের ভাগ্য জড়িত।
লেখক: ভেটেরিনারীয়ান, পরিবেশবিদ, রাজনৈতিক কর্মী।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।