ইনসাইড থট

বাংলাদেশের সমকালীন জীবনে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০৪ এএম, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১


Thumbnail

১. ভূমিকা
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এখন শুধু একটি নাম নয়- তিনি একটি মহীরুহ প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছেন। নিজের একটি পরিচয় অতিক্রম করছেন অন্য পরিচয় দ্বারা। শুরুতে তিনি রাজনীতিবিদ থেকে রাষ্ট্রনায়ক পরিচয়ে পরিচিত হলেও এখন তিনি লেখক, সাহিত্যিক, ইতিহাসবিদ, ভ্রমণবিশারদ, দিনপঞ্জিলিপিকার, সমাজসংস্কারক এবং শিক্ষাবিদ। তিনি চিরসংগ্রামী, চিরবিপ্লবী। তিনি রাজনীতির কবি। তাঁর রাজাসন পাতা বাঙালি জাতির হৃদয়মূলে। তাঁর সম্মোহনী নেতৃত্ব, দুঃখী মানুষের কষ্ট বোঝার মত মমতামাখানো মন, বাঙালির অধিকার আদায়ে ক্লান্তিহীন কঠোর কন্ঠস্বর- বাংলা ও বাঙালির পরম পাথেয়। ‘বঙ্গবন্ধু’ এই অপরূপ অভিধায় তাঁেকে আর আটকে রাখা সম্ভব নয়-তিনি ‘বিশ্ববন্ধু’ উপাধীতে উন্নীত হয়েছেন। রাজনীতিবিদ হিসেবে তার প্রধান পরিচয় হলেও সময়ের পরিক্রমায় ‘শিক্ষাবিদ’ হিসেব তিনি একটি নতুন পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মাগ্র ৫৫ বছর আয়ুস্কালের একজন মানুষ তাঁর এক চতুর্থাংশ সময় কাটিয়েছেন জেলখানার অন্ধকার প্রকোষ্ঠে। তবে জেলখানায় তিনি অলস সময় কাটাননি। তিনি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুর ইসলাম, প্রকৃতির কবি জীবনানন্দ দাস ও বিশ্ব সাহিত্যও শ্রেষ্ঠ বই পাঠ করতেন। তিনি ডায়েরীতে জীবন কথা লিখেছেন, রোজনামচা লিখেছেন,আকাশের দিকে তাকিয়ে দেশ-মাটি-মানুষ নিয়ে ভেবেছেন। তার এসব ভাবনাগুলোই তার শিক্ষাদর্শন নামে খ্যাত। একজন এমন একজন নেতার একটি বিশেষ দর্শন অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাদর্শন নিয়ে আলোচনা করতে পারা অত্যন্ত সম্মানের বিষয়।

২. শিক্ষা ও শিক্ষাদর্শন
শিক্ষা প্রত্যয়টিকে বহুভাবে ব্যাখ্যা করা য দেশ-সমাজ-সময় ভেদে শিক্ষার কনসেপ্ট পরিবর্তিত হয়। শিক্ষা হচ্ছে প্রাষীরূপে জন্মনেয়া মানুষকে যৌক্তিক ও মানবিক মানুষ বানানো। যেকোন প্রাণী জীনের মাধ্যমে জন্মগতভাবে প্রাপ্ত বৈশিষ্টাবলি সারাজীবন বহন করে, এজন্য তার কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা লাগে না। কিন্তু মানুষ তা নয়। পরিবর্তিত রাজনীতি, অর্থনীতি, ধর্ম, সমাজ, দেশ, সংস্কৃতি ও প্রযুক্তি তার উপর নিত্য প্রভাব ফেলে। মানব সমাজে সর্বদা চলে লোভ-লাভ-ক্ষমতার লড়াই। এজন্য তাদেরকে শিখতে হয়, নিতে হয় প্রশিক্ষণ।

একাডেমিকভাবে, শিক্ষা হচ্ছে মানুষের শৈশবকাল থেকে পূর্ণবয়স্ক স্তর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন একটি প্রক্রিয়া। শিক্ষা বলতে কোনো নতুন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা অর্জন করা বুঝায়। রেমন্ট (Raymont) তাঁর Principles of Education গ্রন্থে বলেছেন, “শিক্ষা হচ্ছে মানুষের শৈশবকাল থেকে পূর্ণবয়স্ক স্তর পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন বিকাশের একটি প্রক্রিয়া।” এ প্রক্রিয়ায় মানুষ তার সর্বাঙ্গীণ বিকাশের সাথে সাথে প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেয়। শিক্ষাবিদ ম্যাকেঞ্জি (Mackenzie) শিক্ষার ব্যাপক অর্থে বলেছেন,‘শিক্ষা হচ্ছে একটি জীবনব্যাপী প্রক্রিয়া, জীবনের সব রকম অভিজ্ঞতাই এই শিক্ষাদানের ব্যাপারে সহায়তা করে।’ আবার শিক্ষাবিদ হোয়াইটহেডের (Whitehead) মতে, ‘শিক্ষার একটি মাত্র বিষয় আছে এবং সেটি হলো সর্বতোভাবে বিকশিত জীবন।’ দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা, খেলাধুলা, ভাব বিনিময়, আদানপ্রদান, সাফল্য, ব্যর্থতা, হতাশা প্রভৃতির মাধ্যমে মানুষ সততই শিক্ষা লাভ করছে।

আবার উইকিপিডিয়ার মতে- Education is the process of facilitating learning, or the acquisition of knowledge, skills, values, morals, beliefs, and habits. 
শিক্ষা হচ্ছে ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক, নৈতিক, সামাজিক আধ্যাত্মিক অর্থাৎ সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধনের নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। 
শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুণাবলীর পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠালাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়। সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। ব্যাপক অর্থে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানলাভের প্রক্রিয়াকেই শিক্ষা বলে।

অন্যদিকে, মূলদর্শনের একটি শাখা শিক্ষাদর্শন। অর্থাৎ দর্শন হতেই শিক্ষা দর্শনের সৃষ্টি। দর্শনের কাজ প্রধানত বিজ্ঞানভিত্তিক। আর শিক্ষাদর্শন এমন একটি বিষয় যা জ্ঞানের বিভিন্ন দিক, বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা, যা শিক্ষার সাথে জড়িত তা নিয়ে আলোচনা করে। এ ক্ষেত্রে আধুনিক বাস্তববাদী ও প্রয়োগবাদী দার্শনিক জন ডিউই বলেন, ``A philosophy of education is based upon a philosophy of experience.` অর্থাৎ শিক্ষা দর্শনের ভিত্তি হচ্ছে অভিজ্ঞতার দর্শন। শিক্ষার স্বরূপ, জ্ঞানগত বিষয় হিসেবে শিক্ষার প্রকৃতি নির্ধারণ, শিক্ষার লক্ষ নির্ধারণ এবং শিক্ষার সমস্যাসমূহ নিরসনের যৌক্তিক কাঠামো সংক্রান্ত বিদ্যাই শিক্ষাদর্শন। এ ক্ষেত্রে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, ‘শ্রেষ্ঠ শিক্ষা হলো তাই যা আমাদের কেবল তথ্য পরিবেশনই করে না, বরং বিশ্বসত্তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের জীবনকে গড়ে তোলে’।

শিক্ষাদর্শন একটি সামগ্রিক দর্শন যা শিক্ষাকে সুশৃঙ্খল ও সুস্থির অভিমুখী করে তোলে। বাংলাদেশে প্রচলিত প্রধান শিক্ষাদর্শন হলো- ভাববাদ বা আদর্শবাদ (Idealism), বাস্তববাদ (Realism), প্রয়োগবাদ (Pragmatism), প্রকৃতিবাদ (Naturalism)। শিক্ষা ও শিক্ষাদর্শন নিয়ে উল্লিখিত একাডেমিক বিশ্লেষণ বিবেচনায় নিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর শিক্ষাদর্শনের আলোচনা করা হলো।

৩. বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের ভিত্তি
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রকৃত জাতীয়তাবাদী নেতা যিনি এদেশের জলবায়ু, প্রকৃতি, মাটি-মানুষ, ভাষা-পোশাক, খাদ্য ইত্যকার সবকিছু মনে-প্রাণে গ্রহণ করেছিলেন। আর তাঁর ভিতরে এর বীজ বুনেছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও তাঁর শিক্ষকগণ। বঙ্গবন্ধুর জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী শিক্ষকগণ হলেন- মো. সাখাওয়াত উল্লাহ, কাজী আব্দুল হামিদ, রসরঞ্জন, মনোরঞ্জন বাবু, ড. ইৎরাত হোসেন জুবেরী, প্রফেসর সাইদুর রহমান, প্রফেসর নারায়ণ বাবু, প্রফেসর তাহির জামিল, প্রফেসর নাজির আহমেদ প্রমূখজন।

অন্যদিকে তাঁর রাজনৈতিক শিক্ষক বা গুরু ছিলেন পিতা শেখ লুৎফর রহমান, যার একটি মূল্যবান বাক্য- Sincerity of purpose and honesty of purpose’ তিনি আজীবন মনে রেখেছেন। এছাড়া তাঁর স্ত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শের-এ-বাংলা একে ফজলুল হক, মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া প্রমূখজন তাঁর রাজনৈতিক মানস গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তাছাড়াও বিভিন্ন লেখকদের লেখাও বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে। তিনি সে সময়ের বিশ্বসাহিত্যের অনেক বই নিয়মিত পাঠ করতেন বিধায় দৃঢ়ভাবে বলতে পারেন-‘আমি দক্ষিণপন্থীও নই, বামপন্থীও নই। আমি দেশবাসীর স্বার্থের পক্ষে।’ অর্থাৎ মানুষের স্বার্থই তাঁর শিক্ষাদর্শনের মূল কথা।

৪. বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের মূলসূও ও সমকালীনতা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের মূল কথা হলো মানব কল্যাণ। এজন্য তিনি মানুষের মধ্যে সহনশীলতা, মানবিকতা, সত্যবাদিতা, সৌজন্যতা, আত্নসচেতনতা ও আত্নমূল্যায়ন, মহানুভবতা, শ্রদ্ধাবোধ,অন্যদের অবদানের স্বীকৃতি, পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা এবং পরিবেশ সচেতনতা ইত্যাদি গুণাবলী থাকা প্রয়োজন বলে মনে করতেন।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে-বঙ্গবন্ধু কী দার্শনিক বা শিক্ষাদার্শনিক? মনীষী সক্রেটিস বলেছেন-‘যারা সত্য দর্শনে আগ্রহী তারাই দার্শনিক।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সারা জীবনই সত্যানুসন্ধানী ছিলেন। মিথ্যাকে জীবনে তিনি কখনও প্রশ্রয় দেননি। কোন সিদ্ধান্ত ভূল হলে অকপটে স্বীকার করেছেন। দেশ-জাতি-মানুষ নিয়ে স্বপ্ন বুনেছেন। তাদের একক ভূখন্ড, পরিচয়, ভবিষৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছেন, এ বিচারে তিনি কী দার্শনিক নন? দার্শনিকরা তত্ত্ব প্রদান করেন, আর তিনি শুধু তত্ত্ব দিয়েই ক্ষান্ত হননি, সেগুলোর বাস্তবায়নও করেছেন।

ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ, তাঁর রচিত ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন’ গ্রন্থের দ্বিতীয় অধ্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের বহুমাত্রিকতা’ শিরোনামে যে বিষয়গুলো চিহিৃত করেছেন তা প্রণিধানযোগ্য। তার নির্নয়করা বিষয়গুলো হলো- পিতা-মাতা ও শিক্ষকদের প্রতি ভালোবাসা; বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন: ভদ্রতা ও সৌজন্য শিক্ষা, মানুষের প্রতি মমতা ও শিক্ষা, শিক্ষা ও আত্নমূল্যায়ন, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন: মানুষের প্রসঙ্গে, শিক্ষার প্রতি বঙ্গবন্ধুর অনুরাগ, পুস্তকের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা, বঙ্গবন্ধু ও পরিবেশ শিক্ষা, মানুষকে মূল্যায়ন, বঙ্গবন্ধুর মহানুভবতা ও রসবোধ, নেতার গুণাবলী: অন্যদের স্বীকৃতি, বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও কাজী নজরুল এবং শিক্ষা ও বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শিতা ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্নজীবনী, কারাগারের রোজনামচা, তাঁর রচিত ৫ টি প্রবন্ধ, বক্তৃতা-বিবৃতি ইত্যাদি থেকে শিক্ষামূলক বাছাই কথা করে সেগুলোর সাথে প্রখ্যাত দার্শনিকদের প্রদত্ত তত্ত্বেও সাথে যাচাই করে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের নির্ভরযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা ও কালোতীর্ণতা প্রমাণ করা হয়েছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষাদর্শনের মূলসূরকে নিম্নরুপভাবে চিহিৃত করা যায়-
ক) মাতৃভাষা ও বাংলাভাষার প্রতি সুদৃঢ় অবস্থান
খ) শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মূল্যায়ন
গ) প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ ও বাধ্যতামূলক করা
ঘ) জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন
ঙ) সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সংযোজন
চ) শিক্ষার গতিধারা নির্ধারণ
ছ) গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতা ও গঠনমূলক শিক্ষার প্রবর্তন
জ) শিক্ষা ও সমাজকে দুর্নীতিমুক্তকরণ
ঝ) মানবিক শিক্ষধারার সূচনা
ঞ) যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষার 
ট) শিক্ষায় বিনিয়োগকে পুঁজি মনে করা
ঠ) শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা
ড) বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করানো
ঢ) অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার ভিত্তি গড়া

ক) মাতৃভাষা ও বাংলাভাষার প্রতি সুদৃঢ় অবস্থান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন খাঁটি বাঙালি, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি যার ছিল অগাধ আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা। এ জন্য তিনি বাংলাভাষা আন্দোলনের জন্য জেল খেটেছেন, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে বাংলা ভাষায় সংসদ বিবরণী প্রকাশ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাঁর জীবনে বাংলা-ইংরেজি মিশিয়ে বক্তৃতা করেননি। জাতিসংঘে বাংলাভাষায় বক্তৃতা করে এরম র্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তাঁর একটি বানি থেকেই এর প্রমাণ মেলে-
‘যে বাংলার মাটিকে আমি এত ভালোবাসি, যে বাংলার মানুষকে আমি এত ভালোবাসি,যত দূরেই যেখানেই আমি থাকি না কেন, একটি মুহূর্তের জন্য তাহাদের কথা আমি ভুলতে পারি না।’
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে তার দেওয়া ভাষনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা ও টান ষ্পস্ট হয়েছে। যেমন-
 ‘একটি জাতিকে পঙ্গু ও পদানত করে রাখার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা তার ভাষা ও সংস্কৃতিকে বিনষ্ট করা।’
 ‘যে কোন জাতি তার মাতৃভাষাকে ভালোবাসে। মাতৃভাষার অপমান কোনো জাতিই কোন কালে সহ্য করে নাই।’
 ‘পাঞ্জাবের লোকেরা পাঞ্জাবি ভাষা বলে, সিন্ধুর লোকেরা সিন্ধি ভাষায় কথা বলে, সীমান্ত প্রদেশের লোকেরা পশতু ভাষায় কথা বলে, বেলুচরা বেলুচি ভাষায় কথা বলে। উর্দু পাকিস্তানের কোন প্রদেশের ভাষা নয়। তবুও যদি পশ্চিম পাকিস্তানের ভায়েরা উর্দু ভাষার জন্য দাবি করে, আমরা আপত্তি করব কেন? যারা উর্দু ভাষা সমর্থন করে তাদের একমাত্র যুক্তি হলো উর্দু ‘ইসলামিক ভাষা’। উর্দু কি করে যে ইসলামিক ভাষা হলো আমরা বুঝতে পারলাম না।’

খ) শিক্ষক ও শিক্ষাবিদদের মূল্যায়ন
তাঁর সময়ে তিনি শিক্ষাবিদদের যথার্থ সম্মান দিয়ে উপযুক্ত পদে পদায়ন করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনে শিক্ষাবিদরা থাকবেন এটা শিক্ষাবিদরা প্রত্যাশা করেন। তিনি এ প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। স্বাধীনতার পরে ক্ষমতায় বসেই ১৯৭২ সালের ১ অক্টোবর প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. এআর মল্লিককে (আজিজুর রহমান মল্লিক) শিক্ষাসচিব হিসেবে নিয়োগ দেন। জনাব এআর মল্লিক ১১ মার্চ ১৯৭৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৩, অধ্যাপক কবীর চৌধুরীকে শিক্ষাসচিব হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তিনি ১৮ জানুয়ারি ১৯৭৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তা ছাড়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বায়ত্বশাসন প্রদান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও ইসলামী ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা তাঁর শিক্ষাদর্শনেরই প্রতিফলন।

এক জনসভায় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু বলেন-, ‘ছেলেদের মানুষ করতে হবে। ফেল করানোতে আপনাদের তেমন বাহাদুরি নাই, পাস করালেই বাহাদুরি আছে।’ এ কথায় শিক্ষকদের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধু কি প্রত্যাশা করেন তা প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর শিক্ষাদর্শন আপামর মানুষের শিক্ষা ও উন্নয়নের দর্শন। তিনি বড় তাত্ত্বিকদের মত পান্ডিত্যপূর্ণ কোন কথা বলেননি, যা করা সম্ভব বা করা সহজ তাই তিনি সহজ ভাষায় নিজের মত করে বলেছে। এক্ষেত্রে তিনি বাস্তববাদী ও প্রয়োগবাদী দর্শনদলের অন্তর্গত।

গ) প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ ও বাধ্যতামূলক করা
তাঁর শাসনামলে (১৯৭২-১৯৭৫) ২৫,০০০ প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ও এর শিক্ষকদের চাকরী সরকারিকরণ করেন। এ ছাড়াও নতুন ১২,০০০ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। প্রাথমিক শিক্ষাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করে সংবিধানে অনুচ্ছেদ যুক্ত করেছেন। তাঁর এ সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে শিক্ষার বিস্তার ঘটেছে এবং স্বাক্ষরতার হার বর্তমানে (২০২১ সালে) প্রায় ৭৪ শতাংশে পৌঁছেছে।

ঘ) জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠন
বঙ্গবন্ধু গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান রচনার কমিটি করেই ক্ষান্ত হননি, ২৬ জুলাই ১৯৭২ দেশবরেণ্য বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদার নেতৃত্বে ১৯ সদস্য বিশিষ্ট ‘জাতীয় শিক্ষা কমিশন’ গঠন করেন। ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু এ কমিশনের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। তিনি কমিশনকে-‘বর্তমান শিক্ষার নানাবিধ অভাব ও ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ, শিক্ষার মাধ্যমে সুষ্ঠুজাতি গঠনে নির্দেশ দান এবং দেশকে আধুনিক জ্ঞান ও কর্মশক্তিতে বলীয়ান করার পথ নির্দেশ দেবার নির্দেশনা দেন।’ ১৯৭৪ সালের মে মাসে কমিশন তাদেও রিপোর্ট জমা দেন।

ঙ) সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা সংযোজন
১৯৭২ সারের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাাদেশের মাটিতে পা রাখেন। কালবিলম্ব না করে তিনি নেমে পড়েন দেশ গড়ার কাজে। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, স্বাধীনতার মাত্র এক বছরের মধ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর করেন। প্রণীত সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে-
‘ রাষ্ট্র। (ক) একই পদ্ধতির গণমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য,
(খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই পরিচয় সিদ্ধ করিবার উদ্দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য,
(গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’

চ) শিক্ষার গতিধারা নির্ধারণ
স্বাধীন বাংলাদেশে শিক্ষার ধরণ ও গতিধারা কেমন হবে তা ১৯৭৪ সালের জাতীয় শিক্ষা কমিশনে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এরপরও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বক্তৃতায় শিক্ষার ধরণ ও গতিধারা সম্পর্কে বলেন-
‘আমি চাই কৃষি কলেজ,কৃষি স্কুল,ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল,কলেজ ও স্কুল,যাতে সত্যিকারের মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে। কেরানী পয়দা করেই একবার ইংরেজ শেষ করে দিয়ে গেছে দেশটা। তোমাদের মানুষ হতে হবে ভাইরা আমার।’

ছ) গণতান্ত্রিক, জবাবদিহিতা ও গঠনমূলক শিক্ষার প্রবর্তন
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন তাত্ত্বিক হিসেবে তার শিক্ষাদর্শন প্রদান করেননি-তিনি জনমানুষের মাঝে থেকে শিক্ষাদর্শনের অনুশীলন করেছেন। তাঁর দর্শন ছিল গণতান্ত্রিক ও জবাবদিহিতামূলক। এ জন্য অতি সহজেই বলতে পারেন-
 ‘আত্মসমালোচনা করুন, আত্মশুদ্ধি করুন। তাহলেই হবেন মানুষ।’
 ‘আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আমাকে সমালোচনা করতে আমি তাদের অনুমতি দিয়েছি। সমালোচনার ব্যাপারে আমার কোনো আপত্তি নেই। কেননা, আমি জনগণকে ভালোবাসি, জনগণও আমাকে ভালোবাসে।’
 ‘আমি সৎ সমালোচনাকে স্বাগত জানাই। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, আমি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে বিশ্বাসী।’
 ‘যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনও যদি হয় সে, তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।’
জ) শিক্ষা ও সমাজকে দুর্নীতিমুক্তকরণ
পাকিস্তান আমলে রাজনীতি করতে গিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন উন্নয়নের প্রধান শত্রু দুর্নীতি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি দেশ থেকে দুর্নীতি দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ও দুর্নীতিকে সংঞ্জায়িত করে বলেন-
 ‘শুধু নিজেরা ঘুষ খাওয়াই করাপশন নয়। করান্ট পিপলকে সাহায্য করাও কিন্তু করাপশন। নেপোটিজমও কিন্তু এ টাইপ অব করাপশন।’
 ‘নেশন মাস্ট বি ইউনাইটেড এগেইনেস্ট করাপশন। পাবলিক ওপিনিয়ন মবিলাইজ না করলে শুধু আইন দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যাবে না এবং সেই সিস্টেমই পরিবর্তন করতে হবে। ঘুণে ধরা সিস্টেম দিয়ে করাপশন বন্ধ করা যায় না। এই সিস্টেমই হলো করাপশনের পয়দা। এই সিস্টেম করাপশন পয়দা করে এবং করাপশন চলে।’
 ‘যে ফাঁকি দেয় সে দুর্নীতিবাজ। যে ঘুষ খায় সে দুর্নীতিবাজ। যে স্মাগলিং করে সে দুর্নীতবাজ। যে ব্লাকমার্কেটিং করে সে দুর্নীতিবাজ। যে হোর্ড করে সে দুর্নীতিবাজ। যারা কর্তব্যপালন করে না তারা দুর্নীতিবাজ। যারা বিবেকের বিরুদ্ধে কাজ করে তারাও দুর্নীতিবাজ। যারা বিদেশের কাছে দেশকে বিক্রি করে তারাও দুর্নীতিবাজ। এই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রাম শুরু করতে হবে।’
ঘুষ ও দুর্নীতি বন্দ না হওয়ায় একসময় তাঁর কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটে উঠে। তিনি আক্ষেপ কওে বলেন-
‘করাপশন বন্ধ কর, আল্লাহর দোহাই, করাপশন বন্ধ করার চেষ্টা কর। তোমাদের ইচ্ছে মতো দেওয়া হয়েছে। তোমরা পারবে।’

ঝ) মানবিক শিক্ষাধারার সূচনা
শিক্ষাদর্শনের অন্যতম মূলসুর মানবিক শিক্ষার প্রয়োগ। মানবিকতা ছাড়া শিক্ষা অসম্পূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানীদের অন্যায়-অনায্য কাজকর্ম দেখে বাংলাদেশে মানবিক শিক্ষাধারার সূচনা করতে চেয়েছেন। এজন্য তিনি বলেন-
 ‘সোনার বাংলা গড়ে তুলতে আত্মোৎসর্গ করুন।’
 ‘পাপ আর পুণ্য পাশাপাশি চলতে পারে না।’
 ‘দুনিয়ার নিয়মই ভালোবাসা পেতে হলে ভালোবাসতে হয়। এবং সে ভালোবাসা সিনসিয়ারলি হওয়া দরকার। তার মধ্যে যেন কোনো খুঁত না থাকে।’

ঞ) যুগোপযোগী ও আধুনিক শিক্ষার ধারণা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তাঁর সময়ের চেয়ে অনেক অনেক আধৃনিক একজন মানুষ। তাঁর পোশাক, চলন-বলন, চিন্তাচেতনার মধ্যে এর প্রকাশ ঘটেছে। শিক্ষার ক্ষেত্রেও তার প্রমান পাওয়া যায়। তিনি সংবিধানের মাধ্যমে এর প্রমান রেখেছেন- ‘ রাষ্ট্র... (খ) সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য এবং সেই পরিচয় সিদ্ধ করিবার উদ্দেশে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছাপ্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য, (গ) আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন।’
‘সমাজের প্রয়োজনের সহিত শিক্ষাকে সংগতিপূর্ণ করিবার জন্য’ বাক্যটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সমাজ পরিবর্তনশীল, সেই পরিবর্তনকে ধারণ করে শিক্ষাক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা জরুরী যে কাজটি বর্তমান সরকার করছে শিক্ষায় প্রক্তুক্তি ব্যবহার করে। শিক্ষা ও উন্নয়ন নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন-
‘সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছার সংক্ষিপ্ত কোনো সড়ক নেই। ইন্সিত সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সমাজের প্রতি স্তরের মানুষকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। কঠোর পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই।’

ট) শিক্ষায় বিনিয়োগকে পুঁজি মনে করা
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের নির্বাচনী মেনিফেস্টোতে বঙ্গবন্ধু শিক্ষা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশ করেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ক্ষমতা গ্রহণের পর শিক্ষাক্ষেত্রে তার কার্যক্রম দেখে। তিনি শিক্ষায় জিডিপির ৪% বরাদ্দ করা করেন। এ ছাড়া তিনি প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি জাতীয়করণ এবং অন্যান্য সুবিধা প্রদান করেন।

ঠ) শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিক্ষাকে সুসংহত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকরণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয়কে আলাদা স্বায়ত্বশাসন দিয়ে অ্যাক্ট ও অর্ডার জারিকরণ, প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করা, ধর্মীয় শিক্ষার প্রসারকরণ, ইসলামী ফাউন্ডেশন ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন প্রতিষ্ঠা করেন।

ড) বাংলাভাষাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত করানো
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বিশ্বব্যাপি বাংলাভাষাকে পরিচিতি করানো। এজন্য তিনি ১৯৭৪ সালে ঢাকায় বাংলা একাডেমিতে প্রথম আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন আয়োজন করেন। এখানে বিশ্বের নামী-দামী শিক্ষাবিদ সাহিত্যকদের আমন্ত্রণ জানানো হয় যাদের মাধ্যমে বিশ্বে বাংলা ভাষার পরিচিতি পায়। অন্যদিকে তিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলাভাষায় বক্তৃতা করে বিশ্বে নজীর স্থাপন করেন।

ঢ) অসাম্প্রদায়িক শিক্ষার ভিত্তি গড়া
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। সারা জীবন তিনি মাটি ও মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করেছেন। তাঁর অসাম্প্রদায়িকতার প্রমাণ দিয়েছেন কথা ও কাজে। তাঁর ২/১ টি বানি উদ্ধৃত করলেই এর প্রমাণ পাওয়া যাবে। যেমন-
 ‘আমি মানুষকে মানুষ হিসেবেই দেখি। রাজনীতিতে আমার কাছে মুসলমান, হিন্দু ও খ্রিস্টান বলে কিছু নাই। সকলেই মানুষ।’
 ‘আমাদের বাঙালিদের মধ্যে দুইটা দিক আছে। একটা হলো আমরা মুসলমান, আর একটা হলো আমরা বাঙালি। পরশ্রীকাতরতা এবং বিশ্বাসঘাতকতা আমাদের রক্তের মধ্যে রয়েছে।’

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা যোগ করে তিনি এর প্রমাণ দিয়েছেন। এছাড়া অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে তাঁর মন্তব্য এখনও প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেছেন-
‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমান মুসলমানদের ধর্মপালন করবে। হিন্দু তার ধর্মপালন করবে। খ্রিস্টান তার ধর্মপালন করবে। বৌদ্ধও তার নিজের ধর্ম পালন করবে। এ মাটিতে ধর্মহীনতা নাই, ধর্মনিরপেক্ষতা আছে। এর একটা মানে আছে। এখানে ধর্মের নামে ব্যবসা চলবে না। ধর্মের নামে মানুষকে লুট করে খাওয়া চলবে না। ধর্মের নামে রাজনীতি করে রাজাকার, আলবদর পয়দা করা বাংলার বুকে আর চলবে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে দেওয়া চলবে না।’

৫. উপসংহার 
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের মে মাসের ৩ তারিখের কোন এক সময় বিশেষ কোন মানসিক পরিস্থিতিতে তাঁর ব্যক্তিগত নোটখাতায় লিখেন-,‘একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা, অক্ষয় ভালোবাসা, যে ভালোবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে।’

‘সমগ্র মানবজাতি নিয়ে যিনি ভাবেন এবং বাঙালি হিসেবে যা কিছু বাঙালিদের সঙ্গে সম্পর্কিত ও নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালোবাসা’ যিনি বলতে পারেন তাঁর শিক্ষাদর্শন তো শুধু বাংলাদেশ নয়-সারা বিশ্বের জন্য অনুসরণীয়। বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি, দল ও শাসন নিয়ে কারো ভিন্নমত থাকতে পারে তবে শিক্ষাদর্শন মানব জাতির জন্য এক অমূল্য সম্পদ। শিক্ষাদর্শনের বিশেষত্ব হলো এটা জীবনানুশীলন দ্বারা অর্জিত-গবেষণা দ্বারা প্রাপ্ত নয়। বর্তমান বিশ্বে একটি আলোচিত শিখন দর্শন হলো ডেভিড কব (David Kolb) এর অভিজ্ঞতাবাদ (Experiential Learning) যা বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনে পাওয়া যায়।

বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে গঠিত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা বাংলাদেশে প্রথম শিক্ষা কমিশন যারা ভারতে ১ মাস সফর করে, প্রায় দুইবছর কাজ করে, বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও পেশাজীবিদের সাথে কথা বলে ১৯৭৪ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধুর নিকট রিপোর্ট জমা দেন। বঙ্গবন্ধুর পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় পরিচালিত কমিশন যে রিপোর্ট প্রদান করেন তাতে ৩৬টি অধ্যায় ও ৮টি পরিশিষ্ট রয়েছে যার প্রথম অধ্যায়ে শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হলো- দেশপ্রেম ও সুনাগরিকত্ব, মানবতা ও বিশ্ব-নাগরিকত্ব, নৈতিক মূল্যবোধ, সামাজিক রুপান্তরের হাতিয়ার রুপে শিক্ষা, প্রয়োগমুখী অর্থনৈতিক অগ্রগতির অনুকূল শিক্ষা, কায়িক শ্রমের মর্যাদা, বহুমুখী শিক্ষা ধারার প্রবর্তন, নেতৃত্ব ও সংগঠনের গুণাবলী, সৃজনশীলতা ও গবেষণা এবং শিক্ষানীতিকে গতিশীল করা। বঙ্গবন্ধু মানুষের কল্যাণের জন্য যে শিক্ষা নিয়ে ভেবেছেন তা প্রকাশিত হয়েছে শিক্ষার লক্ষ ও উদ্দেশ্যের ১.৩ ধারায়। এতে বলা হয়েছে- ‘জাতীয় কল্যাণের স্বার্থে শোষণহীন নূতন সমাজ সৃষ্টির মহৎ প্রেরণায় উদ্বুদ্ধ বিশ্বের সকল সংগ্রামী মানুষের প্রতি বন্ধুত্ব ও একতার হস্ত প্রসারিত করতে হবে। মানুষে মানুষে মৈত্রী, সৌহার্দ ও প্রীতি এবং মানবাধিকার ও মানবিক মর্যাদার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের মনোভাব সৃষ্টি করতে হবে।’

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর শিক্ষাদর্শন মানুষ, মানবাধিকার, বিশ্বশান্তি ও সকল প্রাণীর সহঅবস্থান এবং কল্যাণের দর্শন। তিনি কোন ঘোরপ্যাাঁচ না করে সহজে বলেন- ‘সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারো প্রতি বিদ্বেষ নয়।’
‘ধ্বংস নয় সৃষ্টি, যুদ্ধ নয় শান্তি।’ অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো বর্তমান বিশ্বে শান্তির প্রত্যাশায় যুদ্ধ চলছে যা একটি পরিহাস মাত্র। সেক্ষত্রে বিশ্বব্যাপি বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শনের প্রয়োগ হতে পারে শান্তি, মানবতা ও বৈশ্বিক মৈত্রির এক মহৌষধ। বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর আমা ও ক্ষোভের কথা বলেন-
‘সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ সম্পদে ভর্তি। এমন উর্বর জমি দুনিয়াতে খুব অল্প দেশেই আছে। তবুও এরা গরিব। কারণ যুগ যুগ ধরে এরা শোষিত হয়েছে নিজের দোষে। নিজেকে এরা চেনে না। যারা যতদিন চিনবে না এবং বুঝবে না, ততদিন এদের মুক্তি আসবে না।’

উল্লিখিত আলোচনা ও তথ্য বিশ্লেষণের প্রেক্ষিতে এটাই বলা যায়, বাংলাদেশের সমকালীন জীবনে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন আজও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও প্রাসঙ্গিক।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন