নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৩৫ পিএম, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
নোটিফিকেশনটা পেয়েই চমকে গেলাম! আমাকে ফেইসবুক মেসেঞ্জারেও ব্যান করা হয়েছে। তিনদিনের এ নিষেধাজ্ঞার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে- আমি অনেক মেসেজ চালাচালি করি এবং আমার মেসেজ ফেইসবুকের সামাজিক বিধিমালা লঙ্ঘন করেছে।
এটা একটা চমকানোর মতো খবর এবং আতঙ্কিত হওয়ার মতোও। ইনবক্সে অনেক ধরনের মেসেজ চালাচালি হয়। দেশ থেকে বই আনাবো, আমি কোথায় থাকি সে বাসার ঠিকানা ইনবক্সে দিই। আমার টাকা দরকার, ল্যাপটপ দরকার, আমি আমার ব্যাংকের ইনফরমেশন দিই। এক অসুস্থ বন্ধুর চিকিৎসার জন্য সরকারি অনুদান পেতে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করি। কোথাও বেড়াতে যাবো, সেটার পুরো আইটেনারি বা সফরসূচি লিখে দিই। এ তথ্যগুলা স্পর্শকাতর, গোপনীয়। আর তা যদি ভুল মানুষের হাতে চলে যায় আমি নানাভাবে বিপদগ্রস্ত হতে পারি। আমার জীবন নিয়ে সংশয়ও হতে পারে। আমার যাবতীয় গোপন তথ্য, নথিপত্র ক্লোন হতে পারে এবং এ সংশয় নেহাতই অমূলক না। কেনো সেটা বুঝতে পেছনের কিছু ঘটনা জানানো আবশ্যক।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এবং স্বাধীনতাপক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচিত অ্যাকটিভিস্টরা ফেইসবুকে অনেকদিন ধরেই বিপন্ন। ব্যাপারটা এমন পর্যায়ে গেছে যে মনে হতে পারে এদের তালিকা করে চিহ্নিত করা হয়েছে তারপর তাদেরকে হেনস্তা করা হচ্ছে। এই হেনস্তার ধরনটা কী? ফেইসবুকে নিষিদ্ধ করা। আপনি সাম্প্রদায়িক শক্তি কিংবা জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লেখেন, আপনার পোস্ট ডিলেট করে আপনাকে ব্যান করা হবে। আপনি বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ছবি দেন, সে ছবি মুছে দেওয়া হবে। আপনি সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি দেন, সেটা ভায়োলেন্স হিসেবে চিহ্নিত করে মুছে দেওয়া হবে।
প্রবাসী শিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম গল্প বুড়োর আসর নামে একটা অ্যানিমেশন সিরিজ শুরু করেছিলেন। ছবি একে বাচ্চাদের মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলতেন। সেই সিরিজের জন্য ফেইসবুকে তাকে ব্যান করা হয়েছিল। পোস্টগুলা মুছে দেয়া হয়েছিল। কবি আখতারুজ্জামান আজাদ ব্যান হয়েছেন মৌলবাদের বিরুদ্ধে লেখার কারণে! তারপর রয়েছে পোস্টের ‘রিচ’ কমিয়ে দেওয়া। ধরুন আমার ফলোয়ার প্রায় ৯০ হাজার। পাশাপাশি ৪ হাজারের বেশি বন্ধু। আমার যে কোনো পোস্ট এই ৯৩ হাজারের নিউজফিডে যাওয়ার কথা। কিন্তু যাবে না। খুব বেশি হলে ৫০০ মানুষ একেকটা পোস্ট পড়তে পারবেন। বাকিরা ইনবক্সে প্রশ্ন করবেন ভাই আপনার পোস্ট পাচ্ছি না। গড়ে দেড় হাজার লাইকের পোস্ট আপনি ৫০ কিংবা ১০০ লাইক পাবেন। এই হেনস্তার মূল অস্ত্র ফেইসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইন কিংবা সামাজিক নীতিমালা।
কমিউনিটি গাইডলাইন ভালো জিনিস। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় জিনিস। এই নীতিমালার অধীনে আপনি ফেইসবুকে ঘৃণা ছড়াতে পারবেন না, কাউকে হেনস্তার করতে পারবেন না, বাকস্বাধীনতার দোহাই দিয়ে যা খুশি লিখতে পারবেন না… ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু আদৌ কি সেগুলা মানা হচ্ছে? যখনই এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ফেইসবুক রিভিউ করার সুযোগ দেয়। তখন আবার বলে দেওয়া হয় বিভিন্ন দেশের জন্য সে দেশের ভাষাভাষী লোকজনকে ফেইসবুক দায়িত্ব দিয়েছে ফেইসবুকের নীতিমালা অক্ষুণ্ণ রাখতে। সেটা বাংলাদেশেও। এই লোকজন কিংবা মডারেটররা আদৌ কি তাদের দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করছেন?
হাজার হাজার উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যাবে যে সেটা তারা করছেন না। যে কোনো নিউজ চ্যানেলের কমেন্ট সেকশনে যান। সাম্প্রদায়িক শক্তির উগ্রতা টের পাবেন। সাম্প্রতিক উদাহরণ। একজন কমেন্টদাতা এটিএন নিউজের প্রেজেন্টারকে ‘জবাই’ করার হুমকি দিয়ে কমেন্ট করেছেন। তার বিরুদ্ধে ফেইসবুকে রিপোর্ট করা হলো। ফেইসবুক বললো- এখানে নীতিমালা ভাঙা হয়নি। কে দিচ্ছেন এই সিদ্ধান্ত? ফেইসবুকের বাংলাদেশের মডারেটররা। এই তো কিছুদিন আগে আমার এক চিকিৎসক বন্ধুর ফেইসবুক আইডি ‘ক্লোন’ করা হলো। তার প্রোফাইলের সব ছবি হুবহু আপলোড করে তার বন্ধু তালিকায় নতুন করে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হলো। তারপর তাদের কাছে বিপদের কথা বলে টাকা চাওয়া হলো। অনেকে দিলেন। বন্ধু সবাইকে সতর্ক করলেন। পাশাপাশি ফেইসবুকে অভিযোগ করলেন- নিদান পেতে। ফেইসবুকে জানালো এখানে কোনো নীতিমালা ভাঙা হয়নি! তাহলে কাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন আপনারা?
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা বলি। ফেইসবুকে ১৫ বছর চলছে আমার। গত ৭ বছর ধরে চেষ্টা চালিয়েও ব্লু ভেরিফিকেশন ব্যাজ পাওয়া হয়নি আমার, যেটা রাম-শাম-যদু-মধু যে কেউই সহজে পেয়ে যায়। আমার মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর অ্যালবাম ফেইসবুক ডিলেট করে দিয়েছে। ছবির উপর সেনসিটিভ কনটেন্টের পর্দা বসিয়েছে। এ বছর শুরু থেকেই আমাকে ব্যান করার খেলা চলছিল। পরপর চারবার আমাকে নানা অজুহাতে ব্যান করা হয়েছে। প্রতিবার আমি রিভিউ নিয়েছি। এরপর ফেইসবুক ভুল স্বীকার করে আমার ব্যান প্রত্যাহার করে পোস্ট ফেরত দিয়েছে। এরপর আমাকে যে পোস্টের জন্য ব্যান করা হলো তা হলো একটা পেইজের পোস্ট শেয়ার। এক সাম্প্রদায়িক জঙ্গির তথ্যপ্রমাণ দিয়েছিল একটা ফেইসবুকের একটি পেইজ। পোস্টটা আমি শেয়ার করেছিলাম। সেজন্য আমাকে ৩০ দিনের জন্য ব্যান করলো ফেইসবুক। অথচ পেইজের সেই পোস্ট বহাল তবিয়তে আছে। সেটার বিরুদ্ধে কোনো অ্যাকশন নেওয়া হয়নি। দোষ আমার- আমি পোস্ট শেয়ার করেছি। রিভিউ নেওয়ার পর বলা হলো- আমাদের বাংলাদেশি মডারেটররা নিশ্চিত করেছেন ‘আমিই অপরাধী’। তাই শাস্তি বহাল। সেই একমাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ করার কয়দিনের মাথায় আমি আবারও ৩০ দিনের ব্যান। যা এখনও চলমান। এবার রিভিউ করার কোনো সুযোগ দেয়া হয়নি। স্রেফ বলা হলো আমি এর আগে কয়েকবার কমিউনিটি গাইডলাইন ভেঙেছি। এটা কেমন বিচার। এ বছর ৫ বার কমিউনিটি গাইডলাইন ভাঙার অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে। তার মধ্যে চারবার ফেসবুক ভুল স্বীকার করে আমার পোস্ট ফেরত দিয়েছে। আর পরের বার অন্যের অপরাধে (!) আমি এক মাসের নিষেধাজ্ঞার শাস্তি মেনে নিয়েছি। তাহলে এটার মানে কি?
তাহলে ফেইসবুকের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারে কারা নিয়োগ পেয়েছেন? কোভিড পরিস্থিতিতে ফেইসবুক অনেক প্রফেশনালকে অব্যহতি দিয়ে ফ্রিল্যান্সার নিয়োগ দিয়েছে। বাংলাদেশে এরা কারা? জামাত-শিবির কিংবা সাম্প্রদায়িক কিংবা জঙ্গিগোষ্ঠীর কেউ ফেইসবুকে অনুপ্রবেশ করেছে কি? তাদের কেউ যদি সুযোগ পায় তাহলে তো বিনেপয়সায় ফেইসবুকে সেবা দিবে। কারণ তার কয়েকগুণ পারিশ্রমিক সে পাবে তার আদি সংগঠন থেকে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, প্রগতিশীল অ্যাকটিভিস্টদের নির্মূল করে সাম্প্রদায়িক শক্তির অধিষ্ঠান এবং পৃষ্ঠপোষকতাই কি তার লক্ষ্য হবে না? এটার ভবিষ্যত ফলাফল কী হবে? সোশাল মিডিয়া বাংলাদেশ চ্যাপ্টার কারা নিয়ন্ত্রণ করবে? কারা আধিপত্য চালাবে? আর এর দায় নেবে কে?
মাননীয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর সঙ্গে গত কয়েকমাসে কয়েকবার জুম মিটিংয়ে বসেছি আমরা বিপন্ন অ্যাকটিভিস্টরা। উনি আমাদের সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ফেইসবুকের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সঙ্গে কথা বলবেন বলেছেন। এরপর তার পোস্ট দেখলাম কিছুই করার নাই টাইপের আত্মসমর্পনমূলক! উনি বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্তের সঙ্গে কথা বলেছেন। উনি ইমপ্রেসড- সে হাওরের মেয়ে, বাংলাদেশকে ভালোবাসে। কিন্তু ফেইসবুকের কমিউনিটি গাইডলাইনের কাছে সে অসহায়। তাই তিনিও অসহায়।
আমি অভিযোগ করছি না বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ‘কমপ্রোমাইজড’। তিনি টাকার বিনিময়ে কিংবা প্রভাবিত হয়ে কিংবা তার নিজের, পরিবারের, বন্ধুদের, ঘনিষ্ঠদের ব্যক্তিগত এজেন্ডা বাস্তবায়নে এসব করছেন। কিন্তু যা ঘটছে তার দায় কি তিনি কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডের দোহাই দিয়ে পার পেতে পারেন। বাংলাদেশের মডারেটররা যেভাবে নিজের খেয়ালখুশিমতো যাকে খুশি ব্যান করে দিচ্ছেন, পোস্টের রিচ কমিয়ে দিচ্ছেন, প্রগতিশীল অ্যাকটিভিজমের গলা টিপে ধরছেন, অন্যদিক সাম্প্রদায়িকতাকে প্রমোট করছেন, তাদের সুরক্ষা দিচ্ছেন। এর দায় কার? এদের অ্যাকটিভিটি লগবুক চেক করলেই তো বোঝা যাবে এরা কী করছেন। কীরকম ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন। এই দায় কি নেবেন বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের দায়িত্বশীল পদাধিকারী?
ফিরে আসি মূল প্রশ্নে। এতোদিন ফেইসবুকে লেখালেখির কারণে আমাকে হেনস্তা করেছেন। কমিউনিটি গাইডলাইনকে হাইকোর্ট হিসেবে দেখিয়েছেন। কিন্তু আমার ইনবক্সও এখন দেখি আপনাদের থেকে নিরাপদ না। মেসেঞ্জারে কমিউনিটি গাইডলাইন ভাঙা হচ্ছে এমন অভিযোগ করে আমাকে সেখানেও নিষিদ্ধ করছেন। তারমানে আপনাদের নিয়োগপ্রাপ্ত মডারেটরদের কাছে আমার গোপন তথ্যের অ্যাকসেস আছে। আমি কিভাবে নিশ্চিত হবো এইসব তথ্য আমার শত্রুদের কাছে প্রকাশ হবে না? কিভাবে জানবো ফেইসবুক অ্যাকাউন্টের পর আমার জীবনও বিপন্ন নয়? আমাকে কি ইউরোপিয়ান আদালতে আইনের আশ্রয় নিতে হবে সুরক্ষার জন্য? আপনাদের ক্রিমিনাল অ্যাকটিভিটি এবং হেনস্তার জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইনের সাহায্য নিতে হবে? মাননীয় মন্ত্রী আপনার সুপারিশ কী? বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের প্রতিনিধিই বা কী উপদেশ দেবেন?
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০
সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের
সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী
বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি
মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের
২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল
জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর
সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন
সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন
করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন
জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা
এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম
বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের
জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা
জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের
মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন।
কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু
জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির
অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের
অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে
জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার
লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের
ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।
২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে
গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।
কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে
স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের
রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা
সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায়
না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ
করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি
বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো
পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির
এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।
প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ
তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত
করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে
কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো
জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক
মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ
জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর
এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’
হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা
ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয়
এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে
বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য
করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা
চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের
কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ
একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো,
মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি
ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা
নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া
হচ্ছে।
সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন।
যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন
পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন
মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে
এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি
করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত
করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ
হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ
হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ
মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ,
যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত
হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী
এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট
গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে
যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে
বিনির্মিত হবে।
কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।
১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার। জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?
দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।