ইনসাইড থট

দয়া করে অ-কার্যকর লকডাউনের নীতি আর নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৩ অগাস্ট, ২০২১


Thumbnail

আমি নিয়মিত ল্যানসেট এবং দ্য নেচার সহ পিয়ার রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত বৈজ্ঞানিক নিবন্ধগুলি পড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ও জাতীয় সংবাদপত্র, বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ, রেকর্ডকৃত বাংলাদেশ টিভি সংবাদ এবং টক শো পড়ি এবং দেখি। বাংলাদেশের সংবাদপত্রে ইদানিং কালের প্রকাশিত কিছু নিবন্ধ আমাকে এই সংক্ষিপ্ত মতামত লিখতে আগ্রহী করেছে। অন্যদিন আমি প্রথম আলোর আনিসুল হকের একটি লেখা “কোরনা পরিস্তিতি নিয়ে আশার গল্প, শিক্ষার গল্প” পড়লাম এবং একই কাগজে লেখা “যেভাবে করোনা সংক্রমণ কমিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ” আনোয়ার হোসেনের লেখা এবং “এই সব ‘লকডাউনের’ অর্থ কী?” এ কে এম জাকারিয়ার লেখা আর “ এখন বিধিনিষেদ সফল হওয়া সম্ভব নয়” ডা: সৈয়দ আবদুল হামিদের সাক্ষাৎকার পড়লাম। মি: জাকারিয়া তার প্রবন্ধটিতে “আল্লার কসম গেটলক সিটিং সার্ভিস” লেখাটি পড়ে আমারও ভালো লেগেছে। যা আমরা আমাদের বাংলাদেশে লকডাউনের তৃতীয় সংস্করণের সাথে তুলনা করতে পারি, এবং আমরা বলতে পারি “আল্লার কসম এইবার এটি সবচেয়ে কঠোর লকডাউন”। আমি বাংলা ইনসাইডারে লেখা “কাল থেকে আবার হ-য-ব-র-ল লকডাউন” এবং বিডি নিউজ ২৪ বা জনকন্ঠ বা বাংলাদেশের প্রতিদিন পড়েছি এবং সময় বা ৭১ টিভির সংবাদ দেখেছি। সমস্ত কাগজপত্র এবং টিভি সাধারণ জনগণকে সময়মত সঠিক তথ্য জানানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। মাঝে মাঝে মনে হয় কেউ কেউ আবার আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। যেমন তানজিল রিমন priyo.com এর প্রবন্ধ “ভয়াবহ পরিবেশের দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ?” পড়ে তাই মনে হতে পারে। আমি পড়লাম প্রয়োগযোগ্য বা কার্যকরী কোনো প্রমাণ না দেখিয়ে তথাকথিত “আল্লার কসম লকডাউন” এর মেয়াদ আবার বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছে ডিজিএইচএস!
 
আসুন এটি সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার জার্নালটিতে সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে (১৬ই নভেম্বর ২০২০) ২২৬ দেশের ৬০৬৮টি পৃথক অ-ফার্মাসিউটিক্যাল হস্তক্ষেপের (Non Pharmaceutical Intervention, NPI এনপিআই) যেমন লক লকডাউন, মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, স্কুল বন্ধ, ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিবর্তনের সামাজিক যোগাযোগ ইত্যাদির কার্যকারিতা মূল্যায়ন। পূর্বের জাতীয় লকডাউনের কার্যকারিতা সম্পর্কে পরিসংখ্যানগত গবেষণাগুলি মিশ্র সিদ্ধান্তে এসেছিল সেই মুল্যায়নে। জাতীয় লকডাউন একাধিক এনপিআইকে অন্তর্ভুক্ত করে (উদাহরণস্বরূপ, স্থল, সমুদ্র ও আকাশ সীমানা বন্ধ করা, স্কুল বন্ধ করা, অপরিহার্য দোকানপাট বন্ধ করা, ঘরের বাহিরে মানব চলাচল এবং যে কোন জমায়েত নিষিদ্ধ করা এবং নার্সিং হোম পরিদর্শন নিষিদ্ধ করা, অফিস আদালত এবং ব্যবসার শিল্পগুলো বন্ধ করা) যা ভিন্ন দেশগুলিতে ভিন্ন ভাবে ইতিমধ্যে কিছু অংশে গৃহীত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন জাতীয় লকডাউন জারি করেছে। কিছু দেশ কঠোর ব্যবস্থা ব্যবহার করেছে, সবকিছু বন্ধ করে দিয়েছে এবং কিছু দেশ লকডাউনের উপাদান বা লকডাউনের ছোট প্যাকেজ ব্যবহার করেছে। এই উপসংহারটি একটি প্রাথমিক ভাবে দেওয়া জাতীয় লকডাউনের কার্যকারিতা উড়িয়ে দেয় না (যা বাংলাদেশ ২০২০ সালের মার্চ মাসে কিছুটা সফলভাবে এবং সঠিকভাবে আরোপিত হয়েছিল) কিন্তু পরামর্শ দেয় যে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলির ছোট প্যাকেজের একটি উপযুক্ত সংমিশ্রণ (ক্রম এবং বাস্তবায়নের সময়) কার্যকারিতার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ লকডাউনের বিকল্প হতে পারে যা সমাজ, অর্থনীতি, মানবিক প্রতিক্রিয়া ব্যবস্থা এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে না। দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সফল সরকারি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি এবং অন্যান্য আর্থিক সহায়তাও অত্যন্ত কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। অতএব, এই ধরনের ব্যবস্থাগুলি কেবল আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেই প্রভাবিত করে না বরং জনস্বাস্থ্যেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। উদাহরণস্বরূপ, সব শ্রেণীর মানুষের কোভিড পরীক্ষা করা সহজতর করা বা কোভিড রোগের কারনে স্ব-বিচ্ছিন্ন করার সময় তাদের চাকরি হারানোর ভয় বা বেতনের কিছু ভাগ না পাওয়ার ভয় দুর করার ফলে জনগনের সহযোগিতা বৃদ্ধি করে কোভিড সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করতে পারে। স্বতন্ত্র এনপিআইগুলির কার্যকারিতা ক্ষমতায় থাকা সরকারের দক্ষতা ও কার্যকারিতা এবং স্থানীয় প্রেক্ষাপট দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়। এই স্থানীয় প্রেক্ষাপট গুলো হল মহামারীর পর্যায়, আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক, এবং রাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য এবং অন্তর্ভুক্ত পূর্বে বাস্তবায়িত অন্যান্য এনপিআই কার্যকারিতার এবং বজায় রাখার সক্ষমতার অতীত ইতিহাস। সবচেয়ে কার্যকরী ব্যবস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে বেশিরভাগ জনসমাবেশের জায়গা বন্ধ করা এবং সীমাবদ্ধ করা যেখানে মানুষ ছোট বা বড় সংখ্যায় বেশি সময় ধরে জড়ো হয় (বার, স্কুল, অভ্যন্তরীণ বা বহিরঙ্গন রাজনৈতিক বা ধর্মীয় সমাবেশ, পারিবারিক বা ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ইত্যাদি)। স্থল সীমান্তের বিধিনিষেধ আরোপ করা, দুর্বল জনগোষ্ঠীকে সরকারি সহায়তা এবং ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ পরিবর্তনের সামাজিক যোগাযোগ জনসাধারণকে স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এই ব্যবস্থাগুলি ব্যক্তি এবং পারিবারিক জীবনে কম অনুপ্রবেশকারী এবং আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে খুব বেশী প্রভাবিত করে না। কম কঠোর ব্যবস্থাগুলি জনসংখ্যার কাছ থেকে আরও ভাল সম্মতি জোগাতে পারে এবং জনসাধারণ তা মেনে চলতে আগ্রহি হতে পারে। সংক্ষেপে, স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সম্পূর্ণ কঠোর লকডাউন কার্যকর বা পরামর্শযোগ্য নয়। মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব, সামাজিক নিরাপত্তা জাল নিশ্চিত করার সাথে সাথে অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত গনজমায়েতে নিষেধাজ্ঞার মতো কিছু সাধারণত বাস্তবায়নযোগ্য অ-ফার্মাসিউটিক্যাল হস্তক্ষেপ অন্তর্ভুক্ত করুন যা জনসংখ্যার বেশিরভাগ দ্বারা কার্যকর এবং গ্রহণযোগ্য।
 
বাংলাদেশের স্থানীয় প্রেক্ষাপট মূল্যায়ন এবং বিবেচনা না করে যখন ডিজিএইচএস অ-প্রয়োগযোগ্য “আল্লার কসম” লোকডাউন আরও এক্সটেনশনের অনুরোধ করে, তখন আমি আরও অবাক হই।
 
আসুন আনসুল হক এবং আনোয়ার হোসেনের প্রবন্ধে ফিরে আসি যেখানে তারা পরোক্ষভাবে ভারত এবং চাঁপাই নোবাবগঞ্জে সংক্রমণ হ্রাস বা বন্ধ করতে লকডাউন সমর্থন করার চেষ্টা করছিল। এটা কি সত্যি?
 
বাংলাদেশের মতো, ভারতে সবচেয়ে কঠোর লকডাউনের পরে বিজয়ের আগাম ঘোষণা এবং পরবর্তীকালে বিশাল রাজনৈতিক সমাবেশ এবং গঙ্গায় বিশাল হিন্দু উৎসবের ফলে আমরা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর ব্যাপক বৃদ্ধি দেখতে শুরু করি। এই বিপর্যয় বন্ধ করতে তখন কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য কর্তৃপক্ষকে স্থানীয় প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার দেয়। কিছু কিছু রাজ্য যখন দ্রুত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন নিরবচ্ছিন্নভাবে চলছে তখন স্থানীয় লকডাউন আরোপ করে। কয়েক সপ্তাহ পরে আমরা সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা ধীরে ধীরে কম পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করি। কেন সংক্রমণ কমে আসলো, এটি লকডাউন বা অল্প কিছু লকডাউনের উপাদানগুলির জন্য যেমন সমস্ত অভ্যন্তরীণ এবং বহিরাগত জমায়েত নিষিদ্ধ করা এবং সীমানা বন্ধ করা অথবা (যা আনসুল হক এবং আনোয়ার হোসেন উল্লেখ করেননি) ততক্ষণে জনসংখ্যার অধিকাংশ সংক্রামিত হয়েছে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে সে কারণেই। ICMR- এর সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যদিও টিকা কভারেজ এখনও খুব কম, তবুও ৬ বছরের উপরে বয়সের ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭.৭% সংক্রমিত হয়েছে  এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। ইদানিং কালের উচ্চ সংক্রমণের কারনে মাত্র কয়েক মাস আগের থেকে এটি নাটকীয় ভাবে বেড়েছে। ৮৫% স্বাস্থ্যকর্মীদের শরীর ইতিমধ্যে সংক্রমিত হওয়ার জ্ন্য অ্যান্টিবডি পাওয়া গিয়েছে। শিশুদের অর্ধেকেরও বেশি (৬ থেকে ১৭বছর বয়সী) সিরো-পজিটিভ হয়েছে। রোগ-বিস্তার গ্রামীণ এবং শহরাঞ্চলে একই রকম পাওয়া গিয়েছে। যদিও ৪০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ এখনও ঝুঁকিপূর্ণ এবং সংক্রমণের মুখোমুখি। সুতরাং, আমাদের উপসংহারে যাওয়া উচিত নয় যে লকডাউন ভারতে সংক্রমণ কমিয়ে এনেছে।
 
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দিকে তাকানো যাক। ভারতে ২০২১ সালের এপ্রিলের শুরু থেকে, সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং ব্যাপক সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। ৫ই মে ভারতে সর্বাধিক সংখ্যক লোক ৪১২,৬১৪ জন কোভিড -১৯ এ সনাক্ত হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে ১৪ই মে সরকার সর্বাধিক সংখ্যক ৪৯৬৭ জনকে কোভিড -১৯ এর কারণে মারা গেছে বলে জানিয়েছে। চাপাইনবাবগঞ্জ একটি জেলা যেখানে প্রায় ২০০০০০০ বাসিন্দা বসবাস করে এবং ভারতের সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত। মানুষ প্রতিদিন সীমাহীন সীমান্ত অতিক্রম করে। অনেক বাংলাদেশি ভারত থেকে ফিরে আসছিল। তবুও, আমরা এপ্রিল বা মে মাসের শুরুত স্থল সীমানা বন্ধ করিনি। ডেলটা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করে এবং ২৫শে মে সময় টিভি সংবাদ অনুসারে পরীক্ষার জন্য আসা সকলের মধ্য ৬০% সংক্রমণের হার পাওয়া যায়। এর অর্থ ব্যাপকভাবে সংক্রমণ ইতিমধ্যে ভালভাবে শুরু হয়েছিল। ২৫শে মে যখন সীমান্ত বন্ধ করা এবং লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল সেই সময়কালে এবং পরের সপ্তাহ ধরে ব্যাপক সংক্রমণ চলছিল এবং সংক্রমণ কমানোর সেসময়ের লকডাউন তখন খুব কার্যকর কৌশল হতে পারে না। সুসংবাদ হল ১২ জুলাই পরীক্ষার জন্য যারা এসেছিল তাদের মধ্যে সংক্রমণের হার ১২% এ নেমে এসেছিল। প্রশ্ন হল এটাকি লকডাউনের কারণে হয়েছে? অথবা গণসমাবেশ বন্ধ করা বা সংখ্যাগরিষ্ঠ ইতিমধ্যে সংক্রমিত হয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে তার কারনে হয়েছে? সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া আসুন পরম কোন সিদ্ধান্তে না আসি। আমরা স্থানীয় এপিডেমিওলজির উপর ভিত্তি করে পরামর্শ দিয়েছিলাম, সময়মতো এলাকাভিত্তিক লকডাউন যদি তাড়াতাড়ি করা হয় তাহলে হয়ত সেই কৌশল উপকারী হতে পারে। চাঁপাই নবাবগঞ্জে তা সময়মত করা হয়নি এবং ব্যাপক ক্ষতি ইতিমধ্যে ঘটেছে।
 
অন্যদিকে, সুইডেন যে দেশ লকডাউনের নিয়ম অনুসরণ করেনি এবং ব্যাপকভাবে লোকডাউন চাপেয়ে দেয়নি কিন্তু নির্ভরশীল বা নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিদের উপর নির্ভর করে স্বাস্থ্য পরামর্শ, মুখোশ, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, যতদূর সম্ভব বাড়ি থেকে কাজ করা সহ ৫০ জনের উপরের কোন সমাবেশ হতে দেয়নি। কঠোর লকডাউন আরোপ করতে অস্বীকার করার জন্য মিডিয়া কর্তৃক নিন্দিত হলেও সুইডেনের সম্পূর্ণ লকডাউন না দেওয়া, স্বাস্থ্য সংকটের কম অনুপ্রবেশমূলক পন্থা অবলম্বন করা ফল দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, সুইডেনে অন্যান্য নর্ডিক দেশের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি মৃত্যু এবং সংক্রমণ ছিল এবং ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়েছিল। ৩১শে জুলাইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী কোভিডের কারণে মৃত্যু এখন শূন্য বা শূন্যের কাছাকাছি ঘুরছে। আমেরিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) থেকে সদ্য প্রকাশিত তথ্য যা ডেল্টা স্ট্রেনকে আরও সংক্রমণযোগ্য এবং সম্ভাব্যভাবে আরও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে বলে প্রকাশ করে। প্রতিক্রিয়ায় মন্তব্য প্রকাশ করে সুইডেনের প্রধান মহামারী বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডার্স টেগনেল শুক্রবার বলেছিলেন যে ডেল্টা সম্পর্কে "আমরা অনেক কিছুই জানি না" এবং করোনাভাইরাস এই স্ট্রেন সম্পর্কে "সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্ত" আঁকার ধারন করার বিরুদ্ধে সতর্ক করেন। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে ডেলটা বৈচিত্রটি সুইডেনে "বেশ কিছু সময়ের জন্য" প্রচলিত ছিল, কিন্তু তা সুইডেনে সামান্য প্রভাব ফেলেছে, বিশেষ করে নার্সিং হোমের মতো উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে।
 
কিছু বিশেষজ্ঞ পোশাক কারখানা, অন্যান্য রপ্তানিমুখী শিল্প খোলার বিপক্ষে। আমি জানতে চাই যে তারা কোন প্রমাণের ভিত্তিতে এটা বলছে? আমি কোনও গবেষণার ফলাফল বা প্রমাণ দেখিনি যা প্রমান করে যে সেই শিল্পগুলি সংক্রমণের হটস্পট এবং বিপুল সংখ্যক শ্রমিক সংক্রামিত হয়েছে এবং সংক্রমণের উচ্চ সংখ্যার কারণে কিছু শিল্পের বন্ধ হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প ছিল না। ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বলেন “বিধিনিষেধের সফলতা নির্ভর করে স্থান, কাল ও পাত্রের ওপর। উন্নত বিশ্বের সমাজ-সংস্কৃতিতে বিধিনিষেধ সফল করা অনেক সহজ। যেমন ধরুন পাব, নাইট ক্লাব ও পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ রাখলেই বিধিনিষেধ অনেকটা সফল হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের দেশের বাস্তবতা তো ভিন্ন। আর এটা না বুঝে বিধিনিষেধ দিলে তা তো সফল হওয়ার কথা নয়। আগেও বলেছি, দীর্ঘ মেয়াদে বিধিনিষেধ সফল করার সক্ষমতা সাধারণ মানুষ কিংবা বড়-ছোট কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরই নেই। তৈরি পোশাকশিল্পসহ রপ্তানিমুখী খাত তো আরও স্পর্শকাতর, কেননা একবার বাজার হারালে তীব্র প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে তা ফিরে পাওয়া খুবই কঠিন। প্রথম দিকে অনেক দেশ বিধিনিষেধের মাধ্যমে সংক্রমণের বিস্তার রোধ করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু আমাদের বাস্তবতায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, এখন বিধিনিষেধ সফল হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে কেন বিধিনিষেধকেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার পরামর্শ দেব?” গত কয়েক মাস ধরে ঐ কথাগুলো আমি এবং বাংলাইনসাডার বার বার বলেছি, দুর্ভাগ্য আমরা মনে করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা না তা শুনছেন বা কোন মুল্য দিচ্ছেন।
 
মনে হচ্ছে বিশেষজ্ঞরা কেবল আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারেন। আমার বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে আমরা কোন পৃথিবীতে বাস করছি? আমরা জানি যদি পোশাক শিল্প খোলা হয়, তাহলে চাকরি হারানোর ভয়ে বা মালিকদের হুমকির কারণে শ্রমিকরা যেভাবেই হোক ফিরে আসবে। তাহলে, কেন সেই বিশেষজ্ঞরা এবং আমলারা ন্যূনতম বুদ্ধিমত্তা প্রদর্শন করে, পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণা দেয়ার আগে সমস্ত পরিবহনের মাধ্যমকে কাজ করার অনুমতি দিলেন না, যেমনটি গত ঈদের সময় শিথিল করা হয়েছিল! কেন আমরা আবার সর্বনাশ ঘটতে দিলাম! ডেল্টা সংক্রমণ ইংল্যান্ডে বিপর্যয় ঘটাচ্ছিল কিন্তু সবকিছু খোলার পরেও কেন সংক্রমণ নেমে আসছে? আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। প্রাথমিক লকডাউনটি হয়তো কার্যকরী ছিল কিন্তু দু:খিত এটি আর কাজ করবে না, তবুও উচ্চস্বরের কিছু বিশেষজ্ঞরা এর জন্য চিৎকার করে বারবার চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন। যান চলাচল বন্ধ করে রেখে পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণা দিয়ে আবার, আমরা সুপার স্প্রেডার ইভেন্টটি হতে দিয়েছি, ক্ষতি হয়েছে। এটা আমাকে একটা কৌতুকের কথা মনে করিয়ে দেয়, “আপনি যখন ঘরের দরজা খোলা রেখে ঘুমাচ্ছেন চোর তখন আপনার ঘরে প্রবেশ করে ডাকাতি করছে, তখন তাহলে দরজা শক্ত করে লক করে কি লাভ”!! দয়া করে বিশাল ব্যাংক ব্যালেন্স নিয়ে এয়ারকন রুমে বসে অসম্ভবকে সম্ভব করার চেষ্টা করবেন না।
 
মাস্ক, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা; টেস্টিং এবং বিচ্ছিন্নতা সুবিধা (বিশেষ করে সমস্ত শিল্প এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে) প্রদান নিশ্চিত করার পাশাপাশি সমস্ত অভ্যন্তরীণ এবং বাইরে জনসমাগম নিষিদ্ধ করা; ভবিষ্যতে এখনও কিছু সময়ের জন্য ভারত এবং মিয়ানমার স্থল সীমানা কঠোরভাবে বন্ধ রাখা; উন্নত, এবং পর্যাপ্ত এবং মানসম্মত বাড়ি এবং হাসপাতালের যত্ন উন্নত করা; এবং কমিউনিটি ক্লিনিক, স্কুল, এবং শিল্প প্রাঙ্গন সহ সম্ভাব্য প্রতিটি পথ ব্যবহার করে দৈনিক টিকা দেওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি করা এখন দরকার। দয়া করে আর স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করবেন না, যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এটি খুলুন।
 
বাংলা ইনসাইডারে লেখা “অতিকথন আর সমন্বয়হীনতায় সমালোচিত সরকার” এবং “আর মানুষকে কষ্ট দেবেন না প্লিজ” প্রবন্ধ দুটি পড়ে সর্বশেষে বলতে চাই, এখন যখন আমাদের গর্বের সাথে বলা উচিত, খুনিরা আমাদের জাতির পিতাকে নির্মম ভাবে হত্যার পরও, যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী দেশকে অনেক এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। সর্ব ক্ষেএে আমাদের অসাধারণ সাফল্য অনেক দেশকে ঈর্ষান্বিত করে। আমাদের এটা নিয়ে কথা বলা উচিত। কিন্তু স্বাস্থ্য নেতাদের চরম ব্যর্থতার কারণে, সমন্বয়ের ব্যর্থতা এবং কিছু সরকারী দলের নেতার আলগা কথা বলার কারণে সকল সেক্টরে আমাদের অসাধারণ সাফল্যগুলির কথা না বলে, তাদের ব্যর্থতার কথা উচ্চস্বরে বলে আমাদের স্বাধীনতার বিরুদ্ধের মানুষগুলো এটা উপভোগ করছে। এটা বন্ধ করতে হবে। সৌভাগ্যবশত পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমাদের এখন পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে এবং আমরা আর লকডাউন না দিয়ে, সর্বনিম্ন জীবন ও জীবিকার ক্ষতি স্বীকার করে এই মহামারীটি কাটিয়ে উঠব।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

এক বছরের রাষ্ট্রপতির যত অর্জন


Thumbnail

আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।

দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।

আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।

গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে, তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও একই ভাবে থেকেছেন।

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।


রাষ্ট্রপতি   মো. সাহাবুদ্দিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনা ছাড়া কেউই অপরিহার্য নয়


Thumbnail

প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।

আওয়ামী লীগ যদি আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয় সেটি ভিন্ন কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ যদি টিকে থাকতে চায় তাহলে দলকে এবার কঠোর সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এটা এখন সময়ের দাবি। যারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি তারা ইনিয়ে বিনিয়ে এখন নানান অজুহাত তৈরি করছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের উচিত হবে এ সমস্ত অজুহাত না শোনা। কারণ যিনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন তিনি দলীয় সিদ্ধান্ত পরিপন্থি কাজ করেছেন এটা সুস্পষ্ট। সুতরাং এখানে দল উচিত তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। দল করলে তাকে দলীয় শৃঙ্খলা মানতেই হবে। অনথায় দল থেকে বাদ দিতে হবে। যারা দলীয় সিদ্ধান্তের পরিপন্থী কাজ করেন তারা কখনই দলের জন্য মঙ্গলজনক নয়। এদের মত আট-দশ দলে না থাকলে আওয়ামী লীগের কিছু যায়-আসে না। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক ছাড়া আর কেউই আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। শেখ হাসিনাই কেবল মাত্র আওয়ামী লীগ এবং দেশের স্বার্থে অপরিহার্য। সুতরাং, এখন আমরা দেখতে চাই শৃঙ্খলা পরিপন্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যারা আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্দেশনা অমান্য করেছেন তিনি দলের যত বড় নেতাই হোন না কেন তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি। দরকার হলে দল থেকে তাদেরকে বাদ দিতে হবে কিংবা বহিষ্কারের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। শুধু বহিষ্কারই নয়, তাদের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করতে হবে। এতে করে কারও যদি এমপিত্ব চলে যায় তো যাবে। কিন্তু দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে হবে দলের স্বার্থে। তাদের আসনে যে কাউকে নির্বাচন করে জিতে আসতে পারবেন। কোন মন্ত্রী এমপি আওয়ামী লীগের জন্য অপরিহার্য নয়। যারা দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন উপজেলা গুলো প্রার্থী দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে দল কী সিদ্ধান্ত নেয় সেটা দেখার জন্য গোটা দেশের মানুষ কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দিকে তাকিয়ে আছে।

অতীতে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখেছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে। বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে এবার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও কঠোর পদক্ষেপ নেবেন এমনটি আশা আওয়ামী লীগের প্রতিটি তৃণমূল নেতাকর্মীর। এখন আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেয় আমরা সেটার অপেক্ষা আছি।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন