ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইউক্রেন নিয়ে পুতিন আসলে কি চায়?

প্রকাশ: ১১:০১ এএম, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২২


Thumbnail ইউক্রেন নিয়ে পুতিন আসলে কি চায়?

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সীমানা এবং দ্বিতীয় সামরিক শক্তিধর দেশ রাশিয়া। একসময় দেশটি সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্ববৃহৎ অংশ ছিলো, ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে মোট ১৫টি আলাদা আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হয় যার ফলে রাশিয়ার আগের সেই জৌলুস হারালেও হারায়নি একজন ব্যক্তির ইচ্ছা। আর তিনি হলেন রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। 

পুতিন তার অনেক বক্তব্যতে বার বার বলেছেন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়া তিনি কখনই মানতে পারেননি। তিনি চান আগের সবগুলো দেশ নিয়েই আবারো সোভিয়েত ইউনিয়ন গঠিত হক। আগের সেই চাওয় বাস্তবতার নিরিখে সম্ভব না হলেও তিনি তার প্রতিবেশীদের সাথে ঠিকই ছোট ভাইয়ের মতই আচরণ করে চলেছেন। আর তার সর্বশেষ উদাহরণ ইউক্রেন। 

সোভিয়েত ইউনিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেশটি ছিলো ইউক্রেন। অর্থনীতি কিংবা সামরিক ক্ষেত্রে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের পর সবচেয়ে সয়ংসম্পন্ন দেশটি ছিলো এই ইউক্রেন। সোভিয়েত আমলের বড় বড় সব পারমাণবিক স্থাপনা, শিল্পকারখানা এমনকি সামরিক শিল্পগুলো ছিলো সাবেক সোভিয়েত রাজ্যটিতে। আর তাই পুতিনের স্বপ্ন পূরণে ইউক্রেনের উপর নিয়ন্ত্রণ পুতিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

ইউক্রেন সংকট:

রাশিয়া সাথে ইউক্রেন নিয়ে সংকটের সূচনা হয় ২০১৪। সেই বছর ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিলেন বিক্ষোভের মুখে। এরপর তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ দুই নৌকায় পা দিয়ে চলতে চেয়েছিলেন। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে মাখামাখি করছিলেন, কিন্তু আবার মস্কোকেও ভক্তি-শ্রদ্ধা দেখিয়ে চলেছিলেন। কিন্তু তারপরও প্রেসিডেন্ট পুতিন তাকে সহ্য করেছেন।

কিন্তু যখন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে এক বিশাল বাণিজ্য চুক্তি করতে চাইলেন - যা এককথায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ পাওয়া প্রকান্তরে ন্যাটোতে যোগদানের পথে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাওয়া - তখন প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের ওপর চাপ বাড়াতে শুরু করলেন



এরপর যখন ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্যচুক্তির আলোচনা ভেঙে বেরিয়ে এলেন, তখন তার বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভ শুরু হয়। তার পতনের পর যারা ক্ষমতায় আসে, তারা এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়, যা প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ক্ষুব্ধ করে। 

সে সময় ইউক্রেনের দখলে থাকা দ্বীপ ক্রিমিয়া দখল করে নেয় রাশিয়া। সেই সাথে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ান ভাষাভাষী এলাকাগুলোতে রাশিয়ায় সাথে যোগ দানের জন্য শুরু হয় ছায়া যুদ্ধ। যাতে পূর্ণ সমর্থন জানায় রাশিয়া। যদিও এই সমর্থনগুলো কখনোই প্রকাশ্য স্বীকার করেনি মস্কো। কিন্তু অর্থ এবং গোলাবারুদ দিয়ে রাশিয়া সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে পুতিনের ইশারায় নিয়মিত সহযোগিতা করে আসছিলো রাশিয়ার সামরিক বাহিনী। 



তাছাড়া ক্রিমিয়া দখলের পিছনে রাশিয়ার আরেকটি বড় কারণ ছিলো ক্রিমিয়ায় অবস্থিত সেভাস্তাপোল নৌঘাঁটি। এটি বাল্টিক সাগরে ঢোকার রাশিয়ায় একমাত্র নৌঘাঁটি। প্রায় ২০০ বছর ধরে কিন্তু ক্রিমিয়া রাশিয়ারই অংশ ছিল। ক্রিমিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষও জাতিগত রুশ। ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত নেতা নিকিতা ক্রুশ্চেভ এটি হস্তান্তর করেন তৎকালীন সোভিয়েত প্রজাতন্ত্র ইউক্রেনের কাছে। তখন তারা ভাবেননি, কোনো একদিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাবে এবং ক্রিমিয়ার ওপর মস্কোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যাবে।

কাজেই ইউক্রেন যখন ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে কথা বার্তা শুরু করে তখন নিজেদের অবস্থানকে সুসংহত করতে ক্রিমিয়ার দখল নেয় পুতিন বাহিনী। আর এর সাথে শুরু হয় ইউক্রেন-ন্যাটো ও রাশিয়ার মাঝে দ্বন্দ্ব। 

পুতিন কি রাশিয়ার সামরিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন: 

অনেকে ভাবতে পারেন রাশিয়ার মত পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিধর দেশ কিভাবে তার নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে পারে? কিন্তু গত ৫০০ বছরের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে রাশিয়া বহু বিদেশী শক্তির আক্রমণের মুখে পড়েছে, আর এই সবগুলো আক্রমণই এসেছে উত্তর ইউরোপের সমতল ভূমি দিয়ে।

১৬০৫ সালে পোলিশরা আক্রমণ চালিয়েছিল এই পথ ধরে। এর পরে আসে সুইডিশরা। ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের নেতৃত্বে হামলা চালায় ফরাসীরা। জার্মানরা রাশিয়ায় অভিযান চালিয়েছে দুবার - ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়, আবার ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে।

১৮১২ সালে নেপোলিয়নের সময় থেকে হিসাব করলে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত গড়ে প্রতি ৩৩ বছরে রাশিয়াকে উত্তর ইউরোপের সমতলভূমিতে একবার করে যুদ্ধ করতে হয়েছে। কাজেই রাশিয়ার ধারণা, তাদের দেশের জন্য কোনো নিরাপত্তা হুমকি যদি থেকে থাকে, সেটি এই পথেই আসবে। আর তাই বর্তমান সময়ে যখন ইউক্রেনে ন্যাটোতে যোগদানের ব্যাপারে একমত তখন রাশিয়া এটিকে নিজেদের সীমানায় বিদেশি শক্তির প্রচ্ছন্ন হুমকি হিসেবেই মনে করছে। 

ইউক্রেন সংকট কি রাশিয়ার গ্যাস বাণিজ্যর একটি বড় ইস্যু:

রাশিয়া আদতে পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহৎ সামরিক শক্তিধর দেশ হলেও দেশটি সবচেয়ে বড় শক্তি কিন্তু অস্ত্র বা সেনাবাহিনী নয়। রাশিয়ার সবচেয়ে বড় শক্তি দেশটির মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা প্রাকৃতিক সম্পদ, গ্যাস ও তেল। ইউরোপের মোট গ্যাসের ৪০ শতাংশ এবং মোট জ্বালানির ২৫ শতাংশ একাই সরবরাহ করে রাশিয়া। আর এই জ্বালানী সরবরাহের সবচেয়ে বড় রাস্তা হল ইউক্রেন। ইউক্রেন যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদান করে প্রকান্তরে ন্যাটোতে তবে তা হবে রাশিয়ার সামরিক এবং অর্থনৈতিক আগ্রাসনের সবচেয়ে বড় হুমকি। 

কাজেই ইউক্রেনে যদি রাশিয়ার প্রভাব বলয়ের বাইরে চলে যায়, তাহলে গ্যাস সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়ার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ হাতছাড়া হতে পারে বলে আশংকা করে।

তবে ইউক্রেনকে পাশ কাটিয়ে রাশিয়া বাল্টিক সাগরের নিচ দিয়ে জার্মানি পর্যন্ত নর্ড স্ট্রিম-২ নামে নতুন একটি গ্যাস পাইপলাইন বসিয়েছে। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেনের সামরিক আগ্রাসনের কারণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে এই পাইপলাইনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানিও। 



তবে, ইউরোপ যেভাবে রাশিয়ার গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, তাতে করে রাশিয়া অন্যান্য দেশগুলোর ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের যে সুযোগ পাচ্ছে তা ইতিমধ্যে টের পেতে শুরু করেছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। 

ট্রাম্প প্রশাসনে কাজ করা একজন উচ্চপদস্থ গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, ইউক্রেন নিয়ে এই সংকট নতুন নয়। দীর্ঘ দিন ধরেই পুতিনের নজর ছিল ইউক্রেনের দিকে। মাঝে মাঝেই ইউক্রেনকে বিরক্ত করেছেন তিনি। ২০০৬ সালে ইউক্রেনে গ্যাস বন্ধ করে দেয় মস্কো। গত ২২ বছর ধরে শাসন ক্ষমতায় আছেন পুতিন। এই সময়ে নানাভাবে তিনি বিপদে ফেলার চেষ্টা করেছেন ইউক্রেনকে।

পুতিন ইউক্রেনকে রাশিয়ার অধীনে রাখতে চান। তিনি এই কাজে সফল হলে ২০৩৬ সাল পর্যন্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে থাকতে পারবেন। পুতিন একটি ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য বানাতে চান। সেই জন্যই তার নজর ইউক্রেনে। দেশটি এক সময় রাশিয়ার সঙ্গে ছিল। পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তাই পুতিনের ইচ্ছা ইউক্রেনকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করা।

পুতিন চান সব দেশ রুশপন্থি হোক। সে কারণেই পুতিন চান না ন্যাটোর নেতৃত্বাধীন জোটে কিয়েভ যোগদান করুক। উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে জার সাম্রাজ্যের মতো একটি পরিস্থিতি রৈ করতে চাচ্ছেন তিনি। অথবা তার ইচ্ছা সাবেক সোভিয়েতকে পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা। তবে মজার ব্যাপার হলো, পরিকল্পিত সোভিয়েতে কমিউনিস্ট শাসন প্রতিষ্ঠা না করে ব্যক্তি শাসনের ওপরই জোর দিয়েছেন পুতিন। এ জন্যই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একেবারে তৈরি তিনি।

পুতিনের দাবিসমূহ: 

ইউক্রেন নিয়ে রাশিয়া প্রেসিডেন্ট পুতিনের দাবিগুলো নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে পশ্চিমা বিশ্বে। ইউক্রেন নিয়ে প্রেসিডেন্ট পুতিনের চাওয়াগুলোর মাঝে আছে ন্যাটোকে এই নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তারা আর সম্প্রসারণ করবে না। বিশেষ করে ইউক্রেনকে কখনোই ওই জোটে নেয়া হবে না। তিনি মনে করেন, ইউক্রেন কোন দিনই প্রকৃত অর্থে একটা রাষ্ট্র ছিল না। এখন যা ইউক্রেন তা আসলে 'প্রাচীন রুশ ভূখণ্ড।' 

এছাড়া তার আরেকটি দাবির মাঝে আছে, রাশিয়ার সীমান্তের কাছাকাছি কোন আক্রমণকারী অস্ত্র মোতায়েন করতে পারবে না ন্যাটো। সেই সঙ্গে ১৯৯৭ সালের পর যেসব দেশ ন্যাটোর সদস্য হয়েছে, সেসব দেশ থেকে সৈন্য এবং সামরিক সরঞ্জাম সরিয়ে নিতে হবে। এর মানে হলো, মধ্য ইউরোপ, পূর্ব ইউরোপ এবং বাল্টিক সাগরের তীরের দেশগুলো থেকে ন্যাটোর সৈন্যদের সরাতে হবে।

তবে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দাবির সাথে কোনভাবেই একমত নয় ইউরোপিয় সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যরা। ন্যাটো বলছে, নতুন সদস্যদের জন্য তাদের দরজা সবসময়ে খোলা। তারা এই নীতি পাল্টাতে রাজি নয়। ন্যাটোতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে একটি পরিষ্কার সময়সীমা চেয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট, তবে জার্মানি পরিষ্কার করে দিয়েছে, এটা খুব তাড়াতাড়ি ঘটবে না। বরং নেটোর কোন সদস্য দেশ তাদের সদস্যপদ ত্যাগ করবে এমন সম্ভাবনাও নেই।

রাশিয়া   ইউক্রেন   যুদ্ধ   যুক্তরাষ্ট্র   ন্যাটো   ইউরোপ  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ কি সমাপ্তির পথে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

১৯৭৯ সালে ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ সংঘটিত হয়েছিল। রেজা শাহ পাহলভির রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে যে ‘ইসলামি বিপ্লব’ ঘটানো হয়েছিল, সেটিকে বলা হয় ফরাসি এবং বলশেভিক বিপ্লবের পর ইতিহাসের তৃতীয় মহা জাগরণ, যেখানে জনগণ এককাট্টা হয়ে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই সময় নির্বাসন থেকে ফিরে আসেন আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং খোমেনির নেতৃত্বে ইরান ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ গ্রহণ করে। কঠোর শরিয়া আইন অনুসারে ইরান পরিচালিত হতে থাকে।

ইরানি বিপ্লবের পঁয়তাল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের মধ্যে নানারকম ঘটনা ইরানে ঘটেছে। এই ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইরানকে ধর্মান্ধ মৌলবাদী কট্টর অবস্থান থেকে ফিরিয়ে আনার জন্য ঘরের ভেতরে বাইরে ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু ইরান কট্টর মৌলবাদী অবস্থান থেকে ফিরে আসেনি। 

ইসলামী বিপ্লবের পর কেবল সেখানে শরিয়া আইন কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়নি, পর্দাপ্রথা সহ নারী স্বাধীনতা খর্ব করা, নানা রকম বিধিনিষেধ আরোপ করে ইসলামকে কঠোরভাবে প্রতিপালনের কিছু রেওয়াজ চালু হয়েছিল এই দেশটিতে। কিন্তু গত কয়েক বছরে ইরানের ভেতর ভিন্নমতালম্বীদের সংখ্যা বাড়ছিল। বিশেষ করে ইরানের বুদ্ধিজীবী এবং তরুণ সম্প্রদায় কট্টর ইসলামপন্থি অবস্থা থেকে বেরিয়ে উদার এবং একটি গণতান্ত্রিক আবহ প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করে চলছিল। ইরানের ভেতর হিজাব বাধ্যতামূলক করা নিয়ে যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছিল তার বিরুদ্ধে সে দেশের নারীরা সোচ্চার হয়েছিল। ইরানে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী ব্যক্তিরা শিক্ষিত স্বজন এবং তরুণরা বদ্ধ দুয়ার খুলে দেওয়ার দাবি করছিল। আর এ ক্ষেত্রে ইরানে ‘ইসলামি বিপ্লবী’ সরকার একটি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিল। আর গতকাল ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের ‘ইসলামি বিপ্লব’ কতটুকু স্থায়ী হবে এবং আদৌ শেষ পর্যন্ত টিকবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

১৯৭৯ সালে ইরানের জনগণের মধ্যে রেজা শাহ পাহলভির বিরুদ্ধে যে ক্ষোভ বিক্ষোভ ছিল এবং আয়াতুল্লাহ খোমেনির যে জনপ্রিয়তা ছিল এখন সেটা অনেকটাই কেটে গেছে। অনেকে বলে ‘মোহমুক্তি ঘটেছে।’ বিশেষ করে তরুণ সমাজ পশ্চিমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করতে চায়। তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চায়। কৃষ্টি, সংস্কৃতি, সভ্যতায় ইরান নানাভাবে এগিয়ে। কিন্তু ইসলামি অনুশাসনের কারণে সেখানে মুক্তবুদ্ধির চর্চা যেমন বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে ঠিক তেমনি যারা মুক্তবুদ্ধির চিন্তা করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাজা এবং দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নজীর সেদেশের তরুণ প্রজন্মকে অনেকটাই বিপ্লবী সরকারের প্রতি বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এরকম একটি বাস্তবতায় হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তাহলে কি ইরানে ইসলামি বিপ্লবী শেষ হয়ে যাচ্ছে। এই ঘটনা কি নতুন বাক তৈরি করবে, যেখান থেকে ইরান আবার একটি গণতান্ত্রিক পন্থায় ফিরে আসবে?

অনেকেই বলতে পারেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ভেতর কাজ করছে এবং যে সমস্ত বিক্ষোভের ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে সেগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পিত। কিন্তু এটা অস্বীকার করার উপায় নাই যে, ইরানের তরুণ সমাজ এখন মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতে চায়, দুয়ার খুলে দিতে চায়। তাই রাইসির মৃত্যু ইরানের কট্টরপন্থিদের বিদায় ঘণ্টা বাজাল কি না সেটি নিয়েও জল্পনা কল্পনা চলছে।

ইরান   ইসলামি বিপ্লব   ইব্রাহিম রাইসি  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির মৃত্যু কি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অশান্ত করবে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। 

গত কিছুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চলছে। বিশেষ করে ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনার পর ইরান যে ভাবে ইসরায়েলে ড্রোন আক্রমণ করেছে, তারপর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে ইসরায়ল এর পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। সে সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ইসরায়েলকে এ প্রতিশোধের ব্যাপারে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল। সেই সময় ইসরায়েল কিছু করেনি বটে, তবে ইরানের গতকালকের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে যে ইসরায়েলের হাত আছে এটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবাই বিশ্বাস করে। যদিও এর পক্ষে তথ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউই হাজির করতে পারেনি। তবে ইরান এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে। এটির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

প্রথমত, এই ঘটনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যে সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপ গুলো আছে তারা জঙ্গি হতে পারে। কারণ এই সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা চলছে। ফলে ইসরায়েল সহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস সহিংসতার ঘটনা বাড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে। 

দ্বিতীয়ত, এই ঘটনার পর সারা বিশ্বে ইরান নিয়ন্ত্রিত বা ইরানের পৃষ্ঠপোষক থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলো অন্যান্য দেশেও বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এবং আক্রমণ করতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

তৃতীয়ত, এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের আক্রমণ করতে পারে। এমনকি ঘোষণা দিয়েও প্রতিশোধ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারে। এই সবগুলো ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করবে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। 

তবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের রাইসির মৃত্যু একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইরান জুড়ে একটা শোকের ছায়া। এই শোক কাটিয়ে উঠতে তাদের সময় লাগবে। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর হয়ত তারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাববে। আবার অনেকে মনে করছেন ইরান হয়ত আপাতত আত্ম অনুসন্ধান করবে। ভেতরের শত্রুদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে এবং ভেতর থেকে ইরানকে যারা দুর্বল করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আগে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করবে। তারপর তারা ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করবে। তবে স্বল্প মেয়াদী হোক, দীর্ঘ মেয়াদী হোক ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করে তুলবেই।


ইব্রাহিম রাইসি   ইরানের প্রেসিডেন্ট  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানে মোসাদের সফল প্রতিবিপ্লব?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।

ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।

আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।

এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।

এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।


ইব্রাহিম রাইসি   ইরান   হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা   মোসাদ   সিআইএ   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   ইসরায়েল  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের খুটিনাটি শুনলেন পুতিন

প্রকাশ: ০৮:৫১ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।

কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'

কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।  


ইরান   রাষ্ট্রদূত   হেলিকপ্টার   বিধ্বস্ত   রাশিয়া   প্রেসিডেন্ট   ভ্লাদিমির পুতিন  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির দাফন কোথায়, কবে

প্রকাশ: ০৮:৪২ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির

ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।

এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি। 

স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে। 

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।


ইরান   প্রেসিডেন্ট   ইব্রাহিম রাইসি   দাফন   মৃত্যু  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন