নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০১ এএম, ০৮ জুলাই, ২০২০
সম্প্রতি প্রায় প্রতিটি পত্রিকায় কয়েকটি সংবাদ ছাপা হয়েছে যা হয়তো আমাদের অনেকের নজর কেড়েছে। সেগুলোর মাঝে- শহর ছেড়ে মানুষ এখন গ্রামে ফিরছে এবং সরকার রিজার্ভ থেকে ঋণ নিতে চাইছে- অন্যতম সংবাদ।
ঋণ এর কথা মনে হলে কিছু ছবি আমরা মনের পর্দায় ভেসে ওঠে। এর মাঝে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের ২০৩৯ নম্বর কক্ষের কথা মনে পড়ে। আমাদের প্রিয় শিক্ষক অধ্যাপক রওশনারা আপা এখানে আমাদের ভারতী দর্শনের ক্লাস নিতেন। তিনি এই ক্লাসে চার্বাক নামে একটি ভারতীয় দার্শনিক সম্প্রদায়ের কথা শোনাতেন। যাদের মিল আছে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিক এপিকিউরিয়ানদের সঙ্গে। কয়েক দিন আগে আমার এক সহকর্মী ওই এপিকিউরিয়ানদের লেখা বই চেয়ে অনুরোধ পাঠিয়েছেন। এই চার্বাক -এপিকিউরিয়ানরা যে নীতিদর্শন দিয়েছেন তা খুবই আনন্দদায়ক। তারা বলতেন - ঋণ করে হলেও ঘি খাও। তারা বলতো পান , সুপারি ও চুন মেশালে যেমন লাল রং হয়, তেমনি চেতনা বিভিন্ন পদার্থের রাসায়নিক ক্রিয়ার ফল। সুতরাং , তাদের কথা মানলে চিরন্তন সত্য বা নৈতিকতা বলে কিছু নেই- যেমন চিরন্তন নৈতিকতার কথা জার্মান নীতিদার্শনিক ইমানুয়েল কান্ট ভাবতেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার পর প্রায় গ্রামের বাড়িতে যেতাম। সকাল বেলায় রোদ উঠোনে না উঠতেই বাইরের মানুষের আগমন ঘটতো। মাতবর সাহেবের কাছে জানতে চাইলে, বলতো গ্রামের ছোট ভাইদের কথা। তারা নাকি ঋণ নিয়েছে - ক্ষুদ্র ঋণ বা মাইক্রো ক্রেডিট। যা আয় হয় তাতে সংসার চলে না। সুতরাং মাইক্রো ক্রেডিট !
তখন আরও মনে পড়তো মাইক্রো ক্রেডিট এর জনক ডক্টর ইউনুস এর কথা, আমার এক রুমমেটের কথা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল এরশাদের কথা। এরশাদ সাহেব চিন্তিত হয়ে পড়তেন যখন ঋণ এর জন্য বিশ্ব ব্যাংক প্যারিসে মিটিংয়ে বসতো।
আমার রুম মেট এর BCS এর ভাইভার কার্ড দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল থেকে সিঙ্গাইর উপজেলাতে গিয়ে তার কাছে শুনেছিলাম কিভাবে গ্রামীণ ব্যাংক তার মতো দরিদ্র তরুণকে ব্যবহার করে শোষণ করে। ক্ষুদ্র ঋণদাতারা আমার ভাইদেরকে শোষণ করছে দেখে ভালো লাগেনি। চেষ্টা করেছি ওরা যাতে সুদের হাত থেকে বাঁচতে পারে। সুদ দেয়া ও নেয়া পাপ। ভুলেই গেছে সবাই। আল্লাহর অশেষ রহমত আমাদের অনেকে এখনো সুদ মুক্ত জীবন যাপন করতে পারে।
বিশ্ব ব্যাংক আমাদেরকে নানা শর্তে লোন দেয়। সে সব শর্ত পূরণ করে আমরা কি উন্নয়ন করেছি তা নিয়ে গবেষণা করলেও তা প্রকাশ করা যাবে কিনা জানিনা। ওই সব উন্নয়ন তহবিল থেকে কয়েকটি হলুদ খাম এবং প্যাকেট বিরিয়ানি/চায়নিজ খাওয়া পেয়েছি। নিতে বা খেতে মন চায়নি। আশপাশের অভাবী মানুষদের দিয়ে দিয়েছি। কেমন জানি একটি পাপ বোধ তখন মনে জেগেছে।
তবে, বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব ব্যাংকে চ্যালেঞ্জ করে নির্মাণ করছেন পদ্মা সেতু। নিজের টাকায় নিজেদের উন্নয়ন। গর্বে ভরে আছে মন। নেত্রী আমাদের প্রাণের কথা বোঝেন। বিশ্ব দরবারে এখন আমরা ভিক্ষুকের জাতি নই। বঙ্গবন্ধু আমাদের ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা দিয়েছেন , প্রিয় নেত্রী আমাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেবেন বলে জাতি আস্থা রাখে।
কোরোনা ভাইরাস আমাদের নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। যে উন্নয়ন আমাদেরকে নিরাপত্তা দিতে পারে না - সে উন্নয়ন আমরা চাই কি? যে উন্নয়ন আমাদেরকে অপরের কাছে মাথা নিচু করে চলতে বাধ্য করে সে উন্নয়ন আমরা চাই কি? মানুষ গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। এটি কেন আনন্দর সংবাদ নয়?
গ্রাম হবে শহর। এটা যদি হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন তাহলে এই গ্রামে ফেরা আমাদের জন্য উন্নয়নের সোপান হতে পারে। গ্রামে ফেরাকে ভাটির টান না ভেবে, এটাকে গ্রাম উন্নয়নের জোয়ারে পরিনিত করা যায় কি?
আমার এক বন্ধু মিরপুর থাকে। তাকে প্রশ্ন করলাম মেট্রো রেলে কাজ কি চলছে। সে বললো খুব একটা না। আমার প্রশ্ন - মেট্রো রেলের মতো শহর উন্নয়নের জন্য কি রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া হবে? এখনোও কি একমাত্র ঢাকা নগর উন্নয়নই আমাদের স্বপ্ন?
যদি তাই হয় তবে “গ্রাম হবে শহর” একটি স্বপ্ন থেকে যাবে চিরদিন? তাহলে, আজ যেমন ৬৪টি জেলার মাঝে ১৭ জেলার হাসপাতালে ICU বেড আছে- তেমনি রয়ে যাবে আমাদের উন্নয়ন? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় তাড়াহুড়ো করে তাদের ১৫০০ কোটির সব গুলো হল নির্মাণ শুরু করেছে, যাতে আবার উন্নয়ন বন্দ হয়ে না যায়।
যে উন্নয়ন কেরানি গড়বার ক্ষেত্র বিস্তর ঘটায়, অথবা উন্নয়নকে কেদ্রীভূত করে তোলে, ন্যায় অধিকার বঞ্চিত জনপদের সংখ্যা বাড়িয়ে - সে উন্নয়ন কি টেকসই? ঢাকা ও তার আশপাশে যেভাবে উন্নত হয়েছে তা কি গ্রহণযোগ্য? সুষম উন্নয়ন কি একটি ভুল ধারণা? প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়া খুব সহজ নয়।
আমার সৌভাগ্য হয়েছিল একজন আরবান প্ল্যানারের সঙ্গে কাজ করবার। ৭০ দশকে তিনি চাকরি জীবনের প্রথম দিকে ছিলেন লন্ডন শহরের উন্নয়ন কাজে নিয়োজিত। পরে নগর পরিকল্পনা বিভাগে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৫ বছর শিক্ষকতা করেছেন। এখন অবসরে বসে উন্নয়ন ও পরিকল্পনার উপর একটি বই লিখছেন বিশ্বের সেরা শহরের পাশে বিশাল প্রশান্ত মহাসাগরের দিকে তাকিয়ে।
বরেণ্য এই নগর পরিকল্পনার অধ্যাপকের কাছে আমার প্রশ্ন ছিল - একটি পুরোনো শহরকে তিলোত্তমা করা ভালো- না কি নতুন একটি পরিকল্পিত শহর বানানো ভালো? তিনি বলেছিলেন - নতুন শহর বানানো ভালো। নগর পরিকল্পনা সম্পর্কের আলোচনায় তিনি আমাদেরকে Marshall Berman একটি বই পড়তে বলছিলেন। Marshall Berman “All That Is Solid Melts Into Air The Experience of Modernity” আধুনিকতার শ্রেষ্টতম বই হিসাবে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। আধুনিকীকরণের অভিজ্ঞতার একটি ক্যালিডোস্কোপিক যাত্রা, কোটি কোটি মানুষকে পুঁজিবাদী বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছিল এমন চঞ্চল সামাজিক পরিবর্তন, এটি শিল্প, সাহিত্য এবং আর্কিটেকচারে আধুনিকতার অন্বেষণকে আন্তরিকভাবে অন্তর্নিবেশ করে এবং বই আধুনিক চেতনার এক চকচকে অন্বেষণ (All that Is Solid Melts into Air is widely acclaimed as one of the greatest books on modernity. A kaleidoscopic journey into the experiences of modernization, the dizzying social changes that swept millions of people into the capitalist world, it dexterously interweaves an exploration of modernism in art, literature, and architecture and is a dazzling exploration of modern consciousness.). বইটি পড়ে মনে হয়েছে - পুরোনো শহরকে তেলতেলা না বানিয়ে নতুন শহর বানানো ভালো। পুঁজিবাদ বদলে দিয়েছিলো বিশ্বকে, আর এবার করোনা ভাইরাস বদলে দিয়েছে আমাদের ভাবনাকে। সেই বদলে দেয়া পৃথিবী নতুন করে সাজাতে “গ্রাম হবে শহর” একটি আদর্শ। গ্রামে ফেরাকে আমি তাই ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই। আর এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রামে হবে শহর ধারণাটি আমার ভালো লেগেছে। সেজন্য ঋণ করে হলেও ঘি খাও দর্শন সমর্থন করছি, পরাধীনতা বা দাসত্বকে নয়।
গতকাল এক ফেইসবুক বন্ধু একটি ছবি দিয়েছেন - ছবিটি ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়ে - ঢাকা - মাওয়া সড়ক। ছবিটি দেখে এবং সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত সংবাদগুলো দেখে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছে: রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া হবে কোন প্রান্তে উন্নয়নের জন্য - ঢাকা না মাওয়া প্রান্তে? অর্থাৎ, গ্রামকে শহরে উন্নয়ন, না কি ঢাকা শহরকে তিলোত্তমা করবার জন্য? খুব জানতে মন চায়।
উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে এক মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছিলাম - আপনার আসনটি একটি বিভাগীয় শহরে, আপনি কি এমন একটি হাসপাতাল করতে পারেন না(রাষ্ট্রীয় অর্থে) - যাতে ওই শহর থেকে আর কাউকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে না যেতে হয়। তিনি আমাকে ভুল বুঝেছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন ওনার নিজের টাকায় হাসপাতাল করতে বলছি। আমি স্বনির্ভর বিভাগীয় শহরের কথা বলছিলাম।আমি আরেক মন্ত্রীকে বলেছিলাম আপনার শহরে সবই আছে, কেবল বিমান বন্দরটি আন্তর্জাতিক নয়। তিনি আমার কথা বুঝে উঠতে পারেননি- কেন আন্তর্জাতিক বিমান ঢাকার বাইরে দরকার; সেটা যদি উনি বুঝতেন।
আরেক মাননীয় মন্ত্রীকে বলেছিলাম - স্যার আপনার শহরে জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চাইতে পারেন কি? তিনি খুব রেগে গিয়ে বলেছিলেন - আপনি কি আমাকে অর্ডার করছেন? আমি বলেছিলাম, স্যার আপনি আমার বাবার মতো।বাবাকে সন্তান কিছু বললে সেটা কি আদেশ হয়ে যায় ? জনগণ তাদের দাবি জানালে যদি আদেশ হয়ে যায়, তবে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নেয়! কোনো একজন সাবেক মন্ত্রীকে একজন নাগরিক একটি ভয়ের কথা বলেছিলেন ভালোবাসা থেকে। ওই মন্ত্রী মহোদয় সেটাকে বলেছিলেন তাকে নাকি হুমকি দেয়া হয়েছে। এভাবে যদি নাগরিকের বেদনাকে উল্টো বোঝা হয় তাহলে কিছু আশা করা যায় কি?
আশা করি আমাকে ভুল বুঝবেন না কেউ। জনগণকে বোঝার ক্ষমতা কি সকলের থাকে? আজ আমার এই লেখা যাতে কারও জন্য আদেশ না মনে হয় - সেজন্য খোদার কিরে করে বলছি- আমি কোনো বিশেষজ্ঞ নই - আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ- অবসরে সময়ে বসে আমার উন্নয়ন ভাবনাকে লিখছি। কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্য নয়।
গ্রাম হবে শহর - যদি এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন হয় থাকে, তবে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিটি উপজেলা হাসপাতালে ICU বেড থাকবে বলে আমরা বিশ্বাস। আর সেজন্য যদি রিজার্ভ থেকে ঋণ নেয়া হয়, তবে সমর্থন কেন করবোনা? কারণ যারা বিদেশ থেকে টাকা পাঠায় তারা গ্রামের মানুষ। উপজেলা গ্রামের রাজধানী , ঢাকা নয়।
অর্থাৎ, একটি জেলা শহরে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গড়বার জন্য, একটি গ্রামে একটি বিদ্যালয়ের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয় - স্কুল ছাত্রদেরকে ইন্টারনেট সুবিধা দেয়ার জন্য যদি ঋণ নিতে হয়, তবে কারো আপত্তি গ্রহনযোগ্য হবে না।
কিন্তু যে উন্নয়ন বন্ধের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলন করে, যে উন্নয়নের টাকা জোগাতে আরবের মরুপথে আমার ভাই জীবন পানি করে, সেই গরিবের রক্ত পানি করা টাকা কিংবা মালায়শিয়ার জঙ্গলে মশার কামড়ে হারিয়ে যাওয়া আমার ভাইয়ের টাকা দিয়ে - পুরোনো কোনো শহরকে তিলোত্তমা বানাবার উন্নয়ন, কিংবা শুদ্ধ চিন্তার মানুষদের অপমান করবার চিন্তা থেকে নেয়া উন্নয়ন পরিকল্পনা( যদি কারো মনে থাকে) - তবে সেটা নৈতিক উন্নয়ন হতে পারে না !
ওই গ্রামের মানুষগুলো -যাদের ঘামে -রক্তে অর্জিত রিজার্ভ- তা যেন তাদের উন্নয়নে ব্যয় হয়। এটা তাদের হক। তারা যেন ICU পায় , ভ্যাকসিন পায় সেটাই আমাদের কাম্য। তাদের সন্তানের যাতে শিক্ষা পায় সেটাই ন্যায় বা সোশ্যাল জাস্টিস।
সুষম উন্নয়ন, গ্রামের উন্নয়ন, পল্লী উন্নয়ন, মফস্বল শহর উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সম্মত নগর জীবন হোক এবারের উন্নয়ন ভাবনা। আর এসবই আছে “গ্রাম হবে শহর” স্বপ্নকল্পর মাঝে।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর লিখেছিলেন - "নগরের নটি চলে অভিসারে "- সেই থেকে আমার একটি ভুল ধারণা- নগর মানে দাসদের অন্ধকারে আনাগোনা। বিশ্বের সেরা শহর মেলবোর্ন এসেও উপলব্ধি হয়েছে উন্নয়ন কিভাবে দরিদ্রদেরকে দাসে পরিনিত করেছে । Black Lives Matter আন্দোলন কেন হয়। দাসত্ব মুক্ত হয়ে মানুষ গ্রামে ফিরছে দেখে আমারদেরতো ভালো লাগার কথা !
“গ্রামে হবে শহর”- এটাই আমাদের শুভ কামনা - তবে যেন কোনো মানুষ স্বাধীনতা হারিয়ে দাসে পরিণিত না হয়, সেটাই হোক আমাদের উন্নয়ন কামনার নৈতিক ভিত্তি । বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের দুয়ার খুলে যাক কেবল শুদ্ধ ন্যায় বিলিয়ে দিতে- দরিদ্রদের টাকা যেন তাদেরকেই দাসে পরিণিত না করে।
লেখক: অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।