“এবারকার গল্প বানাতে হবে এ-যুগের কারখানা-ঘরে।”
চোখের বালি-র সূচনায় বলেছিলেন
রবীন্দ্রনাথ। আবুল হাসনাৎ মিল্টনের পাঞ্জেরী পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত উপন্যাস পড়তে গিয়ে একথা বলা চলে যে ‘যুগের
কারখানা-ঘর’
থেকেই এর সৃষ্টি। সময়,
তার গায়ে লেপ্টে থাকা সামাজিক, ব্যক্তিগত ও চিন্তন জগতের
ক্ষত আর ভাঙনের গল্প
নিয়েই লেখকের এই সৃষ্টি। ফেনীর
সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ করেছিলেন। ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ
সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে
শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে এবং এই পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ
এর বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করা হয়। ৬
এপ্রিল ২০১৯ সকালে অধ্যক্ষ তার অনুসারীদের হত্যার প্ররোচণা দিয়ে নির্দেশনা প্রদান করে। নুসরাত
এর ভাষ্য মতে মাদ্রাসার
তিনতলায় তাকে নিয়ে গিয়ে হাত মোজা, পা মোজাসহ বোরকা
পরিহিত ৪-৫ জন
তাকে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে
নিতে চাপ দেয়। রাজি না হওয়ায় তারা
নুসরাতের মুখ চেপে ধরে ও ওড়না দিয়ে
নুসরাতের পা বাঁধে, তারপরে
কেরোসিন তেল গ্লাসে করে নিয়ে নুসরাতের শরীরে ঢেলে নুসরতের শরীরে আগুন দেয়। নুসরাতের শরীরের ৮০% শতাংশই ঝলসে গিয়েছিল। ১০ এপ্রিল ২০১৯
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুসরাত এর মৃত্যু ঘটে।
এই ঘটনার ক্ষত এখনও মোছে নি বাংলাদেশের বুক
থেকে। এই প্রেক্ষিত লেখক
বেছে নিয়েছেন তার উপন্যাসের প্রেক্ষাপট হিসেবে। যদিও তিনি প্রথমেই বিধিসম্মত সতর্কীকরণ উল্লেখ করেছেন - এই উপন্যাসের সব
চরিত্র কাল্পনিক। কিন্তু উৎসর্গপত্রে লিখেছেন - অন্যায়ের বিরূদ্ধে আমৃত্যু প্রতিবাদী নুসরাত জাহান রাফিকে।
এবার আসি উপন্যাসে। “তিনি শুধু কাঁদাতে পারেন, ভাবাতে পারেন না”— শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে এই নালিশ তখনকার পাঠকদের ছিল। কিন্তু চোখের জলে ভেসে সাহিত্যের আঙিনায় পা রাখা ঔপন্যাসিকের সংখ্যা কম নয়। এই পরিচিত পথে পাঠক হেঁটে চলেছে বহু প্রজন্ম। কিন্তু আবুল হাসনাৎ মিল্টন নতুন শিক্ষার অভিঘাতে সমাজ-সংসারে আলোড়নের ছবি এঁকে একদিকে পাঠককে কাঁদিয়েছেন, আবার তথাকথিত এলিটদের ভাবিয়েছেন। তাঁর লিখন, শিল্পের সঙ্গে রাজনৈতিক সচেতনতার মেলবন্ধনের যথার্থ উদাহরণ। সত্যের উদ্ভাস সেই লিখনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। অত্যন্ত গতিময় এই উপন্যাসের এক উজ্জ্বল দিক হল এর সংলাপ। এই সংলাপই পাঠকের সামনে মাদ্রাসা নামক শিক্ষাক্ষেত্রের যে সাংগঠনিক তথ্য তুলে ধরে, তার সঙ্গে বেশির ভাগ মানুষেরই সম্যক পরিচয় নেই। গল্পের প্রেক্ষিত যেহেতু বর্ণনা করেছি তাই মূল গল্প পাঠক বইটি কিনে পড়ে নেবেন আশা রাখি। কিন্তু কয়েকটি মুন্সীয়ানার কথা না বললেই নয়। তেরো অধ্যায়ে বিভক্ত উপন্যাসের অধ্যায়কে তিনি উপবিভাজিত করেছেন সেটা উপন্যাস লেখায় পাকা হাত ছাড়া সম্ভব নয়। একই সাথে তার রাজনৈতিক বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে তার উপন্যাসে। তিনি লিখছেন – ‘বাংলাদেশ সরকার তাদের ঠাঁই দিয়েছে। এ জন্য তারা সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কাছে মায়ের মতন।‘ রাজনৈতিক মতের অনুপ্রবেশ যে কোন উপন্যাসকে একদেশদর্শী করে তোলে। এখানে সাবধানতা নেওয়া ভাল। যদিও তিনি সরকারীদলের স্থানীয় নেতার সাথে মাদ্রাসা অধ্যক্ষের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বৈষয়িক আঁতাতের কথা নিপুনভাবে তুলে ধরেছেন। সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী রাজনৈতিক আদর্শের দুজনের মানুষের স্বার্থের ঐক্য বর্তমান বাংলাদেশের বাস্তবতাও। লেখক হিসেবে তার এই নির্মোহ অবস্থান প্রশংসনীয়। সাংবাদিকের আদর্শ ভূমিকার কথা সোচ্চারে বর্ণনা করেছেন লেখক। এত বজ্জাতি, বাস্তবতা এবং গদ্যশৈলীর জাদু নিয়ে শেষ অবধি এ এক চমৎকার উপন্যাস। মুসলমান সমাজ ও জীবনের বৈষয়িক, আধ্যাত্মিক ও একই সঙ্গে প্রাত্যহিকের অনুপুঙ্খ সন্ধান এই উপন্যাস। দুই বাংলার কথা মাথায় রেখেই দাবি করা যায়, এমন উপন্যাস দুর্লভ। মিল্টন প্রধানত কবি, তবে তাঁর গদ্যের হাতও দুর্দান্ত। সেটাও পুনর্বার প্রতিফলিত হল ‘নুসরাত’ উপন্যাসে। বইটা পড়া শুরু করলে শেষ না করে ওঠা ভার। যেমন গল্পের গাঁথুনি, তেমনি ভাষার প্রাঞ্জলতায় সমৃদ্ধ এবারের বইমেলার অন্যতম উপন্যাস ‘নুসরাত’।
আমি ‘নুসরাত’ উপন্যাসটির বহুল প্রচার কামনা করছি।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ওয়াসীম পলাশের গল্পগ্রন্থ জানালাবিহীন ঘর। বইটি প্রকাশ করেছে কাগজা প্রকাশন। ১০ টি গল্প নিয়ে সাজানো হয়েছে এই বইটি। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী হাজরা। মূল্য ২৩০ টাকা।
ওয়াসীম পলাশ
বইটি সম্পর্কে বলেন, "আসলে আমরা তো একটা বদ্ধ সময়ের মধ্যে আছি। মাঝে মাঝে আমাদের
দম বন্ধ হয়ে আসে, নি:শ্বাস নিতে পারি না। এখানে মূলত রাজনৈতিক-সামাজিক যে সংকট আমাদের
রয়েছে, ভূবনবিহীন মানুষের সংকট, সর্বোপরি বৈশ্বিক সংকটই আমি উঠিয়ে আনার চেষ্টা করেছি।
এই যে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বা অগ্রগিত, এর কারণেই অনেক মানুষ প্রান্তিক হয়ে গেছে, বিপন্ন
হয়ে গেছে। পৃথিবীজুড়ে এই সংকটাপন্ন মানুষগুলো একই দুর্দশায় আবদ্ধ। সেই কথাগুলোই আমি
আমার গল্পে বলতে চেয়েছি।"
বইটির পাঠকপ্রিয়তা
নিয়ে লেখক বলেন, "আমার বইটি মেলায়ায় একটু দেরিতে এসেছে। গত সপ্তাহে এসেছে৷ বইটি।
এই এক সপ্তাহেই বইটিকে পাঠক যেভাবে গ্রহণ করেছে তাতে আমি আপ্লুত।"
লেখক ওয়াসীম পলাশ পেশায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষক। বর্তমানে তিনি সেপিয়েঞ্জা ইউনিভার্সিটি অফ রোমের রিসার্চ স্কলার।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বইমেলার
শেষ সময়ে বেচা-বিক্রিতে হাসি ফুটেছে প্রকাশকদের মুখে। ২১ শে ফেব্রুয়ারি
পর্যন্ত ব্যাবসায়িক হিসেবে বইমেলা জমেনি বলে শোনা যাচ্ছিলো। তবে মেলার ২৬ তম দিনে
সার্বিক বেচা-বিক্রিতে সন্তুষ্ট প্রকাশকরা।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এর শুরু থেকে ২১ এ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলায় বিকি-কিনি নিয়ে অসন্তোষ ছিলো প্রকাশকদের। বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে কাগজ থেকে শুরু করে প্রকাশনা খাতের সাথে যুক্ত সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক শতাংশ। একইসাথে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে জনসাধারণের। সব মিলয়ে এবছর বইমেলায় বইয়ের বাজার কিছুটা মন্দাই যাচ্ছিলো। তবে মেলা শেষের সময়ে সেই মন্দা কাটিয়ে বই কিনছেন পাঠকরা।
বইমেলার সার্বিক বিক্রি নিয়ে সন্তোষ জানিয়ে ছাপাখানার ভূত প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত রেদওয়ানুল ইসলাম বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, "আমাদের বিক্রি এবার অনেক ভালো। শুরুর দিকে কিছুটা কম হলেও গত এক সপ্তাহে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমাদের একটি বই এর গত কয়েকদিন এতো চাহিদা ছিলো যে বই শেষ হয়ে যাওয়ায় পাঠককে খালি হাতে ফিরতে হয়েছে।"
একই সুরে গলা মিলিয়ে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তা মোহাম্মাদ হায়দার হোসেন বলেন, "এবার বইমেলার অবস্থা গত বছরগুলোর তুলনায় ভালো। আমাদের বিক্রির যে প্রত্যাশা ছিলো তা আমরা পূরণ করতে পেরেছি। আশা করি সামনের দুইদিনও অনেক ভালো যাবে।"
শুধু প্রকাশক নন, শেষ সপ্তাহে বইমেলার এ পালটে যাওয়া চিত্রে খুশী লেখকরাও। দেরিতে আসলেও বইয়ের আশানুরূপ বিক্রি হয়েছে বলেই জানিয়েছেন লেখক মহসিন পলাশ। তিনি বলেন, "আমার বইটা বইমেলায় একটু দেরিতেই এসেছে। গত সপ্তাহে এসেছে বইটি। তবে এই এক সপ্তাহেই যে পরিমাণ সাড়া পেয়েছি তাতে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আশা করি সামনের দুইদিনও একইভাবে সাড়া পাবো।"
বইমেলার শেষ দু'দিনের বিক্রি প্রত্যাশাকে ছাড়িয়ে যাবে এমনই আশা করছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা।
মন্তব্য করুন
এবারের
অমর একুশে বইমেলায় শাহরিয়ার সোহাগের উপন্যাস ‘প্রাক্তন’ প্রকাশিত হয়েছে। এটি একটি রোম্যান্টিক উপন্যাস। এই বইটি লেখকের
প্রকাশিত ১১ তম বই।
‘প্রাক্তন’ বইটি প্রকাশ করেছে শোভা প্রকাশ, প্যাভিলিয়ন ১১। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন প্রখ্যাত শিল্পী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া। মূল্য ২২৫ টাকা।
শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, ‘বইটির নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটি রোম্যান্টিক ঘরানার একটি উপন্যাস। উপন্যাসটিতে আমি বলতে চেয়েছি যে আমাদের জীবনে ভালোবাসার মানুষ থাকে। কিন্তু দেখা যায় কালের আবর্তনে সেই মানুষটির সাথে আমাদের যোগাযোগ থাকে না, একটি দূরত্ব তৈরী হয়ে যায়। অনেকগুলো বছর যদি দূরত্ব তৈরী হয়ে যাওয়া ঐ ভালোবাসার মানুষটির সাথে হঠাৎ দেখা হয় তাহলে ঐ সময়টাতে আমরা কী অনুভব করি। ঐ দিনটি আসলে আমাদের কেমন যায়। বর্তমানে থেকেও অতীতের সেই স্মৃতিচারণ, বর্তমান সময়ের ব্যস্ততার সাথে অতীতের যে মিশেল সেটিই ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি এই উপন্যাসে। এই উপন্যাসে আসলে একটি দিনের গল্প বলা হয়েছে। অনেক বছর দুজন ভালোবাসার মানুষের দেখা হয়েছে, তাঁদের ঐ দিনটি আসলে কেমন যেতে পারে সেটিই বলতে চেয়েছি আমি।‘
তিনি আরও যোগ করেন, ‘এটি কিন্তু আমার নিজের জীবনের গল্প নয়। আমি একজন পেশাদার লেখক। মানুষের অনুভূতি নিয়েই লিখি। সেই জায়গা থেকেই লেখা।‘
টিভি নাটক লেখা, টিভি ও মঞ্চতে অভিনয় এবং ফটোগ্রাফিতে ব্যস্ত সময় পার করেন সময়ের এই ব্যস্ততম লেখক। সামাজিক দায়বন্ধতা থেকে বেশকিছু সামাজিক সংগঠনের সাথেও যুক্ত আছেন এই লেখক
মন্তব্য করুন
‘চেতনায় ঐতিহ্য’ শ্লোগানকে ধারণ করে ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ পথ চলছে একযুগ ধরে। দেশ প্রতিবছর নির্বাচিত বই প্রকাশ করে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় অমর একুশে বইমেলায় (২০২৩) ‘দেশ পাবলিকেশন্স’ প্রকাশ করেছে ৫৭টি নতুন বই। প্রকাশিত বইয়ের মধ্যে বিক্রির শীর্ষে থাকা ‘দেশের সেরা ১০ বই’ শিরোনামে একটি তালিকা প্রকাশ করেছে দেশ পাবলিকেশন্স...
অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২৩ এর শুরু থেকে ২১ এ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বইমেলায় বিকি-কিনি নিয়ে অসন্তোষ ছিলো প্রকাশকদের। বৈশ্বিক সংকটের এ সময়ে কাগজ থেকে শুরু করে প্রকাশনা খাতের সাথে যুক্ত সবকিছুর মূল্য বেড়ে যাওয়ায় গত বছরগুলোর তুলনায় এবছর বইয়ের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক শতাংশ। একইসাথে ক্রয়ক্ষমতা কমেছে জনসাধারণের। সব মিলয়ে এবছর বইমেলায় বইয়ের বাজার কিছুটা মন্দাই যাচ্ছিলো। তবে মেলা শেষের সময়ে সেই মন্দা কাটিয়ে বই কিনছেন পাঠকরা।