১৮৮২
সালে প্রথম ডা. রবার্ট কোচ যক্ষ্মার জীবাণু আবিষ্কার করেন। যার ফলে উন্মোচিত হয় যক্ষ্মার রোগনির্ণয়
ও নিরাময়ের পথ। ১৯৯৩ সালে পৃথিবীতে যক্ষ্মা রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে গেলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যক্ষ্মাকে গ্লোবাল ইমার্জেন্সি ঘোষণা করেন। সেই বছর থেকে মানুষের মধ্যে যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতামূলক প্রচার বাড়াতে ২৪ মার্চ পালিত
হচ্ছে এই দিবসটি।
এখনো
যক্ষ্মা বিশ্বের অন্যতম ১০টি মৃত্যুজনিতের মধ্যে একটি। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি অন্যতম জনস্বাস্থ্য সমস্যা। অনেকের কাছে যক্ষ্মা টিবি হিসেবেও পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের যে ৩০টি দেশে
যক্ষ্মা রোগীর সংখ্যা সর্বাধিক, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম।
যক্ষ্মা
একটি ব্যাক্টেরিয়া বাহিত রোগ। মাইক্রোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাক্টেরিয়া শ্বাসযন্ত্রকে সংক্রমিত করে। যার ফলে এই যক্ষা রোগ
হয়। করোনাভাইরাসের মতো এই ব্যাক্টেরিয়াও বাতাসে
ভেসে বেড়ানো ড্রপলেটের মধ্যে দিয়ে শরীরে সংক্রমিত হয়ে থাকে। একজনের হাঁচি-কাশি থেকে দ্রুত এটি অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তবে
যক্ষ্মা রোগ নিয়ে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে
১.
যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসে দেখা দেয়
যক্ষ্মা
রোগ ফুসফুস থেকে শুরু হলেও শরীরের অন্যান্য অংশেও (যেমন কিডনি, মস্তিষ্ক, লসিকা গ্রন্থি) প্রভাব ফেলতে পারে। ফুসফুসের রাইরে যে যক্ষ্মা হয়
তাকে ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা বলা হয়।
২.
যক্ষ্মা একটি জন্মগত রোগ
আসলে
যক্ষ্মা কোনো জন্মগত বা জেনেটিক রোগ
নয়। যক্ষ্মা জীবনের যেকোনো সময় যে কাউকে সংক্রমিত
করতে পারে। এটি মাইকোব্যাকটেরিয়াম যক্ষ্মা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণে হয় এবং এটি
একটি সংক্রমক রোগ।
৩.
ধূমপান না করলে যক্ষ্মা
হয় না
একজন
অধূমপায়ী ব্যক্তিও যক্ষ্মায় আক্রান্ত হতে পারেন। কাজেই ধূমপান করা বা না করার
সঙ্গে যক্ষ্মার সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত ফুসফুসের যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে এলে অথবা অন্যান্য কারণ যেমন ডায়াবেটিস, এইডস, দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগের জন্য রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে গেলে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
৪.
যক্ষ্মা হলে রক্ষা নাই
আজও
অনেকের মনেই এই ভীতি রয়েছে
যে একবার যক্ষ্মা হলে নিরাময়ের কোনো উপায় নেই, অর্থাৎ এই রোগের কোনো
চিকিৎসা নেই। সত্য হলো যক্ষ্মা নিরাময়ের জন্য প্রাথমিক রোগনির্ণয় খুবই জরুরি। যদি একজন রোগী সঠিক সময়ে চিকিৎসকের কাছে যান, নিয়মিত ওষুধ সেবন করেন, তাহলে যক্ষ্মা থেকে সম্পূর্ণ নিরাময় লাভ সম্ভব। চিকিৎসা সম্পন্ন করে স্বাভাবিক জীবনেও ফিরে যাওয়া যায়।
৫.
টিকা নিলে কখনো যক্ষ্মা হবে না
জন্মের পরই এখন শিশুদের বিসিজি টিকা (যক্ষ্মার টিকা) দিয়ে দেওয়া হয়। টিকা দেওয়া থাকলে যক্ষ্মা মারাত্মক আকার ধারণ করার আশঙ্কা কমে যায়। তবে এটি কিন্তু যক্ষ্মাকে সম্পূর্ণ প্রতিরোধ করতে সক্ষম নয়। তাই যক্ষ্মা প্রতিরোধে সচেতনতা আবশ্যক।
মন্তব্য করুন
চিকিৎসকদের রেফারেল ফি’র চিন্তা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক প্রখ্যাত চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক।
অনৈতিক
উপার্জনের জন্য মরণের পর
জবাবদিহি করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, চিকিৎসকদের তিনটি গুণ অর্জন করতে
হবে, তাহলো: আদর্শ, সততা ও রোগীর প্রতি দায়িত্ববোধ। আমাদের মরতে হবে। এসব
কথা মাথায় রাখতে হবে। মন থেকে
রেফারেল ফি’র চিন্তা
ঝেড়ে ফেলে দিতে হবে।
আজ সোমবার
(১৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি)
চক্ষুবিদ্যায় ২০ থেকে ২৩ সাল পর্যন্ত পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করা নবীন বিশেষজ্ঞদের
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এসব কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক
ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক বলেন, ডাক্তারদের
মাস শেষে ১০ হাজার
টাকা দিয়ে ওষুধ কোম্পানিগুলো
নিজেদের ওষুধ লেখায়, এটা
অপরাধ।
তিনি
বলেন, ‘আমার ৪০ বছরে
অভিজ্ঞতায় বলতে পারি, আমি
কোনো চশমার দোকান, কোনো ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে পয়সা নেইনি।
এটা আমি চ্যালেঞ্জ করে
বলতে পারি।’
নিজকে
গঠন করতে পারলে রেফারেল
ফি’র প্রয়োজন পড়বে
না উল্লেখ করে তিনি বলেন,
দক্ষতা অর্জন করতে পারলে রোগীরাই
খুঁজে বের করবে। এজন্য
অনেক বেশি পরিশ্রম করতে
হবে।
বাংলাদেশে
রেফারেল পদ্ধতি কমিশন নির্ভর হয়ে গেছে মন্তব্য
করে তিনি বলেন, হাসপাতালের
সামনে ফার্মেসি, সেখানে হাসপাতালের বিভিন্ন স্টাফ জড়িত। ডাক্তার, আয়া ও নার্সসহ
অনেকেই জড়িত। ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক ও ডাক্তাররাও রেফারেল
ফি’র সাথে জড়িত।
কিন্তু সারা জীবনেও আমি
এগুলো করিনি। এটা কেন দরকার
হবে? রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকের সম্পর্কটা বিশ্বাসের হলে এগুলো দরকার
পড়বে না।
চক্ষুবিজ্ঞান
ইনস্টিটিউটে রেফারেল ফি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি
পেয়েছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন,
এখানে লেন্সের ব্যবসা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছিল।
বিদেশি লেন্সের কথা বলে সন্ধ্যায়
এসব পয়সা ভাগ করা
হতো।
অপ্রয়োজনীয়
পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয় উল্লেখ করে
তিনি বলেন, রোগীর একটু মাথা ব্যথা
হলেই সিটি স্কান, এমআরই
দেওয়া হয়। অপ্রয়োজনীয় অনেক সার্জারি হয়।
আর এতে রোগীর মৃত্যুর
ঝুঁকি থাকে। এমনকি মৃত্যুও হয়।
ইনস্টিটিউটের
পরিচালক থাকাকালীন রোগীদের স্বাস্থ্যসেবার স্বার্থে এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের
বিরুদ্ধে জোরালো পদক্ষেপ নেন বলেও জানান
অধ্যাপক দীন মোহাম্মদ নুরুল
হক।
মন্তব্য করুন
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর দেশে ডেঙ্গুতে ৮০৪ জনের মৃত্যু হলো। আর চলতি সেপ্টেম্বর মাসে এখন পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এ রোগে মৃত্যু হলো ২১১ জনের।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল শুক্রবার সকাল আটটা থেকে আজ শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ঢাকায় পাঁচজন ও ঢাকার বাইরে নয়জন মারা গেছেন। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৫৯৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৮১ জন এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ৭১৭ নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৬২ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৭২ হাজার ৩৮৪ ও ঢাকার বাইরে ৯২ হাজার ১৭৮ জন রয়েছেন।
এর আগে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর—২৮১ জন। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।
মন্তব্য করুন
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ‘টেস্ট টিউব শিশুর’ জন্ম হয়েছে। শিশুটি সুস্থ আছে। সরকারি কোনো হাসপাতালে এটাই প্রথম টেস্ট টিউব শিশু জন্মের ঘটনা।
ঢাকা মেডিকেলের পরিচালকের কার্যালয় ও চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গেছে, সপ্তাহ দেড়েক আগে শিশুটির জন্ম হয়েছে। শিশুটি সুস্থ আছে। তবে একটি উপযুক্ত দিনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উপস্থিতিতে শিশুটির কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে চায় ঢাকা মেডিকেল কর্তৃপক্ষ।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্ধ্যা নারীর মা হওয়ার আধুনিকতম পন্থা হচ্ছে ‘টেস্ট টিউব শিশু’ নেওয়া। এই পন্থায় স্ত্রীর ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু সংগ্রহ করা হয় আর স্বামীর শরীর থেকে শুক্রাণু সংগ্রহ করা হয়। গবেষণাগারে সেই ডিম্বাণু ও শুক্রাণু নিষিক্ত করে কৃত্রিমভাবে ভ্রূণ সৃষ্টি করা হয়। পরে সেই ভ্রূণ স্ত্রীর গর্ভাশয়ে প্রতিস্থাপন করা হয়। স্বাভাবিক ভ্রূণ যেভাবে গর্ভাশয়ে বেড়ে ওঠে, কৃত্রিম ভ্রূণও একইভাবে বেড়ে উঠতে থাকে। এভাবে ৯ মাস পর যে শিশুর জন্ম হয়, তাকে টেস্ট টিউব শিশু বলা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, টেস্ট টিউব শিশুর ব্যাপারে মা-বাবা এবং চিকিৎসক কেউই সামান্যতম কোনো ঝুঁকি নিতে চান না, তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিশুর জন্ম হয় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে প্রথম টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম হয় ২০০১ সালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। এরপর একাধিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের শিশুর জন্ম হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই প্রথম এ ধরনের কোনো শিশুর জন্ম হলো।
সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান না হওয়ার কারণে অনেক স্বামী-স্ত্রী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে অনেকভাবে সন্তান জন্মদানের চেষ্টা করেন। বহু দম্পতি প্রতিবেশী দেশ ভারতে যান বন্ধ্যত্বের চিকিৎসার জন্য। দেশে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বা ভারতে টেস্ট টিউব শিশুর জন্য ব্যয় অনেক বেশি। কোনো নিম্নবিত্তের পক্ষে সেই ব্যয় বহন করা সম্ভব নয়। ঢাকা মেডিকেলের মতো সরকারি প্রতিষ্ঠানে এই সুযোগ তৈরি হওয়ায় অনেক নিম্নবিত্ত দম্পতিও নতুন করে সন্তান জন্ম দেওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করবেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রথম টেস্ট টিউব শিশু জন্ম
মন্তব্য করুন
চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সরকারি পরিসংখ্যান গত ২৪ বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী সেপ্টেম্বরজুড়ে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হতে থাকলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই মশা বিরোধী অভিযান জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি এবং আগামী বছর ডেঙ্গু সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে হলে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ দ্য গণমাধ্যমকে বলেন, সেপ্টেম্বরজুড়ে গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে শুষ্ক মৌসুম শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আগামী ৩ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রাজশাহী, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে গতকাল শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ১৫ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গুতে ৭০৬ জন মারা গেলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ৮৭৬ জন। এ নিয়ে চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৮৭ জন।
জুলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাবেক সভাপতি ও কীটতত্ত্ববিদ মঞ্জুর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘থেমে থেমে বৃষ্টিপাত ও উচ্চ আর্দ্রতা এডিস মশার বংশবৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি তৈরি করে। থেমে থেমে বৃষ্টিপাতের ফলে ফেলে দেওয়া পাত্রে পানি জমতে পারে যেখানে এডিস মশা ডিম পাড়ে। এছাড়া, উচ্চ আর্দ্রতার সঙ্গে এডিস মশার কামড়ানোর শক্তিশালী যোগসূত্র রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ফলে চলতি মাসে ডেঙ্গু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি।’
বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমান বলেন, ‘২০০০ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে ঢাকা শহরে ডেঙ্গুর হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হতে পারে। তবে, রাজধানীর বাইরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আমরা যদি এডিস মশার বংশবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ না করি, তাহলে এই মৌসুমে এডিস মশার বিপুল সংখ্যক ডিম পাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এই ডিমগুলো পরের মৌসুমে ডিম ফুটে আরেকটি প্রাদুর্ভাব ঘটাতে পারে।’
তিনি জানান, যে সময়টাতে ডেঙ্গু কম ছড়ায় অর্থাৎ নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাসে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ডেঙ্গুর সক্রিয় ক্লাস্টারগুলো শনাক্ত করতে হবে।
এই সময়কালে এডিস মশার প্রজনন শৃঙ্খল ভেঙে না যাওয়া পর্যন্ত সোর্স রিডাকশন অর্থাৎ মশা ডিম পাড়তে পারে এমন জায়গা ধ্বংস করা, লার্ভিসাইডিং বা জলাশয়ে বা জলের পাত্রে নিয়মিত রাসায়নিক বা মাইক্রোবায়াল কীটনাশক প্রয়োগ করা এবং প্রাপ্তবয়স্ক মশা মারতে অ্যাডাল্টিসাইড অর্থাৎ কীটনাশক প্রয়োগ করাসহ ব্যাপকভাবে অভিযান চালাতে হবে।
সেপ্টেম্বর বৃষ্টি ডেঙ্গু প্রকোপ
মন্তব্য করুন
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গুতে ৯৮ জনের মৃত্যু হলো। আর এ বছর মারা গেলেন ৬৯১ জন। বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল বুধবার সকাল আটটা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটা পর্যন্ত) ডেঙ্গুতে ঢাকায় ১১ জন ও ঢাকার বাইরে ৯ জন মারা গেছেন। এ সময় ডেঙ্গু নিয়ে ২ হাজার ৬৮৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৮৯৯ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় ১ হাজার ৭৯০ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে মোট ভর্তি হয়েছেন ১ লাখ ৪০ হাজার ৭১১ জন। তাঁদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৪ হাজার ১৭২ এবং ঢাকার বাইরে ৭৬ হাজার ৫৩৯ জন রয়েছেন।
দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড হয়েছিল গত বছর—২৮১ জন। চলতি বছর অনেক আগেই সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুতে ২০১৯ সালে মৃত্যু হয়েছিল ১৭৯ জনের। ২০২০ সালে ৭ জন এবং ২০২১ সালে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয় ১০৫ জনের।
মন্তব্য করুন