ইনসাইড থট

কেন এই বৈষম্য এবং দ্বৈত নৈতিকতা!!

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৫ এপ্রিল, ২০২২


Thumbnail কেন এই বৈষম্য এবং দ্বৈত নৈতিকতা!!

গত সপ্তাহে আমি জেনেভায় আঞ্চলিক ট্রেনে চড়ে একটি জায়গায় যাচ্ছিলাম। পরের স্টেশনে একজন লোক এসে আমার পাশে বসল। ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক এসে টিকিট চাইল, আমি আমার টিকিট দেখালাম। আমার পাশে বসা যাত্রী বললেন তিনি ইউক্রেন থেকে এসেছেন এবং তার কোনো টিকিট কেনার দরকার নেই, ফ্রি রাইড। তিনি তার সদ্য দেওয়া সুইস কার্ড এবং সুইজারল্যান্ডে বিনামূল্যে পরিবহনের একটি চিঠি দেখালেন। ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক, অনেক সম্মানের সাথে তাকে স্বাগত জানিয়ে বললো যদি তার কোন সাহায্যের প্রয়োজন হয় তবে তাকে জানাতে। কি চমৎকার মানবতার প্রদর্শনী। আমি অভিভূত হয়ে গেলাম। পাসপোর্ট সহ বা ছাড়া সুইজারল্যান্ডে ইউক্রেন থেকে আসা সমস্ত ইউক্রেনিয়ানের যে কেউ এখানে নিবন্ধিত হয় এবং তারা অবিলম্বে সুইজারল্যান্ডে তাদের ওয়ার্ক পারমিট পাচ্ছেন এবং বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা এবং আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ইউক্রেনের জন্য সমস্ত ইউরোপীয় দেশগুলির এই স্বাগত মানবতা দেখে আমি খুব খুশি। আমি বিশ্বাস করি যারা ধ্বংস আর নিপীড়নের কারণে তাদের নিজ দেশে আর থাকতে পারে না বলে তাদের দেশ ছেড়ে চলে যায় তাদের ক্ষেত্রে এটাই হওয়া উচিত। কিন্তু কেন জানি না, শীঘ্রই আমি কিছুটা ব্যথা বোদ করতে শুরু করি এবং আমার বুকটা ভারি হয়ে উঠতে শুরু করে। আমি ভাবতে শুরু করি যে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া এবং অন্যান্য আফ্রিকান দেশ থেকে আসা শরণার্থীদের সাথে সুইজারল্যান্ড এবং অন্যান্য সমস্ত ইউরোপীয় দেশ কীভাবে আচরণ করছে তা দেখে। আমরা দেখেছি যে পোল্যান্ড জীবন বাঁচাতে ইউক্রেন থেকে পালিয়ে যাওয়া এশিয়া ও আফ্রিকার মানুষদের সাথে কি খারাপ ব্যাবহার/আচরণ করেছে। ডেনমার্কে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের স্বাগত জানানোর সাথে সাথে, দেশটি সিরিয়ার শরণার্থীদের বিতাড়িত করছে যখন তাদের সন্তানরা কয়েক বছর ধরে স্কুলে পড়ছে এবং তারা ইতিমধ্যে শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছে। ইউরোপীয়রা অভিযোগ করে যে ঐ দেশগুলোর শরণার্থীরা তাদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে এবং তাদের জন্য বিশাল সামাজিক বোঝা তৈরি করছে, কিন্তু ইউক্রেনীয়দের জন্য সব দরজা খোলা, ওয়ার্ক পারমিট সহ সমস্ত সুযোগ দিতে সেই তাঁরাই দ্বিধা করছে না। যুক্তরাজ্যে শরণার্থীদের সামান্য সুবিধা এবং জনাকীর্ণ বাসস্থানের সুবিধা দেওয়া হয় এবং খাবার এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের জন্য মাসে মাত্র ৩৫ পাউন্ড দেওয়া হয়। কাজের অনুমতি পাওয়ার জন্য, তাদের শরণার্থীর অবস্থা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। মনে মনে প্রশ্ন করছিলাম একই তথাকথিত সভ্য মানুষের দেশগুলো কিভাবে অন্যান্য দেশের মানুষ যারা সমানভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছিল তাদের প্রতি এত উদাসীন ও বৈষম্যমূলক হতে পারে!!
 
আমি ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতিকে এইতো সেদিন ডাচ এবং বেলজিয়াম পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিয়ে বলতে শুনেছি, তিনি বললেন যে "আপনারা যদি পুতিনকে এই আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করা এবং বিপর্যয় ঘটানো বন্ধ আর পুতিনকে দায়ী না করেন, তাহলে আপনারা ভবিষ্যতে অন্যদেরও একই কাজ করতে উত্সাহিত করবেন এবং আপনারা এই ধরনের সহিংসতা এবং নৃশংসতার জন্য নৈতিকভাবে দায়ী হবেন।এটি একটি রেডলাইন যা আমাদের অবশ্যই অতিক্রম করতে দেওয়া উচিত না।” আমি তার সাথে ১০০% একমত। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল যে, পশ্চিমাদেশ গুলো আর ন্যাটো ১৯০০ শতাব্দী এবং ২০০০ এর দশকে সেই রেডলাইন কতবার অতিক্রম করেছে! আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি মধ্যম আঙুল দেখিয়ে ভিয়েতনাম, যুগোস্লাভিয়া, আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া আক্রমণ করছে এবং এখনও ফিলিস্তিন ও ইয়েমেনে তা চলতে সাহায্য করছে? আমরা কি দেখিনি যে প্রবল পশ্চিমা শক্তি কীভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে অকথ্য মানব ও অবকাঠামোগত বিপর্যয় ঘটিয়েছে? বুশ এবং ব্লেয়ার যুদ্ধাপরাধ করে দায়মুক্তির সাথে এর থেকে বেরিয়ে আসে!! কেউ তাদের চ্যালেঞ্জ করার সাহস করেনি!! এটি কি অন্য শক্তিকে বা শাসককে একই কাজ করতে উত্সাহিত করেনি বা করছে না? আমাদের জানতে হবে জেলেনস্কি কি ফিলিস্তিনদের নিপীড়ন ও ধ্বংসের বিরোধিতা করেছেন নাকি ইসরায়েলি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করেছেন। আমরা জানি তিনি কি করেছেন। কে প্রথম রেডলাইন অতিক্রম করেছে এবং কে এখন এবং ভবিষ্যতে একই কাজ করতে উত্সাহিত করেছে? তাদের এখন কি জোর গলায় কোনটি সঠিক তা বলার কোন নৈতিক অধিকার আছে?
 
পশ্চিমা রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া (দুর্ভাগ্যবশত অনেক বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যম তাদের সংবাদ পুনরাবৃত্তি করছে, এমনকি আল জাজিরা পশ্চিমা দেশগুলিতে নিষিদ্ধ হওয়ার ভয়ে তাদের মত, একতরফা সংবাদ, প্রতিফলিত করছে, একই সুরে তাদের একই গান গাইছে), বলছে পুতিন অক্সিজেন চোষা বোমা, ফসফরাস বোমা, নির্বিচার বোমা ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করার ফলে যুদ্ধাপরাধী। পুতিন ইউক্রেনে স্কুল, হাসপাতাল ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করা সহ কয়েক হাজার মানুষ হত্যা করেছে। একই রাজনীতিবিদ, মিডিয়া, তথাকথিত বুদ্ধিজীবী এবং ভাষ্যকাররা কি ইরাকে ৪২ দিনের নির্বিচার বোমা হামলার ধ্বংসযজ্ঞকে একই ভাবে প্রতিফলিত করেছিল? ঘরবাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল ধ্বংস করে হাজার হাজার শিশু, মহিলা আর মানুষ হত্যা করার সংবাদ তারা কি একই পদ্ধতিতে, একই সুরে এবং ভাষায় প্রতিফলিত করেছিল? জাপানে পরমাণু বোমা, ভিয়েতনামে নাপালম বোমা, কার্পেট বোমা, আফগানিস্তানে অক্সিজেন চোষা বোমা এবং মাদার অফ অল বোমা, যুগোস্লাভিয়া ও ইরাকে ইউরেনিয়াম নিষ্কাশন বোমা, যার ফলশ্রুতিতে আজ অবধি হাজার হাজার শিশু জন্মগত বিকৃতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করছে তারা তা কতটা বা কিভাবে প্রতিফলিত করেছিল বা এখন করছে? বুশ এবং ব্লেয়ার আর ন্যাটো দেশগুলো তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য জাতীয় নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে অগ্রিম ধ্বংসের ( preemptive strike) বৈধতার আন্তর্জাতিক আদেশের মিথ্যা আখ্যান তৈরি করেছে। পুতিন ইউক্রেনে তার অননুমোদিত যুদ্ধকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য সেই একই অগ্রিম ধ্বংসের পশ্চিমের বর্ণনা ব্যবহার করছেন। এখনো গাজা, সবচেয়ে জনাকীর্ণ জায়গা বা আপনি যাকে একটি সভ্য বিশ্বের মানুষের তৈরি কারাগার বলতে পারেন বা ইয়েমেনে হাজার হাজার লোককে হত্যার করা হচ্ছে? এখনো ড্রোন হামলায় কত নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছে! পশ্চিমা সরকার বা মিডিয়া কী ভূমিকা পালন করছে সেই মানবিক দুর্দশার প্রতিফলন করতে? বা তারা এখন পর্যন্ত কী শিক্ষা নিয়েছে বা পশ্চিমা দেশগুলো তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নিচ্ছে? অনুগ্রহ করে বার বার আমাকে বলবেন না যে “এক অন্যায় অন্য অন্যায়ের যৌক্তিকতা দেয় না”। আপনাদের একই যুক্তির পিছনে লুকিয়ে থাকা আমরা বার বার অনেক দেখেছি, যথেষ্ট হয়েছে, আর কুমিরের একই বাচ্চা বার বার দেখাবেন না। কেন এই উদাসীনতা? কেন এই বৈষম্য এবং দ্বৈত নৈতিকতা!! আমরা কি অতীতের আমাদের অপকর্ম থেকে শিখে এখনও একই কাজ করা বন্ধ করেছি? কেন আমরা এখনও মনে করি যে আমাদের এখনও অন্যদের নৈতিকতা মানার বক্তৃতা দেয়ার কর্তৃত্ব আছে? অন্যদের তাদের নৈতিকতার ঘর ঠিকমত সাজাতে বলার আগে অনুগ্রহ করে আসুন আমরা আমাদের নিজের ঘর গুছিয়েনি।

একটি ছোট স্বাধীন দ্বীপ দেশ সলোমন দ্বীপ, চীনের সাথে একটি নিরাপত্তা চুক্তি সম্পর্কে আলোচনা করছে (বা সাইন করতে চলেছে) এবং দেশটি চীনকে একটি নৌ ঘাঁটি করার অনুমতি হয়ত দিচ্ছে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর বিরুদ্ধে সলোমন দ্বীপকে হুমকি দিচ্ছে, নির্বাচিত সরকারের শাসন পরিবর্তনের (régime change) কথা বলছে কারণ সলোমন দ্বীপ অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের উপকূল থেকে ২০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, এই ধরনের চুক্তি তাদের দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি! তাদের কথামত সলোমন দ্বীপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সার্বভৌম অধিকার থাকা উচিত নয় এবং থাকবে না! কিন্তু ন্যাটো তাদের ইচ্ছামতো বিস্তৃত হতে পারে। তারা বলছে প্রতিটি সার্বভৌম দেশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং এমনকি আপনার দেশের পাশে হলেও অন্য কেউ এর সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেবে না বা নিতে দেওয়া হবে না। কি একটি অতভুত, বিপরীত, সুবিধাবাদী আদর্শ! কেন এই ভিন্ন বিচার আর পার্থক্য আমাদের তথাকথিত সভ্য বিশ্বে!!!

অনেকেই বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউক্রেনই নাকি ইউরোপে প্রথম নৃশংসতা। ন্যাটো, ইউরোপ এবং পশ্চিমা মিডিয়া বর্তমানে সেই ভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছে। সত্য কি তাই?
 
৩০ বছর আগে এই সপ্তাহে, ইউক্রেনের মতো বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় একই ধরনের নৃশংসতার বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তিন দশক আগে ৬-৭ই এপ্রিল, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ নতুন বসনিয়ান প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দেয়, তখন রাশিয়ান-সমর্থিত সার্বিয়ান এবং বসনিয়ান সার্ব স্নাইপার এবং আর্টিলারি বন্দুকধারীরা রাজধানী সারাজেভোতে গুলি চালায়, জার্মানির তৃতীয় রাইখের পর থেকে ইউরোপকে ধ্বংস করার জন্য সবচেয়ে খারাপ হত্যাকাণ্ডের সূচনা করে। কেউ প্রার্থনা করে না যে ইউক্রেন সেই ভয়ঙ্কর শিরোনামটি দখল করবে, যদি এটি ইতিমধ্যেই না করে থাকে।
 
আমরা এখন বিস্ময়কর পার্থক্য লক্ষ্য করছি। যদিও পশ্চিমে বেশিরভাগই ইউক্রেনে নৃশংসতার বিরুদ্ধে সঠিকভাবে সমাবিত হয়েছে। কিন্তু বসনিয়ার মুসলমানদের এবং ক্রোয়েট ক্যাথলিকদের সহিংসতার সুনামির বিরুদ্ধে তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভ্রান্তি, এবং উদাসীনতা দেখা দিয়েছিল - এমনকি অবিশ্বাস্যভাবে কেউ কেউ সার্বিয়ান এবং বসনিয়ান সার্ব আক্রমণকারীদের তুষ্টকরণ এবং এমনকি সমর্থনও করেছিল। "তথাকথিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে" এখন দেখা যাচ্ছে ইউক্রেনের দুঃস্বপ্নের তিন সপ্তাহের মধ্যে তার সমাধান খুঁজতে। অত্যন্ত দুঃখজনক কিন্তু সত্য যে বসনিয়ায় তাদের দুঃস্বপ্ন আর নির্বিচারে এবং নৃশংসভাবে বহু মানুষের হত্যা বন্ধে তিন বছর ধরে "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়" দ্বারা টানাটানি করা হয়েছিল!

ওমরস্কা, বসনিয়া কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে আমরা কাটা তারের বেড়ার পিছনে ক্ষুধার্ত এবং হাড় দেখা দুর্বল মানুষদের দেখেছি যেমনটি আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আউশউইৎস, পোল্যান্ড ক্যাম্পে দেখেছি। জুলাই , ১৯৯৫ সালে, তিন রক্তাক্ত বছর পরে, স্রেব্রেনিকার "নিরাপদ এলাকা" পতনের পাঁচ দিনের মধ্যে ৮০০০ পুরুষ ও বালককে নির্মম, সংক্ষিপ্তভাবে হত্যা করা হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত এবং সবচেয়ে দুঃখজনক যদিও অত্যন্ত শক্তিশালী এবং জাতিসংঘের সৈন্যরা এই গণহত্যার শিকার ব্যক্তিদের সেই খুনিদের থেকে তাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। জাতিসংঘের ওই বাহিনীর মধ্যে ইউরোপীয় দেশগুলোর সেনাবাহিনী ছিল কিন্তু তারা সেই গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বন্ধে কিছুই করেনি। তারা নীরব দর্শক ছিল। আমরা লেবাননের সাবরা ও শাতিলা শিবিরে প্রায় ৩৫০০ মানুষ, পুরুষ, মহিলা এবং শিশু হত্যাকাণ্ডে দখলদার বাহিনী ইসরায়েলি সৈন্যদের তথাকথিত একই নীরব দর্শকের ছবি দেখেছি। তারা চাইলে সেই গণহত্যা বন্ধ করতে পারত কিন্তু তারা তা করেনি। দ:খের বিষয় তাৎক্ষনিক আমরা তথাকথিত আন্তর্জাতিক সভ্য মানুষের তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া দেখিনি।

অবরোধের মধ্যে থাকা, জাতিসংঘ ঘোষিত বিচ্ছিন্ন "নিরাপদ এলাকায়" পূর্ব বসনিয়ার প্রায় প্রতিটি মুসলিম বাসিন্দাকে হয় হত্যা বা বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল এবং শিবিরে বন্দী করে রাখা অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়েছিল। গ্রাম ও মসজিদ জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। বসনিয়ায় ১০০,০০০ মৃত এবং দুই মিলিয়ন (২০ লাখ) বাস্তুচ্যুতদের মধ্যে বেশিরভাগই স্লাভিক মুসলিম ছিল। কিছু বেঁচে থাকা মানুষ মনে করে এই হত্যা কাণ্ডে কিছু পশ্চিমাদের যোগসাজশ ছিল, কারণ যাদের মধ্যে নৃশংসতা চালানো হয়েছিল তারা শুধুমাত্র মুসলিম জনগণ ছিল বলে। কিন্তু বলা দরকার সেই নৃশংসতার অনেক বসনিয়ান ক্রোয়েট ক্যাথলিকও শিকার হয়ে ছিল। ১৯৯১ সালে ক্রোয়েশিয়ার স্বাধীনতা যুদ্ধে, দানিউব শহর ভুকোভার যা কল্পনার বাইরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, সেই সময় একই মনোভাব সেই ধ্বংসের সাথে সম্পর্কিত ছিল।
 
বসনিয়ার সেনাবাহিনীর যদি এখনকার ইউক্রেনের প্রতি জনসমর্থনের এক দশমাংশ এবং সামরিক সমর্থনের এক বিশ ভাগ থাকত, তাহলে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যেত, এক লাখ প্রাণ রক্ষা পেত; এছাড়াও হারানো তিন বছর আর লাখ লাখ ঘর রক্ষা করা যেত।
 
যথাযথ কারণে আজ আমরা ইউক্রেনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছি, করা উচিত। তাহলে আজকের তথাকথিত পশ্চিমা সভ্যতার সমর্থন কেন বসনিয়া যুদ্ধের সময় ঘটেনি? হাজার হাজার মানুষ লন্ডনের আর এর পাশাপাশি অন্য অনেক ইউরোপীয় শহরে নীল এবং হলুদের সমুদ্রের সাথে রাস্তায় মিছিল করেছে, ৩০ বছর আগে তাহলে কেন একই নীল এবং হলুদ রঙের বসনিয়ানদের জন্য এত কম বা প্রায় কোনও প্রতিবাদ মিছিল ছিল না? আমরা আজ কিয়েভে যা ঘটছে তার সাথে সারায়েভোতে যা ঘটেছে তার তুলনা করতে পারি যেমন আমরা মারিউপোলের ধ্বংসলীলাকে স্রেব্রেনিকা বা গোরাজদে এর সাথে তুলনা করতে পারি। আমরা কি কিছু শিখেছি বা ভবিষ্যতে আমরা কি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন করব?

এখন ইউক্রেনে পুতিনের দ্বারা প্রতিধ্বনিত সহিংসতার সাথে বসনিয়ায় সহযোগিতা করা কেন ঠিক হবে? কেন অস্ট্রিয়ান লেখক পিটার হ্যান্ডকে নোবেল পুরষ্কার দেওয়া ঠিক হবে, যখন তিনি ২০১৯ সালে, "বৃহত্তর সার্বিয়া" প্রকল্পের প্রশংসা করেছিলেন এবং রাষ্ট্রপতি মিলোশেভিচের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন? গণহত্যার স্থপতি; এবং কথিত উদার নারীবাদী ওলগা টোকারজুকের তার নিজের পুরস্কার গ্রহণ করার সময় সেই পিটার হ্যান্ডকে আলিঙ্গন করেছিলেন,যখন স্রেব্রেনিকার মায়েরা অশ্রুসিক্তভাবে বাইরে প্রদর্শন করেছিলেন? প্রাক্তন ট্রটস্কাইট ক্লেয়ার ফক্স, বিবিসি রেডিওর ব্রেক্সিট তারকা জোর দিয়ে বলেছিলেন যে বসনিয়ার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পগুলি একটি বানোয়াট গল্প, তাকে কেন ব্যারনেস বানানো হবে? প্রশ্ন রয়ে গেছে, পশ্চিমে আমরা বিভিন্ন জায়গায় বা বিভিন্ন লোকের নৃশংসতার প্রতি কতটা ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া জানাই!!

কেন অতীতের বসনিয়া ব্যাপার হবে না, যেমন সঠিক কারণে ইউক্রেন একেবারে আমাদের সবার জন্য গুরুত্বপূর্ণ?  আমরা কি কখনও অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছি এবং আমাদের নিজস্ব স্বার্থকে শক্তিশালী করতে অন্যদের বারবার একই ভুল করতে সহায়তা দিচ্ছি? যদিও এই প্রশ্ন, এই উদাসীনতা, বৈষম্য খুব বিস্ময়কর কিন্তু বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য তা পুনরাবৃত্তি করা উচিত নয়। আমাদের একই নৈতিকতা এবং নৈতিক বিচার থাকা দরকার। আমাদের আজ সত্যিই একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থা দরকার, যেখানে ছোট বা বড়, পারমাণবিক বোমা থাকুক বা না থাকুক, সুপার পাওয়ার হোক বা না হোক, যে প্রতিষ্ঠায় এবং বিতরণে সব দেশেই সম্প্রীতি, মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের সাথে একসাথে বসবাস করতে পারবে। আর কোন উদাসীনতা, কোন বৈষম্য আর কোন যুদ্ধ নয়। কোভিড আমাদের জীবনকে ইতিমধ্যে কঠিন করে তুলেছে, আসুন জীবনকে আরও কঠিন না করি। আসুন আমাদের মধ্যে থাকা পৃথক এবং অসংখ্য পার্থক্য এবং স্বার্থ ভুলে যাই। আসুন একসাথে কাজ করে এই যুদ্ধ বন্ধ করি এবং শান্তি ও সম্প্রীতিতে বাস করি। আসুন একসাথে অগ্রসর হই।

(বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে নেওয়া তথ্য নিয়ে লেখা)


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ডা. কাইয়ুম তালুকদার যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

সবার জন্য স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক অভাবনীয়, অনন্য এবং যুগান্তকারী একটি মডেল। শিশু স্বাস্থ্য, মাতৃ স্বাস্থ্য এবং কিশোরীদের স্বাস্থ্য পরিসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ। নবজাতকের মৃত্যু, মাতৃ মৃত্যু কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক মডেল আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ অনুসরণ শুরু করেছে। গত বছর ১৭ মে কমিউনিটি ক্লিনিক ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিসিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ সারা বিশ্বের প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রত্যাশী জনগণের জন্য ‘আলোক বর্তিকা’। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ‘কমিউনিটি ক্লিনিক’ এর প্রবক্তা। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা উন্নয়ন কৌশল জাতির পিতার ভাবনা থেকেই উৎসারিত। অল্প সময়ের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রান্তিক সুবিধা বঞ্চিত মানুষের আপন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে জনগণের বিপুল সমর্থনে আবার সরকার গঠন করেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ভবিষ্যতে আর কোন অপশক্তি যেন কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রম বন্ধ করতে না পারে সেজন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এই প্রতিষ্ঠানের সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করেন। বর্তমানে অংশীদারিত্বের মাধ্যমে নির্মিত হচ্ছে স্বাস্থ্য সেবার ‘বাতিঘর’ এই প্রতিষ্ঠানটি। যেখানে জনগণ জমি দিচ্ছেন, সরকার ভবন করে দিচ্ছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকের কার্যক্রমের পুরোটাই পরিচালিত হচ্ছে ডিজিটাল পদ্ধতিতে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগ মানেই স্মার্ট উদ্যোগ। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার উদ্ভাবন মানেই জনবান্ধব কর্মসূচি। কমিউনিটি ক্লিনিক পাল্টে দিচ্ছে গ্রামীণ জনপদ। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে কমিউনিটি ক্লিনিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ফরিদা ইয়াসমিন, এমপি যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

আজকে আমরা ১৭ মে নিয়ে কথা বলছি। যেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। আবার গত বছর এই দিনে তাঁর চিন্তা প্রসূত কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আজকে আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, উন্নয়নশীল বাংলাদেশের কথা বলছি, যে স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা দেখছি, একদিন উন্নত বাংলাদেশ হব বলে স্বপ্ন দেখছি এই সবকিছু শেখ হাসিনার স্বপ্ন, শেখ হাসিনার ইনিশিয়েটিভ। বঙ্গবন্ধু স্বপ্নের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা স্মরণ করতে চাই সে দিনটি যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলেন। সমগ্র বাঙালীর আনন্দিত উদ্বেলিত অপেক্ষার দিন। সমস্ত কিছু উপেক্ষা করে মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যাকে স্বাগত জানিয়েছে সেদিন। সেদিন তিনি দেশে আসার পর ৩২ নম্বরে ঢুকতে পারেননি। তিনি চেয়েছিলেন একটি মিলাদ করবেন, নিজের বাড়িতে ঢুকবেন কিন্তু সেটি তিনি পারেননি। তাকে রাস্তায় বসে মিলাদ পড়াতে হয়েছে। তার ওপর এত জুলুম বাধা বিপত্তি সব কিছু পেরিয়ে আজকে তিনি বাংলাদেশের শুধু রাষ্ট্রনায়ক না, তিনি সারা বিশ্বের একজন নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। বিশ্ববাসী আজ শেখ হাসিনাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারে না। বাংলাদেশের একজন প্রধানমন্ত্রীকে সেরকম গুরুত্ব না দিলেও পারত কিন্তু তারা শেখ হাসিনাকে উপেক্ষা করতে পারেন না। কারণ তিনি শেখ হাসিনা। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। তাঁর যে স্বপ্ন, তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের যে উন্নয়ন সেটি সকলের কাছে একটি বিস্ময়। আজকে পাকিস্তানিরা বলে আমাদেরকে বাংলাদেশ বানিয়ে দাও। 

ছিয়ানব্বইয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় এসেই শেখ হাসিনা জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপন করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক এর মত একটি উদ্যোগ এটি কেউ চিন্তাও করেননি। এটা একেবারে শেখ হাসিনার চিন্তাপ্রসূত। কিন্তু সরকারের পালা বদল হবার সাথে সাথে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসেছে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দিলেন। কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ হওয়ার ফলে আবার জনগণের স্বাস্থ্যসেবা মুখ থুবড়ে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো একেবারে ভূতড়ে বাড়ির মত হয়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী পরের বার ক্ষমতায় এসে সেই ক্লিনিকগুলো আবার চালু করেন। জাতিসংঘ এটিকে মডেল হিসেবে নিয়েছে এবং ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সেটি বন্ধ করে দিয়েছিল। আজকের দিনে এসে বুঝা যায় যে এটি আসলে কতটা ইনোভেশন ছিল। শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ আজ অন্যান্য দেশ অনুসরণ করতে চায়। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

১৮ কোটি মানুষের ঠিকানা জননেত্রী শেখ হাসিনা


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক অধ্যাপক ডা. নুরুল হুদা লেনিন যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

১৭৮১ সালে পলাশি যুদ্ধে ইতিহাসের ঘৃণিত সেনাপতি মির্জাফরের বিশ্বাসঘাতকতায় নবাব সিরাজ উদ্দৌলার বিদায়ের মধ্য দিয়ে ২০০ বছরের গোলামী আমাদের ললাটে এসেছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ স্বাধীন হলেও বাঙালী এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা পায়নি। যার পটভূমিতে বীরদর্পে আবির্ভূত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭১ থেকে ৭৫’ বাঙালি জাতির ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার লাল পতাকা উড়েছিল বাঙালী আশায় বুক বেধেছিল। কিন্তু বাংলার নব্য মির্জাফরেরা জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার চেতনাকে ভুলুন্ঠিত করেছিল। ভাগ্যক্রমে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা বিদেশে থাকার কারণে জীবনে বেচে যান। কোন অন্যায় না করেও পিতার অসাধারণ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত স্বাধীন বাংলাদেশে আসতে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। সামরিক শাসক এবং শাসনের কারণে বরণ করতে হয়েছিল নির্বাসিত জীবন। দেশের আপামর জনগণ, আবাল-বৃদ্ধা-বণিতা শেখ হাসিনার এই অকৃত্রিম ভালোবাসাকে হৃদয়ের বেরোমিটার দিয়ে মাপতে পারে তাকে বাংলায় রুখবে কে। তাইতো ঐক্যের প্রতীক হয়ে বাঙালির ভাগ্যাকাশে জ্বলজ্বলে স্বধীনতার সূর্য হাতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেছিলেন শেখ হাসিনা নামের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। যার আলোর বিচ্ছরণ ঘটাচ্ছে ১৮ কোটি মানুষের প্রতিটি হৃদয়ে। বাঙালির ভাগ্য উন্নয়নের চাকা এখন সঠিক পথে সঠিক গন্তব্যের দিকে অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ধাবমান। 

১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন তিনি বাংলার মাটিতে পা রাখেন সেদিন তার পথ ছিল অনেকটা কন্টকাকীর্ণ। নিজের বাড়ি, নিজের পিতার বাড়িতে একজন সাধারণ নাগরিকেরও প্রবেশের অধিকার থাকে। কিন্তু শেখ হাসিনার সেই অধিকার খর্ব করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালের ১৭ মে, দেশের মাটিতে পা রাখার পর শেখ হাসিনার হৃদয়ের টেবিলে দু’টি ফাইল ছিল। দু’টি ফাইলের একটি ছিল ৭৫ এর ১৫ আগস্ট পিতা-মাতাসহ স্বজন হারানো মমগাথা ও তাঁর বিচার প্রসঙ্গ। অন্যটি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ তথা বাঙালী জাতির ভাগ্য উন্নয়ন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে যদি জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে না ফিরতেন, তবে বাঙালি জাতির ভাগ্য কখনো আলোর মুখ দেখতো না। তলিয়ে থাকতো অটল অন্ধকারে। তাইতো বাংলার মানুষ সবাই ধারণ করে একটি শ্লোগান, ‘১৮ কোটি মানুষের ঠিকানা, জননেত্রী শেখ হাসিনা।’  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

বদলে যাওয়ার বাংলাদেশের কারিগরি শেখ হাসিনা


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বিয়োগান্তের ঘটনায় জাতি ছিল দিক নির্দেশনাহীন। নারকীয় এই ঘটনায় জনগণ হয়ে পড়েন দিশেহারা। প্রতিবাদ, প্রতিরোধ করার কোন শক্তি সাহস ছিল না। দলের অনেক বড় বড় নেতাও ছিলেন কিংকর্তব্যবিমূঢ়। ধানমন্ডির ৩২ বাড়ি ছিল কবরের নীরবতা। সমগ্র জাতি তখন অন্ধকারে। সামরিক বুটে পিষ্ঠ গণতন্ত্র। নির্বাসনে সংবিধান আর মানুষের মৌলিক অধিকার। বাক স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। এমনকি বঙ্গবন্ধু নাম উচ্চারণ ছিল নিষিদ্ধ। 

তৎকালীন রেডিও, টেলিভিশন কোথাও বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণ করতে দেওয়া হত না। দেশকে টেলে দেওয়া হয়েছিল উল্টোপথে। ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল ১৯৭৫ এসে সেই বাংলাদেশ হারিয়ে গিয়েছিল। সারা দেশে শুধু তখন হতাশ আর নাভিশ্বাস অবস্থা। এর প্রায় ৬ বছর পর নির্বাসনে থাকার জননেত্রী শেখ হাসিনা জীবনের পরোয়া না করে ভয় ভীতি উপেক্ষা করে অনেক ঝুকি নিয়ে পরিবারের সদস্যদের বিদেশের মাটিতে রেখে সেই ১৯৮১ সালের ১৭ মে পদাপণ করেন বাংলার মাটিতে। তিনি যখন দেশে এসেছিলেন তখন অভূতপূর্ব দৃশ্যের অবতারণ হয়। 

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ তাকে পেয়ে আনন্দিত উদ্বেলিত ছিলেন। তিনি এসেছিলেন এক আলোক বতিতা, আলোর ফেরিয়াওলা হয়ে। তিনি হয়ে উঠেন সকলের আশা আকাঙ্ক্ষা প্রতীক। বিশ্বস্ততার ঠিকানা। শাসক গোষ্ঠীর ভিত তখন কেপে উঠেছিল। দেশে আসার পর জননেত্রী শেখ হাসিনার চলার পথ সহজ ছিল না। মসৃণ ছিলো না। কিন্তু তিনি সমস্ত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে তার মেধা, দক্ষতা, সততা, নিষ্ঠা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, সৃজনশীলতা উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি আর দূরদর্শী নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল আর আত্মনির্ভরশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। জনগণ ফিরে পায় তার সব ধরনের অধিকার। আল্লাহ অশেষ রহমত শেখ হাসিনার মতা আমরা একজন নেত্রী পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু বানিয়েছেন বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনা বানিয়েছেন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। যত দিন থাকবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ পথ হারাবে না বাংলাদেশ।


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়


Thumbnail

সাম্প্রতি ‘‘১৭ মে ১৯৮১, তোমার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ এর সূচনা, ১৭ মে ২০২৩, কমিউনিটি ক্লিনিক: ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ দিলো নতুন মর্যাদা’’ শীর্ষক এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ চিকিৎসা গবেষণা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিপ্রেক্ষিতের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ বোরহান কবীর। বৈঠক অধ্যাপক ডা. নাহিদ ফেরদৌসী যে আলোচনা করেছেন তাঁর চুম্বক অংশ প্রকাশ করা হলো।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের মৌলিক চরিত্রকেই বদলে ফেলা হয়। বিশেষ করে পাকিস্তানি ধারায় সামরিক শাসনের সংস্কৃতির প্রবর্তন ঘটে দেশে। সাম্প্রদায়িকতা ফিরে আসে রাজনীতি, প্রশাসন, শিক্ষা, সংস্কৃতিসহ সমাজের বিভিন্ন স্তরে। একের পর এক স্বপ্নভঙ্গের ঘটনা ঘটতে থাকে দেশে। বাঙালি জাতির জীবনে জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসে ঘোর অমানিশার অন্ধকার। ঠিক এমন প্রতিকূল সময় ১৯৮১ সালের ১৭ মে সামরিক শাসকের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর রক্তস্নাত মাতৃভূমিতে ফিরে আসেন বাঙালির মুক্তির মহানায়কের যোগ্য উত্তরসূরি জননেত্রী শেখ হাসিনা। তার স্বদেশে ফেরার ওইদিন রাজধানী ঢাকা মিছিলের নগরীতে পরিণত হয়। তুমুল বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে একনজর দেখার জন্য বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর এলাকাজুড়ে ছিল মানুষের ঢল। শেখ হাসিনা - সেদিন বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছেন কোটি বাঙালির আশার প্রদীপ হয়ে - বাঙালি জাতিকে আলোর ঠিকানায় পৌছে দিতে। সেদিন বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে সারা দেশ থেকে আসা লাখ মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা। জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে পিতৃহত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার শপথ নেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

জননেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার সাহসী ভূমিকা রেখে চলেছেন। তিনি ফিরে আসার পর আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ফিরে পেয়েছি। দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ এর সূচনা হয়েছে। ছিয়ানব্বইয়ে সরকার গঠন করে তিনি ‘দায়মুক্তি অধ্যাদেশ বাতিল আইন, ১৯৯৬’ সংসদে পাশ করে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের ঘাতকদের বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করান এবং পরবর্তীতে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসেন। তাঁর আন্তরিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় মহান ‘২১ ফেব্রুয়ারি’ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পায়। ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কারো মধ্যস্থতা ছাড়াই স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি।

১৭ মে ২০২৩ দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অসামান্য উদ্ভাবন “কমিউনিটি ক্লিনিক'-কে জাতিসংঘ “দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা বাংলাদেশের সবার জন্য গর্বের। জাতিসংঘ প্রধানমন্ত্রীর এই উদ্ভাবনী চিন্তাকে জাতিসংঘের অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেও অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের বিস্ময়। তার গতিশীল নেতৃত্বে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন