ইনসাইড থট

কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স - আমার জীবনের গল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৫২ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০


Thumbnail

 

আজ ২৬ সেপ্টেম্বর একটি অভিশপ্ত ও কাল দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে খুনি মোশতাক- খুনি জিয়ার যৌথ ও অবৈধ সরকার কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করেছিলো। এই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের দোহাই দিয়েই দীর্ঘ ২১ বছর সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার বন্ধ রাখা হয়েছিলো।  

স্কুল জীবন থেকেই জাতির পিতার হত্যাকান্ড নিয়ে নানা কথা শুনেছিলাম। যা শুনেছিলাম তার কিছু ছিল সত্য, বাকিটা মিথ্যাচার l ১৫ই আগস্টে খুনি চক্র শুধু জাতির পিতাকে শারীরিকভাবেই হত্যা করেনি, প্রায় দীর্ঘ দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে তার রাজনৈতিক চরিত্র হনন করার চেষ্টা করে আসছিলো । খুনি চক্র ও তাদের সুবিধাভোগিরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের মাধ্যমে তাদের নির্মম হত্যাকান্ড ও অবৈধ শাসনকে জাস্টিফাই করতে চেয়েছিলো ।

সেই স্কুল জীবন থেকে আমার মনে প্রশ্ন জেগেছিলো, জাতির পিতাকে কারা হত্যা করলো? কেন হত্যা করা হলো? আমার বাবা বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীর কিছু বরখাস্ত হওয়া ও বিপথগামী অফিসার একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে হত্যা করেছিল। তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল কারণ তিনিই এই দেশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং এই দেশের প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা। একই কথা আমার বড়ো ভাইও বলেছিলেন। তিনি বর্তমানে একজন জেলা জজ হিসেবে কর্মরত। স্কুল জীবনে বিভিন্ন সময়ে কিছু ক্লাশমেটের কাছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে কিছু কথা শুনেছিলাম। তারা মূলত তাদের পরিবার থেকেই এই কথাগুলো জেনেছিল। শিশু অবস্থায়ই আমি বুঝতে পেরেছিলাম, এই কথা গুলো মিথ্যাচার। পরে জানতে পারলাম, ঐ ক্লাশ মেটদের বাবারা পাকিস্তান পন্থী ছিলেন।

আমাদের শৈশব আর কৈশোর কেটেছিল ইতিহাস বিকৃতি, অপপ্রচার আর মিথ্যাচারের এক অন্ধকার সময়ের মধ্যে দিয়ে। তবে, শৈশব থেকেই আল্লাহ প্রদত্ত আমার একটা ক্ষমতা রয়েছে। কেউ কোন মিথ্যা তথ্য দিলে আমি সেটা বুঝতে পারি। তাই বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে ১৫ই আগস্ট পরবর্তী শাসকেরা যে মিথ্যাচার আর অপপ্রচার চালিয়েছিল, সেগুলো আমার মনোজগতে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নির্মম হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আমাদের পরিবারে যে কথা শুনেছিলাম, আমার মনে সেটাই গেঁথে গিয়েছিলো। তাছাড়া বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুর অবদান, তাঁর ক্যারিশমেটিক  ব্যক্তিত্ব, সপরিবারে জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টি শৈশবেই আমার মনে ভীষণ দাগ কেটেছিল। ঐ সময়ে নিজের অজান্তেই এটিকে একটা হাইপোথিসিস হিসেবে ধরে আমার চিন্তা- চেতনা আবর্তিত হয়েছিলো। পরবর্তী জীবনে অধিকতর পড়াশুনা আর তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে আমার সেই হাইপোথিসিস আমি চূড়ান্তভাবে প্রমাণ করতে পেরেছিলাম।

আমি স্কুল জীবন থেকে শুনে আসছিলাম, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করা যাবে না কারণ যারা তাঁকে  হত্যা করেছে, তারাই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল। পরবর্তীতে আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানতে পারলাম, এই বিচার করা যাবে না কারণ ১৫ই আগস্টের পরের অবৈধ সরকার গুলো আইন করে বিচার বন্ধ রেখেছে।  এই আইন সম্পর্কে কেও কেও এমনভাবে উপস্থাপন করতো যেন এটি একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তামূলক আইন এবং এই আইনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের একজন ‘শত্রুর’ হত্যার বিচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা কি রকম একটা বর্বর, নির্মম, অসভ্য আর পৈশাচিক অবস্থার মধ্যে ছিলাম যে, রাষ্ট্রের জনক আর জাতির পিতার প্রতি এই ধরণের আচরণ করেছিলো এই দেশেরই  কিছু মানুষরূপী পিশাচ। এরা আর কেও নয়; পঁচাত্তরের খুনি এবং পঁচাত্তর পরবর্তী অবৈধ সরকার পরিচালনাকারি ব্যক্তি গুলো আর তাদের সুবিধাভোগী কুলাঙ্গাররা।  আমার যতদূর মনে পরে, এই কালো আইন নিয়ে কেও প্রকাশ্যে কথা বলতো না। তবে পাকিস্তানপন্থী ও স্বাধীনতা বিরোধী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তিদেরকে এই আইনের পক্ষে কথা বলতে শুনেছি। আমরা তাদেরকে চ্যালেন্জ‌  করলে তারা আবার পিছু হটত।

আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের আগে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বন্ধ করার আইনটির নাম আমি  জানতাম না। ঐ সময়ে পত্র পত্রিকায় এই কালো আইনটির নাম কখনও আসতো না। আমার ধারণা, দেশের হাতে গোণা কয়েকজন ব্যক্তি ছাড়া এই আইনটির নাম দেশের কোন মানুষই জানতো না। ১৯৮৮-৮৯ সেশনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের আইন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর থেকে আমি বেশ গুরুত্ব দিয়ে আইন বিষয়ক অধ্যয়ন শুরু করলাম। ১৯৮৯ সালে ড. আলীম আল রাজীর The Constitutional Glimpses of Martial Law বইয়ে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স  নামটি প্রথম আমি দেখেছিলাম; যদিও বইটিতে মূলত আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনৈতিক দর্শন প্রতিফলিত হয়েছিলো। ড. আলীম আল রাজীর বই এ  ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স  নামটি দেখার পর আমি এই  আইনটি সংগ্রহ করে ভাল ভাবে পড়লাম; যতবারই পড়েছি, ততবারই অবাক হয়েছি। কোন সভ্য দেশে এই রকম একটি আইন থাকতে পারে, সেটি আমি বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আইন শাস্রের একজন ছাত্র হিসেবে এই কালো আইনটিকে জুরিস্প্রুড্যান্স, আমাদের সংবিধান এবং দেশের অপরাপর আইনের আলোকে বিশ্লেষণ করলাম। প্রতিটি বিশ্লেষণে দেখলাম, এটি একটি অসভ্য ও বর্বর আইন। একজন আইনের ছাত্র হিসেবে ১৯৮৯ সাল থেকেই এই কালো আইনটি নিয়ে আমি গবেষণা শুরু করেছিলাম। ১৯৯১ সালে আমি এটি নিয়ে একটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ লিখেছিলাম।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র অবস্থায় এই কালো আইনটি নিয়ে আমি অনেক কাজ করেছিলাম। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই বিভাগেরই ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক হিসেবে সরকার ও রাজনীতি, সাংবিধানিক আইন, হিস্ট্রি অফ পলিটিকেল থট, রোমান আইন ইত্যাদি বিষয় আমি পড়িয়েছিলাম। পরবর্তীকালে যুক্তরাজ্যের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি জ্বালানি আইন ও পলিসি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছিলাম। মূলত আমার গবেষণা জীবনের হাতেখড়ি হয়েছিলো ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স নিয়ে গবেষণার মাধমেই। ছাত্র জীবনে এই কালো আইনের বিরুদ্ধে অনেক স্লোগান দিয়েছিলাম। ঐ সময় গুলোতে এই আইনের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক প্রতিবাদ আর ঘৃণা উচ্চারিত হয়েছিলো।  

এই কালো অধ্যাদেশটি ১৯৭৫ সালের ১৯ নম্বর (XIX) অধ্যাদেশ হিসেবে গেজেট ভুক্ত হয়। অন্যান্য আইনের মতো এটির লং টাইটলে (Long Title) এই কালো আইনটির উদ্দেশ্য বর্ণিত হয়। এতে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কর্ম সম্পাদন সহ এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত ছিল,তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো আইনি পদক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

অধ্যাদেশটির প্রথম অংশে বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকুরি সংক্রান্ত আইন সহ অন্যান্য আইনে যা কিছু  থাকুক না কেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কর্ম সম্পাদনসহ এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত ছিল,তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট এবং সামরিক আদালত (কোর্ট মার্শাল) সহ কোন আদালতে সকল প্রকার মামলা সহ যে কোন আইনি ব্যবস্থা কিংবা শৃঙ্খলা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না ।

অধ্যাদেশটির দ্বিতীয় অংশে বিধান করা হল, প্রত্যেক খুনির অনুকূলে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক একটি সার্টিফিকেট ইস্যু করা হবে এবং এই সার্টিফিকেট ধারী খুনিদের এই হত্যাকাণ্ড ও অবৈধভাবে সরকার উৎখাতের ঘটনার কারণে কোন বিচার করা যাবে না।

এই অর্ডিন্যান্সে যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল শুধুমাত্র তাদেরকেই বিচারের বাইরে রাখা হয়নি, যারা পরিকল্পনায় যুক্ত ছিল তাদেরকেও রক্ষা করা হয়েছিলো। এই অর্ডিন্যান্সে সুস্পষ্টভাবে সেটি উল্লেখ আছে। আমাদের দণ্ডবিধিতে যে সকল অপরাধের সংজ্ঞা দেয়া আছে, তাতে আলাদা ভাবে এটি বলা নেই যে, অপরাধের পরিকল্পনার সাথে যারা যুক্ত, তারাও অপরাধী। এটি আলাদা ভাবে বলার প্রয়োজন পড়ে না; কারণ এটিই আইনের মূল বিধান যে, অপরাধের পরিকল্পনার সাথে যুক্ত ব্যক্তিও অপরাধী। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে এটি আলাদা ও সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ করায় এটি বুঝা যায় যে, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী, ষড়যন্ত্রকারী ও আয়োজকরা নিজেদের রক্ষার জন্য বেশ সতর্ক ছিল। বাংলাদেশের আইনি ইতিহাসে আমরা দেখেছি, অর্ডিন্যান্স জারী করতে দুই-একদিন সময় লাগে। ১৫ই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সকল ষড়যন্ত্রকারীকে রক্ষার জন্যই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারী করতে খুনি মোশতাক-জিয়া সরকার এক মাস এগারো দিন সময় নিয়েছিল। তৎকালীন সময়ের আইন মন্ত্রনালয়ের কর্মকর্তাদের দিয়ে তারা এই আইনের খসড়া অত্যন্ত সতর্কতার সাথে প্রস্তুত করেছিলো। 

পৃথিবীর ইতিহাসে বিভিন্ন দেশের রাজা, সম্রাট, রাষ্ট্র প্রধান বা সরকার প্রধান হত্যার বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়। এই ধরণের হত্যাকাণ্ড কে  ‘রেজিসাইড’ (regicide) বলা হয়। ইতিহাসের প্রাপ্ত  তথ্য অনুযায়ী খ্রিষ্টপূর্ব ১৯৫২-এ  প্রথম ‘রেজিসাইড’ সংঘটিত হয়। এই ধরণের ঘটনা যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে। তবে পৃথিবীর কোথাও  ‘রেজিসাইড’ সংঘটিত হওয়ার সময় পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়নি। ১৫ই আগস্টে জাতির পিতাকে তার পুরো পরিবার, এমনকি শিশু পুত্র রাসেল কে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, এই রকম নৃশংস ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেনি। পৃথিবীর কোথাও ‘রেজিসাইড’ এর ক্ষেত্রে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মতো কালো আইন প্রণয়ন করা হয়নি। পৃথিবীর ইতিহাসে এই রকম দ্বিতীয় ঘটনা আর ঘটেনি।

জাতির পিতাকে হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির ফলে তিনটি মৌলিক বিষয় সামনে চলে এসেছিলঃ এক. পৃথিবীতে ‘রেজিসাইড’ এর ঘটনা অনেক থাকলেও কোন রাষ্ট্রের জনকের হত্যার ঘটনা খুবই বিরল। রাষ্ট্রের জনকের হত্যা আর রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের হত্যার ঘটনা এক বিষয় নয়। রাষ্ট্রের জনককে হত্যা মানে রাষ্ট্রকেই হত্যা আর জাতির পিতাকে হত্যা মানেই জাতিকে হত্যার সামিল। এটি শুধু হত্যাকাণ্ডই নয়, এটি সরবচ্ছ রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ। কোন রাষ্ট্রের জীবদ্দশায় সেই রাষ্ট্রের জনকের হত্যার বিচার সেই রাষ্ট্রে নিষিদ্ধকরণের আইন জারীর ঘটনা রাষ্ট্র বিজ্ঞান ও জুরিসপ্রূডেন্সে নেই। এই ঘটনায় একটি সভ্য রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের আর কোন মর্যাদা রইল না; স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য যে মর্যাদা জাতির পিতাই আমাদের জন্য এনে দিয়েছিলেন।

দুই. এই কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির ফলে এদেশে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। গনতন্ত্রের বিপরীতে ষড়যন্ত্রের রাজনীতি, নির্বাচনের বিপরীতে হত্যা, ক্যু ও খুন-খারাবির রাজনীতি এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পরিবর্তে সংবিধান বহির্ভূত- অসাংবিধানিক ও সামরিক শাসনকে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স এদেশে সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে নির্বাচনের পরিবর্তে হত্যা, ক্যু আর ষড়যন্ত্রকেই মূল পদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। 

তিন. কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স এদেশে আইনের শাসনের পরিবর্তে বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করেছিলো। আমাদের সংবিধান এবং আইন অনুযায়ী কোন ব্যক্তিই আইনের ঊর্ধ্বে নয়; বিশেষ ভাবে, দেশের ফৌজদারি আইন সকলের জন্যই প্রযোজ্য। সকল দেওয়ানি আইন সবার জন্য প্রযোজ্য না হলেও, ফৌজদারি আইন সমুহ সবার জন্য প্রযোজ্য। কেউই ফৌজদারি আইনের ঊর্ধ্বে নয়। অর্থাৎ কেও অপরাধ করলে তার বিচার হবেই। দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী অপরাধের বিচার থেকে অব্যাহতি পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী কেবলমাত্র রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা দায়ের করা যায় না বা চালু রাখা যায় না এবং তাঁর গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত হতে পরোয়ানা জারী করা যায় না। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একই বিষয়ে আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের এবং তাঁর বিচারের ক্ষেত্রে কোন আইনি বাধা নেই।

১৫ই আগস্টের পর থেকে খুনিদের পক্ষে একটা কথা বলা হচ্ছিল – তাদের বিচার করা যাবে না, কারণ তারা বিপ্লবী; এদেশে তারা বিপ্লব সংঘটিত করেছে। ১৫ই আগস্টকে তারা বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছিলো ! বিপ্লব অর্থ কি ? কেন খুনিরা স্বপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে বিপ্লব হিসেবে অভিহিত করেছিলো? তাদের এই উক্তিতেই ৭৫ এর এই হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য উদ্ঘাটিত হয় । বিপ্লব অর্থ হচ্ছে একটা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থা ধ্বংস করে আরেকটি নতুন রাষ্ট্র ও সমাজ প্রতিষ্ঠা করা। প্রতিটা বিপ্লবের ক্ষেত্রে সে দেশের জন্য নতুন সংবিধান তৈরি করা হয়। রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনা হয়। খুনিরা এবং ১৫ই আগস্টের সুবিধাভোগীরা ১৫ই আগস্ট কে বিপ্লব বলেছিল, কারণ তারা জাতির পিতাকে হত্যা করে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ধ্বংস করে পাকিস্থান পন্থী একটি বিকৃত রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিল। ১৫ই আগস্টের পর তারা সংবিধানকে যেভাবে ক্ষত- বিক্ষত করে এর মৌলিক আদর্শ গুলো বাতিল করেছিলো, তাতেই এটি প্রতিফলিত হয় যে, তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মৌলিক চরিত্র পরিবর্তন করে আরেকটি বিকৃত রাষ্ট্র তৈরি করতে চেয়েছিল।

রাষ্ট্র ধ্বংসকারী এই অপরাধের জন্য তাদেরকে হত্যাকাণ্ডের পাশাপাশি রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধেও বিচার করা যেতো। আবার, তৎকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীতে কর্মরত খুনিদেরকে কোর্ট মার্শালেও বিচার করা যেতো। সেই আশংকা থেকেই খুনি মোশতাক- খুনি জিয়ার যৌথ সরকার ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে একটি overriding clause  যুক্ত করে। তাতে  ‘অন্যান্য আইনে যা কিছু  থাকুক না’ শব্দগুলো যুক্ত করে। ঐ overriding clause  এ বলা হয়,  প্রতিরক্ষা বাহিনীর চাকরি সংক্রান্ত আইন সহ অন্যান্য আইনে যা কিছু  থাকুক না কেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালে ঐতিহাসিক পরিবর্তন এবং সরকার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এর পরিকল্পনা, প্রস্তুতি ও কর্ম সম্পাদনসহ এই ঘটনার সাথে যারা যুক্ত ছিল,তাদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট এবং সামরিক আদালত (কোর্ট মার্শাল) সহ কোন আদালতে সকল প্রকার মামলা সহ যে কোন আইনি ব্যবস্থা কিংবা শৃঙ্খলা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না।

কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সে খুব সতর্কভাবে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের ষড়যন্ত্রকারী ও পরিকল্পনাকারীদের বিচারের বাইরে রাখা হয়েছিলো, কারণ এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল জিয়াউর রাহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সাথে সাথেই জিয়া সেনা প্রধান নিযুক্ত হয়। খুনি জিয়া সহ সকল পরিকল্পনাকারীদের রক্ষা করতেই এই বিধান করা হয়। খুনি জিয়া জাতির পিতার হত্যার মূল ষড়যন্ত্রকারী ছিল বলেই ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির প্রায় চার বছর পর জিয়ার রাবার স্ট্যাম্প পার্লামেন্টে  ১৯৭৯ সালে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স কে কন্সটিটিউশনাল রেটিফিকেশন প্যাকেজের আওতাভুক্ত করে একে বৈধতা দেয়া হয়। সাংবিধানিক আইন অনুযায়ী এই ধরণের বৈধকরণ প্রক্রিয়া অসাংবিধানিক ও অবৈধ। বাংলাদেশের সরবচ্ছ আদালত এই পঞ্চম সংশোধনীকে অসাংবিধানিক ও অবৈধ ঘোষণা করেছে। খুনি জিয়া নিজেকে রক্ষার জন্য এবং তার অসাংবিধানিক শাসনকে নিষ্কণ্টক রাখার জন্য ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সকে স্থায়ি আইনে পরিণত করতে চেয়েছিল। সেজন্যই পঞ্চম সংশোধনীতে এটি অন্তর্ভুক্ত করেছিলো।

একটি স্বাধীন দেশে সেদিন সপরিবারে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডকে মধ্যযুগীয় কায়দায় ‘ডকট্রিন অফ নেসেসিটির’ (Doctrine of Necessity) কথা বলে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধতা দেয়া হয়। খুনি চক্রের এই ঘৃণ্য বৈধকরণ প্রক্রিয়া এদেশে বহু বছর অব্যাহত ছিল। আগস্ট হত্যার মূল পরিকল্পনা কারীদের পরামর্শে খুনি মোশতাক কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে জাতির পিতার হত্যার বিচার প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রেখেছিল। পিতার হত্যার বিচারের জন্য আমরা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। ১৫ই আগস্ট পরবর্তী সরকারগুলো ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্সের দোহাই দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করতে দেয়নি। তারা মূলতঃ খুনিদের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছিল। ১৯৯১ সালে সংসদীয় গনতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের পর আমরা সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিলের দাবি করেছিলাম। বিএনপি তখন বলেছিল, এই অর্ডিন্যান্স বাতিল করা যাবে না, কারণ এটি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের অংশ হয়ে গেছে। আমরা বার বার বলেছিলাম, এটি একটি সাধারণ আইন যা সংসদে Simple Majority দিয়ে বাতিল করা যায়। তারা বিচারের ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলো। তাদের ঐ পাঁচ বছরের মেয়াদে জাতির পিতার হত্যার বিচারের বিষয়ে তারা একটি ইতিবাচক কাজও করেনি। বরং তারা খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো; তাদের পুরস্কৃত করেছিলো। জিয়া, এরশাদ ও খালেদার সরকার খুনিদের রাষ্ট্রদূতসহ বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে চাকুরী দিয়েছিল। আশির দশকে সরকারের পক্ষ থেকে খুনিদের একটি ব্যাংকও দেয়া হয়। এমনকি পরবর্তীতে ১৫ই ফেব্রুয়ারির প্রহসনমূলক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম খুনি রশিদকে খালেদা জিয়া বিরোধীদলীয় নেতা বানিয়ে জাতীয় সংসদকে কলঙ্কিত করেছিলো।

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আমরা জয়লাভ করে সরকার গঠন করে সংসদে কুখ্যাত ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স বাতিল করেছিলাম। এর ফলে প্রচলিত আদালতে সপরিবারে জাতির পিতার হত্যার বিচার শুরু হয়েছিলো। ট্রায়াল কোর্ট হিসেবে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালত মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেছিলো। পরবর্তীতে ২০০১ সালে বিএনপি জামাত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর উচ্চতর আদালতে এই মামলার কার্যক্রম উদ্দেশ্যমূলক ভাবে থামিয়ে দিয়েছিলো। পরবর্তীতে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ জয়লাভ করে সরকার গঠন করার পর উচ্চতর আদালতে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের ক্ষেত্রে বিএনপি- জামাতের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত হয় এবং বহু প্রতিক্ষিত এই বিচার সম্পন্ন হয়। মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত কয়েকজন খুনি এখনও বিদেশে পলাতক থাকায় রায় এখনও সম্পূর্ণরূপে কার্যকর করা যায়নি। পলাতক খুনিদের খুজে বের করে এই রায় কার্যকর করার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট বিদেশি রাষ্ট্র সমুহ সহ সকলের সহযোগিতা চাই। এছাড়া, বিচারের সময় জীবিত না থাকার কারণে জিয়া-মোশতাক সহ এই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনা কারীদের বিচার করা যায়নি। আমরা মনে করি, ইতিহাসের একটি ধারাবাহিকতা ও অগ্রাধিকার রয়েছে। এই আলোকে এখন সময় এসেছে জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী এবং  সুবিধাভোগীদের নাম উম্মোচিত করার।

যারা আজ অপপ্রচার চালাচ্ছে, এই দেশে ন্যায় বিচার নেই । তাদের উদ্দেশে বলছি, আপনারা ন্যায় বিচারের কথা বলছেন। শেখ হাসিনার সরকার এদেশে আইনের শাসন ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছে। খুনি মোশতাক - খুনি জিয়া গং এবং তাদের লিগ্যাসি যারা বহন করেছে, তারাই বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত করেছিলো। ২১ বছর আমরা ন্যায় বিচার তো দূরের কথা, বিচারই চাইতে পারিনি। বিচার চাওয়ার জন্য মামলাই করতে পারিনি। আমাদের বিচার চাইবার অধিকারই ছিল না। আজ তারা গণতন্ত্র, আইনের শাসন আর  মানবাধিকারের কথা বলছেন ।তারাই এদেশে জাতির পিতার হত্যার বিচার অবৈধ আইন করে বন্ধ রেখেছিলো। তাদের মুখে আইনের শাসন আর মানবাধিকারের কথা মানায় না। আইনের শাসন ও মানবাধিকারের নীতির আলোকে এই ধরণের ঘটনা চিন্তাও করা যায় না।

 

লেখকঃ তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন