ইনসাইড থট

কোভিড-১৯, বাংলাদেশ এবং কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয় (১)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৭ মে, ২০২১


Thumbnail

বারবার লকডাউন নয় তবে সুপার স্প্রেডিং ইভেন্টগুলো বন্ধ করাই সবচেয় কার্যকর

কোভিড-১৯ একটি আকর্ষণীয় রোগজীবাণু যা আমাদের প্রথম থেকেই ওহান শহরে শুরুর পরেই সংক্রমণ রোগের সম্পর্কে আমাদের এতদিনের বোধগম্যতাটিকে চূড়ান্ত ভাবে প্রশ্নবীদ বা প্রতিদ্বন্দ্বিত করছে। কেন রোগটির ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল উহানে প্রথমে প্রতিদিন মহামারীটি এত ধীরে, মাএ ১০% বৃদ্ধি সহ ছড়িয়ে পড়তে শুরু করার পর হঠাৎ করে তার পর কি কারনে এটি পরে প্রতিদিন ৩০% হারে প্রসারিত হয়েছিল? । কেন এটি জাপানে এত আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কেন এটি আফ্রিকাতে এখনও একটি বড় মহামারী সৃষ্টি করতে পারেনি, যখন উত্তর ইতালি এবং স্পেনে প্রতিদিন মৃত্যুর হার ৪০% পর্যন্ত বৃদ্ধি সহ বড় বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছিল? আমরা কি এই রোগ সম্পর্কে কিছু বোঝার বা জ্ঞানের অনুপস্থিতি/ঘাটতি উপলব্ধি করছি?

উদীয়মান সারস-সিওভি -২ (SERS-COV-2) ভাইরাস যেটি কোভিড-১৯ “মহামারী সংঘটিত করছে যা ২০২০সালের শেষের দিকে আবির্ভূত হয়েছিল যার কারনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সপ্তাহের পর সপ্তাহে একটি অভূতপূর্ব লক-ডাউন কৌশল নিতে বাধ্য করেছে। আমরা দেখেছি যে এই লক-ডাউনগুলি প্রচুর আর্থ-সামাজিক ক্ষতির ব্যয়ে হলেও রোগটি ছড়ানো বন্ধ করার ক্ষেত্রে কিছুটা ভাল কাজ করে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কৌশল অবলম্বন করার জন্য দেশগুলিকে একটু সময় সরবরাহ করেছিল। তবে, আমরা জানি না যে প্রশমিতকরণের প্রচেষ্টাগুলির কোন দিকগুলি রোগটি ছডিয়ে পড়া বন্ধ করতে প্রধানত প্রভাব ফেলেছিল, শুধুই কি লোকডাউন না আরো অন্য কোন অতিরিক্ত কারনেই হয়েছিল? উদীয়মান প্রমাণ আমাদের দেখায় যে, একবার প্রচুর উচ্চ শব্দে, চিৎকার করে কথা বা গান গাওয়া, ক্লান্তিকর অনুশীলন, প্রচুর পরিমাণে সময় ধরে ব্যয় করা বড় বড়, অধিকাংশ ক্ষেত্রে ইনডোর বা কিছু দৃষ্টান্তে বাহিরের সমাগমগুলিকে থামিয়ে দেওয়ার পরে, রোগ সংক্রমণ বন্ধে অন্যান্য বিধিনিষেধে, যেমন লোকডাউনে বার বার ফিরে আসা হয়ত দরকার পরবে না। বাংলাদেশের জনগনের আচরণবিধি ও আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রসঙ্গে এটি আরও প্রাসঙ্গিক।

যেহেতু বাংলাদেশ সহ অনেক দেশ ইতোমধ্যে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসছে এবং সবকিছু আবার খোলার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তখন বিভিন্ন দিকের রোগ সংক্রমণ বন্ধে আপেক্ষিক অবদানকে, যেমন বাড়ি, স্কুল, কাজ এবং ধর্মীয় স্থান এবং সমাজের অন্যান্য খাতে যোগাযোগ এবং জনসমাবেশ হ্রাস করা - সেই সম্মধে আরও ভালভাবে জানা এবং বোঝা উচিত। এই মহামারী সংঘটিত হওয়ার জন্য "সুপারস্প্রেডার" ইভেন্টগুলির একটি নিদর্শন বিশ্বব্যাপী নথিভুক্ত করা হয়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে যে ১০% সংক্রামিত জনসংখ্যার দ্বারা ৮০% জনগন সংক্রমিত হয়েছে। ইস্রায়েল, ভারত, হংকং এবং চীনের আর বিশ্বের অন্যান্য অংশের মতো জায়গাগুলির সংক্রমনের অনুমানগুলি এই পর্যবেক্ষণটি সমর্থন দেয়। উদাহরণ স্বরূপ:

১। দক্ষিণ কোরিয়ার দাগুতে শিনচাঁজি গির্জায় একটি ধর্মীয় সমাবেশ, সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য সুপার স্প্রেডিং ইভেন্টস (SSE) এর মধ্যে একটি। মনোনীত ‘রোগী ৩১’ নামের একজন ব্যক্তি সুপার স্প্রেডিং উত্স হিসাবে বিবেচিত হয়েছিল। এই প্রাদুর্ভাব দক্ষিণ কোরিয়ায় সংক্রমণের হারকে আরও বাড়িয়ে তুলেছিল, যার ফলে দেশের মূল ভূখণ্ড চীনের বাইরে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি লোক নিশ্চিত সংক্রমিত হয়েছিল। ক্রমবর্ধমানভাবে শিনচাঁজি গির্জায় ধর্মীয় সমাবেশটি আরো ৫০০০ জনেরও বেশী লোককে সংক্রমিত করে।

২। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া সাবধানতার সাথে দেশটি পুনরায় চালু করার সাথে সাথে নাইট ক্লাবে পরিদর্শন করা এক সংক্রামিত ব্যক্তি কমপক্ষে ৫০ টি নতুন সংক্রমণ ঘটায়।

৩। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ২.৫ ঘন্টার দীর্ঘ সমবেত গানের রিহার্সাল, করুণভাবে ৭৫% অংশগ্রহণকারীদের সংক্রামিত করে এবং বেশ কয়েকজন মারা যায়।

৪। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আমেরিকার বোস্টনে অনুষ্ঠিত একটি দুই দিনের আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্মেলনের খুব কাছাকাছি উপস্থিতি এবং তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য ৯০ জনের বেশি লোক সংক্রমিত হয়। তবে আসলে এর প্রভাব অনেক বেশি ছিল। এটি অনুমান করা হয় যে বোস্টন এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে প্রায় ২০,০০০ জন শেষ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়।

৫। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের একটি দল প্রমাণ করেছে, ভারতের রাজ্য তামিলনাড়ু ও অন্ধ্র প্রদেশে ৮৪,৯৬৫ জন সংক্রমণে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা ৫৭৫,০০০ লোকের সমীক্ষায় দেখা গেছে, যে সংক্রামিত ৭২% মানুষ অন্য কাউকে সংক্রামিত করেনি - তবে নতুন ৬০% সংক্রামের ক্ষেএে ৮% সংক্রামিত লোকেরই দায়ী ছিল।

৬। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর - এন্টারওয়ার্পের নিকটবর্তী বেলজিয়ামের আবাসিক যত্ন বাড়িতে (care homes) প্রচলিত সান্তা ক্লজের ক্রিসমাস উপহার দেওয়ার অনুষ্ঠানটি উত্সাহ ছড়িয়ে দেওয়ার পরিবর্তে একটি করুণ ঘটনা পরিণত হয়। চল্লিশ জন কর্মী সদস্য এবং ১০০ এরও বেশি বাসিন্দা সংক্রামিত হন - যার মধ্যে কমপক্ষে ২৬ জন মারা যান। সেই অনুষ্ঠানে বাহির থেকে আসা সংক্রামিত পোষাক স্বেচ্ছাসেবক লোকেরাই (যাদের অনুষ্ঠানটির পরবর্তীত সময়ে রোগ সনাক্তকরণ পরীক্ষা ইতিবাচক পাওয়া যায়) অজান্তে করোনাভাইরাসের সেই করুণ সংক্রামন ঘটান।

৭। এটি উদাহরণস্বরূপ অনুমান করা হয়, ১৬ই অক্টোবর জর্জিয়ার ম্যাকন শহরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমাবেশে কোভিড -১৯ এ সংক্রামিত এক বা একাধিক লোক যোগ দেওয়ার ৯৮% সম্ভাবনা থাকার সম্ভাবনা ছিল। হোয়াইট হাউস, রোজ গার্ডেনের সুপার স্প্রেডার ইভেন্ট এর আরেকটি উদাহরণ।

৮। সাম্প্রতিক এই বিশাল আকারের রোগের প্রকোপ ঘটার অন্যদের মধ্যে প্রধান কারন হল ভারতে পৃথক রাজ্য একের পর এক বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ এবং লক্ষ লক্ষ লোকের হিন্দু আধ্যাত্মিক উত্সবে উপস্থিতি যেখানে হাজার হাজার কোভিড-১৯ ইতিবাচক বলে প্রমাণিত হয়েছিল। ভারত গত ২৪ ঘন্টা ধরে ৪১২,০০০ জনেরও বেশি করোনভাইরাসে সংক্রমিত লোকের নির্ণয় করেছে, এবং ভাইরাসে আক্রান্তদের একদিনের মৃতের সংখ্যা বেড়েছে রেকর্ড করা ৩,৯৮০ জনে।

৯। এপ্রিল মাসে, লক্ষ লক্ষ অন্যান্য লোকের সাথে, নেপালের প্রাক্তন রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহ, ৭৩ এবং তাঁর ৭০ বছর বয়সী স্ত্রী কোমল কুম্ভ মেলা ধর্মীয় উত্সব, যা ছিল একটি “সুপারস্প্রেডার" ইভেন্ট, উপলক্ষে ভারতে ভ্রমণ করেছিলেন। সেখানে তিনি হার্ডিওয়ারে গঙ্গায় একটি পবিত্র ডুব নেন এবং কর্মকর্তা, সাধু এবং অন্যান্য তীর্থযাত্রীদের সাথে মুখোশহীন যোগাযোগ করেন। কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে ফিরে আসার সময়, কয়েকজন দম্পতিকে স্বাগত জানাতে সমবেত হয়েছিল, রাজ দম্পতি এবং অন্যরা কয়েক দিনের মধ্যে কোভিড -১৯ এর জন্য ইতিবাচক পরীক্ষার ফল পায়। ভারতে কর্মরত হাজার হাজার নেপালি অভিবাসীরাও সংক্রামিত হয়ে ফিরে এসেছেন এবং কেবলমাত্র হিমালয়ের রাজ্যেই নয়, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সহ ভারতের অন্যান্য প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রেও এর সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে।

১০। সম্প্রতি বাংলাদেশে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করার পরে হাজার হাজার মানুষ ছুটির অঞ্চলে, বিবাহ, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশে জড়ো হওয়ার পরে বাংলাদেশ উচ্চ সংখ্যক সংক্রামিত লোক দেখতে শুরু করে।

অন্যান্য সুপার স্প্রেডার ইভেন্টগুলির মধ্যে (যেমন বার, খেলাধুলার ইভেন্ট, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, রাজনৈতিক সমাবেশ এবং মিটিং), ধর্মীয় সমাবেশের ঘটনাগুলি বিশ্বব্যাপী সুপার স্প্রেডার ইভেন্টগুলির সারণির শীর্ষে সনাক্ত করা হয়েছে। কোনও মুখোশ বা সামাজিক দূরত্ব ছাড়াই বিশাল জনসংখ্যা একসাথে ভরা মসজিদ, ওয়েজ মাহফিল, গির্জা পরিষেবা, ইহুদি এবং হিন্দু হোলি উত্সব সম্ভবত সংক্রমণের হারকে বাড়িয়ে তোলে। বিশাল জনসমাবেশের ওয়াজ মাহফিলের উপস্থাপকের দ্বারা চিৎকার/উচ্চ কণ্ঠস্বরে খুতবা করা এবং উত্তেজিত উপস্থিতদের সাধারণত তীব্র উচ্চ কণ্ঠস্বরে প্রতিক্রিয়া, গির্জার গান গাওয়া, ইহুদি ও হিন্দু উত্সবগুলিতে উচ্চ কণ্ঠস্বরে নাচ ও প্রার্থনার এই ঘটনাগুলিতে কিছু সংক্রামিত লোকেরা অন্য অনেকের মধ্যে এই রোগ ছড়াতে সম্ভবত আরও বড় ভূমিকা পালন করছে।

কোভিড-১৯, ২০০৩ সালে এশিয়া ও কানাডার প্রাদুর্ভাবে SERS প্রচারের নথিভুক্ত সুপারস্প্রেডার ইভেন্টগুলির স্মরণ করিয়ে দেয়। কেউ কেউ জিজ্ঞাসা করতে পারেন যে, কেন আমরা প্রায়শই বর্তমানে কোভিড-১৯ রোগ ছড়িয়ে পড়ার সুপার স্প্রেডার ঘটনাগুলির সাথে একই ভাবে পূর্বসূরী অন্য রোগ ছড়িয়ে পড়া ঘটনাগুলির মত হতে দেখছি? এছাড়াও, কেন আমরা কোভিড রোগের ভৌগলিক বিতরণ একই দেশের ভিতরে কিংবা ভিন্ন দেশের মধ্যে এবং ভিন্ন প্রান্তের ও অঞ্চলগুলিতে রোগ সংক্রমণ বা প্রাদুর্ভাবগুলির তীব্রতার মধ্যে চিহ্নিত বৈষম্য দেখি? সংক্রমণজনিত ঝুঁকিতে এ জাতীয় বড় বড় জনসমাবেশের ঘটনাগুলো বিভিন্ন সংক্রামক রোগগুলির মধ্যে একটি বৈশিষ্ট্য। ২০০৩ সালে মি: রিলে এবং অন্যান্যরা উল্লেখ করেছিলেন যে, ‘বিস্তৃত ঘটনা (সুপার ছড়িয়ে পড়া ইভেন্ট)’ বিভিন্ন ধরণের রোগের জন্য ৮০% সংক্রমণ ইভেন্টকে ব্যাখ্যা করতে পারে, ফলে এটি বহু মহামারীর একটি নির্ধারিত বৈশিষ্ট্য। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে, মহামারী সংঘটিত মহামারীটির আগমন সংক্রমণের ক্ষেত্রে সুপারস্প্রেডার ইভেন্টগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল বলে মনে করা হয়। সামগ্রিকভাবে, এর অর্থ হ`ল নির্দিষ্ট সংক্রামিত ব্যক্তিরা গড়ের চেয়ে অনেক বেশি সংখ্যক ব্যক্তিকে সংক্রামিত করে। যদি কোনও সুপারস্প্রেডার সংক্রামিত হয় তবে তারা এই রোগটি অন্য সুপারস্প্রেডারে ছড়িয়ে দিতে পারে। একটি মহামারী উড্ডয়ন করা জন্য একটি সুপারস্প্রেডার প্রয়োজন হতে পারে কারণ বাকী জনসংখ্যার সবার দ্বারা সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা খুব কম (এই লোকদের R০ ১ এর নীচে বলে)।

তদ্ব্যতীত, মহামারী হিসাবে বৈধতাযুক্ত সংক্রামক-সংক্রামক জুটি বিশ্লেষণ করে গবেষকরা নির্ধারণ করেছেন যে গড়ে এক হাজার কোভিড-১৯ এর সারস-কোভ-২ ভাইরাসের কণা একজন ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তিতে সংক্রমণিত হয়। মাঝে মাঝে আমরা সংক্রামিত লোকদেরও দেখতে পাই যারা স্পষ্টতই কম ভাইরাসের কণার সংস্পর্শে এসেছিলেন এবং সংক্রামিত হয়ে পড়েছিলেন। আমরা সন্দেহ করি যে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপের প্রয়োগ, সংক্রমণের রুট বা স্বতন্ত্র ইমিউন সিস্টেমের মতো প্যারামিটারগুলি এখানে একটি সিদ্ধান্তমূলক ভূমিকা নিতে পারে। এটি প্রস্তাবিত যে এমনকি খুব কার্যকরী নয় এমন কাপড়ের মুখোশগুলিও কোভিড-১৯ বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে।

জনসংখ্যার বৈশিষ্ট্য (বয়স এবং লিঙ্গ), ভাইরাল লোড বা অন্যান্য শারীরিক বৈশিষ্ট্য দ্বারা সম্ভবত অতিপ্রাকৃতদের সুপারস্প্রেডার হিসাবে চিহ্নিত করা সম্ভব। বর্তমান সময়ে নির্দিষ্ট আচরণ এবং অবস্থানগুলি বিবেচনা করে, এটি বেশ সহজে ঘটনাগুলো সনাক্ত করা যায় যা খুব বড় এবং দ্রুত আকারের কোভিড -১৯ সংক্রমণ করতে সক্ষম। যেমন, অনেক, বিশেষ করে বন্ধ আভ্যন্তরীণ বা কিছু বাহিরের ভিড়ের জায়গাগুলিতে জনগন সমাবেশিত হয়ে মুখোশ ছারা চিৎকার বা উচ্চস্বরে কথা বলা বা অন্যথায় আচরণে জড়িত থাকা, বিবাহ অনুষ্ঠানে জনসমাগম, ভিড় করা ছুটির অঞ্চল বা রেস্তোঁরা বা শপিংমলের মতো জায়গায় অন্যদের সাথে এক সাথে পর্যাপ্ত সময় ব্যয় করার মত বেশিরভাগ ইভেন্টগুলিতে ভাইরাসটি অনেকের মধ্যে ছড়িয়ে যাওয়ার বড় সম্ভাবনা রয়েছে।

বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলিতে সরকারী লকডাউনগুলির কঠোরতা পুরোপুরি এই রোগের বিস্তারকে কমিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাফল্যের সাথে জড়িত বলে মনে হয় না, যদিও তাদের সময়সাপেক্ষ প্রয়োগ করা সম্ভবত সংক্রমণ হ্রাসে সাহায্য করেছে। একবার যখন বেশিরভাগ অন্দর এবং কিছু বহিরঙ্গন গনজমায়েত থামিয়ে দেওয়া হয়, তখন অন্য নিষেধাজ্ঞাগুলির (যেমন লকডাউন) প্রয়োজন হ্রাস পায়।

বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক প্রকাশিত গবেষণাপত্র অনুসারে কোভিড -১ রোগের ব্যাপক সনাক্তকরণ পরীক্ষার অভাবে, এমনকি নিম্ন-প্রযুক্তি প্রচেষ্টা যেমন মুখোশ পরা বা লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিদের আলাদা করতে এবং তাদের অন্যের সাথে যোগাযোগগুলি বন্ধ করতে পারলে, সুপারস্প্রেডার দ্বারা রোগ ছড়িয়ে পড়ার গতি কমিয়ে দিতে বা দিক পরিবর্তন করতে সহায়তা করতে বেশ কার্যকর হতে পারে। কেবল মাত্র একটি “সুপারস্প্রেডার ইভেন্ট” ঘটনাকে (যেমন ভারতের কুম্ভ মেলায় গঙ্গায় আধ্যাত্মিক স্নান) বন্ধ করা গেলে ভবিষ্যতের রোগের সংক্রমণ বন্ধে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আমরা সুপারস্প্রেডার/বড় ছড়িয়ে পড়ার মূল কারণগুলি সম্পর্কে ইতিমধ্যে যথেষ্ট জানি। বিশেষজ্ঞরা নীতি নির্ধারককে এই জ্ঞানগুলো ধীরে ধীরে কোভিড-১৯ মহামারী নিয়ন্ত্রণ/ নামিয়ে আনার, এমনকি পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্যে কাজে লাগানোর আহ্বান জানাচ্ছে। সর্বাধিক প্রাথমিক ধাপগুলির মধ্যে একটি হ`ল মহা ছড়িয়ে পড়া ইভেন্টগুলি রোধ করতে ভিড়ের হটস্পটগুলি বন্ধ করা।

জাপান এই সমস্যাটি প্রথম দিকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘3C’ (closed spaces, crowded places and close-contact settings), এর সচেতনতা প্রচার করেছিল যা লোকজনকে সংক্রমণের ঝুঁকিতে ফেলেছে - বন্ধ জায়গা, ভিড়ের জায়গা এবং ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ঘটনা।বেশিরভাগ গৃহের অভ্যন্তরে এবং কিছু বহিরঙ্গনে জড়ো হতে দেওয়া সংখ্যার সীমাবদ্ধতা ভাইরাসটির বিস্তার রোধে বিশ্বব্যাপী জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাগুলির একটি প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহামারীটি যখন দ্বিতীয় বছরে প্রবেশ করেছে - বিভিন্ন সংবাদের মাধ্যমের চিহ্নিত ভাইরাসগুলির বিভিন্ন রূপের দ্রুত প্রসারণের তথ্য সংবহন হচ্ছে, এমন সময় গবেষকরা আগের তুলনায় অনেক নিশ্চিত, “সুপারস্প্রেডার ইভেন্ট” গুলো প্রধান কারন হবে কোভিড-১৯ মহামারীটি ভবিষ্যতে কীভাবে ছড়িয়ে পড়ার এবং কীভাবে তা ঘটবে তার জন্য।

বিজ্ঞানী এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দেখতে পেয়েছে যে সারা বিশ্বের সম্প্রদায়গুলিতে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে পড়ার একটি অন্যতম প্রধান উপায় হল সুপারস্প্রেডার ঘটনা - যেগুলি এখন পর্যন্ত ১৫৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষকে সংক্রামিত করেছে এবং ৩.২৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।কার্যকর নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা ছাড়া সুপারস্প্রেডার ঘটনাগুলো, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল এবং ভারতের ভাইরাসটির অন্যান্য স্ট্রেনগুলির সাথে আরও নুতন নুতন সংক্রমণযোগ্য রূপগুলি বৃহত্তর এবং ঘন ঘন সৃষ্টি করে কোভিড মহামারীটিকে আরও বিপজ্জনক এবং মারাত্মক করে তুলবে। বারবার লকডাউন যথেষ্ট হবে না, জনসমাবেশ গত সুপারস্প্রেডার ঘটনাগুলো বন্ধ না করতে পারলে পরিবর্তে আবার সংক্রমণের নতুন তরঙ্গ এনে দেবে।

অনুগ্রহ করে খুশি হবেন না এই ভেবে যে বাংলাদেশে বর্তমান লকডাউনটি সংক্রমণ হ্রাসে তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। যেমনটি আমরা ইউরোপে দেখেছি, এই (আধা) লকডাউনটি কিছুটা প্রভাব ফেলতে পেরেছে। আমরা দেখেছি লোকডাউন দেওয়ার আগেই ১০ই এপ্রিল থেকে সংক্রমণের হার কমতে শুরু করে, কারন বেশিরভাগ রোগের দ্রুত এবং বিশাল ভাবে ছড়ানোর ভিড়ের ঘটনাগুলো এড়ানো গেছে লোকডাউন ঘোযনার আগে।

ইউরোপ বা আমেরিকার পাশাপাশি অন্যান্য শহুরে সমৃদ্ধ দেশগুলিতে বেশিরভাগ লোককে লকডাউন করার সময় তাদের বাড়ি ত্যাগ করে অন্য কোথাও যাবার দরকার পরে না। তারা সরকারের উদার আর্থিক সহায়তার সাথে, ঘরে বসে প্রতিদিনের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্য সহজেই পেতে পারেন। অন্যদিকে বাংলাদেশ শহুরে দেশ নয়। কেবলমাত্র ৩৭.৪% (২০১৯ পরিসংখ্যান) মানুষ শহুরে অঞ্চলে, বিশেষত কয়েকটি বড় শহরে বাস করেন। এই শহুরে বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় সব ভাড়াটে জায়গায় থাকেন এবং বছরে কয়েক বার তারা তাদের গ্রামাঞ্চলে ফিরে যান। তবে লকডাউন সেই ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক ঝামেলা সৃষ্টি করে এবং জীবন ও জীবিকা নির্বাহের জন্য তারা তাদের গ্রামের বাড়িতে চরম ভিড় করা বিভিন্ন পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহার করে যেতে বাধ্য হন। বাংলাদেশের এটি একটি স্থল বাস্তবতা। তাই আমি আবার বলবো বাংলাদেশের প্রসঙ্গে বার বার লকডাউন করা সঠিক কৌশল এবং একটি কার্যকর বিকল্প নয়। পরিবর্তে, আমাদের অবশ্যই মাস্ক পরতে এবং যতদূর সম্ভব সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিত করে আমাদের সকল মূল্যে সমস্ত বিশাল জন সমাবেশ বন্ধ করতে হবে। একই সময় সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, এমনকি আমাদের টিকা দেওয়ার বিশ্বব্যাপী রাজনীতি বিবেচনা করে, ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক স্বার্থের উপরে উঠে ঝুঁকি নিতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমাণে, প্রয়োজনে বিভিন্ন ভ্যাকসিন গ্রহণ করতে হবে, বা নিজেদের তৈরি করতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পর্যাপ্ত লোককে টিকা দিতে হবে। অনেক আত্মবিশ্বাসের সাথে আমি দেখছি আইন প্রয়োগকারী লোকেরা জনসমাগম বন্ধ করতে এবং জনগনের স্বাস্থ্য পরামর্শ অনুসরণ করতে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন।

(এই নিবন্ধটি বিভিন্ন বিশ্বব্যাপী প্রকাশনা সম্পর্কিত তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।)



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন