ইনসাইড থট

ওমিক্রন আর টিকা নিয়ে আবারও কিছু কথা

প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৮ জানুয়ারী, ২০২২


Thumbnail ওমিক্রন আর টিকা নিয়ে আবারও কিছু কথা

এই সেইদিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনগণকে হুমকি দিয়ে বলেন যে তারা যদি স্বাস্থ্যের পরামর্শ না মানে তবে তিনি লকডাউন আরোপ করবেন। একইসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন এবং স্কুল বন্ধ হবে না বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিনের পরিবর্তিত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বার বার জনগণকে ভ্যাকসিন নিতে, বাইরে থাকাকালীন মাস্ক পরতে এবং রাজনৈতিক সমাবেশ সহ জনসমাগম এড়াতে অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে বিরোধী দলের নেতারা বলছেন বাইরে গণসমাবেশ ঠিক আছে, সরকার কেন তাদের বাধা দিচ্ছে! লোকেরা বলছে মাস্ক বাড়িতে ভুলে গেছে। রেস্তোরাঁর মালিক বলছেন কিভাবে আমি কোভিড ভ্যাকসিন পাস চাইতে পারি, তারা এই এলাকার লোক। দিনমজুররা বলছে বারবার লকডাউন দিলে আমি বাঁচব কী করে? শিক্ষার্থীরা বলছে, আমরা স্কুলে যেতে চাই এবং পড়াশোনার সময় বন্ধুদের সাথে দেখা করতে চাই। এটাই হল বাংলাদেশের বাস্তবতা।

যখন ওমিক্রন কমিউনিটি ট্রান্সমিশনে দৃঢ় এবং গভীরভাবে তার পা বাংলাদেশের ফেলেছে, দেশের প্রায় প্রতিটি কোণায় ভাইরাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে, যেমন ডেল্টা ওয়েভের সময় যা ঘটেছিল, সেই অবস্থায় এখন আর লকডাউন এবং স্কুল বন্ধ করে সংক্রমণ বন্ধ করার কোন সমাধান নয় বরং একটি ব্যর্থ কৌশল বলে আমি মনে করি। আজ ৬৬৭৬ জন নতুন সংক্রামিত লোকের মধ্যে শুধু মাএ ঢাকায় ৪,৯৯২ জন নতুন লোক সংক্রামিত হয়েছে। লকডাউন দিলে আগের মত ঢাকা থেকে জনাকীর্ণ ফ্যাশনে নগরবাসী জনগণ অন্যান্য জেলা ও গ্রামে ছুটে যাবে এবং ডেল্টার মত ওমিক্রন ভাইরাসকেও আরও ছড়িয়ে দেবে। লকডাউন, আগের মতোও কার্যকর বা প্রয়োগযোগ্য হবে না কিন্তু আমাদের অর্থনীতিকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। যখন নিম্ন উদ্যোগের এবং ছোট ব্যবসার মানুষ কেবল নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, আবারও লোকডাউন জীবিকাকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করবে, আরও অর্থনৈতিক দুর্ভোগ এবং অতিরিক্ত মৃত্যুর কারণ হবে। লোকডাউন রোগের সংক্রমণ এবং বিস্তার বন্ধ করবে না। ইউরোপের মতো অনেক দেশে হাজার হাজার মানুষ যেকোনো ধরনের লকডাউন বা বন্ধের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে। এমনকি গতকালও হল্যান্ডে হাজার হাজার মানুষ লকডাউনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছিল, তারা বলছে তাদের জন্য এখন যথেষ্ট হয়েছে, তারা মানসিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিকভাবে আর সহ্য করতে পারছে না। বাংলাদেশেও একই ঘটনা ঘটতে পারে, আমরা কি তার জন্য প্রস্তুত?

অন্যদিকে, স্কুল বন্ধ হলেও সংক্রমণ বন্ধ হবে না, কারণ শিক্ষার্থীরা বাড়ির বয়স্ক ব্যক্তিদের দ্বারা সংক্রামিত হবে যেহেতু বড়রা অবাধে চলাফেরা করছে আর আক্রান্ত হচ্ছে অথবা শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হবে তাদের স্কুলে না যাবার কারণে সময় কাটানোর জন্য বাধাহীন সামাজিকীকরণ এবং বাইরে জমায়েতে মেলামেশার জন্য। এটি শিক্ষার্থীদের মানসিক, সামাজিকভাবে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তাদের নিজেদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার ও অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নষ্ট করার সাথে সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভবিষ্যতকে নষ্ট করবে।

হ্যাঁ, প্রতিদিন সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, আজ তা বেড়ে ৬৬৭৬ এর উপরে পৌঁছেছে, সংক্রমণের হার ২০% এর বেশি বেড়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা ৭জন থেকে বেড়ে ১০জন হয়েছে। আরও বেশি লোক হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে কিন্তু ২০২১ সালের জুলাইয়ে ডেল্টা তরঙ্গের তুলনায়, আমরা এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছি। যাদের হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার পরছে তাদের গুরুতর যত্নের প্রয়োজন খুবই কম, বরং একদুইদিন পর বাড়িতে বসে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে বলা হচ্ছে। মৃত্যুর হার খুবই ন্যূনতম। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আধিকারিকরা আজ বলেছেন যে কোভিডের কারণে মৃত্যুর ৮০% ভাগ তারাই যাদের টিকা দেওয়া হয়নি এবং বাকিরা আরো কিছু অন্যান্য রোগে ভুগছিলেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশে এখন Merck এবং Pfizer-এর অ্যান্টি-কোভিড চিকিৎসা খুব সহজে পাওয়া যায় এবং বাড়িতে নেওয়া যেতে পারে, যার ফলে হাসপাতালে যত্নের প্রয়োজন এবং মৃত্যু হ্রাস করছে। আমি আবার বলব আমরা এখনও ভালো অবস্থায় আছি। দুর্ভাগ্যবশত, এমনকি আমাদের সেরা প্রচেষ্টার সাথেও অল্প কিছু মৃত্যু ঘটছে এবং ঘটবে। কোনো দেশ, কোনো সমাজই প্রতিটি মৃত্যু ঠেকাতে পারছে না, পারবেও না। অতএব, লকডাউন বা স্কুল বন্ধের পরিবর্তে, বাংলাদেশের জন্য তিনটি জিনিস রয়েছে যা কিছু বাড়তি প্রচেষ্টায় প্রয়োগ করা সম্ভব এবং তা অনুসরণ করলে কোভিড-১৯ ভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাস, বিশেষ করে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অনেক অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে। কোভিড-১৯ ভাইরাস আমাদের সাথে আছে এবং আসন্ন ভবিষ্যতে কিছু সময়ের জন্য একই বা অন্য আকারে/রূপে আমাদের সাথে থাকবে। তার জন্য প্রস্তুত হয়া উচিত (লোক ডাউন বা স্কুল বন্ধ করা নয়): মাএ তিনটি বিষয় আমাদের আরো ভাল, টেকসই আর কাঠর ব্যবস্থা নিতে হবে:

১। টিকা: প্রথম, দ্বিতীয় এবং বুস্টার ডোজ। যতদূর সম্ভব, যত দ্রুত সম্ভব প্রতিদিন আরও বেশি মানুষকে টিকা দিন। আমি গর্ব করে বলতে পারি হ্যাঁ, আমরা এটা করতে পারি।
২। বাইরে, কর্মক্ষেত্রে মাস্ক ব্যবহার করা
৩। বেশী ভিড়ের বাহিরের আর ভিতরের গণ জমায়েত এড়ানো

ভ্যাকসিন সম্পর্কে কথা বলা যাক। আমরা অত্যন্ত ভাগ্যবান, একজন দূরদর্শী নেতা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোভিড মোকাবেলায় বর্তমানের জ্ঞান এবং প্রমাণ সহ আমাদের নেতৃত্ব প্রদান করছেন।তার নেতৃত্বের এবং প্রতিদিনের কোভিড পরিস্থিতি তদারকি করার কারণে, সময়মত সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া, লোকদের টিকা নেওয়ার জন্য অনুরোধ করা, মাস্ক ব্যবহার করা এবং গণসমাবেশ এড়ানোর পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি আমাদের পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন মজুদ থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার তদারকি করছেন। অতএব, আমরা ভাগ্যবান আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন রয়েছে এবং আরও ভ্যাকসিন আসছে। আমেরিকা সহ অন্যান্য বন্ধু দেশ এবং সংস্থা ভ্যাকসিন পাঠাচ্ছে। তাই ভ্যাকসিনের সমস্যা নেই বা হবে না। আমাদের টিকা দেওয়া আরো সম্প্রসারিত করার অসুবিধা গুলো কাটিয়ে উঠতে হবে। আত্মনির্ভরশীল এবং পর্যাপ্ত হওয়ার জন্য আমাদের ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে এবং দেশের উন্নয়ন ব্যাঙ্গোভ্যাক্সকে সফল করতে বা অন্যদের দ্বারা উদ্ভাবন করার লক্ষে সমস্ত সহায়তা প্রদান করতে হবে।

জনাব মিনহাজুল আবেদিন এবং অন্যরা একটি গবেষণা চালিয়ে দেখেছেন যে বাংলাদেশের প্রায় ৭৫% পুরুষ এবং মহিলা কোভিডের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন পেতে ইচ্ছুক যদি টিকা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। ন্যূনতম ফি সহ ৪৬.৫% ভ্যাকসিন পাওয়ার অভিপ্রায় দেখিয়েছে। শুধুমাত্র ৮.৫% জন টিকা দিতে অনিচ্ছুক ছিল। বয়স্ক, গ্রামীণ, আধা-শহুরে, বস্তি সম্প্রদায়, কৃষক, দিনমজুর, গৃহকর্মী, স্বল্প শিক্ষিত মানুষ যারা অনিচ্ছুক তাদের মধ্যে রয়েছে। অতএব, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ টিকা পেতে প্রস্তুত এবং ইচ্ছুক। আমি নিশ্চিত, উপযুক্ত তথ্য এবং প্রয়োজনীয় সহায়তার এবং গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থার মাধ্যমে আমরা বেশিরভাগ বাংলাদেশীকে টিকা দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে পারি।

বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলভাবে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। আজ পর্যন্ত (১৫ই জানুয়ারি) ৮৫,২৮৭,৯৫৬ (৫১.৮%) মানুষ তাদের প্রথম ডোজ পেয়েছেন। ৫৬,১৯১,২৫২ (৩৪.১%) লোককে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে এবং ১৯০,২৭৯ জন বুস্টার ডোজ পেয়েছে। গত সপ্তাহে, বাংলাদেশ প্রতিদিন গড়ে ১,১২২,১১৭ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে, যা গর্ব করার মত উল্লেখযোগ্য অর্জন। আমাদের এখন সেই অর্জনকে আগামী দিন, সপ্তাহ ও মাসে ধরে রাখতে হবে এবং দ্রুত আরো বাড়াতেই হবে, কারণ এটি একটি জরুরি অবস্থা, আমাদের হাতে বেশি সময় নেই। মন্ত্রণালয়কে আরও মনোযোগ দিতে হবে কেন ২৯,০৯৬,৭০৪ জন (প্রায় ৩ কোটি) লোক এখনও তাদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে? এটি কি ইলেকট্রনিক নোটিফিকেশন সিস্টেমের সমস্যার কারণে, নাকি আমরা এখনও ৩ মাসের ব্যবধান বজায় রাখছি, বা লোকেরা অনিচ্ছুক বা লোকেরা দীর্ঘ লাইনের কারণে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করায় টিকা না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন অথবা তারা তাদের প্রথম ডোজ অন্য কোথাও নিয়েছিল এবং শীঘ্রই সেখানে ফিরে যেতে পারছে না। একই ব্যক্তিকে বিভিন্ন স্থানে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না। ইলেকট্রনিক তথ্যের যুগে এটা দুর্ভাগ্যজনক হবে, বিশেষ করে বাংলাদেশে যেখানে ইলেকট্রনিক ও মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে বিপ্লব ঘটছে। আমি মনে করি আমাদের জরুরীভাবে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। এবং আমাদের কোন বিলম্ব না করে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। আমাদের কাছে ইলেকট্রনিক তথ্য আছে, আমরা সেই ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করতে পারি এবং তাদের টিকা দেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে বা আনতে পারি।

আমি খুশি যে মন্ত্রীসভা ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সীদের বুস্টার দেওয়া শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং আমি আশা করি আরও বেশি ভ্যাকসিন পাওয়ার সমর্থে মন্ত্রণালয় আরও নিম্ন বয়সের গোষ্ঠীকে অল্প সময়ের মধ্যে ক্রমবর্ধমানভাবে অন্তর্ভুক্ত করবে।

মনে রাখবেন, বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদেরও টিকা দেওয়া শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচওর) ইঙ্গিতের জন্য বাংলাদেশের অপেক্ষা করা উচিত নয়। কোভিড, আরো বিশেষ করে কোভিড টিকা দেওয়া নিয়ে ডাব্লুএইচও-এর সিদ্ধান্তগুলি বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে নয়, বরং নৈতিক ভিত্তির উপর ভিত্তি করে করা হচ্ছে। কারণ গরীব অনেকদেশ কোভিড টিকা পাওয়া আর দেয়ার ক্ষেএে অনেক পিছনে পরে আছে, তাই তারা তাদের টিকা দেওয়ার শিশুদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে দেরি করছে। বাংলাদেশ যদি আরও বেশি এবং পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে পারে, তবে দয়া করে WHO-এর জন্য অপেক্ষা না করে, শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলি বৈজ্ঞানিক প্রমাণ সহ শিশুদের টিকা দেওয়া বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে (মনে রাখবেন যে কোনও ব্যর্থতার জন্য সেসব দেশে আদালতে চিকিৎসা মামলা খুব বেশি; তাই সেসব দেশে নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা বিবেচনা করে সরকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়)।

দেশে জিনোমিক সিকোয়েন্সিংয়ের স্বল্পতার জন্য শুধুমাত্র অল্প সংখ্যক লোকের পরীক্ষা করা হয়েছে, তাই আমাদের পক্ষে বলা কঠিন যে কোন বৈকল্পিকটি এই ৪র্থ তরঙ্গ সৃষ্টি করছে, ওমিক্রন বা ডেল্টা? অনেক দেশে ওমিক্রনের দ্রুত বিস্তার ডেল্টা ট্রান্সমিশন বন্ধ করে দিয়েছে, সেখানে ডেল্টা শীঘ্রই বিলুপ্ত হতে পারে। বাংলাদেশে মানুষের সাথে কথা বলে এবং তাদের উপসর্গ গুলো শুনে, আমি বিশ্বাস করি নতুন তরঙ্গ ওমিক্রনের কারণেই হচ্ছে। আজ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আধিকারিক জানিয়েছেন যে এখন প্রায় ৭০% সংক্রামিত লোকেরা ওমিক্রন দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন।

আসুন আমরা ওমিক্রনের বিস্তারে আমাদের গর্বের মহিলা ক্রিকেট খেলোয়াড়দের কথা যেন উল্লেখ না করি যারা জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে এসেছিলেন এবং দুর্ভাগ্যবশত কয়েকজন ওমিক্রনে অক্লান্ত হয়েছিলেন। সম্পূর্ণ দায়িত্ব এবং অন্যের প্রতি সম্মান সহ তারা সফল ভাবে সময় মত তাদের কে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিলেন। আমরা জানি তাদের অনেক আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বাংলাদেশী অনেকেই ছুটি কাটাতে ঢাকায় বিমানে এসেছিল। আমরা তাদের পরীক্ষা করিনি এবং আমরা তাদের হারিয়েছি, বা কোয়ারেন্টাইনে রাখতে পারিনি। আমার মনে হয় ওমিক্রনের নতুন উত্থানের কারণ গুলো হল: বিগত ছুটির মরসুমের বহু বহির্গমন এবং সমাবেশ, নির্বাচন এবং রাজনৈতিক সমাবেশ, ছাত্রদের আন্দোলন, ভর্তির উদ্দেশ্য শত শত শিক্ষার্থীরা তাদের অভিভাবকদের সাথে প্রায় একে অপরের সাথে ঝুলে জড়ো হওয়া, বিপুল বিবাহের সমাবেশ এবং অন্যান্য গণসমাবেশের ইভেন্ট গুলোর ফলাফল। অতএব, সংক্রমণের উত্থান আরও কয়েক দিন চলবে।

৬.৮ কোটি জনসংখ্যার যুক্তরাজ্যে ৪ জানুয়ারি ২১৮,৩৭৬ জন সংক্রামিত ছিল এবং ১১ জানুয়ারিতে ৩৯৮ জন মারা গিয়েছিল। আজ আক্রান্তের সংখ্যা ৮৪,০০০-এ নেমে এসেছে। সেখানে ৭২% সম্পূর্ণ টিকা এবং প্রায় সমান % বুস্টার ডোজ পেয়েছে। সেখানে কোন লকডাউন বা স্কুল বন্ধ নেই। এমনকি সেখানে বিচ্ছিন্নতার সময়কাল ৫ দিনে হ্রাস করা হয়েছে। ৬ কোটি জনসংখ্যা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় ১২ ডিসেম্বর ৩৭৮৭৫ জন সংক্রামিত হয়েছিল এবং জানুয়ারিতে ১৮১ জন মারা গিয়েছিল। আজ সংক্রামিত মানুষের সংখ্যা মাএ ১৬৯১ জন। সেখানে ২৭% লোককে সম্পূর্ণরূপে টিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানেও এখনো লকডাউন নেই। উভয় দেশে সংক্রমণের ৯০% এর বেশি ওমিক্রনের কারণে হয়েছে। বাংলাদেশে ১৬ কোটি মানুষের সাথে তাদের তুলনা করে বলতে পারি আমরা এখনো ভালো অবস্থায় আছি। তাহলে কেন আমাদের আতঙ্কিত হতে হবে? যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের মতো ওমিক্রনের খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব ছাড়াই শীঘ্রই এই তরঙ্গের সংক্রমণ তার শিখরে পৌঁছে যাবে, এবং ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। আমাদের আতঙ্কিত হওয়ার দরকার নেই তবে প্রস্তুত থাকতে হবে।

সুতরাং, কোন লকডাউন নয় এবং কখনই স্কুল বন্ধ করার দরকার হবে না। টিকাদানের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে, তাদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে, লোকদের আরও দ্রুত টিকা দেওয়ার জন্য আমরা যা করতে পারি সবই করতে হবে। যদি এবং যখন আরও টিকা পাওয়া যাবে এবং মজুদ থাকবে, তার নিশ্চয়তা সহ উপলব্ধ বিজ্ঞান এবং প্রমাণ ব্যবহার করে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্য অপেক্ষা না করে বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার সিদ্ধান্তে নিন। একইভাবে পর্যাপ্ত ভ্যাকসিনের উপস্থিতি বৃদ্ধির সাথে, বুস্টার ডোজের জন্য আরো বয়সের গ্রুপকে অন্তর্ভুক্ত করুন। তাই দ্রুত ভ্যাকসিন, মাস্ক এবং ভিড়ের অন্দর এবং বহিরঙ্গন ইভেন্টগুলি এড়ানো, যদি আমরা তা করতে পারি তবে অন্যান্য কোভিড প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য কর্ম ছাড়াই জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে খুব বেশি নেতিবাচক প্রভাব বিনা ভাল থাকব।

আমি পড়ছিলাম কিভাবে, আমাদের আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ বাইরে থাকাকালীন মুখোশ না পরা লোকদের অনুপ্রাণিত করছেন মুখোশ পরার জন্য এবং আতিথেয়তা ব্যবসার স্থানে, যেমন রেস্টুরেন্টে স্বাস্থ্য পরামর্শ বজায় রাখতে উদ্ভূত করছেন। আমি আরও খুশি হব যদি আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ তাদের সাথে মুখোশ নিয়ে যান এবং ২০০ টাকা জরিমানা সহ তাদের মাস্ক বিতরণ করেন।

আমাদের কোভিড প্রতিরোধক কর্মসূচীর সাথে জনগণকে সাথে নিয়ে চলতে হবে। হুমকি কখনও কাজ করেনি, বরং সময়োপযোগী তথ্য, বিশ্বাস অর্জন এবং আত্মবিশ্বাসের বিকাশ, মানুষকে স্বাস্থ্য পরামর্শ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। আমি অনেক বিজ্ঞানী এবং মহামারী বিশেষজ্ঞ, যারা ভবিষ্যদ্বাণী করছেন তাদের সাথে তাল মিলিয়ে সাহস করে আবার বলবো, ওমিক্রন সংক্রমণ হয়ত ছদ্মবেশে আশীর্বাদ হতে পারে। আসুন এর সাথে বাঁচতে শিখি।

ওমিক্রন   করোনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ


Thumbnail

দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধন করা হয়। আজ এ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ নিয়ে লিখেছেন দেশবরেণ্য চক্ষু বিশেষজ্ঞ, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী

বাংলাদেশের জন্য আজকের দিনটি অনন্য, অসাধারণ। আজকের দিনটিকে আমি মনে করি, প্রান্তিক মানুষের বিজয়ের দিন। জনগণের ক্ষমতায়নের দিন। আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।

এপ্রিল মাস বাঙালি জাতির জীবনে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ১৭ এপ্রিল জাতির পিতার নির্দেশে এবং তার নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এ মুজিবনগর সরকারের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সে দিকনির্দেশনা বাস্তবায়ন করে মুক্তিযুদ্ধকে বিজয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান জাতীয় চার নেতা।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি ক্ষুধামুক্ত সাম্যের বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। আর সেজন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনার জায়গা হলো অসাম্প্রদায়িক, সাম্য এবং বঞ্চনামুক্ত বাংলাদেশ। আর এ এপ্রিল মাসেই প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল। এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জন্য আরেকটি চেতনার পতাকা বহন করে চলেছে। তা হলো, এই এপ্রিলেই দেশের প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন। ২০০০ সালের ২৬ এপ্রিল গিমাডাঙ্গায় কমিউনিটি ক্লিনিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে এবং সারা বিশ্বে স্বাস্থ্যসেবার অনন্য মডেল হিসেবে পরিচিত এবং স্বীকৃত কমিউনিটি ক্লিনিক তার অভিযাত্রা শুরু করেছিল। আমি এ কারণেই মনে করি যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভিযাত্রা বা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভিযাত্রা যেমন এপ্রিল মাসে, তেমনি প্রান্তিক মানুষের অধিকার এবং জনগণের ক্ষমতায়নের পূর্ণতার বৃত্ত পূরণ এ এপ্রিল মাসেই হয়েছিল। এ কারণেই আমি আজকের দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ মনে করি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মূল দর্শন হলো জনগণের ক্ষমতায়ন। আর এ দর্শনটি তিনি আত্মস্থ করেছেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন চেয়েছিলেন জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে। জনগণের সাম্যতা এবং ন্যায্যতার জন্য তিনি সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন। আর সে কারণে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে তিনি একটি শান্তি, প্রগতিশীল এবং উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিনির্মাণের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু রূপ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন। জাতির পিতা চেয়েছিলেন স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে। আর এ কারণেই তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক নীতিমালা-সংক্রান্ত অংশে স্বাস্থ্যসেবাকে অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু জাতির পিতার এ স্বপ্নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন শুধু জাতির পিতাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়নি, হত্যা করা হয়েছিল বাঙালির স্বপ্ন, বাঙালির অগ্রযাত্রা এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ জানানো হয়েছিল। বাংলাদেশের অন্ধকার যাত্রা শুরু হয়েছিল ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকেই। আর এ অন্ধকার যাত্রাকে থামাতে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে এবং বাংলাদেশে একটি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশে এসেছিলেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। দীর্ঘ সংগ্রাম করেছেন তিনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

২০২৩ সালের ১৭ মে বাংলাদেশের জন্য আরেকটি অর্জন আসে। জাতিসংঘে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয় ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। এটি বাংলাদেশের জন্য গৌরবের।

কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন শেখ হাসিনার একটি উদ্যোগ বা ইনিশিয়েটিভ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, তেমনি আজকের যে বাংলাদেশ ক্ষুধা, দরিদ্রমুক্ত, স্বনির্ভর, উন্নয়নের রোলমডেল বাংলাদেশ, সেটিও দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ। আজকে বাংলাদেশ এবং শেখ হাসিনা সমার্থক শব্দে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ কল্পনাও করা যায় না। শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের এ অভিযাত্রা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নগুলোকে হৃদয়ে ধারণ করেননি, সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য তিনি একজন দক্ষ নির্মাতা বটে। আর এ কারণে তিনি বাংলাদেশকে এমন এক উন্নয়নের রোল মডেল বানিয়েছেন, যেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী তার অধিকারগুলো পাচ্ছে, জনগণের ক্ষমতায়ন ঘটছে। জনগণের ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার প্রাপ্তির এক অসাধারণ মডেল হলো বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো। এই কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে অনেক নীরব বিপ্লব বাংলাদেশে ঘটেছে, আমি সেদিকে সামান্য একটু আলোকপাত করতে চাই।

প্রথমত কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে এই প্রজাতন্ত্রের মালিক যে জনগণ তা স্বীকৃত হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল এমন একটি মডেল, যেখানে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে। জনগণ জমি দিচ্ছে আর সরকার ভবন নির্মাণ করছে। জনগণ দেখছে যে, তারা সেবা পাচ্ছে কি না। জনগণের কাছে কমিউনিটি ক্লিনিকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হয়েছে। কমিউনিটি গ্রুপগুলো জনগণের ক্ষমতায়নের ছোট ছোট বাতিঘর। দ্বিতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের স্বাস্থ্য অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তৃতীয়ত এ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দর্শন তৈরি করা হয়েছে। রোগ প্রতিরোধই যে একটি সুস্থ জাতি গঠনের অন্যতম পূর্বশর্ত, সেটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে। আর এ কারণেই গত বছর ১৭ মে জাতিসংঘে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে সর্বসম্মতভাবে স্বীকৃত হয়েছে। শুধু কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ নয়, বাংলাদেশের বদলে যাওয়া, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা, বাংলাদেশের অভাবনীয় এ উন্নতির মূল উদ্যোক্তা দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের যে বাংলাদেশ তা হলো ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’। আমরা যদি বাংলাদেশর উন্নয়ন কাঠামো লক্ষ্য করি, তাহলে সবচেয়ে যেটি বিস্ময়কর ব্যাপার তা হলো, বাংলাদেশে সমন্বিত উন্নয়ন বাস্তবতা চলছে। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে। আমরা পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেলের কথা বলছি, দেখছি; তেমনি বাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর পরিধি বেড়েছে। বাংলাদেশ একটি কল্যাণকামী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যাচ্ছে। কল্যাণকামী রাষ্ট্রের অন্যতম শর্ত হলো, মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একদিকে যেমন কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য অধিকার এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করছেন, অন্যদিকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে তাদের আবাস্থলের নিশ্চয়তাও দেওয়া হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে বাংলাদেশে একটি সুবিন্যস্ত উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। যে উন্নয়ন পরিকল্পনাই কেউই বাদ যাবেন না। আর বাদ না যাওয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন পরিকল্পনার মূল উদ্যোক্তা হলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি এমন একটি উন্নয়ন মডেল বাংলাদেশে তৈরি করেছেন, যে উন্নয়ন মডেলের মাধ্যমে সব মানুষ উন্নয়নের সুবিধা পাবে এবং বৈষম্য দূর হবে। আমি মনে করি, কমিউনিটি ক্লিনিক শেখ হাসিনা যেভাবে বাংলাদেশ তৈরি করতে চান তার একটি প্রতিরূপ। সারা বাংলাদেশে সাম্য, ন্যায্যতা এবং সবার অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীরব বিপ্লব চলছে। আর সেই নীরব বিপ্লবকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে। আমরা জানি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছেন যে, তিনি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবেন। স্মার্ট বাংলাদেশ মানে কী? স্মার্ট বাংলাদেশ মানে হলো এমন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল এবং উন্নত বাংলাদেশ, যে বাংলাদেশের সব নাগরিক সমান অধিকার পাবে। সব নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। যেটি বাংলাদেশের সব মানুষকে সুখী এবং সমৃদ্ধ করবে। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি প্রতিটি গ্রামকে যদি স্মার্ট গ্রাম করতে পারি, আধুনিক করতে পারি, সুখী করতে পারি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারি, তাহলে সারা বাংলাদেশ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মিত হবে।

কাজেই কমিউনিটি ক্লিনিক যেমন বাংলাদেশকে স্মার্ট করতে পারে তেমনি ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের চাবি। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করা এবং স্বপ্নের সোনার বাংলার চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সবচেয়ে বড় অনুষঙ্গ হিসেবে কাজ করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর সে কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমি মনে করি, ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ আমরা যদি হৃদয়ে ধারণ করি, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা কী চান, তিনি কী ভাবেন, মানুষের কল্যাণের জন্য তিনি কী কী কাজ করতে চান, সেটি যদি আমরা উপলব্ধি করতে পারি এবং তার নীতি এবং চিন্তার প্রতি আমরা যদি সৎ থাকি, আদর্শবাদ থাকি, তাহলে বাংলাদেশের বদলে যাওয়া রূপ আরও বিস্তৃত হবে, বাংলাদেশ সারা বিশ্বে একটি রোলমডেল রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত হবে। আর এ কারণেই কমিউনিটি ক্লিনিক দিবসকে আমরা ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছি।


দ্য শেখ হাসিনা   ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকেই প্রস্তুতি প্রয়োজন


Thumbnail

১৯৯৮ সাল। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকুরী করি। স্থানীয় চাইনিজ রেস্তোরাতে একটি সেমিনার হবে। ঢাকা থেকে ওষুধ কোম্পানির এক কর্মকর্তা এসেছেন। তিনি একই মেডিকেলে আমার এক বছরের সিনিয়র। বেশ খাতিরের বড় ভাই। তিনি তাঁর ব্যাগ থেকে একটি যন্ত্র বের করলেন। যন্ত্রটি অন করার পর দেখি সেটি একটি কম্পিউটার। কোন তার ছাড়া কম্পিউটার।  জিজ্ঞেস করলাম, ভাই কি জিনিস এটা, নাম কি ? বললেন, ল্যাপটপ। জীবনে এই প্রথম আমার ল্যাপটপ দেখা। তবে নাম শুনেছি এর তিন বছর আগে, ১৯৯৫ সালে। যখন নাম শুনেছি, তখন বুঝিনি জিনিসটা কি ?

১৯৯৫ সালে বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেই, ১৭তম বিসিএস। জীবনে একবারই এই পরীক্ষা দেই। উত্তীর্ণ হই। সাড়ে আট বছর চাকুরী করেছি, ছেড়েও দিয়েছি । সে অন্য প্রসঙ্গ। প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় একটি প্রশ্ন ছিল, ল্যাপটপ কি ? অপশন ছিল- ছোট কুকুর, পর্বতারোহন সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র ও ছোট কম্পিউটার। উত্তর কি দিয়েছিলাম তা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে যে, আমি উত্তরের জায়গায় ছোট কম্পিউটারে টিক দেইনি। জীবনে যে জিনিসের নামই শুনিনি তাতে টিক দেই কেমনে ? সেকালের কোন গাইড বইতে এ ধরণের কোন প্রশ্ন বা তার উত্তর নেই বলে শুনেছি। পরীক্ষার্থীদের প্রায় ৯৯ ভাগ সঠিক উত্তর দিতে পারেনি। গাইড পড়ে এ ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। তবে যারা আধুনিক প্রযুক্তি বা অনাগত প্রযুক্তি সম্পর্কে ধ্যান ধারণা রাখে তারা সঠিক উত্তর দিয়েছিল।

ঘটনাটি মাথায় এলো সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও দেখে। সেখানে দেখলাম হাজার হাজার ছাত্র ছাত্রী হুড়োহুড়ি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে ঢুকছে। শুনলাম তারা আসন্ন বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিবে। ভিডিওটি আবার দেখার জন্য গুগলে অনুসন্ধান করলাম- 'ঢাবি লাইব্রেরিতে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের ভিড়'। সেখানে দেখি শত শত খবর। প্রতি বছর নাকি এমনটি হয়। লাইব্রেরিতে ঢুকতে হুড়োহুড়ি। পরীক্ষার আগে নাকি সেখানে এমন যুদ্ধ চলে। বিসিএস কি দু এক মাস বা দু এক বছরের প্রস্তুতির ব্যাপার ? একবার পরীক্ষা দিয়ে আমার কাছে তা মনে হয়নি। আমার মতে, এর জন্য সমগ্র শিক্ষা জীবন ধরে প্রস্তুতি প্রয়োজন। এটি আমার একান্ত ব্যক্তিগত অভিমত। আমার সাথে অনেকেই একমত নাও হতে পারেন।

ছোট কাল থেকে নিয়মিত অধ্যাবসায়ের পাশাপাশি নিয়মিত সংবাদপত্র পড়া প্রয়োজন। জগৎ সংসার, দেশ বিদেশ, বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, ভূগোল, খেলাধুলা বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা দরকার। কোন একটি দেশি বা বিশ্ব ইভেন্ট চলছে। সেটি চলাকালে দৈনন্দিন খোঁজ খবর রাখার পাশাপাশি ওই ইভেন্টের অতীত জেনে নিলেন। কবে থেকে ইভেন্টটি চলছে, কোথায় সেটি শুরু হয়েছিল, সেটি জেনে নিলেন। নিয়মিত সংবাদপত্র পড়লে বা টিভি সংবাদ দেখলে সেগুলি আপনা আপনি জেনে যাবেন।

তবে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য একটু প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। আমি নিয়েছি এক সপ্তাহের। তাও ইন্টার্নি চলাকালে ডিউটির ফাঁকে ফাঁকে। আপনি এর জন্য সর্বোচ্চ এক মাস বরাদ্ধ রাখতে পারেন। বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাস অংশে কিছু সাল মনের মধ্যে গেঁথে নেয়ার জন্য গাইড বইটি একটু চোখ বুলাতে পারেন। যে সব বিষয়ে দুর্বলতা রয়েছে সেগুলো একটু দেখতে পারেন। অংকের ফর্মুলা গুলো একটু ঝালাই করে নিতে পারেন। সমসাময়িক বিশ্ব বিষয়ে অনেকের দুর্বলতা থাকে। সংবাদপত্রের এ অংশটুকু প্রায়ই এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ অধ্যায়টিও দেখে নিতে পারেন। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে যদি এর চেয়েও বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তাহলে বুঝতে হবে আপনার দুর্বলতা অনেক। বিসিএস পরীক্ষার জন্য ছোট বেলা থেকে আপনার প্রস্তুতি নেই। সেক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা আপনার জন্য কঠিন হয়ে যাবে। লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মতিউর রহমানই প্রথম আলো বিক্রির প্রধান বাঁধা?


Thumbnail

দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বিক্রির বিষয়টি এখন ‘টক অব দ্য টাউন’। বাংলাদেশের বিভিন্নি গ্রুপ কোম্পানি এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক মতিউর রহমানের এতে শেয়ার রয়েছে। তিনিও প্রতিষ্ঠানটির মালিক। মালিকানা থাকলেও এখন মতিউর রহমান তার সম্পাদক পদটা নিশ্চিত করতে চান। সেজন্য তিনি কর্ণফুলী গ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করার জন্য খুব আগ্রহী ছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন বাস্তব কারণে কর্ণফুলীগ্রুপের কাছে প্রতিষ্ঠানটি বিক্রির বিষয়টিতে রাজি হয়নি বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

শুধু কর্ণফুলী গ্রুপই নয়, প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি করতে স্কয়ার গ্রুপের সাথেও বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন মতিউর রহমান। এর মধ্যে বসুন্ধারাসহ আরও কয়েকটি গ্রুপ এতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু আমার জানা মতে সর্বশেষ এস আলম গ্রুপ এই প্রতিষ্ঠানটি কেনার জন্য বেশ অগ্রসর হয়েছে এবং তারাই এখন সবচেয়ে অগ্রগামী। কিন্তু এস আলম গ্রুপ কেনার জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। কারণ উনি দেখছেন যে, একমাত্র কর্ণফুলী ছাড়া অন্য যে কোন গ্রুপে গেলে তার সম্পাদক পদের নিশ্চয়তা নেই।

তবে ধারণা করা হচ্ছে, যারাই ‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি ক্রয় করুক না কেন, তারা মতিউর রহমানকে প্রথম দিকে রাখলেও পরবর্তীতে তারা পরিবর্তন করবে। যদি প্রথম আলোতে কেউ সম্পাদকের দায়িত্বে আসেন, আমার ধারণা আনিসুল হক আসতে পারেন। কারণ আনিসুল হক সবার কাছে যেমন সম্মানিত তেমনি জ্ঞানী ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

‘প্রথম আলো’ প্রতিষ্ঠানটি যদি এস আলম গ্রুপ কিনে নেয় তাহলে প্রধান বাঁধা হবে মতিউর রহমান। কিন্তু তার বাঁধা টিকবে না। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের যদি ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব দেখা দেয় তাহলে ওই প্রতিষ্ঠানটি কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ‘প্রথম আলো’ নিজেদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের ফলে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটিতে চরম দ্বন্দ্ব বিরাজ করছে। সাধারণত যার যার দৃষ্টিকোণ থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে তারা দেখবে। সরাসরি না হলেও প্রথম আলোর মতিউর রহমান এই দ্বন্দ্বে জড়িয়ে গেছেন। যদিও মতিউর রহমান বিভিন্নিভাবে বিষয়টি প্রকাশ করে বুঝাতে চেষ্টা করছেন যে, এতে উনার কোন আগ্রহ নেই। 

তবে এর আগে থেকেই কিছু গণমাধ্যমে এসেছিল যে, মতিউর রহমন ও ডেইলি স্টারের মাহফুজ আনাম এই দ্বন্দ্বে জড়িত রয়েছেন। যদিও বিষয়টি তাদের মধ্যকার বিষয়। কিন্তু এখন প্রথম আলো বিক্রিতে প্রধান বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মতিউর রহমান। অচিরেই এই বাঁধা অতিক্রম করে ‘প্রথম আলো’ বিক্রি হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি কিনবে এস আলম। কারণ এস আলম একজন বিচক্ষণ ব্যবসায়ী। তিনি ব্যবসাতেই যুক্ত হচ্ছেন ব্যর্থ হচ্ছেন না। বরং সফল হচ্ছেন।

‘প্রথম আলোর’ কেনার জন্য দেশে যেসব কর্পোরেট হাউজগুলো আছে তাদের অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে। তবে এক একজনের আগ্রহ একেক কারণে। কেউ চান প্রথম আলোর জনপ্রিয়তা ও অভিজ্ঞ জনবলের কারণে, আবার কিছু কর্পোরেট হাউজের ইচ্ছে হলো ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব একেবারে কমিয়ে আনা। এসব বিভিন্ন কারণে আগ্রহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

তবে আমার বিশ্বাস প্রথম আলো বিক্রিতে যে প্রধান বাঁধা মতিউর রহমান। তার বাঁধা টিকবে না। অবশেষে প্রতিষ্ঠানটি একটা কর্পোরেট হাউজের হাতেই যাবে। আমার ধারণা মতে, এস আলম গ্রুপই প্রথম আলোকে কিনতে সক্ষম হবে। আমরা হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই দেখব যে, প্রথম আলোর নতুন মালিক হিসেবে আরেকটি কর্পোরেট হাউজ এসে দাঁড়িয়েছে। প্রথম আলোতে বর্তমানে যারা অভিজ্ঞ সাংবাদিক আছেন যারা শিক্ষিত তাদেরকে ইতোমধ্যে অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞ লোকদের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। 

আমার ধারণা, এ পর্যায়ে প্রথম আলো বিক্রি কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না। এমনকি মতিউর রহমানের চেষ্টাও সফল হবে না। তবে আমার সবসময়ের আকাঙ্খা, সংবাদপত্রের সাথে যারা জড়িত তাদের চাকরি যেন অবশ্যই নিশ্চয়তা থাকে। কারণ এরা দীর্ঘদিন পরিশ্রম করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, নিজেদেরকে একটা পর্যায়ে এনেছেন আর এদের চাকরি অবশ্যই থাকতে হবে এবং তাদের যে মেধা, সেই মেধা থেকে জাতি যেন বঞ্চিত না হয়।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন