ইনসাইড থট

আগামী প্রজন্মর স্বপ্ন যাত্রা এবং চাওয়া পাওয়ার হিসেবে-নিকেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৫৭ এএম, ২০ নভেম্বর, ২০২০


Thumbnail

আফগানিস্তান এর রাজধানী কাবুল। আর সেখান থেকে আসা কাবুলিওয়ালাকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা গল্প থেকে  বাংলাদেশের মানুষ কম বেশি জানে। কারণ মিনিকে নিয়ে লেখা এই গল্পটি আমাদের পাঠ্যসূচিতে ছিল এবং এখনো সেটা ৭ম শ্রেণীতে আছে।  কাবুলিওয়ালার আফগানিস্তান ভুল রাজনীতির কারণে সুন্দর আধুনিক ইরানের মতো এক সময় হয়ে গেলো  কট্টরপন্থী তালেবানদের রাজ্য। ১৯৭৫ সালের শেষ থেকে বাংলাদেশও জয় বাংলা ছেড়ে জিন্দাবাদের পাল তুললো। তালেবানরা অত্যাধুনিক অস্ত্র ও সামরিক শিক্ষা পেয়েছিলো গণতন্ত্রের সূতিকাগার বলে পরিচিত মানব ও ধর্মীয় স্বাধীনতার ধারক যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সমালোচকদের মতে তালেবানদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাশিয়াকে দাবিয়ে আর ভারতকে চাপিয়ে রাখা। তালেবানদের পাশে সে সময় ধর্ম ভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানও ছিল । আজ যে চীনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈরিতা সেই চীনও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারগুলোর বন্ধু ছিল।


যুক্তরাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষতার পরিবর্তে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে বেশি গুরুত্ব দেয়।  এর একটি সুফল আছে।  আর সেটা হলো গণতন্ত্র ও ধর্ম একসঙ্গে চলতে পারে।  ধর্ম নিরপেক্ষতা রাষ্ট্রকে ধর্মীয় পৃষ্টপোষকতা থেকে দূরে রাখে।  সেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতা অন্য ধর্মকে সন্মান করবার পাশাপাশি অধিকাংশ মানুষের গণতান্ত্রিক দাবিকে পূরণ করা সম্ভব হয়।  যেমন বাংলাদেশ সরকার রাষ্ট্রীয় ভাবে ইসলাম ধর্ম শিক্ষার ও চর্চার জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারে।  এবং ইসলাম ধর্মের পৃষ্টপোষকতাও করতে পারে। আর যদি এর বিপরীত কিছু করে তবে গণতন্ত্র নিচের চাপা পড়ে। চাপা পড়া গণতন্ত্র হয় হলুদ ঘাসের মত।  তাতে গরুর উদরপূর্তি হয় বটে তবে মনোরম সবুজের সৌন্দর্য থাকে না। সেই সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সংলাপ জরুরি। 

প্রথম দিকে তালেবানরা পাকিস্তানে সেনানিবাসে ছিল।  ১৯৮৪ সালে লাহোর শহর থেকে সোয়াত বেড়াতে যাবার সময় তাদেরকে আমি প্রথম দেখতে পেয়েছিলাম।  দামি ও ভারী অস্ত্রে   ১৯৭১ সালেও দেখতে পেয়েছি পাকহানাদারদের এবং ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত জিয়ার আমলে ,১৯৮২ সাল থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত লেজেহোমো এরশাদের সামরিক শাসন আমলে।  হটাৎ করে ২০০১ সালের শেষ দিকে তালেবানরা যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের নজর কাড়লো বিশেষ ভাবে- সেটা রাশিয়ার কূটনীতিতে ।  আবার অনেকেই মনে করে বুশ একটি ডিফেক্টিভ নির্বাচনে জিতে স্বস্তি পাচ্ছিলেন না।  সুতরাং , যুদ্ধের দামামায় সকলের দৃষ্টি আটকিয়ে দেয়া একটি পথ তিনি খুঁজছিলেন।  আর এভাবে আফগানিস্তান , কুয়েত, ইরাক হয়ে উঠলো নতুন যুদ্ধ ক্ষেত্র।  ৯/১১-এ  ধসে পড়লো টুইন টাওয়ার। নির্বাচনের আগেই অবশ্য  বুশ মুসলিমদেরকে দেখবেন এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যেমনটি বিগত ৪ বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প করে যাচ্ছেন। মুসলিমদেরকে প্রতিনিধিত্ব করে যে দল ও দেশ গুলো তারা এবার ট্রাম্প ও বাইডেন উভয়ের কাছে গেছেন।  তারা একটু যত্ন সেখানে পেয়েছেন হয়তো।  সুতরাং, তারা সেটা জানান দেবেন নানা ভাবে।  ভাস্কৰ্য নিয়ে ফতোয়া কিংবা ধর্ষণ নিয়ে আন্দোলন তারা করছেন কেন সেটা সহজে অনুমেয়। ২০০১ সালে তারা ঐরকম লবি করতে পেরেছিলেন বলে অনেক ভাল কাজ করেও আওয়ামী লীগ কিন্তু জিততে পারেনি। মুক্তি যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে দেশ স্বাধীন করা দলটির কাছ থেকে ১৯৭৫ সালে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে অবৈধভাবে ২১ বছর তারা শাসন করেছে। সেই খুনি  ডালিম -রশিদ -মোশতাক -জিয়ার দোসররা বিদেশে বসে প্রকাশ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সামরিক বাহিনীকে উস্কানি দিচ্ছে। 

অভূতপূর্ব উন্নয়ন করে আওয়ামী লীগ নেতারা এখন হয়তো অনেক কনফিডেন্ট।  নেতারা হয়তো ভাবছেন ২০০১ সালের মতো কেউ ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না।  এরকম নিচ্চিত ডোনাল ট্রাম্পও ছিলেন কিন্তু । বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলে।  সেই বাস্তবতাকে মোকাবেলার জন্য আরও সতর্ক পদচারণার দরকার আছে।  ফস করে কিছু একটা বলে বা করে ফেললে বিপদ আসতে পারে।  যেভাবে মিথ্যে প্রচারণা চলছে এবং যেভাবে নিজের দলের লোক চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে সেটা ভেবে দেখতে হবে। চারপাশে বঞ্চনার হা হুতাশ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।  এই যেমনটি মাননীয় সাংসদ কাজী ফিরোজ রশিদ করেছেন। এরকম আরও অভিমত সহযোগী দলগুলোর নেতাদের মুখে শোনা যায়।  

 
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ বেলুচি সেনারা সকালে ফজরের আজান শুনে হতবাক হয়েছিল নাকি।  বাংলাদেশে হত্যাযজ্ঞ শুরুর প্রাক্কালে তাদের বলা হয়েছিলো পূর্বপাকিস্তান নাকি হিন্দুদের দখলে চলে গেছে।  তেমনি যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধুদের সৈনিকরা আফগানিস্তানে এসে দেখলো ভিন্ন চিত্র।  ইরাকে কোথাও তারা নিউ নিউক্লেয়ার বোমার অস্তিত্ব পেলোনা।  দিনে দিনে তারা যুক্ত হয়ে গেলো অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।  গত কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জানালেন অনেক অস্ট্রেলিয়ার সৈনিক যুদ্ধ অপরাধ করছেন। আজকের পত্রিকায় এসেছে অস্ট্রেলিয়ার সৈনিকরা অন্ততঃ ৩৯ জনকে হত্যা করেছে। আর গতকাল জানতে পারলাম ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সৈনিক সরিয়ে নিচ্ছে এবং সেটা তার প্রস্থানের আগে শুন্যের ঘরে নিয়ে আসবেন।  আমরা আরও জানছি আফগানিস্তানে নাকি ৩ ট্রিলিয়ন খনিজ সম্পদের ঠিকানা পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।  সমালোচকরা বলছেন সেটাই ছিল আফগানিস্তানে সৈন্য প্রেরণের উদ্দেশ্য। সেগুলোর ভাগাভাগি ও আহরণ যাতে বাঁধাহীন হয় সেজন্য তালেবাদেরকে আবার আপন করে নেয়া হচ্ছে কি ? এমন করে আপন করে আরও অনেকের ক্ষমতায়নের সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে কি? প্রশ্ন হলো যে মায়ের সন্তান আফগানিস্তানে গিয়ে যুদ্ধ অপরাধী হলো তার দায় কার ? তারা যে সব মায়ের বুক খালি করে কান্নার রোল উঠিয়েছিলো তাদের জন্য কে পাশে দাঁড়াবে?  


খবর হলো তালেবানরা আবার ফিরে আসছে আফগানিস্তানের রাজনীতিতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির পথ ধরে।  এই তালেবানদের বন্ধু শিবির বাংলাদেশকে তালেবান রাষ্ট্র বানাবার স্লোগান দিয়েছিলো।  এটা একটি ভয়ংকর ঘোষণা ছিল বলে বাংলাদেশে ও বিশ্ব রাজনীতির মাঠে ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে।  কিন্তু সেই পরিবর্তন আবার ভিন্ন আরেকটি পথ খুলেছে- যেকারণে মোদিরা গদি পেয়েছেন, এবং ভারতের রাজনীতিতেও এখন ধর্মের গন্ধ।  মোদী -ট্রাম্পের কূটনীতির কারণে কি সেই গন্ধ আবার বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে কি ?  ভারতে হয়তো পরিবর্তন আসতে পারে কারণ মোদী সরকারকে মনে প্রাণে অমর্ত্য সেনের মত ভারতীয়রা মেনে নেয়  নি।  আর কমলা -বাইডেন ভারতীয় শিবিরে কিছুনা কিছু প্রমিজ করেছেন যা পরিবর্তনের উদ্দীপক হতে পারে।  

বাংলাদেশে দিন দিন ধর্মভিত্তিক চেতনা বিভিন্ন বিষয়কে নিয়ন্ত্রণ করছে।  এবং তার সর্বশেষ প্রকাশ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিষয়ে ফতোয়া। যে আফগানিস্তানের কিশোরীরা স্কার্ট পরে ১৯৭৪ সালে স্কুল যেত তা যেমন অনেক বদলে গেছে। ২০০১ সালে যে তালেবানরা বৌদ্ধ মূর্তি ভেঙে বিশ্ব নেতাদের নজর করেছিল- সেখানে তালেবানরা আবার রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পাচ্ছে। তেমনি কি বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ?   ধর্ষণের কারণ পোশাক -একটি স্বতঃসিদ্ধে পরিণত হতে চলেছে তাদের ফতোয়ায় । অনুভব করেছেন কি?  

আফগানিস্তানে বহিরাগত সৈনিক আসায় বাংলার মিনিরা উদ্বেগের সঙ্গে হয়তো কাবুলিওয়ালার মুখখানা কল্পনা করতো। এখন সেই বাংলার মিনিরা এক মহাবিপদ দেখতে পাচ্ছে আগামী বাংলাদেশে। তাদেরকে হয়তো বোরখা পরে চলতে হবে আশংকা।  আরো অনেক শংকা আছে।  আর সেজন্য আমাদের রাজনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিদের দায় কোন অংশে কম নয়। একসময় আমরা ধর্মনিরপেক্ষতা , সমাজতন্ত্র , গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ নিয়ে দেশ গড়বার স্বপ্ন দেখতাম।  কিন্তু এই মূল্যবোধগুলো কেন জানি অবহেলিত এবং এগুলো যেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।  গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা যেন পরস্পর বিরোধী হয়ে উঠছে দিন দিন। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে গত কয়েকদিন আগে দুটি উপনির্বাচন হয়ে গেলো দেশে ।  সংবাদপত্রের অভিমত সেখানে গণতন্ত্র নির্মমভাবে পরাজিত।  


তবে গণতন্ত্র খোদ যুক্তরাষ্ট্রেই হোঁচট খাচ্ছে।  আল গোর, হিলারির কাছ থেকে বিজয় কেঁড়ে নিয়ে তারা এতো উন্মাদ হয়েছে যে কিছুতেই স্বচ্ছভাবে নির্বাচিত ৪৬ তম প্রেসিডেন্টকে একটি পক্ষ মেনে নিতে চাইছে না।  খুবই শঙ্কার বিষয় বিশ্ববাসীর জন্য।  সারা বিশ্ব বিশ্বাস করে যা তাকে অস্বীকার করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।  যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ভীষণ বিব্রত তাদের প্রেসিডেন্টের কথায়।  তিনি আগেই আমাদেরকে ফিনাইল কিংবা বিলিচিং দিয়ে করোনা মুক্ত করতে পরামর্শ দিয়ে বিশ্ববাসীর হাসির খোরাক হয়েছেন।এখন একটি মিথ্যেকে সত্য বানাবার চেষ্টা করছেন। আমরা যে আগামী প্রজন্মকে স্বপ্ন ও আদর্শ দিতে ব্যর্থ হচ্ছি সেটা স্বীকার করা যেমন জরুরি, তেমনি এখনই সময় আরেকটি রূপরেখা রচনা দরকার যেমনটি ১৯৯০ সালের ১৯ নভেম্বর রাজনীতিবিদরা দিতে সমর্থ হয়েছিলেন।  আমাদের নির্বাচন কমিশন স্পষ্টতঃই যে পথ হারিয়েছে সেটা আর বলবার অবকাশ নেই।  তাদের ব্যর্থতায় ১১ টি বাস পোড়ানো হয়েছে মানতে হবে।  যদিও সত্য মানতে পারা খুবই কঠিন।  একজন ৭৫ হাজার ভোট পায় আর আরেকজন ৫ হাজার সেটা কেন তা খুঁজতে হবে। পত্রিকার পাতায় রাজনীতিবিদরাও বলছেন আমলারা সকল অর্জন ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধ্বংস করেছে নির্বাচন ব্যবস্থাও। ওই আমলা সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হতে হবে। কিন্তু কিভাবে ?
     
তদবিরে যাকে-তাকে ‘কী পয়েন্টে’ বসিয়ে দিচ্ছেন কি ?
সরকারের বিরুদ্ধে মাননীয় সাংসদ জনাব কাজী ফিরোজ রশিদ অভিযোগটির যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। তিনি বলেছেন: “আমলাদের মধ্য থেকে তদবিরে যাকে-তাকে ‘কী পয়েন্টে’বসিয়ে দিচ্ছেন।“ অভিযোগটা আরও কঠোর হতো যদি তিনি বলতেন - ১৯৭৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত বিগত ২৬ বছর যারা ক্ষমতায় থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ,নাম নিশানা মুছে দিতে চেয়েছে- তাদেরকেই সরকার ‘কী পয়েন্টে’বসিয়ে দিচ্ছেন । যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী ও হত্যাকারীদের দোসর তারা ১/১১ র সময় দুর্নীতির মিথ্যা মামলা দিয়ে মাইনাস করতে চেয়েছে- তারাই আছে বিগত ১২ বছর মহাসুখে। আর যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে জাতির পিতার হত্যার বিচারের দাবিতে রাজপথে থেকে নিপীড়িত হয়েছে তারা  অনেকে দফায় দফায় নিপীড়নের শিকার হয়েছে বিগত ১২ বছর। যাদেরকে কি পয়েন্টে ১২ বছর বসানো হয়েছে- আমরা লক্ষ্য করেছি তিনি একটু জামাত বিএনপি কিংবা বাম ঘেঁষা। এবং তারা সুযোগ পেলে জামাত -শিবির -বিএনপি বামদেরকে সুযোগ করে দিয়ে এবং সরকারের পরীক্ষিত লোকদেরকে বঞ্চিত করে সরকারকে দুর্বল করে দিচ্ছেন।  তারা বেশ “ওদের” কাছে প্রিয়।  আর যারা আদর্শ মেনে চলে তারা হয়ে যায় দলীয় এবং অগ্রহণযোগ্য।  

আমরা হয়তো ভুলে গেছি ওই আদর্শবাদীরাই লড়াই করে ১/১১ র নাগপাশ থেকে মুক্ত করেছে গণতন্ত্র।  সম্ভব হয়েছে জাতির পিতার হত্যার বিচার , বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশের যাত্রা। যদি ওই ত্যাগী নিপীড়িতদের এভাবে দিনের পর দিন অবহেলা করা হয় তবে ‘সে বিচার আল্লাহ করবেন’ বলে যে দীর্ঘ  নিঃস্বাস মানুষটি ত্যাগ করবে তা কিন্তু লেগে যেতে পারে ! বিচার একটি কঠিন কাজ।  আল্লাহ বিচার করেন।  সেই বিচারে পার পাওয়া খুবই কঠিন।  ফুলসুরাত – যা কিনা একটি চুলের চেয়েও চিকন সেই পথে পার হতে হবে সকল মানুষকে।  অবিচার আরও আছে।  কেউ একপাত খাওয়ার পর আরেকপাত খেতে থালা ধরে।  এবং ওরা সৌভাগ্যবানও।  তাদের দ্বিতীয়, তৃতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হয়।  এমনকি তাদের পদোন্নতিও হয় কিংবা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও হয়ে যায়।  তারা অবশ্য অনেক কনফিডেন্ট।  জেনারেল সফিউল্লাহর এক্সটেনশন, জেনারেল এরশাদের এক্সটেনশন নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে।  একজনকে এক্সটেনশন দিলে অন্যের পদোন্নতি ও স্বপ্ন মিলিয়ে যায় এবং সেটি যে অবিচার সেটা মানতে অনেকেই রাজি নন।  স্বাস্থ্য মহাপরিচালক দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল তার পরিনাম কি হল তা এই মাত্র দেখলাম।  আবার যাকে দেয়া হয়েছে তার এক্সটেনশন নিয়ে আলোচনা চলছে।  এই এক্সটেনশনের সংস্কৃতিও কিন্তু বিপদজনক এবং অবিচার- সেটা বলা যাবে কি?  বললে পত্রিকা হয়তো ছাপবে না। "ঘাড় মটকানোর " ঘোষনাতো হয়েই গেছে!  

তবে, মিথ্যা বললে কিংবা একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম থাকলে সুবিধা আছে।  যেমন সাংসদ ব্যারিষ্টার রুমিন ফারহান সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে বলে চলেছেন সুললিত কণ্ঠে বুলেট ট্রেনের গতিতে।  ছোটখাটো ভুলগুলোই বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।  আর বিশ্বাসভঙ্গ ওই পাশের মানুষগুলোই করে যেমন ডালিম-মোশতাক  করেছে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে, শিখ সেনা করেছে ইন্দিরা গান্ধীর  সঙ্গে, বেল্টুরা করেছে ১/১১ র সময়। । জনাব কাজী ফিরোজ রশিদ ঠিকই বলেছেন- মানুষ চিনতে ভুল করলে আবার জাতির জীবনে অমানিশার অন্ধকার নেমে আসবে।  প্রশাসনের আমলারা সবচে মেধাবী ডাক্তার -ইঞ্জিনিয়ারদেরকে যেভাবে কোনঠাসা করে রেখেছে তার মূল্য কিন্তু একদিন দিতে হবে জাতিকে। আমরা সেই বিভীষিকাময় যুগে(১৯৭৫-১৯৯৬ ০ ২০০১ থেকে ২০০৯ ) আর  চাই কি ?


বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বিতর্ক তৈরী না করে আমার অভিমত হলো প্রতিটি ইউনিয়নে একটি পাঠাগার করা যায়।  সেখানে বঙ্গবন্ধুর একটি মুরাল কিংবা ভাস্কর্য থাকতে পারে।  আর কথা বলার সময় যেন আমরা ‘শালীনতা’ শব্দটার মান রাখতে চেষ্টা করি।   আমাদের গ্রামে গ্রামে মাদক, পর্ণ ও দুর্নীতি ছড়িয়ে গেছে।  সবগুলোকে মোকাবেলা করতে হলে প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক।  এবং সেটা করতে হলে এখনই বসতে হবে।  যেভাবে ২০১৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে বসেছিলেন সেভাবে আবার বসতে হবে।  বিদ্যমান সিস্টেম যে কাজ করছেনা সেটা কেবল উপলব্ধি করলেই হচ্ছে না।   সেটা  ঠিক করবার প্রয়োজন।  আর মিডিয়া এখানে একটি সহায়ক শক্তি হতে পারে।  সেজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আরো সহনীয়  করতে হবে।  বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি পক্ষ একটি মত দিয়েছে তার প্রতিক্রিয়া "ঘাড় মটকানো" আগুনকে উসকে দেবে অনুমান করা যায়। তালেবানদের পাশে যেমন মানুষ আছে তেমনি আছে ওদের পাশে।  

এ মুহুর্তে বাঙালি চেতনার আলোকে একটি সামাজিক উন্নয়নের রূপরেখা নির্মাণ একান্ত জরুরি। যেখানে সামাজিক ন্যায্যতা ও সাম্য কেন্দ্রবিন্দুটিতে থাকতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গ্রাম হবে শহর -স্বপ্নটির সঙ্গে ‘পিছিয়ে পড়া মানুষের জন্য আমরা’ যুক্ত হতে পারে কর্মপরিকল্পনায়। এখন কেউ প্রশ্ন করতে পারেন বাঙালি বলতে আমি কি বুঝি? আমার  কাছে বাঙালি মানে  মিনি, হৈমন্তী, পোস্টমাস্টার-রতন, রবীন্দ্রনাথ , নজরুল এবং জসীমউদ্দীনের "৩০ বছর ভিজিয়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।"  আমার কাছে বাঙালি মানে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ।  বাঙালি মানে সমতা ও মিলে -মিশে বাস করা। বাঙালি মানে ঈদ, বাঙালি মানে হালখাতা। বাঙালি মানে শাপলা -ইলিশ , বাঙালি মানে বাংলাদেশ। বাঙালি মানে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সুশাসন। বাঙালি মানে অন্যের মঙ্গল কামনা করা।  এভাবে বাঙালিত্বকে বিস্তৃত করেই হতে পারে আমাদের আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন যাত্রা



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন