ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল ও
আশুগঞ্জ)আসনের উপ-নির্বাচনের অন্যতম
প্রতিদ্বন্দ্বী উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়া ইস্যুতে বিএনপি’র অপরাজনীতির স্বরূপ
উন্মোচিত হয়েছে।সেখানে ত্যাগী নেতাদের পরিবর্তে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তিদের মূল্য দেওয়ার দলীয় কৌশল জনগণের
সামনে প্রকাশ্যে এসেছে।শিক্ষাগত যোগ্যতা, পারিবারিক ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক পরিপক্বতায়
এগিয়ে থাকা উকিল আব্দুস
সাত্তার ভূঁইয়াকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করে
হীনমন্যতার পরিচয় দিয়েছে দলটির শীর্ষ ব্যক্তিরা। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
বিএনপির টিকেটে এমপি নির্বাচিত হন
তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তে গত
১১ ডিসেম্বর(২০২২) তিনি জাতীয় সংসদ
থেকে পদত্যাগ করেন।২৯ ডিসেম্বর তিনি দলে গুরুত্ব
না পাওয়ার অভিযোগ এনে বিএনপি থেকে
পদত্যাগ করেন। এদিকে দল থেকে পদত্যাগের
পর ওই আসন থেকেই
আবারো নির্বাচনের জন্য ১ জানুয়ারি
মনোনয়নপত্র কেনেন তিনি।ওইদিন রাতে কেন্দ্র থেকে
দলীয় শৃংঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাঁকে দলের
সব পদ থেকে বহিষ্কার
করা হয়।এই উপনির্বাচনে তার বিপরীতে শক্তিশালী
কোনো প্রার্থী না থাকায় সহজেই
তিনি জয় পাবেন বলে
ধারণা করা হচ্ছে। আগামী
১ ফেব্রুয়ারি ইভিএমে এই উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত
হবে।
২.
দলীয়
সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার পরও
উকিল আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার সঙ্গে বিএনপির নেতারা যে আচরণ করেছেন
তা নিঃসন্দেহে নিন্দনীয়। এদিকে বিএনপির পদত্যাগে শূন্য আসনের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ এ ক্ষমতাসীন
আওয়ামী লীগ কাউকে প্রার্থী
করছে না। বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ
উকিল আব্দুস সাত্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে
নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
করায় বিষয়টি অন্যান্য দলের কাছে ইতিবাচক
মনে হয়েছে।১ জানুয়ারি প্রকাশিত সংবাদসূত্র অনুসারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা
জিল্লুর রহমানের বক্তব্য- ‘বিকালে আব্দুস সাত্তার ভূঁইয়ার পক্ষে সাদ মোহাম্মদ রশিদ
সাড়ে আট হাজার টাকার
চালান জমা দিয়ে নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়ন ফরম
কিনেছেন।’ বিএনপি যে সুস্থ ধারার
রাজনীতির বিপক্ষে তা স্পষ্ট হয়েছে
বিএনপি ত্যাগ করে রাজনীতিবিদ উকিল
আব্দুস সাত্তারের এই মনোনয়নপত্র কেনার
ঘটনায়।
উকিল
আব্দুস সাত্তার কুমিল্লা জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা
সহসভাপতি ছিলেন। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয়
সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ (বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া)
আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন
না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী
হিসেবে জয় লাভ করেন।এরপর
তিনি পঞ্চম (১৯৯১), ষষ্ঠ (১৯৯৬ সালের ১৫
ফেব্রুয়ারি), সপ্তম (১৯৯৬ সালের ১২
জুন) এবং ২০১৮ সালের
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ধানের
শীষে নির্বাচিত হন। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া
জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘ ২৮ বছর।২০০১ সালে
উকিল আবদুস সাত্তার টেকনোক্র্যাট কোটায় খালেদা জিয়া সরকারের প্রতিমন্ত্রী(২০০১-২০০৬)হিসেবে
দায়িত্ব পালন করেন। বিএনপির
সেই মেয়াদের বিভিন্ন সময় তিনি চারটি
মন্ত্রণালয়ে (আইন, ভূমি, মৎস্য
এবং বিদ্যুৎ) দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি
এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে
কোন মামলা নেই। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক
ক্যারিয়ার রয়েছে উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়ার। ৫ বার সংসদ
সদস্য নির্বাচিত এই ব্যক্তি বিএনপি
চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এবং জেলা বিএনপির
উপদেষ্টা ছিলেন।তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বার এ্যাসোসিয়েশন
এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকও
ছিলেন।পারিবারিক কারণ দেখিয়ে বিএনপি
থেকে পদত্যাগ করে শূন্য হওয়া
আসনের উপ-নির্বাচনে নিজে
স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সম্মতি প্রদানের মধ্যেও আছে তাঁর দেশপ্রেমের
প্রকাশ।এজন্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একমাত্র
ছেলে মাইনুল হাসান তুষারকে নির্বাচনে প্রার্থী করার ইচ্ছা পোষণ
করেছেন।তাঁর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের
পিছনে যুক্তিও আছে। কারণ বিগত
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল
থেকে দেখা যায়, তিনি
এলাকায় জনগণের আস্থার প্রতীক।সৎ ও সজ্জন বলে
বিএনপি’র আদর্শহীন ও
দুর্নীতির পরিপোষক নেতারা তাঁর শত্রু হয়ে
উঠেছেন।
৩.
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
সরাইল বাড়ি উকিল আব্দুস
সাত্তার ভূঁইয়ার।তিনি ১৯৭৯ সালেই বিপুল
ভোটে জয়ী হয়ে এলাকার
মানুষের উন্নয়নে নিবেদিত হন।তারপর তিন দশকের পথ
চলায় তাঁর রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা
যেমন পরিপক্ব হয়েছে তেমনি স্থানীয় বাসিন্দাদের চিনেছেন নিবিড়ভাবে। কেবল মানুষ নয়
তিনি প্রকৃতি ও প্রশাসনের এক
অবিসম্বাদিত নেতায় পরিণত হন।ক্রমান্বয়ে তিনি নির্বাচনে বিজয়ী
হয়ে দেশের অন্যতম স্বচ্ছ রাজনীতির ধারাকে বেগবান করেন।বিএনপি’র মতো দলের
নেতা হয়েও নিজেকে সততার
কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে মানুষের মাঝে
টিকে থাকা চাট্টিখানেক কথা
নয়।রাজনীতির দুষ্টচক্রকে দূরে ঠেলে নিজেকে
মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে
তুলেছেন এই নেতা।কেন্দ্রীয় বিএনপির
নেতা, সরাইল-আশুগঞ্জ এর নির্বাচিত সাংসদ
ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব হওয়ায় এলাকায় নিজস্ব কর্মীবাহিনী রয়েছে তাঁর। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে
ভূমি প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের
অভিযোগ থাকলেও তিনি নিজে যে
নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করেন
এটা পরিষ্কার।
তবে
বিএনপি বহিষ্কার করার তিন দিন
আগে ২৯ ডিসেম্বর(২০২২)
প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ
ছাড়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন উকিল সাত্তার, যা
৩১ ডিসেম্বর জানিয়েছিলেন তিনি।বিএনপি ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে
উকিল সাত্তার পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপি
করেছি।দলের যে কোনো সময়ে
যে কোনো সিদ্ধান্ত আমরা
মানছি।সর্বশেষ সিদ্ধান্ত সংসদ থেকে পদত্যাগ-
এটাও মাইনা পদত্যাগ করেছি পার্লামেন্ট থেকে।এখন বুঝতে পারছি যে দলে আমাদের
প্রয়োজন নেই; দলের কর্মকাণ্ডে
তা বুঝতে পারছি। বৃদ্ধ হয়ে গেছি… মান
সম্মান থাকতে থাকতে দল থেকে চলে
আসছি।’
উকিল
আবদুস সাত্তারকে ইতোমধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সর্বদলীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।(দৈনিক
সংবাদ, ২১ জানুয়ারি ২০২৩)২১ জানুয়ারি স্থানীয়
এক মতবিনিময় সভায় সরাইলের আওয়ামী
লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির
বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান নেতা
উপস্থিত ছিলেন।সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে সভায় উপজেলা আওয়ামী
লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ সেখানে উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের
(ইউপি) মধ্যে ছয় জন চেয়ারম্যান
অংশ নেন।সাত্তার সাহেব যে ভালো মানুষ,
সৎ মানুষ এটা সভায় উল্লেখ
করে তাঁকে বিজয়ী করতে হবে বলে
মতামত ব্যক্ত করেন নেতৃবৃন্দ।সভায় উপস্থিত
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও
জনপ্রতিনিধিরা তাঁর প্রতি সমর্থন
প্রকাশ করেন।
এর আগে ২ জানুয়ারি
আবদুস সাত্তারকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি।দুই সপ্তাহ
পরেই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তবে যেখানে ‘বি্এনপি’
নামক দলের নেতাকর্মী ও
সমর্থকদের ভালোবাসা ও নিরলস প্রচেষ্টা
এবং সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল সেখানে
নির্বাচিত সাবেক এই এমপি’র
বিরুদ্ধে মারমুখী আচরণ প্রকাশ করা
হয়েছে, যা ন্যক্কারজনক। অবশ্য
৫ জানুয়ারি (২০২৩)প্রকাশিত সংবাদ
থেকে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে
স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সাত্তার ছাড়া আরও ১২
জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ক্ষমতাসীন
দল প্রার্থী না দেওয়ায় সাত্তারের
সঙ্গে লড়বেন সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি
মনোনীত মো. আবদুল হামিদ।
তবে ভোটের মাঠে তার অবস্থান
নাজুক। অন্য প্রার্থীদের অবস্থানও
দুর্বল হওয়ায় ‘ওয়াকওভার’ পেতে চলেছেন পাঁচবারের
সাবেক এমপি উকিল আব্দুস
সাত্তার। অর্থাৎ ভোটের লড়াইয়ে তাকে খুব একটা
বেগ পেতে হবে না।১৯
জানুয়ারি (২০২৩) তিনি বলেছেন, পরিস্থিতির
কারণে তাঁকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। তিনি
আরো বলেছেন, ‘অনেকে প্রশ্ন করেন- আপনি পদত্যাগ করে
আবার নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন, আসলে কি ব্যাপার?
এটা সবাই বুঝেন। সব
কথা বলা যায় না।
পরিস্থিতির কারণে আমাকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। আবার
নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এখানে ভুল বুঝাবুঝির কোনো
অবকাশ নাই। এ সিদ্ধান্ত
দেশের স্বার্থে ও জনগণের স্বার্থে
নিয়েছি।’
এছাড়াও
এই রাজনীতিবিদের বক্তব্য হলো- ‘আমি বিএনপির হাইকমান্ডের
নির্দেশে পদত্যাগ করি। পরে বুঝতে
পারি আমি আমার এলাকার
জনগণের চাহিদা পূরণ করতে পারি
নি। তাই আমি স্বতন্ত্র
প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করতে
চাইছি।’ তিনি আরও বলেন,
‘স্বতন্ত্র থেকে আমি শুরু
করেছিলাম, আবার স্বতন্ত্র দিয়েই
আমি শেষ করতে চাই।
এজন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা
চাই। আপনারা আবার আমাকে কলার
ছড়া মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত
করুন। আমি যেন আপনাদের
বাকি কাজগুলো শেষ করতে পারি।’
এভাবেই একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের
প্রজ্ঞামণ্ডিত কথা জনগণকে উদ্দীপিত
করেছে।
৪.
তবে
১ ফেব্রুয়ারির উপ-নির্বাচনে ‘ব্রাহ্মণবাড়িয়ার
ঐক্যের প্রতীক’ উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়ার সঙ্গে দলের কেন্দ্রীয় এবং
স্থানীয় কিছু নেতাদের অসদাচরণ
থেকে বিএনপি’র রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব
আত্মপ্রকাশ করেছে।উপরন্তু বিএনপি’র সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড
সামনে এসেছে।
প্রতিষ্ঠার
৪৪ বছর অতিক্রম করে
দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল
বিএনপি সার্বিক বিবেচনায় এখন দিশেহারা, অগোছালো
সংগঠন।স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তির সঙ্গে গোপনে ষড়যন্ত্র করে দলটি এখন
বুদ্ধিদীপ্ত ও গঠনমূলক রাজনীতি
থেকে যোজন যোজন দূরে
অবস্থান করছে। বিএনপিকে দেখে এখন মনে
হয় বার্ধক্যে ভুগছে।দলটির নেতাদের এখনো যেকোনো সিদ্ধান্ত
নিতে দীর্ঘ সময় লাগে। দোটানা
ভাব তো আছেই তার
উপর অহেতুক পরিস্থিতিকে জটিল করে ফেলেন
তারা। সহজ, সরলভাবে চিন্তা
করার ক্ষমতা লোপ পেয়েছে নেতাদের।রাজনীতির
মাঠে বিএনপির নেতা-কর্মীদের কথাবার্তা
ও ভাবভঙ্গি এখন কাণ্ডারীহীন, লক্ষ্যহীন
যাত্রীর পথ অতিক্রান্ত করার
মতো।২০২০ সালে দলীয় নেত্রী
খালেদা জিয়াকে জেলে রেখেই সংসদে
গিয়েছিলেন বিএনপির সদস্যরা।সেসময় থেকে ২০২২ অবধি
সংসদে এমন কোনো ভূমিকা
রাখতে পারেননি, যা বিএনপির জন্য ইতিবাচক
হতে পারে। বরং বিএনপির এক
সদস্য সংসদে বলছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কৃপায় তিনি সংসদে প্রবেশ
করতে পেরেছেন। আরেক সাংসদ তাঁর
বক্তব্যে মাদক ব্যবসায়ী ও
সন্ত্রাসীদের ‘ক্রসফায়ার’দেওয়ার দাবি তুলে ভয়ঙ্কর
মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।একজন বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সমর্থনে সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন।২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে যেতে পেরে ও
সরকারি ভাতা পেয়েই খুশিতে
গদগদ ছিলেন তাঁরা। আওয়ামী লীগ ১৪ বছর
ক্ষমতায় আছে। এ সময়ে
অনেক নতুন নতুন ভোটার
যুক্ত হয়েছেন। রাজনীতি নিয়ে এঁদের অনেকেই
এখন খোঁজখবর রাখেন। এঁদের সামনে বিএনপি নিজেদের নতুনভাবে তুলে ধরতে পারেনি।বিএনপির
সাংসদদের বালখিল্য আচরণ জনমনে যথেষ্ট
হাস্যরসের সৃষ্টি করেছে, এবং তাদের মাঠের
রাজনীতিও তরুণ প্রজন্মকে আকৃষ্ট
করতে পারছে না।পাকিস্তানপন্থী বিএনপি-জামায়াত ২০০৪ সালের ২১
আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে বঙ্গবন্ধুর উত্তরসূরি শেখ হাসিনা তথা
এদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার
নেতৃত্বকে নিঃশেষ করতে চেয়েছিল। তাদের
সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
২০২০
সালের করোনা মহামারি কিংবা ২০২২ সালে শুরু
হওয়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধজনিত সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশের জনগণকে কোনো ভালো কথা
বলে পাশে থাকার প্রত্যয়
ব্যক্ত করতে দেখা যায়নি
বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটির
নেতা-কর্মীদের।করোনা ব্যাধির দুর্যোগে অসহায় মানুষের পাশে থাকা জনসম্পৃক্ততার
অন্যতম দৃষ্টান্ত হতে পারত এই
রাজনৈতিক দলটির।কিন্তু মানুষের জন্য দায়বদ্ধ নন
সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে
আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কৃষকের
ধান কাটা থেকে শুরু
করে দুস্থদের ত্রাণ বিতরণে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে
যুক্ত ছিলেন। জনসম্পৃক্ততার কারণে বেশ কিছু আওয়ামী
লীগ নেতা করোনায় আক্রান্ত
হয়ে মৃত্যুবরণও করেছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপি’র লক্ষণীয় কোনো
কাজ চোখে পড়ে নি।
বরং মহামারি মোকাবেলায় সরকারের বিপুল প্রচেষ্টাকে অভিনন্দন জানাতে কুণ্ঠিত হতে দেখা গেছে
তাদের। সরকারের কোনো কোনো ইস্যুতে
তারা সমালোচনামুখর হয়েছেন, সফল ও সুন্দর
উদ্যোগকে ব্যঙ্গ করেছেন।পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলের মতো প্রকল্পের সাফল্যও
তারা স্বীকার করেন না। প্রকৃতপক্ষে
রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লুটার জন্য বিএনপি অনেক
কাজ করে থাকে।আসলে উন্নয়ন
নিয়ে তাদের কথা বলার সুযোগ
নেই। দেশের বর্তমান উন্নয়নের চেয়ে তাদের সময়ে
অনেক বেশি উন্নয়ন হয়েছে-
এটা বলা কেবল বাতুলতা।সরকারের
দুর্নীতির কথা বলারও সুযোগ
নেই। কারণ দুর্নীতির দায়ে
তাদের শীর্ষ নেতারা উচ্চ আদালত পর্যন্ত
দণ্ডিত হয়েছেন। কাজেই তাদেরকে আবার পুরানো ধারায়
ফিরে যেতে হচ্ছে।গুরুত্বহীন ইস্যুতে
সরকার বিরোধিতা তো আছেই, তার
সঙ্গে জামায়াতের মতো ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির
উপর তাদেরকে নির্ভর করতে দেখা যাচ্ছে।
বিএনপি’র এই অপরাজনীতির
ধারা থেকে বের হয়ে
এসেছেন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ উকিল আব্দুস সাত্তার
ভূঁইয়া।
৫.
বার্ধক্য
উকিল আবদুস সাত্তারকে দমাতে পারেনি। তিনি যেন পুনরায়
সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। যে সংগ্রাম শুভ
বোধের উন্মীলন ঘটাবে।যে সংগ্রাম তাঁকে যুদ্ধজয়ী করে তুলবে।বিএনপি তাঁর
বহিষ্কারের ক্ষেত্রে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকে
কারণ দেখিয়েছে।কিন্তু আমাদের প্রশ্ন বিএনপি কি আদৌ সুশৃঙ্খল
একটি দল? বরং বিএনপি’কে ত্যাগ করে
তিনি মানুষের কল্যাণের রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন।সংবাদপত্রের সূত্রে জানা
গেছে, উকিল আবদুস সাত্তার
ভূঁইয়াকে এলাকার স্বার্থে ভোট দিবেন এবং
নির্বাচনে কাজ করবেন ব্যাপক
সংখ্যক সাধারণ মানুষ।এলাকাবাসীর অভিমত হলো- উকিল আবদুস
সাত্তার ভূঁইয়া একজন ভাল মানুষ
ও ভদ্রলোক তাই সাধারণ মানুষ
তাঁর পক্ষে রায় দিবেন।এছাড়া তিনি
কারো ক্ষতি করেননি, তিনি প্রবীণ রাজনীতিবিদ,
সৎ ব্যক্তি।’ তাঁর ছেলে মাইনুল
হাসান তুষার বলেছেন, ‘আগে বাবার নির্বাচনে
শুধু বিএনপির লোকজন মাঠে থাকতেন। এখন
তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করছেন। ফলে দলমত নির্বিশেষে
সবাই আমার বাবার পক্ষে
আছেন। আমরা এটিকে স্বাগত
জানিয়েছি।’ ১ ফেব্রুয়ারি ভোট
দিয়ে উকিল আবদুস সাত্তারকে
নির্বাচিত করার এলাকাবাসীর প্রতিশ্রুতিতে
আমরা শুভবোধের জয় ঘোষিত হতে
দেখছি।উক্ত আসনের ৩ লক্ষ, ৭৩
হাজার, ১শ’ ৪৮ জন
ভোটার তাঁর পক্ষে থাকবেন-
এই প্রত্যাশা আমাদের।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
দেশে একটি সুষ্ঠু
নির্বাচন করা এবং সেটাকে দেশে-বিদেশি সবার কাছে যোগ্য করে তোলার আসল কাজটি করতে হয়েছে
রাষ্ট্রপতিকে। এই কাজটি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শেষ পর্যন্ত খুব ভালো ভাবে এবং
সফল ভাবে করতে সক্ষম হয়েছেন। গত এক বছরে এটিই এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রপতির সেরা অর্জন বা
সেরা সাফল্য বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রপতি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ
ভাবে না করতে পারতেন তাহলে দেশের গণতন্ত্র এক বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়ত। কিন্তু রাষ্ট্রপতি
সেটি ভালো ভাবে সামাল দিতে পেরেছেন। আমাদের গণতন্ত্র রক্ষা পেয়েছে, গণতন্ত্রের জয় হয়েছে।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এ কথা না বললেই নয় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিনকে নিয়ে আমি ব্যক্তিগত ভাবে গর্বিত। কারণ দেশের এক নম্বর নাগরিক বা
রাষ্ট্রপতি হওয়া সত্বেও তিনি যেভাবে সবার সাথে মিশেন সেটা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রকৃত
অর্থেই মাটির মানুষ না হলে তার পক্ষে এটা করা সম্ভব নয়। এখনও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের
গায়ে গ্রামের সেই ধুলোবালির গন্ধ পাওয়া যায়। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার যে ধ্যান
ধারণা থাকার কথা সেটাও তার মধ্যে অত্যন্ত প্রখর এবং সেই চেতনা তিনি সকলের মাঝে ছড়িয়ে
দেয়ার চেষ্টা করেন বলেই আমার কাছে দৃশ্যমান হয়। সেজন্য আমি ব্যক্তিগত ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা এবং তার দল আওয়ামী লীগ ধন্যবাদ দিতে চাই যে, তারা এ রকম একজন রাষ্ট্রপতিকে
এই পদে মনোনয়ন দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে মো. সাহাবুদ্দিনের মনোনয়ন শুরুতে সবাইকে অবাক
করলেও সেটা ছিল আমাদের অগত্যা। কারণ অনেকে তার সম্পর্কে সঠিক ভাবে জানতেন না। অথচ তিনি
একজন স্থানীয় নেতা হয়েও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করেছিলেন। এমনকি
পাবনার মত একটি জেলা শহরে থেকে তিনি এটি করেছেন। আমরা সেটার মাহাত্ম্য বুঝতে না পারলেও
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকরী ষড়যন্ত্রকারীরা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন আর সেজন্য রাষ্ট্রপতিকে গ্রেপ্তার
করেছিলেন। আমি প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফের কাছে শুনেছি যে রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন এবং তার (প্রয়াত স্বাস্থ্যমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন ইউসুফ হাত পা খাটের
সাথে বেঁধে রাখা হয়েছিল। এভাবে অনেক দিন তিনি জেল খেটেছেন। এরপর তিনি জেলে থেকেই আইন
পাশ করেন। তিনি পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেন এবং জেলা জজ পর্যন্ত হয়ে তিনি তার চাকরির জীবন
শেষ করেন। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত হন। তিনি আওয়ামী
লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য হিসেবে এবং আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের নির্বাচন কমিশনের
প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন
করছেন। রাষ্ট্রপতি হলেও এখনও তিনি আগের মতই সহজ-সরল রয়ে গেছেন। তার এই সরলতা ইতিমধ্যে
সাধারণ মানুষের মন জয় করেছে।
গত এক বছরে রাষ্ট্রপতির আরেকটি উল্লেখ্য করার মত সাফল্য হল যে,
তিনি এমন ভাবে দায়িত্ব পালন করছেন বা এখন পর্যন্ত তার কাজকর্ম কিংবা সিদ্ধান্তগুলো
দেখে বুঝার উপায় নেই যে তিনি আগে কখনও কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। রাষ্ট্রের
অভিভাবক হিসেবে তিনি তার নিরপেক্ষতা ধরে রাখতে পেরেছেন। রাষ্ট্রের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা
পেয়েছেন। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, রাষ্ট্রপতি
মো. সাহাবুদ্দিন সহ সর্বশেষ তিনজন রাষ্ট্রপতি গণ মানুষের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিজেকে
প্রমাণ দিতে পেরেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, এরপর অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ
এবং মো. সাহাবুদ্দিন তারা প্রত্যেকই অতি সাধারণ জীবন যাপন করে আপামর জনগণের মন জয় করে
নিতে পেরেছেন। রাষ্ট্রপতি হবার আগে যে সাধারণ জীবন যাপন করেছেন রাষ্ট্রপতি হবার পরও
একই ভাবে থেকেছেন।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিদের তালিকায় এমন রাষ্ট্রপতিও আছেন যারা রাষ্ট্রপতি
হবার আগে এক রকম ছিলেন পরে আবার অন্যরকম ভাবে আবির্ভূত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি হবার আগে
যে আদর্শ ধারণ করতেন রাষ্ট্রপতির চেয়ার বসলে তাদের সেই আদর্শের বিচ্যুক্তি ঘটে। কিন্তু
এক্ষেত্রে এই তিনজন ব্যক্তি সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তারা আগে যা ছিলেন রাষ্ট্রপতি হবার
পর একই রকম থেকেছেন, আদর্শচ্যুত হননি। মো. সাহাবুদ্দিন যে আদর্শ ধারণ করেন সেই আদর্শে
তিনি তার কাজকর্ম সফলতা সাথে করে যাচ্ছেন। আমরা তার উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০৯:২৬ পিএম, ২১ এপ্রিল, ২০২৪
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ১০:০০ এএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি
প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর
রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা
করবেন।
প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে
আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা
নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর। আমার ধারণা যারাই প্রথম আলো কিনেন না
কেন তারা প্রথম দিকে মতিউর রহমান সাহেবকে রাখলেও পরবর্তীতে ছয় মাস থেকে এক বছরের মধ্যে
সম্পাদক পরিবর্তন করবে। আর প্রথম আলো যদি কোন যুক্তিপূর্ণ লোকের কাছে দেয় তাহলে আমার
মতে এখানে সম্ভবত আনিসুল হক সাহেব সম্পাদক হবেন। কারণ তার প্রতি লোকের অনেক শ্রদ্ধাবোধ
আছে এবং তিনি সবসময় একটা রেড লাইন রক্ষা করে চলেন। এটা আমরা সকলেই জানি। তার সাথে
অনেকেরই ভালো সম্পর্ক এবং তিনি খুবই জ্ঞানী
লোক।
এর আগে মতিউর রহমান যখন একতা থেকে আজকের কাগজে যান, তখন তার উদ্দেশ্যই
ছিল যে, একটি পত্রিকা কীভাবে চলে সেটা শেখা এবং এখান থেকে একসাথে সাংবাদিক নিয়ে বেরিয়ে
যাওয়া। তিনি সেটা করেছিলেন। তারপর ভোরের কাগজ থেকে একই কাজ করেছেন। সুতরাং তার সত্যিকারের
নীতিবোধ বলতে যেটা বোঝায় সেটা দুর্ভাগ্যবশত তিনি প্রমাণ করতে পারেননি।
তিনি এক সময় কমিউনিস্টদের সাথে থাকলেও এখন তার চেয়ে বড় দক্ষিণপন্থী
পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়াই কঠিন। এ কারণে প্রথম আলো যে বিক্রি হবে এই ব্যাপারে সাধারণ লোকের
ভিতরে এখন আর কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টারের কী হবে এই নিয়ে আলাপ আলোচনা হচ্ছে
এবং এই আলাপ আলোচনা খুব দীর্ঘদিন যে চলবে তা না। আমার মনে হয় জুন-জুলাই মাসের ভিতরেই
এর একটা ফয়সালা হয়ে যাবে। কারণ স্বাভাবিক ভাবেই বুঝি যে, একটি পত্রিকা পাঠকপ্রিয়তা
পেতে বেশ সময় লাগে। এটা একদিন দুইদিনের ব্যাপার না। আবার ঠিক তেমনিভাবে যখন পাঠকপ্রিয়তা
কমতে থাকে সেটাও একদিন দুইদিনে হয় না। ধীরে ধীরে হয়। এই মিডিয়া জগতের নিয়মই তাই।
আমি ১৯৬১ সালে পত্রিকা বলতে শুধুমাত্র ইত্তেফাক এর কথাই জানতাম।
সেই ধারণা থেকে বলতে পারি এখন প্রথম আলোর যদি কিছু কর্মী এর চেয়ে ভালো কোন সুযোগ সুবিধা
দেখেন তাহলে তারা বিক্রি হওয়ার আগেই চলে যাবেন। কারণ স্বাভাবিকভাবেই একজন সাংবাদিকের
একটা ক্যারিয়ার আছে এবং প্রথম আলোর মতো পত্রিকাতে কাজ করে তিনি তো যে কোন পত্রিকায়
যেতেও পারবেন না। তার কারণ গেলে তার ওই লেখার যে মান সেটা মূল্যায়ন নাও হতে পারে। তবে
আমার ধারণা প্রথম আলোতে কাজ করেছেন এমন যে কাউকে টেকনিক্যাল গ্রাউন্ডে অনেক গুরুত্ব
দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমি অবাক হব না যদি দু এক মাসের ভিতরে দেখা যায় যে আস্তে আস্তে
প্রথম আলো বিভিন্ন কর্মী অন্য পত্রিকায় যাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
ব্যাংক মার্জারের যেমন একটি ঘটনা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ঠিক
তেমনি পত্রিকা জগতেও শিল্প গোষ্ঠীর যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটেছে এটিও ব্যাংক মার্জারের
ঘটনার পর্যায়ে চলে যাবে। ব্যাংকিং ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুটি ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। আর
এদিকে দেখা যাবে, সংবাদকর্মীরা অন্য পত্রিকায় চলে যাচ্ছে।
তবে আমার মনে হয় না, এখন যে অবস্থা চলছে এতে প্রথম আলো আর আগের
মতো প্রথম আলো থাকতে পারবে। এটা কিছুতেই সম্ভব না এটি মোটামুটিভাবে নিশ্চিত। তাই আমার
মনে হয় প্রথম আলো সেই ব্যাংক মার্জারের পর্যায়ে চলে এসেছে। এখন অন্য পত্রিকা যাদের
আছে, তারাও প্রথম আলো কিনে নিতে পারেন। এটি সম্ভব। এরকম শিল্পগোষ্ঠীর কোন কমতি বর্তমানে
বাংলাদেশে নেই। যে কোন শিল্প গোষ্ঠীই এটা কিনবে।
তবে আমি আশা রাখব, যারাই প্রথম আলো কিনবে, তারা যেন অন্তত পক্ষে
এটা খেয়াল রাখে যাতে সাংবাদিকদের কোন ক্ষতি না হয়। সুতরাং এদেশের একজন সাধারণ নাগরিক
হিসেবে আমার দাবী হচ্ছে সাংবাদিকরা যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।
মন্তব্য করুন
আজ ২৪ এপ্রিল। গত বছর এই দিনে রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছিলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। সে হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের আজ এক বছর পূর্ণ হল। অঙ্কের হিসেবে এক বছর সময় অনেক কম মনে হলেও এই সময় তিনি সেরা সাফল্য অর্জন করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন যে সময় দায়িত্ব গ্রহণ করেন সে সময়টা ছিল নির্বাচনী বছর। বাংলাদেশে নির্বাচন শেষ পর্যন্ত হবে কিনা, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যত কোন দিকে যাবে ইত্যাদি নানা রকম শঙ্কা ছিল অনেকের মধ্যে। দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতির প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করা। নির্বাচন বিষয়টি যদিও নির্বাচন কমিশনের কাজ। কমিশন এটা আয়োজন করে থাকে। কিন্তু এর পিছনে আসল কাজটি করেছেন রাষ্ট্রপতি।
প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন শেষ হয়েছে গতকাল। কিন্তু অবাক করার বিষয় যে, একমাত্র পলকের শ্যালক ছাড়া আর কেউই মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। অথচ আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা আছে যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেউ নির্বাচন করতে পারবেন। দলের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনা ইতোমধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন। মন্ত্রী, এমপিদের পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে যারা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন তাদেরকে প্রত্যাহারের জন্য তিনি নির্দেশও দিয়েছেন। তিনি শেষ পর্যন্ত কেউই তা মানেননি। এতে করে সুস্পষ্ট ভাবে তারা আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনাকে অমান্য করেছে। যা দলীয় সিদ্ধান্তের লঙ্ঘন এবং গুরুতর অপরাধও বলে আমি মনে করি।
দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে ভূমিধস বিজয়ের পর ১১ জানুয়ারি যে নতুন সরকার গঠন করেন আজ তার ১০০ তম দিন। এক কঠিনতম সময়ে তিনি এই সরকার গঠন করেছেন। কিছু বুদ্ধিজীবী নির্বাচনের আগে আগে নানান রকম কথাবার্তা বললেও সাধারণ মানুষ ঠিকই জানত যে, শেখ হাসিনাই আবার সরকার গঠন করবেন। কারণ তারা জানেন যে, শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই। সরকার গঠনের পরও কিন্তু তাকে কঠিনতম সময় পার করতে হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সফলতা পাচ্ছেন। এজন্য একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমিও মনে করি যে, দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বিকল্প শেখ হাসিনাই।
বারো বছর আগের কথা। ডেভিড ক্যামেরুন তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদিন তিনি একটি হাসপাতালের ওয়ার্ডে ঢুকে পড়লেন। রোগীর অনুমতি সাপেক্ষে রোগীর সাথে ছবি তুলতে গেলেন। বাঁধ সাধলেন ওয়ার্ডের দায়িত্বে থাকা একজন চিকিৎসক। জীবাণু প্রতিরোধের কোন পদক্ষেপ না নিয়ে এবং চিকিৎসকের অনুমতি ব্যতিরেকে তিনি ওই কাজটি করছিলেন। ডেভিড ক্যামেরুন তাঁর ভুল বুঝতে পেরেছিলেন সাথে সাথে। ক্ষমা চাইলেন এবং ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে গেলেন।
এখন টক অফ দ্য কান্ট্রি হচ্ছে প্রথম আলো বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যদি প্রথম আলো কে বা কারা কিনবে সেটা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না। তবে প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান চাইবেন কোথায় গেলে তার চাকরির নিশ্চয়তা থাকবে। সেভাবেই তিনি বিক্রি করার চেষ্টা করবেন। প্রথম আলো বিক্রির বিষয়টির পাশাপাশি একই রকম আরেকটি প্রশ্ন সামনে আসছে। আর সেটা হলো প্রথম আলোর পরে কে? তাহলে কি প্রথম আলোর পরে ডেইলি স্টার? তবে এটা নির্ভর করবে প্রথম আলোর কি ভাগ্য হয় তার ওপর