ইনসাইড থট

অ্যান্টিবডি কিট থেকে পাটকল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:৪৬ এএম, ১০ জুলাই, ২০২০


Thumbnail

বেশ অনেকদিন হলো আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর নিয়েছি। তারপরও আমার সহকর্মীরা- যারা একসময় প্রায় সবাই আমার ছাত্র-ছাত্রী ছিল, তাদের সাথে আমার যোগাযোগ আছে। আমি কারণে-অকারণে তাদের ফোন করি তারাও নিয়মিত আমার খোঁজ-খবর নেয়। আজকাল জুম-মিটিং নামে এক ধরনের কায়দা বের হয়েছে সেটা ব্যবহার করে যারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, যারা আমেরিকা-কানাডা অথবা ইউরোপে আছে কিংবা যে করোনা আক্রান্ত সন্দেহ করে আইসোলেশনে আছে, তাদের সবার সাথে একসঙ্গে গল্পগুজব করা যায়। একাধিকবার আমি সেভাবে তাদের সাথে রীতিমতো আড্ডা দিয়েছি। শেষবার তাদের সাথে কথা বলার সময় আমার একজন ছাত্রী আমাকে জানালো, “স্যার, ফেব্রুয়ারি মাসে আমার খুব বিচিত্র একটা অসুখ হয়েছিল, জ্বর, গায়ে ব্যথা, তার সাথে খুবই অদ্ভুত এক ধরনের কাশি। কাশতে কাশতে মনে হয় গলা থেকে রক্ত বের করে ফেলি কিন্তু একফোটা কফ নেই। সবচেয়ে বিচিত্র ব্যাপার হচ্ছে খাবারে বিন্দুমাত্র স্বাদ পাই না, যেটাই খাই সব এক রকম মনে হয়।”

আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তোমার একার? নাকি বাসার সবার?” সে বলল, “বাসার সবার। এটা আমার হাজব্যান্ড ঢাকা থেকে নিয়ে এসেছিল, তারও হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন আমার শাশুড়ি, তার নিউমোনিয়ার মতো হয়ে গিয়েছিল তাই হাসপাতালে নিতে হয়েছিল।” আমি নিঃশ্বাস বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলাম, “জ্বর নিয়ে ডিপার্টমেন্টে গিয়েছিলে?” সে মাথা নেড়ে বলল, “গিয়েছি। কলিগদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে।” কলিগ বলতে যাদের বুঝিয়েছে তারাও জুম মিটিংয়ে আছে আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম, তাদের তখন শরীর খারাপ হয়েছিল কিনা। তারা সবাই বললো, তাদেরও জ্বর কাশি হয়েছিল কিন্তু সেটা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায়নি। বছরের এই সময় জ্বর-কাশি খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। বাংলাদেশে থাকবে আর সর্দি, জ্বর, কাশি হবে না সেটা তো হতে পারে না!

আমরা এখন যেসব উপসর্গকে করোনার ক্লাসিক উপসর্গ বলে জানি, আমার ছাত্রীর উপসর্গ তার সাথে হুবহু মিলে যায়। তাহলে আমরা কি সন্দেহ করতে পারি যে ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে আমার সেই ছাত্রী এবং তার পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছিল? বাড়াবাড়ি পর্যায়ে না গেলে করোনার উপসর্গ আর সাধারণ সর্দি-কাশি-ফ্লুয়ের উপসর্গের মাঝে বিশেষ পার্থক্য নেই। তারপরও এটাকে বিচ্ছিন্ন কাকতালীয় একটা ঘটনা বলে উড়িয়ে দিতে পারি না তার কারণ আমি অনেকের সাথে কথা বলে জেনেছি তারা জানুয়ারি কিংবা ফেব্রুয়ারি মাসে করোনার উপসর্গ নিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল, তারা অবশ্যই সেটা নিয়ে মোটেও মাথা ঘামায়নি। আমি নিজেও জানুয়ারির শেষে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়েছিলাম, “শুকনো কাশি” বলে নূতন একটা অবস্থার সাথে তখন পরিচয় হয়েছিল। জ্বরটির বৈশিষ্ট্য ছিল এক ধরনের অবিশ্বাস্য ক্লান্তি। দিনের পর দিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিছানায় শুয়ে মড়ার মতো ঘুমিয়েছি। সুস্থ হওয়ার পর এক পার্টিতে সবাই যখন মজা করে কাবাব খাচ্ছে আমি তখন ঘ্যান ঘ্যান করে যাচ্ছি, “এটা কী রেঁধেছে? বিস্বাদ! মুখে দেয়া যায় না।”

এখন সারা পৃথিবীর সবাই বলাবলি করছে ফেব্রুয়ারি মার্চ মাসে করোনার কথা জানাজানি হলেও এটা সম্ভবত ডিসেম্বর জানুয়ারি মাসে একবার “বিশ্বভ্রমণ” করে গেছে। ইতালি এবং স্পেনে বর্জ্য পানি পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে। আমাদের দেশে ফেব্রুয়ারি মাসে হাজার হাজার মানুষ বই মেলায় গিয়েছে, সামাজিক দূরত্বের বিপরীত শব্দ হতে পারে, “অসামাজিক দূরত্ব” কিংবা “সামাজিক নৈকট্য”। “অসামাজিক দূরত্ব” কথাটা জানি কেমন অশালীন শোনায়, “সামাজিক নৈকট্য” মনে হয় মোটামুটি গ্রহণযোগ্য একটা শব্দ! বইমেলায় হাজার হাজার মানুষ এই সামাজিক নৈকট্যের ভেতর দিয়ে গিয়েছে। কাজেই এটা মোটেও অস্বাভাবিক নয় যে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনার উপস্থিতি টের পাবার আগে আমাদের দেশে (কিংবা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে) করোনা একবার চক্কর দিয়ে অনেক মানুষকে তাদের অজান্তে আক্রান্ত করে গেছে।

ব্যাপারটি নিয়ে আলাপ-আলোচনা-সন্দেহ করা যায় কিন্তু যখন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেয়া হলো আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা মিলে করোনার অ্যান্টিবডি (এবং অ্যান্টিজেন) পরীক্ষার একটা কিট তৈরি করেছেন তখন প্রথমবার আমার মনে হলো আমাদের সন্দেহটা শুধুই সন্দেহ নাকি সত্যি সেটা প্রমাণ করার একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটি করোনার পরীক্ষা নয়, কিন্তু আগে করোনা হয়েছে কিনা তার একটা পরীক্ষা হতে পারে। আমি তখন থেকে আশায় বুকবেঁধে আছি যে এই কিটটি ব্যবহার করার জন্য উন্মুক্ত করা হবে তখন আমরা সবাই পরীক্ষা করে দেখবো আমাদের অজান্তেই কার কার একদফা করোনা হয়ে গেছে। সবচেয়ে বড় কথা দেশে করোনার অবস্থা বোঝার জন্য এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা করার জন্য, এটার ব্যবহার অমূল্য সম্পদ হতে পারে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহর রাজনৈতিক বিশ্বাসের জন্য পুরো প্রজেক্টটা ধরাশায়ী হয়ে যাবার আশঙ্কা ছিল, শুধু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে সেটা বেশ খানিকটা এগিয়েছে। তবে সবকিছু যত তাড়াতাড়ি অগ্রসর হওয়া উচিত ছিল এটা মোটেও ততো তাড়াতাড়ি অগ্রসর হচ্ছে না। আমরা সবাই এতদিনে জেনে গেছি যে এটা শতভাগ নিশ্চিত পরীক্ষা নয়, সেটা জেনেই আমরা এটা ব্যবহার করতে চাই, তারপরও কেন জানি এই কিটটি আমাদের হাতে দেয়া হচ্ছে না। আমরা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে আছি। অনেক দেশেই কেউ চাইলেই এখন এই পরীক্ষাটা করতে পারে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ আমাদের পাশের দেশ।


কলকাতায় পরীক্ষা করে শতকরা ১৪ জনের মাঝে করোনা অ্যান্টিবডি পাওয়া গেছে, যার অর্থ কলকাতার জনসংখ্যা দেড়কোটি ধরে হিসাব করলে শুধু সেখানেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা হয়ে যায় ২০ লক্ষ, অবিশ্বাস্য একটা সংখ্যা! এর মাঝে কি শুভংকরের ফাঁকি আছে নাকি কিছু একটা আমরা এখনো জানি না? আমাদের ঢাকা শহরে কত পাব?

আমি অবশ্য করোনার সংখ্যা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করার জন্য লিখতে বসিনি, তার জন্য খাটি বিশেষজ্ঞরা আছেন। আমি একটা সম্পূর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে লিখতে বসেছি। যেদিন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. বিজন শীলের নেতৃত্বে এই কিটটি উদ্ভাবনের খবর পত্রিকায় বের হয়েছিল আমি স্বাভাবিকভাবেই খুব আনন্দিত হয়েছিলাম। ড. বিজন শীলকে নিয়ে গর্ব অনুভব করেছিলাম। অনলাইন খবরের কাগজে প্রত্যেকটা খবরের নিচে মন্তব্য লেখার ব্যবস্থা থাকে (কেন কে জানে! আমি কখনো সেগুলো পড়ার চেষ্টা করি না)।

ঘটনাক্রমে সেদিনের খবরের পেছনের সেই মন্তব্যে আমার চোখ পড়ে গেল, আমি হতবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম কোনো একজন পাঠক এই পুরো উদ্যোগটা নিয়ে কুৎসিত একটা মন্তব্য করে রেখেছে। এই দেশের সবচেয়ে সম্ভ্রান্ত পত্রিকার কর্মকর্তারা খুবই উৎসাহ নিয়ে চমৎকার একটা খবরের পেছনে কুৎসিত একটা মন্তব্য জুড়ে দিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি, তারাও অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, ধরেই নিয়েছেন পাঠকেরা কুৎসিত কথা বলতে এবং শুনতে ভালোবাসে। আমি শুধু সম্ভ্রান্ত পত্রিকার অনুমোদিত একটা মন্তব্য দেখেই হতভম্ব হয়ে গেছি, আমাদের চোখের আড়ালে ফেসবুক নামের সেই অন্ধকার গলিতে অসংখ্য মানুষ কত রকম অশালীন কুৎসিত মন্তব্য না জানি করেছিল যেটা আমি চিন্তাও করতে পারি না।

এটাই শেষ নয়, কয়েকদিন আগে আমি খবরের কাগজে দেখেছি আমাদের দেশের একটি প্রতিষ্ঠান করোনার ভ্যাকসিন বের করা নিয়ে গবেষণা শুরু করেছে। পশুর ওপর প্রাথমিক পরীক্ষা করে তারা ইতিবাচক ফল পেয়েছে। দেশের কেউ কিছু করলে স্বাভাবিকভাবেই আমি নিজের ভেতর অনুপ্রেরণা অনুভব করি, কাজেই এই খবরটা দেখেও আমি খুশি হয়েছি। সারা পৃথিবীর অনেক নাম না জানা প্রতিষ্ঠান, অনেক ছোট বড় বিশ্ববিদ্যালয় করোনার ভ্যাকসিন তৈরি নিয়ে কাজ করছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ওয়েবসাইটে তার সুদীর্ঘ তালিকা রয়েছে।

আমাদের দেশের কোনো গবেষণাগারে, বা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এই নিয়ে গবেষণার কোনো খবর নেই সেটা আমি নিজেই কয়েকদিন থেকে চিন্তা করছিলাম। কাজেই খবরটা দেখে আমি খুশি হয়েছিলাম তবে বিস্ময়ের কথা হচ্ছে আমি খবর পেয়েছি এই গবেষক টিমের নেতৃত্বে যিনি আছেন- আসিফ মাহমুদ, তাকে নাকি ফেসবুকে তুলোধুনো করা হচ্ছে। কেন? যারা তাকে হেনস্থা করে অমার্জিত বক্তব্যের বান ছুটিয়েছে তারা তাদের জীবনে কি ফেসবুকে একটা কুৎসিত স্ট্যাটাস দেয়ার চাইতে বড় কোনো কাজ করেছে? করার ক্ষমতা আছে? বড় জানতে ইচ্ছা হয়।

যাদের আমাদের দেশ নিয়ে কোনো ভালোবাসা নেই, যারা চোখে আঙুল দিয়ে দেখালেও দেশের ভালো কিছু দেখতে পায় না তাদের আমি শুধু করোনার সময়ের কিছু ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিই:

যখন ঘূর্ণিঝড় আম্ফান আমাদের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছিল তখন উপকূলের প্রায় ২৪ লাখ মানুষকে রাতারাতি সরিয়ে নিতে হয়েছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে রাতারাতি ২৪ লাখ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া কতটুকু কঠিন কেউ চিন্তা করে দেখেছে? (পৃথিবীর প্রায় শ’খানেক দেশ আছে যাদের জনসংখ্যা এর সমান কিংবা এর চাইতে কম!)

তখন একই সাথে ঘূর্ণিঝড়ের সময় ভাসানচরের নিরাপত্তার একটা পরীক্ষা হয়ে গেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো একেবারে শুরু থেকে ভাসানচরে কিছু রোহিঙ্গাদের থাকার ব্যবস্থার বিরোধিতা করে আসছিল, বিষয়টা নিয়ে আমি বিভ্রান্তির মাঝে ছিলাম, তাদের মাথাব্যথাটা কোথায় আমি বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমার বিভ্রান্তি দূর করে দিয়েছেন। তিনি একেবারে খোলাখুলি বিদেশি বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, এখন তারা কক্সবাজারের পর্যটক এলাকায় পাঁচতারা হোটেলে থাকেন ঘণ্টা খানেকের মাঝে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে চলে যান, বিকেলের ভেতর আবার পাঁচতারা হোটেলে ফিরে এসে সারারাত ফুর্তি ফার্তা করতে পারেন, সে জন্য তাদের রয়েছে মাস শেষে মোটা বেতন। রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে নিলে এই বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সেখানে যেতে এবং ফিরে আসতে কালোঘাম ছুটে যাবে, সেজন্য তাদের এত আপত্তি!

রোহিঙ্গাদের কথাই যদি বলা হবে তাহলে নিশ্চয়ই বলতে হবে পৃথিবীর বৃহত্তম এই ক্যাম্পে লাখ লাখ রোহিঙ্গা গাদাগাদি করে আছে, সেখানে করোনার মহামারি ছড়িয়ে গেলে কী ভয়াবহ ব্যাপার ঘটবে সেটা নিয়ে সবার ভেতরে দুশ্চিন্তা ছিল। কিন্তু সেই ক্যাম্পে এখন পর্যন্ত খুবই সফলভাবে করোনার মহামারি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এটি কি আমাদের দেশের জন্য একটি অসাধারণ ঘটনা নয়?

করোনার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনো বের হয়নি, কিন্তু যখনই কিছু একটা সফল পদ্ধতি বের হয়েছে আমরা কিন্তু সাথে সাথে বাংলাদেশে সেটার বাস্তবায়ন হতে দেখেছি। এখন দেশে করোনা থেকে আরোগ্য হওয়া মানুষের প্লাজমা নিয়ে চিকিৎসা প্রায় রুটিন মাফিক হচ্ছে। রেমডেসিভির নামে একটা ওষুধ কার্যকর বলে প্রমাণিত হওয়ার সাথে সাথে আমাদের দেশের ওষুধ কোম্পানি সেটা তৈরি করতে শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের এনএইচএস যখন গবেষণা করে ঘোষণা দিল ডেক্সামেথাসন নামে একটা স্টেরয়েড করোনার জটিল রোগীদের জন্য প্রায় মহৌষধ তখন আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম আমাদের দেশে এটি খুবই সস্তা একটা ওষুধ। শুধু তাই নয় আমাদের ডাক্তাররা অনেকদিন থেকেই জটিল করোনা রোগীদের এটা দিয়ে চিকিৎসা করে আসছেন। কীভাবে কীভাবে জানি করোনার চিকিৎসা নিয়ে দেশের মানুষের ভেতর এক ধরনের আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়ে গেছে, আমার পরিচিত যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের প্রায় সবাই হাসপাতালে না গিয়ে বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এখানেই শেষ নয়, আমাদের দেশে বিভিন্ন মাত্রার পিপিই তৈরি হয়েছে এবং বিদেশে রফতানি হয়েছে। ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়ার নেতৃত্বে চট্টগ্রামে একশ সিটের একটা ফিল্ড হাসপাতাল শুধু তৈরি হয়নি সেখানে রোগীদের চিকিৎসা হচ্ছে। (সেদিন খবরে দেখলাম চট্টগ্রামে পরপর দুদিন কেউ কারোনায় মারা যায়নি!) “পে ইট ফরওয়ার্ড বাংলাদেশ” নামে আমার একটা প্রিয় সংগঠন অনেকদের নিয়ে সারাদেশের জন্য অক্সিজেন ব্যাংক তৈরি করেছে, বাসায় চিকিৎসা করার সময় অক্সিজেনের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে অক্সিজেন নেয়া সম্ভব। কী সুন্দর একটি উদ্যোগ।

আমাদের দেশে করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক ছাত্রশিক্ষক নানা ধরনের মেডিকেল যন্ত্রপাতি তৈরি করছেন, সেগুলো ব্যবহারও হচ্ছে। এইসব খবর শুনে কি একটুখানি প্রশান্তি অনুভব করা যায় না? তার বদলে কেন জ্বালা অনুভব করবো? কেন ভালো একটা খবর পড়ে সুন্দর একটা কথা বলব না? কেন উৎসাহ দেব না? কেন তাচ্ছিল্য করব? টিটকারি করব? ছোট করার চেষ্টা করব? যারা এগুলো করে আনন্দ পায়, তাদেরকে বলব একবার একটা সুন্দর কথা বলে দেখতে, তখন নিজের ভেতর কেমন একটা প্রশান্তি অনুভব হয় সেটা দেখে তারা নিজেরাই অবাক হয়ে যাবে। আমি প্রয়োজনে কোনোকিছু সমালোচনা করতে নিষেধ করছি না, কিন্তু সেটা সমালোচনা হতে হবে, গালাগাল, খিস্তি হতে পারবে না।

সারা পৃথিবীতে অর্থনীতি নিয়ে আতঙ্ক, আমরাও আতঙ্কিত। ধরেই নিয়েছিলাম প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিটেন্স কমে আসবে, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে টান পড়বে। কিন্তু সে রকম কিছু চোখে পড়ছে না, বরং রেকর্ড রেমিটেন্স, রেকর্ড রিজার্ভের খবর পাচ্ছি। কিন্তু বাংলাদেশ যতজন করোনায় মারা যাচ্ছে, প্রায় তার সমান সংখ্যক প্রবাসী শ্রমিক বিদেশ বিভুঁইয়ে মারা যাচ্ছেন। সেই খবর পড়ে মন ভারাক্রান্ত হয়। আমরা তাদের থেকে শুধু নিচ্ছি, তাদের কিছু দিচ্ছি না ভেবে নিজেদের অপরাধী মনে হয়।

করোনার সময় শুধু যে নিরবচ্ছিন্নভাবে ভালো ভালো ব্যাপার ঘটে যাচ্ছে সেটি সত্যি নয়। গার্মেন্টস শ্রমিকদের ছাঁটাই করা একটা ভয়াবহ খবর। ফ্যাক্টরির মালিক শ্রমিক মিলে একটা বড় পরিবারের মতো হওয়ার কথা, দুঃসময়ে মালিক-শ্রমিক একসাথে কষ্ট করবে কিন্তু মালিকরা নিজেদের সম্পদ রক্ষা করার জন্য শ্রমিকদের ছুঁড়ে ফেলে দেবে এটা কেমন করে হয়? করোনার এই দুঃসময়েও আমরা প্রায় নিয়মিত ভাবে দেখছি শ্রমিকরা তাদের বেতন-ভাতার জন্য রাস্তা অবরোধ করে বসে আছে। কেন?

আমরা হঠাৎ করে দেখতে পাচ্ছি সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের যে প্রেসক্রিপশন মেনে এগুলো বন্ধ করা হচ্ছে সেই প্রেসক্রিপশন আমরা সবাই অনেক দেশে অনেকবার দেখেছি। পৃথিবীতে সবাই এখন পরিবেশ নিয়ে সচেতন, তাই সারা পৃথিবীতে পাটের বিশাল চাহিদা। ভারতবর্ষে নুতন পাটকল তৈরি হচ্ছে, আমরা সেই সময়টাতে পাটকল বন্ধ করে দিচ্ছি। আমি হিসাব মেলাতে পারি না।

আমার মনে আছে বেশ অনেক বছর আগে খুলনায় পাট শ্রমিকরা খুব দুঃসময়ের মাঝে ছিল, তাদের অবস্থাটা সবার চোখের সামনে আনার জন্য খুলনায় একটা লঙ্গরখানা খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, অনেকের সাথে আমিও সেখানে গিয়েছিলাম। সরকারের রক্তচক্ষু কাকে বলে আমি সেবার সেটা টের পেয়েছিলাম। মানুষ যখন শুধু একটা সংখ্যা হয়ে যায়, যখন তাদের পরিবার থাকে না, আপনজন থাকে না, আত্মসম্মান থাকে না, ভবিষ্যৎ থাকে না তখন সেটা খুব একটা কষ্টের ব্যাপার। আমরা সমস্যাগুলোর মূলে কেন হাত দিই না? পাটকলগুলো বন্ধ না করে আধুনিকায়ন করা কি এতই দুঃসাধ্য একটা ব্যাপার?

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু অনেক আশা নিয়ে বাংলাদেশের পাটকলগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত করেছিলেন। তাঁর জন্মশতবার্ষিকীর বছরে সেই পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে, এই দেশে কেউ তাঁর দীর্ঘশ্বাসটুকু শুনতে পাচ্ছে না?

৮ জুলাই, ২০২০

লেখক : শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী।

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন