নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০৩ এএম, ১১ এপ্রিল, ২০২১
আর দুমাস বাঁচলেই প্রিন্স ফিলিপের বয়স এক শ বছর হতো। তখন ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ—যিনি তাঁর স্ত্রীও, তিনি এ দেশের প্রথানুযায়ী তাঁর শতবর্ষজীবী স্বামীর জন্মদিবসের জন্য জন-শুভেচ্ছা বার্তা পাঠাতেন। এ প্রথা তিনি রানি হওয়ার পর থেকেই প্রায় ৭০ বছর ধরে চলছে। সে যত সাধারণ মানুষই হোন না কেন শতবর্ষ বেঁচে থাকার জন্য এদিন ডাকঘর থেকে তাঁর কাছে রানির চিঠি আসে। বাকিংহাম প্যালেস থেকে আসা সাদা মাখনের মতো সে খামের ওপরে থাকে অ্যাম্বুশ করা রানির মুকুটের সোনা রং ধোয়া ছবি। আমি জানি! ওই খাম দেখে আমারও হৃৎকম্প হয়েছিল। না আমার এক শ হয়নি। তবে আমি কেন পেয়েছিলাম তা বলছি একটু পরে। কারণ, তাতেই আমি প্রিন্স ফিলিপকে ওই বাকিংহাম প্যালেসেই অত্যন্ত কাছে থেকে দেখেছি। তাঁর পাশে ফিরোজা রঙের ড্রেস পরা রানিকে কত্ত ছোট আর নরম লাগছিল। মনে হচ্ছিল তিনি প্রায় আমার উচ্চতাসম্পন্ন। আরও মনে হয়েছিল, রানির কি বয়সের কারণে হাড় ক্ষয়ে ক্ষয়ে উচ্চতা কমে গেছে!
রাজবাড়ির মানুষের অনেক আয়ু হয়! এঁরা খান ভালো, অনিয়ম করেন না, পরেন ভালো, তাই বাঁচেন ভালো। তাঁদের হাড়–হাড্ডি, অন্ত্রতন্ত্র বদল হয়। রানিমাতা প্রথম এলিজাবেথ এক শ এক বছর বেঁচেছিলেন। নিয়ম ভঙ্গ করেছিলেন রানির ভগ্নি মার্গারেট, তিনি রানির ছোট বোন হয়েও আগেই মৃত্যুবরন করেন। ভেবেছিলাম আরও মাত্র দুমাস বাঁচলে ফিলিপ যখন রানির চিঠি পাবেন, সে ভারি মজার হবে। কিন্তু তা আর হলো না। রানির স্বামী গতকাল শুক্রবার সকালে রাজভবন উইন্ডসর ক্যাসলে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেছেন। এক মাস হাসপাতালে থাকার পর সেখানেই ফিরেছিলেন। বালমোরাল নয়, বাকিংহাম প্যালেস নয় তাঁর পছন্দ ছিল উইন্ডসোর। সেখানেই গেল তাঁর অন্তিম সময়।
তাঁর মৃত্যুর পর সেই থেকে সেই যে তাঁকে নিয়ে সবগুলো গণমাধ্যম মেতে আছে, তাতে আর থামাথামি নেই। এমনটা হওয়ারই কথা। তাঁর চলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক যুগের ইতি হলো। কয়েকটি প্রজন্ম তিনি একসঙ্গে দেখে গেছেন। রাজবাড়ির সবচেয়ে বড় বিপদ ও আনন্দ অবলোকন করে পরামর্শ দিয়েছেন। ৯৯ বছরের একজন মানুষ তার তো নানান অসুখ–বিসুখ থাকারই কথা। তাঁর সে রকম ছিল না, তিনি ভালোই ছিলেন। কোনো দিন হুইলচেয়ারে দেখিনি, দেখিনি লাঠি হাতে। ঋজু দেহধারী সাবেক নাবিক রাজা সেই প্রথম থেকেই এক শক্ত মানুষ।
প্রিন্স ফিলিপ গ্রিক আইল্যান্ডের কর্ফুতে জন্মগ্রহণ করেন। সে ছিল ১৯২১ সালের ১০ জুন। তাঁর জন্ম বংশধারা গ্রিস ও ডেনমার্কের, হেলেনের রাজা প্রথম জর্জের ছোট ছেলে। তাঁর মা প্রিন্সেস অ্যালিস ছিলেন লর্ড লুই মাউন্ট ব্যাটেনের মেয়ে, কুইন ভিক্টোরিয়ার নাতনি।
এদিকে রানি কুইন ভিক্টোরিয়ার নাতনি। সেদিক থেকে তাঁরা সম্পর্কে কাজিন ছিলেন। রাজবাড়িরই এক অনুষ্ঠানে তাঁদের প্রথম দেখা এবং ভালো লাগা। ১৯৪৭ সালে তাঁকে বিয়ে করার পর মাত্র পাঁচ বছর তিনি এলিজাবেথের সঙ্গে আর দশটা স্বামীর মতো সংসার করতে পেরেছিলেন। কিন্তু ১৯৫২ সালে হয়ে গেলেন ইংল্যান্ডের ‘রানির স্বামী’। বিশাল কোহিনূর বসানো মুকুট পরা স্ত্রীর পেছনে শত পারিষদ, তাদের হাতে হাতে সোনা–রুপার ঝান্ডা চলছে, তারই এক অনুষঙ্গ তিনি, আরও একখণ্ড অলংকার মাত্র। রাজ পরিবারে বিয়ে করলে এঁরা একটু সাম্রাজ্য পান। তিনিও পেলেন, হলেন ডিউক অব এডিনবরা। মরিয়া হয়ে সেখানে এডিনবরা বৃত্তি চালু করে একবার নজর কাড়লেন। আরেকবার বন্য প্রাণী রক্ষা নিয়ে কথাবার্তা তুলে নিজে খবর হলেন আর শেষবার ইরানে যুদ্ধরত ব্রিটিশ সৈনিকদের সঙ্গে একা দেখা করতে চলে গেলেন। ঢাকা পড়ল ডায়ানার কীর্তিকলাপ কি না, কে জানে!
প্রায় ৭০ বছর তাঁর প্রধান পরিচয় ছিল রানির চার সন্তানের পিতা ও সঙ্গী হিসেবে এবং সেটাই এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। এমনকি ফিলিপ নাকি রানির শক্তি, রানির বল হয়ে এক অনুপম উদাহরণের সৃষ্টি করেছেন। তিনি নাকি রাজকীয় ডিউটিতে কষ্টকর সব ভারী পোশাক পরে সদা হাজির থেকেছেন। এমনকি কিছুদিন আগেই রানিও তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, ডিউক কীভাবে তাঁর সব কাজকর্মের পেছনে সাহায্য করেছেন। কথা হলো, এই পৃথিবীতে কত শত রানি তাঁদের রাজা মশাইয়ের পেছনে পেছনে একই কাজ করে করে মরে গেছেন, কিন্তু তা নিয়ে কোনো প্রশংসাবাক্য হয়নি, হয়নি কথা।
স্বামীর পেছনে অলংকারের মতো তাঁর স্ত্রীরই তো থাকারই কথা! বাইরে তাঁরা রানি হতে পারেন কিন্তু ছেলেমেয়ের দায়িত্ব রানিরই! আর সে রকম ঘটনায় আমরা জানিও না কাজটি কত কঠিন। একজন পুরুষ করেছে বলেই ঢোলে পড়েছে ঘা। বছরের পর বছর শত রকমের আচার–অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতাই যে তাঁর জন্য ছিল প্রধান কাজ। এ নাকি এক বিরল গুণ! আমরা সবাই সেভাবেই তাঁকে দেখেছি। এমনকি রানির সুবর্ণজয়ন্তীতে নৌবিহারে নদীপাড়ে জমায়েত হওয়া শত শত মানুষকে হাত নেড়ে নেড়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা রানির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরের দিন তাঁর খাটাখাটুনি উঠে গেল পত্রিকায়।
তাঁর বদ মেজাজ নিয়ে কত গল্প শুনেছি। যাহা রটে তাহা কিছু বটে। তিনি নাকি মাইকেল জ্যাকসনের পিতার মতোই মহা কড়া ছিলেন। পৌত্র–পৌত্রিদের কদাচিৎ কোলে নিলেও নিজ সন্তানকে নেননি। তাঁর প্রবল শাসনে কম্পমান যুবরাজ চার্লস কামিলাকে বিয়ে করতে পারেননি।
কামিলা তাঁর সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রেখেছেন আর এদিকে ফিলিপের বকা খেয়ে ভয়ে ডায়ানাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন চার্লস।
চীনে বেড়াতে গিয়ে ফিলিপ সে দেশের মানুষের চোখ ছোট ছোট বলে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন। আর আমাদের মতো এশিয়ানরা তাঁর চোখে ছিলেন বহিরাগত অভিবাসী! এটাও নিউজ থেকে জানি। তবে ১০ জন নাতি-নাতনি হলে পরে একটু নমনীয় হয়েছিলেন। আমি ভাবছি রানির কথা। রানি হোন আর নাই হোন। ফিলিপ ছিলেন তাঁরই স্বামী এবং রানি যে কত নরম তা আমি দেখেছিলাম।
২০১৩ সাল। ডাকবাক্স খুলে দেখি সোনালি মুকুট জলছাপে আমার নামে রানির চিঠি। বিলেতে বসবাসরত কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো থেকে বাছাই করা শ খানেকের মধ্যে আমিও একজন। শিল্পী–সাহিত্যিক ও সৃষ্টিশীল মানুষদের বাকিংহাম প্যালেসে দাওয়াত। তাতে লেখা ছিল ‘দ্য মাস্টার অব দ্য হাউসহোল্ড হ্যাজ রিসিভড হার ম্যাজিস্ট্রস কম্যান্ড টু ইনভাইট মিসেস শামীম আজাদ টু আ কমনওয়েলথ রিসেপ্সহন টু বি গিভেন অ্যাট বাকিংহ্যাম প্যালেস বাই দ্য কুইন অ্যান্ড ডিউক অব এডিনবরা’। চিঠি পেয়ে যেমন মাথা খারাপ হয়েছিল, গিয়েও ভীষণ শিহরিত হয়েছিলাম। কারণ, আমি ভেবেছিলাম বিশাল এক হলে নামধাম দেখিয়ে বসব আর রানি এসে একটা বক্তৃতা দিয়ে চলে যাবেন। আমরা ফ্যা ফ্যা করে খুদ–কুড়া খাব।
কিন্তু তা হলো না। বরং হালকা স্ন্যাক্স ও পানীয়র পর দুই দফায় রাজা-রানি এবং চার্লস-কমিলা এ চারজনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হলো। প্রথম দফায় আমাদের অভ্যাগতদের এক এক করে রাজকীয় চিৎকার সহযোগে লেজওয়ালা কালো কোট পরা একজন পরিচয় করিয়ে দিলেন-আমি স্বদেশের মহিমায়, বুকে ‘বাংলাদেশি অথার’ লেখা তকমা নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে ওঁদের চারজনের সঙ্গে করমর্দন করার, কথা বলার সুযোগ পেলাম। এ পর্ব শেষ হলে এবার তাঁরা তাঁদের ম্যান ইন ওয়েটিং বা লেডি ইন ওয়েটিংসহ ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে গল্প করে গেলেন।
আমি রানির হাত ধরেছি তো ধরেছি। ছাড়াছাড়ি নেই। নরম, মাখনদলার মতো মানুষটির ছোঁয়ার মধ্যে থেকে প্রথম বলেছিলাম, ‘আমার অবিশ্বাস্য লাগছে যে আমি হে মহামান্য রানি, আমি সত্যি আপনার সঙ্গে এখন করমর্দনরত!’ তিনি মিষ্টি হাসলেন, হাত ছাড়ালেন না। বললেন, ‘সত্যিই তো...সত্যি...।’ এতে প্রিন্স ফিলিপ ঝুঁকে আমার নামটা বানান করে পড়ে ভুরু কুচকে বললেন, ‘বাংলাদেশের!’ —আমি বললাম, ‘জি’। তিনি একটি শব্দ করলেন, ‘অ!’ কিন্তু কথা চালিয়ে গেলাম মহামান্যার সঙ্গেই। ২০১২ অলিম্পিকের সমাপনীতে তিনি যে জেমস বন্ডের এক ভূমিকায় মুগ্ধ করা তিন মিনিট দিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গ এনে বললাম, ‘মাননীয়া, আপনিই আমার দেখা বেস্ট বন্ডগার্ল!’ রানি এবার বড় হাসি দিলেন। আমার প্রতি স্নেহার্দ্রতায় চোখেমুখে কৌতুক নিয়ে এলেন। এবার রাজা মশাই ওই উঁচু দেহ বেঁকিয়ে ঝুঁকে শুনতে এলেন রানি কেন হাসছেন। সেদিন তাঁদের দেখে একটা অদ্ভুত রসায়ন দেখলাম। যে রসায়ন পরস্পর বোঝাপড়া আছে তেমন স্ত্রী ও স্বামীর মধ্যেই থাকে। ডিউকের মৃত্যু সংবাদের পর শুধু রানির মায়াময় সেই কোমল অবয়বখানা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে ‘যার যায় তারই যায়’।
লেখাটি সংগৃহীত, প্রিন্স ফিলিপকে নিয়ে লিখেছেন শামীম আজাদ, একজন ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সাহিত্যিক।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।