নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ০৩ নভেম্বর, ২০১৭
আবার ভাঙ্গা রেকর্ডটা বাজাই। এই ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানো ছাড়া আর কীই বা করতে পারি? (ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানোর অর্থ এক কথা বার বার বলা। কথাটা কোথা থেকে এসেছে এই যুগের ছেলে মেয়েদের জানার কথা নয়। গ্রামোফোনের যুগে যে রেকর্ড বাজিয়ে গান শোনা হতো সেখানে খুব সূক্ষ খাঁচ কাটা থাকত। ঘুরতে থাকা রেকর্ডর বাইরের প্রান্তে গ্রামোফোনের পিন লাগানো মাথাটা বসিয়ে দিলে সূক্ষ খাঁচটা অনুসরণ করে গান বাজতে বাজতে সেটি রেকর্ডের ভেতরের প্রান্তে এসে শেষ হতো। রেকর্ড ভাঙ্গা হলে বা সেখানে ফাটল থাকলে পিনটা একটা খাঁচে আটকে গিয়ে সেই খাঁচের অংশটুকুই বার বার বাজিয়ে যেতো। তাই এক কথা বার বার বলা হলে আমরা বলি ভাঙ্গা রেকর্ড বাজিয়ে যাওয়া! )
আমি কেন ভাঙ্গা রেকর্ড বাজানোর কথা বলছি সেটা অনুমান করা নিশ্চয়ই খুব কঠিন নয়, সেটা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। দেশে এখন ৪২ টা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সব বিশ্ববিদ্যালয় যদি ভর্তি পরীক্ষার জন্য একটি করে উইকএন্ড নিতে চায় তাহলে ৪২ টি উইকএন্ড দরকার। এইচ.এস.সি পরীক্ষার ফল বের হওয়ার পর থেকে শুরু করে ইউনিভার্সিটির ক্লাস শুরু হওয়ার মাঝখানে ৪২ টি উইকএন্ড নেই। তার চেয়ে বড় কথা দেশের প্রতাপশালী বিশ্ববিদ্যালয় গুলো এক উইকএন্ডে পরীক্ষা শেষ করে না, তাদের বেশ কয়েকটি উইকএন্ড দরকার হয়। তারা তাদের পছন্দের উইকএন্ড গুলো বেছে নেওয়ার পর উচ্ছিষ্ট উইকএন্ড গুলো অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভাগাভাগি করে নেয়। শুধু তাই নয় অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে প্রত্যেকটা বিভাগ আলাদা করে নিজের বিভাগের পরীক্ষা নেয়। সেই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হলে ছেলে মেয়েদের গাট্টি বোচকা নিয়ে দিনের পর দিন থাকতে হয়। তারা কোথায় থাকবে কীভাবে থাকবে সেটি নিয়ে কারো বিন্দুমাত্র মাথা ব্যথা নেই।
এই সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিষ্ঠুরতা দেখার সময়। এই সময়টা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাওয়া ছেলে মেয়েদের কষ্ট পাওয়ার সময়। আর এই সময়টা আমার সবচেয়ে বেশী মন খারাপ হওয়ার সময়।
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার এই সময়টাতে প্রতি বছরই নানা ধরনের অঘটন ঘটে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলো সেগুলো লুকিয়ে ছাপিয়ে রাখার চেষ্টা করে। একটা দুটো খবর বের হয়ে যায় সেটা নিয়ে কিছুদিন হই চই হয় তারপর সবাই সবকিছু ভুলে যায়। এবারে সর্বশেষ ঘটনাটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের দুটি প্রশ্ন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার প্রয়োজন নেই একেবারে খুবই সাধারণ মানুষের চোখে পড়লেও তারা বলে দিতে পারতো যে এরকম প্রশ্ন ঠিক নয়। এটা হচ্ছে সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন, এক ধর্মকে বড় করে দেখিয়ে অন্য ধর্মকে খাটো করে দেখানোর প্রশ্ন। কিন্তু এই প্রশ্ন দুটো কারো চোখে পড়েনি। যে কোন পরীক্ষার প্রশ্ন কখনো একজনে করে না, বেশ কয়েকজনের একটা কমিটি প্রশ্নগুলো প্রস্তুত করেন। কাজেই সেই কমিটির সব সদস্য উগ্র সাম্প্রদায়িক হবে তার সম্ভাবনা কম, কমিটির কারো না কারো চোখে পড়ার কথা। কমিটির সদস্যদের কারোই চোখে পড়েনি দেখে অনুমান করা যায় সদস্যদের কেউই সম্ভবত প্রশ্নগুলো পড়ে দেখেন নি। তাই কেউ হয়তো জানতেন না সদস্যদের কোনো একজন এরকম একটা প্রশ্ন ঢুকিয়ে রেখেছেন। ভর্তি পরীক্ষা মানেই হেলা ফেলা, যেন তেন ভাবে কিছু গাইড বই থেকে কিছু প্রশ্ন তুলে নিয়ে একটা প্রশ্নপত্র তৈরি করে ফেলা। সেই সব প্রশ্ন এতো নিম্ন মানের হয় যে মাঝে মাঝে মনে হয় পরীক্ষা না নিয়ে লটারি করে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করার জন্য বেছে নিলেও হয়তো তাদের প্রতি বেশি সুবিচার করা হয়। হাইকোর্ট থেকে একবার আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রক্রিয়া করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আমি তখন সবিস্ময়ে আবিষ্কার করেছিলাম সেই পরীক্ষার প্রত্যেকটা প্রশ্ন গাইড বই থেকে নেওয়া। যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই এরকম ঘটনা ঘটে তাহলে অন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে একই ব্যাপার কেন ঘটবে না?
কাজেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার ভর্তি পরীক্ষায় আমরা চরম ভাবে সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন দেখতে পেয়েছি। অনেকেই হয়তো অবাক হয়েছেন, আমি মোটেও অবাক হইনি। ভর্তি পরীক্ষায় এই ধরনের ব্যাপার সব সময়েই ঘটে যাচ্ছে, আগে সেটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়নি, এইবারে যে কোনো কারণেই হোক এটা নিয়ে অনেকে মাথা ঘামাচ্ছে।
এবারে শুধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে তা নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। আমি ডেইলি স্টারে পড়েছি তারা ভোর রাতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন পেয়েছে, পরের দিন সেই প্রশ্নগুলো ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা গেছে সব মিলে গেছে। এটা সংবাদপত্রের খবর এর মাঝে ভুল বা মিথ্যা হওয়ার কিছু নেই। প্রশ্ন ফাঁসের এর থেকে অকাট্য প্রমাণ আর কী হতে পারে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্যি পুরোটা অস্বীকার করে রেকর্ড সময়ের ভেতরে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে ফেলেছে। এরকম অবস্থায় এটি হচ্ছে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। একবার ফলাফল প্রকাশ করে ফেললে আর কেউ কিছু করতে পারবে না, ফলাফলে যাদের নাম চলে আসবে এখন তারাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অন্য সবার সঙ্গে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও আমরা সবাই জানি আসলে সত্যিই প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস করার সাথে জড়িত থাকার ব্যাপারে ছাত্রলীগের নেতাদের নাম উঠে এসেছে, কাউকে কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে একটা চরম ঘোলাটে অবস্থা।
ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে ভালো ছেলেদের সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষার প্রশ্ন যারা পেয়ে গেছে তারাও চলে এসেছে। আমি যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কাজকর্ম গুলোর সাথে যুক্ত ছিলাম তখন দেখেছি কেউ যদি এক নম্বর বেশি পেতো সে তিরিশজনকে ডিঙ্গিয়ে সামনে চলে আসতো। কাজেই যারা ফাঁস হয়ে যাওয়া প্রশ্ন পেয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা অন্যান্য সকল ছেলেমেয়েদের ডিঙ্গিয়ে অনেক সামনে এসে গেছে। তারাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় বড় ডিপার্টমেন্টে ভর্তি হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের প্রশ্নগুলো দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। ভর্তি পরীক্ষায় একটি অনেক বড় অমানবিক ঘটনা ঘটেছে জেনেও তারা দুর্বৃত্তদের হাত থেকে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করেনি, তারা দুর্বৃত্তদের অন্যায় করতে দিয়েছে, এর চাইতে হতাশার ব্যাপার আর কী হতে পারে?
মাত্র অল্পকিছুদিন আগে আমি ভর্তি পরীক্ষা দিতে ইচ্ছুক এরকম একটি মেয়ের কাল্পনিক একটা গল্প লিখেছিলাম, সেখানে লিখেছিলাম এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে যাবার সময় রাতের বাস পথে দেরি করার জন্যে মেয়েটি সময়মতো পৌছাতে পারেনি বলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেনি। আমরা সবাই দেখেছি এরকম ঘটনা এখন মোটেও কাল্পনিক ঘটনা নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক এই ঘটনাটি ঘটেছে, শত শত ছেলেমেয়ে পথে ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে সময়মতো পরীক্ষার হলে হাজির হতে পারেনি বলে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেনি। একজন ছাত্র বা ছাত্রী সমস্ত জীবন দিয়ে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে যখন পরীক্ষাটি দিতে পারে না তখন তাদের কাছে কী পুরো জীবনটিই একটা অর্থহীন বিষয় মনে হয় না?
যদি সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিতো তাহলে এই কোনটিই কিন্তু ঘটতো না। বাংলাদেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যদি একটি প্রশ্নপত্র তৈরি করতো তাহলে সেটি হতো একটি অসাধারণ বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্নপত্র, মোটেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার প্রশ্ন নয়। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যদি সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে, যদি সেই প্রশ্নপত্র ছাপাতো, সংরক্ষণ করতো, বিতরণ করতো তাহলে সেটি কখনোই ফাঁস হয়ে যেতো না। যদি সবাই মিলে একসঙ্গে ভর্তি পরীক্ষা নিতো তাহলে সবাই নিজের এলাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতো, দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়াতে হতো না। ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে দেরি করে পরীক্ষা কেন্দ্রে হাজির হয়ে পরীক্ষা দিতে না পারার ভয়ংকর দুর্ভাগ্যটি মেনে নিতে হতো না।
বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষার এত বড় গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রক্রিয়া নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই কেন আমি বুঝতে পারি না। আমি সংবাদ মাধ্যমে দেখেছি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে যিনি সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করেছেন তাকে কেন শাস্তি দেওয়া হবে না সেটি হাইকোর্ট জানতে চেয়েছে। চারুকলা বিভাগের এই সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি পরীক্ষা নেওয়া। আমি বহুদিন থেকে অপেক্ষা করে আছি কখন হাইকোর্ট সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে থেকে জানতে চাইবে কেন সবাই মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে এই দেশের ছেলেমেয়েদের উপর একটি চরম অমানবিক নির্যাতন বন্ধ করছে না।
ছয় সাত বছর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একবার একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তখন আমাকে অনুরোধ করেছিল দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরদের সামনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায় তার ওপর একটা বক্তব্য দিতে। আমি গাধা টাইপের মানুষ, তাই সরল বিশ্বাসে ভাইস চ্যান্সেলরদের সামনে বক্তব্য রেখেছিলাম। সকল ভাইস চ্যান্সেলরদের সেই সম্মিলিত প্রতিক্রিয়াটির কথা আমি কোনদিন ভুলব না এবং সোজা ভাষায় বলে দেওয়অ যায় আমি সেদিনই বুঝেছিলাম এই দেশের অসহায় ছেলেমেয়েদের জন্য কারও মনে বিন্দুমাত্র মায়া নেই। তাদেরকে পীড়ন করে কোনোভাবে কিছু বাড়তি টাকা আয় করা ছাড়া আর কারো মনে অন্য কোনো ইচ্ছা নেই।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়টি অবশ্যি এর থেকেও জটিল। যেহেতু কেউই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় রাজি হতে চাইছে না তাই তখন যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলরের আগ্রহে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। শুনে অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি কমিউনিস্ট পার্টি , ওয়ার্কাস পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি এরকম বামপন্থী রাজনৈতিক দল্গুলো মিলে সেই পরীক্ষাটি বন্ধ করার আয়োজন করেছিল। রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের একশ বছর পূর্তি উপলক্ষে যখন বামপন্থী দল্গুলো সারাদেশে সভাসমিতি করছে তখন তাদের আমার খুবই জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয় একবারে নিজের ঘরের ছেলেমেয়েদের সাহায্য করার এই বিপ্লবটিকে তারা কেন গলা টিপে হত্যা করেছিলেন?
একবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের ডাকা হয়েছিল সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আলোচনা করার জন্য। সেই আলোচনায় সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছিলেন যে, সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া উপায় নেই। সেই বক্তব্য শুনে আমি খুবই আশাবাদী হয়েছিলাম কিন্তু দেখা গেলো যে তারপর আর কিছুই হয়নি।
আমি একেবারে সত্যিকারভাবে আশাবাদি হয়েছিলাম যখন আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং চ্যান্সেলর সকল ভাইস চ্যান্সেলরদের একটি সভায় সম্মিলিতভাবে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেশের ছেলেমেয়েদের কষ্ট লাঘব করার অনুরোধ করেছিলেন। আমি যেটুকু জানি মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুরোধ দেশের আইনের মত, সবাইকেই এটি মানতে হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিশ্চয়ই দেশের আইনের উর্ধ্বে! তারা রাষ্ট্রপতির অনুরোধ রক্ষা করেনি! আমার খুবই আশাভঙ্গ হয়েছে যখন এই বছর দেখতে পেয়েছি আবার প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় আগের মতো আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষা নিতে শুরু করেছে!
কয়েকদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে আমার থাকার সৌভাগ্য হয়েছিল। সেই সভায় বক্তব্য রাখার সময় আমি ধান ভানতে শিবের গীত গেয়ে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে অনুরোধ করে এসেছি যে, মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুরোধটি রক্ষা করে তারা যেন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার একটি উদ্যোগ নেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান তার বক্তব্য দেওয়ার সময় আমদের জানালেন প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছে এবং খবরের কাগজেও সে সম্পর্কে খবর ছাপা হয়েছে। আমরা জানতে পেরছি যে এটি ক্রমান্বয়ে কার্যকর করা হবে।
আমি ন্যাড়া এবং আমি বহুবার বেলতলায় গিয়েছি, কাজেই আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা ‘ক্রমান্বয়ে’ কার্যকরী করার বিষয় নয়, এটি ‘একবারে’ সবাইকে নিয়ে কার্যকর করতে হবে। যদি সেটি না করা হয় এবং কিছু কিছু প্রতাপশালী বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রক্রিয়া থেকে বাইরে থেকে যায়, তাহলে তাদেরকে উদাহরণ দেখিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও এ প্রক্রিয়া থেকে দূরে সরে যাবে। আলাদা আলাদা ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্য শুধুমাত্র বাড়তি কিছু টাকা উপার্জন, কাজেই হঠাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক নির্লোভ সাধু সন্ত হয়ে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বেন সেটা মনে করার কোনো কারণ নেই। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে রাজী করাতে হবে জোর করে, এছাড়া অন্য কোনো উপায় নেই!
আরও একটি বিষয় নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা হয়, যেটি দেখে আমি বুঝতে পারি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রক্রিয়াটি অনেকেই এখনো বুঝে উঠতে পারেননি। সে কথাটি হচ্ছে ‘গুচ্ছ পদ্ধতি’। অর্থ্যাৎ এক ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি গুচ্ছ তৈরি করা হবে এবং তারা মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা নেবে!
যে বিষয়টা অনেকেই বুঝতে পারেননা সেটি হচ্ছে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পরীক্ষা নেয় না, কিংবা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোও ছাত্রছাত্রীদের কৃষি বিষয়ে পরীক্ষা নেয় না। ছাত্রছাত্রীরা এখনো ইঞ্জিনিয়ার বা কৃষিবিদ হয়নি, তারা মাত্র এইচ.এস.সি পাশ করা ছাত্র- বাংলা, ইংরেজি, গণিত,রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান এইসব বিষয় পড়ে আসা ছাত্র। কাজেই তাদেরকে যাচাই করার জন্য আসলে তারা যে সব বিষয় পড়ে এসেছে, বাংলা, ইংরেজি, গণিত,রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান এইসব বিষয়েই পরীক্ষা নিতে হবে! কাজেই গুচ্ছ তৈরি করে সেই গুচ্ছের জন্য আলদা পরীক্ষা নিতে হবে সেটা কে বলেছে? সবাই মিলে একই পরীক্ষায় একই বিষয়ে পরীক্ষা দেবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি বিশেষ কোনো বিষয়ে বেশি জোর দিতে চায় সেটি তারা করতেই পারে, তার জন্য আলাদাভাবে পরীক্ষা নিতে হবে না।
সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার একটা অনেক বড় ইতিবাচক দিক আছে যেটা অনেকেই মানে না। এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাথে সাথে যদি সব বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নেয়, তাহলে ছাত্রছাত্রীদের উপর ‘বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং’ নামে যে সম্পূর্ন ভিন্ন এক ধরনের নির্যাতন হয়, সেটিও চিরদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। শুধু তাই নয় ছাত্রছাত্রীরাও প্রথমবার খানিকটা সময় পাবে নিজের জীবনকে উপভোগ করার জন্য, মা বাবার অনেক টাকা বেঁচে যাবে তাদের ছেলেমেয়েদের আর ভর্তি কোচিং করতে হবে না বলে।
আমি আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি দেখার জন্য কী হয়। ভর্তি পরীক্ষার চলমান এই নির্যাতন শেষ হওয়ার পর সত্যিই সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ যদি নেওয়া হয়, আমি তাহলে আশায় বুক বাঁধার জন্য প্রস্তুত হব।
যদি কিছুই না হয় তাহলে আবার শুরু করব ভাঙা রেকর্ডটি বাজিয়ে যাওয়ার জন্য।
বাংলা ইনসাইডার/ডিকেডি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক
ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার
লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন।
দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য
মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন
আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি
আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন
যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা
বিরোধী। আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি
করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার
অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে
বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ
লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি
হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের
মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে
আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।
পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের
আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে
বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট
না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা
অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না,
সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।
পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে
ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায়
ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।
লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।