নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ১৫ অক্টোবর, ২০২০
‘মাংস খেলে মাংস বাড়ে
ডিমে বাড়ে বল,
দুধ খেলে বুদ্ধি বাড়ে
শাকে বাড়ে মল্।
দুধ প্রকৃতির একটি শ্রেষ্ঠ পানীয়। মেধা ও স্বাস্থ্য গঠনে দুধের ভূমিকা অত্যাবশকীয়। শুধুমাত্র ভিটামিন সি এর কিছুটা ঘাটতি ছাড়া দুধে খাদ্যের সকল উপাদান সুষয় অবস্থায় বিরাজ করায় এটিকে আদর্শ খাদ্য হিসাবে সারা বিশ্বে বিবেচনা করা হয়। শিশু, তরুণ-তরুণী, বয়স্ক, নারী-পুরুষ সকলের জন্যই এটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় পানীয়। সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক ২৫০মিলি দুধ খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
শিশুদের জন্য মায়ের দুধের বিকল্প নাই। বয়সের সাথে সাথে বেড়ে উঠা শিশুর পরিপূরক খাদ্য হিসাবে ও যেখানে মাতৃদুগ্ধের অভাব রয়েছে সেখানে এবং সেই সাথে পুর্নাঙ্গ মানবজীবনের চাহিদায় গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলসহ ও অন্যান্য প্রাণীর দুগ্ধ প্রয়োজনীয় পুষ্টি প্রদান করে। দুধে রয়েছে প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ উপাদান ল্যাকটোজ যা শিশুর মস্তিষ্ক বর্ধনে সহায়তা করে। দুধ ছাড়া অন্য কোন খাদ্যে ল্যাকটোজ নাই। জন্মের পর ছয়/সাত বছরের মধ্যেই মানব শিশুর মস্তিষ্কের প্রায় ৯০% বর্ধন শেষ হয়ে যায়। তাই এই বর্ধনকালে দুধের প্রয়োজনীয়তা বেশী। তাছাড়া দুধে রয়েছে উন্নতমানের আমিষ যার মধ্যে সকল প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান থাকায় যে কোন আমিষের তুলনায় এটিকে শ্রেষ্ঠ আমিষ বলা হয়। দুধের চর্বিতে ৪০% অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড এবং প্রচুর পরিমানে অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান থাকায় এটি গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগলসহ ও অন্যান্য প্রাণীর চর্বির তুলনায় নিরাপদ। তাছাড়া দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, মেগনেশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ পদার্থ। ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি অস্থিগঠনে সহায়ক। রাত্রে ঘুমের আগে এক গ্লাস দুধ পান করলে ভাল ঘুম হয় এবং হাইপারটেনশন কমাতে সাহায্য করে। দুধে রয়েছে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন যা আমাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তাছাড়া দুধে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন ধরনের বায়োএকটিভ উপাদান ও কনজুগেটিড লিনোলেনিক এসিড যা শরীরে ক্যান্সার প্রতিরেধ করতে সহায়তা করে।
দুধের খাদ্যগুণ, পুষ্টিগুণ ও ভেষজগুণ বর্ণনাতীত। দেড় হাজার বছর আগে বিজ্ঞান যখন অন্ধকারে তখন নবীজী (সাঃ) দুধ সম্পর্কে বলেন, দুধ হার্টের জন্য ভালো। দুধ পানে মেরুদন্ড সবল হয়, মস্তিষ্ক সুগঠিত হয় এবং দৃষ্টিশক্তি ও স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়।
প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের ডাটা অনুযায়ী বাংলাদেশের ১৬ কোটি ৬৬ লক্ষ মানুষের (১ জুলাই ২০১৯ এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী) জন্য প্রতিবছর চাহিদাকৃত তরল দুধের পরিমান ১৫২.০২ লক্ষ মেট্রিক টন। দেশের চাহিদা মেটাতে গত ১০ বছরে তরল দুধ উৎপাদন প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি করে বাৎসরিক উৎপাদন ২৩.৭০ মেট্রিক টন থেকে মোট ১০৬.৮ লক্ষ মেট্রিক টনে উন্নিত করা হয়েছে, যাহা চাহিদার তুলনায় এখনও কম। দুধ উৎপাদনে দেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করতে হলে এখনই কিছু বাস্তব মুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরী প্রয়োজন। যদিও অনেক আগে থেকেই আমাদের প্রতিবেশী দেশ সমুহ যেমন ; ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকাসহ দক্ষিণ-পূ্র্ব এশিয়ার দেশ গুলি হাই-টেক ডেইরি খামার স্থাপন করে দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জন করছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কারণে দেশের জনগনের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির সাথে সাথে পুষ্টিকর খাদ্য বিশেষ করে প্রাণীজ আমিষ ( প্রোটিন ) যেমন- দুধ, মাংস , ডিম গ্রহণের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। একই কারনে প্রতিবছরেই দুধের চাহিদাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে দুধের ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশ সরকার তরল দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য বিভিন্ন কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা সত্বেও চাহিদাপূরণ হয়নি। দেশে বর্তমানে দুধের ঘাটতি বছরে ৪৫.২২ লাখ মেট্রিক টন এবং অতীতে দুধের এই ঘাটতি আরও প্রকোট ছিল। এই ঘাটতি পূরণে বিদেশ থেকে গুড়া দুধ ও ক্রিম আমদানী করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে ২,৬২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ১,৩৮,০০০ মেট্রিক টন গুড়া দুধ আমদানী করা হয়েছে। যাতে একদিকে যেমন দেশের ডেইরী শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে প্রতিবছর অনেক বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। আমদানি করা এসব দুধের মাণ নিয়ে জনমনে সংশয় আছে। তাই, কৃ্ষি নির্ভর আমাদের এই দেশে প্রটিনের চাহিদা মিটাতে অধিক পরিমাণে দুধ ও মাংস উৎপাদন সময়ের দাবী ।
২০১৯ সালের ২২ জুন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বলেন, ‘বিদেশ থেকে যে সব দুধ আমদানি করা হচ্ছে সেগুলো ভ্যাজিটেবল ফ্যাট মিশ্রিত। এসব দুধ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর।’ নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ‘জাতীয় বাজেটে গুঁড়া দুধের আমদানি শুল্কের যে মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটা কোনো অবস্থাতেই পর্যাপ্ত নয়। এটা দেশের স্থানীয় খামারিদের জন্য কোনো উপকারেই আসবে না, বরং দেশের দুগ্ধ শিল্পের জন্য এটি হুমকিস্বরূপ।’
প্রানীসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে দৈনিক ২৯,২৬০,০০০ লিটার (২৯,২৬০ মেট্রিক টন) তরল দুধ উৎপাদিত হয়। তন্মধ্যে ১৪,৬৩,০০০লিটার (৫%) প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করা হয়। ২৩,৭০০,০০০ লিটার (৮১%) তরল দুধ সাধারন মিষ্টির দোকানে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ৪০,৯৭,০০০ লিটার (১৪%) বাড়ি বাড়ি গ্রাহকরা ক্রয় করে ব্যবহার করে থাকে। অর্থ্যাৎ মোট উৎপাদিত তরল দুধের চারপঞ্চমাংশেরও বেশী পরিমান মিষ্টির দোকানে বিক্রয় হয়। ফলে বেশীরভাগ দুগ্ধ খামারীদের ব্যবসা, বিনিয়োগ, বিপনন মিষ্টির দোকানদারদের মর্জির উপর নির্ভরশীল। প্রাকৃতিক পরিবেশ বা সামাজিক অস্থিরতার কারনে বা যে কোন কারনে মিষ্টির দোকানদাররা দুধ ক্রয় না করলে খামারীরা বিপাকে পরে যায়।
২০১৫ সালে টানা অবরোধ-হরতালে পাবনা জেলার ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার দুগ্ধ খামারিরা চরম বিপাকে পড়েছিলেন। ক্রয়কেন্দ্রগুলো নিয়মিত দুধ না কেনায় ৫০ টাকা দরের প্রতি লিটার দুধ বিক্রি করতে হয়েছিল ১২ থেকে ১৫ টাকায়। ভাঙ্গুড়া উপজেলার বিক্ষুব্ধ খামারিরা প্রায় দুই হাজার লিটার দুধ সড়কে ঢেলে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। ২০১৯ সালে হাইকোর্ট মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এন্টিবায়োটিক ও সীসার উপস্থিতির প্রেক্ষিতে বিএসটিআই’র অনুমোদনপ্রাপ্ত ১৪টি কোম্পানির পাস্তুরিত দুধ উৎপাদন ও বিপণনে পাঁচ সপ্তাহের নিষেধাজ্ঞা জারি করায় চারটি প্রতিষ্ঠান খামারিদের কাছ থেকে দুধ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। ফলে পাবনার ভাঙ্গুরা উপজেলায় রাস্তায় দুধ ঢেলে প্রতিবাদ করেছেন দুগ্ধ খামারিরা।
এমনি বাস্তবতায় বর্তমানে দেশের দুধের চাহিদা মিটানোর জন্য গাভী পালন একটি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে বিবেচিত হচ্ছে। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে দুগ্ধশিল্প অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। এখনো দেশের বিরাট জনসংখ্যা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সাধারণত কৃষকেরাই দুগ্ধশিল্পের সঙ্গে জড়িত। দুগ্ধ খামার ব্যবসা বাংলাদেশের কৃষি ব্যবসাগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশে দুগ্ধ খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশে লাখ লাখ বেকার যুবক সাবলম্বী হয়ে উঠছে। দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
আমাদের দেশে স্বাধীনতাপূর্ব কাল থেকে কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে গাভীর জাত উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যহত আছে, তথাপি উন্নত জাতের গাভী দ্বারা খামার স্থাপনের পরিকল্পনা করলে এক সাথে দুই-একশত গাভী দেশের কোন এক বা একাধিক অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা যায় না ।
বর্তমান বিশ্বে বহুল প্রচলিত এবং ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ার দেশ সমূহ এবং মধ্যপ্রাচ্য , মিশর, সৌদি আরব ইত্যাদি দেশের অনুসরণে উন্নত প্রযুক্তির সমন্বিত হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেইরি ফার্ম স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা ও তা’ বাস্থবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য আগ্রহী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন। এ জন্য দেশি-বিদেশী কারিগরি পরামর্শ নিয়ে যথাযত উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে অধিক উৎপাদনশীল জাতের পিউর ব্রীড গাভী লালন পালন করা জরুরী।
বাংলাদেশে দুধ উৎপাদন বৃ্দ্ধিতে উন্নত জাতের অধিক উৎপাদনশীল জাতের গবাদি পশু পালনের বিকল্প নাই । তাই, বাংলাদেশের আব-হাওয়ায় উন্নত জাতের পিঊর ব্রীড গবাদিপ্রাণি লালন পালনের অন্তরায় সমুহ দূর করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য দেশীয় খামারীদের উৎপাদিত দুধ বিপননের নিশ্চয়তা ও আর্থিক প্রনোদনা প্রদান করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রান্তিকভাবে প্রতিষ্ঠিত দুগ্ধ খামারীদের নিকট থেকে দুধ সংগ্রহ করে, প্রক্রিয়াজাত করে বিপনন করা প্রয়োজন। দেশের চাহিদা মোতাবেক খাঁটি তরল দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করে অতিরিক্ত তরল দুধ থেকে গুড়া দুধ উৎপাদনে শিল্পোদোক্তাদের উৎসাহিত করা উচিত। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে, গ্রাহক নির্ভেজাল গুড়াদুধের নিশ্চয়তা পাবে, কর্মসংস্থান হবে এবং দেশীয় দুগ্ধশিল্প আরও সম্প্রসারিত হবে।
গুড়া দুধ আমদানী বন্ধ করে স্থানীয় খামারিদের সরকারি সাহায্য ও প্রণোদনার মাধ্যমে দুগ্ধ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা জরুরী। যদি গুড়াদুধ আমদানী নিরুৎসাহিত করা এবং দেশীয় খামারিদের প্রণোদনা ও সরকারি সাহায্য প্রদান না করা হয়, তাহলে দেশের দুগ্ধখামার শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে। আমরা যদি দুগ্ধশিল্পের উন্নয়ন করতে পারি তাহলে এ খাতে আরও কর্মসংস্থান হবে, একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতি আরও সমৃদ্ধ হবে।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।