ইনসাইড থট

কোভিড-১৯, ভ্যাকসিন এবং ভবিষ্যৎ কৌশল


Thumbnail কোভিড-১৯, ভ্যাকসিন এবং ভবিষ্যৎ কৌশল

জেনাভা, সুইজারল্যান্ডে আমি আমার দ্বিতিয় কোভিড টিকা পাওয়ার ৬ মাসের পর ২০২১ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি তৃতীয় বা বুস্টার COVID-19 ভ্যাকসিন টিকা পেয়েছি। তিনটিই ফাইজার mRNA ভ্যাকসিন ছিল। যুক্তরাজ্যে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত মনে হচ্ছিল কোভিডকে গুরুত্ব সহকারে না নেওয়া একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল, ভাবটা এমন ছিল যেন মারাত্মক কিছুই ঘটেনি বা ঘটবে না। আমি সে বছর জুন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের লিভারপুলে বসবাস করতাম। লিভারপুলে ২০২০ সালের মার্চের শুরুতে আমি আমার বন্ধুদের সাথে একটি অডিটোরিয়ামে জ্যাজ মিউজিক ফেস্টিভ্যাল উপভোগ করতে গিয়েছিলাম। ৩০০০ জনেরও বেশি লোক একে অপরের পাশে বসে, চিৎকার করে গানের সাথে তাল মিলিয়ে নাচ করছিল। কোনও সামাজিক দূরত্ব এবং মুখোশ কারো ছিল না, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের প্রাপ্যতার প্রশ্নই আসে না। এরপর এপ্রিল মাসে আমি লিভারপুল এম্পায়ার থিয়েটারে একটি অপেরা উপভোগ করতে গিয়েছিলাম, সেখানেও ৪০০০ জনেরও বেশি লোক একে অপরের পাশে বসেছিল। আমাদের পাশে বসা মধ্যবয়সী মহিলারা এক বোতল রেড ওয়াইন হাতে মদ্যপান করছিল, কোনও মুখোশ নেই, কোনও সামাজিক দূরত্ব নেই। তারপর কি হল তা সবার জানা। COVID-19 যুক্তরাজ্যে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কেয়ার হোমের বিপুল সংখ্যক বৃদ্ধ মারা গেল। তখনও লকডাউন জারি করা হয়নি। তখন ভাগ্যক্রমে আমি সংক্রমিত হইনি। আমাদের অনেক সহকর্মী সংক্রামিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। যখন পরিস্থিতি সত্যিই খারাপ হয়ে গিয়েছিল তখন লকডাউন আরোপ করার পর আমি কঠোরভাবে লকডাউন অনুসরণ করেছি এবং ভাগ্যক্রমে আমি সংক্রামের থেকে নিজেকে বাঁচাতে পেরেছি। নেতিবাচক পিসিআর পরীক্ষার সহ আমি ২০২০ সালের জুলাইয়ের প্রথম দিকে যুক্তরাজ্য ছেড়ে জেনেভায় চলে আসি। তখন সারা সুইজারল্যান্ডে কঠোর লকডাউন আরোপ ছিল। কিছু মুদি দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকান, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, বিমানবন্দর এবং গণসমাবেশ বন্ধ বা নিষিদ্ধ ছিল। প্রয়োজনীয় মুদি কিনতে সবাইকে সেই কঠোর ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হতো– সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, দোকানে প্রবেশ করার আগে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা এবং সব সময় মাস্ক ব্যবহার করা। এপ্রিল ২০২১ এর মধ্যে আমি আমার দ্বিতীয় Pfizer টিকা পাওয়ার পর সাহস করে জুলাই মাসে লিভারপুলে গিয়েছিলাম। সেখানে আমি কঠোর ব্যবস্থা অনুসরণ করেছি - মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। সেই সময় যুক্তরাজ্যের খুব কম লোকই কোনও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করছিল। সে সময়ের মধ্যে যুক্তরাজ্য বিপুল সংখ্যক লোককে কোভিড টিকা দেওয়া শুরু করায় তারা তাদের স্বাধীনতা, যেমন খুশী তেমন ভাবে চলাফেরা করা, ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই শুরু করে। সৌভাগ্যবশত সেখানে দশ দিন থাকার পর, আমি সংক্রমিত না হয়ে (যাত্রার আগে পিসিআর পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ ছিল) নিরাপদে জেনেভায় ফিরে আসি। ২০২১ নভেম্বরে আমার বুস্টার টিকা দেওয়ার পরে আমি ২০২২ সালের জানুয়ারির শেষের দিকে আবার লিভারপুলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি যুক্তরাজ্যে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার খুব আরো কম ব্যবহার দেখে অবাক হয়েছিলাম। সেই সময়ে যুক্তরাজ্যে ওমিক্রন “ঝোপের আগুনের” মতো ছড়িয়ে পড়েছিল, যদিও হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু অনেক কম ছিল। অবাক হওয়া অনেক মানুষের আমার দিকে তাকানো সত্বেও আমি সব রকম প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করেছি। লিভারপুলে ১০দিন থাকার সময়, আমি দুই দিনের জন্য ট্রেনে (প্রতিবার দুই ঘণ্টার যাত্রা) লন্ডনে গিয়েছিলাম। আমি ম্যানচেস্টার বিমানবন্দর হয়ে বিমানে জেনেভায় ফিরে আসি। সেদিন ম্যানচেস্টার বিমানবন্দরে ছিল প্রচণ্ড ভিড়। প্রতি পাঁচ মিনিট পর পর, বিমানবন্দরের পাবলিক ঘোষণাগুলি মানুষকে মুখোশ পরতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত আমার মত মাএ ২-৫% মানুষ মাস্ক পরেছিল, কেউ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছিল না। যুক্তরাজ্যে সাফলতার সাথে প্রায় ৭০% লোককে ২টি ডোজ কোভিড টিকা দেওয়া আর ব্যাপক বুস্টার টিকা শুরু করার সফলতার কারনে হাসপাতালে ভর্তি, গুরুতর যত্ন এবং মৃত্যু হ্রাস করতে সহায়তা করছিল। সরকার তাদের টিকার রাজনৈতিক সাফল্যের ঢোল বাজতে শুরু করে। আমার কাছে কেন জানি মনে হয়েছিল যে সেখানে দেশের অর্থনীতির আরও মন্দা রোধ আর জনরোষ প্রতিরোধ করতে রাজনীতিবিদরা কাউকে কিছু না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন “লোকরা সংক্রামিত হউক এবং অনাক্রম্যতা অর্জন করুক” সেই কৌশল। কারন সরকারের বিদ্যমান প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কোন প্রয়োগ ছিল না।

জেনেভায় ফিরে আসার পরের দিন আমার ঘন ঘন প্রচুর হাঁচি শুরু হয়। অন্যথায় আমার কোন সমস্যা ছিল না, পুরোপুরি ভালো বোধ করছিলাম। সেইদিন আমি অন্য আটজন বয়স্ক সহকর্মীর সাথে একটি অফিস ঘরের গোল টেবিলের চারপাশে বসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত বৈঠকে যোগ দিয়েছিলাম (সুইজারল্যান্ড শুধুমাত্র Pfizer বা Moderna ভ্যাকসিন ব্যবহার করে এবং তাদের সবাই কোভিড mRNA বুস্টার ডোজ টিকা নিয়েছে)। বৈঠক চলাকালে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে আমার কনুইতে কয়েকবার হাঁচি দিয়েছিলাম। কেউ মাস্ক ব্যবহার করছিল না। পরের দিন আমার হালকা মাথাব্যথা শুরু হয় এবং তাপমাত্রা সামান্য বেশি ছিল, প্রায় ৩৭.৫’C। অন্য আর কোনো সমস্যা ছিল না। তৃতীয় দিন আমার স্ত্রীর হালকা মাথাব্যথা এবং হালকা জ্বর শুরু হয় (আমি তাকে সংক্রমিত করেছি)। আমরা বাড়িতে বসে নিজেরাই স্ব-কোভিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেই (আমাদের বাসায় অ্যান্টিজেন পরীক্ষার কিট ছিল)। আমরা উভয়ই কোভিডে ইতিবাচক দেখে অবাক হয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত যে আমি যুক্তরাজ্যে ওমিক্রনের দ্বারা সংক্রমিত হয়েছি। আমরা অবিলম্বে বিচ্ছিন্নতা শুরু করি এবং আমাদের সংস্পর্শে আসা সবাইকে জানাই। তাদের কারোরই কোনো উপসর্গ ছিল না এবং সকলেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার নেতিবাচক ফলাফল পায়। আমাদের হালকা উপসর্গগুলো দুই দিন ধরে চলে এবং এর পর কোনো লক্ষণ ছাড়াই আমরা ভালো বোধ করছিলাম। আমাদের প্রতিবেশী আমাদের প্রয়োজনীয় মুদি কেনাকাটা করতে সাহায্য করে। ১০দিন বিচ্ছিন্নতা পালন করার পর আমরা বাসায় স্ব-কোভিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করি এবং কোভিড নেতিবাচক ফলাফল পাই। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা মেনে আমরা আবার আমাদের স্বাভাবিক জীবন শুরু করি। আমাদের দুইজনের ফাইজারের তৃতীয় ডোজ থাকা সত্ত্বেও আমরা সংক্রমিত হয়েছি। টিকা আমাদের সংক্রমিত হওয়া বন্ধ করেনি কিন্তু আমাদেরকে ভোগান্তি আর হাসপাতালে ভর্তি করা থেকে বাঁচিয়েছে।

সফল টিকা কভারেজ পরে ভবিষ্যতে টিকা দেওয়ার কৌশল কী হওয়া উচিত তা নিয়ে কথা বলার জন্য আমি আমার গল্পটি বললাম। উচ্চ টিকা কভারেজ সহ বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশগুলি তাদের দেশ সম্পুর্ণ ভাবে খুলে দিয়েছে। যে কেউ কোভিড ভ্যাকসিনেশনের প্রমাণসহ, পিসিআর বা অ্যান্টিজেন পরীক্ষার প্রয়োজন ছাড়াই যে কোনও দেশ বা জায়গায় ভ্রমণ করতে পারে। মাস্ক পরার কোন বিধিনিষেদ নেই। এখন কম লোকই কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুসরণ করছে। যদিও ওমিক্রন মানুষকে সংক্রামিত করছে, কিন্তু কম উপসর্গ, হাসপাতালে ভর্তি এবং গুরুতর যত্নের প্রয়োজন অনেক কমে গেছে। চিকিৎসার উন্নতির কারনে মৃতের সংখ্যাও নগণ্য। ক্রমবর্ধমান ঋণ, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক, জনগণের অস্থিরতা, সামাজিক ও রাজনৈতিক কারনে ধনী উন্নত দেশগুলি লকডাউন এবং আর বিধিনিষেধ আরোপের কৌশল বন্ধ করতে একরকম বাধ্য হয়েছে। দেশগুলোতে অর্থনীতি ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার হচ্ছে। একমাস থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশে থাকার পর, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে (এ বিষয়ে আমি আমার পরবর্তী লেখায় লিখব), আমি হেলসিঙ্কি হয়ে ব্যাংকক থেকে জেনেভা ফিরে আসি। সর্বমোট উড়ন্ত সময় পনের ঘন্টা। বিমানে ঘোষণা করা হয়েছিল বিমানের ভিতর মাস্ক পরা এখন আর বাধ্যতামূলক নয়। বলা হল এটি এখন ব্যক্তিগত পছন্দ। আজ আমি একটি স্ব-অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করেছি এবং ফলাফল নেতিবাচক পেলাম।

আসুন এই প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উন্নয়নশীল দেশ বাংলাদেশের কথা বলি। প্রাথমিক হেঁচকি সত্ত্বেও কোভিড-১৯ টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব ভালো করেছে। ইতিমধ্যেই ৭০% এরও বেশি মানুষ ২ ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছে। বুস্টার টিকা দেওয়া পুরোদমে শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ দুর্বল গোষ্ঠী ইতোমধ্যেই তাদের বুস্টার ডোজ পেয়েছে। সংক্রমণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। পরীক্ষিত সংক্রামিত লোকের সংখ্যা গত কয়েক মাস ধরে ৫০-এর নিচে। মাঝে মাঝে একজনের মৃত্যু হলেও কয়েক সপ্তাহ ধরে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এই বর্তমান কোভিড পরিস্থিতির উন্নতিতে বাংলাদেশে কোভিড ভ্যাকসিনেশন আসলে কী ভূমিকা পালন করেছে তা নিয়ে আমরা বিতর্ক করতে পারি। এ অবস্থায় আমাদের বিবেচনা করা দরকার ভবিষ্যতে আমাদের জীবন আর জীবিকা বাঁচাতে পরবর্তী করণীয় কী হবে বা কি হওয়া উচিত?

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ শুধু ভ্যাকসিন কেনার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করেছে। কিছু দুষ্ট লোক বলছেন বাংলাদেশ ৪০ হাজার কোটির বেশী টাকা খরচ হয়েছে, তাদের মতে দুর্নীতির কারনে তা হয়েছে। কোভিড মহামারীর কারণে জীবন ও জীবিকা প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশের সর্বমোট আর্থ-সামাজিক খরচ সম্পর্কে কথা নাইবা বললাম। অন্যদিকে তৃতীয় ঢাকা বিমানবন্দর টার্মিনাল নির্মাণে বাংলাদেশের খরচ হচ্ছে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা, মেট্রো ট্রেন এবং পদ্মা সেতু প্রতিটি ৩৫ হাজার কোটি টাকা। যমুনা রেলসেতু নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম কক্সবাজার রেললাইন, সমস্ত অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরের উন্নয়ন, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন, অন্যান্য মেগা বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা ব্রিজ, দেশব্যাপী মহাসড়ক এবং গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ সব অবকাঠামোর উন্নয়ন আমাদের অর্থনীতির উন্নতি, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনীতি ও জীবিকার উন্নতি এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য অত্যাবশ্যক। তার জন্য, কোভিড বা কোভিড ছাড়া, অর্থের প্রয়োজন এবং অর্থনীতিকে তার পূর্ণ ক্ষমতায় চলতে দিতে হবে। হা ভ্যাকসিন জীবন ও জীবিকা বাঁচাবে। তবে মেগা প্রকল্প সহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক খাতে ব্যয় আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটাবে, জীবিকা বাড়াবে এবং আরও কর্মসংস্থান দেবে। আমি বিশ্বাস করি সবাই একমত হবেন ঐসব অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। অতএব, আমাদের অবশ্যই বিবেচনা করতে হবে ভবিষ্যতে কোন খাতের ব্যয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - খুব ব্যয়বহুল কোভিড গণ ভ্যাকসিনেশন অব্যাহত রাখা এবং তারজন্য বিপুল পরিমাণ তহবিল ব্যয় করা অথবা উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে বিনিয়োগের জন্য কঠোর ভাবে উপার্জন করা গুরুত্বপূর্ণ অর্থ ব্যয় করা?? অথবা জীবন ও জীবিকা বাঁচানোর জন্য আমাদের কী বিকল্প আছে তা বিবেচনা করে আমাদের একটি ভালো কৌশল গ্রহণ করা উচিত যা টেকসই হবে। চলুন আলোচনা করি।

সমস্ত উপলব্ধ ভ্যাকসিন হাসপাতালের যত্ন, বিশেষ করে হাসপাতালের গুরুতর যত্ন এবং মৃত্যু কমাতে কার্যকর। এই ভ্যাকসিনগুলির কোনটিই সংক্রমণ প্রতিরোধে কার্যকর নয়। যদিও কেউ কেউ দাবি করবে টিকা দেওয়ার কারণে সংক্রামিত ব্যক্তিদের মধ্যে ভাইরাল লোড হ্রাস পায়, তার কারনে সংক্রমণের হার হ্রাস পাওযার সমভাবনা আছে। যদিও এটা নিশ্চিত নয়। ভবিষ্যতে ব্যয়বহুল এমআরএনএ ভ্যাকসিন গ্রহণ করাও পরেও একই কাজ করবে। যাইহোক, ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ছয় মাস পর্যন্ত থাকে তাই বারবার বুস্টার ডোজের প্রয়োজন। বর্তমানে উপলব্ধ বেশিরভাগ টিকা ওমিক্রন বা ভবিষ্যতের উদীয়মান রূপগুলি সংক্রামন প্রতিরোধে কার্যকর হবে না। এটাই দুঃখজনক বাস্তবতা। অন্যদিকে, কোন আর্থিক ঝুঁকি ছাড়া ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো যারা ভ্যাকসিন তৈরি করছে, বিশেষ করে এমআরএনএ ভ্যাকসিন, সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ট্যাক্স প্রদানকারী সরকারি তহবিল থেকে অর্থায়ন করা হয়েছে। এসব কোম্পানির আর্থিক লাভ বিশাল, দুই অঙ্কের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। প্রতিষ্ঠানের সিইও এবং শেয়ার হোল্ডাররা দরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ এবং মৃত্যুর খরচে উপকৃত হচ্ছেন। তারা বৌদ্ধিক সম্পত্তির অধিকার মওকুফ করতে এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে তাদের নিজস্ব ভ্যাকসিন তৈরি করতে দিতে অস্বীকার করছে। একই সাথে তারা দেশগুলোকে চতুর্থ ডোজ এবং বার্ষিক ডোজ দেওয়ার জন্য তাদের টিকা ক্রয় চালিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, যেমন কখনো শেষ না হওয়া একটা খেলার মত। মনে হচ্ছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে তাদের নির্দেশ গ্রাস করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অনেক বিজ্ঞানী বা প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনও সেই কৌশল প্রচারের স্বার্থের দ্বন্দ্বে রয়েছেন।

ভাল খবর হল Pfizer, Marck এবং অন্যান্য অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলি হয় ইতিমধ্যে তৈরি করছে বা আরো উন্নত মুখে খাওয়া ওষুধ তৈরির প্রক্রিয়ায় রয়েছে যা উল্লেখযোগ্যভাবে ভ্যাকসিনের মতই কোভিডের কারণে ঘটা গুরুতর রোগ কমাতে পারে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া, হাসপাতালের গুরুতর যত্নের প্রয়োজন এবং মৃত্যু কমাতে পারে। এসব ওষুধের দাম তেমন বেশি নয়, চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম ধীরে ধীরে আরও কমছে। তাই আমরা বলতে পারি ব্যয়বহুল mRNA ভ্যাকসিন বা অন্য সব কোভিড টিকা অথবা মুখে খাওয়া ওষুধের কোভিড মহামারী বন্ধে একই প্রভাব রয়েছে। সম্প্রতি আমেরিকা কোভিড মহামারী মোকাবেলায় আফ্রিকান এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশগুলিকে সমর্থন করার জন্য “পরীক্ষা এবং চিকিত্সা (টেস্ট এবং ট্রিট)” নীতির একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিয়ার কথা ভাবছে।

জনস্বাস্থ্যের লক্ষ্য হল সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বোত্তম টেকসই কৌশল অবলম্বন করা, দুর্ভোগ এবং মৃত্যু কমানো, একই সাথে জীবিকা ও অর্থনীতিকে বাধাগ্রস্ত না করা। এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশ অত্যন্ত সফলভাবে কোভিড মহামারী এবং বাংলাদেশে এর প্রভাব মোকাবেলা করেছে। বাংলাদেশে স্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো কোভিডের মার্ক এবং ফাইজারের মুখে খাওয়া উভয় ওষুধই উৎপাদন করছে এবং ব্যাপকভাবে সেগুলো পাওয়া যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে থাকাকালীন আমি নিজেও তা দেখেছি। Pfizer ওষুধের সম্পূর্ণ চিকিৎসার মূল্য প্রায় ৪ হাজার টাকা (US$ ৪৫ এর কম)। সরকার ভ্যাট মওকুফ বা ভর্তুকি দিয়ে এর মূল্য আরো কমাতে পারে দরিদ্র লোকদের এই ওষুধের প্রয়োজনে। আমার ছোট ভাই এবং তার স্ত্রী সংক্রামিত হওয়ার পরে স্থানীয় ফার্মেসিতে গিয়ে ওষুধ কিনে ফাইজার ওষুধের চিকিত্সা বাসায় বসে করে এবং খুবই কম লক্ষণ এবং কষ্ট ছারা খুব দ্রুত সেরে উঠে।

তাহলে বাংলাদেশ কি ভবিষ্যতের জন্য “পরীক্ষা ও চিকিৎসার” অনুরূপ কৌশল অবলম্বন করবে বা করা উচিত? আমি বলব এখন থেকে “পরীক্ষা এবং চিকিত্সার” কৌশল অবলম্বন করুন এবং ব্যয়বহুল ভ্যাকসিন এবং টিকা নয় বরং উন্নয়নমূলক কাজের জন্য মূল্যবান অর্থ সঞ্চয় করুন। বাংলাদেশে ১৭০ মিলিয়ন মানুষের ৭০% (প্রায় ১১৯মিলিয়ন মানুষ) লোকদের বুস্টার এবং/অথবা বার্ষিক কোভিড টিকাদানের জন্য খরচ হবে (টিকা এবং টিকা দেওয়ার খরচ বিবেচনা করে) কয়েক বিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে, ধরা যাক বার্ষিক পরীক্ষা এবং ২ লাখ সংক্রামিত লোকের চিকিত্সার জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার খরচ হবে। প্রতি বছর ভ্যাকসিনের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার অন্যদিকে “পরীক্ষা এবং চিকিত্সার” জন্য কয়েক মিলিয়ন ডলার দেশে এবং লোকের উপর একই রকম প্রভাব ফেলবে। প্রাথমিক ভুলভাবে পরিচালিত লকডাউনের পরে দেশের সব জায়গায় ব্যাপক সংক্রমণ, উপসর্গবিহীন সংক্রমণের ব্যাপক বিস্তারের সাথে, কোভিডের বিরুদ্ধে উচ্চ স্তরের অর্জিত প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং উচ্চ কোভিড টিকাকরণ কভারেজের খুব সফলতার পর কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেমন দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য অর্থ সঞ্চয় করা উচিত বা ব্যয়বহুল কোভিড ভ্যাকসিন কেনা এবং বছরের পর বছর টিকা দেওয়ার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য অর্থ অপচয় করা উচিত। যতদিন ধনী দেশগুলো এবং WTO বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার মওকুফ করার এবং বাংলাদেশকে সেই ভ্যাকসিন তৈরি করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না, বাংলাদেশের উচিত “পরীক্ষা এবং চিকিত্সার” কৌশল অবলম্বন করা এবং রাজনৈতিক কারনে প্রয়োজনে শুধুমাত্র সবচেয়ে দুর্বল গোষ্ঠীর বুস্টার টিকা দেওয়া যেতে পারে। এই কৌশল জীবন ও জীবিকা বাঁচাতে এবং আরও অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে কার্যকর হবে।

আমি নিশ্চিত যে আমার “পরীক্ষা এবং চিকিত্সার” কৌশলের পরামর্শ দেশে বিশাল বিতর্ক তৈরি করবে তবে আমাদের এই বিতর্কটি আজই শুরু করতে হবে এবং আগামীকাল নয়। UN COVAX কৌশল উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। ধনী দেশের কোম্পানিগুলো প্রচুর মুনাফা লুটছে। আসুন সবাই মিলে সবদিক বিবেচনা করে আলোচনা করি এবং সিদ্ধান্ত নেই। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ ভ্যাকসিন কিনেছে এবং বিপুল পরিমাণ টিকা মজুদ রয়েছে। আমাদের যথেষ্ট পরিমান সমানভাবে কার্যকর বাড়িতে বসে মুখে খাওয়া কোভিড ওষুধও রয়েছে। তাই আরও কৌশলগত আলোচনার আগে সরকারের উচিত আর ভ্যাকসিন কেনা বন্ধ করা। কোভিড শীঘ্রই চলে যাচ্ছে না তবে আর বেশি বিপর্যয় সৃষ্টি করবে না, জীবন এবং জীবিকা চলতেই হবে এবং আমাদের এখনই ভবিষ্যতের কৌশল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আসুন আর কোভিড ভ্যাকসিন নয়, “পরীক্ষা এবং চিকিত্সা”এবং ভবিষ্যতের মহামারীর প্রস্তুতির কৌশলে কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয় করি।

কোভিড-১৯   ভ্যাকসিন   ভবিষ্যৎ কৌশল  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মা জীবনের প্রথম এবং বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক


Thumbnail

একটা গল্প দিয়ে শুরু করছি। এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে চাই আমি! প্রেমিক বলল, কী পরীক্ষা নেবে? সব পরীক্ষার জন্য আমি প্রস্তুত। প্রেমিকা বলল, তোমার মায়ের হৃৎপিণ্ডটা নিয়ে আসো। প্রেমে অন্ধ ছেলেটি ছুটল মায়ের কাছে! মাকে হত্যা করে তার হৃৎপিন্ড নিয়ে ছুটল প্রেমিকার কাছে, ভালোবাসার পরীক্ষায় পাস করতে। পথে হঠাৎ আছড়ে পড়ল, আর হাত থেকে ফসকে গেল মায়ের হৃৎপিন্ডটা। হাতে তুলে নিতেই হৃৎপিন্ড থেকে আওয়াজ এলো, “ব্যথা পেলি খোকা? তুই তো খুব পিপাসার্ত, ক্লান্ত। আমি যে দাঁড়াতে পারছি না, তোকে কীভাবে পানি পান করাব বাবা”। এরই নাম মা।

আজ বিশ্ব ‘মা’ দিবস। দিনটি কীভাবে, কবে...

কোথা থেকে এলো, কেন পালন করা হয়, এর গুরুত্ব কী, তা হয়তো অনেকের অজানা। দিনটি পালনে রয়েছে এক ইতিহাস। ১৯০৭ সালের ১২ মে আমেরিকার ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার গ্রাফটন শহরে প্রথমবার ‘মাদার্স ডে’ বা মা দিবস পালিত হয়। ভার্জিনিয়ায় অ্যান নামে এক সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারী অধিকার নিয়ে কাজ করতেন এবং ‘মাদারস ডে ওয়ার্ক ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে নিতে চেষ্টা এবং তাদের স্বাবলম্বী হতে সহায়তা করতেন। অ্যানের একটি মেয়ে ছিল। একদিন মেয়ের সামনেই প্রার্থনা করেছিলেন, “যেন কেউ একটা দিন মায়েদের জন্য উৎসর্গ করেন”। মায়ের সেই প্রার্থনা হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায় তার মেয়েটির। অ্যানের মৃত্যুর পর সেই দিনটিকে সারা বিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশে উৎসর্গ করেন তার মেয়ে। আর এভাবেই মায়েদের প্রতি সম্মানে পালিত হয়ে আসছে মা দিবস। ১৯১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে ‘মা দিবস’ ঘোষণা করেন। এর পর থেকে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃ দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়ে থাকে।

‘মা’ কথাটি সবচেয়ে ছোট, অথচ সবচেয়ে মধুর একটি শব্দ। মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও বিশাল। মায়ের মতো এত মধুর আর আবেগী শব্দ পৃথিবীতে আর একটিও নেই। যে শব্দটিতে জড়িয়ে আছে স্নেহ-মায়া-মমতা-ভালোবাসা। ছেলে হোক বা মেয়ে হোক, প্রতিটি সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা ও প্রেম স্বার্থহীন, সীমাহীন। সন্তানের জন্য মা বরাবরই নিঃস্বার্থ একজন মানুষ। মা হচ্ছেন মমতা-নিরাপত্তা-অস্তিত্ব, নিশ্চয়তা ও আশ্রয়। মা সন্তানের অভিভাবক, পরিচালক, ফিলোসফার, শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বড় বন্ধু। জীবনে সবচেয়ে বড় শ্রমজীবী হচ্ছেন মা, যার কর্মবিরতি নাই, মজুরি নাই, দাবি নাই, শর্ত নাই, স্বার্থ নাই, তিনি শুধু শ্রম দিয়েই যাচ্ছেন। তারই নাম মা। নিজের জীবনের চেয়েও সন্তানকে ভালোবাসেন, সন্তানের কথা ভাবেন। সন্তানের সামান্য ব্যথাতে ব্যথিত হন। মা সব রোগের চিকিৎসক। মায়ের কাছে সবকিছু চাওয়া যায়। ‘মা’ই একমাত্র ব্যক্তি, যাঁর কাছে সবকিছু চাইলেই পাওয়া যায়। মা সবচেয়ে সেরা রাঁধুনি। মায়ের হাতের রান্না পৃথিবীর সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার। মা হলো সন্তানের প্রথম বন্ধু, সেরা বন্ধু, চিরকালের বন্ধু। মায়ের মতো পরম বন্ধু এ জীবনে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস

গর্ভধারণের মুহূর্ত থেকেই সন্তানের সঙ্গে একজন মায়ের নিবিড় বন্ধন তৈরি হয়। বন্ধনটি আরও গভীর হয় যখন তিনি সন্তানকে তাঁর জঠরে মধ্যে বহন, উষ্ণতা, পুষ্টি এবং সুরক্ষা প্রদান করতে থাকেন। গর্ভাবস্থায় একজন মা তাঁর অনাগত সন্তানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেন, যা তুলনাহীন। এই গভীরতা অন্য কারও পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়। এরপর শিশুটি যখন ভূমিষ্ট হয়ে পৃথিবীতে আসে, তখন মা হয়ে যান তার প্রথম এবং সাবর্ক্ষণিক পরিচর্যাকারী। সন্তানের জন্য অগণিত রাতজাগা, সারাক্ষণ যত্ন নেওয়া, খাওয়ানো এবং আদরের আলিঙ্গনের মাধ্যমে তিনি সীমাহীন ধৈর্য প্রদর্শন করেন।

প্রতিটি মানুষের পৃথিবীতে আসা ও বেড়ে ওঠার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন একজন মা। এজন্য শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি প্রাণীই তার মায়ের কাছে ঋণী। এই ঋণ শোধ করার কোনো বিকল্প নাই। মা হলেন এমন একজন মানুষ, যিনি অন্য সবার স্থান নিতে পারেন কিন্তু তাঁর স্থান অন্য কেউ নিতে পারে না। চাওয়া-পাওয়ার এই পৃথিবীতে মায়ের ভালোবাসার সঙ্গে কোনো কিছুরই তুলনা হয় না।

মাকে নিয়ে কিছু অসাধারণ উক্তি: মাকে নিয়ে পৃথিবীর বিখ্যাত ব্যক্তিরা হাজারো অসাধারণ উক্তি করেছেন।

(১) মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত।”

(২) রবীন্দ্রনাথের গানে, “মধুর আমার মায়ের হাসি, চাঁদের মুখে ঝরে ..., সে যে জড়িয়ে আছে ছড়িয়ে আছে সন্ধ্যা রাতের তারায়, সেই যে আমার মা, বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা..., প্রদীপ হয়ে মোর শিয়রে কে জেগে রয়

দুঃখের ঘরে, সেই যে আমার মা সেই যে আমার মা। বিশ্বভুবন মাঝে তাহার নেইকো তুলনা, সেই যে আমার মা”।

(৩) আব্রাহাম লিংকন বলেছেন, “যার মা আছে, সে কখনোই গরিব নয়”।

(৪) বিখ্যাত ফুটবলার দিয়াগো ম্যারাডোনা বলেছেন, “আমার মা মনে করেন আমিই সেরা, আর মা মনে করেন বলেই আমি সেরা হয়ে গড়ে উঠেছি”।

(৫) জর্জ ওয়াশিংটন বলেছেন, “আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী নারী হলেন আমার মা”। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সব অর্জন তাঁরই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শিক্ষার ফল।

(৬) মাইকেল জ্যাকসন বলেছেন, “আমার মা বিস্ময়কর, আর আমার কাছে উৎকৃষ্টের আরেক নাম”।

(৭) কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন, “মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা”।

(৮) কবি কাদের নেওয়াজ বলেছেন, ‘মা কথাটি ছোট্ট অতি, কিন্তু জেনো ভাই, ইহার চেয়ে নামটি মধুর, তিন ভুবনে নাই...”।

(৯) কবি কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, “যেখানেতে দেখি যাহা, মা এর মত আহা, একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই, মায়ের মতন এত আদর সোহাগ সেতো, আর কোনোখানে কেহ পাইবে না ভাই”।

(১০) শিল্পী “ফকির আলমগীর এর ভাষায়, “মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানাইলেও ঋণের শোধ হবে না, এমন দরদি ভবে কেউ হবে না আমার মা গো”।

ইসলামে মায়ের সম্মান ও অধিকার : ইসলাম মাকে দিয়েছে অনন্য মর্যাদা। জান্নাতে যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম করা হয়েছে মাকে। হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। তাই জান্নাত পাওয়ার আকাক্সক্ষাকারী কোনো সন্তানই মাকে এড়িয়ে যেতে পারে না।

আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “তোমার পরওয়ারদেগার আদেশ করিয়াছেন, তোমরা তাহাকে ব্যতীত অন্য কাহারও এবাদত করিও না এবং তুমি মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও, যদি তোমার সম্মুখে তাঁহাদের একজন অথবা উভয়ে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাহাদিগকে উহ পর্যন্তও বলিও না, আর তাঁহাদিগকে ধমক দিও না এবং তাঁহাদের সঙ্গে খুব আদবের সহিত কথা বলিও। এবং তাঁহাদের সম্মুখে করুণভাবে বিনয়ের সহিত নত থাকিবে, আর এইরূপ দোয়া করিতে থাকিবে, হে আমার পরওয়ারদেগার! তাঁহাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন, যেরূপ তাহারা আমাকে লালন-পালন করিয়াছেন শৈশবকালে” (সুরা বনি ইসরাইল, ২৩-২৪)।

আল্লাহ আরও বলেন, “আমি মানুষকে তাহার মাতা-পিতা সম্বন্ধে নির্দেশ দিয়াছি, তাহার মাতা কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করিয়া তাহাকে গর্ভে ধারণ করিয়াছে এবং তাহার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে, যেন তুমি শোকর কর আমার” (সুরা লোকমান-১৪)।

অন্য এক আয়াতে আছে, “আর তোমরা আল্লাহতায়ালারই এবাদত কর, এবং তাঁহার সহিত কাহাকেও শরিক করিও না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করিও” (সুরা-নিসা-৩৬)। পিতা-মাতার অধিকার সম্পর্কে হাদিসেও বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া অবশ্যই কবুল হয়; এতে কোনো সন্দেহ নেই। এক, মা-বাবার দোয়া তাঁর সন্তানের জন্য; দুই, মুসাফিরের দোয়া ও তিন, অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া অত্যাচারীর বিরুদ্ধে” (আবু দাউদ)।

রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, “মা-বাবাই হলো তোমার জান্নাত এবং জাহান্নাম” (ইবনে মাজাহ-মিশকাত)।

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, “যখন কোনো অনুগত সন্তান নিজের মা-বাবার দিকে অনুগ্রহের নজরে দেখে, আল্লাহ তার প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে একটি করে কবুল হজের সাওয়াব দান করেন” (বায়হাকি-মিশকাত)।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রসুল (সা.)-এর কাছে এসে জিজ্ঞাসা করল, ‘হে আল্লাহর রসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন তোমার মা; সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা; সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে পুনরায় বলল, এরপর কে? তিনি বললেন, তোমার পিতা (বুখারি ও মুসলিম)।

একদিন হজরত মুয়াবিয়া ইবনে জাহিমা আসসালামি (রা.) রসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বললেন, ‘ইয়া রসুলাল্লাহ! আমি জিহাদ করতে ইচ্ছুক। এ ব্যাপারে আপনার পরামর্শ কী? জবাবে রসুল (সা.) বললেন, তোমার মা আছেন? তিনি বললেন, আছেন। রসুল (সা.) ইরশাদ করেন, মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকো, কেননা তার পায়ের নিচেই জান্নাত।’

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, আল্লাহর পরেই মা-বাবার অধিকার।

রসুল (সা.)-এর জমানায় বিখ্যাত এক আশেকে রসুল ওয়াইস করনি (রা.) প্রিয় নবীজির কাছে এই মর্মে খবর পাঠালেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ (সা.), আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ। এখন আমি কী করতে পারি?’ নবীজি (সা.) উত্তর পাঠালেন, ‘আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি ও বেশি ফজিলতের কাজ।’

মায়ের প্রতি সন্তানের দায়িত্ব : সন্তানের সব সময় মনে রাখা উচিত, মায়ের ত্যাগের কারণেই সে আজ সে এই সুন্দর পৃথিবীতে এসেছে। যদি সে মাকে ভুলে যায়, কষ্ট দেয় বা অবহেলা করে- তাহলে সবই মিছে। সন্তানের পর্বত সমান সফলতা তখন মূল্যহীন। কিন্তু অতি দুঃখের সঙ্গে লিখতে হচ্ছে, সেই মহান মায়ের প্রতি অনেক সন্তান আজকাল উদাসীন, অনেকে বেপরোয়া। এমনও শোনা যায়, সন্তান তার মাকে প্রহার করছেন, ঘর থেকে বের করে দিচ্ছেন, জঙ্গলে মাকে ফেলে এসেছেন, নিজে সুন্দর ঘরবাড়িতে বাস করে মাকে রেখেছেন রান্নাঘরে।

এমনও দেখা যায়, পিতা-মাতাকে সন্তান ঠিকমতো ভরণপোষণ দিচ্ছে না। তারা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বৃদ্ধাশ্রম নামক কারাগারে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অথচ স্ত্রী-সংসার নিয়ে নিজেরা বেশ আরাম-আয়েশে থাকছে। তাদের পরিবারে বাবা-মা যেন বোঝা। যে সন্তানকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করলেন, সেই সন্তান কীভাবে তার মায়ের অবদানকে ভুলে যায়? নাড়িছেঁড়া ধন একজন সন্তানের কাছ থেকে কোনোভাবেই এসব কাম্য নয়। এতে আল্লাহর আরশ কেঁপে ওঠে; জমিন অভিশাপ দেয়। নিশ্চয় কঠিন কেয়ামতের দিন সেই সন্তানকে আল্লাহর কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। কী উপায় হবে সেদিন?

মা শ্রদ্ধার আধার, স্নেহের কান্ডারি। সব ধর্মেই মা আশীর্বাদস্বরূপ। তাই সন্তানের সর্ব প্রথম দায়িত্ব হচ্ছে মাকে শ্রদ্ধা করা, অন্তরের শ্রেষ্ঠতম আসনে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করা, ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাকে অভিষিক্ত করা। সন্তানের কাছে মা-ই হলেন জগতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি। তাই মায়ের সঙ্গে সর্বদা সম্মানজনক ও সহযোগিতামূলক ব্যবহার করতে হবে। তাঁর সঙ্গে কখনো কর্কশ ভাষায় কথা বলা উচিত নয়। মায়ের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ। মায়ের আদেশ পালন করা এবং তাঁর নির্দেশ মেনে চলা সন্তানের পবিত্র কর্তব্য। মায়ের ঋণ কোনো দিন কখনো কোনোভাবেই শোধ করা যাবে না।

পৃথিবীর সবচেয়ে আপন হলো মা। তাই আসুন আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আমরা আমাদের কোনো আচরণে যেন মাকে কষ্ট না দিই। যাদের মা এখনো বেঁচে আছেন, সেই মায়ের জন্য জীবনের সর্বোচ্চটাই করার চেষ্টা করি। মা-বাবার সেবা-যত্ন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জন করি। আল্লাহ আমাদের সবাইর পিতা-মাতাকে ভালো রাখুন। তাদের উত্তম সেবা করার তৌফিক দান করুন।

 



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই


Thumbnail

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) উপদেষ্টা হায়দার আকবর খান রনো না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন। শতভাগ বাম আদর্শে বিশ্বাসী একজন ব্যক্তি ছিলেন তিনি। আদর্শগতভাবে আমরা কখনোই এক আদর্শে বিশ্বাসী ছিলাম না। কিন্তু সেই ৬০ এর দশক থেকে রণ ভাইকে আমি চিনি। এবং ব্যক্তিগতভাবে তিনি আমার অগ্রজতুল্য।

বর্তমান যুগে বাম আদর্শের বা যেকোন আদর্শে শতভাগ বিশ্বাসী নির্ভেজাল লোক পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। সেখানে আপাদমস্তক একজন বাম আদর্শের ব্যক্তিত্বের উদহারণ ছিলেন রনো ভাই। তিনি যে লেখাগুলো লিখতেন তার অধিকাংশ লেখাগুলো আমি পড়েছি। তার বিশ্লেষণের ক্ষমতা, লেখার ধরণ প্রত্যেকটা জিনিসে বাম রাজনীতি এবং বাম আদর্শ ফুটে উঠতো। 

তিনি এমন একটি সময় আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যখন বাংলাদেশে বাম দল কবরে যাওয়ার পথে। অথচ আমাদের দেশে এখনই বামদলের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। কেননা, চরম ডানপন্থি দলগুলো অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে রক্ষার জন্য তারা চ্যালেঞ্জ। আবার ডান দলগুলোর মধ্যে যাদের মডারেট ডান বলা যায়, তারাও আজ শক্তিহীন। 

একমাত্র গণতন্ত্রে বিশ্বাসী মধ্যম পন্থায় চলা আওয়ামী লীগ শক্তিশালী, আর মডারেট ডান হিসেবে পরিচিতি পাওয়া বিএনপির মতো যে দলগুলো আছে তারাও আজ নেই বললেই চলে। এমন একটা ক্রান্তিকাল যখন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের বিপক্ষ একটি রাজনৈতিক দলকে সামনে নানা যারা চরম বামপন্থী বা চরম ডানপন্থী হবে না। ঠিক সেই সময় একজন আদর্শবান রনো ভাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। রনোভাইদের মতো যারা সত্যিকার বাম আদর্শে বিশ্বাস করতেন এমন ব্যক্তি বাস্তব ক্ষেত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। রনো ভাই ছিলেন রাজনৈতিক লড়াকু সৈনিক এবং পদ পদবীর কোন লোভ তার মধ্যে ছিল না। সবসময় আত্ম প্রচার থেকে দূরে থাকতেন তিনি। এমন একজন ব্যক্তির চলে যাওয়া মানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একজন আদর্শবান বাম সৈনিকের চলে যাওয়া। 

যারা বাম আদর্শে বিশ্বাস করেন তাদেরকে আমি বলবো, আপনারা রনো ভাইয়ের বিকল্প হতে পারবেন না, কিন্তু সকলে আপনারা এক হয়ে, রনো ভাইয়ের মতো আদর্শিক হয়ে এখনই যদি বাম দলকে সংগঠিত না করেন তাহলে আওয়ামী লীগের বিকল্প হবে তালেবানরা। এখন আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, আওয়ামী লীগকে কি তালেবানের সাথে যুদ্ধে নামাবেন নাকি দেশের গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য নিজ দায়িত্বে বাম দলকে সুসংগঠিত করবেন।


সিপিবি   হায়দার আকবর খান রনো  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

দেশের গণতন্ত্রকে অনুসরণ করবে অন্যরা


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার চতুর্থ মেয়াদের ক্ষমতার চার মাস পার করে দিয়েছেন। অনেকের ভেতরে আলাপ-আলোচনা শোনা যায় যে, বিশেষ করে যারা বেতনভোগী বুদ্ধিজীবী, বাইরের অনেক পত্রপত্রিকায় যারা লেখালেখি করেন তারা একটি প্রশ্ন তোলেন যে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আসলে এ বিষয়টি নিয়ে খুব বস্তুনিষ্ঠ এবং নির্মোহভাবে কোনো আলাপ-আলোচনা হয় না। আমি এ বিষয়টির কিছু ভাবনা প্রকাশ করতে চাই।

কদিন আগে স্টিভেন লেফেস্কি এবং ডেনিয়েল জিব্লাটের লেখা ‘হাউ ডেমোক্রেসি ডাই’ বইটি পড়ছিলাম। বইটি আমেরিকা থেকে প্রকাশিত এবং দেশে দেশে বহুল পঠিত। ২০১৮ সালে প্রকাশিত বইটি বেস্ট সেলার হিসেবেও বিবেচিত হয়েছে। কীভাবে ধীরে ধীরে গণতন্ত্র ক্ষয়ের দিকে যাচ্ছে এবং দেশে দেশে একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, সে বিষয়ে বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ রয়েছে।

প্রথমেই যেটি বলা হয়েছে তা হলো, সংবিধানকে গণতন্ত্রবিরোধী সরকার মানে না সংবিধানকে কীভাবে দূরে সরিয়ে দেশ শাসন করা যায়, সেই চেষ্টা করে।

বাংলাদেশে নিয়মিত নির্বাচন হওয়ার ফলে সংবিধানবহির্ভূত ঘটনা শেখ হাসিনার শাসনামলে ঘটেনি। বলা যায় ১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনের সভাপতির দায়িত্ব নেন, সেদিনই কিন্তু গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সূচনা শুরু হয়। সেদিনকে বলা চলে ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের শুভ যাত্রার দিন’। সুতরাং এটা পরিষ্কার যে, এ গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য তিনি দেশে এসেছেন এবং সর্বশেষ তিনিই গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। তার আশার পরেই কারফিউ প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন সামরিক একনায়ক জিয়া।

আরও পড়ুন: উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক

গণতন্ত্র ধ্বংসের জন্য যেসব কাজ করা হয়, তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নির্বাচনকে যে কোনো প্রকারে বন্ধ করে দেওয়া। কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা অনেক কঠিন অবস্থার মধ্যে থেকেও নিয়মিত নির্বাচন করে চলেছেন। একনায়কতন্ত্র যে গণতন্ত্রকে দুর্বল করে তার কোনো চিহ্ন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মধ্যে নেই। বিরোধী দল যত গণতন্ত্র ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করেছেন, শেখ হাসিনা ততই গণতন্ত্র সুরক্ষার চেষ্টা করেছেন।

বইটিতে বলা হয়েছে, এসব একনায়ক সরকার কিছু কিছু সংগঠনকে বন্ধ করে দেয়। যেমন—মানবাধিকার কমিশন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এ মানবাধিকারকে আরও উজ্জীবিত করেছেন। স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন তারই সৃষ্টি। এ ছাড়া এসব একনায়ক রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করে দেয়। কিন্তু দেখা যায় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলকে বন্ধ করেননি। বরং রাজনৈতিক দলগুলোকে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন।

বইটিতে আরেকটি বিষয়ে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয় আর তা হচ্ছে, সরকার দুর্বল হতে থাকলে এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন সামরিক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখল করে এবং সংবিধানকে বাতিল করে অথবা স্থগিত করে দেশ চালায়। সে হিসেবে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা খুব সুশৃঙ্খল, শক্তিশালী এবং পেশাদার সামরিক বাহিনী গড়ে তুলেছেন। এখানে কোনো ধরনের নৈরাজ্য দেখা যাচ্ছে না, আজ পর্যন্ত ঘটেনি এবং ঘটারও সম্ভাবনা নেই। সংবিধানের ৭(ক) অনুচ্ছেদ সংযোজন শেখ হাসিনার আরেকটি অসাধারণ উদ্যোগ। এটি গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। এর ফলে অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ হয়েছে।

আরও পড়ুন: বদলে যাওয়া এই বাংলাদেশই দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ

এ বইয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে তা হলো, যে কোনো নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হৈচৈ হয়। ৭ জানুয়ারি নির্বাচন নিয়ে আমাদের দেশে হৈচৈ হলেও সর্বশেষ নির্বাচনে এটি প্রমাণ হয় সবাই এ নির্বাচন গ্রহণ করে নিয়েছে। যারা বলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে তাদের জন্য এ উদাহরণগুলো দিয়ে বলা যায় দুর্বল নয় বরং বাংলাদেশে দিন দিন গণতন্ত্র শক্তিশালী হচ্ছে। বলা যায়, দেশ এখন শুধু উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেওয়া ইশতেহারগুলো সরকার পূরণ করে চলেছে। মানুষের যে মৌলিক অধিকার তা পূরণ করা হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে গৃহহীনদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, পথশিশু এবং বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। ‘আমার বাড়ি আমার খামার’ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে করা হচ্ছে আত্মনির্ভর। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর চিকিৎসাসেবার জন্য প্রতি ছয় হাজার জনগণের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক গড়ে তুলেছেন। আর এ কমিউনিটি ক্লিনিককে জাতিসংঘ গত বছর ‘দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত প্রচার করে তারাই মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা। তারাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাধিকার কোথায় কোথায় লঙ্ঘন হচ্ছে তার সূচক দেয়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সূচক নেই। সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাজাতে ইসরায়েলি বাহিনীর নির্মম অত্যাচার। আর এতে ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা দিয়ে আসছে তারা। এ বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলন এখন তুঙ্গে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীরা এভাবেই প্রতিবাদ করেছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্র এ আন্দোলনের বিষয়টি অন্যভাবে দমন করছে। শিক্ষার্থীদের অমানবিক কায়দায় নিপীড়ন করা হচ্ছে।

আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ এবং র‌্যাবের প্রতি আমার একটি আবেদন থাকবে, তারা যেন আন্দোলন দমনে যুক্তরাষ্ট্রের এ স্টাইল অনুসরণ না করে। কেননা তাদের এ স্টাইল যদি আমরা ফলো করি তাহলে আমাদের গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাবে। সুতরাং আমরা যারা সাধারণ জনগণ, আমরা আপনাদের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বাসী এবং আপনাদের কাছে শ্রদ্ধায় মাথানত করি। আমরা বিশ্বাস করি যে, আমাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য, আমাদের সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য জীবন দিচ্ছেন। আমি জানি যে, আপনাদের জীবন অমূল্য, অনেকে এর জন্য তাদের সংসার ত্যাগ করছেন। আপনাদের প্রতি সহানুভূতি জানানোর দায়িত্ব হয়তো আমাদের নেই, কিন্তু দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আপনাদের দেখছেন। তাই কষ্ট হলেও আপনারা আপনাদের পথে থাকেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, আগামী ১০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্রে গণতন্ত্র থাকবে কি না, তা নিয়ে ভাবনা হচ্ছে অনেকের। তাই বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে গণতন্ত্র শিখতে হবে না। আমরা তাদের কিছুতেই অনুসরণ করতে পারি না এবং অনুসরণ করে আমাদের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে পারি না। সুতরাং এ দেশে গণতন্ত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে এবং আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রে আমরা বিশ্বে মডেল হব। যেমনটি কমিউনিটি ক্লিনিক, ভ্যাক্সিনেশনে আমরা মডেল হয়েছি। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও গণতন্ত্র নিয়েও বিশ্বে মডেল হবেন। এজন্য আমাদের কাউকে অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই।

লেখক: সভাপতি, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট


অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী   গণতন্ত্র   মানবাধিকার   কমিউনিটি ক্লিনিক   দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন