ইনসাইড ইকোনমি

আয়কর রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক কেনো?

প্রকাশ: ০২:০১ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০২২


Thumbnail

আয়কর কর্তৃপক্ষের কাছে একজন করদাতার বার্ষিক আয়, ব্যয় ও সম্পদের তথ্য নির্ধারিত ফরমে উপস্থাপন করার মাধ্যম হচ্ছে আয়কর রিটার্ন। করযোগ্য আয় থাকলে কিংবা সরকারি বিভিন্ন সেবা পেতে রিটার্ন দাখিল না করার বিকল্প নেই।

আয়কর আইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে বিলম্ব সুদ ও জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে করদাতাকে। শুধু জরিমানা নয়, আয়কর না দেওয়ার কারণে অনেক সময় করদাতাকে কঠোর সাজার মুখোমুখি হতে পারে।

এর পাশাপাশি অন্তত যে ৪০ ধরনের সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেসব সেবা হতে বঞ্চিত হতে হবে করদাতাকে। যার মধ্যে রয়েছে-গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে না কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়া, বেতন-ভাতা প্রাপ্তিতে অসুবিধা, বিভিন্ন লাইসেন্সের রেজিস্ট্রেশন ও নবায়ন না হওয়া এবং ব্যাংকে ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়ের ওপর অতিরিক্ত কর দেওয়া ইত্যাদি।

৩০ নভেম্বরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার কথা বলছেন এনবিআরের আয়কর বিভাগের কর্মকর্তারা। আয়কর নির্দেশিকা অনুসারে ই-টিআইএন থাকা সত্ত্বেও রিটার্ন দাখিল না করলে যেসব সমস্যার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো-

১- যেসব ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে সেসব সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হবে। যেমন- ক্ষেত্রমত, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাবে না কিংবা সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে। বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে অসুবিধা হবে।

২- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ হলে তার ওপর আয়কর অধ্যাদেশের ১২৪ ধারা অনুযায়ী জরিমানা, ৭৩ ধারা অনুযায়ী সরল সুদ এবং ৭৩এ ধারা অনুযায়ী বিলম্ব সুদ আরোপযোগ্য হবে।

৩- যে ক্ষেত্রে করদাতা রিটার্ন দাখিলের জন্য সময়ের আবেদন করে, উপ-কর কমিশনারের মাধ্যমে মঞ্জুরকৃত বর্ধিত সময়ের মধ্যে রিটার্ন দাখিল করবেন, সেক্ষেত্রে করদাতার ওপর জরিমানা আরোপিত হবে না, তবে বিলম্ব সুদ আরোপিত হবে।

আর চলতি অর্থবছরের আয়কর নির্দেশিকা অনুযায়ী যেসব সেবায় রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা হলো-

• কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি টাকা ঋণ নিতে গেলে

• কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হতে হলে

• আমদানি নিবন্ধন সনদ ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে গেলে

• সমবায় সমিতির নিবন্ধন পেতে হলে

• সাধারণ বিমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে এবং লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে

• সিটি করপোরেশন, জেলা সদরের পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ লাখের বেশি টাকার জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রয় বা হস্তান্তর বা বায়না নামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে

• ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• চিকিৎসক, দন্ত চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসেবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসেবে কোনো স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• নিকাহ্ রেজিস্ট্রার হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• ট্রেড বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও নবায়নে

• যেকোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় আবাসিক গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি এবং বহাল রাখতে

• লঞ্চ, স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, কার্গো ও ডাম্ব বার্জ্যসহ যেকোনো প্রকারের ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে ইট উৎপাদনের অনুমতি প্রাপ্তি ও নবায়নে

• সিটি করপোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিশু বা পোষ্য ভর্তিতে

• সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি বা বহাল রাখতে

• ২০ কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে

• আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়

• পাঁচ লাখের বেশি টাকার পোস্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়

• দশ লাখের বেশি টাকার ক্রেডিট ব্যালেন্স সম্পন্ন ব্যাংক হিসাব খোলা ও বহাল রাখতে

• পাঁচ লাখের বেশি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে

• পৌরসভা, উপজেলা, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে

• মোটরযান, স্পেস/স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক অ্যাক্টিভিটিজে অংশ নিতে

• উৎপাদন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা তত্ত্বাবধানকারী অবস্থানে কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে

• সরকার অথবা সরকারের কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, ইউনিটের বা প্রচলিত কোনো আইন, আদেশ বা দলিলের মাধ্যমে গঠিত কোনো কর্তৃপক্ষ, করপোরেশন, ইউনিটের কর্মচারীর ১৬ হাজার টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমাণ মূল বেতন প্রাপ্তিতে

• মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোনো অর্থ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে

• অ্যাডভাইজরি বা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ ও নিরাপত্তা সরবরাহ সেবা বাবদ নিবাসী কর্তৃক কোনো কোম্পানি থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে

• মাসিক পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিওভুক্তির মাধ্যমে সরকারের কাছ থেকে মাসিক ১৬ হাজার টাকার বেশি কোনো অর্থ প্রাপ্তিতে

• বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে

• দ্বি-চক্র বা ত্রি-চক্র মোটরযান ব্যতীত অন্যান্য মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়নকালে

• এনজিও অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিওতে বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথোরিটি থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋণ সংস্থায় বিদেশি অনুদান ছাড়ে

• বাংলাদেশে অবস্থিত ভোক্তাদের নিকট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে

• কোম্পানি আইন ও সোসাইটিজ রেজিস্ট্রেশনের অধীন নিবন্ধিত কোনো ক্লাবের সদস্যপদ লাভের আবেদনের ক্ষেত্রে

• পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দেশ্যে নিবাসী কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টস দাখিলকালে

• পণ্য আমদানি বা রপ্তানির উদ্দেশ্যে বিল অব এন্ট্রি দাখিলকালে

এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চিটাগাং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বা সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুমোদনে ভবন নির্মাণের নকশা দাখিলকালে রিটার্ন দাখিলের প্রাপ্তি স্বীকার জমা দিতে হবে। না  হলে ওইসব সেবা থেকে বঞ্চিত হতে হবে করদাতাকে।

চলতি অর্থবছরের সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি-করদাতার আয় যদি বছরে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, তৃতীয় লিঙ্গের ব্যক্তি, নারী ও ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের করদাতার আয় যদি বছরে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি হয়, গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার আয় যদি বছরে চার লাখ ৭৫ হাজার টাকার বেশি হয় এবং প্রতিবন্ধী করদাতার আয় সাড়ে চার লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে তার রিটার্ন দাখিল করা বাধ্যতামূলক।


আয়কর   রিটার্ন   রিটার্ন দাখিল   এনবিআর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

নতুন করে রিজার্ভ চুরির সংবাদ, যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

প্রকাশ: ১০:২৮ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। দেশটির এক সংবাদপত্রে প্রকাশিত এ খবরটি সত্য নয় বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্রের দপ্তর থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিবৃতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, নিউইয়র্ক ফেডের সঙ্গে লেনদেনে নিশ্চয়তার ক্ষেত্রে বর্তমানে তিন স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নীতি চালু রয়েছে। এর ফলে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, তা ভুয়া (ফেক)।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক জানান, আমরা খোঁজ নিয়ে দেখেছি, রিজার্ভ চুরির কোনো ঘটনা ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলার চুরি করে নিয়েছে ভারতীয় হ্যাকাররা। মঙ্গলবার দেশটির এক সংবাদপত্রে এমন একটি খবর প্রকাশিত হয়। এতে সারাদেশে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। বিষয়টির সত্যতা জানতে অনেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করার পর সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে প্রতিবেদনটির সত্যতা নাকচ করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০১৬ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে জালিয়াতি করে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হয়ে যায়। ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ মতিঝিল থানায় মামলাটি দায়ের করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্টস অ্যান্ড বাজেটিং বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জুবায়ের বিন হুদা। ১৬ মার্চ মামলাটি তদন্ত করে সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন আদালত। মামলাটিতে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ৪ ধারাসহ তথ্য ও প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর ৫৪ ও ৩৭৯ ধারায় করা মামলায় সরাসরি কাউকে আসামি করা হয়নি। ২০১৬ সালের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বর্তমানে মামলা চলছে।

ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে অপরাধীরা। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় চলে যাওয়া দুই কোটি ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। চুরি যাওয়া অর্থের মধ্যে এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৪৬ লাখ ডলার উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি।

রিজার্ভ চুরি   বাংলাদেশ ব্যাংক   নিউইয়র্ক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

দুর্বল ব্যাংকের ঋণ প্রদান বন্ধ করতে হবে: সাদিক আহমেদ

প্রকাশ: ০৯:৪৩ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমাতে দুর্বল ও সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর ঋণ প্রদান বন্ধ করার পরামর্শ দিয়েছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। 

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর গুলশানে মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) আয়োজিত ‘সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও এর চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন সাদিক আহমেদ। 

তিনি বলেন, খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে কমিয়ে আনার আগপর্যন্ত দুর্বল ব্যাংকগুলোকে নতুন ঋণ দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এটিই খেলাপি ঋণ কমানোর সবচেয়ে প্রত্যক্ষ ও টেকসই উপায়।

সাদিক আহমেদ বলেন, এ সময় পর্যন্ত ১৬টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বিতরণ করা মোট ঋণের ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার ছিল ২০ শতাংশের বেশি। এই সমস্যাযুক্ত ব্যাংকগুলোর বেশির ভাগই ব্যাংকিং পরিচালনা রীতি (ব্যাসেল ৩ নিয়মের আওতায় মূলধন পর্যাপ্ততার শর্ত) পূরণ করেনি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে দীর্ঘমেয়াদি অগ্রগতি হচ্ছিল, তা গত চার বছরে একাধিক বাহ্যিক ধাক্কায় হুমকির মুখে পড়েছে। অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনতে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে, তবে এর ফলাফল এখন পর্যন্ত আশানুরূপ নয়। বর্তমানে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার সংকট ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী রয়েছে। বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৃদ্ধির হারও কম।

বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার ক্ষেত্রে উদ্বেগগুলোর মধ্যে চলতি হিসাবে ঘাটতিকে প্রথম স্থানে রাখেন সাদিক আহমেদ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ায় বড় ধরনের বাণিজ্য ও চলতি হিসাবের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। সরকার আমদানি কমিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করলেও মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করেনি। ফলে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রিজার্ভ কমেছে। মাত্র ১১ মাসে ৪৪ শতাংশ বা ২১ বিলিয়নের বেশি রিজার্ভ কমেছে। এটা বড় ধরনের চাপ।

সাদিক আহমেদের মতে, বর্তমানে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় দ্বিতীয় উদ্বেগ হচ্ছে রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়ন। তিনি বলেন, আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও শুল্ক বৃদ্ধির পরও সরকার রিজার্ভের ক্ষতি রোধ করতে পারেনি। সরকার দীর্ঘদিন যাবৎ বিনিময় হার এক জায়গায় বেঁধে রেখেছিল। এখন টাকার অবমূল্যায়ন করে বিনিময় হার সমন্বয়ের উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতির জন্য টাকার অবমূল্যায়নকে নয়, বরং বিনিময় হার ধরে রাখাকে দোষ দিতে হবে।

পিআরআই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০২২ সালের জানুয়ারিতে দেশে মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের আগস্টে বৃদ্ধি পেয়ে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে পৌঁছায়। এরপর থেকে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে থাকছে। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় ধরে কর-জিডিপি হার বাড়ছে না। এসব বিষয়ে সরকার বেশ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। তবে আশ্চর্যজনকভাবে কোনো উদ্যোগই কাজ করেনি।

দুর্বল ব্যাংক   ঋণ খেলাপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

অর্থনৈতিক সংকট কাটবে কীভাবে?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের আশেপাশে ঘোরাফেরা করছে। বাজারে তীব্র ডলার সংকট। সবকিছু মিলিয়ে ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এই প্রথমবারের মত বড় ধরনের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে আওয়ামী লীগ সরকার। অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠাটাই এখন সরকারের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ১৩ বিলিয়নের কিছু কম। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর মার্চ-এপ্রিল মাসে দায় মেটানোর পর মোট রিজার্ভ কমে ২ হাজার ৩৭৭ কোটি ডলার বা ২৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়নে নেমে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এর হিসাব পদ্ধতিতে বিপিএম-৬ অনুযায়ী বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন এক হাজার ৮৩২ কোটি ডলার বা ১৮.৩২ বিলিয়ন। প্রকৃত বা ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ ১৩ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। আকুর বিল পরিশোধ করা হয়েছে ১৬৩ কোটি ডলার। এর ফলে রিজার্ভ কমে যায়।

আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ১১ কোটি মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আইএমএফ ১ হাজার ৪৭৫ কোটি ডলারে নামিয়েছে। যদিও এখন তা ১ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের কম। প্রতি মাসে দেশের আমদানি দায় মেটাতে এখন প্রায় ৫০০ কোটি ডলার প্রয়োজন হচ্ছে। আর এই অবস্থায় অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ তীব্র হয়ে উঠেছে।

এপ্রিলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়েছে এবং তা ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশ অতিক্রম করছে। এই অবস্থা উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়া বাজারে ডলারের দাম এ লাফে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে এখন ডলার সংকট দেখা দিয়েছে। ডলারের জন্য হাহাকার ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে আমদানির ক্ষেত্রে। এই রকম অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে গিয়ে নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে সরকারকে এক ধরনের কৃচ্ছতা সাধন এবং সংকোচন নীতি অনুসরণ করতে হচ্ছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে ডলারের মূল্য ৭ টাকা বৃদ্ধির ফলে এখন প্রবাসী আয় বাড়বে। এই মাসে প্রবাসী আয় ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশা করছেন। তাছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির ব্যাপারেও তারা আশাবাদী।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে যে, প্রধানমন্ত্রী নিজে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিবেচনা করছেন এবং সেই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক বৃদ্ধির একটি বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে। যে সমস্ত দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের বেশি বাণিজ্য রয়েছে, যেমন- ভারত, চীন; সেগুলোতে ডলারের পরিবর্তে সে দেশীয় মুদ্রায় বাণিজ্য করার বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। আভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য সরকার নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, ২০২৬ সাল নাগাদ বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে অর্থনৈতিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে। তবে সরকার মনে করছে অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রস্তুতি চলছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং এ ধরনের ব্যবস্থাগুলোর সুফল আগামী অর্থবছরে পাওয়া যাবে।


ডলার   বাংলাদেশ ব্যাংক   অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার বাংলাদেশ   আইএমএফ   রিজার্ভ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

২০২৪-২৫ অর্থবছরে কোমল পানীয়র করভার বাড়ার সম্ভবনা

প্রকাশ: ১১:১৭ এএম, ১৪ মে, ২০২৪


Thumbnail

২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কোমল পানীয় বা কার্বোনেটেড বেভারেজের বিক্রি থেকে প্রাপ্ত আয়ের ওপর কর (টার্নওভার ট্যাক্স) ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

এই হার চলতি অর্থবছরের বাজেটেও প্রস্তাব করেছিল সংস্থাটি। পরে কোম্পানিগুলোর দাবিতে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে এই করহার ছিল শূন্য দশমিক ছয় শতাংশ। 

মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বিষয়টির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে কার্বোনেটেড বেভারেজের ওপর ৫ শতাংশ করহার করার পরিকল্পনা নিচ্ছে এনবিআর। যদিও চলতি অর্থবছরেও এই প্রস্তাব ছিল আয়কর বিভাগের। পরে ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। তবে আগামী অর্থবছরে এই করহার ৫ শতাংশ করার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী সবুজ সংকেতও দিয়েছেন। অর্থাৎ রোববার এনবিআরের সঙ্গে বৈঠকে এই করহারের বিষয়ে সায় দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তবে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর বাজেটের সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর বাংলাদেশের পানীয় শিল্পের প্রবৃদ্ধি ২০ শতাংশ হারে বাড়ছে। কোমল পানীয়ের খাত থেকে বর্তমানে জাতীয় কোষাগারে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আসে। প্রস্তাবিত টার্নওভার কর বেড়ে যাওয়ার সরাসরি ফলাফল হিসেবে এটি ব্যাপকভাবে কমে যাবে। 


কোমল পানীয়   করভার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড ইকোনমি

মূল্যস্ফীতি ফের ১০ শতাংশ ছাড়াল

প্রকাশ: ০৭:১৬ পিএম, ১৩ মে, ২০২৪


Thumbnail

এপ্রিলে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশের ঘরে উঠেছে। মূল্যস্ফীতি বেড়ে এখন ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। অর্থাৎ ৪ মাস পর খাদ্য মূল্যস্ফীতি আবার দশ শতাংশ ছাড়াল। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

সোমবার (১৩ মে) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের মার্চে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যা এপ্রিলে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে দাঁড়ায়। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। অন্যদিকে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি গত মার্চের তুলনায় এপ্রিলে সাত বেসিস পয়েন্ট কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিলে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ হয়েছে। মার্চে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮১ শতাংশ।

অন্যদিকে, গ্রামে শহরের চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। গত এপ্রিলে গ্রামে সাধারণ মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। শহরে এই হার ৯ দশমিক ৪৬ শতাংশ। পাশাপাশি গ্রামে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির হার ১০ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং খাদ্য বহির্ভূত খাতে এই হার ৯ দশমিক ৬০ শতাংশ।

মূল্যস্ফীতি   বিবিএস  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন