ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

অর্থনৈতিক যুদ্ধে জয়ের পথে রাশিয়া

প্রকাশ: ০৩:০০ পিএম, ০৩ জুন, ২০২২


Thumbnail অর্থনৈতিক যুদ্ধে জয়ের পথে রাশিয়া

রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার বিকৃত প্রভাব যে শুধু রাশিয়াকেই ভোগ করতে হচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর ফলে বিশ্বের বাকি অংশেও বেড়ে গেছে জ্বালানি ও খাদ্য পণ্যর দাম এবং এর সাথে সাথে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কাও। 

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর পরই রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করে পশ্চিমা বিশ্ব। তিন মাস হতে যাওয়া এই অর্থনৈতিক যুদ্ধ একেবারেই পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছে না পশ্চিমাদের জন্য। বরং এর খারাপ দিকগুলোই এখন প্রকট আকার ধারণ করছে দিনকে দিন। 

‘নিষেধাজ্ঞা’ ব্যতীত ভ্লাদিমির পুতিন তথা রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের অন্য কোনো উপায়ও হাতে ছিলো না। কিছু না করা কিংবা সরাসরি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিষেধাজ্ঞাকেই সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে মনে ধরে পশ্চিমাদের। 

রাশিয়ার আর্থিক ব্যবস্থার উপর পশ্চিমাদের প্রথম আঘাতটি আসে ইউক্রেনে হামলা শুরুর কিছুদিনের মাথায়। তখন পশ্চিমারা ভয়ে ছিলো হয়ত খুব দ্রুতই ইউক্রেন আত্মসমর্পণ করে নিবে। তবে সকলকে অবাক করে দিয়ে বৃহৎ রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেনবাসি। যুদ্ধের তীব্রতা দিন দিন যত বেড়েছে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক যুদ্ধও তত তীব্র হয়েছে। 

যদিও, অর্থনৈতিক অবরোধের মুখে ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী প্রত্যাহারের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। উল্টো রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমাদের এই দুটি পণ্য আমদানিতে অতিরিক্ত অর্থ বরাদ্দ করতে হচ্ছে। যেসব ইউরোপিয়ান দেশ ব্যাপকভাবে রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের উপর নির্ভরশীল, অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে তেল ও গ্যাসের দাম ব্যাপক আকারে বেড়ে যাওয়ায় সেসব দেশেই পুতিন এখন অতিরিক্ত দামে এসব রপ্তানি করছে যা পক্ষান্তরে রাশিয়াকে যুদ্ধ পরিচালনায় অর্থায়ন করছে। ২০২২ সালের প্রথম চার মাসে রাশিয়া ৯৬ বিলিয়ন ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানী রপ্তানি করেছে ইউরোপের ক্রেতাদের কাছে যা ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় তিনগুণ বেশি। 



এই সপ্তাহের শুরুতে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার তেল রপ্তানির উপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তখন বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি পায়। সেই সাথে তেল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা ক্রেমলিনকে আরেক দফা আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলে দিলেও নতুন ক্রেতা খুঁজে পেতে কোনো অসুবিধাই হয়নি পুতিনের। এপ্রিল মাসেই রাশিয়া থেকে চীনে তেল ও গ্যাস রপ্তানি ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যা ক্রমান্বয়ে আরো বৃদ্ধিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। 

তবে এর অর্থ এই নয় যে, নিষেধাজ্ঞার ফলে রাশিয়ার অর্থনীতিতে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের অনুমান, পশ্চিম থেকে আমদানি কমে যাওয়ায় এই বছরে রাশিয়ার অর্থনীতি ৮.৫ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। যদিও রাশিয়ার কাছে আমদানি করা পণ্যর যোগান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও নিজের অর্থনীতি চালু রাখার মতো প্রয়োজনীয় পণ্যর মজুর রয়েছে। তবুও দেশটিকে এই সংকট মোকাবেলায় যথেষ্ট বেগ পেতে হবে। তবে সময়ের সাথে সাথে রাশিয়ার জনগণও এই সংকটের সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে সক্ষমও হয়ে উঠবে। 

ইউরোপ কেবল আস্তে আস্তে নিজেদের রাশিয়ার জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে শুরু করেছে। যার ফলে মহাদেশটি এখনও অনেকাংশে রাশিয়ার উপর নিজেদের জ্বালানির চাহিদার জন্য নির্ভরশীল। এর ফলে পুতিনের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে আর্থিক সংকট এড়ানো সম্ভব হয়েছে। রুবল দিয়ে গ্যাস ও তেলের মূল্য পরিশোধে ইউরোপীয় ক্রেতাদের বাধ্য করার ফলেও নিষেধাজ্ঞার প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে পুতিন। সেই সাথে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করতে ইচ্ছুক দেশগুলো থেকে নিজেদের চাহিদার খুচরা যন্ত্রাংশ এবং বিভিন্ন উপাদানের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতেও ক্রেমলিনের হাতে যথেষ্ট সময়ও রয়েছে। 

গেল সপ্তাহে যখন সারা বিশ্ব থেকে আগত আন্দোলনকারী ও বিশ্বনেতারা সুইজারল্যান্ডের দাভোসে মিলিত হন, তখন সকলে একযোগে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা এবং ইউক্রেনের জনগণের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।



ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন পণ্যের বাড়তে থাকা দামকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে নিমিষেই। যুক্তরাজ্যের বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ শতাংশে যা দেশটির ৪০ বছরের মাঝে সর্বোচ্চ। পেট্রোলের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং অক্টোবরে এটি ৭০০-৮০০ পাউন্ড বৃদ্ধি পেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছে বিশেষজ্ঞরা। 

যুদ্ধের ফলস্বরূপ, পশ্চিমা অর্থনীতিগুলো ধীরগতি বা নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মুখোমুখি হতে শুরু করেছে যা বিশ্বব্যাপী ১৯৭০ এর স্থবিরতার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলি - ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড সহ – মনে করে সুদের হার বাড়িয়ে প্রায় দুই সংখ্যার কাছাকাছি থাকা মুদ্রাস্ফীতি রোধে শক্ত অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। দেশজুড়ে বেকারত্ব বাড়তে চলেছে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলি একই সমস্যার সম্মুখীন। কারণ তাদের বেশিরভাগই যুক্তরাজ্যের তুলনায় রাশিয়ান গ্যাসের উপর অনেক বেশি পরিমাণ নির্ভরশীল। 

বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলি আবার ভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি। দরিদ্র দেশগুলোতে এখন সবচেয়ে বড় সংকটের নাম খাদ্য। ইউক্রেন ও রাশিয়া বিশ্বের মোট গম রপ্তানির ৩০ শতাংশ একাই সরবরাহ করে থাকে। ইউক্রেনের ব্ল্যাক সি বন্দর থেকে গম সরবরাহ বন্ধ থাকার কারণে দরিদ্র দেশগুলোতে দিন দিন খাদ্য সংকট আরো বেশি ঘনীভূত হচ্ছে। 

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলি বলেন, "এই মুহূর্তে, ইউক্রেনের খাদ্য ভাণ্ডারগুলো শস্যতে পরিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু একই সময়ে, বিশ্বজুড়ে ৪৪ মিলিয়ন মানুষ অনাহারের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।”

প্রতিটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন - আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা এবং জাতিসংঘ - মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, যদি না উন্নয়নশীল দেশগুলো নিজেরাই জ্বালানী রপ্তানিকারক না হয় তবে তাদের একটি ত্রিমুখী আঘাতের সম্মুখীন হতে হবে। যেখানে জ্বালানী, খাদ্য সংকট এবং একই সাথে আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি করবে। দেশগুলোকে তাদের নিজের জনগণকে খাওয়ানো কিংবা তাদের আন্তর্জাতিক ঋণদাতাদের অর্থ ফেরত দেওয়ার মুখোমুখি হতে হবে যা দেশগুলোর সরকারকে একই সাথে বেশ বিপাকে ফেলবে। রুশ আগ্রাসনের পর শ্রীলঙ্কাই প্রথম দেশ যারা ঋণ খেলাপি কিন্তু এটিই শেষ নয়। ১৯৯০ দশকের পর থেকে যে কোনো সময়ের তুলনায় বিশ্ব এখন একটি ঘোর ঋণ সংকটের কাছাকাছি। 



শুরু থেকেই পশ্চিমারা পুতিনকে ‘খাদ্যকে পুঁজি’ করে বিশ্বব্যাপী সংকট তৈরির জন্য দায়ী করে আসছেন। অবশ্যই রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি এই যুদ্ধকে ঘিরে এক দীর্ঘ খেলা খেলার প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছেন। তার বিপক্ষে এখন আন্তর্জাতিক জোট টুকরো টুকরো হওয়ার অপেক্ষায়। ক্রেমলিন মনে করে রাশিয়ার অর্থনৈতিক সংকটের কষ্টের সীমা পশ্চিমের চেয়ে ঢের বেশি এবং এটি সম্ভবত সঠিক। 

পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞা যে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে না তা যদি প্রমাণের প্রয়োজন হয়, তাহলে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের ইউক্রেনকে আরো বেশি উন্নত রকেট সিস্টেম সরবরাহ করার সিদ্ধান্তকে খেয়াল করলেই তা বোঝা যাবে। পশ্চিমারা আশা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি জ্বালানী নিষেধাজ্ঞা এবং রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার ফলেও পুতিনের আগ্রাসন বন্ধ করতে যে ব্যর্থতা তৈরি করেছে তা পুনরুদ্ধার করবে। ইউক্রেন থেকে পুতিনকে তার সৈন্য প্রত্যাহার করতে বাধ্য করবে। 

যুদ্ধের ময়দানে পুতিনের সম্পূর্ণ পরাজয়ই কেবল রাশিয়াকে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাতে পারে। যদিও সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ থেকে তেমটি আশা করার কোনো উপায় নেই। তবে অন্যান্য সম্ভাব্য উপায়ও আছে যুদ্ধ বন্ধে, আর সেটি হলো অর্থনৈতিক অবরোধ যদি শেষ পর্যন্ত কাজ করে, একের পর এক কঠোর নিষেধাজ্ঞা যদি রাশিয়াকে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে যেতে বাধ্য করে। অন্যথায় আলোচনার টেবিলই এই যুদ্ধ বন্ধের শেষ ভরসা। 

বর্তমান যুদ্ধের অবস্থান থেকে এটি স্পষ্ট, পুতিন এই যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করতে যাচ্ছেন না এবং এই অর্থনৈতিক যুদ্ধের ফলে দুই পক্ষের সমান্তরালভাবে ক্ষতির সম্ভাবনা সুস্পষ্ট। উন্নত দেশগুলিতে জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী; দুর্ভিক্ষ, খাদ্য সংকট এবং ঋণ সংকট প্রকট আকারে দেখা দিতে শুরু করেছে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। 

বর্তমান বাস্তবতায় রাশিয়ান সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত নৃশংসতায় ক্রেমলিনের সাথে আপোষ করা কঠিন হলেও, অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কেবল একটি জিনিসের কথাই বলা যায়: আজ না হোক কাল একটি চুক্তির দেখা মিলবে।

দ্যা গার্ডিয়ান থেকে অনূদিত
আর্টিকেল লেখক: ল্যারি এলিয়ট, গার্ডিয়ানের অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক।

রাশিয়া   ইউক্রেন   যুক্তরাষ্ট্র   যুদ্ধ   তেল   গ্যাস  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির মৃত্যু কি মধ্যপ্রাচ্যকে আরও অশান্ত করবে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে নতুন করে অশান্তি সৃষ্টির ইঙ্গিত দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনার পর মধ্যপ্রাচ্যের অস্থির পরিস্থিতি আরও অস্থির হয়ে পড়বে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে আজ বলা হয়েছে যে, ইরানের এই ঘটনাটিকে ইরানবাসী কোনভাবেই স্বাভাবিক দুর্ঘটনা বলে মনে করছে না। তারা মনে করছেন, এটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো ঘটছে। এটির পেছনে ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জড়িত বলেও তারা ধারণা করছে। আর এই ধারণাকে পুঁজি করে রাইসির মৃত্যুর পরে যে আবেগ এবং ক্ষোভ সেটাকে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উস্কানি এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে বলে আল জাজিরায় কয়েকজন বিশ্লেষক মন্তব্য করেছেন। তারা মনে করছেন যে, ইরান যদি মনে করে এই ঘটনাটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড এবং এই ঘটনা ঘটিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইসরায়েল, তাহলে তারা অবশ্যই পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। 

গত কিছুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চলছে। বিশেষ করে ইরানের দূতাবাসে হামলার ঘটনার পর ইরান যে ভাবে ইসরায়েলে ড্রোন আক্রমণ করেছে, তারপর থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল যে ইসরায়ল এর পাল্টা প্রতিশোধ নেবে। সে সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ইসরায়েলকে এ প্রতিশোধের ব্যাপারে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিল এবং মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য যুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছিল। সেই সময় ইসরায়েল কিছু করেনি বটে, তবে ইরানের গতকালকের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার পেছনে যে ইসরায়েলের হাত আছে এটি মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সবাই বিশ্বাস করে। যদিও এর পক্ষে তথ্য প্রমাণ এখন পর্যন্ত কেউই হাজির করতে পারেনি। তবে ইরান এ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান করছে। এটির ফলে মধ্যপ্রাচ্যে আরও নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। 

প্রথমত, এই ঘটনার ফলে মধ্যপ্রাচ্যের যে সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপ গুলো আছে তারা জঙ্গি হতে পারে। কারণ এই সমস্ত সশস্ত্র গ্রুপগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং ইরানের পৃষ্ঠপোষকতা চলছে। ফলে ইসরায়েল সহ বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস সহিংসতার ঘটনা বাড়তে পারে বলে অনেকে ধারণা করছে। 

দ্বিতীয়ত, এই ঘটনার পর সারা বিশ্বে ইরান নিয়ন্ত্রিত বা ইরানের পৃষ্ঠপোষক থাকা জঙ্গি সংগঠনগুলো অন্যান্য দেশেও বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে এবং আক্রমণ করতে পারে বলে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। 

তৃতীয়ত, এই ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে ইরান সামনের দিনগুলোতে ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের আক্রমণ করতে পারে। এমনকি ঘোষণা দিয়েও প্রতিশোধ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারে। এই সবগুলো ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করবে। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করবে। 

তবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরানের রাইসির মৃত্যু একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে। ইরান জুড়ে একটা শোকের ছায়া। এই শোক কাটিয়ে উঠতে তাদের সময় লাগবে। ইরানের সংবিধান অনুযায়ী আগামী ৫০ দিনের মধ্যে নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। তারপর হয়ত তারা এই বিষয়টি নিয়ে ভাববে। আবার অনেকে মনে করছেন ইরান হয়ত আপাতত আত্ম অনুসন্ধান করবে। ভেতরের শত্রুদেরকে চিহ্নিত করার চেষ্টা করবে এবং ভেতর থেকে ইরানকে যারা দুর্বল করার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে আগে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করবে। তারপর তারা ইসরায়েল বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতা করবে। তবে স্বল্প মেয়াদী হোক, দীর্ঘ মেয়াদী হোক ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যকে অশান্ত করে তুলবেই।


ইব্রাহিম রাইসি   ইরানের প্রেসিডেন্ট  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানে মোসাদের সফল প্রতিবিপ্লব?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহিয়ান ও পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নরসহ ৯ জন আরোহীর মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে তোলপাড় চলছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড- এ নিয়ে বিভিন্ন মহলের সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। ইরানের পক্ষ থেকে এটিকে হত্যাকাণ্ড বলা হচ্ছে। তারা মনে করছে, এটি দুর্ঘটনা নয়। তবে দুর্ঘটনাই হোক বা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডই হোক। এর সঙ্গে যে ইরানের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি জড়িত এ নিয়ে কোনও সন্দেহই নেই।

ইরানের গণমাধ্যম এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও বিশ্বাস করছেন যে, ইরানের ভিতর কিছু বিশ্বাসঘাতকদের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে না। এই ঘটনার পর কয়েকটি মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, এরকম একটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে প্রেসিডেন্টকে বহনকারী হেলিকপ্টার কেন উড়ার সিদ্ধান্ত নিল? এই ব্যাপারে নিরাপত্তা ছাড়পত্র কে দিল সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ যেকোনো বিবেচনায় এই বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে হেলিকপ্টার উড্ডয়নের কথা নয়।

আল জাজিরার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, ইরানের প্রেসিডেন্ট, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং গভর্নর এক হেলিকপ্টারে ওঠাটাও একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কারণ এর আগে কখনোই ইরানের প্রেসিডেন্ট অন্য কারও সঙ্গে হেলিকপ্টারে ওঠেন না। তৃতীয়ত, যেখানে তাদের বহনকারী অন্য হেলিকপ্টারগুলো অন্যদিকে যাচ্ছিল সেখানে এই হেলিকপ্টারটি কেন গতিপথ পরিবর্তন করল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আর এ সবকিছু একটি পরিকল্পিত বলেই মনে করা হচ্ছে।

পরিকল্পিত ভাবার পিছনেও কারণ আছে। অতীতেও দেখা গেছে যে, এরকম বিমান বা হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শত্রুকে দমন করেছে পাকিস্তানি জিয়াউল হক নিহত হয়েছিলেন এরকমই একটি বিমান দুর্ঘটনায়। পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই একটি পরিকল্পিত নীল নকশা এবং মার্কিন রাষ্ট্রদূতকেও ওই দুর্ঘটনায় জীবন দিতে হয়।

এবার ইরানের যে ঘটনাটি ঘটল তার পিছনে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত রয়েছে বলেই অনেকে মনে করে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা এখন বলছেন যে, এর পিছনে মোসাদের হাত রয়েছে। ইসরায়েলি এই গোয়েন্দা সংস্থা দীর্ঘদিন ধরেই ইরানে পট পরিবর্তনের জন্য ভেতরে ভেতরে কাজ করছিল। সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের ভিতরে যে হিজাব বিরোধী আন্দোলন, সেই আন্দোলনেও মোসাদের হাত ছিল এবং মোসাদকে সহযোগিতা করেছিল সিআইএ- এমন তথ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ইরানকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য মোসাদ এবং সিআইএ বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করেছে, ষড়যন্ত্র করছে- এমন প্রতিবেদনও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন সময় প্রকাশিত হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরান, ইসরায়েল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের মাথাব্যথা হয়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, নিষেধাজ্ঞা থাকায় দেশটির মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন জঙ্গি সন্ত্রাসীদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়, অস্ত্র সরবরাহ করে। সাম্প্রতিক সময়ে ইসরায়েলে যে হামলা হামাস পরিচালনা করেছিল, তার পিছনে ইরানের মদত ছিল। ইরানের মাধ্যমেই মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা চলছে, এমন বক্তব্য মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা হরহামেশাই করে থাকেন। আর এ কারণে ইরানের পট পরিবর্তনের একটি পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ছিল।

এর আগেও ইরানের গোয়েন্দা প্রধানকে হত্যা করা হয়েছিল। যে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সিআইএ এবং মোসাদ জড়িত ছিল বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে। এবারের এই ঘটনাটি সেরকমই কোন ঘটনা বলেই অনেকের স্থিরবিশ্বাস। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে ইরানের ভিতর একটি প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে উগ্র মৌলবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা চলছিল। এখন সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এই ঘটনা ঘটানো হল বলে কেউ কেউ মনে করছেন।

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর এখন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসাবে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তিনি অত কট্টরপন্থী নন বলেই মনে করা হচ্ছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবার অনেকটাই নমনীয় এবং ইরানের ভিতর এখন এরকম ব্যক্তির সংখ্যা আরও বেড়েছে বলেই কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন। বিশেষ করে যদি ভিতরে শত্রু তৈরি করে প্রেসিডেন্টকে হত্যা করা যায়, তাহলে ইরানে ইসলামী বিপ্লবী সরকারকে হটিয়ে দেওয়াটা খুব কঠিন কাজ নয়। মোসাদ এবং সিআইএ কি সেই পথেই এগোচ্ছে, এর উত্তর সময়ই বলে দিবে।


ইব্রাহিম রাইসি   ইরান   হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা   মোসাদ   সিআইএ   মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   ইসরায়েল  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

ইরানের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের খুটিনাটি শুনলেন পুতিন

প্রকাশ: ০৮:৫১ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কোয় নিয়োজিত ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালিকে ক্রেমলিনে ডেকে নিয়ে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির হেলিকপ্টার বিধ্বস্তের ঘটনা বিস্তারিত শুনেছেন। রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

তিনি রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন।

কাজেম জালালি বলেন, 'রোববার রাশিয়ায় সরকারি ছুটি হওয়া সত্ত্বেও রাত ১০টার দিকে পুতিন বৈঠক করেন। এ সময় রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ও বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তার আমন্ত্রণে ইসলামিক রিপাবলিক অব ইরানের প্রতিনিধি হিসেবে আমি বৈঠকে অংশগ্রহণ করি।'

কাজেম জালালি বলেন, বৈঠকের শুরুতেই পুতিন আমাকে বলেন, ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা খুবই মর্মাহত। এ বিষয়ে সহযোগিতার জন্য যা দরকার হবে, তা আমরা করব। এ ঘটনায় আমরা খুবই উদ্বিগ্ন ও বিচলিত। যা কিছু প্রয়োজন, তার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি, এ বার্তা ইসলামিক রেভল্যুশনের সর্বোচ্চ নেতার কাছে পৌঁছানো নিশ্চিত করুন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী আন্দ্রেই বেলুসভ, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সেক্রেটারি সের্গেই শোইগু, সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব দ্য জয়েন্ট স্টাফ ভ্যালিরি গেরাসিমভ, বেসামরিক সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী আলেক্সান্দার কোরেনকোভ, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী ইগোর লেভিতিন ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা।  


ইরান   রাষ্ট্রদূত   হেলিকপ্টার   বিধ্বস্ত   রাশিয়া   প্রেসিডেন্ট   ভ্লাদিমির পুতিন  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির দাফন কোথায়, কবে

প্রকাশ: ০৮:৪২ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির দাফন আগামীকাল মঙ্গলবার তাবরিজে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশটির সংবাদমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে। খবর বিবিসির

ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃৃত করে দেশটির গণমাধ্যম তাসনিম জানিয়েছে, প্রেসিডেন্টের পাশাপাশি তার নিহত সফরসঙ্গীদের দাফনও হবে সেখানে।

এর আগে মরদেহগুলো তাবরিজের ফরেনসিক বিভাগে রাখা হবে।

প্রসঙ্গত, রবিবার সন্ধ্যায় তাদেরকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশে দুর্ঘটনার শিকার হয়। তবে ঠিক কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা এখনও জানা যায়নি। 

স্থানীয় সময় সোমবার সকালে তাদের মৃত্যুর খবর জানায় 'তেহরান টাইমস ও মেহের নিউজ'সহ স্থানীয় আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। 

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির সঙ্গে একই হেলিকপ্টারে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আব্দুল্লাহিয়ান। এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন সেটিতে। 

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম ইরনা জানিয়েছে, এই হেলিকপ্টারে পূর্ব আজারবাইজানের গভর্নর মালেক রহমাতি ও এই প্রদেশে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মুখপাত্র আয়াতুল্লাহ মোহাম্মদ আলী আলে-হাশেমও ছিলেন। এছাড়াও অন্যদের মধ্যে প্রেসিডেন্টের দেহরক্ষী দলের সদস্য মাহদি মুসাভি, হেলিকপ্টারের পাইলট, সহকারী পাইলট ও ক্রু সদস্য ছিলেন।


ইরান   প্রেসিডেন্ট   ইব্রাহিম রাইসি   দাফন   মৃত্যু  


মন্তব্য করুন


ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

রাইসির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় আমরা জড়িত নই: ইসরায়েল

প্রকাশ: ০৭:৫১ পিএম, ২০ মে, ২০২৪


Thumbnail

হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় ইসরায়েলের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা। 

তিনি বলেছেন, ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌'দুর্ঘটনার পেছনে আমরা নেই।' তবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলি সরকারের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। 

ইসরায়েলের বিরোধী দল বেতেনু পার্টির চেয়ারম্যান এম কে আভিগদোর লিবারম্যান বলেছেন, রাইসির মৃত্যু এই অঞ্চলে ইরানের নীতিতে কোনও পার্থক্য আনবে বলে ইসরায়েল আশা করে না।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেইটকে তিনি বলেছেন, 'আমাদের জন্য, এটা কোনও বিষয় নয়। এই ঘটনা ইসরায়েলের (ইরানের প্রতি) মনোভাবে কোনও প্রভাব ফেলবে না। ইরানের নীতি দেশটির সর্বোচ্চ নেতার (আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি) মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।'

তিনি আরও বলেন, 'ইরানের প্রেসিডেন্ট যে একজন নিষ্ঠুর লোক ছিলেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। আমরা তার জন্য একফোঁটা চোখের পানিও ফেলব না।'

ইসরায়েলের অতি-রক্ষণশীল নোয়াম পার্টির নেতা এম কে আভিগদোর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, 'এক মাসেরও কম সময় আগে রাইসি হুমকি দিয়েছিলেন যে, ইসরায়েল আক্রমণ চালালে এর কোনও কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আর এখন তিনিই ইতিহাসের ধূলিকণা।'

উল্লেখ্য, রোববার প্রতিবেশি দেশ আজারবাইজানের সাথে যৌথ অর্থায়নে নির্মিত কিজ কালাসি বাঁধের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নেন ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কয়েকজন কর্মকর্তা। পরে সেখান থেকে ইরানের তাবরিজ শহরে আরেকটি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাওয়ার সময় ভারজাকান অঞ্চলের দিজামারের পার্বত্য এলাকায় প্রেসিডেন্ট ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়।  

কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘ তল্লাশি অভিযানের পর সোমবার দিজামারের উজি ও পীর গ্রামের মধ্যবর্তী এলাকায় বিধ্বস্ত হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ শনাক্ত করা হয়। সেখান থেকে ইরানের উদ্ধারকারী দলের কর্মকর্তারা প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ ৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করেন।

রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মোখবেরের নাম ঘোষণা করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। 

এছাড়াও, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর ঘটনায় ৫ দিনের রাষ্ট্রীয় শোকও ঘোষণা করেছেন তিনি। 


ইব্রাহিম রাইসি   মৃত্যু   মধ্যপ্রাচ্য   রাজনীতি   ইসরায়েল  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন