ইনসাইড থট

জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা

প্রকাশ: ১১:৫৯ এএম, ১২ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

বিশ্ব নেতা, বিজ্ঞানী, গবেষক, পূর্বাভাসদাতা, জলবায়ু কর্মী, লবিস্ট (সমর্থক আর জলবায়ু অস্বীকারকারী), তরুণরা সবাই COP27-এ যোগ দিতে মিশরের শার্ম এল শেখ রিসোর্ট এলাকায় জড়ো হয়েছে। গত বছর স্কটল্যান্ড, যুক্তরাজ্যে COP26-এ অনুরূপ ঘটনা ঘটেছিল এবং ধনী দেশগুলি জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছিল এবং বিলিয়ন ডলার অবদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারপর থেকে আসলে তেমন কিছুই হয়নি। জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন প্রচেষ্টার জন্য খুব বেশি ডলার দেওয়া হয়নি। এই জনসমাগম যেন একটি টক শো এর বার্ষিক জাম্বুরী হয়ে উঠছে। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকা ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢেলে দিচ্ছে, সেই সব বোমা ও কামানের গোলা ব্যবহার করে বাস্তুসংস্থান ও বায়ুমণ্ডলকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দুঃখজনকভাবে, জলবায়ু পরিবর্তন যা ধনী এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমন প্রচেষ্টার জন্য এখনও পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কিছু তহবিল সরবরাহ করা হয়নি। পরিবর্তে ধনী দেশগুলি অর্থনীতিকে সচল রাখতে এবং ঘরগুলিকে উত্তপ্ত রাখার জন্য কয়লা চালিত বৈদ্যুতিক উত্পাদন বা কাঠ পোড়ানোর আশ্রয় নিচ্ছে। তাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে পশ্চিমা ধনী দেশগুলোর অর্থনীতি ও তার সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু সর্বোপরি নিষেধাজ্ঞাগুলি এশীয়, আফ্রিকান এবং ল্যাটিন আমেরিকান উন্নয়নশীল দেশগুলতে (যারা এই প্রক্সি যুদ্ধের শুরু করেনি, তারা শুধুই নীরব শিকার) অর্থনৈতিক বিপর্যয় সৃষ্টি করছে এবং অবর্ণনীয় দুর্ভোগ, দারিদ্র্যতা এবং ক্ষুধা বাড়ছে। ইউক্রেন বা রাশিয়া বা পশ্চিম কেউই এই যুদ্ধে জয়ী হবে না যেনেও কিন্তু আমরা আলোচনা এবং কূটনীতির মাধ্যমে এই যুদ্ধ বন্ধ করার কোনো সৎ প্রচেষ্টা দেখছি না এবং কোনো প্রচেষ্টার লক্ষণ নেই এই কঠোর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে পশ্চিমা এবং উন্নয়নশীল উভয় দেশগুলোকে তাদের অর্থনীতি আবার শুরু করতে সহায়তার করার, যেমন কোভিডের পরে তা শুরু হয়েছিল। বিদ্রূপাত্মকভাবে সম্প্রতি যদিও পশ্চিমের কিছু ক্ষমতাধর ব্যক্তি এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষ যারা ভুগছেন এবং সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, রাস্তায় তাদের আওয়াজ তুলেছেন। তবুও মনে হচ্ছে কিছু যুদ্ধবাজ এবং অস্ত্র লবিস্টের কারণে এই প্রক্সি যুদ্ধ সহজে বন্ধ হবেনা। এই যুদ্ধ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করছে এবং করবে, অবকাঠামো ধ্বংস করবে এবং বাস্তুসংস্থান ও জলবায়ুকে আরও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। লক্ষ লক্ষ ইউক্রেনীয়রা বেশিরভাগ পশ্চিমা দেশগুলিতে উদ্বাস্তু হিসাবে দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। ভাগ্যক্রমে পশ্চিমা দেশগুলি খুব উষ্ণভাবে সেই ইউক্রেনীয়দের প্রতি তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে। দুঃখজনকভাবে, ন্যাটো দেশগুলির দ্বারা সৃষ্ট যুদ্ধ এবং মৌলিক অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংসের সহ হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণে আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া, সিরিয়া, ইয়েমে, সোমালিয়া বা অন্যান্য আফ্রিকান দেশ থেকে শরণার্থীরা জীবনের অনেক ঝুঁকি নিয়ে পালিয়ে আসা সত্ত্বেও তাদের একই ভাবে স্বাগত জানানো হয়নি বরং তাদেরকে আক্রমণকারি (invasion), অপরাধী, ধর্ষক হিসাবে দায়ী করা হচ্ছে, বলা হচ্ছে এই অপরাধীরা পশ্চিমা সমাজের স্বাভাবিক অবকাঠামোকে ধ্বংস করছে। অভিবাসন বিরোধী অবস্থান পশ্চিমা দেশগুলির সমস্ত রাজনৈতিক দলের জন্য একটি রাজনৈতিক ভোট বিজয়ের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।
 
অভিবাসন (migration)

সাধারনত লোকেরা কোনো অপ্রীতিকর সামঞ্জস্যহীন পরিস্থিতি ছাড়া, স্বেচ্ছায় তাদের বাড়ি বা স্থান বা দেশ থেকে সরতে চায় না। জনসংখ্যার গতিশীলতা, জলবায়ু সম্পর্কিত হোক বা না হোক, জটিল এবং বৈচিত্র্যময়। একই দেশের মধ্যে বা প্রতিবেশী দেশগুলিতে স্থানান্তরিত বা স্থানান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় বা নিজের দেশ ছেড়ে দূর দেশে যায়ার সমস্ত ঝুঁকি নেওয়ার সময় তারা সর্বদা বর্তমান অবস্থান বনাম পথযাত্রীর/চলাফেরার ঝুঁকি এবং সেদেশের সম্ভাব্য সুবিধাগুলিকে বিবেচনা করে। তারা মাইগ্রেশনের সময় গন্তব্যের সাথে সম্পর্কিত সুযোগ এবং সীমাবদ্ধতাগুলি বিবেচনা করে। অভিবাসনের সিদ্ধান্ত স্থায়ী, স্বল্পমেয়াদী, মৌসুমী, বা আবার ফিরে আসা বা বৃত্তাকার হতে পারে।
 
বিশাল এশিয়ান এবং আফ্রিকান জনগণের অভিবাসন খুব সাম্প্রতিক। অন্যদিকে ১৫ থেকে ২০ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত, লক্ষ লক্ষ মানুষ ইউরোপ ছেড়েছিল, যার মধ্যে ৯% এরও কম গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে (ক্যারিবিয়ান, এশিয়া এবং আফ্রিকা) গিয়েছিল। ১৮১৫ থেকে ১৯৩২সাল পর্যন্ত, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড এবং সাইবেরিয়া ছাড়াও, ৬৫ মিলিয়ন মানুষ ইউরোপ ছেড়ে (অনেক আবার দেশে ফিরে এসেছে), প্রাথমিকভাবে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার "ইউরোপীয় বসতির এলাকায়" বসবাশ শুরু করে। তাদের নতুন আবাসস্থলে জন্মহার বৃদ্ধির কারণে এই জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পায়; যা ছিল আফ্রিকা এবং এশিয়ার জনসংখ্যার বৃদ্ধির তুলনায় অনেক বেশি। ফলস্বরূপ, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৩৮% ছিল ইউরোপীয় বংশধর। নিউ ওয়ার্ল্ডে বেশিরভাগ ইউরোপীয় অভিবাসীরা এসেছে জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, ইতালি, স্পেন, পর্তুগাল, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, পোল্যান্ড, রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে। প্রাথমিক অভিবাসীরা ছিল সচ্ছল ব্যক্তি এবং চুক্তিবদ্ধ চাকরদের মিশ্রণ। ১৮৪০ থেকে ১৮৫০ এর দশকে আগত আইরিশ, জার্মান এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অভিবাসীরা দুর্ভিক্ষ, ধর্মীয় নিপীড়ন এবং রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব থেকে পালিয়ে ইউরোপীয় অভিবাসনের দ্বিতীয় তরঙ্গ তৈরি করেছিল। প্রথম ইউরোপীয়দের অভিবাসনের লোকদের মধ্যে বেশিরভাগই প্রোটেস্ট্যান্ট ছিল, নতুন আগতরা ছিল অপ্রতিরোধ্যভাবে ক্যাথলিক। তারা অনেক দরিদ্র ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছিল এবং কম বয়সী এবং কম দক্ষ ছিল। সমসাময়িক কালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার পরিপ্রেক্ষিতে, ইউরোপীয় অভিবাসন একটি ইউরোপীয় দেশ থেকে অন্য ইউরোপীয় দেশে আসা যাওয়া হচ্ছে।
 
অন্য দিকে বলা যায় আফ্রিকান এবং এশীয়দের মাইগ্রেশন শুরু হয় ঔপনিবেশিক শক্তির দ্বারা। এই জনগণকে জোরপূর্বক তাদের ঔপনিবেশিক অঞ্চলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দাস হিসাবে, খনি বা আখ রোপণ এবং ফসল কাটা এবং চিনি উৎপাদন, বা কম বেতনের কেরানির চাকরির জন্য বা শ্রমিক হিসাবে। হাজার হাজার তুর্কি লোককে নেদারল্যান্ডস এবং জার্মানিতে কম বেতনের শিল্প আর নিম্ন মানের কাজের জন্য আনা হয়েছিল।
 
মাইগ্রেশনের সিদ্ধান্তে ধাক্কা এবং টান (push and pull) কারণের সাথে ঘটে। চালক বা পুশ ফ্যাক্টর হল বর্নিত ক্ষেএের সীমিত বা অ-প্রাপ্যতা যেমন সামাজিক (শিক্ষা, কাজের সুযোগ, পারিবারিক আয়); রাজনৈতিক (সংঘাত, নিপীড়ন, জবরদস্তি, নিরাপত্তাহীনতা); জনসংখ্যা (জনসংখ্যার আকার এবং ঘনত্ব, জনসংখ্যার কাঠামো, রোগের প্রাদুর্ভাব); অর্থনৈতিক (ব্যবসা এবং কাজের সুযোগ, মজুরি, উত্পাদক মূল্য, ভোক্তা মূল্য), এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে পরিবেশ (জলবায়ু পরিবর্তন এবং বিপদ, বাস্তুতন্ত্র, জমির উৎপাদনশীলতা, খাদ্য, পানি, শক্তি নিরাপত্তা এবং বাসযোগ্যতা)। টানার বা পুল ফ্যাক্টরের কারণগুলি হল ভাল বেতনের চাকরি, ভালো উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শহরের জীবন, আপেক্ষিক শান্তি এবং খাবারের প্রাপ্যতা, নিজ দেশে পরিবারগুলিতে অর্থ পাঠানোর সম্ভাবনা।
 
জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন

আজ অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য চীনকে দোষারোপ করছেন। এটা সঠিক আজ জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত হারে ঘটছে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি শত শত বছর ধরে জলবায়ুর উপর আক্রমণের পুঞ্জীভূত ফলাফল। পশ্চিমা দেশগুলোতে শিল্প বিপ্লবের কথা ভাবুন। স্বর্ণ এবং খনিজ নিষ্কাশনের দৌড় , কয়লা চালিত স্টিম রেল এবং সমুদ্রগামী জাহাজ ইঞ্জিন, কয়লা ও কাঠের স্থির উৎপাদন ও ব্যবহার, জীবাশ্ম জ্বালানি নিষ্কাশন এবং শক্তির জন্য এর ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান মোটর গাড়ি ব্যবহার ও বিমান চলাচল, বাসস্থান, কাগজপত্র ও আসবাবপত্রের জন্য বন কাটা। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক অস্ত্রের ব্যবহার, ধ্বংস, জাপানে পরমাণু বোমা ব্যবহার। ব্যাপক এজেন্ট অরেঞ্জ বোমা ব্যবহারের আর হামলার লক্ষ্য ছিল ভিয়েতনামের বাস্তুতন্ত্রের ধ্বংস, ইচ্ছাকৃতভাবে কৃষকদের শহরে তাড়ানো যার ফলে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট জনসংখ্যা এবং খাদ্যের ভিত্তি এবং নিরাপদ জঙ্গল আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হয়। সত্যিকার অর্থে ব্যাপক গ্রামীণ এলাকায় বোমা হামলা, রাসায়নিক ও যান্ত্রিক বন ধ্বংস, বৃহৎ আকারের ফসল ধ্বংস, খাদ্য ভান্ডার ধ্বংস, হাসপাতাল ধ্বংস এবং বৃহৎ আকারের জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি — সংক্ষেপে প্রাকৃতিক ও মানবিক উভয় পরিবেশের ব্যাপক, ইচ্ছাকৃত ব্যাঘাত। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স দ্বারা পরিচালিত পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা এবং বায়ুমণ্ডলীয়, জলজ এবং ভূগর্ভস্থ পরিবেশে তেজস্ক্রিয় দূষণের প্রভাব। এই ভাবে দীর্ঘকাল ধরে আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ুর উপর আক্রমণ বিরামহীনভাবে ঘটছিল। গত কয়েক দশকে চীন আর ভারতের দ্রুত এবং বিশাল শিল্প বিপ্লবের কারণে বিপুল শক্তির প্রয়োজন হচ্ছে তাই একইভাবে পরিবেশগত জলবায়ুর ক্ষতি ঘটছে, যা ইতিমধ্যে ঘটমান পরিবেশের ক্ষতি এবং জলবায়ু পরিবর্তন তরান্বিত করছে। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, ভারত প্রধান দূষণকারীর কারণে আজ জলবায়ুর ধ্বংস দ্রুত গতিতে ঘটছে। বেশিরভাগ এশিয়ান এবং আফ্রিকান দেশগুলি এখনও জলবায়ু বিপর্যয়ের সবচেয়ে কম অবদানকারী কিন্তু সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

অভিবাসন এবং আকস্মিকভাবে এক এলাকায় লাখ লাখ লোকের আগমন স্থানীয় পরিবেশ এবং পরিবেশগত পরিবর্তন এবং কখনও কখনও অশান্তি ও সহিংসতার কারণ হতে পারে। আমরা দেখেছি, মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশ খোলা হৃদয়ে গ্রহণ করলেও তা কী ধরনের সামাজিক, অর্থনৈতিক, ধর্মীয় পাশাপাশি পরিবেশ ও সহিংসতা তৈরি করেছে। এটি ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটে না তবে পরিস্থিতি এটি ঘটায়। বাংলাদেশ এখনও দাতাদের সহায়তায় সেই সব রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দিচ্ছে কিন্তু রোহিঙ্গারা যাতে আবার তাদের নিজ বাড়িতে ফিরে যেতে পারে সেজন্য সহায়তা প্রয়োজন। এটি রোহিঙ্গাদের শান্তি আর সমৃদ্ধির এনে জীবন ও পরিবেশ রক্ষা করবে।
 
জলবায়ুর কারণে মানুষ শত শত বছর ধরে তাদের নিজস্ব জায়গায় বসবাসের জন্য অভিবাসন বা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যদিও সাম্প্রতিক বছরগুলিতে জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হয়েছে, এর অর্থ এই নয় যে অভিবাসন অনিবার্য। সাধারণ বাসস্থান ছেড়ে যাওয়ার কোন বিকল্প না থাকলে অভিবাসনের সম্ভাবনাও বেশি। মানুষ দ্রুত এবং ধীরে ধীরে ঘটতে থাকা পরিবেশগত প্রক্রিয়ার উভয়ের কারনে ভুগছে। প্রাথমিকভাবে পরিবেশগত অভিবাসন (climate migration) দ্রুত এবং আকস্মিক বিপর্যয়ের কারনে হচ্ছে, যেমন ঝড়, বন্যা বা বনের আগুন। সঙ্কট সৃষ্টিকারী এই প্রক্রিয়াগুলো যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। সম্প্রতি পাকিস্তানে ব্যাপক বন্যার কারণে ৩২ মিলিয়ন মানুষ তাদের আবাসস্থল ও পানির উৎস, খাদ্য উৎপাদন এবং অর্থ উপার্জন হারিয়েছে। অন্যান্য শুষ্ক উঁচু জমিতে চলে যাওয়া ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না। অন্যদিকে ধীরগতির কিন্তু দীর্ঘ আকাঙ্ক্ষিত জলবায়ু পরিবর্তন জীবন ও জীবিকাকে প্রভাবিত করছে, যেমন বৃষ্টিপাতের ধরণ পরিবর্তন, খরা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সমুদ্রের অম্লকরণ, জলের সানলিনাইজেশন বা ভূমি ক্ষয়। এইগুলি - কম উপলব্ধিযোগ্য - ঘটনাগুলি আরও ঘন ঘন এবং তীব্র হয়ে উঠেছে আর তাই মানুষের জীবিকা ও নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করেছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ উপকূলীয় অবকাঠামো এবং মিঠা পানির মাছ বা ফসলের ক্ষতি করছে। উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্রের অবক্ষয় ঝড়, সুনামি এবং অন্যান্য আকস্মিক ঘটনাগুলির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হ্রাস করে মানুষকে আরও বেশি বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ, তারা গ্রামীণ থেকে শহুরে বাসস্থান সহ একটি উচ্চ উচ্চতায় বা অন্য এলাকায় যেতে বাধ্য হতে পারে বা দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যাওয়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে। তাই ফিজি সরকার ইতিমধ্যেই তাদের নিম্ন ভূমি জনসংখ্যাকে উচ্চ ভূমিতে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা শুরু করেছে।
 
যাইহোক, বাস্তুচ্যুতির সাথে সম্পর্কিত আর্থিক এবং সামাজিক খরচের কারণে, লোকেরা নতুন গন্তব্যে জীবিকা ও নিরাপত্তা সম্পর্কে কোনো নিশ্চয়তা ছাড়াই তাদের স্বাভাবিক আবাসস্থল পরিত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে। কৃষকরা পরিবেশগত পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ, কিন্তু তারা তাদের জমি এবং গবাদি পশুর সাথে সবচেয়ে বেশি সংযুক্ত, যেগুলি সরানো সহজ নয়। প্রবীণরা সাধারণত কম পথযাএা/চলাচলে সক্ষম এবং কিছু সমাজে তারা পৈতৃক জমির সাথে বেশি সংযুক্ত থাকে। আজ জাপান এবং ইউরোপের অনেক দেশে, এমনকি চীনে গ্রামগুলি বলা যায় একরকম খালি হয়ে যাচ্ছে এবং শুধুমাত্র বয়স্ক লোকেরা সেখানে অবস্থান করছে কারণ তরুণরা শহরে চলে গেছে। আমি চিন, ইতালি আর চাপানোর শহর থেকে দুরের গ্রাম গুলোতে তাই দেখেছি। প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক বাধাগুলি অভিবাসনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। অধিকন্তু, যাদের জমি বা অন্যান্য সম্পদ নতুনদের দ্বারা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে তারা সেই জনসংখ্যার সাথে বিরোধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। বলাবাহল্য, জলবায়ু পরিবর্তনের এবং এর নেতিবাচক প্রভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ ও বহিস্থিত অভিবাসন ধীরে ধীরে বাড়ছে। অভ্যন্তরীণ অভিবাসন ও জনবহুল বস্তির জনসংখ্যা বাড়ছে। অনেকে অনুমান করছে যে ২০৫০ সালের মধ্যে ২৫০ মিলিয়ন শুধুমাত্র জলবায়ু জনিত অভিবাসন হবে, যা অন্যান্য কারণে অভিবাসনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং টেকসই উন্নয়নে বিনিয়োগ অভিবাসনের সম্ভাবনা কমিয়ে দিতে পারে।
 
 জলবায়ু, অভিবাসন এবং স্বাস্থ্য নিরাপত্তা

জলবায়ু পরিবর্তন মানবতার মুখোমুখি একক বৃহত্তম স্বাস্থ্য হুমকি, এবং বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য পেশাদাররা ইতিমধ্যে এই উদ্ঘাটিত সংকটের কারণে স্বাস্থ্যের ক্ষতির প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, ভৌত, পরিবেশগত এবং সামাজিক ব্যবস্থার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের বেশিরভাগ প্রভাব খাদ্যের ফলন, স্বাদু পানির প্রবাহ এবং গুণমান, সংক্রামক রোগের ধরণগুলির স্থিতিশীলতা, বায়ুর গুণমান, সামাজিক সংহতি এবং পারিবারিক আয় ও জীবিকা পরিবর্তনের মাধ্যমে মানুষের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করবে এবং করছে।
 
জলবায়ু পরিবর্তন ইতিমধ্যেই অগণিত উপায়ে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলছে, যার মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঘন ঘন চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলি যেমন তাপপ্রবাহ, ঝড় এবং বন্যা, খাদ্য ব্যবস্থার ব্যাঘাত, সার্স এবং কোভিড-১৯ এর মত পশু রোগ মানুষের মধ্যে স্থানান্তরিত হওয়া এবং খাদ্য-, জল- এবং ভেক্টর-বাহিত রোগ, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক সামাজিক নির্ধারককে হ্রাস করছে, যেমন জীবিকা, সমতা এবং স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তা কাঠামোর সুযোগ পাওয়া। এই জলবায়ু-সংবেদনশীল স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি নারী, শিশু, জাতিগত সংখ্যালঘু, দরিদ্র সম্প্রদায়, অভিবাসী বা বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি, বয়স্ক জনসংখ্যা এবং অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত অবস্থা সহ সবচেয়ে দুর্বল এবং সুবিধাবঞ্চিতদের দ্বারা অনুপাতহীনভাবে বেশী অনুভূত হয়।
 
উন্নয়নশীল দেশগুলিতে উদ্বাস্তু এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মানুষের মধ্যে, সংক্রামক রোগ অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। ২০০৪ এশিয়ান সুনামির পর, শ্রীলঙ্কায় প্রাথমিকভাবে এক মিলিয়ন মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিল। অবিলম্বে, জল এবং খাদ্য-বাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের (যেমন, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড জ্বর, এবং হেপাটাইটিস এ এবং ই), অতিরিক্ত ভিড়ের সাথে সম্পর্কিত রোগ (যেমন, হাম, মেনিনজাইটিস, এবং তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়েছে) ), এবং ভেক্টর-বাহিত রোগ (যেমন, ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গু)। সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বিশেষ করে যেসব ক্যাম্প বা ঘন জনবসতি (বস্তিবাসী) ঘটে যেখানে জনসমাগমপূর্ণ, দুর্বল বায়ুচলাচল, এবং অপর্যাপ্ত আশ্রয়, জল, স্যানিটেশন, এবং টিকাদান এবং স্বাস্থ্যসেবা সুবিধাগুলিতে অভাব বা অনুপস্থিত। সবচেয়ে সাধারণ সংক্রামক রোগ হল ডায়রিয়া রোগ, হাম, মেনিনজাইটিস, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া। ম্যালেরিয়া-নির্দিষ্ট মৃত্যুর হার বিশেষত উচ্চ হয় যখন উদ্বাস্তুরা উচ্চ ম্যালেরিয়া মহামারী অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাতায়ত করে বা পালিয়ে যায়, যেমন ১৯৯৪ সালে হাইল্যান্ড রুয়ান্ডারা আরেকটি আফ্রিকান দেশ জায়ারে চলে যায়। জলবায়ু-চালিত বিপর্যয়গুলি বড় আকারের জনসংখ্যার স্থানচ্যুতি ঘটায়। সেখানে সংক্রামক রোগ একটি উল্লেখযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। টিবির মতো সংক্রামক রোগ বিশেষ করে বহু ওষুধ প্রতিরোধী টিবি ছড়িয়ে পড়তে পারে, রোগ নির্ণয় এবং চিকিত্সা অনুসরণ করা খুব কঠিন হতে পারে।
 
খাদ্য ঘাটতি, খাদ্যে সীমিত প্রবেশাধিকার, এবং অপুষ্টি নিম্ন-আয়ের অঞ্চলে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য বারবার সমস্যা হচ্ছে। উদ্বাস্তু জনসংখ্যায় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে তীব্র অপুষ্টির প্রকোপ বিশেষভাবে বেশি। পেলাগ্রা (নিয়াসিনের অভাব), স্কার্ভি (ভিটামিন সি-এর অভাব), এবং অ্যানিমিয়া (আয়রনের ঘাটতি) সহ শরণার্থী শিবিরগুলিতে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টের অভাবজনিত রোগ উচ্চ ঘটছে। সম্ভবত খাদ্য-অনিরাপদ অঞ্চলে অনেক জলবায়ু-সম্পর্কিত স্থানচ্যুতি ঘটবে আর যেখানে অনেক লোক প্রাথমিকভাবে পুষ্টির সাথে আপস করছে। অধিকন্তু, জলবায়ু পরিবর্তন একাই বৈশ্বিক খাদ্যের ফলন, খরচ, এবং ক্রয় ক্ষমতায় নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করবে কারণ কৃষি, মৎস্য এবং কৃষি উৎপাদন জলবায়ু ও পরিবেশগত অবস্থার দীর্ঘমেয়াদী পরিবর্তন এবং প্রতিকূল আবহাওয়ার ঘটনাগুলির দ্বারা প্রভাবিত হয়।
 
সামাজিক অস্থিরতা এবং স্থানচ্যুতি এইচআইভি/এইডস সংক্রমণ সহ যৌন সংক্রামিত সংক্রমণের বিস্তারের জন্য উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি উপস্থাপন করে। অতিরিক্ত ভিড়, দারিদ্র, পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামোর ব্যাঘাত, যৌন সহিংসতা বৃদ্ধি, এবং কনডম সহ গর্ভনিরোধক এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা এবং শিক্ষার সীমিত এবং সহজলভ্যতার অভাব এই সংক্রমণের জন্য দায়ী করা হয়। শরণার্থী শিবিরের মহিলারা অতিরিক্ত প্রজননের কারনে স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন: মাতৃমৃত্যুর উচ্চতর ঝুঁকি, পরিবার পরিকল্পনার জন্য অপূর্ণ চাহিদা, ক্লিনিকাল স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলিতে সীমিত অ্যাক্সেস, অনিরাপদ গর্ভপাতের পরে জটিলতা মাতৃমৃত্যুর কারন।
 
গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরে বা অন্য দেশে চলে যাওয়া লোকদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও খাদ্যাভ্যাস ভেঙে দেয়। জনাকীর্ণ বস্তিতে বা ক্যাম্পে বসবাস করা চলাফেরার সীমাবদ্ধতা এবং একাকীত্ব, পরিবার থেকে দূরে থাকা মানসিক যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। দূষণ অকথ্য ক্ষতির কারণ। ধূমপান এবং মাদক গ্রহণ একটি প্রধান সমস্যা হয়ে ওঠে। যার ফলে উৎপত্তিস্থলদের তুলনায় গ্রামীণ থেকে শহুরে এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসীরা দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত হওয়ার বেশী ঝুঁকিতে রয়েছে, যেমন ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগ, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিস এবং মানসিক রোগ। উৎস জনসংখ্যার সাপেক্ষে, গ্রামীণ থেকে শহুরে এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসনের পরে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ক্রমবর্ধমান ঘটনা, খাদ্যে পরিবর্তন, চাষের চাপ, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, বিচ্ছিন্নতা এবং ধূমপান এবং অ্যালকোহলের বিপজ্জনক ব্যবহারের মতো স্বাস্থ্যের ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘস্থায়ী রোগের প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যসেবা এবং প্রাথমিক রোগ নির্ণয় বা সেবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা পরিষেবাগুলি খুব সীমিত বা অনেক সময় পাওয়া যায় না।
 
সময়মত উপযুক্ত পদক্ষেপ প্রয়োজন

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে বিপর্যয়কর স্বাস্থ্য প্রভাব এড়াতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লক্ষ লক্ষ মৃত্যু রোধ করতে, বিশ্বকে অবশ্যই তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে হবে। অতীতের নির্গমন ইতিমধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির একটি নির্দিষ্ট স্তর এবং জলবায়ুর অন্যান্য পরিবর্তনগুলিকে অনিবার্য করে তুলেছে। এমনকি ১.৫ডিগ্রি সেলসিয়াসের বৈশ্বিক উত্তাপকে নিরাপদ বলে মনে করা হয় না; উষ্ণায়নের প্রতিটি অতিরিক্ত দশমাংশ মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্যের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।
 
যদিও এই ঝুঁকিগুলি থেকে কেউই নিরাপদ নয়, জলবায়ু সংকটের কারণে যাদের স্বাস্থ্য প্রথম এবং সবচেয়ে খারাপ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তারা হল তারা যারা এর কারণগুলিতে সবচেয়ে কম অবদান রাখে, এবং যারা এর বিরুদ্ধে নিজেদের এবং তাদের পরিবারকে রক্ষা করতে সবচেয়ে কম সক্ষম - নিম্ন স্তরের মানুষ -আয় এবং সুবিধাবঞ্চিত দেশ এবং সম্প্রদায়।
 
জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমিত কার্যক্রম এখন একই রকম হতে পারে তবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য কোনো পদক্ষেপ না গ্রহন করলে নিকট ভবিষ্যতে জলবায়ু প্ররোচিত নেতিবাচক প্রভাব তিন গুণ বৃদ্ধি পেতে পারে। জলবায়ু সংকট উন্নয়ন, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য, এবং দারিদ্র্য হ্রাসে গত পঞ্চাশ বছরের অগ্রগতি পূর্বাবস্থায় ফেরার হুমকি কারন জনসংখ্যার মধ্যে বিদ্যমান স্বাস্থ্য বৈষম্যকে আরও বিস্তৃত করবে। এটি বিভিন্ন উপায়ে সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (UHC) এর উপলব্ধিকে মারাত্মকভাবে বিপন্ন করবে- যার মধ্যে রয়েছে রোগের বিদ্যমান বোঝাকে জটিল করে স্বাস্থ্য পরিষেবাগুলি অ্যাক্সেস করার ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাধাগুলিকে আরও বাড়িয়ে দেবে। দরিদ্রতম লোকেদের বেশিরভাগই বীমাহীন, স্বাস্থ্যগত ধাক্কা এবং চাপ বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ১০০ মিলিয়ন লোককে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এই প্রবণতাকে আরও খারাপ করবে বা করছে।
 
প্রতিযোগিতামূলক অগ্রাধিকার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে, NAPA (National Adaptation Programme of Action) প্রক্রিয়া দেশগুলিকে একক খাতে (যেমন, জল সম্পদের ঘাটতি দূরীকরণ) অবিলম্বে অগ্রাধিকারের জন্য প্রস্তুত প্রকল্পগুলিকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য করে৷ জলবায়ু পরিবর্তন মানব স্বাস্থ্য এবং অভিবাসন প্রতিক্রিয়াগুলিকে প্রভাবিত করবে এমন জটিল পথের পরিপ্রেক্ষিতে, কার্যকর জনস্বাস্থ্য এবং অভিযোজন কৌশলগুলিকে স্বাস্থ্য, জল, কৃষি, শক্তি এবং পরিবহন সহ একাধিক সেক্টরে নীতি গ্রহণ করতে হবে। স্বাস্থ্যকে দেশের সমস্ত নীতি (health in all policies) এবং মন্ত্রণালয়ে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা এটা করতে পারে না। কার্যক্রমের সমন্বয় অবশ্যই যেকোনো দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ে (রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক) হতে হবে। এর জন্য স্থানীয় ও জাতীয় সরকার এবং প্রাসঙ্গিক আন্তর্জাতিক, জাতীয় এবং স্থানীয় প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং সংস্থাগুলির সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। জনস্বাস্থ্য উদ্যোগ সহ অভিযোজিত কৌশলগুলিকে বিদ্যমান জাতীয় উন্নয়ন, জনস্বাস্থ্য, এবং দারিদ্র্য নিরসনের কৌশলগুলির সাথে একীভূত করা উচিত। স্পষ্টতই, বহুস্তরীয়, আন্তঃবিষয়ক, এবং সমন্বিত অভিযোজন ব্যবস্থা এবং জরুরী প্রতিক্রিয়াগুলির প্রয়োজন রয়েছে—এবং এই প্রয়োজনের সারগ্রাহী প্রকৃতিকে চিনতে সংস্থাগুলির জন্য তহবিল দরকার। উন্নয়নশীল দেশগুলির জলবায়ু প্রশমন কর্ম পরিকল্পনায় ধনী দেশগুলির পাশাপাশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেমন বিশ্বব্যাংক, আঞ্চলিক উন্নয়নশীল ব্যাংক এবং আইএমএফকে সুদ মুক্ত ঋণ বা এমনকি বিনামূল্যে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদানের জন্য অবশ্যই প্রস্তুত থাকতে হবে।

যদি জলবায়ু পরিবর্তন তার বর্তমান গতিপথে চলতে থাকে, তাহলে আগামী কয়েক দশকে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ভবিষ্যত জলবায়ু-সম্পর্কিত জনসংখ্যার মাইগ্রেশনের সাথে সম্পর্কিত স্বাস্থ্য ঝুঁকির পরিসর এবং ব্যাপ্তি স্পষ্টভাবে পূর্বাভাস দেওয়া যায় না, তবে মানুষের সাদৃশ্যপূর্ণ মাইগ্রেশন স্বাস্থ্য ফলাফলের প্রমাণ ইঙ্গিত করে যে স্বাস্থ্য ঝুঁকিগুলি স্বাস্থ্য সুবিধার উপর প্রাধান্য পাবে। তাই আজ এটি যথেষ্ট ভূ-রাজনৈতিক, নৈতিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্বের একটি বিষয়। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলি প্রশমিত করতে, অভিবাসন কমাতে এবং সাধারণ জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত করতে একসঙ্গে কাজ করার এখন সময়।

(এই নিবন্ধটি বিভিন্ন নিবন্ধ এবং সংস্থার প্রতিবেদন থেকে প্রস্তুত করা হয়েছে।)


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

উপজেলা নির্বাচন বর্জন বিএনপি কফিনের শেষ পেরেক


Thumbnail

আজকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়েছে। সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেভাবে হয় তার সামান্যতম কোন ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটাররা উৎসাহ নিয়ে ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও অনেক ভোটার আছেন যারা মনে করেন যে, অমুকে তো অনেকে জনপ্রিয় প্রার্থী, তিনিই বিজয়ী হবেন। আমার ভোট না দিলেও হবে। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেকে ভোট দেয়নি। আর কিছু জায়গা আছে ছোট খাটো মারামারি হয়েছে। যা এদেশের স্থানীয় নির্বাচনের চরিত্র। 

নির্বাচনে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা সেটার প্রমাণ করছেন বারবার। সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রপতিও শেখ হাসিনার দার্শনিক ভিত্তি নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, শেখ হাসিনার প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটা দর্শন। এবং এর লম্বা প্রভাব রয়েছে। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আসলে সংগ্রামের মধ্যেই আছেন। এই যে তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। তাকে হত্যার করার হুমকি থাকলেও তিনি দেশে এসেছেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন যে, আমাকে যখন দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে আমি সেটা মোকাবিলা করার জন্য দেশে যাব এবং তিনি দেশে এসেছেন। আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলে আবার পিছিয়ে যাই। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা করেননি। তিনি দেশে এসেছেন। তবে আল্লাহ একটা রহমত আছে তাঁর প্রতি। আল্লাহ মনে হয় তাকে সব সময় চাঁদর দিয়ে ঢেকে রক্ষা করেন অত্যন্ত বাংলাদেশের জন্য। না হলে বারবার তার ওপর যে রকম আঘাত এসেছে তাতে উনার বাঁচার কথা নয়। 

বাংলাদেশে বিরোধী দল বলতে এখনো জনগণ বিএনপিকেই বুঝে। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে। কারণ জাতীয় পার্টি এবং বাম দল তো এখন নাই। জাতীয় পার্টি মোটামুটি ভাবে শেষ হয়ে গেছে। এখন বিএনপিও শেষ হয়ে যেতে বসেছে। উপজেলা নির্বাচন হয়ে গেল। নির্বাচনে প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন সেখানে হয়তো বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত কেউ কেউ থাকবেন। কিন্তু যারাই হোক না কেন তারা আর কেউ বিএনপির থাকবে না। বিএনপির একের পর এক নির্বাচন বর্জন করার ফলে দল হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার পথে। এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি খুব শঙ্কিত অনুভব করছি উপজেলা নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর। কারণ বিএনপি যে ধ্বংস হয়ে গেল তাতে গণতন্ত্রের যে ক্ষতি হয়ে যাবে এই ক্ষতি সহজে পূরণ করা যাবে না। কারণ একটি শক্তিশালী বিরোধী দল আমাদের দেশে থাকা দরকার। যেহেতু বাম রাজনীতি যারা করেন তারা একেবারে ক্ষমতাহীন। নিজেরা দাঁড়ালে এক হাজার ভোটও তারা পায় না। আর জাতীয় পার্টির অবস্থাও এখন একই রকম। আর এদেশে সন্ত্রাসের রাজনীতি আর চলবে না। সেটার মূল উৎপাটন করেছেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। সেটাও তাঁর দার্শন ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নিয়ে। তিনি দেশে ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কিন্তু ইসলামকে রাজনীতির জন্য ব্যবহার করেননি। তিনি সব সময় বলেন যে, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার।’ তিনি সেভাবে কাজও করছেন। সুতরাং আমাদের দেশে ধর্মান্ধ রাজনীতির কোন সুযোগ নাই। 

বাংলাদেশে এই যে গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে যাচ্ছে এজন্য প্রধানত দায়ী আমেরিকা। কারণ আমেরিকা যেভাবে এবার তাদের দেশে ছাত্র-শিক্ষকদের আন্দোলন প্রতিহত করছে তাতে যে উদারহণ তারা সৃষ্টি করলো এটা মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব রাখবে সারা বিশ্বে। তারা আর কাউকে বলতে পারবে না যে, তোমার দেশে মানবাধিকার নাই। মানবাধিকার এখন শুধু বাংলাদেশেই আছে বলে আমার মনে হয়।

বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগকে বাকশাল গঠন করার জন্য একটা বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য করছে। এটা আমরা চাই না। বাকশাল যখন করা হয় তখন দেশে এবং আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে একটা আলাদা প্রেক্ষাপট ছিলো। কিন্তু এখন সেটা নেই। সুতরাং এখন গণতন্ত্রের মধ্যে জনগণকে থাকতে হবে। কিন্তু এই যে বিএনপি গণতন্ত্রের ক্ষতি করলো এই ক্ষতি কীভাবে পোষানো হবে আমার জানা নেই। এজন্যই আমার মনে হয় বিএনপি শুধু নিজের ক্ষতি করলো তা না, দল হিসেবে তারা তো শেষ হয়ে গেলো। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রে যে আঘাত তারা করলো সেটা মারাত্মক আঘাত এবং আমরা কেউই এই আঘাত চাইনি। এখন আওয়ামী লীগ ছাড়া কোন রাজনৈতিক দলের বাস্তব উপস্থিতি থাকলো না। বাকি দলগুলো তো নিজেরা নিজেদের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাম দল তারা সাহস দেখাতে পারলো না। তারা সঠিক পন্থা অবলম্বন করতে পারলো না। এজন্য শেষ হয়ে গেলো। অন্যদিকে যারা সন্ত্রাস করে রাজনীতি করতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলোরেন্স নীতিতে তারা এখন ধ্বংস প্রায়। বিএনপি ঠিকে থাকতে পারতো কিন্তু তারা সেটা চেষ্টাও করলো না। বিএনপি আন্দোলন করতে পারেনি ঠিক কিন্তু তারা যদি শুধু প্রতিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতো তাহলেও এদেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি থাকতো। ক্ষমতায় যাওয়াই রাজনৈতিক দলের একমাত্র উদ্দেশ্য হওয়া উচিত না। জনগণের সাথে যদি থাকেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন এক সময় নিশ্চিত ক্ষমতায় যাবেন। অনেক দেশে এমন অনেক দল আছে যারা ক্ষমতায় নেই তবে তারা রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যায় না। ব্রিটেনের লেবার পার্টি অনেক দিন ধরে ক্ষমতায় নেই। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে জরিপে দেখা যাচ্ছে এবার তারা ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে। অথচ এক সময় তারেদর কোন সম্ভাবনাই ছিল না। তাই আমি বলবো শুধু লন্ডনের বুদ্ধিতে বিএনপি তাদের কফিনের শেষ পেরেকটাও মারলো নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। সাথে সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্রেও তারা এই পেরেক বিদ্ধ করলো। এটা থেকে আমাদের মুক্তি পেতে হবে। বিএনপি তো আর পারবেই না। আমি আশা করি বাম দলগুলো যেন সেই উদ্যোগ নেয়।



মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

গোয়েবলসের বাড়ি কেনার জন্য তারেক জিয়াই যোগ্য ব্যক্তি


Thumbnail

মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে, হিটলারের প্রচারমন্ত্রী গোয়েবলসের বাড়ি বিনা টাকায় বিক্রি করার জন্য কর্তৃপক্ষ আগ্রহী প্রার্থী পাওয়ার চেষ্টা করছে। আমার মনে হলো যে, আমাদের একজন ভালো খরিদ্দার আছে এবং তার কাছে এই গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি করলে গোয়েবেলসের আদর্শটাও বেঁচে থাকবে এবং কর্তৃপক্ষেরও উপকার হবে। আর এ খরিদ্দার হচ্ছে বিএনপি এবং এবং লন্ডনে পলাতক দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া বাড়িটি কিনতে পারেন। তিনি হচ্ছেন গোয়েবেলসের এই বাড়ির যোগ্য ব্যক্তি। কারণ তিনি গোয়েবেলসের ভাবশিষ্য। 

গোয়েবেলস যেভাবে জার্মানিকে তখন গেসকাভো বাহিনী দিয়ে হত্যা করা থেকে শুরু করে সবকিছু জাস্টিফাই করতো, যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সময়ও বলতো জিততেছে। তার একটা বিখ্যাত থিওরি ছিলো, ‘একটা মিথ্যা বার বার বললে সেটা সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।’ এরকম বিভিন্ন দিকে গোয়েবেলস সম্বন্ধে পড়ে এবং দেখে বুঝেছি যে, বিএনপি এবং তারেক জিয়ার সাথে হিটলার বাহিনীর প্রচার মাধ্যম এবং আদর্শগত মিল সাংঘাতিক। হিটলার বাহিনী যেমন তখন ইহুদিদের হলোকাস্ট করেছে বিএনপিও যখন ২০০১ এ নির্বাচনে জিতে যায়, তখন তারা আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের হত্যা করেছে, শিশুদের শ্লিলতাহানী করেছে এবং এমন কোন অপকর্ম নেই যা করেনি। সুতরাং তারা এই হিটলার বাহিনীরই প্রতিনিধিত্ব করে এখন। 

আমার জানা মতে, তারা এই কাজটি যেহেতু ভালোভাবে করতে পেরেছে এই কারণেই এই বাড়িটি পাওয়ার সবচেয়ে যোগ্য হচ্ছে, বিএনপি এবং বিএনপির পক্ষে তারেক জিয়া। সুতরাং আমার মনে হয়, গোয়েবেলসের বাড়িটি বিক্রি হওয়ার আগেই তাদের যোগাযোগ করা প্রয়োজন, যাতে বাড়িটা বিনা পয়সায় নিয়ে জার্মানিতে স্থায়ীভাবে তারা এবং তাদের লোকজন মাঝে মাঝে গিয়ে থাকতে পারে। এতে তাদের কাজের খুব সুবিধা হবে।

স্বাভাবিকভাবেই ঐতিহাসিক কারণে জার্মান সরকার বাড়িটাকে ধ্বংস করতে চায় না। তাই তারা এতদিন বাড়িটাকে ঠিকঠাক করে রেখেছে। কারণ জার্মানের লোকজনের ভেতরে হিটলারের আদর্শ উপস্থিত আছে। আর হিটলারের আদর্শকে ধরে রাখার মতো যেহেতু বিএনপিকে পাওয়া গেছে, তারেক জিয়াকে পাওয়া গেছে। সুতরাং আমার মনে জার্মানির এই গোয়েবেলসের বাড়িটি পাওয়ার একমাত্র যোগ্য বিএনপি এবং তারেক জিয়া। এতে বিএনপি এবং হিটলারের বাহিনীর যে কোন পার্থক্য ছিলো না সেটিও জনগণ বুঝতে পারবে। সুতরাং আমি মনে করি বিএনপির জার্মানিতে গোয়েবেলসের এই বাড়িটি কিনা উচিত। 


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত

প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ০৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

আজকাল গণমাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগনের যোগ্যতা-অযোগ্যতা, অনিয়ম, দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি প্রভৃতি নিয়ে প্রায়শঃ খবর প্রকাশিত হতে দেখছি। আমিও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কোন কোন গণমাধ্যমের খবরে আমার নামটিও রয়েছে। সে প্রেক্ষিতে এই লেখা। লেখাটির শিরোনাম কি দেব বুঝতে পারছি না। অগত্যা ‘একজন উপাচার্যের কৈফিয়ত’ এই নাম দিয়েই লেখাটি শুরু করলাম।

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা থেকে অবসর নেয়ার পর পরই ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার দায়িত্ব পালনের প্রথম দিকে প্রায় এক/দেড় বছর ছিল করোনাকাল। সে সময় আমি ও আমার স্ত্রী দু’জনই দু’বার করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। করোনাকালে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যয় এই বিশ্ববিদ্যলয়েও কম-বেশী সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও উপাচার্যের অফিস চলতো প্রায় স্বাভাবিক সময়ের মত। এসময়ে আমাদের প্রধান চেষ্টা ছিল অনলাইন এবং পরবর্তীতে অনলাইন-অফলাইন সমন্বিত মোডে কি করে ক্লাস-পরীক্ষা চালু রাখা যায়। আমার একটি তৃপ্তির অনুভূতি যে, তখন থেকে এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষনা কার্যক্রম ধারাবাহিকভাবে অব্যহত রয়েছে; নানারকম প্রতিকুলতা সত্বেও ক্লাস-পরীক্ষা একদিনের জন্যও বন্ধ থাকেনি কিম্বা তেমন কোন অস্থিরতাও তৈরী হয়নি।

গত এক/দেড় বছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রে দৃশ্যপট পাল্টাতে শুরু করেছে। এখানে বিশেষ করে কিছু সংখ্যক শিক্ষক রয়েছেন যাঁরা কম-বেশী সব আমলে উপাচার্যের প্রীতিভাজন হয়ে প্রশাসনকে কব্জায় নিয়ে নিজেদের মত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করতে চান। এমনটি না হলে সাধারনতঃ কোন উপাচার্যই তাঁদের মেয়াদ পূর্ণ করতে সক্ষম হন না। জন্মকাল থেকে ১৩ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত এক/দু’জন উপাচার্য কেবল মেয়াদ শেষ করতে পেরেছেন। যাহোক এই শিক্ষকগণের কেউ কেউ সুবিধা করতে না পেরে অন্তত এক-দু’জন শিক্ষক আমাকে এমনও বলেছেন যে, পূর্বে কম-বেশী সকল উপাচার্য তাদের নিয়ে চলেছেন, অথছ আমার সময়ে তিনি/তারা একটু ঝাড়ুদারের দায়িত্বও পাচ্ছেন না। এরপর থেকে দিনে দিনে শুরু হয়েছে অনলাইন ও বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার আর অপপ্রাচারের প্লাবন। একটি একটি করে তা’ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে চাই।

প্রায় দেড় বছর পূর্বে হঠাৎ করে একদিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভ্যানে মাইক লাগিয়ে আমার কণ্ঠ-সাদৃশ্য বাক্যাংশের একটি অডিও বাজিয়ে কে বা কারা প্রচার করতে থাকে যে, উপাচার্য হিসেবে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বানিজ্য করছি। মূলত : ঘটনাটি ছিল এমন যে, ওই সময়ে শিক্ষক শুন্য একটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের জন্য একটি বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র তিনটি আবেদনপত্র জমা পড়েছিল এবং নিয়োগ পরীক্ষায় দু’জন প্রার্থী উপস্থিত হয়েছিলেন। আমরা প্রার্থী স্বল্পতার জন্য ওই পরীক্ষা বাতিল করে পুনঃবিজ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেই। এর কয়েকদিন পর আমি আমার এক ছাত্রকে (যিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকও বটে) অনুরোধ করি যে, তোমরা ঢাকায় থাকো, আমাদের শিক্ষক দরকার। তুমি আমাদের একটু সাহায্য করো- তোমার বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিতজনদের বলো তারা যেন এখানে দরখস্তকরে। উত্তরে সে জানায় যে, স্যার ওখানে কেউ যেতে চায় না। তাছাড়া একটা দরখস্ত করতে গেলে ৫/৬ হাজার টাকা ব্যয় হয়-তাই কেউ দরখস্ত করতেও উৎসাহি হয় না। আমি তখন জবাবে বলি-ওরা তোমাদেরই বন্ধুবান্ধব, প্রয়োজনে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করে তাদের দরখস্তকরতে একটু উদ্বুদ্ধ করো। এই কথোপকথনের ‘টাকা-পয়সা দিয়ে’ এই বাক্যাংশটুকু নিয়ে কিভাবে তারা একটি অডিও বানিয়ে প্রচার আরম্ভ করে যে, উপাচার্য নিয়োগ বানিজ্য করছেন। শুনেছি এভাবে তারা একাধিক অডিও [যা’ শুধুমাত্র একজন অর্থাৎ আমার কন্ঠ সাদৃশ্য এবং তা’ মিথ্যা, বানোয়াট, খÐিত, এক পক্ষীয় (অন্য প্রান্তে কে কি বলছেন তার কোন হদিস নেই) এবং হয়তোবা সুপার এডিটেড] বানিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে উপাচার্যকে কিভাবে হেনস্থা করে তাদের অপ-ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করানো যায় সে চেষ্টাই তারা অনবরত করে যাচ্ছে।

আমি আমার কণ্ঠ সদৃশ্য আরও একটি অডিও’র বক্তব্য শুনেছি। এটিও ছিল এক পক্ষীয় এবং খÐিত। আমার আলাপন সেখানে পূর্ণাঙ্গ নেই। অপর প্রান্তে কে কথা বলছেন তারও কোন অস্তিত্ব নেই। অডিও’র বিষয়টি হলো-আমি কোন একজনকে বলছি যে, ‘আপনার নির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন’ ....................আমি দেখবো। সাধারণত: কোন নিয়োগের আগে অনেকেই অনুরোধ করেন যাতে তার প্রার্থীকে যেন একটা চাকুরী দেয়া হয়। বিশেষ করে জনপ্রতিনিধিগণ অথবা কোন রাজনীতিক/সামাজিক ব্যক্তিত্ব ১টি পদের জন্য কখনও কখনও ৩/৪ জন প্রার্থীর রোল নম্বর পাঠিয়েও এ ধরনের অনুরোধ করেন। ধরা যাক, এদের মধ্যে একজনেরই চাকুরিটি হয়েছে। অধিকাংশ সময়ে সে ফিরে গিয়ে তার জন্য অনুরোধকারীকে সুখবরটি জানায় কি-না তা’ আমার জানা নেই। কিšদ প্রায়শ এমনটি ঘটে যে, বাকী যাদের চাকারী হয় না তারা গিয়ে তাদের স্ব-স্ব নেতা বা অনুরোধককারীকে এই বলে বিষিয়ে তোলে যে, উপাচার্য আপনার অনুরোধের কোন দামই দিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে মন খারাপ করে জনপ্রতিনিধিগণ বা রাজনৈতিক/সামাজিক নেতৃবৃন্দ টেলিফোন করে আমাকে হয়তো বলে থাকেন-আপনি আমার একটা অনুরোধ রাখলেন না। এমতপরিস্থিতিতে আমাকে জবাব দিতে হয় যে, এরপর তাহলে আপনার সুনির্দিষ্ট প্রার্থীকে আমার সাথে দেখা করতে বলবেন ............. আমি দেখবো। এই ‘দেখা করতে বলা’ কি নিয়োগ বানিজ্যের সাথে যায়? এভাবে একটি গোষ্ঠী কেবলই মিথ্যাচার করে উপাচার্য হিসেবে আমাকে নাজেহাল করার অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছে যাতে আমি নতি স্বীকার করে তাদের হাতের পুতুল হয়ে কাজ করি। মিথ্যার কাছে নতি স্বীকার করে চেঁচে থাকার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় আমার নেই।

আমার বিরুদ্ধে না-কি অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ কাজে আমি অতিরিক্ত কাজ দেখিয়ে ৬ থেকে ৮ কোটি টাকার বিল বানিয়ে অর্থ-আত্মসাৎ করেছি বা করার চেষ্টা করেছি। রুচিহীন এবং উদ্ভট এসব অভিযোগের জবাব দিতেও আমি ইতস্তবোধ করছি। উল্লেখ্য নির্মাণ কাজের বাস্তব অগ্রগতি পরিমাপ করে ৩/৪ মাস অন্তর পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর বিল ঠিকাদারের প্রদান করা হয়। এই কাজে বিভিন্ন পর্যায়ে সাইট ইঞ্ছিনিয়ার-সহকারী ইঞ্জিনিয়ার-নির্বাহী বা তত্ত¡াবধায়ক ইঞ্জিনিয়ার-প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক প্রমুখ কর্তৃক পরীক্ষিত ও নীরিক্ষিত কাজের পরিমাপ এবং প্রস্তাবিত বিল ঠিক থাকলে তা’ চলে যায় ট্রেজারার মহোদয়ের কাছে। তখন তাঁর নেতৃত্বে গঠিত ভিজিলেন্স টিম সরেজমিনে সাইট পরিদর্শন করে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে তা’ উপাচার্যের নিকট অনুমোদনের জন্য উপাস্থাপন করা হয়। বর্নিত ক্ষেত্রে আমার নিকট ফেবরিকেটেড ওই বিল অনুমোদনের জন্য কোন ফাইলই উপস্থাপিত হয়নি। বরং ৪/৫ মাস পূর্বে আমার দপ্তরে একটি বেনামী চিঠি আসে যে, নির্মান কাজ বেশী দেখিয়ে আট কোটি টাকার একটি বিল প্র¯দত করে তা’ প্রক্রিয়া করা হয়েছে। এই চিঠির সাথে ফটোকপিকৃত কিছু ডকুমেন্ট ছিল যা’ দেখে অভিযোগের সত্যতা থাকতে পরে বলে আমার কাছে মনে হয়েছিল। আমি তাৎক্ষনিকভাবে এই চিঠির ভিত্তিতে একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে আহবায়ক এবং খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপককে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করি। ইতোমধ্যে কমিটি তাদের রিপোর্ট প্রদান করেছে। পরবর্তী সিন্ডিকেট সভায় তা’ উপস্থাপিত হবে এবং সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে উপচার্য হিসেবে আমি কি দূর্নীতি করেছি আশাকরি পাঠকবর্গ তা’ উপলব্ধি করতে পারছেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যাপারে দু’একটি অনলাইন পত্রিকায় নিউজ করানো হচ্ছে যে, প্রকল্প সাইটে মাটির নিচে পাইলিং এর জন্য যে রড ঢোকানো হয়েছে সেখানেও না-কি উপাচার্য হিসেবে আমি দূর্নীতি বা অনিয়ম করেছি। যেকোন নির্মাণে পাইলিংয়ের জন্য মাটির নিচে রড কতটুকু ঢুকাতে হবে তা’ নির্ভর করে সয়েল টেস্ট রিপোর্টের উপর। আমি উপাচার্য হিসেবে যোগদানের বহু পূর্বেপ্রকল্পটি অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় সয়েল টেস্ট করে প্রকল্প দলিল প্রনীত ও অনুমোদিত হয়েছিল।

আমার সময়ে এসে প্রকল্পের কাজ শুরুর পর যখন পাইলিং আরম্ভ হয় তখন সংবাদকর্মীদের মাধ্যামে আমি জানতে পারি যে, প্রকল্প দলিল অনুযায়ী মাটির নিচে যে পর্যন্ত রড ঢোকানোর কথা (ধরা যাক ৫০’) তার চেয়ে কম গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। আমি সাথে সাথে প্রধান প্রকৌশলীকে বিষয়টি দেখতে বলি এবং ভিজিলেন্স টীম পাঠিয়ে তাদের ব্যবস্থা নিতে বলি। ভিজিলেন্স টীমের সদস্য এবং ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসের কর্মকর্তাগণ আমাকে এসে রিপোর্ট করেন যে, সয়েল টেস্টিং এর ভিত্তিতে যেভাবে পাইলিং এর রড প্রকল্প অনুযায়ী মাটির নিচে ঢোকানোর কথা বাস্তবে তা’ ঢোকানো যাচ্ছে না। রড ঢুকছে তার কম (কম-বেশী ৪০’)। এ পর্যায়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়ে পুনরায় সয়েল টেস্ট ও তা’ ভেটিং করিয়ে টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী সেই গভীরতায় রড ঢুকিয়ে পাইলিং এর কাজ করা হয়েছে। এই বিষয়টি প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটির (যেখানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আই এম ই ডি, ইউ জি সি-র প্রতিনিধিগণ থাকেন) সভায় অবহিত করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য কিভাবে রড কম গভীরতায় ঢুকিয়ে দূর্নীতি বা অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন সে বিবেচনার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।

আমি প্রায়শঃ শুনি যে, আমার বিরুদ্ধে না-কি আরও একটি অভিযোগ যে, আমি অবৈধভাবে কর্মকর্তাদের উচ্চতর বেতন স্কেল প্রদান করেছি। বিষয়টি আমি নিচেয় ব্যাখ্যা করছি। তার আগে বলে রাখা দরকার যে, এটি ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার জন্য একটি আর্থিক সুবিধা প্রদানের বিষয়। এটি প্রদানের ক্ষেত্রে আর্থিক নিয়মের কোন ব্যত্বয় ঘটলে ইউ জি সি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা বছরে একাধিকবার অডিট করেন তারা আপত্তি উত্থাপন করতে পারেন। কিন্তু উপাচার্যের দূর্নীতির উপাদান এখানে কি থাকতে পারে তা’ আমার বোধগম্য নয়।

ঘটনাটি ছিল এমন যে, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি এবং এসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি নির্দিষ্ট সময় পরে একধাপ উচ্চতর স্কেলে বেতন উন্নীত করে তা’ প্রদান করা হতো। ২০১৫ সালের বেতন স্কেল কার্যকর হওয়ার পর এই সুযোগ রহিত করা হয়। আমি ২০২০ সালের শেষ দিকে করোনাকালে যখন এখানে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি তার কয়েকদিনের মধ্যে ওই পর্যায়ের কর্মকর্তাদের একটি অংশ এসে আমার সাথে দেখা করে দাবী জানায় যে, এই স্কেল উন্নীতকরণ ঘটবে উপ-রেজিস্ট্রার ও সহকারী রেজিস্ট্রার পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে। কিšদ পূর্বের প্রশাসন ২০১৯ সালে বেছে বেছে তাদের অনুগত কর্মকর্তাদের এই সুযোগ প্রদান করেছেÑ কাজেই অবশিষ্টদেরও এটি দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে ২০২২ সালের দিকে তারা একটি বড় আন্দোলন গড়ে তোলে এবং প্রায় ২ মাস ধরে কর্মবিরতি পালন করে। এক পর্যায়ে গিয়ে এবিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি দেখতে পায় এই সুবিধাটি ২০১৫ সালের পে-স্কেলের সময় রহিত করা হলেও ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীর নগর, মওলানা ভাষানী বিশ্ববিদ্যালয় বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি তখনও চালু রয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সুবিধা পূর্বে অলরেডি কর্মকর্তাদের একটি অংশকে দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনও এই সুবিধা প্রদান বহাল রয়েছে। এই বিবেচনায় কর্মকর্তাদের আর একটি অংশ যাতে বঞ্চিত না হয় (অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তখনকার পরিস্থিতি) সেসব বিবেচনায় নিয়ে কমিটি বঞ্চিতদের জন্য স্কেল উন্নীত করণের সুপারিশ করে। এই সুপারিশ ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটে এই শর্তে অনুমোদন দেয়া হয় যে, এব্যাপারে ভবিষ্যতে কখনও যদি অডিট আপত্তি উত্থাপি হয় তাহলে এই উন্নীতকরণ বাতিল হবে এবং কর্মকর্তাদের দেয়া অর্থ ফেরত দিতে হবে। বিষয়টি সে সময় এভাবে ফয়সালা করা হয়েছে। এখানে উপাচার্য হিসেবে আমার দূর্নীতির জায়গাটি কোথায় তা’ আমার বোধগম্য নয়। আমি মনে করি এটি বড়জোর একটি অডিট আপত্তি/অনাপত্তির বিষয়। ব্যক্তি বা সামস্টিক দূর্নীতির সংগার সাথে এটি যায়-কি?

উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আরও একটি অভিযোগ সম্পর্কে দু’একটি অনলাইন পত্রিকা এবং নষ্ট-ভ্রষ্ট ওই গোষ্ঠীর প্রচার-প্রপাগাÐা থেকে জেনেছি যে, আমি আমার ঢাকার বাসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের টাকায় সিকিউরিটি নিয়োগ দিয়েছি। এটি সর্বৈব মিথ্যা রটনা। ঢাকায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি রেস্ট হাউজ রয়েছে। সেখানে মাত্র ২ জন কর্মী (একজন কুক, একজন সাধারণ) কাজ করে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৫/২০ জন শিক্ষক-কর্মকর্তা (কখনও কখনও তাদের পরিবার-বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য) ঢাকায় গিয়ে রেস্ট হাউজে অবস্থান করেন। উল্লেখ্য এসময়ে বেশ কয়েকমাস ধরে রেস্ট হাউজ ভবনের সংস্কার কাজ চলছিল। রেস্ট হাউজে ইবি পরিবারের সদস্যগণ দিনে-রাতে (কোন ধরাবাধা সময় নেই) যাতায়াত করেন। তাদের জন্য বার বার গেট খোলা এবং লাগানোর মত কোন জনবলই সেখানে ছিল না। অর্গানোগ্রাম অনুযায়ী স্থায়ী জনবল নিয়োগেরও তেমন কোন সুযোগ ছিল না। সেসময় এস্টেট অফিস থেকে আমাকে জানানো হয় যে, ঢাকা রেস্ট হাউজে কিছু সিকিউরিটি ডেপুট (নিয়োগ নয়) করা দরকার। ইবি ক্যাম্পাসের কয়েকজন আনসার দিয়ে সেটা করা যায় কি-না সে ব্যাপারে এস্টেট অফিস আমাকে অবহিত করে যে, আনসার ডেপুট করা অনেক খরচের ব্যাপার এবং বারো জনের নিচেয় আনসার কর্তৃপক্ষ জনবল দিবে না। বিকল্প হিসেবে স্বল্প সংখ্যক (৫/৬ জন) জনবল বরং সিকিউরিটি সংস্থা থেকে ডেপুট করা যায়। সে অনুযায়ী যথাযথ বিধি বিধান প্রতিপালন করে ফিন্যান্স কমিটি এবং সিন্ডিকেটের অনুমোদন নিয়ে ঢাকা রেস্ট হাউজের জন্য ছয়জন সিকিউরিটির সেবা হায়ার করা হয়েছে। উপাচার্য হিসেবে প্রায়শ আমাকে শিক্ষা মন্ত্রনালয়, ইউ জি সি, ধর্ম মন্ত্রনালয় (ইসলামী ফাউন্ডেশন), এ ইউ বি-র সভা এবং গুচ্ছের সভাসমূহে যোগাযোগসহ প্রভৃতি কারণে ঢাকায় যেতে হয়। সেকারণে শিফট অনুযায়ী সিকিউরিটি সদস্য যারা রেস্ট হাউজে ডিউটি করে তাদের একজন রেস্ট হাউজে এবং একজনকে উপাচার্যের বাসায় ডিউটি বন্টন করা হয়েছে মাত্র। উপাচার্যের বাসার জন্য কোন সিকিউরিটি সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়নি। উপাচার্যের বাসার জন্য সিকিউরিটি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এটাও একটি মিথ্যা প্রচারণা।

প্রকৃতপক্ষ আমি জানিনা উপাচার্য হিসেবে আমার বিরুদ্ধে আর কি কি অভিযোগ রয়েছে? অভিযোগগুলো কিসের ভিত্তিতে করা হয়েছে? অভিযোগগুলো কারা করেছে তা’ও আমার জানা নেই। যাহোক একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর প্রচার প্রপাগান্ডার কারণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে ইউ জি সি-কে দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করিয়েছে। কমিটির সদস্যবৃন্দ আমাকে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে লিখিত মতামত/বক্তব্য দিতে বলেছিলেন। আমি তাঁদের নিকট লিখিত ভাবে (ডকুমেন্টসহ) আমার বক্তব্য প্রেরণ করেছি।

আশাকরি পাঠকবৃন্দ বিষয়সমূহ অবহিত হয়ে একজন উপাচার্যকে কিভাবে কেবল রসালো, মিথ্যা, বানোয়াট এবং বস্তনিষ্ঠহীন অভিযোগ তুলে তাঁকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে তা’ উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। উপাচার্য এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে আমি শুধু এতটুকুই বলবোÑআমি কোন দূর্নীতি করে উপাচার্যের এই চেয়ারকে কলুসিত করিনি; আমি স্বার্থান্বেষী নষ্ট-ভ্রষ্ট কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত করবো না।

ধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম

উপাচার্য, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।



বিশ্ববিদ্যালয়   উপাচার্য   কৈফিয়ত  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার ও তাৎক্ষণিক ভাবনা


Thumbnail

মিল্টন সমাদ্দার গ্রেপ্তার হয়েছে। দেশজুড়ে চলছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছে, মিল্টন যতটুকু ভাল কাজ করেছে, তাই বা কজন করে। আবার অনেকে বলছে, মিল্টন অনেক ভয়ঙ্কর কিছু কাজ করেছে। তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। আবার কেউবা বলছে, মিডিয়ার লোকজন সত্য বলছে না। যা বলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব দেখে শুনে আমরা আম জনতা দিকবিদিকহীন। দিশা খুঁজে পাই না। কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যা, তা নিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সত্য মিথ্যা খোঁজার দায়িত্ব আম জনতার না। সেসব খুঁজবে আইনের লোকজন। মিল্টন সমাদ্দার এখন আইনের লোকের হাতে। তাতেই আম জনতার স্বস্তি। এবার নিশ্চয় জনতা জানতে পারবে কে সত্যি আর কে মিথ্যা। মিল্টন নাকি মিডিয়ার লোকজন?

আইনের লোকজন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে যেন জনতাকে জানিয়ে দেয়, মিল্টন যা করছে, তা ঠিক করছে, নাকি বেঠিক করছে। যা করছে, তা কি মানবতার পক্ষে নাকি মানবতা বিরোধী।  আসলেই কি কিডনি বা অন্য অঙ্গ বিক্রি করছে। নাকি সব ভাওতাবাজি। নাকি আয়নাবাজি। মিডিয়া যা  লিখছে, তা কি সব ঠিক। নাকি বাড়াবাড়ি। এসব জানার অধিকার জনতার রয়েছে। আশা করি দ্রুততম সময়ে জনতা তা জানতে পারবে। নাকি সাগর রুনিকে কে বা কারা হত্যা করেছে, সে প্রশ্নের মত এসব প্রশ্নও আকাশে  মিলিয়ে যাবে। নাকি বৈশাখের আগুন ঝরা তেতাল্লিশ উর্ধ লসিয়াসে উদ্বায়ু হয়ে যাবে। মিল্টন যদি কোন অন্যায় করে থাকে, তার যেন বিচার হয়, শাস্তি হয়। মিডিয়া যদি অসত্য তথ্য দিয়ে বাড়াবাড়ি করে থাকে, তারও যেন শাস্তি হয়। মিল্টনের গ্রেফতারের মাধ্যমে এ সব কঠিন প্রশ্নের যেন সহজ উত্তর বেরিয়ে  আসে, এ প্রত্যাশা আমাদের সবার।

পরিশেষে, সমাজসেবা অধিদপ্তরের কাছে মিনতি, তারা যেন আশ্রমে আশ্রিতদের আপাতত দেখভাল করেন। তাদের তিনবেলা যেন আহার জোটে। ওষুধ পথ্যের যেন ঘাটতি না হয়। মিলটনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে যেয়ে আশ্রিতরা যেন অন্ন, বস্ত্র বা চিকিৎসাহীনতায় কষ্ট না পায়। সবার মনে রাখা প্রয়োজন, আশ্রিতরা তো কোন অন্যায় করেনি। সমাজ সেবা

অধিদপ্তর মিল্টনের অবর্তমানে আশ্রিতদের কদরের কোন কমতি করবে না, সে প্রত্যাশা সকল আম জনতার।

পাদটীকা: আজকের অনলাইন পত্রিকাসমূহের একটি খবর। দেশের গণমাধ্যমে ভুয়া খবরের সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। ২০২৩ সালে দেশের মূলধারার গণমাধ্যমে মোট ৪৪টি ঘটনায় ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর খবর প্রচার হতে দেখা গেছে। তাই সাধু সাবধান।

 

লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট।


মিল্টন সমাদ্দার   গ্রেপ্তার   আইন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড থট

আওয়ামী লীগে খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন


Thumbnail

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে শুরু হচ্ছে আগামী ৮ মে। নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশনা ছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকটতম আত্মীয় স্বজনেরা প্রার্থী হতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না। কোন প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারবেন না। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার নেতাকর্মীদের এবং মন্ত্রী-এমপিদের বলেছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য আওয়ামী লীগ সভাপতি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক বারবার বলার পরেও কেউ তা কর্ণপাত করলেন না। অথচ যারা এই নির্দেশনা মানলেন না তাদের অবস্থা এমন যে, যেন তারা শেখ হাসিনার জন্য জীবনও দিতে প্রস্তুত।

খুনি মোশতাকের কথা আমাদের নিশ্চিয় মনে আছে। বঙ্গবন্ধু তাকে অনেক ভালোবাসতেন, বিশ্বস্ত মনে করতেন। খুনি মোশতাকেরও এমন অবস্থা যেন তিনি যে কোন মুহূর্তে বঙ্গবন্ধুর জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত আছেন। এমনও হয়েছিল যে, খুনি মোশতাকের মা মারা যাওয়ার সময় বঙ্গবন্ধুই তাকে সান্ত্বনা দিয়ে তার কান্না থামিয়েছেন। কিন্তু সেই মোশতাকই বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছেন। ঠিক একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে আজকে আওয়ামী লীগে। দার্শনিক শেখ হাসিনা আপনাদের মন্ত্রী বানিয়েছেন, এমপি বানিয়েছেন, তার অনুকম্পায় আপনি রাজনীতিতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পেয়েছেন কিন্তু আপনার স্বার্থের জন্য আপনি তারই (শেখ হাসিনা) নির্দেশনা অমান্য করলেন। আপনি উপজেলায় আপনার মত করে প্রার্থী দিলেন। সুতরাং আপনি খুনি মোশতাকের চেয়ে কম কিসে? জেলায় জেলায় আজ খুনি মোশতাক জন্ম নিয়েছে। এমনকি উপজেলা গুলোতে একই অবস্থা। ফলে এটা স্পষ্ট যে, খুনি মোশতাকের বাম্পার ফলন হয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে।

আগামীকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক ডেকেছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। তিনি যে কোন সিদ্ধান্ত অত্যন্ত চিন্তা ভাবনা করে নেন এবং দর্শন ভিত্তিতে নেন। সুতরাং স্বাভাবিক ভাবে আমরা আন্দাজ করতে পারব না যে, তিনি কি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। তবে আমরা অনুমান করতে পারি যে, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে নিশ্চিয় তিনি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত নিবেন।

দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের ব্যাপারে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়কের একটি বিখ্যাত উক্তি আছে সেটি হল ‘ফর গিভেন বাট নট ফরগটেন’(forgiven but not forgotten) অর্থাৎ তিনি ক্ষমা করে দেন কিন্তু সেটা ভুলে যান না। সুতরাং যারা এখন নতুন করে খুনি মোশতাক হয়েছেন এবং যাদের বাম্পার ফলন হয়েছে তাদের এটা মনে রাখতে হবে। আগামীকাল আওয়ামী লীগ তার কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত নিবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না। গুরুত্বপূর্ণ হল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ঠিক মতই জানেন কিভাবে এই সকল খুনি মোশতাকদের কিভাবে ধরতে হবে। খুনি মোশতাক খুব ভাগ্যবান যে তিনি দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার আগেই মৃত্যুবরণ করেছেন।

কিছুদিন আগে বাংলা ইনসাইডারে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন যে, ‘দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে কেউই রাজনীতিতে ভালো করতে পারেননি।’ উনার এই বক্তব্য ব্যক্তিগতভাবে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি চিরন্তন একটি সত্য তুলে ধরেছেন। সুতরাং দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের এই বিষয়টি মনে রাখা উচিত।

আমি মনে করি, দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারী এই নতুন খুনি মোশতাকরা বিভিন্ন ভাবে, বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগে স্থান করে নিয়েছে। কেউ নিজে থেকে বা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করলেও তিনি আসলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে নয়, খুনি মোশতাকের আদর্শে দীক্ষিত হয়েছেন। যেমন জার্মানিতে এখনও হিটলারের সমর্থক কিছু লোক পাওয়া যায়। ঠিক তেমনি ভাবে এখন আওয়ামী লীগের ভেতর এখনও খুনি মোশতাক এর দোসররা রয়ে গেছেন। এই সমস্ত খুনি মোশতাকদের যদি এখনই প্রতিহত না করা যায় তাহলে আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তাদের জন্য সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা সেই কঠিন সময় আসার আগেই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা যেন এই খুনি মোশতাকদের বাম্পার ফলন যে ভাবেই হোক ধ্বংস করে দিবেন।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন