লিট ইনসাইড

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা সম্পাদনায় কবি কামাল চৌধুরী

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ২৪ অগাস্ট, ২০২২


Thumbnail বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা সম্পাদনায় কবি কামাল চৌধুরী

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বাংলাদেশে যতগুলো কবিতার সংকলন প্রকাশিত হয়েছে তার মধ্যে ব্যতিক্রমী ও গবেষকদের জন্য কার্যকর একটি গ্রন্থ ‘মহাকালের তর্জনী: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ (২০২২)। এ গ্রন্থের ‘ভূমিকা’ এবং ‘কবি পরিচিতি’ এ দুটি অংশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপরন্তু বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাংলা কবিদের যে ১৫০টি কবিতা সংকলনটিতে অন্তর্ভুক্ত- সেগুলো বাছাই করার ক্ষেত্রে একজন প্রকৃত কবির অন্তর্দৃষ্টি সম্পাদনায় প্রযুক্ত হয়েছে।

সম্পাদক কবি কামাল চৌধুরী কেবল একজন কবি নন, তিনি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব। সিনিয়র সচিব এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এদেশে প্রকাশিত কবিতার সংকলন সম্পর্কে ভালোই খবর রাখেন। কারণ ৪০০ কবির কবিতা নিয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব থাকাকালে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত সাহিত্যকর্মের সামগ্রিক পরিচয় তিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। সহস্রাধিক কবিতা থেকে ৪০০ কবিতা নির্বাচন কিংবা গল্প-ছড়া-লোককবিতা অথবা প্রবন্ধ বাছাই করতে তাঁকে বেশ পরিশ্রমসাধ্য সময় অতিবাহিত করতে হয়েছে। ফলে শিল্প-সাহিত্যে বঙ্গবন্ধুর প্রতিফলন সম্পর্কে কবি কামাল চৌধুরীর অভিজ্ঞতা তথা জানার পরিধি ব্যাপক। এছাড়া তিনি পঁচাত্তর পরবর্তী বাংলা কবিতার প্রতিবাদী ধারার অন্যতম পথিকৃত। এজন্য ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষ্যে বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের কবিতার সংকলন থেকে তাঁর সম্পাদনায় ভিন্নতর গ্রন্থ প্রকাশিত হবে এটাই স্বাভাবিক।

‘মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ সংকলনে অন্তর্ভুক্ত কবিতাগুলো রাজনৈতিক কবিতাও। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতার পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করে যে ভূমিকাটি কামাল চৌধুরী লিখেছেন তাতে ‘কবিতার স্মরণযোগ্যতার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে’ বলে মতামত ব্যক্ত করে উল্লেখ করেছেন-‘বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে লেখা প্রতিবাদ ও শোকের কবিতাগুলো ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বিধায় নান্দনিকতা ও উৎকর্ষ বিচারের পাশাপাশি প্রকাশের তারিখ ও সময়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।’ অর্থাৎ কবিতার নান্দনিকতা ও উৎকর্ষ এবং প্রকাশের তারিখ ও সময়কে প্রাধান্য দিয়ে কবিতা নির্বাচন করেছেন তিনি। তিনি প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান অবধি কবিতার ছন্দে বীরপুরুষের বন্দনা গানের ইতিহাস অবগত আছেন। এজন্য ভূমিকায় বিশ্বকবিতায় বীর বন্দনার যে রূপরেখা তিনি উপস্থাপন করেছেন তা এযাবৎ এদেশে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্য কোনো কবিতার সংকলনে দেখা যায় নি। তাঁর মতে, ‘বঙ্গবন্ধু বাঙালির ইতিহাসে যুগপৎ বিজয় ও শোকের প্রতীক। ১৯৭১ সালে বাঙালির রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন চূড়ান্ত রূপ পেলেও তার পূর্বেই শেখ মুজিব পরিণত হয়েছিলেন মুক্তির মহানায়কে। আন্দোলন-সংগ্রামের দীর্ঘ পরিক্রমায় আমরা দেখি তরুণ বয়সেই শেখ মুজিবকে নিয়ে বাউল সুফি সাধক কবিরা গান বেঁধেছেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রী হিসেবে সুনামগঞ্জ সফরে গেলে শাহ আবদুল করিম যে গান গেয়েছিলেন তাতে শেখ মুজিবকে ‘জনগণের নয়নতারা’ বলে বন্দনা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে প্রকাশিত গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পঞ্চম খণ্ডে দেখা যায় শেখ মুজিব গোপালগঞ্জ কারাগারে বন্দি থাকাকালে গোপালগঞ্জের তৎকালীন সার্ভে ইন্সপেক্টর জনাব মহিউদ্দিন আহমেদ একটি কবিতা লিখেছেন। ১৯৫৮ সালের ১৭ই অক্টোবর কবিতার লিখে তার কিছু অংশ পত্রযোগে শেখ মুজিবকে পাঠিয়েছিলেন।’ ইতিহাসের এই উপকরণ সংকলনের সূচিতে নেই। কারণ ‘মহাকালের তর্জনী’ শুরু হয়েছে বনফুলের (১৮৯৯-১৯৭৯) ‘সহস্র-সেলাম’ নামে বঙ্গবন্ধু বন্দনাজাত কবিতা দিয়ে। ক্রমান্বয়ে অনুসৃত ও বিন্যস্ত হয়েছেন বর্ষীয়ান থেকে বয়োকনিষ্ঠ কবিবৃন্দ।

তিনি জানিয়েছেন- ‘মুক্তিযুদ্ধকালের কবিতাগুলো যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব বঙ্গবন্ধু নানাভাবে কবিতায় অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছেন।’ তবে ‘মহাকালের তর্জনী’তে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা একেবারেই অপ্রতুল। বরং তিনি আমাদের জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালে বঙ্গবন্ধু ছিলেন পাকিস্তানের কারাগারে। তাঁকে হত্যার জন্য বদ্ধপরিকর ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী। সে প্রেক্ষাপটে লেখা হয় অন্নদাশঙ্কর রায়ের বিখ্যাত কবিতা ‘বঙ্গবন্ধু’। ‘যতকাল রবে পদ্মা যমুনা/গৌরী মেঘনা বহমান ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।/দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা/রক্ত গঙ্গা বহমান,/ তবু নাই ভয় হবে হবে জয়।/ জয় মুজিবুর রহমান।’ এ কবিতাটি ১লা জুলাই ১৯৭১ সালে কলকাতায় প্রকাশিত হয়। তখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কবিতা লেখা হয়েছে।’

সম্পাদকের মতে, ৭ মার্চ -এর ভাষণ পৃথিবীর ইতিহাসে রাজনৈতিক কবিতারও শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। আর পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর অবিনাশী মুজিব চিরকালীন শোকের প্রতীক। যে সব কবিতায় বিজয় ও শোকের প্রতীক বঙ্গবন্ধু, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের প্রতীক বঙ্গবন্ধু সেগুলো এই সংকলনে সংযুক্ত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু হত্যা-পরবর্তী সময়ে এই সম্পাদকের ভেতর-বাইরে কবিতা ও রাজপথে যে প্রতিবাদী প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছিল তারও বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে ‘ভূমিকা’য়। বিশেষত ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতিবাদী কবিতা লেখা শুরু। বঙ্গবন্ধু তখন দেশে নির্বাসিত নাম-তিনি নিষিদ্ধ-তার নাম উচ্চারণ করা যায় না। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের কবিদের হাতে নবজন্ম ঘটল বঙ্গবন্ধুর। তিনি হয়ে উঠলেন পৌরাণিক ও কিংবদন্তির মহানায়কের মতো বিজয় ও শোকের চিরন্তন প্রতীক। যে শোক স্তব্ধ করে দিয়েছিল জাতিকে- সেখানে স্ফুরণ ঘটতে থাকল ক্ষোভ ও প্রতিবাদের। ঘাতককবলিত বাংলাদেশে সেই দুঃসময়ে কবিরাই যেন হয়ে উঠলেন বিবেকের কণ্ঠস্বর। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্বনামে, সরাসরি প্রতিবাদী কবিতা লেখা শুরু হলো। কামাল চৌধুরী লিখেছেন-‘বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে সরাসরি শোক ও প্রতিবাদী কবিতার সন্ধান পাই আমরা ১৯৭৭ সাল থেকে। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন প্রকাশ করতো ‘জয়ধ্বনি’ পত্রিকা। বিখ্যাত মাসিক পত্রিকা ‘সমকাল’ প্রকাশিত হতো সমকাল মুদ্রায়ণ ও সমকাল প্রাইভেট লিমিটেড, ৭, ডিআইটি এভেনিউ, মতিঝিল, ঢাকা-২ থেকে। সমকালের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কবি সিকান্দার আবু জাফর। ১৩৮৬ বঙ্গাব্দে (১৯৭৭ সাল) সমকাল পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন কবি হাসান হাফিজুর রহমান-পরে ইসমাইল মোহাম্মদ (চলচ্চিত্র পরিচালক উদয়ন চৌধুরী) ছিলেন এ পত্রিকার সম্পাদক।’ পঁচাত্তরের পর এই সংকলনগুলো ছিল হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদী ভাষ্য। কবিতায় বঙ্গবন্ধুর মতো এতো বৈচিত্র্যে পৃথিবীর আর কোনো নেতা চিত্রিত হননি।

তাঁকে নিয়ে রচিত কবিতার বিষয় সম্পর্কে সম্পাদক যথার্থই লিখেছেন-‘পরবর্তীকালে বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা বহু সংকলন ও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এসব কবিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এত বহুমাত্রিকভাবে ও নানা বর্ণে উপস্থাপিত হয়েছেন যা এই উপমহাদেশে অন্য কোনো নেতার ক্ষেত্রে ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন দেশের কবিরা অসংখ্য কবিতা রচনা করেছেন। এ ধরনের কবিতার মূল সুর একই থাকে। শুধু স্থানকাল ভেদ এবং আঙ্গিক ও প্রকরণগত ভিন্নতা থাকে। শোকের সঙ্গে যুক্ত হয় ব্যক্তি চরিত্র, অর্জন ও গৌরবের মহিমা। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা কবিতায়ও আমরা দেখি তার জীবন-সংগ্রাম ও আত্মত্যাগ মিলেমিশে একাকার। বিজয়গাথা ও শোকের মিলিত প্রবাহে স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণে কবিতা হয়ে উঠেছে বাঙালির ইতিহাসেরও আকর। শোক ও প্রতিবাদের কবিতা, অর্জন ও গৌরবের কবিতা কখনো উচ্চকণ্ঠ ও তীব্র কিন্তু লক্ষ করি, শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতার অসাধারণ যাত্রা শুরু হয়েছে। এর অনেকগুলোই আজ স্মরণযোগ্য কবিতা হিসেবে পাঠকের কাছে প্রবলভাবে আদৃত। হুইটম্যানের লাইলাকের মতো প্রতীকী ব্যঞ্জনা ও উৎকর্ষপূর্ণ কবিতার উদাহরণও প্রচুর। কবিতায় সেই দুঃসময়ের চিত্রের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়ির চিত্র, তাঁর কারাজীবন, টুঙ্গিপাড়ার সমাধিসৌধ, ৭ই মার্চের অমর ভাষণ, স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, মুক্তিযুদ্ধ, জীবিত কন্যাদ্বয়ের শোক-সর্বোপরি বাঙালি ও বাংলাদেশের আত্মপরিচয়ের নানা অনুষঙ্গ উঠে এসেছে।’ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো আমাদের জাতিসত্তার হাজার বছরেরও দীর্ঘ ইতিহাসের অন্তহীন পরিভ্রমণের রূপক যা আগামী দিনের পাঠকের হৃদয়েও স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে’ কামাল চৌধুরীর বিশ্বাস।

মূলত ‘মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা’ গ্রন্থে নান্দনিকতা, উৎকর্ষ ও স্মরণযোগ্যতার নিরিখে বঙ্গবন্ধুর জীবন, কর্ম ও আত্মত্যাগকে অবলম্বন করে যে বিচিত্ররকমের কবিতা সংকলিত হয়েছে তাতে আবেগ ও স্বতঃস্ফূর্ততা স্বাভাবিকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। ১৫০টি কবিতা শোক ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের পাশাপাশি আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের পূর্ণ মহিমার প্রতিচ্ছবি। সাধারণ পাঠক ও গবেষকদের জন্য প্রয়োজনীয় গ্রন্থটির বহুল প্রচার কাম্য। আর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কবিতা রচনার ইতিহাসকে অনুপুঙ্খ বিশ্লেষণে তুলে ধরেছেন বলে সম্পাদক কবি কামাল চৌধুরীকে অশেষ ধন্যবাদ।

(মহাকালের তর্জনী : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিবেদিত কবিতা, সম্পাদনা কামাল চৌধুরী, প্রকাশক : ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড, ঢাকা, ২০২২, প্রচ্ছদ ও অলংকরণ : সব্যসাচী হাজরা, মূল্য : ৮০০ টাকা।) 

বঙ্গবন্ধু   কবিতা   কবি কামাল চৌধুরী  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

কবিতা

প্রকাশ: ০২:০৩ পিএম, ২৩ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

বিশ্বের সেরা এবং আকর্ষণীয় পাচ মসজিদ

প্রকাশ: ১১:০২ এএম, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail

বিশ্বের এমন পাঁচটি মসজিদ সম্পর্কে জেনে নিন:


১. মসজিদুল হারাম, মক্কা, সৌদি আরব:

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ দেখতে যায়, এমন মসজিদের তালিকায় সবার প্রথমে আছে পবিত্র নগরী মক্কার মসজিদুল হারাম। প্রতিবছর প্রায় ৮০ লাখ মানুষ এই মসজিদে যান। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় মসজিদ। একসঙ্গে ১৫ লাখ মানুষ এখানে প্রবেশ করে ঘুরে দেখতে পারেন। মুসলমানদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র তিন স্থানের একটি এই মসজিদুল হারাম। মুসলমানদের কিবলা পবিত্র কাবাশরিফ এখানেই অবস্থিত।

তবে যে কেউ চাইলেই মসজিদুল হারামে প্রবেশ করতে পারেন না। অমুসলিমদের জন্য মক্কা নগরীতে প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ।


২. শেখ জায়েদ মসজিদ, আবুধাবি, সংযুক্ত আরব আমিরাত:

২০০৭ সালে স্থাপিত এই মসজিদ পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর একটি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ঝাড়বাতি ও সবচেয়ে বড় গালিচাও আছে এই মসজিদে।

আরব আমিরাতে বসবাসকারীদের বেশির ভাগই প্রবাসী, যাঁরা মূলত শ্রমজীবী হিসেবে বিভিন্ন দেশ থেকে সেখানে যান। এই বৈচিত্র্যময়তাই মসজিদটির নকশার মূল ভিত্তি। ব্রিটিশ, ইতালীয় ও আমিরাতি স্থপতিরা মিসর, মরক্কো, তুরস্ক, পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশের মসজিদের নকশা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে শেখ জায়েদ মসজিদের নকশা এঁকেছেন।

প্রতিবছর মসজিদটি দেখতে প্রচুর দর্শনার্থী আসেন। শুধু ২০১৭ সালেই এসেছেন প্রায় ৫৮ লাখ দর্শনার্থী। নামাজের সময় ছাড়া অন্য সময় অমুসলিম দর্শনার্থীরাও মসজিদ ঘুরে দেখতে পারেন। তবে শুক্রবার অমুসলিম দর্শনার্থীদের এই মসজিদে প্রবেশ নিষেধ।


৩. আয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক:

ইউরোপের সবচেয়ে আকর্ষণীয় শহরগুলোর একটি তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল। আর ইস্তাম্বুল বা গোটা ইউরোপের অন্যতম সুন্দর মসজিদ আয়া সোফিয়া। ৩৬০ খ্রিষ্ট-পূর্বাব্দে স্থাপিত এ স্থাপনা শুরুতে মসজিদ ছিল না। ১৪৬৩ সালে সুলতান মেহমেদ এটিকে মসজিদ হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৩৪ সালে এটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে তৎকালীন তুরস্ক সরকার। কিন্তু ২০২০ সালে তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এটিকে আবার নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের কাছে উন্মুক্ত করে দেন। ১৯৮৫ সালে আয়া সোফিয়াকে বিশ্ব ঐতিহ্যর স্বীকৃতি দেয় ইউনেসকো।


৪. আল–আকসা মসজিদ, পূর্ব জেরুজালেম, ইসরায়েল:

মুসলিম স্থাপত্যশৈলীর শুরুর দিককার অন্যতম নিদর্শন জেরুজালেমের আল–আকসা মসজিদ।

বলা হয়ে থাকে, খোলাফায়ে রাশিদিনের অন্যতম খলিফা হজরত উমর (রা.)–র শাসনামলে ৬৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় মসজিদটির নির্মাণকাজ। তবে বর্তমানে আল-আকসা বলতে পুরো চত্বরটাকেই বোঝানো হয়। ‘হারাম আল শরিফ’ নামে পরিচিত এই চত্বরের চার দেয়ালের মধ্যে আছে কিবলি মসজিদ, কুব্বাতুস সাখরা (ডোম অব দ্য রক) ও বুরাক মসজিদ। মূল আল–আকসা বা কিবলি মসজিদ হলো ধূসর সীসার পাতে আচ্ছাদিত গম্বুজওয়ালা একটি স্থাপনা। তবে পর্যটকের কাছে আল–আকসা নামে বেশি প্রসিদ্ধ সোনালি গম্বুজের স্থাপনা কুব্বাতুস সাখরা।

জেরুজালেমের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় উঠে আসে ১৯৮১ সালে। এখানে প্রায় চার লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন । তবে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেমে অবস্থিত আল-আকসা মসজিদ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েলি পুলিশ। কোনো মুসল্লিকে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে ঢুকতে দিচ্ছে না। পবিত্র স্থানটির দায়িত্বে থাকা ইসলামিক ওয়াক্‌ফ বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


৫. দ্বিতীয় হাসান মসজিদ, কাসাব্লাঙ্কা, মরক্কো:

আলজেরিয়ার জামা এল জাযের মসজিদের মিনার সবচেয়ে উঁচু, ৮৭০ ফুট। তারপরেই কাসাব্লাঙ্কার দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার, উচ্চতা ৬৮৯ ফুট। মরক্কোর বাদশাহ দ্বিতীয় হাসানের তত্ত্বাবধানে নির্মিত মসজিদটির নকশাকার ফরাসি স্থপতি মিশেল পিনসু।

আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শৈলান্তরীপের মাথায় মসজিদটির অবস্থান। মেঝের একটা অংশ স্বচ্ছ কাচের বলে আটলান্টিকের নীল পানি দেখতে পান নামাজে যাওয়া মুসল্লিরা। দেয়ালে মার্বেলের চোখধাঁধানো কারুকাজ। ছাদ অপসারণযোগ্য বলে নামাজ পড়তে যাওয়া মুসল্লিরা রাতের আকাশও দেখতে পান।

দ্বিতীয় হাসান মসজিদের মিনার থেকে একটি লেজাররশ্মি মুসলমানদের কিবলা কাবাঘরের দিকে তাক করা। অনন্য স্থাপত্যশৈলীর জন্য জগৎ–খ্যাত এই মসজিদে একসঙ্গে ১ লাখ ৫ হাজার মুসল্লির নামাজ আদায় করার সুবিধা আছে।


মসজিদ   সেরা  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

মুখের ঠিকানা

প্রকাশ: ১২:১৬ পিএম, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

স্পর্শে তুমি

প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪


Thumbnail




মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন