ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনে শতকোটি টাকার বাণিজ্য

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৩


Thumbnail

অবশেষে গতকাল স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়ার পর এই কমিটির ঘোষণা করা হয়। তবে কয়েকজনের টাকা তারেক জিয়ার কাছে না পৌঁছানোর কারণে ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির মধ্যে ২১৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এক মাসেরও বেশি আগে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। সে সময় এসএম জিলানিকে সভাপতি এবং রাজিব আহসানকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠন করা হয়। এরপরেই শুরু হয় কমিটি বাণিজ্য। 

লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন পদের জন্য অর্থ ঘোষণা করেন এবং অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২৫১ সদসস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির ২১৩ জন সদস্য হয়েছে একশ কোটি টাকারও বেশি চাঁদা দিয়ে। এই চাঁদা বিভিন্ন মাধ্যমে তারেক জিয়ার কাছে পৌঁছেছে এবং তারেক জিয়া টাকা পৌঁছানোর পরপরই কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। মজার ব্যাপার হলো, এই কমিটি গঠনে বিএনপির গঠনতন্ত্র বা স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়নি। স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা ১০১ সদস্যের। কিন্তু গঠনতন্ত্রের সংশোধন ছাড়াই ২৫১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করার কথা বলা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবক দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ১০ থেকে ১১ জন সহ-সভাপতি থাকার কথা। সেখানে অর্থ আদায়ের সুবিধার জন্য ২০ জনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে। প্রতি সহ-সভাপতি ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে এই পদ পেয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পদও ১১জন। সেখানে ২৮ জনকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। প্রতি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দিয়ে কমিটিতে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এছাড়াও যারা বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে রয়েছেন, তারাও ৩ থেকে ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে এই কমিটিতে জায়গা পেয়েছেন। 

অন্যদিকে সদস্য হওয়ার ক্ষেত্রে নূন্যতম ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা দিয়ে তাদেরকে কমিটির সদস্য হতে হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই পদ পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। সাধারণ সম্পাদকও ১০ কোটি টাকার বিনিময়ে এই পদ পেয়েছেন বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে। গত কিছুদিন ধরেই বিএনপিতে কমিটি বাণিজ্য হচ্ছে প্রকাশ্যে। যে কোনো কমিটি গঠনের আগে তারেক জিয়াকে একটি বড় অঙ্কের টাকা দিতে হয়। তারেক জিয়া এই টাকা পাওয়ার পর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর সভাপতি ও সাধারণ সম্পদকের পদ দু’টি নিলামে ওঠে। যিনি সবচেয়ে বেশি টাকা দিতে সম্মত হন, তিনি এই পদ দু’টি পান। তবে শর্ত থাকে যে লন্ডনে টাকা না পৌঁছানো পর্যন্ত এই কমিটি ঘোষণা না করা। আংশিক কমিটি ঘোষণার পর টাকা সংগ্রহ অভিযান শুরু হয় বিএনপির মধ্যে। বিভিন্ন পদের জন্য কে কে আগ্রহী, কে কত টাকা দিতে পারবে ইত্যাদি মাসব্যাপী চলে এই অর্থ সংগ্রহ বা চাঁদা সংগ্রহ অভিযান। 

কমিটি বাণিজ্য সম্পন্ন হওয়ার পর যখন টাকার ভাগ লন্ডনে তারেক জিয়া পেয়ে যান, তখন তিনি কমিটিগুলো অনুমোদন করেন। তবে বিএনপির একাধিক সূত্র বলছে, শুধু তারেক জিয়া একা না, অনেকেই এই টাকার ভাগ পান। সম্প্রতি ভয়েজ অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন যে, জনগণের টাকায় লন্ডনে তারেক জিয়া চলেন। আর জনগণের টাকা যে এই কমিটি বাণিজ্যের টাকা, সেটি স্বেচ্ছাসেবক দলের কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আরেকবার প্রমাণিত হলো।

রাজনীতির খবর   স্বেচ্ছাসেবক দল   কমিটি বাণিজ্য   তারেক জিয়া   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

যুক্তরাষ্ট্র চায় সেন্টমার্টিন এবং ব্যবসা

প্রকাশ: ১০:০৫ পিএম, ০৮ জুন, ২০২৩


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গণতন্ত্র, নির্বাচন নিয়ে যে অতি আগ্রহ দেখাচ্ছে তার পেছনে রয়েছে আসলে ব্যবসা। একাধিক মার্কিন কোম্পানি বাংলাদেশে বিভিন্ন রকম ব্যবসা করতে চায়। আর এই ব্যবসা গুলো যথাযথ নিয়ম কানুনের প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা পাচ্ছে না জন্যই মার্কিন রাজনীতিকে ব্যবহার করছে এবং মার্কিন রাজনীতিকে ব্যবহার করে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এখন বাংলাদেশকে ঘিরে আগ্রহের প্রধান কারণ হলো সেন্টমার্টিন। তারা নানা কারণে এই উপমহাদেশে তাদের সামরিক উপস্থিতি তৈরি করতে চায়। আর এজন্য তাদের দরকার সেন্টমার্টিন দ্বীপ। 

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এই সেন্টমার্টিন চাওয়ার বার্তা দিয়েছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ভূখণ্ড কোনভাবেই বিদেশি সামরিক স্থাপনের জন্য ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এই উপমহাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনিতেই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একান্ত অনুগত হিসেবে কাজ করবে না। কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেখা গেছে ভারত একাধারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেমন সম্পর্ক রেখেছে ঠিক তেমনিভাবে রাশিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে। আর এই বাস্তবতায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই উপমহাদেশে ভারত নির্ভরতা অনেকখানি কমিয়ে ফেলেছে। 

পাকিস্তান এখন অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া প্রায় একটি রাষ্ট্র এবং এই রাষ্ট্রে এখন চীনের প্রভাব অনেক বেড়ে গেছে। সেই জন্য এখানে মার্কিন আগের প্রভাব ক্ষুন্ন হয়ে গেছে। অন্যদিকে উপমহাদেশের অন্যান্য দেশগুলো সামরিক কৌশলগত দিক থেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বাংলাদেশ যতটা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ কারণেই বাংলাদেশকে ঘিরে এত আগ্রহ। বাংলাদেশে রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তারা একটি অনুগত সরকার আনতে চায় যে সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কৌশলগত আকাঙ্খাগুলো পূরণ করবে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, সেন্টমার্টিন ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়িক আগ্রহ এখানে তীব্র। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ এবং আতঙ্ক তৈরি করেছে। আর এ কারণেই তারা মনে করছে বাংলাদেশে যদি একটি অনুগত সরকার না থাকে তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশে ব্যবসা আস্তে আস্তে কমে যাবে বা গুটিয়ে নিতে হবে। 

সম্প্রতি মার্কিন কোম্পানি লিন্ডেন এনার্জিকে বাংলাদেশে এলএনজি সরবরাহের বড় ব্যবসা পাইয়ে দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে এবং কোম্পানিকে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধায় শুল্কমুক্ত কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম শুল্কে এলএনজি সরবরাহের সুযোগ দেওয়ার জন্য আবেদন হয়েছে। এই আবেদনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কোম্পানিটি চিঠি দিয়ে বলেছে যে তারা যদি এই ব্যবসাটি পায় তার বিনিময়ে তারা মার্কিন রাজনীতিবিদদের সে দেশের সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে অবস্থান নেবেন। এমনকি চিঠিতে এটিও বলা হয়েছে যে প্রস্তাবিত বাণিজ্য সুবিধা পেলে বাংলাদেশের র‌্যাব এবং এর কয়েকজন কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার জন্য তারা কাজ করবে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য যেন অগ্রাধিকারমূলক ভাবে প্রবেশ পায় সে বিষয়ে তারা ভূমিকা রাখবে। শুধু তাই নয়, লিন্ডেন এনার্জির আগ্রহপত্রে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পে স্বাক্ষর করবে বলে জানানো হয়েছে। তবে সরকার এই সমস্ত অন্যায দাবিকে আমলে নিতে রাজি নয়। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, যারা যোগ্য এবং দেশের জন্য যেটি লাভজনক বাংলাদেশ সেটি করবে।

যুক্তরাষ্ট্র   সেন্টমার্টিন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

কংগ্রেসম্যানদের নামে ভুয়া চিঠি: প্রতারণা এবং জালিয়াতি

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ০৩ জুন, ২০২৩


Thumbnail

সরকারকে কোণঠাসা করতে এখন বিভিন্ন মহল নানা রকম গুজব এবং প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। নানা রকম মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক গত ১১ মে ছয় জন মার্কিন কংগ্রেসম্যানের লেখা একটি তথাকথিত চিঠি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। জো বাইডেনের কাছে লেখা এই চিঠিতে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে এবং এই অভিযোগের ভিত্তিতে কংগ্রেসম্যানরা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ করেছেন। কিন্তু বাস্তবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, যাদের নামে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে তারা কেউই এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেননি বা এই চিঠিটি তারা দেননি। 

এই চিঠিতে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন কংগ্রেসম্যান স্টক পেরি, ব গুড, ব্যারি মুর, টিম বারচেট, ওয়ারেন ডেভিডসন, কিথ সেলফ্। তাদের সঙ্গে ই-মেইলে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে, এ ধরনের কোনো চিঠিতে তারা স্বাক্ষর করেন নাই বা এধরনের কোন বিষয়ে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেননি। এটা তাদের কাজ নয় বলেও তারা পৃথক পৃথকভাবে উল্লেখ করেছেন। এই চিঠিটি একটি চিঠি ভুয়া চিঠি এবং এই ব্যাপারে কংগ্রেসম্যানরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন বলেও জানা গেছে। 

উল্লেখ্য যে মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের নাম ব্যবহার করে, তাদের স্বাক্ষর জাল করে, বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই চিঠিটি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং বলা হচ্ছে যে সরকারের উপর আরও নিষেধাজ্ঞা আসবে। শুধু এই ধরনের চিঠি নয়, আরও অনেক ধরনের প্রতারণাই হচ্ছে। তবে কংগ্রেসম্যানদের কর্মকাণ্ড যদি কেউ পর্যালোচনা করেন এবং  কংগ্রেসম্যানরা কি কাজ করেন না করেন সে সম্পর্কে যদি কেউ খোঁজ খবর রাখেন তাহলে সেক্ষেত্রে তারা জানেন যে কংগ্রেসম্যানরা এ ধরনের আক্রমণাত্মক এবং উদ্ধত ভাষায় চিঠি দেন না। তাছাড়া এ চিঠির মধ্যে অনেকগুলো ব্যাকরণিক ভুল রয়েছে এবং চিঠির ইংরেজি মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। এখানে কূটনৈতিক ভাষা ব্যবহার করা হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে বিএনপির কোন কোন মহল এই প্রতারণা এবং জাল চিঠি তৈরি করেছে এবং শেষ পর্যন্ত যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে কারা এটি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন প্রশাসন ব্যবস্থা নিবেন বলে জানা গেছে। 

শুধু এই চিঠির গুজব নয়, আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে নানারকম গুজব এবং মিথ্যাচার ছড়ানো হচ্ছে। কার ভিসা বাতিল হয়েছে, কাকে ভিসা দেয়া হয়নি ইত্যাদি নানা রকম গুজব এবং মিথ্যাচারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এখন সয়লাব হয়ে গেছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন ভিসা নীতি চালু করেছে সেই ভিসা নীতি কার্যকর হবে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর পর। কিন্তু বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের তফসিলই ঘোষণা করা হয়নি। কাজেই কে ভিসা পেল, কাকে আমেরিকায় যেতে দেওয়া হলো না এ ধরনের অবাস্তব তথ্য গুলোকে ছড়িয়ে এক ধরনের ভীতিকর পরিবেশ তৈরী করা হচ্ছে, এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন এই ধরনের গুজব এবং মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মার্কিন প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাবে বলেও জানা গেছে। 

কংগ্রেসম্যান   ভুয়া চিঠি   প্রতারণা-জালিয়াতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে শত কোটি টাকার প্রকল্প

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০২ জুন, ২০২৩


Thumbnail

বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা উদ্যোগ এবং পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তবে তাদের প্রথম পরিকল্পনা হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দেওয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে উত্তেজিত করা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিপক্ষ বানানো। বিএনপি মনে করছে যে যদি এটি সফল হয় তাহলে আগামী নির্বাচন বর্তমান সরকার করতে পারবে না এবং সরকারকে বিদায় নিতে হবে। আর এটি বাস্তবায়নের জন্য ওয়াশিংটন, ঢাকায় বিএনপি শত কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছে বিএনপির দেশে-বিদেশে একটি বিশেষ টিম। এই টিমের মূল কাজ হলো তিনটি; প্রথমত, বাংলাদেশে দূতাবাসে যে সমস্ত মার্কিন কর্মকর্তারা রয়েছে তাদের সাথে নিবিড় বৈঠক করা, তাদেরকে সরকারের বিরুদ্ধে নানা রকম অসত্য তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করা। দ্বিতীয়ত ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে যারা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন এবং নীতিনির্ধারক রয়েছেন তাদেরকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নেতিবাচক নানারকম অসত্য বিকৃত তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করা এবং তৃতীয়তঃ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কাছে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম বিকৃত ও অসত্য মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদেরকে বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে প্রভাবিত করা। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের ব্যাপারে এক ধরনের কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যদি আরও কঠোর হয় তাহলে সরকারের জন্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের ইচ্ছেমতো করা কঠিন হয়ে পড়বে। বাংলাদেশে শামা ওবায়েদ এর নেতৃত্বে বিএনপির একটি টিম সার্বক্ষণিকভাবে মার্কিন দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছেন এবং এই টিমে যে শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করা ব্যক্তি রয়েছেন এমন নয়, তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপক জিল্লুর রহমান বিএনপির লবিস্ট হিসেবে মার্কিন দূতাবাসের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখছেন। মার্কিন দূতাবাস শুধু নয়, ওয়াশিংটনে মার্কিন কূটনীতিকদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। আর এই সম্পর্কের সূত্র হচ্ছেন ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আলী রিয়াজ। ড. আলী রিয়াজ এবং জিল্লুর রহমানের মাধ্যমে বাংলাদেশে এবং ওয়াশিংটনে যে সমস্ত  কূটনীতিকরা বাংলাদেশ নিয়ে কাজ করেন তাদেরকে নানা রকম তাত্ত্বিক এবং বিকৃত তথ্য দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারীর নেতৃত্বে একটি টিম ওয়াশিংটনে কাজ করছে। যাদের কাজ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতিনির্ধারকদের কাছে নানারকম বিষোদগার করা, বিব্রতকর তথ্য উপস্থাপন করা। 

ইতিমধ্যে মুশফিকুল ফজল আনসারী কয়েকজনকে লবিস্ট নিয়োগ করেছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম। যিনি বিএনপির পক্ষে একজন লবিস্ট হিসেবে কাজ করছেন এবং উইলিয়াম বি মাইলাম কিছু স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করার জন্য নিয়মিত ভাবে পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগাযোগ করছেন। এছাড়া ডেভিড বার্গম্যানের নেতৃত্বে একটি দল কাজ করছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল  সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর সাথে। ডেভিট ব্যাগবানকে সহযোগিতা করছেন বাংলাদেশের অধিকার নামের একটি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী প্রধান আদিলুর রহমান খান। আর এই চক্ররাই এখন বিএনপির পক্ষে সরকারের বিরুদ্ধে নানারকম নেতিবাচক তথ্য দিচ্ছে। আর এরা পাচ্ছেন মোটা অঙ্কের অর্থ। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

একজন সাদা মানুষের কালো অধ্যায়

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ৩১ মে, ২০২৩


Thumbnail ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

(ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দানের বিপরীতে ধার্য করা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা আয়কর চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো নোটিশ বৈধ বলে রায় ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। বুধবার (৩১ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় দেন। এই রায়ের ফলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো নোটিশের আলোকে তাকে (নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস) দানের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকা আয়কর দিতে হবে। 

বুধবার (৩১ মে) আয়কর চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাঠানো নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের করা পৃথক তিনটি আয়কর রেফারেন্স মামলার বিষয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকার ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ-এ শুনানি হয়। শুনানি শেষে ড. ইউনূসের দায়ের করা তিনিটি আয়কর রেফারেন্স মামলা খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের এই রায়ের মাধ্যমেই প্রমাণিত হলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস কর ফাঁকি দিতেন। ড. ইউনূসের শুধু কর ফাঁকি নয়, তার আর্থিক অনিয়ম এবং অস্বচ্ছতার অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বাংলা ইনসাইডারের হাতে এসেছে। সম্প্রতি বাংলা ইনসাইডারের এক অনুসন্ধানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর ফাঁকি, রাষ্ট্রীয় অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ এবং জাল-জালিয়াতির চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।)  

মাছের তেলে মাছ ভাজা

দেশের সমস্যা নিয়ে তিনি নীরব। দেশের কোন সংকটে, উৎসবে তিনি থাকেন না। ব্যক্তি স্বার্থে বিদেশে তিনি সরব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। দারিদ্র জাদুঘরে যায়নি বটে, তবে তিনি অর্থ, বিত্ত-বৈভবের জাদু দেখিয়েছেন। এখন ‘সামাজিক ব্যবস্থা’ আওয়াজ তুলে বিশ্বে বক্তৃতা দিচ্ছেন। সামাজিক ব্যবস্থার প্রবর্তন হোক না হোক তার বিত্তের প্রসার ঘটেছে। এখন শিক্ষক থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন বিলিয়নিয়ার। কিন্তু তার এই বিত্ত যেভাবে বেড়ে ওঠা গরীবের সম্পদ লুটে। সরকারকে ঠকিয়ে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে। তার নাম ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পেশাগত জীবনে অর্থনীতিবিদ হলেও নোবেল বানিয়ে নিয়েছেন শান্তিতে। অর্থনীতিবিদ কিভাবে শান্তিতে নোবেল পেলেন সেটাও ভাবার বিষয়। নোবেল বিজয়ী হিসেবে বিদেশে বক্তৃতা করে পান কোটি কোটি টাকা। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, দেশ এবং জাতির জন্য তিনি কি করেছেন? জোবরা গ্রামে গবেষণা শুরু করেছিলেন ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম নিয়ে। এক সময় এই দরিদ্র, হতদরিদ্র মানুষদের সাবলম্বী করে তোলার কথা বলে দারস্থ হয়েছিলেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবেই এরশাদ সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে। ড. ইউনূস সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চাকরি নেন, ১৯৮৩ সালে এটি একটি বৈধ এবং স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সরকার গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করে একটি আইনের মাধ্যমে এবং সেখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ড.  ‍মুহাম্মদ ইউনূসকে। 

১৯৮৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সরকার গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ নামে একটি অধ্যাদেশ (অধ্যাদেশ নম্বর-৪৬) জারি করে। সে সময়ে গ্রামীণ ব্যাংক শুরু হয় মাত্র তিন কোটি টাকা মূলধন দিয়ে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা অর্থাৎ ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছিল সরকারের এবং ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ছিল ঋণ গ্রহীতাদের। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত কোনো টাকা ছিল না। অথচ গ্রামীণ ব্যাংককে ব্যবহার করেই ড. ইউনূস পেয়েছেন সবকিছু। কাগজে কলমে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক সরকার এবং ঋণ গ্রহীতা জনগণ। কিন্তু ‘অসাধারণ’ মেধায় রাষ্ট্র ও জনগণের অর্থ ড. ইউনূস পুরে ফেলেন তার পকেটে। গ্রামীণ ব্যাংকের টাকায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস গড়ে তুলেছেন নিয়ন্ত্রণাধীর ২৮টি প্রতিষ্ঠান এবং গ্রামীণ ব্যাংক তথা সরকারের টাকা আত্মসাৎ করে তিনি এখন হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। 

গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দাতা গোষ্ঠী অনুদান এবং ঋণ দেয় গ্রামীণ ব্যাংককে। অনুদানের সব অর্থ যদি রাষ্ট্র এবং জনগণের কাছে যায় তাহলে ড. ইউনূসের লাভ কি? তাই দাতাদের অনুদানের অর্থ দিয়ে গঠন করলেন সোশাল ভেনচার ক্যাপিটাল ফান্ড (এসভিসিএফ)। ১৯৯২ সালের ৭ অক্টোরব ঐ ফান্ড দিয়ে আলাদা একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯৯৪ সালে ‘গ্রামীণ ফান্ড’ নামের একটি লিমিটেড কোম্পানী গঠন করা হয়। তাতে ঐ ফান্ডের ৪৯ দশমিক ১০ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। গ্রামীণ ব্যাংক দেখিয়ে বিদেশ থেকে টাকা এনে তা সরিয়ে ফেলার চেষ্টা ছিলো শুরু থেকেই। গ্রামীণ ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠান হলেও ড. ইউনূস- এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে সব সিদ্ধান্ত একাই নিতেন। পরিচালনা পর্ষদ এমনভাবে গঠন করা হয়েছিল, যাতে কেউ ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে কথা না বলেন। ড. ইউনূস এই সুযোগটি কাজে লাগান। ১৯৯৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর গ্রামীণ ব্যাংকের ৩৪ তম বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঐ সভায় সিদ্ধান্ত হয় দাতা গোষ্ঠীর অনুদানের অর্থ এবং ঋণ দিয়ে সোশাল এডভান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) গঠন করা হবে। কিন্তু দাতারা গ্রামীণ ব্যাংক থেকে এভাবে অর্থ সরিয়ে ফেলার আপত্তি জানায়। দাতারা সাফ সাজিয়ে দেন, এভাবে অর্থ স্থানান্তর জালিয়াতি। এবার ভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেন ড. ইউনূস। ২৫ এপ্রিল ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় ‘গ্রামীণ কল্যাণ’ গঠনের প্রস্তাব আনেন। 

প্রস্তাবে বলা হয়, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণে ‘কোম্পানী আইন ১৯৯৪’ এর আওতায় গ্রামীণ কল্যাণ নামের একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভা এই প্রস্তাব অনুমোদন করে। এটি গ্রামীণ ব্যাংকেরই অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ কল্যাণ যে গ্রামীণ ব্যাংকেরই শাখা প্রতিষ্ঠান, তা আরও স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় এর মূলধন গঠন প্রক্রিয়ায়। গ্রামীণ কল্যাণ-এ গ্রামীণ ব্যাংকের সোশাল এডভ্যান্সমেন্ট ফান্ড (এসএএফ) থেকে ৬৯ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। গ্রামীণ কল্যাণের মেমোরেন্ডাম অব আর্টিকেলেও গ্রামীণ ব্যাংকের সাথে এর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ মেলে। মেমোরেন্ডাম আব আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের ৯ সদস্যের পরিচালনা পরিষদের ২ জন সদস্য গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। এছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে ড. ইউনূস গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হন। এরপরে গ্রামীণ কল্যাণ হয়ে ওঠে ড. ইউনূসের ‘সোনার ডিম পাঁড়া রাঁজহাস’। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে তিনি গড়ে তোলেন একাধিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:-

১.গ্রামীণ টেলিকম লি: ২. গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লি: ৩. গ্রামীণ শিক্ষা ৪. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৫. গ্রামীণ ব্যবস্থা বিকাশ ৬. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৭. গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট ৮. গ্রামীণ সলিউশন লি: ৯. গ্রামীণ ডানোন ফুডস: লি: ১০. গ্রামীণ হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস লি: ১১. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. গ্রামীণ ফেব্রিক্স এ্যান্ড ফ্যাশন লি: ১৩. গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। 

অন্যদিকে, গ্রামীণ কল্যাণের আদলে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠন করা হয় আরো কিছু প্রতিষ্ঠন। এগুলো হল:-

১.গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লি: ২. গ্রামীণ সল্যুশন লি: ৩. গ্রামীণ উদ্যোগ ৪. গ্রামীণ আইটেক লি: ৫. গ্রামীণ সাইবারনেট লি: ৬. গ্রামীণ নিটওয়্যার লি: ৭. গ্রামীণ আইটি পার্ক ৮. টিউলিপ ডেইরী এ্যান্ড প্রোডাক্ট লি: ৯. গ্লোব কিডস ডিজিটাল লি: ১০. গ্রামীণ বাইটেক লি: ১১. গ্রামীণ সাইবার নেট লি: ১২. গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লি: ১২. রফিক আটোভ্যান মানুফ্যাকটার লি: ১৩. গ্রামীণ ইনফরমেশন হাইওয়ে লি: ১৪. গ্রামীণ ব্যবস্থা সেবা লি: ১৫. গ্রামীণ সামগ্রী।

মজার ব্যাপার হলো গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে এবং বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ড গঠিত হয়। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হয়েছে- তা সবই আইনত গ্রামীণ ব্যাংকের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ফান্ড এবং গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালনা পর্ষদে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকলেও ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তি। কিন্তু ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখনও গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের চেয়ারম্যান পদে বহাল আছেন। প্রশ্ন হলো; কোন কর্তৃত্ব বলে তিনি এখনও চেয়ারম্যান? এক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংকের নীরবতাও এক রহস্য। ড. ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসরে গেলেও ব্যাংকটি নিয়ন্ত্রণ করছে তার অনুগতরাই। একারণেই তাদের নীরবতা। গ্রামীণ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রহস্যময় আচরণের কারণেই গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানা বঞ্চিত রাষ্ট্র ও জনগণ। রাষ্ট্রের অর্থ দিয়ে ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার এ এক অদ্ভুদ জালিয়াতি। রাষ্ট্রীয় সম্পদের টাকা দিয়ে ব্যক্তিগত কোম্পানী গঠন রাষ্ট্রের সাথে ভয়ংকর প্রতারণা।

গ্রামীণ টেলিকম এবং লোকসানী প্রতিষ্ঠানের রহস্য

গ্রামীণ কল্যাণ এবং গ্রামীণ ফান্ডের মাধ্যমে গঠিত ২৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একমাত্র গ্রামীণ টেলিকম ছাড়া আর সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী। গ্রামীণ টেলিকম দেশের সর্ববৃহৎ মোবাইল নেটওয়ার্ক। গ্রামীণ ফোনের ৩৪ দশমিক দুই শতাংশ শেয়ারের মালিক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ২০২২ সালে গ্রামীণ ফোন ট্যাক্স, ভ্যাট দেয়ার পর নীট মুনাফা করেছে তিন হাজার নয় কোটি ষোল লাখ টাকা। অর্থাৎ গ্রামীণ ফোন থেকে গ্রামীণ টেলিকম প্রতিবছর নীট মুনাফা পায় এক হাজার কোটি টাকার বেশি। গ্রামীণ ফোনের লভ্যাংশ নয়-ছয় করা ছাড়া গ্রামীণ টেলিকমের আর কোন কাজ নেই। এই টাকা দিয়ে ড. ইউনূসের ২৮টি হায় হায় কোম্পানী প্রতিপালন করা হয়। গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকার একটি অংশ যায় গ্রামীণ কল্যাণে। গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে বাকি নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। এই সব প্রতিষ্ঠানই লোকসানী প্রতিষ্ঠান। প্রশ্ন হলো; লোকসান দিয়ে বছরের পর বছর এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কেন? একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, গ্রামীণ ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে যে প্রতিষ্ঠানগুলো গঠন করা হয়েছে; তার সবগুলোর চেয়ারম্যান ড. ইউনূস। আর এই প্রতিষ্ঠানগুলোর এমডি পদে নিয়োগ দেয়া হয় ড. ইউনূসের একান্ত অনুগত এবং বিশ্বস্তদের। এরা গাড়ী পান, মোটা অংকের বেতন পান এবং ড. ইউনূসের কথা অনুযায়ী কাজ করেন। এটা এক ধরনের উৎকোচ। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠার এক বড় কার্যক্রম হলো গ্রামীণ টেলিকমের লাভের টাকা আত্মসাৎ করা এবং আয়কর ফাঁকি। 

এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমেই ড. ইউনূস আসলে অর্থপাচার করেন। গ্রামীণ টেলিকমের টাকাকে হাতবদল করে করে অর্থ পাচারের পথ তৈরী করা হয়। গ্রামীণ টেলিকম কোম্পানি আইন ১৯৯৪- এর ধারা ২৮ এবং ২৯ এর বিধান লঙ্ঘন করে গ্রামীণ ফোন লিমিটেড থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তার লভ্যাংশ আয়ের ৪২.৬% বিতরণ করে আসছে। যদিও গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ফোন লিমিটেডের শেয়ারহোল্ডার নয়। আইন অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের সমগ্র লভ্যাংশ আয়কে এর আয় হিসেবে ভোগ করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট আর্থিক বছরের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট হারে কর দিতে হবে। কিন্তু তাদের নিরীক্ষিত হিসাব পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তারা গ্রামীণ টেলিকম থেকে গ্রামীণ কল্যাণকে তাদের লভ্যাংশ আয়ের প্রায় অর্ধেক প্রদান করেছে শুধুমাত্র অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ১০-২০% হারে। অথচ আইন অনুযায়ী তাদের জন্য প্রযোজ্য করপোরেট করের হার ছিল ৩৫% থেকে ৩৭.৫% পর্যন্ত।

এই করপোরেট রেট এবং ডিভিডেন্ট ট্যাক্সের পার্থক্য কর ফাঁকি। কারণ গ্রামীণ কল্যাণ প্রচলিত আইন অনুযায়ী কোনভাবেই গ্রামীণ টেলিকমের লভ্যাংশ আয়ের অধিকারী নয়। গ্রামীণ টেলিকম শুরু থেকে যে সকল কর ফাঁকি দিয়েছে সেগুলো যোগ করলে- এর পরিমান দাঁড়ায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এই কর ফাঁকির হিসাব শুধুমাত্র গ্রামীণ টেলিকমের। ড. ইউনূসের নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠান এবং তার ব্যক্তিগত আয়করের ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে কর ফাাঁকির ঘটনা অনেকটা স্বাভাবিক নিয়মের মতোই বহু বছর ধরে ঘটেছে। ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কর ফাঁকির ঘটনাগুলো হিসাব করলে এই পরিমাণ দাঁড়াবে বিশাল অংকের।

গ্রামীণ টেলিকমের ২৬ বছরের কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় এক হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে ড. ইউনূস প্রতিবছর শতকরা ১৫ থেকে ২৫ ভাগ পর্যন্ত কর ফাঁকি দিয়ে আসছেন। ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর গ্রামীণ টেলিকমে ড. ইউনূস ২৫% কর ফাঁকি দিয়েছেন। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১০%। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানে ড. ইউনূস কর ফাঁকি দিয়েছেন বছরে ২০%। ওই সময়ে কর ছিল ৩৫%, প্রদান করেছিলেন মাত্র ১৫%। ২০০৯ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমে প্রতিবছর ১৫% কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে কর ছিল ৩৫%, আর প্রদান করেছিলেন মাত্র ২০%। 

এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করে রেখেছেন। এ সকল মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়। ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ড. ইউনূসের কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনূস নিজে এবং তার নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তার নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত। 

অস্বচ্ছ ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট, জালিয়াতি এবং অর্থপাচার

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে তিনটি। এই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তিনটি হলো যথাক্রমে:- ১. সাউথ ইস্ট ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১), ২. স্ট্যান্ডার্ট চার্টড ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার- ১৮১২১২৭৪৭০১) এবং ৩. রুপালি ব্যাংক, (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০৪৮৯০১০০০৮০৯৬)। এই তিনটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মধ্যে ২০০০ সালে খোলা সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টটি (অ্যাকাউন্ট নাম্বার-০২১২১০০০২০০৬১) তার মূল ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হিসেবেই প্রতীয়মান হয়েছে। এই অ্যাকাউন্টে ২০০০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১শ’ ১৮ কোটি ২৭ লক্ষ ৭৬ হাজার ৩শ’ ৬৮ টাকা রেমিটেন্স এসেছে। এই রেমিটেন্সের বেশিরভাগ ৪৭ কোটি ৮৯ লাখ ৯৬ হাজার ৬শ’ ৫২ টাকা এসেছে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে। সেই সময়েই একটি রাজনৈতিক দল গঠনেরও প্রয়াস করেছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাহলে কি রাজনৈতিক দল গঠনের জন্য বিদেশি বন্ধুরা ড. ইউনূসকে টাকা দিয়েছিল? বিদেশ থেকে টাকা এনে রাজনৈতিক দল করতে চেয়েছিলেন ইউনূস?  

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ট্যাক্স ফাইল বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, ২০০৩ সালের পরে নোবেল বিজয়ীর তকমাধারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার ট্যাক্স ফাইলে ২০০৫-০৬ কর বছরে তিনি সর্বমোট ৯৭ কোটি ৪ লাখ ৬১ হাজার ১৯১ টাকা রেমিটেন্স প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু ওই সময়ে তার ব্যক্তিগত সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রেমিটেন্স প্রাপ্তির পরিমাণ ১১৫ কোটি ৯৮ লাখ ৯৬ হাজার ২৪ টাকা। অর্থাৎ ওই সময়ে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকার রেমিটেন্স প্রাপ্তির তথ্য সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে গোপন করেছেন। এটি স্পষ্ট অর্থপাচারের দোষে দুষ্ট। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের ডেবিট অ্যানালাইসিসে ওঠে এসেছে, অপ্রদর্শিত অর্থ সমূহের মূল অংশ তিনি সাউথ ইস্ট ব্যাংকের অন্য দু’টি অ্যাকাউন্ট, সাউথ ইস্ট ব্যাংকের ১৫ নম্বর ব্রাঞ্চের ট্র্যাভেল ইন্টারন্যাশনাল লিঃ নামের (অ্যাকাউন্ট নম্বর- ৭৩৩০০০০০৩৩৩৯) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১১ কোটি ১৪ লাখ ৩১ হাজার ৭শ’ ৬৭ টাকা এবং ০০৩৫ নম্বর ব্রাঞ্চের (অ্যাকাউন্ট নম্বর-৯০৩০৩১৬০৯১০) ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২ কোটি ৫২ লাখ টাকা স্থানান্তর করেছেন। অর্থপাচারের জন্যই এভাবে টাকা এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। 

সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর বছরে তিনি তার ব্যক্তিগত ট্যাক্স ফাইলে নিজস্ব সাউথ ইস্ট ব্যাংকে প্রাপ্ত বিপুল পরিমাণ রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১৫ কেটি ১১ লাখ ৩১ হাজার ৪৭ টাকা। কিন্তু তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে প্রদর্শন করেছেন ৯ কোটি ১৪ লাখ ৫৮ হাজার ৪শ’ ৮৯ টাকা। ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট এবং ট্যাক্স বা কর ফাইলের সাথে এখানে পার্থক্য রয়েছে ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ ৫৯ টাকা। ২০০৮-০৯ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১১ কোটি ৮৩ লাখ ১৪ হাজার ৪শ’ ১০ টাকা। অথচ তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১০ কোটি ৪০ লাখ ২৪ হাজার ৮শ’ ৩২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৪২ লাখ ৮৯ হাজার ৫শ’ ৭৮ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০০৯-১০ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ২০ কোটি ৯৫ লাখ ৫১ হাজার ১শ’ ৯৫ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ১৮ কোটি ৯৯ লাখ ২৮ হাজার ৭শ’ ৩১ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৯৬ লাখ ২২ হাজার ৪শ’ ৬৫ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১০-১১ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ১৮ লাখ ৬৫ হাজার ২শ’ ৪ টাকা। অথচ তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৬০ লাখ ৪৪ হাজার ৯২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৫৮ লাখ ২১ হাজার ১শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১১-১২ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৫ কোটি ৯১ লাখ ৫ হাজার ৫শ’ ৮৬ টাকা। আর ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৪ কোটি ৬৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫শ’ ৭২ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ ৬৯ হাজার ১৪ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১২-১৩ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৮ কোটি ৩৭ লাখ ২ হাজার ৭৭ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৬ কোটি ৫০ লাখ ৬৬ হাজার ৬শ’ ৬৫ টাকা। এখানে তিনি ১ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৪শ’ ১২ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৩-১৪ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ১০ কোটি ৫৫ লাখ ৪২ হাজার ৩শ’ ৩৬ টাকা। তিনি তার ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫শ’ ৪৪ টাকা। এখানে তিনি ২ কোটি ৫৬ লাখ ৮২ হাজার ৭শ’ ৯৩ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। ২০১৪-১৫ কর বছরে তিনি রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়েছেন ৭ কোটি ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ২শ’ ৭ টাকা। অথচ ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ করেছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬১ হাজার ৫শ’ ৯৮ টাকা। এখানেও তিনি ১ কোটি ৯৭ লাখ ৯৫ হাজার ৬শ’ ৯ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। 

২০০০ সালের পর থেকে এমন প্রতিটি কর বছরে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশ থেকে রেমিটেন্স প্রাপ্ত হয়ে কোটি কোটি টাকার তথ্য গোপন করে সরকারের কর ফাঁকি দিয়েছেন। ২০০৫-০৬ কর বছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ কর বছর পর্যন্ত সরকারকে কর ফাঁকি দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি ১৮ কোটি ৯৪ লাখ ৩৪ হাজার ৮শ’ ৩৫ টাকা রেমিটেন্সের তথ্য গোপন করেছেন। 

মজার ব্যাপার হলো ২০২০-২১ অর্থবছরে ড. ইউনূস এর ব্যক্তিগত একাউন্ট থেকে প্রায় সব টাকা তুলে ‘ইউনূস ট্রাস্ট’ গঠন করেন। ট্রাস্টের টাকা আয়কর মুক্ত। সে হিসেব থেকেই এমন কান্ড করেন তিনি। কিন্তু এরকম ফান্ডের জন্য ১৫ শতাংশ কর দিতে হয়, এটি তিনি দেননি। এই ট্যাক্স ফাঁকির কারণেই তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। এই মামলায় তিন হেরে যান। এখন মামলাটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। 

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো বিশ্লেষণে ওঠে এসেছে, তার সব ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন সময়ে বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা রেমিটেন্স এসেছে। নির্বাচন মৌসুমগুলোতে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে এই রেমিটেন্সের টাকার প্রবাহ সবচেয়ে বেশি। কিন্তু প্রশ্ন ওঠেছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলোতে নির্বাচনী মৌসুমে বিদেশ থেকে বেশি অর্থ আসার উদ্দেশ্য কি? কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলের জন্য কি তিনি টাকা এনেছেন?

ড. ইউনূস ট্যাক্স ফাঁকি দেয়ার জন্য যে ট্রাস্ট গঠন করেন- তার একটি মাত্র কার্যক্রম দেখা যায়। তা হলো ড. ইউনূস এবং তার পরিবারের সব ব্যয় বহন করা হয় এই ট্রাস্টের টাকায়। এটাও এক ধরনের জালিয়াতি। এই ট্রাস্ট যে ধরনের সমাজ সেবামূলক কার্যক্রম করবে বলে আঙ্গীকার করা হয়েছে তার কিছুই করে না। তাহলে কি কর ফাঁকি দিয়ে বিলাসী জীবন যাপনের জন্যই এই ট্রাস্ট? একজন নোবেল জয়ী ব্যক্তি, কিভাবে রাষ্ট্র এবং জনগণের সংঙ্গে এ রকম প্রতারণা করতে পারেন? রাষ্ট্রের সম্পদ দিয়ে বানাতে পারেন একের পর এক ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তি কিভাবে আয়কর ফাঁকি দেয়ার জন্য করতে পারেন নানা ছল-চাতুরী ও প্রতারণা? এই প্রশ্নের কি উত্তর দেবেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস?


ড. মুহাম্মদ ইউনূস   কর ফাঁকি   অর্থ আত্মসাৎ   জাল জালিয়াতি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইডার এক্সক্লুসিভ

তারেকের সঙ্গে আওয়ামী লীগকে সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ৩০ মে, ২০২৩


Thumbnail

সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন এক নৈশভোজের আমন্ত্রণ আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে তারেক জিয়ার সঙ্গে সমঝোতা করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা প্রস্তাব গ্রহণ করেননি এবং পরবর্তীতে এই প্রক্রিয়াটি আর এগোয়নি। এর মধ্যেই ব্রিটিশ হাইকমিশনারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তিনি বিদায় নেন। নতুন হাইকমিশনার সারাহ কুক এখন দায়িত্ব নিয়েছেন। তবে এই প্রক্রিয়া আর বেশী দুর এগোয়নি। ঘটনাটা ছিল চাঞ্চল্যকর এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর কূটনৈতিক অধ্যায়।

একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে যে ডিকসন আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতাকে তার বাসভবনে নৈশভোজের জন্য আমন্ত্রণ জানান। নৈশভোজের আমন্ত্রণের ব্যাপারটি আওয়ামী লীগ সভাপতিকে অবহিত করেন ওই নেতা। এরপর তিনি নৈশভোজে যান। সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ব্রিটিশ হাইকমিশনার প্রস্তাব দেন তারেক জিয়ার সঙ্গে আওয়ামী লীগের বসা উচিত। রাজনৈতিক সংকট সমাধানে তারেক জিয়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসতে আগ্রহী। 

আচমকা এই রকম একটি প্রস্তাবে হতভম্ব হয়ে যান আওয়ামী লীগের ওই নেতা। তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন যে এই জন্যই কি তাকে ডাকা হয়েছে? ব্রিটিশ হাইকমিশনার তাকে অভয় দেন এবং বলেন যে আমরা রাজনীতির সমাধান চাই। তারেক জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে গেলে অসুবিধা কি? ওই নেতা জিজ্ঞেস করেন যে তারেক জিয়ার সাথে কিভাবে বৈঠক সম্ভব? তিনি তো ফেরারি ফিউজিটিভ এবং পলাতক। এর জবাবে ব্রিটিশ হাইকমিশনার বলেন, তারেক জিয়ার পক্ষ থেকে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এই বৈঠক করবেন। 

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী কেন? কেন মির্জা ফখরুল ইসলাম নয়-এ প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের এই নেতা। তবে এর উত্তরে বলেন যে তারেক জিয়া আমীর খসরু মাহমুদকে বিশ্বাস করেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিশ্বাস করেন না। এ কারণেই তিনি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে নয় আমীর খসরু মাহমুদের সঙ্গে বসতে আগ্রহী। আওয়ামী লীগের ওই নেতা অত্যন্ত মেধাবী এবং চতুর। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়ে দেন যে এই বিষয়টি নীতি নির্ধারণীর সিদ্ধান্তের বিষয়। এটি তার পক্ষে এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত দেয়া সম্ভব নয়। আর এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়গুলোর ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে তার পক্ষে মতামত দেয়া সম্ভব নয়। এ রকম অবস্থা প্রেক্ষিতে বিট্রিশ হাইকমিশনার তাকে সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা বলেন। তবে আওয়ামী লীগের ওই নেতা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন এবং আলোচনা প্রেক্ষিতে তিনি এটিকে নাকচ করে দেন। 

আওয়ামী লীগের দায়িত্ব সূত্র বলছে যে, তারেক জিয়ার সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি তাদের কানেও এসেছে। বিশেষ করে বিট্রিশ হাইকমিশনার একজন ফেরারি পলাতক দন্ডিত আসামীকে কিভাবে আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করার প্রস্তাব দেন এটি তাদের বিস্মিত এবং হতবাক করেছে। কিন্তু যেহেতু আওয়ামী লীগ তাদের একটি অবস্থানে অটল রয়েছে যে কোনো অবস্থাতে ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার দন্ডিত আসামী তারেক জিয়ার সঙ্গে কোনো বৈঠক করবে না। সেজন্য তারা এটিকে খুব একটা আমলে নেয়নি। কিন্তু এই ঘটনা থেকে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যে পশ্চিমা বিশ্বগুলো যারা এক সময় তারেককে সবচেয়ে দুনীর্তিবাজ, ঘৃণিত এবং রাজনীতিতে একটা দুর্বৃত্ত মনে করতো তারাই এখন নানা লবিং এবং নানা স্বার্থের মেরুকরণে তারেক জিয়ার পক্ষে উকালতি শুরু করেছে। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য এক ধরনের অশনিসংকেত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারেক জিয়া   সমঝোতা প্রস্তাব   ব্রিটিশ হাইকমিশনার   রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন