৪
এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে উঠেই পেলাম দুঃসংবাদ। বঙ্গবাজারে আগুন। প্রথমে এর ভয়াবহতা বুঝতে
পারিনি। কিন্তু টেলিভিশনে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে ভয়ে আঁতকে উঠলাম। দুপুর পর্যন্ত আগুনের দাপটে পুড়ে ছাই হয়ে গেল অন্যতম বড় এ পাইকারি
মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার দোকান।
সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসলেন হাজারখানেক ব্যবসায়ী। যথারীতি বঙ্গবাজারের আগুনের পরও গবেষণা শুরু হয়েছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে জোর
আলাপ, বিতর্ক থেমে নেই। আর
সব বিপর্যয়ের পর যেভাবে একাধিক
তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এ ক্ষেত্রেও
তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আগে থেকেই বলে দেওয়া যায় এ তদন্ত কমিটি
কী রিপোর্ট দেবে। শুরু হবে দোষারোপের ব্লেম গেম। জনগণ এসব দেখে বিরক্ত হবে। নিজেদের অসহায় ভাববে। এমনিতেই ঢাকা শহরকে বেশির ভাগ নগরবাসী ‘মৃত্যুকূপ’
ভাবেন। সেই ভাবনার মিছিলে আরও কিছু মানুষ যুক্ত হবেন। এ শহরে যে
কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে,
যে কেউ দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। বিপর্যস্ত হতে পারে। অনিরাপদ, মৃত্যুপুরী এ শহরে যেন
কোনো অভিভাবক নেই। ২০২৩ সালকে এখন পর্যন্ত বলা যায় নাগরিক বিপর্যয় এবং দুর্ঘটনার বছর। একের পর এক বিস্ফোরণ
হচ্ছে, আগুন লাগছে। নাগরিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। নিরাপত্তাহীন আতঙ্কিত মানুষ সরকারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে, ক্ষুব্ধ হচ্ছে। একের পর এক এ
ধরনের বিস্ফোরণ এবং আগুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কী করছে। জনজীবনের
নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ- এরকম কথা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন গলা ফাটিয়ে বলছে। আর সরকারের ভিতর
বসে থাকা কিছু নাদুসনুদুস কর্তা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলছে- স্রেফ দুর্ঘটনা, নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাহলে বাংলাদেশ এখন দুর্ঘটনার দেশ। এ দেশে প্রতি
সপ্তাহে কোনো না কোনো দালানকোঠা,
বড় মার্কেটে আগুন লাগে। এটাই কি প্রমাণ করতে
চাইছে কেউ কেউ? সরকারের ওপর জনআস্থা নষ্ট এবং ক্ষোভ সৃষ্টির জন্যই কি এসব আগুন
এবং বিস্ফোরণের ঘটনা? সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সিদ্দিকবাজারের পর বঙ্গবাজারের আগুনের
ঘটনাকে যদি কেউ নিছক দুর্ঘটনা বলেন তাহলে তিনিও এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে
জড়িত বলে আমি সন্দেহ করব। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে যে বহুমুখী ষড়যন্ত্র
চলছে এ নাশকতা তারই
একটি ধারা। এক্ষুনি যদি সরকার এর উৎসমূল খুঁজে
বের করতে না পারে তাহলে
সামনে এরকম কিংবা এর চেয়ে বীভৎস
ঘটনা ঘটবে। সরকারকে দুর্বল এবং বিব্রত করার এটি খুব ভালো অস্ত্র। এর ফলে জনগণের
মধ্যে সরকার সম্পর্কে সহজেই নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা যায়। সরকারের গায়ে ব্যর্থতার তকমা লাগানোর এটি অন্যতম সহজ পথ। এ জন্যই ২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল।
পেট্রলবোমা, বাসে আগুন এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করেছিল। যেন জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারায়। সমস্যা হলো রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা করলে তার দায় সরাসরি আন্দোলনকারীদের ওপর বর্তায়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানোর দায় বর্তেছিল বিএনপির ওপর। ফলে দলটির ওপর মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি। তাদের আন্দোলন জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ওই সময়ে সন্ত্রাসী
রাজনৈতিক কর্মসূচির চিরবিদায় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নয়, সব রাজনৈতিক দলই
এখন সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়িয়ে চলে। রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল থেকে সহিংসতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ বিদায় নিয়েছে বটে; কিন্তু তা কি এখন
দুর্ঘটনা এবং নাশকতার আদলে ফিরে এসেছে? এ প্রশ্ন এখন
উঠতেই পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিরোধী দল জ্বালাও-পোড়াও
করলে তাদের বদনাম হয়। আর দেশে হঠাৎ
বিস্ফোরণ হলে, আগুন লাগলে সরকারের যোগ্যতা এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই খুঁজে দেখতে হবে এসব ঘটিয়ে সরকারকে দুর্বল করার কোনো আয়োজন চলছে কি না। কারণ
নির্বাচনের আগে সরকার যত দুর্বল হবে
তত নির্বাচন করার কাজটি কঠিন হয়ে যাবে। অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পথ উন্মুক্ত হবে।
আগুন
যে শুধু বঙ্গবাজারে তা নয়, দ্রব্যমূল্যের
বাজারেও আগুন। রোজার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষের হা-হুতাশ অনেক
ক্ষেত্রেই গর্জনের মতো শোনা যাচ্ছে। বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এর মধ্যে কিছু
কিছু মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলার উপক্রম করেছে। এক মন্ত্রী বলেছেন,
‘এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে।’
তার কথা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেছি। ২০১৯ সালে যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই জনবিচ্ছিন্ন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। এটা আরেকবার প্রমাণ হলো ওই মন্ত্রীর কথায়।
মন্ত্রী যেদিন দ্রব্যমূল্যের সহনীয় মাত্রা নিয়ে তার অভূতপূর্ব আবিষ্কারের ঘোষণা দিলেন, ঠিক সেদিনই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাল মার্চে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০-এর কাছাকাছি
(৯ দশমিক ৩৩)। আর
এ মুদ্রাস্ফীতি নিয়েও আরেক মন্ত্রী তামাশা করলেন। তিনি মুদ্রাস্ফীতির হার ১০ শতাংশে উন্নীত
না হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। সৃষ্টিকর্তাই যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সরকারের কাজ কী? এতসব মন্ত্রী-আমলারই বা দরকার কী?
বাজারে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য বঙ্গবাজারের আগুনের মতোই ভয়াবহ। পার্থক্য হলো- বঙ্গবাজারের আগুন দৃশ্যমান কিন্তু বাজারের আগুন খালি চোখে দেখা যায় না। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনরা এ আগুন দেখেও
না দেখার ভান করতে পারেন। বঙ্গবাজারের আগুন ফায়ার ব্রিগেড পানি দিয়ে নিভিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের আগুন নেভাবেন কী দিয়ে? বঙ্গবাজারের
আগুন একটা নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের আগুন নিয়ন্ত্রণহীন। এ আগুন নিম্নবিত্ত
থেকে মধ্যবিত্ত হয়ে এখন উচ্চবিত্তের গায়েও আঁচ লাগাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যে শুধু বৈশ্বিক
পরিস্থিতির কারণে বেসামাল হয়েছে এমনটি ঠিক নয়, এর মধ্যে কারসাজি
আছে, কিছু ব্যবসায়ীর অনৈতিক মুনাফার লোভ আছে, আছে সিন্ডিকেটের দুরভিসন্ধি। সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্ষিপ্তভাবে বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে বটে। কিন্তু এসব অভিযান এতই সমন্বয়হীন এবং দায়সারা যে, এর ফলে বাজারে
কোনো ইতিবাচক ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
না। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হলো- সরকারের মধ্যে কারও কারও সত্য এবং বাস্তবতাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা। জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে- এ সত্যকে স্বীকার
করে করণীয় নির্ধারণ করাটা জরুরি ছিল। সেটি করা হয়নি। ছোট ছোট অনেক ইতিবাচক কাজ সমন্বিতভাবে করা যেত। যেমন এবার রোজার শুরু থেকেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
সুলভ মূল্যে মাংস, মুরগি, ডিম, দুধ বিক্রি করেছে। ঢাকা শহরে এ উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে
প্রশংসিত হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় একটু উদ্যোগ নিলেই শাক-সবজি, ফলমূল সুলভ মূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নিতে পারত। করোনাকালে ‘কৃষকের বাজার’
নামে একটি উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছিল। যেখানে কৃষকরা সরাসরি তাদের কৃষিপণ্য এনে বিক্রি করত। এসব পণ্যের দাম কম এবং মানেও
ভালো। জনগণের মধ্যে ‘কৃষকের বাজার’
ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু এবার কৃষি মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো
উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেয়নি। কেন নেয়নি তার ব্যাখ্যা নেই।
সমন্বিত
বহুমাত্রিক উদ্যোগ বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। দ্রব্যমূল্যের আগুনের দায় সরাসরি সরকারের ঘাড়ে বর্তাচ্ছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বে কোথায় কী হচ্ছে তা
নিয়ে আগ্রহী নয়। বিশ্বের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাতেও উৎসাহী নয়। সাধারণ মানুষ চায় তার আয়ের মধ্যেই খেয়ে-পরে বাঁচতে। এটির দায়িত্ব সরকারের। সরকারের মধ্যে কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন অযোগ্য মন্ত্রী, চাটুকার আমলা এবং সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিকে অসহনীয় করে তুলেছেন। এদের কেউ কেউ কেবল প্রকৃত তথ্যই আড়াল করছেন না, সরকারপ্রধানকে ভুল তথ্যও দিচ্ছেন। এর ফলে সরকারের
সঙ্গে জনগণের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে দ্রব্যমূল্যকে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ইস্যুকে ‘জাতীয়’
থেকে ‘আন্তর্জাতিক’
করা হয়েছে। এখানেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যথেষ্ট যোগ্যতা এবং পরিপক্বতার পরিচয় দিতে পারেনি। সুশীল সমাজের একটি অংশ দ্রব্যমূল্যকে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। ১৯৭৪-এ যেমন বঙ্গবন্ধু
সরকারের বিরুদ্ধে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ এবং দ্রব্যমূল্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই নীলনকশার বাস্তবায়ন করতে গিয়েই বাসন্তী নাটক সাজানো হয়েছিল। এবারও কিছু পত্রিকা একই নাটক মঞ্চস্থ করতে চাইছে। আর সুশীল নিয়ন্ত্রিত
ওই সংবাদপত্রের ফাঁদে পা দেয় সরকার।
অবশ্য আমার মনে হয় ওই পত্রিকাটিকে
ব্যবহার করে, এটি আসলে সুশীলদের বিছানো ষড়যন্ত্রের জাল। সেই জালে সরকার জড়িয়ে যায়। ওই পত্রিকা নিয়ে
ঘটনায় সরকারের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। একটি সংবাদপত্র ভুল সংবাদ পরিবেশন এবং গর্হিত অপরাধ করেও এখন প্রায় ‘বীর’
এর মর্যাদা পাচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। সাপের লেজে পা দিলে তা
যেমন ছোবল দেবেই, তেমনি সুশীলদের লেজে পা দিয়ে সরকার
নিজেকে বিপদগ্রস্ত করল কি না তা
সময়ই বলে দেবে। তবে এখন এটুকু বলা যায়, সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুশীলবান্ধব কর্তা সরকারকে বিব্রতকর এবং কোণঠাসা করছে। ভুল প্রতিবেদন, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, শিশু নিপীড়নের জন্য পত্রিকাটির যেখানে দুঃখিত ও লজ্জিত হওয়া
উচিত সেখানে অসত্য, উসকানিমূলক তথ্য প্রকাশকেই তারা এখন ‘নির্ভীক সাংবাদিকতা’
হিসেবে ব্র্যান্ডিং করছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক
বিশ্বের নজর কেড়েছে তারা। বিশ্বে তারা সফলভাবে প্রচার করতে পেরেছে ক্ষুধা, অভাব, দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রতিবেদনের কারণে বাংলাদেশের গণমাধ্যম হেনস্তার শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে অভাব-অনটন, ক্ষুধা প্রকট, এ অনটনের কথা
গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে দেয় না সরকার। কেউ
যদি সাহস করেও এসব প্রচার করে তাহলে তার ওপর ‘খড়গ’
নেমে আসে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো স্পর্শকাতর বিতর্কিত কালো আইন দিয়ে গণমাধ্যমকে শায়েস্তা করে এবং এ অপপ্রচারের শেষ
ভাগে যথারীতি ‘নির্বাচন’
প্রসঙ্গ আসে। শেষে গিয়ে বলা হচ্ছে- সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মত দমন করছে।
গণমাধ্যমকে মত প্রকাশ করতে
দিচ্ছে না। কালো আইনের অপপ্রয়োগ করছে। কোনো কিছু না করেই ‘সরকার’
অপরাধী আর অপরাধ করেও
সুশীলদের মুখপত্র পত্রিকা জাতির বিবেক, দেশপ্রেমী। ২৬ মার্চের একটি
গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন, ইচ্ছাকৃত উসকানিমূলক সংবাদ প্রকাশের পর যে ঘটনাপ্রবাহ
তাতে স্পষ্ট সরকার পিছু হটেছে। ফাঁদে আটকে গেছে। হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। এ নিয়ে আমার
কিছু প্রশ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- পত্রিকাটি শিশু নিপীড়নের অপরাধ করেছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের মামলা না দিয়ে কেন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা হলো? সরকারের প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, পত্রিকাটি স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করেছে। আরেকটি বাসন্তী অধ্যায় সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এটি রাষ্ট্রদ্রোহ। তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে কেন
বিতর্কিত, সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলো? এ মামলায় একজন
সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার করতে মধ্যরাতে কেন তার বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেল? সকালে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ
হতো? আমার মনে হয় সুশীলদের পক্ষে
একটি গোষ্ঠী সরকারের ভিতর শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আছে। এরা সরকারের ভিতরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। একই ঘটনা দেখা যায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
ক্ষেত্রেও। তার অর্থ পাচার তদন্ত, শ্রমিক ঠকানোর মামলাগুলো এগোচ্ছে না। এটাও সাপের লেজে পা দেওয়ার মতো।
এ নিয়ে ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক
পরিমন্ডলে নালিশ-সালিশ করছেন। সরকার ঠিকঠাক মতো ড. ইউনূসের অপপ্রচার
মোকাবিলা করতে পারছে না। আগামী নির্বাচনের আগে এ ঘটনাগুলো প্রভাব
ফেলবে। তারই এক ঝলক দেখা
গেল সুশীল মুখপত্র সংবাদপত্রকে কেন্দ্র করে ঘটনায়। পরিকল্পিতভাবে ওই পত্রিকা এবং
তার সম্পাদককে ‘সাহসী যোদ্ধা’
বানানো হলো। অথচ তারা যে কান্ডটি করেছেন
তাতে তাদের মুখে চুনকালি লাগার কথা। শুধু এটিই প্রথম নয়, সুশীলদের মুখপত্র বাংলা এবং ইংরেজি সংবাদপত্র দুটিকে সরকারি কিছু মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে একাধিকবার ‘জাতীয় বীর’
বানানো হয়েছে। এ পত্রিকার একজন
সংবাদকর্মী সচিবালয়ে রীতিমতো চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন। সে সময় তার
মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়াটা ছিল যথার্থ। কিন্তু তা না করে
তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে ‘চোর’কে ‘হিরো’
বানানো হলো। চুরির অপরাধ করেও ওই সাংবাদিক আন্তর্জাতিকভাবে
সাহসী, নিপীড়িত সাংবাদিকের ‘তকমা’
পেলেন। মেডেল পেলেন। সুশীলদের নিয়ন্ত্রিত ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক এক টকশোতে গিয়ে
অপরাধ কবুল করলেন। স্বীকার করলেন, ডিজিএফআইর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তা যাচাই-বাছাই
না করেই তিনি প্রকাশ করেছেন। ওই অসত্য, ভিত্তিহীন
তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আত্মস্বীকৃত অপসাংবাদিক। যে কোনো সম্পাদক
এ ধরনের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর পেশা ছেড়ে
দেন কিংবা স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। সাংবাদিকতার নৈতিক অধিকার হারান। কিন্তু অতি উৎসাহী আওয়ামী আনাড়িরা ওই ঘটনার পর
এমন শিশুসুলভ বালখিল্যতা করল যে, ‘গোয়েন্দাদের দালাল সম্পাদক’
নর্দমা থেকে উঠে সরোবরে অবগাহন করলেন। এ ঘটনাগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে
বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। মনে হতে পারে সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিচার, বুদ্ধি ও দক্ষতার অভাব।
আদতে এটি পরিকল্পিত। নির্বাচন বানচালের নীলনকশার অংশ। সরকারের ভিতর সুশীলদের এজেন্ট এবং নব্য মোশতাকরা জেনেবুঝেই এসব করছে। এ এজেন্ট এবং
ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে পত্রিকা পড়েন
না বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। যে পত্রিকা মাইনাস
ফর্মুলার প্রবক্তা। আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের কোন
কোন মন্ত্রী-নেতা সেখানে কলাম লিখে ধন্য হন, কারা সেখানে বিজ্ঞাপন দেন, তাদের অনুষ্ঠানে সরকারের কারা উপস্থিত হন- সেই তালিকা তৈরি করলেই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। সুশীলদের মুখপত্র দুটিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পাদপ্রদীপে আনতে এ ধরনের ঘটনা
ঘটানো হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। এসব ঘটনার পর পত্রিকা দুটি
সরকারের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের লাইসেন্স পেল। ড. ইউনূসও বাংলাদেশ
ও সরকারবিরোধী প্রচারণায় আদাজল খেয়ে নামলেন। তারা বুঝলেন তাদের ধরার কেউ নেই। তাদের বিদেশি মুরব্বিরা এ ঘটনার পর
যেভাবে হইচই করেছেন তাতে সরকার ও জনগণ উভয়ই
বুঝল এদের খুঁটি কোথায়। নির্বাচনের আগে সরকারের বিরুদ্ধে দাগানোর জন্য কামান গোলাবারুদসহ প্রস্তুত করা হলো। আরও কত কামান গোপনে
প্রস্তুত কে জানে? এরা
এখন নির্বাচন বানচালের প্রচারণায় যুক্ত হবে। যার প্রমাণ ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার
যখন পুড়ছে ঠিক তখন এক-এগারোর কুশীলব
এবং বিএনপিপন্থি সুশীলদের এক ভার্চুয়াল মিলনমেলা
অনুষ্ঠিত হলো। সুজনের উদ্যোগে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের
ভবিষ্যৎ’
শীর্ষক এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল
বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থার পক্ষে সুশীলরা প্রকাশ্য অবস্থান ঘোষণা করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে ওই গোলটেবিলে প্রশ্ন
তোলা হয়। পুরো গোলটেবিলের আবহ ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত
যেন দেশে নির্বাচন না হয়। এ
গোলটেবিল বৈঠক একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে তা হলো- তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের দাবি তুলে নির্বাচন বানচালের মাস্টারপ্ল্যানটি আসলে সুশীল সমাজের। বিএনপি উপলক্ষ মাত্র। তারা পার্শ্বচরিত্র। মাঠের আসল খেলোয়াড় সুশীলরা। সুশীলদের মাঠে নামিয়েছে তাদের পশ্চিমা প্রভুরা। লক্ষণীয় ব্যাপার পশ্চিমা মহল, সুশীল এবং বিএনপি এখন একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। অভিন্ন লক্ষ্য তাদের। পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে না। তারা বলছে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। তারা
সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে
জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে
সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুশীলরা বলছেন, বর্তমান সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
করতে চায় না। এ সরকার মত
প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ করছে। ‘গুম’
নাটকের বিষয়টি তো আছেই। কাজেই
নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ আবহ তৈরি করতে হবে। এদের কেউ কেউ দুই বছর নির্বাচন পেছালেও কোনো ক্ষতি নেই- এ মর্মে ‘ফতোয়া’
পর্যন্ত দিচ্ছেন। আর বিএনপি, সুশীল
এবং পশ্চিমাদের শেখা বুলি আওড়াচ্ছে তোতা পাখির মতো। তারা বলছে, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না।’
ব্যস, এটি বলে তারা পাঁচতারকা হোটেলে ইফতার উৎসব করছে। খাচ্ছে-দাচ্ছে গায়ে বাতাস দিয়ে ঘুরছে। আমার বিবেচনায় ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় তারা স্রেফ একটি ‘গুটি’। অথবা বিএনপি
পুতুল নাচের পুতুল। তাদের যেভাবে নাচানো হচ্ছে সেভাবেই তারা নাচতে রাজি। কারণ বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা। নিজেদের ক্ষমতায় বসা নয়। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’
এর আওয়াজ তুলে আসলে আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত করতে চায় সুশীল এবং তাদের গডফাদাররা। আর এটি অর্জন
করতে হলে সরকারকে কোণঠাসা, অজনপ্রিয় এবং দুর্বল করতে হবে। জনগণের থেকে সরকারকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সে জন্যই বঙ্গবাজারে
আগুন, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। এ জন্যই সরকারের
ভিতরে আত্মঘাতী তৎপরতা। নির্বাচনের
সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই ষড়যন্ত্রের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে সরকার। ষড়যন্ত্রের আগুনের শিখা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে উদ্যত। নির্বাচন না হলেই বঙ্গবাজারের
মতো পুড়ে ছাই হবে ‘গণতন্ত্র’। এ আগুন
থেকে ‘গণতন্ত্র’
কি রক্ষা পাবে?
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটি যেন এখন এক রহস্যে ঘেরা বাড়ি। ভূতুড়ে
বাড়িও বলা যায়। যে বাড়ির কর্তারা থাকেন অন্ধকারে। লোকচক্ষুর আড়ালে। যেখানে চাকরবাকর,
সেরেস্তাদাররা থাকেন আতঙ্কে। কেউ জানে না আগামীকাল কী হবে। ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার
বাইরে থাকা দলটি যে এখনো টিকে আছে, তা এক বিস্ময়। তার চেয়েও বড় কৌতূহল বিএনপি কে চালায়?
একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দলটি এখন যেন পথ হারিয়েছে। পথের দেখা পেতে, বিএনপিকে বাঁচাতে
নানা জনের নানা মত। অনেকেই অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বড় যে পরামর্শটি এখন সামনে এসেছে, তা হলো বিএনপির
নেতৃত্ব পরিবর্তন। এমন এক নেতৃত্ব সামনে আনা যিনি দেশে থাকেন এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগ
করতে পারেন। কদিন আগে কূটনৈতিকপাড়ায় এক চায়ের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। যেখানে বিএনপির দুজন
ডাকসাইটে নেতাও উপস্থিত ছিলেন। আমন্ত্রণকারী কূটনীতিকের বিএনপি নিয়ে অন্তহীন কৌতূহল।
বিএনপির নেতাকে দেখেই তিনি প্রশ্ন করলেন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে তোমরা এ অবস্থান নিলে
কেন? বিএনপির ওই নেতা গৎবাঁধা বুলির মতো কিছু বাক্য আওড়ালেন।
কূটনীতিকের প্রশ্ন, যারা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছে তাদের ব্যাপারে তোমরা
কী করবে? এবার ওই বিদেশি মুচকি হেসে বললেন, আমি জানি এর উত্তর তোমার কাছে নেই। এ উত্তরের
জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে। তোমরা কেন সক্রিয় কাউকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দাও
না? বিএনপির নেতা ওই সন্ধ্যায় বিদেশি কূটনীতিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি। কিন্তু
ওই প্রশ্নের আংশিক উত্তর পেলাম গত বুধবার। বিএনপি নেতা মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের কাছ
থেকে। আলাল এসেছিলেন ডিবিসির ‘রাজকাহন’ অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক নাজনীন মুন্নী
জিজ্ঞেস করলেন, ‘তারেক রহমান বাইরে আছেন, মামলায় তার শাস্তি হয়েছে। বেগম জিয়ার শারীরিক
অবস্থাও খারাপ। এ দুজনকে বাদ রেখে কীভাবে দ্রুত দলীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়, অথবা অন্য
কোনো সমাধান আছে কি না?’ এবার অবশ্য আলাল নীরব থাকেননি। প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন,
‘খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারি কি না, সে বিকল্প
চিন্তা আমাদের মধ্যে আছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে বেগম জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষ থেকে
একটি কমিটি বা বডি বাছাই করা হবে, যারা তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত দেবে।’ আলালের বক্তব্য
বিশ্লেষণ করলে সোজাসাপ্টাভাবে বলা যায় বিএনপির নির্বাহী দায়িত্ব থেকে জিয়া পরিবারকে
মুক্ত করার বিষয়টি এখন আর শুধু গুজব নয়। বিএনপিতেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা হচ্ছে।
গত কয়েক বছর ধরেই, বিশেষ করে ২০১৮ সালে বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার
পর থেকেই বিএনপিতে জিয়া পরিবারের বাইরে নেতৃত্ব প্রসঙ্গটি সামনে আসে। একটি রাজনৈতিক
দলের প্রধান নেতাকে হতে হয় সার্বক্ষণিক। তাকে সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। তাৎক্ষণিকভাবে
সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত নির্দেশনা দিতে হয়। কিন্তু ২০১৮
সাল থেকেই এ ব্যাপারে বিএনপি একটি শূন্যতার মধ্যে আছে। বিএনপি মহাসচিব বা স্থায়ী কমিটির
সদস্যরা সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। সহজভাবে বলা যায়, তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার
নেই। বেগম জিয়া যখন মুক্ত ছিলেন, তখন বিএনপির সিদ্ধান্তের জন্য নেতারা দলের চেয়ারপারসনের
দ্বারস্থ হতেন। চেয়ারপারসন কয়েকজনের সঙ্গে কথাবার্তা বলে বাস্তবতা নিরিখে সিদ্ধান্ত
নিতেন। কিন্তু বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র
ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়।
যদিও একাধিক মামলায় দণ্ডিত তারেক রহমানকে দলীয় প্রধানের দায়িত্ব
দেওয়াটা ছিল গঠনতন্ত্র পরিপন্থি। বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গঠনতন্ত্রের ওই ধারাটি
রহিত করেন। কিন্তু সুদূর লন্ডনে বসে বিএনপির মতো একটি রাজনৈতিক দল পরিচালনা বাস্তবতা-বিবর্জিত।
ঢাকার চেয়ে লন্ডন ছয় ঘণ্টা পিছিয়ে। দলটির সকালে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, সেটা বিকেলে
বা সন্ধ্যায় নিতে হয়। বিএনপির অনেকেই দলটিকে ‘সান্ধ্যকালীন রাজনৈতিক দল’ হিসেবেও ইদানীং
ডাকতে শুরু করেছে। বিএনপির গঠনতন্ত্র এমন যে, এখানে দলের চেয়ারপারসনকে সর্বময় ক্ষমতা
প্রদান করেছে। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলে এরকম অগণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্র থাকতে পারে
কি না, সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। তবে বাস্তবতা হলো এই যে, দলের প্রধান ব্যক্তি ছাড়া কারোরই
কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার নেই। বিএনপি মহাসচিবসহ অন্য নেতারা স্রেফ আজ্ঞাবহ কর্মচারী।
অনেকটা পাইক-পেয়াদার মতো। মালিকের এক কথায় তাদের চাকরি চলে যায়।
বিএনপি আসলে একটা লিমিটেড কোম্পানির মতো। যে কোম্পানির সব শেয়ারের
মালিক জিয়া পরিবার। ফলে বেগম জিয়া যখন জেলে, তারেক রহমান লন্ডনে, তখন বিএনপির অন্য
নেতারা অসহায় চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকেন। কর্মীরা প্রশ্ন করলে, নেতারা উত্তর দিতে
পারেন না। বিদেশি কূটনীতিক, সুশীল সমাজ প্রতিনিধিদের কোনো জিজ্ঞাসার তাৎক্ষণিক উত্তর
নেই বিএনপি নেতাদের কাছে। বছর দুয়েক আগে বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন।
সেখানে প্রশ্ন করা হয়েছিল, বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো লবিস্ট ফার্ম ভাড়া করেছে কি না।
জবাবে প্রথমে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বললেন, না। সংবাদ সম্মেলন শেষ করে তিনি যখন
চলে যাচ্ছিলেন, তখনই তার কাছে ফোন এলো দূরদেশ থেকে। বিএনপি মহাসচিব ফিরে এলেন। উত্তেজিতভাবে
বললেন, আওয়ামী লীগের জুলুম নির্যাতনের সঠিক তথ্য জানানোর জন্যই তাদের লবিস্ট ফার্ম
আছে। এই তো সেদিন বিএনপি নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করল। বেগম জিয়াসহ নেতাকর্মীদের
মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে সমাবেশের ডাক দেওয়া হলো। নির্দেশটি এসেছিল লন্ডন থেকে। লন্ডনে
অবস্থানকারী নেতা সেখানে বসে কীভাবে বুঝবেন বাংলাদেশে কী তীব্র তাপপ্রবাহ।
বিএনপি কোনো নেতাই সাহস করে বলতে পারলেন না, বাংলাদেশের আবহাওয়ার
অবস্থা, প্রচণ্ড গরমে মানুষের যাই যাই অবস্থার কথা। কর্মসূচি ঘোষণা হলো। এরপর সামাজিক
যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হলো তীব্র সমালোচনা। এ আবহাওয়ায় বিএনপির এ রাজনৈতিক কর্মসূচিকে
তুলাধুনা চলল। অবশেষে লন্ডনে থাকা নেতার বোধোদয় হলো। তিনি আবার ফরমান জারি করলেন সমাবেশ
বাতিল। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। প্রতিকূল পরিস্থিতির
মধ্যেই দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন সভাপতি পদে নির্বাচিত হলেন। কোথায় তাকে
সাবাশি দেওয়া হবে, শুরু হলো নাটক। লন্ডন থেকে বার্তা এলো, ফল প্রত্যাখ্যান করতে হবে।
দায়িত্ব নেওয়া যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা তো বটেই, বিএনপির নেতাকর্মীরাই হতবাক।
২০১৮ সালের নির্বাচনে ছয় আসন পেয়ে যদি বিএনপির নির্বাচিতরা সংসদে যেতে পারেন, তাহলে
খোকন কেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির সভাপতির দায়িত্ব নিতে পারবেন না? কারও কাছে
উত্তর নেই।
খোকন দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে দায়িত্ব নিলেন। এরপর আবার নাটক।
অবশেষে গত বৃহস্পতিবার সিদ্ধান্ত পাল্টেছে দলটি। বিএনপিতে এখন এরকম সিদ্ধান্ত বদলের
উৎসব চলছে। সকালের সিদ্ধান্ত বিকেলে বাতিল হচ্ছে। দেশের বাস্তবতা, পরিস্থিতি বিবেচনায়
না নিয়ে সামরিক ফরমানের মতো নির্দেশনা জারি করা হচ্ছে। দূরে থেকে সিদ্ধান্ত দিলে এমনই
হবে স্বাভাবিক। বারিধারার কূটনৈতিকপাড়ায় নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতাদের ব্যাপক কদর
ছিল। চা, নাশতা, নৈশভোজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বিএনপি নেতারা। এ সময় বিএনপি নেতাদের
মধ্যে একটি বাক্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়—‘আই উইল গেট ব্যাক টু ইউ সুন’ (খুব শিগগিরই
আমি তোমাকে এ সম্পর্কে জানাব)। বিএনপি কি নির্বাচনে যাবে, নির্বাচনে বর্জনের কৌশল কী?
নির্বাচনের পর কী করবে—সব প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি নেতাদের উত্তর এই এক বাক্য। কূটনৈতিকপাড়া
বিএনপি নেতাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের অক্ষমতায় বিরক্ত। একজন কূটনীতিক একবার বলেই ফেললেন,
‘তোমাদের দলে তো অনেক অভিজ্ঞ নেতা আছে। এ সময়ের জন্য তাদের কাউকে দায়িত্ব নিতে বলো
না কেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরেও বিএনপির পক্ষ থেকে সেই বাক্যটিই উচ্চারিত হয়েছে। বিএনপির
জন্য জিয়া পরিবারের বাইরে আপৎকালীন সময়ে কাউকে নেতৃত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তটি স্পর্শকাতর।
দলের বেশিরভাগ নেতাকর্মীর মধ্যে এ নিয়ে যুক্তিহীন আবেগ কাজ করে। তারা মনেপ্রাণে বিশ্বাস
করেন, জিয়া পরিবারের বাইরে থেকে নেতৃত্ব এলে দলটি টিকবে না। কোন্দলে কয়েক টুকরো হয়ে
যাবে।
জিয়া পরিবার মুক্ত বিএনপির ধারণা অনেকের কাছে ধৃষ্টতা, অপরাধ, ‘কবিরা
গুনাহ’। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিএনপিকে বাঁচানোর এটিই একমাত্র পথ। নির্বাহী দায়িত্ব
থেকে বেগম জিয়া বা তারেক রহমান সরে গেলেই বিএনপির কর্তৃত্ব তারা হারাবেন না। ভারতের
কংগ্রেসের নেতৃত্বে গান্ধী পরিবারের কেউ নেই। কিন্তু তবুও এখনো এ পরিবারই উপমহাদেশের
প্রাচীনতম দলটির প্রধান নিয়ন্ত্রক। এক-এগারোর সংকটে আওয়ামী লীগ সভাপতি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।
এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেননি। কঠিন পরিস্থিতি
মোকাবিলার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন বিশ্বস্ত অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ জিল্লুর রহমানের হাতে।
’৭৫-পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন জোহরা তাজউদ্দীন। তাতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ
থেকে বিচ্যুৎ হয়নি আওয়ামী লীগ। পুনরুজ্জীবিত আওয়ামী লীগই শেখ হাসিনাকে নেতৃত্বে বসিয়েছে
বিপুল সম্মানে, অফুরান ভালোবাসায়। যে কোনো রাজনৈতিক দলের সংকট আসলে আদর্শের পরীক্ষা।
আদর্শের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে আদর্শবান অভিজ্ঞ নেতা প্রয়োজন।
এক-এগারোর সংকটে আওয়ামী লীগ জিল্লুর রহমান, সৈয়দ আশরাফের মতো নেতা
পেয়েছিল বলেই দলটি ঐক্যবদ্ধ থেকেছে। শক্তিশালী হয়েছে। অন্যদিকে এ সময় বিএনপি পেয়েছিল
তাদের ভাষায় ‘বিশ্বাসঘাতক’ আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, সাইফুর রহমানদের। যারা নিজেদের আদর্শবান
নেতা হিসেবে প্রমাণ করতে পারেননি। এ উপলব্ধি যে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হয়েছিল,
তার প্রমাণ মেলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে। তীব্র রাজনৈতিক বিরোধ
উপেক্ষা করে, তিনি বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন জিল্লুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। হয়তো
মনের ভেতর এক দীর্ঘশ্বাসকে চাপা রেখেছিলেন। এই ভেবে যে, তিনি তার দলে জিল্লুর রহমানের
মতো একজন বিশ্বস্ত নেতা পাননি। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই মেরুর দল। দুটি দলের নীতি,
আদর্শ বিপরীতমুখী। সংকট মোকাবিলায় দুই দলের অভিজ্ঞতা দুরকম। আওয়ামী লীগের প্রতিটি সংকটে
আদর্শবান নেতারা ত্রাণকর্তা হিসেবে সামনে এসেছেন। বিএনপির সংকটে দায়িত্ববানরা করেছেন
প্রতারণা। জিয়ার মৃত্যুর পর বিচারপতি আবদুস সাত্তার কিংবা কে এম ওবায়দুর রহমান বিএনপির
জন্য স্বস্তি আনতে পারেননি। এক-এগারোর সময় ইয়াজউদ্দিন-মান্নান ভূঁইয়ারা দলের বিরুদ্ধে
ষড়যন্ত্র করেছেন বলে বিএনপির নেতাকর্মীরা এখনো দাবি করেন। দুই দলের এ বিপরীত পরিস্থিতিতে
প্রধান কারণ আমার মতে ‘আদর্শ’।
আওয়ামী লীগে কিছু নেতাকর্মী আদর্শের চর্চা করে। একটি নির্দিষ্ট
আদর্শের ভিত্তিতে দলটি পরিচালিত হয়। আর বিএনপির একমাত্র আদর্শ হলো, আওয়ামী লীগ বিরোধিতা।
ক্ষমতার হালুয়া-রুটি ভাগবাটোয়ারার জন্য গঠিত এ ক্লাবে সবাই কিছু চান। তা ছাড়া আওয়ামী
লীগের একজন তৃণমূলের কর্মীও মনে করেন, দলটা তার। কিন্তু বিএনপির সবাই বিশ্বাস করেন,
দলের মালিক জিয়া পরিবার। তারা শুধুই চাকরবাকর। যে কারণে কেউ ঝুঁকি নিতে চান না। সিদ্ধান্ত
গ্রহণে জিয়া পরিবারের জন্য অপেক্ষা করেন। নেতৃত্বে বাইরের কেউ এলে তারা বিশ্বাসঘাতকতা
করবেন, জিয়া পরিবারকে মাইনাস করবেন—বেগম জিয়া বা তারেক রহমানের এমন আশঙ্কা অতীত অভিজ্ঞতা
থেকেই। তা ছাড়া জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া এ রাজনৈতিক দলটিই তাদের আয়-উপার্জনের একমাত্র
পথ। নেতৃত্ব ছাড়লে আয়ের উৎসও বন্ধ হয়ে যাবে। এসব কারণেই হয়তো জিয়া পরিবারের সদস্যরা
নেতৃত্ব ছাড়তে চান না। নেতৃত্ব ছেড়ে দিলেই একজন সাত্তার, সাইফুর রহমান, কিংবা মান্নান
ভূঁইয়ার জন্ম হবে। এ অবিশ্বাসের কারণেই, নির্বাচনে অযোগ্য বেগম জিয়া, তারেক রহমান নির্বাচনবিমুখ।
বিএনপির রাজনীতির মূল ভিত্তি চারটি—অবিশ্বাস, সন্দেহ, ক্ষমতা ও সুবিধাবাদ। এ কারণেই
বিএনপি জিয়া পরিবারমুক্ত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কেউ কি বাড়ির কেয়ারটেকারকে হেবা
দলিলে বাড়ি লিখে দেয়?
লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী কমিটি উপজেলা নির্বাচন শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন।
ওবায়দুল কাদের বেশ কদিন ধরে দাপটে ছিলেন। তিনি প্রতিদিন সংবাদ সম্মেলন করতেন এবং উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করতেন। বিশেষ করে উপজেলা নির্বাচনে আত্মীয় স্বজনরা যেন প্রার্থী না হয় সে ব্যাপারে তিনি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছিলেন এবং যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। প্রতিদিন তিনি হুমকি দিচ্ছেন, প্রতিদিন তিনি সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন, হুশিয়ারি উচ্চারণ করছেন। কিন্তু কেউ তার কথা শুনছেন না। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদকের এই নির্দেশনা আসলে দলের নির্দেশনা। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশই এই নির্দেশনা মানছেন না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন যে, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। স্বজনপ্রীতির বিরুদ্ধে এই অবস্থান ওবায়দুল কাদেরের নয়, এই অবস্থানের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মূলত তাঁর তার বক্তব্যেই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ ধরনের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু প্রথম দফায় উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন দেখা গেল যে, একমাত্র প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তার শ্যালককে মনোনয়ন প্রত্যাহার করিয়েছেন। অন্য কেউই ওবায়দুল কাদেরের সিদ্ধান্তকে পাত্তা দেননি। ওবায়দুল কাদের এই ব্যাপারে কঠোর অবস্থানের কথা বারবার ঘোষণা করছেন।
বিএনপি নামের রাজনৈতিক দলটি যেন এখন এক রহস্যে ঘেরা বাড়ি। ভূতুড়ে বাড়িও বলা যায়। যে বাড়ির কর্তারা থাকেন অন্ধকারে। লোকচক্ষুর আড়ালে। যেখানে চাকরবাকর, সেরেস্তাদাররা থাকেন আতঙ্কে। কেউ জানে না আগামীকাল কী হবে। ১৭ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি যে এখনো টিকে আছে, তা এক বিস্ময়। তার চেয়েও বড় কৌতূহল বিএনপি কে চালায়? একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত দলটি এখন যেন পথ হারিয়েছে। পথের দেখা পেতে, বিএনপিকে বাঁচাতে নানা জনের নানা মত। অনেকেই অনেক পরামর্শ দিচ্ছেন।
আগামী ৩০ এপ্রিল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের অবাধ্যতা, দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং উপজেলা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ইত্যাদি নিয়ে এই বৈঠকের দিকে তাকিয়ে আছে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগ সভাপতি কী অবস্থান গ্রহণ করেন এবং কীভাবে তিনি বিদ্রোহীদের মোকাবেলা করেন সেটির দিকে তাকিয়ে আছে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ।