ইনসাইড থট

ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে আওয়ামীলীগকে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীমুক্ত করা জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

‘আওয়ামী লীগ আমলে রাজাকার-বিএনপির রাজত্ব’ শিরোনামে ‘বাংলাইনসাইডারে’ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে পড়েছি যে, গভর্নর মোনায়েম খান এখনও বাংলাদেশ চালায়। তার নাতী সাজেদ এ এ আদেল এখন হকি ফেডারেশনের সহ সভাপতি । তিনি হকির নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানও। ...কুখ্যাত রাজাকার জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল (সাকা চৌধুরীর চাচা শ্বশুর এবং মোনায়েম খানের মেয়ের জামাই) ২০০০ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে তার পুরান ঢাকার আরমানিটোলার বাড়িতে পাকিস্তানি পতাকা উত্তলন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলনের কারণে তাৎক্ষনিক প্রতিবাদে মিছিল বের করেন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি জনাব কামাল হোসেন। ... কুখ্যাত জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেলের দুই কুলাঙ্গার জোবায়েদ আদেল এবং তারেক আদেল ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসে সদল বলে বাসায় তার ঢুকে হত্যা করে আওয়ামীলীগের ওয়ার্ড সহ-সভাপতি কামাল হোসেনকে, যিনি পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলনের প্রতিবাদ করেছেন।


২০০০ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তানের জাতীয় দিবসে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের একাধিক স্থানে পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেই উত্তোলনকারীদের বংশধররা বর্তমানে আওয়ামীলীগের আমলেও আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদ দখল করে আছেন।


২০০৪ সালে ২১ আগস্ট মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে সংঘটিত গ্রেনেড হামলা মামলার মূল আসামী তারেক জিয়াকে নিয়মিত অর্থ যোগানদাতাদের বংশধরেরাও ঢাকা মহানগর আওয়ামীলীগের থানা পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন।


আওয়ামীলীগ টানা প্রায় ১১ বছর ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বিভিন্ন এলাকায় সুযোগ সন্ধানী ও বিতর্কিত অনেকেই আওয়ামী লীগে ঢুকেছেন, এদের হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী বলা হয়। ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামীলীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর মাঠ পর্যায়ে অন্য দল থেকে সরকারি দলে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বাড়তে থাকে। জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি ও ফ্রিডম পার্টির মতো দল থেকেও অনেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করেছে। এরা সকলেই কোন না কোন উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামীলীগের পদ দখল করেছেন। অপরাধীরা আত্মরক্ষার্থে, ব্যবসায়ীরা  প্রভাব বিস্তার করে ব্যবসায়ী সুবিধার জন্য উচ্চমূল্যে আওয়ামীলীগের পদ ক্রয় করেছে। আওয়ামীলীগের অনেকে দলের মধ্যে নিজের গ্রুপ ভারী করার জন্য অন্য দল থেকে আওয়ামীলীগে যোগদান করিয়েছেন। আবার অনেকেই আওয়ামীলীগের ভিতরে নিজেরাই গ্রুপিং শক্তিশালী করে বা বিবাদ সৃষ্টি করে আওয়ামীলীগকে দুর্বল করার জন্য আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করাচ্ছেন। আবার অনেকে ‘পদ বানিজ্য’ করে আর্থিক লাভবান হওয়ার জন্য ভিন্ন মতাবলম্বীদের দলে ভিড়িয়েছেন। বিতর্কিত ব্যক্তিদের সরকারি দলে আনা নিয়ে বিভিন্ন সময় ‘পদ বাণিজ্যের’ অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতার বিরুদ্ধে। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগ কমিটি গঠনে ‘পদ বানিজ্য’এর একাধিক লিখিত অভিযোগনামা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট জমা আছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার রয়েছে।‘পদ বানিজ্য’ অভিযোগে অভিযুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায়, এর প্রভাব তৃনমূল পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। ঢাকার থানা পর্যায়ে এক ছাত্রদল নেতা ছাত্রলীগের থানা পর্যায়ের একটি পদ বাগিয়ে নির্বিঘ্নে চাঁদাবাজি করছে এবং পুলিশের চোখে ফাঁকি দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। স্থানীয় ঐ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির নিকট এব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের কাউকে পদটি দিলে সে তো আমাকে টাকা দিতো না। আমিওতো টাকা দিয়েই আমার এই পদে এসেছি’।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য মরহুম মোহাম্মদ নাসিম প্রথম আলোকে বলেছিলেন, অনুপ্রবেশকারীদের বেশির ভাগই বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে যুক্ত ও দলের বদনাম সৃষ্টি করছেন। দলেরও কেউ কেউ এই সুযোগটা করে দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘সুযোগসন্ধানী অনুপ্রবেশকারীরাই দল ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করছে। তাই তাদের আশ্রয় দেওয়া যাবে না।’ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সকল সহযোগী সংগঠণের ভেতরে থাকা অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। দলে আর কোনভাবেই অনুপ্রবেশকারী সুবিধাবাদীদের ঠাই দেওয়া যাবে না’।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি করেন, এটা ঐতিহ্যগতভাবে শুধু বাংলাদেশ নয়; সারা বিশ্বে স্বীকৃত। কেননা সকল সমীকরণ শেষে রাজনীতিবিদরাই দেশের মানুষের কথা ভাবেন, দেশের কল্যাণে কাজ করেন; এটাই একজন রাজনীতিবিদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। অনেক সময় ব্যবসায়ী, সরকারি-বেসরকারি-চাকুরিজীবী, আমলা কিংবা অন্যান্য পেশাজীবীদের কর্মজীবন শেষে রাজনীতিতে আসতে দেখা যায়। তারা আসতে পারেন, রাজনীতি করতে কারও কোন বাধা নেই, গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে একটি দেশের সকল সচেতন নাগরিকের সে অধিকার রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির নিয়ন্ত্রণ কোনভাবেই ব্যবসায়ী কিংবা আমলাদের হাতে চলে যাওয়া সমীচীন নয়। একজন ব্যবসায়ী কিংবা আমলা হুট করে রাজনীতিতে এসে দলের নেতৃত্বে চলে আসা কিংবা মুখপাত্র বনে যাওয়া কোনভাবে দেশ ও জাতির জন্য শুভ কিছু বয়ে আনতে পারে না’।


বাংলা ইনসাইডারের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ বলেন, এখন অনেক সুবিধাবাদী মানুষ রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বার্থ হাসিলের প্লাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করছে। যেসব রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকে সেসব দলে অনেক মানুষ আসে। তারা মূলত আদর্শভিত্তিক কোনো কর্মী বা নেতা না। তারা নিজেদের স্বার্থে আসে।


বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের আদর্শিক কর্মীগড়ার পাঠশালা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগেরও সাংগঠনিক নেত্রী। তৃনমূল পর্যায়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ব্যানারেই কর্মী সংগ্রহ হয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কর্মী-সমর্থকরাই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ধাপে ধাপে অগ্রসর হয়ে নেতা নির্বাচিত হয়। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতারা ছাত্র-ছাত্রীদের ভোটে ছাত্রপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ার জন্য নিজেকে গড়ে তোলেন। সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা নেতাদের শিক্ষা, আচার-ব্যবহার, নৈতিকতা, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সর্বোপরি দলীয় আদর্শ বিচার-বিশ্লেষণ করে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র-প্রতিনিধি নির্বাচিত করে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে কর্মজীবনেও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা গড়ে তুলতে আত্মনিয়োগ করে এবং ছাত্রনেতারা জাতীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়ে দেশ গড়ার কাজে নেতৃত্ব দেয়। এছাড়া জেলা-উপজেলা, গ্রাম-পাড়া-মহল্লায়ও ছাত্র, যুব, মহিলা ও শ্রমিক নেতৃত্ব গড়ে উঠে। এই সকল নেতারাও জাতীয় রাজনীতিতে দেশ গড়ার কাজে আওয়ামীলীগকে সহযোগীতা করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধের পর রক্তের দামে কেনা স্বাধীন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেন মহাননেতা জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। পাশাপাশি শুরু হয় স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্রও। স্বাধীনতা বিরোধীচক্র রাজনীতির অঙ্গনে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে, শহীদদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল্যবোধকে প্রশ্নবোধক করার জন্য সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগুতে থাকে, স্বাধীনতাবিরোধীদের সূক্ষ্ম ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে ওরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সুযোগে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগে যোগদান করে। ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যাকাশে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। এরইমাঝে ওরা বিভিন্ন কৌশলে আওয়ামীলীগ ও সরকারে শক্তিশালী অবস্থান করে নিয়েছে। ছাত্রজীবনে জাতীয়তাবাদী আদর্শ বাস্তবায়নকারী জিয়ার সৈনিক এখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নকারী সংগঠন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতা।‘জিয়া আমার পিতা, তারেক আমার ভাই’ শ্লোগানের প্রবক্তারা এখন আওয়ামীলীগ দলীয় জাতীয় সংসদ সদস্য। এটা সত্যি লজ্জার! এভাবে  চলতে পারেনা। এখন পরিশুদ্ধ হওয়ার সময় এসেছে। বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারীদের বাদ দিলে দল আরও শক্তিশালী হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ দীপু মনির নেতৃত্বে হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারীদের তালিকা তৈরী করেছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং এ বিষয়টি নিয়ে তারা কাজ শুরু করেছেন। দুঃখের বিষয় এরই মাঝে হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারীদের রক্ষা করার জন্য তাদের পৃষ্ঠপোষকরা ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথা বলা শুরু করেছে। অনেকে বলেন, অন্য দল থেকে কেউ আসলেই যে সে আদর্শপরিপন্থী তা কিন্তু নয়। হতে পারে যে সে ইতিহাস বিকৃতি বা ইতিহাসের অপপ্রচারের শিকার। একটা ভুল জিনিস সে জেনে এসেছে। হঠাৎ করে ইতিহাসের সত্যটা জেনে তার মধ্যে একটা প্রতিক্রিয়া আসলো এবং তার আদর্শগত পরিবর্তন ঘটলো। আর সে দল পরিবর্তন করলো। সে সত্যটা ধারণ করলো। এটা তো খারাপ কিছু নয়।


অনেকের মতে, আওয়ামীলীগ যখন বিরোধীদলে ছিল তখন আওয়ামীলীগের মিটিং মিছিলে যে সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করতো, এখন সেই সংখ্যা বেড়েছে, বিএনপি-জামাত থেকে আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ হওয়ায় আওয়ামীলীগ বড় দলে পরিনত হয়েছে, এতে খারাপ কি হয়েছে? এসকল প্রবক্তাদের শিকড় খুঁজতে হবে। তৃনমূল থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জিবিত হওয়া নেতাকর্মীরা এধরনের সাফাই গাইবে না, গাইতে পারে না।


আওয়ামীলীগ বিরোধীদলে থাকাকালীন সময়ে কয়েকটি ইসলামিক দলের সাথে একটি সমঝোতা করা হয়েছিল। তখন অনেকেই সাফাই গেয়েছিলেন, ঐ ইসলামিক দলগুলোর ২% ভোট আছে। এই সমঝোতায় আওয়ামীলীগের ভোটবাক্সে ২% ভোটবৃদ্ধি পাবে। পরবর্তীতে তা মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। এখানে আদর্শের কোন মিল ছিল না, আদর্শের মিল না থাকলে, কোন সমঝোতাই টিকে না। আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক বলেন, সারা বিশ্বে রাজনৈতিক দলগুলো যখন গঠিত হয়, তখন প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের নিজস্ব আদর্শ থাকে। এগুলোই হচ্ছে প্রকৃত রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দর্শনভিত্তিক যে সংগঠনগুলো পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছে, যারা এই দলগুলোতে আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে যোগদান করে, তাদের একটা দীর্ঘমেয়াদী আদর্শভিত্তিক লক্ষ্য থাকে। আমরা যারা তৃনমূল থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হয়েছি, আমরা জানি এবং মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, আমার দলের আদর্শ আছে এবং দলের আদর্শের সঙ্গে আমি একমত হয়ে তা বাস্তবায়নে আত্মনিয়োগ করি। অন্যদল থেকে আসা বা যোগদানকারীরা কোনদিনও মনেপ্রাণে আওয়ামীলীগার হতে পারে না। তারা আসে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার জন্য, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নয়। আওয়ামীলীগের দুর্দিনগুলি তাই সাক্ষী দেয়।

এখনই সময়, আওয়ামীলীগ সভাপতির নির্দেশনা মোতাবেক সারাদেশে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে সংগঠন থেকে বের করতে হবে। এদের যারা লালন পালন করছে, এদের যারা পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে তাদের স্বরূপ উন্মোচিত করতে হবে। তাহলেই ভবিষ্যতে আর হাইব্রিড বা অনুপ্রবেশকারী সৃষ্টি হবে না।

 
আওয়ামী লীগের সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংগঠনের একাধিক নেতাকে বলেছেন, “আওয়ামী লীগে ত্যাগী পরীক্ষিত কর্মীর অভাব নেই। আওয়ামী লীগে এ রকম কর্মীর সংখ্যাই বেশি। কাজেই তাদেরকে দায়িত্ব দিয়ে দলকে সংগঠিত করাই এখন প্রধান কাজ। অনুপ্রবেশকারী, চাটুকার এবং দুর্বৃ্ত্তদের আওয়ামীলীগে রেখে আওয়ামী লীগকে ক্ষতিগ্রস্ত করার কোন মানে হয় না”।


২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে সামিল করার লক্ষ্য সামনে রেখে রূপকল্প ২০৪১ এর রূপরেখা অনুমোদন দিয়েছে সরকার। ২০২১ সাল থেকে ২০৪১ সালের মধ্যে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯.৯ শতাংশ, গড় মাথাপিছু আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯৯৪ মার্কিন ডলার, প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল ৮০ বছর। এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ দাঁড়াবে ৪৬.৯ শতাংশ এবং রাজস্ব আদায়ের হার দাঁড়াবে ২৪.১শতাংশ। এফডিআর ৩ শতাংশ, সরকারি বিনিয়োগ ৮.৯ শতাংশ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ ৩৮ শতাংশের উপর ভর করে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেগবান হয়ে উঠবে। মোট জাতীয় সঞ্চয় ৪৬.৭ শতাংশ, মোট দেশজ সঞ্চয় ৪২.৭ শতাংশ, মূল্যস্ফীতি ৪.৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। দারিদ্র্য নিরসন, আয়বৈষম্য হ্রাস, নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বহুমুখীকরণ, বৈদেশিক বাণিজ্য ও লেনদেনে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, টেকসই বিদ্যুত ও জ্বালানি ব্যবস্থাপনা, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মতো ইস্যুগুলোকে সামনে রেখে এই রূপকল্প প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে দৃশ্যমান এসব প্রত্যাশা, পরিকল্পনা তথা রূপকল্প খুবই আশাব্যঞ্জক। তবে চলমান বাস্তবতায় এই লক্ষ্যমাত্রা এবং জনগণের আস্থা অর্জন কতটা সম্ভব তা নিয়ে সংশয়ের অবকাশ আছে। বিশেষত: গণতন্ত্রায়ন এবং সুশাসন নিশ্চিত করার মতো রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ নিরসনের উপর এই রূপকল্পের বাস্তবায়ন অনেকাংশে নির্ভরশীল। সরকার ঘোষিত ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়নে আমাদের নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংগঠিত করতে হবে।


মনে রাখতে হবে, ২০০৮ সালে অষ্টম জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারে আওয়ামী লীগ প্রথম রূপকল্প ২০২১ বা ‘ভিশন ২০২১’ এর ঘোষণা দিয়েছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে তা ছিল ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা, যা ২০২১ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য ভিশন-২০২১ এর লক্ষ্য হিসেবে যে ৮টি বিষয় চিহ্নিত করা হয়েছিল, তা হচ্ছে- ১. গণতন্ত্র ও কার্যকর সংসদীয় ব্যবস্থা, ২. রাজনৈতিক কাঠামো, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ এবং জনগণের অংশগ্রহণ, ৩. আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সুশাসন এবং রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব এড়ানো, ৪. রাজনৈতিক সংস্কৃতির রূপান্তর, ৫ দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন, ৬. ক্ষমতায়ন ও মহিলাদের জন্য সমান অধিকার, ৭. অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও উদ্যোগ এবং ৮. বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান উন্নত করা। চলমান বাস্তবতার বিচারে ভিশন ২০২১’র রূপরেখা বা লক্ষ্যসমূহ অনেক বেশি বাস্তবসম্মত ও জনআকাঙক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। আজ ২০২০ সালে এসে ভিশন ২০২১’র রূপরেখা অর্জন সম্ভব হয়েছে দেশপ্রেমিক ও সংগঠিত নেতাকর্মীর সমর্থনে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রনায়কোচিত দিকনির্দেশনারসজন্য । দেশপ্রেমিক ও সংগঠিত নেতাকর্মী ছাড়া কোথাও কোন সফলতা আসেনি। তাই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম ও ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে, জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিনত করতে আওয়ামীলীগকে হাইব্রিড ও অনুপ্রবেশকারীমুক্ত করা জরুরি প্রয়োজন।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন