লিট ইনসাইড

আবুল হাসনাৎ মিল্টনের ‘নুসরৎ’ উপন্যাস প্রাত্যহিকের অনুপুঙ্খ সন্ধান

প্রকাশ: ১২:৩৬ পিএম, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩


Thumbnail

“এবারকার গল্প বানাতে হবে এ-যুগের কারখানা-ঘরে।” চোখের বালি-র সূচনায় বলেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। আবুল হাসনাৎ মিল্টনের পাঞ্জেরী পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত উপন্যাস পড়তে গিয়ে একথা বলা চলে যে  ‘যুগের কারখানা-ঘর’ থেকেই এর সৃষ্টি। সময়, তার গায়ে লেপ্টে থাকা সামাজিক, ব্যক্তিগত ও চিন্তন জগতের ক্ষত আর ভাঙনের গল্প নিয়েই লেখকের এই সৃষ্টি। ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করা হয়।  ৬ এপ্রিল ২০১৯ সকালে অধ্যক্ষ তার অনুসারীদের হত্যার প্ররোচণা দিয়ে নির্দেশনা প্রদান করে।  নুসরাত এর ভাষ্য মতে  মাদ্রাসার তিনতলায় তাকে নিয়ে গিয়ে হাত মোজা, পা মোজাসহ বোরকা পরিহিত ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাজি না হওয়ায় তারা নুসরাতের মুখ চেপে ধরে ও ওড়না দিয়ে নুসরাতের পা বাঁধে, তারপরে কেরোসিন তেল গ্লাসে করে নিয়ে নুসরাতের শরীরে ঢেলে নুসরতের শরীরে আগুন দেয়। নুসরাতের শরীরের ৮০% শতাংশই ঝলসে গিয়েছিল। ১০ এপ্রিল ২০১৯ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাত এর মৃত্যু ঘটে। এই ঘটনার ক্ষত এখনও মোছে নি বাংলাদেশের বুক থেকে। এই প্রেক্ষিত লেখক বেছে নিয়েছেন তার উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হিসেবে। যদিও তিনি প্রথমেই বিধিসম্মত সতর্কীকরণ উল্লেখ করেছেন - এই উপন্যাসের সব চরিত্র কাল্পনিক। কিন্তু উৎসর্গপত্রে লিখেছেন - অন্যায়ের বিরূদ্ধে আমৃত্যু প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফিকে।

এবার আসি উপন্যাসে। “তিনি শুধু কাঁদাতে পারেন, ভাবাতে পারেন না”— শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে এই নালিশ তখনকার পাঠকদের ছিল। কিন্তু চোখের জলে ভেসে সাহিত্যের আঙিনায় পা রাখা ঔপন্যাসিকের সংখ্যা কম নয়। এই পরিচিত পথে পাঠক হেঁটে চলেছে বহু প্রজন্ম। কিন্তু আবুল হাসনাৎ মিল্টন নতুন শিক্ষার অভিঘাতে সমাজ-সংসারে আলোড়নের ছবি এঁকে একদিকে পাঠককে কাঁদিয়েছেন, আবার তথাকথিত এলিটদের ভাবিয়েছেন। তাঁর লিখন, শিল্পের সঙ্গে রাজনৈতিক সচেতনতার মেলবন্ধনের যথার্থ উদাহরণ। সত্যের উদ্ভাস সেই লিখনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। অত্যন্ত গতিময় এই উপন্যাসের এক উজ্জ্বল দিক হল এর সংলাপ। এই সংলাপই পাঠকের সামনে মাদ্রাসা নামক শিক্ষাক্ষেত্রের যে সাংগঠনিক তথ্য তুলে ধরে, তার সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষেরই সম্যক পরিচয় নেই। গল্পের প্রেক্ষিত যেহেতু বর্ণনা করেছি তাই মূল গল্প পাঠক বইটি কিনে পড়ে নেবেন আশা রাখি। কিন্তু কয়েকটি মুন্সীয়ানার কথা না বললেই নয়। তেরো অধ্যায়ে বিভক্ত উপন্যাসের অধ্যায়কে তিনি উপবিভাজিত করেছেন সেটা উপন্যাস লেখায় পাকা হাত ছাড়া সম্ভব নয়। একই সাথে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে তার উপন্যাসে। তিনি লিখছেন – ‘বাংলাদেশ সরকার তাদের ঠাঁই দিয়েছে। এ জন্য তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কাছে মায়ের মতন।‘ রাজনৈতিক মতের অনুপ্রবেশ যে কোন উপন্যাসকে একদেশদর্শী করে তোলে। এখানে সাবধানতা নেওয়া ভাল। যদিও তিনি সরকারীদলের স্থানীয় নেতার সাথে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈষয়িক আঁতাতের কথা নিপুনভাবে তুলে ধরেছেন। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী রাজনৈতিক আদর্শের দুজনের মানুষের স্বার্থের ঐক্য বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবতাও। লেখক হিসেবে তার এই নির্মোহ অবস্থান প্রশংসনীয়। সাংবাদিকের আদর্শ ভূমিকার কথা সোচ্চারে বর্ণনা করেছেন লেখক। এত বজ্জাতি, বাস্তবতা এবং গদ্যশৈলীর জাদু নিয়ে শেষ অবধি এ এক চমৎকার উপন্যাস। মুসলমান সমাজ ও জীবনের বৈষয়িক, আধ্যাত্মিক ও একই সঙ্গে প্রাত্যহিকের অনুপুঙ্খ সন্ধান এই উপন্যাস। দুই বাংলার কথা মাথায় রেখেই দাবি করা যায়, এমন উপন্যাস দুর্লভ। মিল্টন প্রধানত কবি, তবে তাঁর গদ্যের হাতও দুর্দান্ত। সেটাও পুনর্বার প্রতিফলিত হল ‘নুসরাত’ উপন্যাসে। বইটা পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা ভার। যেমন গল্পের গাঁথুনি, তেমনি ভাষার প্রাঞ্জলতায় সমৃদ্ধ এবারের বইমেলার অন্যতম উপন্যাস ‘নুসরাত’।

আমি ‘নুসরাত’ উপন্যাসটির বহুল প্রচার কামনা করছি।



মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

ভাষাবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক আর নেই

প্রকাশ: ১১:৩৫ এএম, ২৫ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

একুশে পদক বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষাবিদ, ভাষাবিদ, গবেষক প্রাবন্ধিক অধ্যাপক . মাহবুবুল হক মারা গেছেন। তিনি দীর্ঘদিন হৃদরোগ কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।

বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাতে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মরদেহ রাজধানীর ভাটারার বাসায় আনা হবে। এরপর জানাজা শেষে নেয়া হবে চট্টগ্রামে। সেখানেই তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।

. মাহবুবুল হক প্রবন্ধে অবদানের জন্য ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। ছাড়া গবেষণায় অবদান রাখায় ২০১৯ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন।

. মাহবুবুল হক ১৯৪৮ সালের নভেম্বর ফরিদপুরের মধুখালিতে জন্মগ্রহণ করেন। এরপর বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৯ সালে বাংলা ভাষা সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান), ১৯৭০ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর এবং ১৯৯৭ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

এরপর চট্টগ্রামের রাঙ্গুনীয়া কলেজ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করেন।

তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে: বাংলা বানানের নিয়ম, রবীন্দ্র সাহিত্য রবীন্দ্র ভাবনা, ইতিহাস সাহিত্য, সংস্কৃতি লোক সংস্কৃতি এবং বাংলার লোক সাহিত্য: সমাজ সংস্কৃতি প্রভৃতি।


ভাষাবিদ   অধ্যাপক   মাহবুবুল হক  


মন্তব্য করুন


লিট ইনসাইড

চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণা

প্রকাশ: ১১:৫০ এএম, ১৩ জুলাই, ২০২৪


Thumbnail

সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ছোটকাগজ সম্পাদনায় বিশেষ অবদান রাখায় চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার পেলেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ক ছোটকাগজ ‘হৃদয়ে চলনথ এর সম্পাদক কবি হাদিউল হৃদয়। হাদিউল হৃদয় তাড়াশ প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকার তাড়াশ উপজেলা প্রতিনিধি। 

 

শুক্রবার (১২ জুলাই') সন্ধ্যা সা‌ড়ে ৬টায় উপ‌জেলা পাব‌লিক লাই‌ব্রে‌রীর হল রু‌মে আনুষ্ঠানিকভাবে কবি কণ্ঠে কবিতা সংগঠন থেকে প্রধান অতিথি তাড়াশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. মনিরুজ্জামান মনি এ পুরস্কার স্মারক ও সনদপত্র তুলে দেন।

 

সা‌বিনা ইয়াস‌মিন বিনুর সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, সংগঠ‌নের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হো‌সেন মল্লিকী। আলোচনা সভায় সংগঠনের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক রাজুর সভাপ‌তিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, তাড়াশ পৌরসভার কাউ‌ন্সিলর রোখসানা খাতুন রুপা, পাব‌লিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক মোজ্জামেল হক মাসুদ, সা‌বেক সাধারণ সম্পাদক হোস‌নেয়ারা নাসরিন দোলন, যুগ্ম সম্পাদক লুৎফর রহমান, উপ‌জেলা প্রেসক্লা‌বের সাধারণ সম্পাদক ‌সোহেল রানা সোহাগ, প্রভাষক আব্দুল কাদের, প্রভাষক আব্দুল মতিন প্রমূখ।

উল্লেখ্য, হাদিউল হৃদয় বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিল চলনবিলের প্রাণকেন্দ্র তাড়াশ উপজেলার তালম ইউনিয়নের পল্লীর নিভূত অজোপাড়া পাড়িল গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মধ্যবিত্ত্ব মুসলিম পরিবারে জন্ম। তিনি একজন সাংবাদিক ও সাহিত্য কর্মী। মূলতঃ কবিতা দিয়ে শুরু করলেও প্রবন্ধ, মুক্তগদ্য ও ছড়া লিখেন। তার লেখা লিটলম্যাগ ও দেশের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়ে আসছে। তার সম্পাদনা হৃদয়ে চলন ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২টি সংখ্যা প্রকাশ হয়েছে। সম্পাদনার স্বীকৃতিস্বরূপ এর আগেও বিভিন্ন সংগঠন থেকে পেয়েছেন সম্মাননা ও পুরস্কার।'


চলনবিল সাহিত্য পুরস্কার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন