পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে আধুনিক সোনার বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপবিারে শিশুপুত্র রাসেল, অন্তঃসত্ত্বা পুত্রবধূসহ খুনি মোশতাক জিয়াউর রহমানের কুট কৌশলে বিপদগ্রহস্থ কিছু সেনা সদস্যদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন। ব্রাসেলসে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই তনয়া শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। প্রবাস বসে বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের হত্যাকাণ্ডের সংবাদ পান। সেই সাথে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাংলার মানুষের জীবনে যে ভয়ানক দিন অপেক্ষা করছে তা বুঝে ফেলেন। অমানবিক যন্ত্রণা সহ্য করেও পঁচাত্তর পরবর্তী মৃত্যু উপত্যকা বাংলাদেশে স্বৈরশাসক জিয়াদের বিরুদ্ধে লড়ে বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় নিয় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দিনের পর দিন ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে থাকেন। তাঁরা স্বপ্ন দেখতেন সকল প্রতিকূলতা দূর করে রক্তের সমুদ্র জয় করে একদিন ঠিকই তারা অগ্রসর হবেন বাংলাদেশে আগমনের তরে। দিন যায় রাত যায়, পিতৃহারা, স্বজন হারা শেখ হাসিনা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে সময় পার করতেন। আর পরম করুণাময়ের দোয়ারে বারংবার প্রার্থনা করেন বাংলাদেশে ফিরে আসার জন্য, অত্যাচারী স্বৈরশাসকদের হাত থেকে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষার জন্য, বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা রক্ষার জন্য। নেতাকর্মীসহ কোটি কোটি বাংলাদেশীদের আবেগকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু খুনিদের রক্তচক্ষু, মৃত্যুর হুমকিকে নিয়ে বাংলাদেশে আসেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা। নেতাকর্মীদের প্রবল সমর্থনও ভালবাসায় সেনাপতি হিসেবে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশকে জন্মদানকারী সংগঠন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব নেন। আওয়ামী লীগ সেনাপতি শেখ হাসিনার পাশে বসে পর্দার অন্তরালে গিয়ে সব সময় পরামর্শ দেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ তনয়া শেখ রেহানা। যেমন করে বঙ্গবন্ধু পরামর্শ দিতেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনার দক্ষতা বিশ্বব্যাপী আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। শেখ হাসিনার পাশে বসে শেখ রেহানা তাঁর এই দক্ষতাকে আরো কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে গিয়ে ছোট খাট বিষয় কখনো চোখ এড়াতে পারে না। তবুও আড়াল থেকে শেখ রেহানা বড়ো বোন শেখ হাসিনাকে ধীর স্থিরভাবে বিভিন্ন বিষয় মনে করিয়ে দিয়ে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার নীরব সেনাপতির ভূমিকা পালন করে চলেছেন। ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে কখনোই তা শেখ রেহানাকে স্পর্শ করেনি। কেনইবা করবে তিনি তো একই মহান নেতা শান্তিকামী বিশ্বের অগ্রদূত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার মতোই যোগ্য উত্তসূরী। অথচ বাংলাদেশে বন্দুকের নলের জোড়ে পাকিস্তান থেকে উড়ে এসে ক্ষমতায় বসে দেশকে ভোগ বিলাসের বস্তুতে পরিণত করেছে জিয়াউর রহমান নামের একজন। পাকিস্তানের সাবেক গোয়েন্দা উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান খন্দকার মোশতাককে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করে ক্ষমতায় আসেন। সেই একই ধারা জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক রহমান ও কোকো রহমানের রক্তে বইছে। জিয়াউর রহমান উত্তোর বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবার পর পর তারেক জিয়া সমস্ত উন্নয়ন প্রকল্পে তারেক জিয়া প্রত্যক্ষভাবে কমিশন বাণিজ্যসহ খাম্বা ব্যবসায় নেমে বাংলা আপামর জনসাধারণকে শোষণ করতে উঠে পরে নামে। সময়ের তাগিদে ধীর স্থির বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যার শেখ রেহানা সম্পর্কেও জাতি জানতে চায়। তরুণ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার মত শেখ রেহানা সম্পর্কে বেশ কৌতূহল। তরুণ প্রজন্মের জন্য আমার ক্ষুদ্র প্রয়াসে দেখাতে চাই আধুনিক মানবিক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ রেহানার অবদান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে পরম ঈশ্বর নিজ হাতে খুনি খন্দকার মোশতাক জিয়াদের হাত থেকে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে রক্ষা করেছিলেন। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছোট কন্যা একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘মানুষের উপর বিশ্বাস হারানো পাপ। বিশ্বাস তো কাউকে না কাউকে করতেই হবে। আমরা যদি সবার উপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলতাম তাহলে ১৫ আগস্টের পর তো দুই বোন ঘরেই বসে থাকতাম। কার ভিতর কি আছে বলা মুশকিল হলেও সবার উপর থেকে তো বিশ্বাস তো হারানো যায় না। যে রাজনীতি ছোট্ট বয়সে নিজেদের কাছ থেকে বাবাকে সবসময় বিচ্ছিন্ন রাখত, সেই রাজনীতি যখন পুরো পরিবারকে ছিনিয়ে নিল, এমন মনোভাব নিজের ভিতরে কাজ করলেও একসময় এসে মনে প্রশ্ন জেগেছে, পুরো পরিবার নিয়ে গেলেও আল্লাহ কেন তাদের দুই বোনকে বাঁচিয়ে রাখলেন। নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তার কোন উদ্দেশ্য আছে? মনে হলো- এই খুনিদের ধরার জন্যই হয়তো আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন।’
কাকতালীয়ভাবে আধুনিক বাংলার নির্মাতা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে পরম ঈশ্বর যেন শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশীদের জন্য এই সেপ্টেম্বরে উপহার হিসেবে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার ঘরে পাঠিয়েছেন। তাই মার্চের মত বাংলাদেশে ‘সেপ্টেম্বর’ মাসও গুরুত্বপূর্ণ। এই সেপ্টেম্বরেই শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার শুভ জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা ও ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর শেখ রেহানা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব এর কোলে জন্মগ্রহণ করেছেন। মায়ের ডাক নাম রেণুর প্রথম অক্ষর আর বড়বোন হাসিনার শেষের অক্ষর অক্ষুণ্ণ রেখে নাম। পারিবারিক পদবী যুক্ত হয়ে পরিপূর্ণ নাম শেখ রেহানা। অতি আদরের ছোট ভাই রাসেলের কাছে যিনি ছিলেন ‘দেনা’ আপা। রাসেলের দেনা আপা ডাকলেও অন্যদের কাছে শেখ রেহানা ছিল ‘মুন্না’ নামে। লন্ডনে ১৯৭৭ সালে অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক সঙ্গে শেখ রেহানা বিয়ে হয়। অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিক ও শেখ রেহানা দম্পতির তিন ছেলেমেয়ে।শেখ রেহানা একজন রত্নগর্ভা মা। বড়ো মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রী ও তিন-বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। একমাত্র ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থায় উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকায় কর্মরত। আওয়ামী লীগের গবেষণা কাউন্সিল সিআরআইয়ের সাথে যুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। ছোট মেয়ে কন্ট্রোল রিস্কস নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গ্লোবাল রিস্ক এনালাইসিস সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন।
চলতি বছর ৪ আগস্ট একটি অনলাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত আনিসুর রহমানের নিবন্ধে ‘আন্তর্জাতিক পরিসরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড: বিচারের প্রথম ডাকটি ছিল শেখ রেহানার’ থেকে কিছু তথ্য তুলে ধরি।
‘ভারতের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে বসবাসরত শেখ রেহানার পড়ার কথা ছিল শান্তিনিকেতনে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সেসময়ের সরকার জানালো তারা নিরাপত্তা দিতে পারবে না। উপায় না দেখে শেখ রেহানা পাড়ি জমালেন লন্ডনে, সাহায্য করলেন তার ফুফা সেনা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান (পরে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছিলেন)। তবে টিকেটের ব্যবস্থা করতে পারছিলেন না। শেখ রেহানা তার এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, এটি জানতে পেরে ইন্দিরা গান্ধী তার টিকেটের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। শেখ রেহানা দিল্লি থেকে বিলেত গেলেন। সেখানে গিয়ে মুখোমুখি হলেন আরেক নিষ্ঠুর পৃথিবীর। চেনা লোকজনও মুখ ঘুরিয়ে নিত। চাকরি খুঁজছিলেন হন্যে হয়ে। কিন্তু প্রথম প্রথম কেউই এগিয়ে আসছিল না। তারপর কাজ পেলেন লাইব্রেরি ও বুক পাবলিশিং হাউজে। কঠোর পরিশ্রম করতে শুরু করলেন। অসহায়ত্ব থেকে সিদ্ধান্ত নিলেন বিয়ে করবেন।’
১৯৭৪ সালেই পারিবারিকভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ রেহানাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালে শিক্ষক অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিকীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক করেন। এ বিয়ের প্রস্তাবক ছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান। ১৯৭৭ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে শেখ রেহানার সাথে ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিকীর বিয়ে সম্পন্ন হয়। স্থান ছিল লন্ডনের কিলবার্নে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সুখ দুঃখের সাথী, বঙ্গবন্ধুর ফুফাতো ভাই মোমিনুল হক খোকার বাড়ি। ভারতে অবস্থানরত শেখ রেহানার বিয়েতে শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও টাকার অভাবে বিমানের টিকিট কাটতে পারেননি । এ প্রসঙ্গে শফিক সিদ্দিক লিখেছেন, “৮৩ সালে তখন হাসিনা আপা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে ঢাকায় অবস্থান করছেন। ঐ সময়ে আমি আমার পিএইচডি থিসিসের কাজে ঢাকা গিয়েছিলাম। একদিন হাসিনা আপার বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলাম, উনি হাশেম ভুইয়াঁ নামের একজন কর্মীর অসুস্থ মেয়েকে লন্ডন পাঠাবার ব্যবস্থা করছেন। তখন হাসিনা আপা বেশ দুঃখ করে আমাকে বললেন, ‘শফিক দেখ, আজকে আল্লাহ্র ইচ্ছায় আমি আমার একজন কর্মীর অসুস্থ মেয়েকে বিদেশ পাঠাতে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু সেদিন আমার একমাত্র বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দিল্লী থেকে লন্ডন যেতে পারিনি, কেবল টিকেটের টাকার অভাবে।’’ এর চেয়ে বড় কষ্ট ও দুঃখের ঘটনা বাংলাদেশের জাতির পিতার জ্যেষ্ঠ কন্যার জীবনে আর কী হতে পারে?
শেখ রেহানার ভাগ্য এতটাই খারাপ ছিল তাঁর বিয়েতে আপন ভাইবোন বাবা মা কেউ উপস্থিত ছিল না। বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ তনায় জননেত্রী শেখ হাসিনার বিয়েতে পিতা উপস্থিত না থাকতে পারলেও অন্তত পরিবারে মা ভাই বোনেরা উপস্থিত ছিলেন। ভাইদের বিয়েতে পিতা মুজিব উপস্থিত থেকে আশীর্বাদ করেছেন। শেখ রেহানার বেলায় একমাত্র জীবিত বোনও উপস্থিত থাকতে পারেননি। বোধ করি নিষ্ঠুর ভাগ্যের নির্মমতা যেন আরো বেড়ে যায়, যখন শেখ রেহানার মনে হয়, দুলাভাই পরমাণু বিজ্ঞানী ওয়াজেদ মিয়াকে অন্তঃত শেখ মুজিবুর রহমান দেখে যেতে পেরেছেন। বঙ্গবন্ধু তার দৌহিত্র জয় ও পুতুলকে আদর করতে পেরেছেন। শেখ রেহানার সন্তানেরা তাও পারেনি। দুঃখই যেন শেখ রেহানার জীবন গাথা । বঙ্গবন্ধু পরিবারের সবচেয়ে দুঃখী সন্তানের নাম হলো ‘রেহানা’।
স্বজনহারা ২০ বছরের কিশোরী শেখ রেহানার পাশে এসে পরম বন্ধুর মত দাঁড়ালেন স্বামী অধ্যাপক ড. শফিক আহমেদ সিদ্দিকী। নিত্য অভাবের সংসার চলে একটি সাবলেটের রুমে। দুঃখ যন্ত্রণা নিয়ে একদিকে লন্ডনে টিকে থাকার লড়াই করছেন অন্যদিকে বোন শেখ হাসিনার সাথে স্বজন হারা ব্যথা নিয়ে দেশে ফিরার জন্য আত্ম সংগ্রাম করছেন।
শেখ রেহানার লন্ডনের জীবন সুখের ছিল না। ছিল প্রতিনিয়ত বেঁচে থাকার নিরন্ত্রর কঠিন সংগ্রাম। মনের সাথে যুদ্ধ। শেখ রেহানা মনে পিতা মাতা হারানোর যন্ত্রণা।বিয়ের পর শফিক সিদ্দিক ও শেখ রেহানাকে নানামুখি সংকট মোকাবেলা করে অগ্রসর হতে হয়েছ। সে সময় আর্থিক কষ্টটাই ছিল প্রবল। বিয়ের পরপরই স্বামীর সাথে চলে আসেন সাউদাম্পটন ইউনিভার্সিটিতে। মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন আরেক বাঙালি পরিবারের সাথে রুম ভাগাভাগি করে। আর্থিক অনটনের কারণে চাইলেই একক বাড়ি ভাড়া করে থাকার সামর্থ্য তাঁদের ছিল না। তাই শেখ রেহানাও বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করছিলেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনেও কর্মখালি দেখে চেষ্টা করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত হয়নি। নববিবাহিতা স্ত্রীর চাকরি করার বিষয়টি মন থেকে না চাইলেও শফিক সিদ্দিক রাজী হয়েছিলেন দুটি কারণে। (এক) শেখ রেহানা প্রায়ই একা বাসায় থাকতেন এবং সার্বক্ষণিক মা, বাবা, ভাইদের ছবি সামনে নিয়ে কান্নাকাটি করতেন। ফলে শফিক সিদ্দিকের সন্দেহ জেগেছিল, এভাবে একা থাকতে থাকতে শেখ রেহানার মানসিক সমস্যা যদি দেখা দেয়। সুতরাং কাজে থাকলে মানুষের সান্নিধ্যে ও ব্যস্ত থাকার কারণে পনেরোই আগস্টের ভয়াবহ স্মৃতি কিছুটা হলেও ভুলে থাকতে পারবেন। (দ্বিতীয়ত) কিছুটা হলেও আর্থিক সমস্যার সমাধান হবে, এই বিবেচনায় তিনি স্ত্রীর চাকরির ব্যাপারে সম্মত হন। কিন্তু তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনের কাজের ধরণ ব্যাখ্যা করে স্ত্রীর অভিব্যক্তি জানতে চেয়েছিলেন এভাবে, ‘‘তুমি কি জান চাকরিটাতে তোমাকে ছাত্রদের খাবার পরিবেশন করতে হবে এবং সাথে ধোয়া-মোছার কাজও করতে হবে? এই চাকরি কি তুমি করবে?”
উত্তরে শেখ রেহানা বলেছিলেন, “কেন করব না? এরকম কাজতো এদেশে সবাই করে।” একজন রাষ্ট্রপতির মেয়ে হয়েও কাজটি করতে কুন্ঠাবোধ না করায় শফিক সিদ্দিক অত্যন্ত অবাক ও খুশি হয়েছিলেন।
যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়ার মানসিকতা তাও পারিবারিক ঐতিহ্যগত শিক্ষা, যা মা ও বাবার নিকট থেকে পেয়েছেন শেখ রেহানা। শেখ রেহানার জীবন আলেখ্য যেন তার মা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার ছায়াপাত। এরপরের জীবন সাউদাম্পটন থেকে লন্ডনে প্রত্যাবর্তন।
লন্ডনে এসে স্বামীসহ শেখ রেহানা আবারও উঠেন মোমিনুল হক খোকার বাড়িতে। ইতোমধ্যে তিনি ও শফিক সিদ্দিক অনেক চেষ্টা তদবির করে চাকরি জোটাতে সক্ষম হন। খুঁজে নেন ভাড়ায় হলেও একটি ছোট্ট বাসা। কেননা বেঁচে থাকা ও জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যেতে হলে প্রথমেই যে দুটি জিনিসের প্রয়োজন তাহলো বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহের জন্য অর্থের জোগান। শুরু হয় ঘুরে দাঁড়ানোর পালা, ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও রাজনৈতিক পরিসরে। ভাড়া বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে উঠে আসেন তাঁরা। শফিক সিদ্দিক চাকরি করার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষার কাজটিও চালিয়ে যেতে থাকেন। শেখ রেহানা চাকরি নেন একটি লাইব্রেরীতে। এখনও চাকরি করেন। লন্ডনেই জন্ম হয় ছেলে রেজোয়ান মুজিব সিদ্দিক ও বড়মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের। ছোট মেয়ের রূপন্তীর জন্ম ব্রুনাইতে। উল্লেখ্য, ব্রুনাইতে কমর্রত অবস্থায়ই ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে শফিক সিদ্দিক পঙ্গুত্ববরণ করে দীর্ঘ কয়েক বছর কর্মজীবন থেকে দূরে ছিলেন।
জীবনযুদ্ধে কিছুটা স্থিত হয়েই শেখ রেহানা শুরু করেন রাজনৈতিক যুদ্ধের প্রস্তুতি। বড় বোন শেখ হাসিনার প্রতিনিধি হয়ে যোগদান করেন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অনুষ্ঠিত সর্ব ইউরোপীয় বাকশালের সম্মেলনে ১৯৭৯ সালের ১০ই মে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে শেখ হাসিনার নামে ব্যানার টাঙিয়ে উত্থাপন করেন পনেরোই আগস্ট নারকীয় হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি। এটি ছিল আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি।যা উপস্থিত সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। স্টকহোম থেকে ফিরে স্বামী শফিক সিদ্দিককে সাথে নিয়ে গড়ে তোলেন সর্ব ইউরোপীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন এবং ১৭ মে ৬ বছর নির্বাসন শেষে শেখ রেহানা দেশে ফিরেন। শুরু হয় দুবোনের সংগ্রামের জীবন। প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের হত্যার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তবুও পরম ঈশ্বর এসে তাদের বাংলার মানুষের সেবা করার জন্য বাঁচিয়ে রেখেছেন। ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করেন। নির্মোহী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার মতই শেখ রেহানা ক্ষমতার পোষাক কখনো গায়ে জড়ান নি। বোন প্রধানমন্ত্রী হাবারও রাজনীতি থেকে দুরে থেকে মানুষের কল্যাণের জন্য দুর থেকে বোনকে সহযোগীতা করেছেন। তিনি চাইলেই রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণে পদে আসীন হতে পারতেন। অথচ ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশে জিয়া পরিবারের প্রতিটি সদস্য দেশের সম্পদ লুটপাট করেছে। তাদের হাতে বাদ যায় এতিমদের সম্পদও। এদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা রাষ্ট্রের মানুষের মঙ্গলের জন্য নিজ নামের সম্পদ দান করেছেন।
শেখ রেহানা জীবনের একটি দীর্ঘ সময় সংগ্রাম ও কষ্ট করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তবুও কখনও সততাকে বিসর্জন দেননি, নীতির প্রশ্নে আপস করেননি তিনি। নিজের একমাত্র বড় বোন দেশের প্রধানমন্ত্রী অথচ শেখ রেহানা লন্ডনে অন্যের অফিসে কাজ করেছেন। গণপরিবহনে যাতায়াত করতেন। অথচ তিনি চাইলেই অনেক বিত্ত বৈভবের মালিক হতে পারতেন, সেটা তিনি কখনও হতে চান নি। সততার এমন মহৎ দৃষ্টান্ত শুধু বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের পক্ষেই সম্ভব। শেখ রেহানা একজন প্রচার বিমুখ, নির্মোহ চরিত্রের মানুষে। বাইরে থেকে তাঁর সম্পর্কে সাধারণ মানুষ কিছুই জানতে পারে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার কথা থেকেই মাঝে মাঝে মানুষ তার সম্পর্কে জানতে পারেন। শেখ রেহানাও হৃদয় মানবতায় পূর্ণ। শেখ হাসিনার পাশে বসেই তিনি নিয়মিত পত্রপত্রিকা পড়ে দেশের মানবিক সংবাদগুলো প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনেন। রোহিঙ্গারা স্রোতের মত বাংলাদেশে আসতে লাগলো তখন তিনি বলেছিলেন তাঁর বড় আপাকে, যদি ১৮ কোটি জনগণকে তুমি খাওয়াতে পার তাহলে ১১ লক্ষ লোককেও খাওয়াতে পারবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি বক্তব্যে বলেছিলেন, রেহানা আমাকে একথা বলার পর আমার সিন্ধান্ত নিতে একটুও দেরি হয়নি। আমি সঙ্গে সঙ্গে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করি। তিনিই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রধান পরামর্শদাতা। সকল দুর্যোগ দুঃসময়ে ছায়ার মত তিনি তাঁর বড় আপার পাশে আকঁড়ে থাকেন।
করোনাকালে যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অসহায় অস্বচ্ছল মানুষদেরকে সাহায্য সহযোগিতা করছেন তখন ছোট বোন শেখ রেহানা সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার রামপাশা ইউনিয়নের আমতৈল গ্রামের ৪৬১ জন প্রতিবন্ধীর থাকা ও তাদের সাহায্যের প্রয়োজনীয়তার কথা বড় বোনের দৃষ্টিগোচর করেন। তখনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আর্থিক অনুদানসহ তাদের জীবনযাত্রা উন্নয়নে যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী আরেকটি বক্তব্যে বলেছেন যে, রেহানা তাঁকে স্মরণ করে দিয়েছে যারা রিক্সায় ডিজাইন করে সেসব লোকদের কেও যেন সাহায্যের আওতায় আনা হয়। একজন ব্যক্তির কতটা দেশপ্রেম, দেশের জনগণের প্রতি ভালবাসা থাকলে এতদূর পর্যন্ত চিন্তা করতে পারে।
বঙ্গবন্ধুর কন্যা হয়েও তিনি কখনও সক্রিয় রাজনীতিতে আসেননি। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে নেপথ্যে থেকে সবসময়ই কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি আওয়ামী লীগের কোন নেতা নন, নেই কোন রাষ্ট্রীয় পদে। তবে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে, ক্রান্তিকালে আশা ভরসার স্থল হয়ে উঠেন। প্রতিটি কাউন্সিলের আগে একটি কথা আসে শেখ রেহানা এবার গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন। কিন্তু প্রতিবারই নেতাকর্মীদের আশা ভঙ্গ হয়। বরাবরই তিনি সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখান না। অন্তরালেই থেকে যান।
১৯৬৯ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সময় বঙ্গমাতার ভূমিকায় গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধুর নিঃশর্ত মুক্তি বাংলার ইতিহাসকে পরিবর্তন করেছিল ঠিক তেমনি ১/১১ সরকারের সময় বড় বোন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে মুক্ত ও দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শেখ রেহানা বলেছিলেন,‘এই দিনে আমরা সকলে মিলে অঙ্গীকার করি- আমাদের যা কিছু আছে,তাই দিয়ে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাব। সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও নিরক্ষরতামুক্ত দেশ গড়ব। সোনার বাংলাকে ভালবাসব। পরশ্রীকাতরতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখব।’
শেখ রেহানা বাঙালি নারীদের আদর্শ। কিভাবে জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়া যায়, ক্ষমতার লোভ থেকে নিজেকে দূরে রাখা যায়, কোন পদে না থেকেও দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করা যায়, সেট তার মায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন । বর্তমানে তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তাঁর এই নির্মোহ চরিত্রই বাংলাদেশের ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে। সেই,প্রচারবিমুখ মহীয়সী নারীর শুভ জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক পরিচিতি: সাবেক সভাপতি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।