তৃতীয়
মেয়াদে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য চীনা রাষ্ট্রপতি মনোনীত হয়েছেন
শি জিনপিং। নয়া প্রিমিয়ার বা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে
মনোনীত হয়েছেন তাঁরই ঘনিষ্ঠ লি কিয়াং। রবিবার
(১২ মার্চ) নয়া মন্ত্রিসভাকে অনুমোদন দেয় চীনা সংসদ। সোমবার শেষ হলো ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস। তার আগেই শি জিনপিং-এর
নেতৃত্বে দেশ পরিচালনার নয়া দল গঠন করলেন।
পরবর্তী ৫ বছরে বিশ্ব-রাজনীতির ক্ষেত্রে এই ব্যক্তিরা বড়
ভূমিকা নিতে পারেন। কাদের বেছে নিলেন শি জিনপিং? আসুন
এক নজরে চিনে নেওয়া যাক –
চিনের চার নতুন ভাইস প্রিমিয়ার বা উপপ্রধানমন্ত্রী
ডিং জুয়েক্সিয়াং (বয়স ৬০) – প্রধান ভাইস প্রিমিয়ার। কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটিরও সদস্য। সবথেকে বড় কথা শি জিনপিং-এর দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহকর্মী। সেই ২০০৬ সালে শি যখন সাংহাইয়ে ছিলেন, তখন থেকেই তিনি শি-র চিফ অব স্টাফ পদে ছিলেন ডিং।
হে লাইফেং (বয়স ৬৮) – এতদিন চিনা অর্থনীতির দেখভাল করতেন লিউ হি। তাঁর জায়গায় এইবার হে লাইফেং-কে নিয়ে এসেছেন শি জিনপিং। তিনি শির দীর্ঘদিনের বন্ধু। এর আগে চিনের জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের দায়িত্বে ছিলেন।
ঝাং গুওকিং (বয়স ৫৮) – অর্থনীতিতে পিএইচডি ঝাং এক সময় চিনের ডিফেন্স কর্পোরেশনে কাজ করতেন। সেখানে ২০ বছর কাটানোর পর রাজনীতিতে আসেন। এর আগে লিয়াওনিং প্রদেশের চংকিং এবং তিয়ানজিনে শহর কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ পদে ছিলেন।
লিউ গুওঝং (বয়স ৬০) এর আগে শানসি প্রদেশের কমিউনিস্ট পার্টির প্রধান ছিলেন। প্রসঙ্গত এই প্রদেশেই শি জিনপিং-এর পৈত্রিক বাড়ি আছে।
চিনের পাঁচ নতুন স্টেট কাউন্সিলর ( পদমর্যাদায় ভাইস প্রিমিয়ারদের নীচে, কিন্তু ক্যাবিনেট মন্ত্রীদের উপরে)
লি শাংফুও (বয়স ৬৫) – লি শাংফুও-কে প্রতিরক্ষামন্ত্রকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চিনের স্যাটেলাইট প্রোগ্রামে কাজ করতেন তিনি। রাশিয়ার প্রধান অস্ত্র রপ্তানিকারক সংস্থা রোসোবোরোন এক্সপোর্টের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম কেনার জন্য তাঁর আমেরিকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার জারি করেছে মার্কিন সরকার।
ওয়াং জিয়াওহং (বয়স ৬৫) – নিরাপত্তা মন্ত্রী বা পুলিশ প্রধানের পদে বহাল হয়েছেন ওয়াং জিয়াওহং। ইনিও শি জিনপিং-এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এই বন্ধুত্বের সূচনা হয়েছিল গত শতাব্দীর নয়ের দশকের গোড়ার দিকে। ফুঝো শহরে দলীয় প্রধান পদে ছিলেন শি, আর ওয়াং ছিলেন শহরের পুলিশ প্রধান।
উ ঝেংলং (বয়স ৫৮) – স্টেট কাউন্সিলের সেক্রেটারি-জেনারেলের পদ দেওয়া হয়েছে উ ঝেংলং-কে। এর আগে তিনি জিয়াংসু প্রদেশে দলের প্রধান পদে ছিলেন।
শেন ইকিন (বয়স ৬৩) – এর আগে গুইঝো প্রদেশের দলের প্রধান ছিলেন শেন। তিনিই হলেন একমাত্র মহিলা স্টেট কাউন্সিলর। বস্তুত, দল এবং প্রশাসন দুই দিক থেকেই তিনিই হলেন চিনের সর্বোচ্চ পদমর্যাদা সম্পন্ন মহিলা। গত অক্টোবরে চিনা কমিউনিস্ট পার্টির ২৪ সদস্যের পলিটব্যুরো গঠিত হয়েছিল। প্রথমবারের মতো একজনও মহিলা সেখানে স্থান পাননি। এমনকি এবার কোনও মহিলাকে ভাইস প্রিমিয়ারও করা হয়নি।
কিন গ্যাংও (বয়স ৫৭) – চিনের নয়া বিদেশমন্ত্রী হলেন কিন গ্যাংও। এক সময় তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করেছেন। ২০১৪ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চিনের প্রধান প্রোটোকল অফিসার ছিলেন কিন। সেই সময়ই শি-এর ঘনিষ্ঠ বৃত্তে এসেছিলেন।
ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্তরে কোনও পদবদল ঘটানো হয়নি। অপ্রত্যাশিতভাবে পিপলস ব্যাঙ্ক অব চায়নার গভর্নর পদে বহাল রয়েছেন ৬৫ বছরের ই গ্যাং এবং অর্থমন্ত্রী পদে ৬৬ বছরের লিউ কুন। কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার পর ই গ্যাং-কে অবসর পাঠানো হবে বলে মনে করা হয়েছিল। আর লিও কুন চিনের স্বাভাবিক অবসরের বয়স, ৬৫ পেরিয়ে গিয়েছেন।
এছাড়া, জাতীয় উন্নয়ন ও সংস্কার কমিশনের প্রধান হিসাবে থেকে গিয়েছেন জেং শানজি, বাণিজ্যমন্ত্রী হিসেবে বহাল রয়েছেন শি- ঘনিষ্ঠ ওয়াং ওয়েনতাও, শিল্প ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী পদে রয়ে গিয়েছেন জিন ঝুয়াংলং, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী পদে ওয়াং ঝিগাং, শিক্ষামন্ত্রী পদে হুয়াই জিনপেং, ন্যাশনাল এথনিক অ্যাফেয়ার্স কমিশনের প্রধান পদে প্যান ইউ, জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী পদে শি-র বন্ধু চেন ইক্সিন, অসামরিক বিষয়ক মন্ত্রী তাং ডেংজি, বিচারমন্ত্রী হি রং, মানবসম্পদ ও সামাজিক নিরাপত্তা মন্ত্রী ওয়াং জিয়াওপিং, প্রাকৃতিক সম্পদ মন্ত্রী ওয়াং গুয়াংহুয়া, ইকোলজি ও পরিবেশ মন্ত্রী পদে হুয়াং রুনকিউ, আবাসন ও নগর-পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রী পদে নি হং, পরিবহন মন্ত্রী লি জিয়াওপেং, জলসম্পদ মন্ত্রী লি গুইয়িং, কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রী তাং রেনজিয়ান, সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রী হু হেপিং, জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের প্রধান পদে মা জিয়াওই, প্রবীণ বিষয়ক মন্ত্রী পদে পেই জিনজিয়া, জরুরী পরিস্থিতি মোকাবিলা মন্ত্রী পদে ওয়াং জিয়াংজি এবং ন্যাশনাল অডিট অফিসের অডিটর-জেনারেল পদে হাউ কাই।
মন্তব্য করুন
রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা বা এটার প্রভাব কেমন হতে পারে! এটাই এখন বিশ্বরাজনীতির আলোচিত বিষয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রভাবশালী এই দুই নেতার মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর রাইসির মৃত্যু থেকে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইব্রাহিম রাইসি ও হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান সংঘাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলবে।
গত কয়েক দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছিল তেহরান। বিশেষ করে লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেন, বাহরাইন ও ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অর্থ ও সমরাস্ত্রের অন্যতম যোগানদাতা ছিল ইরানের ইসলামী বিপ্লবী রক্ষীবাহিনী।
আর এসব গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকা ও ইসরায়েলের স্বার্থের জন্য ক্রামাগত হুমকি তৈরি করে আসছিল।
গত মাসে ইব্রাহিম রাইসির সরকার সরাসরি ইসরায়েলের অভ্যন্তরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলও ইরানের ইস্ফাহান শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এই ঘটনার আগে কেউ কখনো কল্পনাই করতে পারেনি মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশ ইসরায়েলের হামলার সাহস করতে পারে, সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে দেখিয়েছিলেন ইব্রাহিম রাইসি।
শুধু এ হামলা নয়, কয়েক দশক ধরে ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে বেশ অসন্তুষ্ট ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলো। এমনকি এ তালিকায় রয়েছে সুন্নি প্রধান দেশ সৌদি আরবও। আর পশ্চিমা শক্তির কোনো তোয়াক্কা না করে পরমাণু কর্মসূচিতে জোরদার ভূমিকা পালন করেছেন ইব্রাহিম রাইসি। এমনকি বেশ কয়েকবার ইসরায়েলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলেন সদ্য নিহত ইরানি প্রেসিডেন্ট। এ কারণে বিশ্লেষকরা বলছে, রাইসির মৃত্যু প্রভাব ফেলতে পারে দেশটির পরমাণু কর্মসূচিতেও।
এছাড়া, রাইসির মৃত্যু শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয় বরং মধ্য এশিয়া ও ইউরোপীয় ভূরাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে রুশ বাহিনীকে যে বিপুল পরিমাণ ড্রোন ও সমরাস্ত্র সরবরাহ করেছিল তেহরান এখন সেই পদক্ষেপ কতটা ধারাবাহিক থাকবে সে প্রশ্ন উঠেতে শুরু করেছে অনেক মহলে। এছাড়াও রাইসির নেতৃত্বে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তেহরান।
ইব্রাহিম রাইসি মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতি সৌদি আরব
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি
মন্তব্য করুন
ইরান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলি বাঘেরি কানি
মন্তব্য করুন
ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ানকে নিয়ে বিধ্বস্ত হওয়া হেলিকপ্টারটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম বলছে, হেলিকপ্টারটি ছিল বেল ২১২ মডেলের।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, হেলিকপ্টারটির বয়স কত ছিল তা স্পষ্ট নয়। তবে ১৯৬০-এর দশকে এই মডেলটি কানাডিয়ান সামরিক বাহিনীর জন্য তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লবের পর তেহরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার দশক শুরু হয়েছিল। ওই সময়ের পর ইরানের কাছে কোনও সামরিক অস্ত্র বিক্রি করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
হেলিকপ্টারটি তৈরি করেছিল যুক্তরাষ্ট্রের হেলিকপ্টার প্রস্তুতকারক কোম্পানি বেল। মার্কিন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, থাইল্যান্ডের জাতীয় পুলিশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারি- বেসরকারি অনেক সংস্থা ব্যাপকভাবে এই হেলিকপ্টার ব্যবহার করে।
ফ্লাইট গ্লোবালের ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড এয়ার ফোর্সেস ডিরেক্টরি অনুযায়ী, ইরানের নৌ ও বিমানবাহিনীর বহরে বেল ২১২ মডেলের মোট ১০টি হেলিকপ্টার রয়েছে। তবে ইরানের সরকার এসব হেলিকপ্টারের মধ্যে কতটি পরিচালনা করে আসছে তা পরিষ্কার নয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এই হেলিকপ্টার যেকোনও ধরনের উদ্দেশে ব্যবহার করা যায়। মানুষ ও মালামাল পরিবহনের পাশাপাশি যুদ্ধের সময় অস্ত্র সরঞ্জাম বহন এবং ব্যবহারও করা যায়।
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আইআরএনএ বলেছে, প্রেসিডেন্টকে বহনকারী এই হেলিকপ্টার ছয়জন যাত্রী ও দুজন ক্রুকে পরিবহন করতে পারে।
বিমান দুর্ঘটনার তথ্য সংগ্রহকারী অলাভজনক সংস্থা ফ্লাইট সেইফটি ফাউন্ডেশন বলছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। ওই সময় সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলীয় এলাকায় বেসরকারিভাবে পরিচালিত বেল ২১২ মডেলের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়।
ইরান প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আবদুল্লাহিয়ান হেলিকপ্টার যুক্তরাষ্ট্র
মন্তব্য করুন
রহস্যজনকভাবে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানের মৃত্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কোন পরিবর্তন আসবে কিনা বা এটার প্রভাব কেমন হতে পারে! এটাই এখন বিশ্বরাজনীতির আলোচিত বিষয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, প্রভাবশালী এই দুই নেতার মৃত্যুতে অনেকটাই পাল্টে যেতে পারে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ। আর রাইসির মৃত্যু থেকে এখন ইসরায়েলই সবচেয়ে লাভবান হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।