৪
এপ্রিল সকালে ঘুম থেকে উঠেই পেলাম দুঃসংবাদ। বঙ্গবাজারে আগুন। প্রথমে এর ভয়াবহতা বুঝতে
পারিনি। কিন্তু টেলিভিশনে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে ভয়ে আঁতকে উঠলাম। দুপুর পর্যন্ত আগুনের দাপটে পুড়ে ছাই হয়ে গেল অন্যতম বড় এ পাইকারি
মার্কেটের প্রায় ৫ হাজার দোকান।
সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসলেন হাজারখানেক ব্যবসায়ী। যথারীতি বঙ্গবাজারের আগুনের পরও গবেষণা শুরু হয়েছে। এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে জোর
আলাপ, বিতর্ক থেমে নেই। আর
সব বিপর্যয়ের পর যেভাবে একাধিক
তদন্ত কমিটি গঠিত হয় এ ক্ষেত্রেও
তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। আগে থেকেই বলে দেওয়া যায় এ তদন্ত কমিটি
কী রিপোর্ট দেবে। শুরু হবে দোষারোপের ব্লেম গেম। জনগণ এসব দেখে বিরক্ত হবে। নিজেদের অসহায় ভাববে। এমনিতেই ঢাকা শহরকে বেশির ভাগ নগরবাসী ‘মৃত্যুকূপ’
ভাবেন। সেই ভাবনার মিছিলে আরও কিছু মানুষ যুক্ত হবেন। এ শহরে যে
কোনো সময়ে যে কোনো স্থানে,
যে কেউ দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। বিপর্যস্ত হতে পারে। অনিরাপদ, মৃত্যুপুরী এ শহরে যেন
কোনো অভিভাবক নেই। ২০২৩ সালকে এখন পর্যন্ত বলা যায় নাগরিক বিপর্যয় এবং দুর্ঘটনার বছর। একের পর এক বিস্ফোরণ
হচ্ছে, আগুন লাগছে। নাগরিক উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা বেড়েই চলেছে। নিরাপত্তাহীন আতঙ্কিত মানুষ সরকারের ওপর আস্থা হারাচ্ছে, ক্ষুব্ধ হচ্ছে। একের পর এক এ
ধরনের বিস্ফোরণ এবং আগুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জনমনে প্রশ্ন উঠছে, সরকার কী করছে। জনজীবনের
নিরাপত্তা দিতে সরকার ব্যর্থ- এরকম কথা সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন গলা ফাটিয়ে বলছে। আর সরকারের ভিতর
বসে থাকা কিছু নাদুসনুদুস কর্তা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলছে- স্রেফ দুর্ঘটনা, নাশকতার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। তাহলে বাংলাদেশ এখন দুর্ঘটনার দেশ। এ দেশে প্রতি
সপ্তাহে কোনো না কোনো দালানকোঠা,
বড় মার্কেটে আগুন লাগে। এটাই কি প্রমাণ করতে
চাইছে কেউ কেউ? সরকারের ওপর জনআস্থা নষ্ট এবং ক্ষোভ সৃষ্টির জন্যই কি এসব আগুন
এবং বিস্ফোরণের ঘটনা? সায়েন্স ল্যাবরেটরি, সিদ্দিকবাজারের পর বঙ্গবাজারের আগুনের
ঘটনাকে যদি কেউ নিছক দুর্ঘটনা বলেন তাহলে তিনিও এ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে
জড়িত বলে আমি সন্দেহ করব। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশে যে বহুমুখী ষড়যন্ত্র
চলছে এ নাশকতা তারই
একটি ধারা। এক্ষুনি যদি সরকার এর উৎসমূল খুঁজে
বের করতে না পারে তাহলে
সামনে এরকম কিংবা এর চেয়ে বীভৎস
ঘটনা ঘটবে। সরকারকে দুর্বল এবং বিব্রত করার এটি খুব ভালো অস্ত্র। এর ফলে জনগণের
মধ্যে সরকার সম্পর্কে সহজেই নেতিবাচক ধারণা তৈরি করা যায়। সরকারের গায়ে ব্যর্থতার তকমা লাগানোর এটি অন্যতম সহজ পথ। এ জন্যই ২০১৩-২০১৫ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আগুন সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছিল।
পেট্রলবোমা, বাসে আগুন এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার চেষ্টা করেছিল। যেন জনমনে আতঙ্ক তৈরি হয়। জনগণ সরকারের প্রতি আস্থা হারায়। সমস্যা হলো রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে নাশকতা করলে তার দায় সরাসরি আন্দোলনকারীদের ওপর বর্তায়। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে অগ্নিসন্ত্রাস, মানুষ পোড়ানোর দায় বর্তেছিল বিএনপির ওপর। ফলে দলটির ওপর মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করতে দ্বিধা করেনি। তাদের আন্দোলন জনগণ প্রত্যাখ্যান করে। ফলে ওই সময়ে সন্ত্রাসী
রাজনৈতিক কর্মসূচির চিরবিদায় হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত নয়, সব রাজনৈতিক দলই
এখন সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়িয়ে চলে। রাজনৈতিক আন্দোলনের কৌশল থেকে সহিংসতা, সন্ত্রাস, অগ্নিসংযোগ বিদায় নিয়েছে বটে; কিন্তু তা কি এখন
দুর্ঘটনা এবং নাশকতার আদলে ফিরে এসেছে? এ প্রশ্ন এখন
উঠতেই পারে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বিরোধী দল জ্বালাও-পোড়াও
করলে তাদের বদনাম হয়। আর দেশে হঠাৎ
বিস্ফোরণ হলে, আগুন লাগলে সরকারের যোগ্যতা এবং দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই খুঁজে দেখতে হবে এসব ঘটিয়ে সরকারকে দুর্বল করার কোনো আয়োজন চলছে কি না। কারণ
নির্বাচনের আগে সরকার যত দুর্বল হবে
তত নির্বাচন করার কাজটি কঠিন হয়ে যাবে। অনির্বাচিত এবং অসাংবিধানিক সরকারের ক্ষমতায় আসার পথ উন্মুক্ত হবে।
আগুন
যে শুধু বঙ্গবাজারে তা নয়, দ্রব্যমূল্যের
বাজারেও আগুন। রোজার মধ্যে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে মানুষের হা-হুতাশ অনেক
ক্ষেত্রেই গর্জনের মতো শোনা যাচ্ছে। বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। এর মধ্যে কিছু
কিছু মন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীন কথাবার্তা মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলার উপক্রম করেছে। এক মন্ত্রী বলেছেন,
‘এবার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জিনিসপত্রের দাম সহনীয় পর্যায়ে।’
তার কথা শুনে আমি তাজ্জব বনে গেছি। ২০১৯ সালে যারা মন্ত্রী হয়েছেন তাদের বেশির ভাগই জনবিচ্ছিন্ন এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন। এটা আরেকবার প্রমাণ হলো ওই মন্ত্রীর কথায়।
মন্ত্রী যেদিন দ্রব্যমূল্যের সহনীয় মাত্রা নিয়ে তার অভূতপূর্ব আবিষ্কারের ঘোষণা দিলেন, ঠিক সেদিনই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানাল মার্চে মুদ্রাস্ফীতির হার ১০-এর কাছাকাছি
(৯ দশমিক ৩৩)। আর
এ মুদ্রাস্ফীতি নিয়েও আরেক মন্ত্রী তামাশা করলেন। তিনি মুদ্রাস্ফীতির হার ১০ শতাংশে উন্নীত
না হওয়ায় সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। সৃষ্টিকর্তাই যদি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে সরকারের কাজ কী? এতসব মন্ত্রী-আমলারই বা দরকার কী?
বাজারে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য বঙ্গবাজারের আগুনের মতোই ভয়াবহ। পার্থক্য হলো- বঙ্গবাজারের আগুন দৃশ্যমান কিন্তু বাজারের আগুন খালি চোখে দেখা যায় না। বিশেষ করে ক্ষমতাসীনরা এ আগুন দেখেও
না দেখার ভান করতে পারেন। বঙ্গবাজারের আগুন ফায়ার ব্রিগেড পানি দিয়ে নিভিয়েছে। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের আগুন নেভাবেন কী দিয়ে? বঙ্গবাজারের
আগুন একটা নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের আগুন নিয়ন্ত্রণহীন। এ আগুন নিম্নবিত্ত
থেকে মধ্যবিত্ত হয়ে এখন উচ্চবিত্তের গায়েও আঁচ লাগাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যে শুধু বৈশ্বিক
পরিস্থিতির কারণে বেসামাল হয়েছে এমনটি ঠিক নয়, এর মধ্যে কারসাজি
আছে, কিছু ব্যবসায়ীর অনৈতিক মুনাফার লোভ আছে, আছে সিন্ডিকেটের দুরভিসন্ধি। সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠান বিক্ষিপ্তভাবে বাজারে অভিযান পরিচালনা করছে বটে। কিন্তু এসব অভিযান এতই সমন্বয়হীন এবং দায়সারা যে, এর ফলে বাজারে
কোনো ইতিবাচক ফল দৃশ্যমান হচ্ছে
না। তবে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হলো- সরকারের মধ্যে কারও কারও সত্য এবং বাস্তবতাকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা। জিনিসপত্রের দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে- এ সত্যকে স্বীকার
করে করণীয় নির্ধারণ করাটা জরুরি ছিল। সেটি করা হয়নি। ছোট ছোট অনেক ইতিবাচক কাজ সমন্বিতভাবে করা যেত। যেমন এবার রোজার শুরু থেকেই মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়
সুলভ মূল্যে মাংস, মুরগি, ডিম, দুধ বিক্রি করেছে। ঢাকা শহরে এ উদ্যোগটি ব্যাপকভাবে
প্রশংসিত হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস স্বল্পমূল্যে বিক্রি হয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় একটু উদ্যোগ নিলেই শাক-সবজি, ফলমূল সুলভ মূল্যে বিক্রির উদ্যোগ নিতে পারত। করোনাকালে ‘কৃষকের বাজার’
নামে একটি উদ্যোগ প্রশংসিত হয়েছিল। যেখানে কৃষকরা সরাসরি তাদের কৃষিপণ্য এনে বিক্রি করত। এসব পণ্যের দাম কম এবং মানেও
ভালো। জনগণের মধ্যে ‘কৃষকের বাজার’
ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল। কিন্তু এবার কৃষি মন্ত্রণালয় এ ধরনের কোনো
উদ্ভাবনী পদক্ষেপ নেয়নি। কেন নেয়নি তার ব্যাখ্যা নেই।
সমন্বিত
বহুমাত্রিক উদ্যোগ বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে পারত। কিন্তু সেটি সম্ভব হয়নি। দ্রব্যমূল্যের আগুনের দায় সরাসরি সরকারের ঘাড়ে বর্তাচ্ছে। সাধারণ মানুষ বিশ্বে কোথায় কী হচ্ছে তা
নিয়ে আগ্রহী নয়। বিশ্বের দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনাতেও উৎসাহী নয়। সাধারণ মানুষ চায় তার আয়ের মধ্যেই খেয়ে-পরে বাঁচতে। এটির দায়িত্ব সরকারের। সরকারের মধ্যে কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন অযোগ্য মন্ত্রী, চাটুকার আমলা এবং সুবিধাবাদী ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিকে অসহনীয় করে তুলেছেন। এদের কেউ কেউ কেবল প্রকৃত তথ্যই আড়াল করছেন না, সরকারপ্রধানকে ভুল তথ্যও দিচ্ছেন। এর ফলে সরকারের
সঙ্গে জনগণের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। আগামী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্রে দ্রব্যমূল্যকে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলা হয়েছে। এ ইস্যুকে ‘জাতীয়’
থেকে ‘আন্তর্জাতিক’
করা হয়েছে। এখানেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যথেষ্ট যোগ্যতা এবং পরিপক্বতার পরিচয় দিতে পারেনি। সুশীল সমাজের একটি অংশ দ্রব্যমূল্যকে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। ১৯৭৪-এ যেমন বঙ্গবন্ধু
সরকারের বিরুদ্ধে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ এবং দ্রব্যমূল্যকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই নীলনকশার বাস্তবায়ন করতে গিয়েই বাসন্তী নাটক সাজানো হয়েছিল। এবারও কিছু পত্রিকা একই নাটক মঞ্চস্থ করতে চাইছে। আর সুশীল নিয়ন্ত্রিত
ওই সংবাদপত্রের ফাঁদে পা দেয় সরকার।
অবশ্য আমার মনে হয় ওই পত্রিকাটিকে
ব্যবহার করে, এটি আসলে সুশীলদের বিছানো ষড়যন্ত্রের জাল। সেই জালে সরকার জড়িয়ে যায়। ওই পত্রিকা নিয়ে
ঘটনায় সরকারের লাভের চেয়ে ক্ষতি হয়েছে বেশি। একটি সংবাদপত্র ভুল সংবাদ পরিবেশন এবং গর্হিত অপরাধ করেও এখন প্রায় ‘বীর’
এর মর্যাদা পাচ্ছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে। সাপের লেজে পা দিলে তা
যেমন ছোবল দেবেই, তেমনি সুশীলদের লেজে পা দিয়ে সরকার
নিজেকে বিপদগ্রস্ত করল কি না তা
সময়ই বলে দেবে। তবে এখন এটুকু বলা যায়, সরকারের ভিতর ঘাপটি মেরে থাকা কিছু সুশীলবান্ধব কর্তা সরকারকে বিব্রতকর এবং কোণঠাসা করছে। ভুল প্রতিবেদন, স্বাধীনতাকে কটাক্ষ, শিশু নিপীড়নের জন্য পত্রিকাটির যেখানে দুঃখিত ও লজ্জিত হওয়া
উচিত সেখানে অসত্য, উসকানিমূলক তথ্য প্রকাশকেই তারা এখন ‘নির্ভীক সাংবাদিকতা’
হিসেবে ব্র্যান্ডিং করছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক
বিশ্বের নজর কেড়েছে তারা। বিশ্বে তারা সফলভাবে প্রচার করতে পেরেছে ক্ষুধা, অভাব, দ্রব্যমূল্য নিয়ে প্রতিবেদনের কারণে বাংলাদেশের গণমাধ্যম হেনস্তার শিকার হচ্ছে। অর্থাৎ বাংলাদেশে অভাব-অনটন, ক্ষুধা প্রকট, এ অনটনের কথা
গণমাধ্যমে প্রকাশ করতে দেয় না সরকার। কেউ
যদি সাহস করেও এসব প্রচার করে তাহলে তার ওপর ‘খড়গ’
নেমে আসে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো স্পর্শকাতর বিতর্কিত কালো আইন দিয়ে গণমাধ্যমকে শায়েস্তা করে এবং এ অপপ্রচারের শেষ
ভাগে যথারীতি ‘নির্বাচন’
প্রসঙ্গ আসে। শেষে গিয়ে বলা হচ্ছে- সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য বিরোধী মত দমন করছে।
গণমাধ্যমকে মত প্রকাশ করতে
দিচ্ছে না। কালো আইনের অপপ্রয়োগ করছে। কোনো কিছু না করেই ‘সরকার’
অপরাধী আর অপরাধ করেও
সুশীলদের মুখপত্র পত্রিকা জাতির বিবেক, দেশপ্রেমী। ২৬ মার্চের একটি
গণমাধ্যমের দায়িত্বহীন, ইচ্ছাকৃত উসকানিমূলক সংবাদ প্রকাশের পর যে ঘটনাপ্রবাহ
তাতে স্পষ্ট সরকার পিছু হটেছে। ফাঁদে আটকে গেছে। হতবুদ্ধি হয়ে গেছে। এ নিয়ে আমার
কিছু প্রশ্ন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- পত্রিকাটি শিশু নিপীড়নের অপরাধ করেছে। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের মামলা না দিয়ে কেন
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা হলো? সরকারের প্রভাবশালী একাধিক মন্ত্রী বলেছেন, পত্রিকাটি স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করেছে। আরেকটি বাসন্তী অধ্যায় সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। এটি রাষ্ট্রদ্রোহ। তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা না করে কেন
বিতর্কিত, সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হলো? এ মামলায় একজন
সংবাদকর্মীকে গ্রেফতার করতে মধ্যরাতে কেন তার বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা গেল? সকালে গেলে কি মহাভারত অশুদ্ধ
হতো? আমার মনে হয় সুশীলদের পক্ষে
একটি গোষ্ঠী সরকারের ভিতর শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে আছে। এরা সরকারের ভিতরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে। একই ঘটনা দেখা যায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের
ক্ষেত্রেও। তার অর্থ পাচার তদন্ত, শ্রমিক ঠকানোর মামলাগুলো এগোচ্ছে না। এটাও সাপের লেজে পা দেওয়ার মতো।
এ নিয়ে ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক
পরিমন্ডলে নালিশ-সালিশ করছেন। সরকার ঠিকঠাক মতো ড. ইউনূসের অপপ্রচার
মোকাবিলা করতে পারছে না। আগামী নির্বাচনের আগে এ ঘটনাগুলো প্রভাব
ফেলবে। তারই এক ঝলক দেখা
গেল সুশীল মুখপত্র সংবাদপত্রকে কেন্দ্র করে ঘটনায়। পরিকল্পিতভাবে ওই পত্রিকা এবং
তার সম্পাদককে ‘সাহসী যোদ্ধা’
বানানো হলো। অথচ তারা যে কান্ডটি করেছেন
তাতে তাদের মুখে চুনকালি লাগার কথা। শুধু এটিই প্রথম নয়, সুশীলদের মুখপত্র বাংলা এবং ইংরেজি সংবাদপত্র দুটিকে সরকারি কিছু মহলের পৃষ্ঠপোষকতায় এভাবে একাধিকবার ‘জাতীয় বীর’
বানানো হয়েছে। এ পত্রিকার একজন
সংবাদকর্মী সচিবালয়ে রীতিমতো চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন। সে সময় তার
মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়াটা ছিল যথার্থ। কিন্তু তা না করে
তাকে কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে ‘চোর’কে ‘হিরো’
বানানো হলো। চুরির অপরাধ করেও ওই সাংবাদিক আন্তর্জাতিকভাবে
সাহসী, নিপীড়িত সাংবাদিকের ‘তকমা’
পেলেন। মেডেল পেলেন। সুশীলদের নিয়ন্ত্রিত ইংরেজি পত্রিকার সম্পাদক এক টকশোতে গিয়ে
অপরাধ কবুল করলেন। স্বীকার করলেন, ডিজিএফআইর কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তা যাচাই-বাছাই
না করেই তিনি প্রকাশ করেছেন। ওই অসত্য, ভিত্তিহীন
তথ্যের পরিপ্রেক্ষিতেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। আত্মস্বীকৃত অপসাংবাদিক। যে কোনো সম্পাদক
এ ধরনের স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর পেশা ছেড়ে
দেন কিংবা স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যান। সাংবাদিকতার নৈতিক অধিকার হারান। কিন্তু অতি উৎসাহী আওয়ামী আনাড়িরা ওই ঘটনার পর
এমন শিশুসুলভ বালখিল্যতা করল যে, ‘গোয়েন্দাদের দালাল সম্পাদক’
নর্দমা থেকে উঠে সরোবরে অবগাহন করলেন। এ ঘটনাগুলোকে আপাতদৃষ্টিতে
বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে। মনে হতে পারে সরকার এবং আওয়ামী লীগের বিচার, বুদ্ধি ও দক্ষতার অভাব।
আদতে এটি পরিকল্পিত। নির্বাচন বানচালের নীলনকশার অংশ। সরকারের ভিতর সুশীলদের এজেন্ট এবং নব্য মোশতাকরা জেনেবুঝেই এসব করছে। এ এজেন্ট এবং
ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী যে পত্রিকা পড়েন
না বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। যে পত্রিকা মাইনাস
ফর্মুলার প্রবক্তা। আওয়ামী লীগ সরকার ও দলের কোন
কোন মন্ত্রী-নেতা সেখানে কলাম লিখে ধন্য হন, কারা সেখানে বিজ্ঞাপন দেন, তাদের অনুষ্ঠানে সরকারের কারা উপস্থিত হন- সেই তালিকা তৈরি করলেই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা যাবে। সুশীলদের মুখপত্র দুটিকে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে পাদপ্রদীপে আনতে এ ধরনের ঘটনা
ঘটানো হচ্ছে বলে আমার বিশ্বাস। এসব ঘটনার পর পত্রিকা দুটি
সরকারের বিরুদ্ধে, দেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের লাইসেন্স পেল। ড. ইউনূসও বাংলাদেশ
ও সরকারবিরোধী প্রচারণায় আদাজল খেয়ে নামলেন। তারা বুঝলেন তাদের ধরার কেউ নেই। তাদের বিদেশি মুরব্বিরা এ ঘটনার পর
যেভাবে হইচই করেছেন তাতে সরকার ও জনগণ উভয়ই
বুঝল এদের খুঁটি কোথায়। নির্বাচনের আগে সরকারের বিরুদ্ধে দাগানোর জন্য কামান গোলাবারুদসহ প্রস্তুত করা হলো। আরও কত কামান গোপনে
প্রস্তুত কে জানে? এরা
এখন নির্বাচন বানচালের প্রচারণায় যুক্ত হবে। যার প্রমাণ ইতোমধ্যেই পাওয়া গেছে। ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার
যখন পুড়ছে ঠিক তখন এক-এগারোর কুশীলব
এবং বিএনপিপন্থি সুশীলদের এক ভার্চুয়াল মিলনমেলা
অনুষ্ঠিত হলো। সুজনের উদ্যোগে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের
ভবিষ্যৎ’
শীর্ষক এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল
বৈঠকের আয়োজন করা হয়। ওই বৈঠকে তত্ত্বাবধায়ক
সরকারব্যবস্থার পক্ষে সুশীলরা প্রকাশ্য অবস্থান ঘোষণা করেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে ওই গোলটেবিলে প্রশ্ন
তোলা হয়। পুরো গোলটেবিলের আবহ ছিল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত
যেন দেশে নির্বাচন না হয়। এ
গোলটেবিল বৈঠক একটি বিষয় স্পষ্ট করেছে তা হলো- তত্ত্বাবধায়ক
সরকারের দাবি তুলে নির্বাচন বানচালের মাস্টারপ্ল্যানটি আসলে সুশীল সমাজের। বিএনপি উপলক্ষ মাত্র। তারা পার্শ্বচরিত্র। মাঠের আসল খেলোয়াড় সুশীলরা। সুশীলদের মাঠে নামিয়েছে তাদের পশ্চিমা প্রভুরা। লক্ষণীয় ব্যাপার পশ্চিমা মহল, সুশীল এবং বিএনপি এখন একবিন্দুতে মিলিত হয়েছে। অভিন্ন লক্ষ্য তাদের। পশ্চিমা দেশগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে না। তারা বলছে, আগামী নির্বাচন হতে হবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ। তারা
সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে
জানিয়ে দিয়েছে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে
সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সুশীলরা বলছেন, বর্তমান সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন
করতে চায় না। এ সরকার মত
প্রকাশের স্বাধীনতা দেয় না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ করছে। ‘গুম’
নাটকের বিষয়টি তো আছেই। কাজেই
নির্বাচনের আগে একটি নিরপেক্ষ আবহ তৈরি করতে হবে। এদের কেউ কেউ দুই বছর নির্বাচন পেছালেও কোনো ক্ষতি নেই- এ মর্মে ‘ফতোয়া’
পর্যন্ত দিচ্ছেন। আর বিএনপি, সুশীল
এবং পশ্চিমাদের শেখা বুলি আওড়াচ্ছে তোতা পাখির মতো। তারা বলছে, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন করবে না।’
ব্যস, এটি বলে তারা পাঁচতারকা হোটেলে ইফতার উৎসব করছে। খাচ্ছে-দাচ্ছে গায়ে বাতাস দিয়ে ঘুরছে। আমার বিবেচনায় ষড়যন্ত্রের নীলনকশায় তারা স্রেফ একটি ‘গুটি’। অথবা বিএনপি
পুতুল নাচের পুতুল। তাদের যেভাবে নাচানো হচ্ছে সেভাবেই তারা নাচতে রাজি। কারণ বিএনপির একমাত্র লক্ষ্য হলো আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করা। নিজেদের ক্ষমতায় বসা নয়। ‘সুষ্ঠু নির্বাচন’
এর আওয়াজ তুলে আসলে আগামী নির্বাচন অনিশ্চিত করতে চায় সুশীল এবং তাদের গডফাদাররা। আর এটি অর্জন
করতে হলে সরকারকে কোণঠাসা, অজনপ্রিয় এবং দুর্বল করতে হবে। জনগণের থেকে সরকারকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। সে জন্যই বঙ্গবাজারে
আগুন, নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। এ জন্যই সরকারের
ভিতরে আত্মঘাতী তৎপরতা। নির্বাচনের
সময় যতই এগিয়ে আসছে ততই ষড়যন্ত্রের জালে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে যাচ্ছে সরকার। ষড়যন্ত্রের আগুনের শিখা গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে উদ্যত। নির্বাচন না হলেই বঙ্গবাজারের
মতো পুড়ে ছাই হবে ‘গণতন্ত্র’। এ আগুন
থেকে ‘গণতন্ত্র’
কি রক্ষা পাবে?
লেখক
: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
poriprekkhit@yahoo.com
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ডোনাল্ড লু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মন্তব্য করুন
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
আরও পড়ুন: কুড়ি বছর পর আবারো আওয়ামী লীগের ‘ট্রাম্প কার্ড’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিভক্ত, কোন্দলে
জর্জরিত আওয়ামী লীগ দল গোছাতে নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে একটি ছিল উপজেলা নির্বাচনে
দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা। নির্বাচন প্রভাবমুক্ত করতে টানা ক্ষমতায় থাকা দলটি মন্ত্রী-এমপির
স্বজনদের উপজেলায় প্রার্থী না করার আহ্বান জানায়; কিন্তু দলের ওই নির্দেশনা মানেননি
অনেকেই। যেসব মন্ত্রী, এমপির স্বজনরা প্রার্থী হয়েছিলেন তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া কেউই
মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছিলেন, যারা দলীয় শৃঙ্খলা
ভঙ্গ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি এটাও জানিয়েছিলেন, ৩০ এপ্রিল
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। সারা দেশে আওয়ামী
লীগের তৃণমূলের দৃষ্টি সেদিন ছিল গণভবনে। কিন্তু ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত গণভবনে
বৈঠকে উপজেলা প্রসঙ্গ তো দূরের কথা, সাংগঠনিক বিষয় নিয়েই কোনো আলোচনা হয়নি। বৃহস্পতিবার
প্রধানমন্ত্রী তার থাইল্যান্ড সফর নিয়ে গণভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন। একজন সংবাদকর্মী
প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন।
এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন তার
মর্মার্থ হলো, এখনই চটজলদি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না। আওয়ামী
লীগ কোনো শাস্তির সিদ্ধান্তই চটজলদি নেয় না। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র তা অনুমোদন করে
না। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির কোনো নেতাকর্মী সংগঠনবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে
প্রথমে তাদের কারণ দর্শানো হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর কেন্দ্রীয় কমিটিতে
সবকিছু পর্যালোচনা করে, তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। একটি দীর্ঘ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া
অনুসরণ করা হয়।
কিন্তু বিএনপিতে ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো। বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় এক ব্যক্তির মতামতের ভিত্তিতে। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবে, তাদের আজীবন বহিষ্কার করা হবে। কয়েক বছর ধরেই বিএনপি শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে আসছে। উপজেলা নির্বাচনেও প্রথম দফায় ৭৩ জন, পরবর্তী সময়ে আরও ৬০ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে শাস্তি তো পেতেই হবে। কিন্তু শাস্তি প্রদানের একটি প্রক্রিয়া থাকা দরকার। সবার সামনে খুন করলেও, পুলিশ যদি অপরাধী ভেবে তাৎক্ষণিকভাবে কাউকে গুলি করে, সেটা হলো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। এটাকে অন্যায় এবং অগ্রহণযোগ্য মনে করা হয়। দীর্ঘদিন বিরোধী দলে থেকে বিএনপি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সোচ্চার।
আরও পড়ুন: আন্দোলন ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে সরকার
কিন্তু দলেই প্রতিনিয়ত বিচারহীনতার
সংস্কৃতি লালন করা হচ্ছে। যে কোনো অপরাধীর বিচারের ক্ষেত্রে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ
করা উচিত। কিন্তু বিএনপি কিছুদিন ধরে যে গণবহিষ্কারের উৎসব করছে, তা কি আইনি প্রক্রিয়া
অনুসরণ করে? যারা বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাদের কি কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল? তারা
কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পেয়েছেন? কেন্দ্রীয় কমিটি বা স্থায়ী কমিটিতে কি গোটা বিষয়টি
নিয়ে আলোচনা হয়েছে? উপজেলায় যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের কাউকে ন্যূনতম আত্মপক্ষ সমর্থনের
সুযোগ দেওয়া হয়নি। দপ্তর থেকে সেসব হতভাগাকে বহিষ্কারের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এটি
একটি গণতান্ত্রিক রীতি হতে পারে না। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড যেমন গর্হিত, অনাকাঙ্ক্ষিত,
ঠিক তেমনি এই বহিষ্কার। বিএনপি গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করছে। অথচ দলের ভেতর চলছে অগণতান্ত্রিক
কার্যক্রম। বিএনপির জন্য অবশ্য ক্রসফায়ার বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভ্যাস জন্মগত।
ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর জিয়া সেনাপ্রধান হয়েছিলেন। তিনি
অবৈধ প্রক্রিয়ায় অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেছিলেন। এরপর যারা তার জন্য ন্যূনতম
হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতো, তাদের বিচার ছাড়াই জিয়া নির্মমভাবে হত্যা করতেন। কেন্দ্রীয়
কারাগারে বিচারের নামে প্রহসন করে হত্যা করা হয়েছিল হাজার হাজার নিরীহ সৈনিককে। যুদ্ধাহত
মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) তাহেরকে এরকম বিচারের নামে প্রহসন করেই হত্যা করা হয়েছিল।
কাজেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিএনপির রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। জিয়ার মৃত্যুর পর
বেগম জিয়া এবং এখন তারেক জিয়াও সেই চর্চা অব্যাহত রেখেছেন।
গণতান্ত্রিক চিন্তা থেকে দেখলে, বিএনপির গণবহিষ্কার সমর্থন যোগ্য নয়। একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল এটি করতে পারে না। আওয়ামী লীগ যেভাবে একজন নেতা বা কর্মীকে শাস্তি দেয়; সেটিই সঠিক। কিন্তু এর বিপরীতে কোন ব্যবস্থা বেশি কার্যকর, দলকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে পারে; সে তর্ক হতেই পারে। বিএনপির এক নেতা বলেছিলেন, দলে শৃঙ্খলা রাখতে এর কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে অন্যরা শিক্ষা পাবে। দলের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার সাহস পাবে না। এ কঠোর অবস্থান নাকি দলকে শক্তিশালী করবে। সত্যি কি তাই? এর জবাব পাওয়া যায় ১ মে প্রকাশিত ‘দৈনিক কালবেলায়’। ‘বিএনপিতে বহিষ্কার বাণিজ্য’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—‘বহিষ্কারের পর পদ ফিরে পেতে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের কাছে ধরনা দেন। অনেক ক্ষেত্রে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের জন্য আর্থিক লেনদেনও হয়ে থাকে।’ কী তাজ্জব কথা! রাজনৈতিক দলে মনোনয়ন বাণিজ্যের কথা শুনেছি, কমিটি ও পদ-বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। কিন্তু বিএনপি এখন রাজনীতিতে ‘বহিষ্কার বাণিজ্য’ শুরু করল। নেতাদের অভিনব উপার্জনের এই পথ আবিষ্কারের জন্য দলটির শীর্ষ নেতাকে পুরস্কার দেওয়া যেতেই পারে। অতীতে এরকম অনেক নেতাকে দেখা গেছে, যারা দলের সঙ্গে ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন, তাদের দলে মহাসমারোহে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। যেমন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি কখন বিএনপিতে থাকেন আর কখন বহিষ্কৃত হন, সেই হিসাব মেলানো মুশকিল। প্রয়াত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার কথাই ধরা যাক। ১৯৯৬ সালে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা দিয়ে তিনি মন্ত্রিত্ব হারালেন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেন।
আরও পড়ুন: আদর্শবানরা ক্ষমতায় বিনয়ী হন, অযোগ্যরা বদলে যায়
কিন্তু ২০০১ সালে আবার বীরদর্পে ফিরে
আসেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে নানা বাণিজ্যে ফুলেফেঁপে ওঠেন। এক-এগারোর
সময় বিএনপিতে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে একমাত্র প্রয়াত আবদুল মান্নান
ছাড়া সবাই বিএনপিতে ফিরে এসেছিলেন। দুষ্ট লোকেরা বলে, মান্নান ভূঁইয়া বেঁচে থাকলে তিনিও
আবার বিএনপিতে ফেরত আসতেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী কিংবা অলি আহমদদের মতো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন
নেতারা ব্যক্তিত্ব বিসর্জন দিয়ে বিএনপিতে ফেরত যাননি; কিন্তু তাদের দলে ফেরাতে কম চেষ্টা
হয়নি। ২০১৮ সালের পর থেকে বিএনপিতে ‘বহিষ্কার’ আর ‘সাধারণ ক্ষমা’র লুকোচুরি খেলা চলছে।
এ যেন শুধু যাওয়া-আসার খেলা। কে কখন দল থেকে ছাঁটাই হচ্ছেন, কে দলে ফিরছেন, কেউ জানেন
না। একই অপরাধের জন্য একজনকে বহিষ্কৃত করা হচ্ছে অন্যজনকে দেওয়া হচ্ছে পুরস্কার। দলের
শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে যখন উপজেলায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া বিএনপির স্থানীয় নেতাদের
বহিষ্কার করা হচ্ছে, তখন একই অপরাধে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে দেওয়া হচ্ছে
পুরস্কার। বিএনপিতে গঠনতন্ত্র বলতে কিছু নেই। এক ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলছে দল।
যার ফলে সংগঠনে অবিশ্বাস, আতঙ্ক এবং হতাশা দানা বেঁধেছে। চরম পন্থা যে একটি রাজনৈতিক
দলের সাংগঠনিক শক্তিকে ক্ষয় করে বিএনপি তার প্রমাণ। বিএনপিতে মৃত্যুদণ্ড তাই ক্রমেই
অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
৭৫ বছর বয়সী আওয়ামী লীগ দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় ‘বহিষ্কার’ অস্ত্র ব্যবহার করে কদাচিৎ। লতিফ সিদ্দিকীর মতো গুরুতর এবং স্পর্শকাতর অপরাধ না করলে, আওয়ামী লীগ এই চরম শাস্তি প্রয়োগ করে না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের যেসব নেতা কাপুরুষতা করে অথবা লোভে খুনি মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়েছিল, শেখ হাসিনা ফিরে এসে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করেননি। দলে তাদের ধীরে ধীরে অপাঙক্তেয় করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেও আবদুল মান্নান কিংবা মেজর জেনারেল (অব.) শফিউল্লাহ মন্ত্রিসভায় জায়গা পাননি। এক-এগারোতে যারা প্রকাশ্যে শেখ হাসিনার বিরোধিতা করেছিল, তাদের বিএনপি স্টাইলে গণবহিষ্কার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট যে চার নেতা শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে বিদায় করার জন্য সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাদের ২০০৯ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। জাঁদরেল নেতারা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের আলংকারিক পদে জায়গা পেয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন। প্রয়াত মুকুল বোস, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, আখতারুজ্জামান, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মতো তারকা নেতাদের বহিষ্কার না করে মনোনয়নবঞ্চিত করা হয়। তাদের শাস্তি ছিল মৃত্যুদণ্ডের চেয়েও ভয়ংকর। দলে থেকেও তারা গুরুত্বহীন, বিশ্বাসঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হন। কর্মীদের উপেক্ষা আর টিপ্পনী সহ্য করে তাদের দল করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে তারা অপমানিত হয়েছেন। লাঞ্ছিত হয়েছেন। তিল তিল করে তাদের সাজা দেওয়া হয়। এই শাস্তি সহ্য করতে না পেরে মান্না, সুলতান মনসুর, আবু সাইয়িদের মতো নেতারা দল ত্যাগ করেছেন। দল ত্যাগের পর তারা রীতিমতো রাজনৈতিক উদ্বাস্তুতে পরিণত হন। আওয়ামী লীগের প্রায়শ্চিত্ত নানা মেয়াদে। অপরাধের গুরুত্ব এবং মাত্রা বিবেচনা করে প্রায়শ্চিত্তের সময় নির্ধারণ করা হয়। অনেককে ভুল শোধরানোর সুযোগ দেওয়া হয়। যেমন প্রয়াত মুকুল বোসের প্রায়শ্চিত্তকালীন সময় শেষ হলে, তাকে উপদেষ্টা পরিষদে ফিরিয়ে আনা হয়। লঘু অপরাধে অনুশোচনার শাস্তি ভোগ করা মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এখন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। আবার সাবের হোসেন চৌধুরী প্রায়শ্চিত্ত শেষ করে এখন মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছেন।
আরও পড়ুন: প্রচণ্ড তাপদাহে ১৪ দলে স্বস্তির বৃষ্টি
২০০৯ সালে মনোনয়ন না পাওয়া প্রয়াত খ
ম জাহাঙ্গীর পরবর্তী সময়ে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের এই প্রায়শ্চিত্ত শাস্তির
কয়েকটি তাৎপর্য আছে। প্রথমত, এই শাস্তির ফলে নেতাদের আত্মোপলব্ধির সুযোগ বটে। তারা
তাদের ভুল এবং বিভ্রান্তি উপলব্ধির সুযোগ পান। ফলে তারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেদের
শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়ত, এর ফলে দলের অন্য নেতারা একটি সতর্ক সংকেত পান।
চূড়ান্ত সুবিধাবাদ এবং আদর্শহীনতা একজন রাজনৈতিক নেতার ক্যারিয়ার কীভাবে গিলে খায়,
তার উদাহরণ সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে চর্চা হয়। অন্য কেউ দলের এবং নেতৃত্বের
বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের পরিণাম উপলব্ধি করেন। তৃতীয়ত, এর ফলে দলের প্রধান নেতার প্রতি
নিরঙ্কুশ আনুগত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সাজার কৌশলের পার্থক্য দল
দুটির বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থা দেখলেই বোঝা যায়। আওয়ামী লীগে কোন্দল আছে, আতঙ্ক নেই।
দলে দ্বন্দ্ব, বিভক্তি আছে, কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি চ্যালেঞ্জ জানানোর কেউ নেই।
সুবিধাবাদী আছে, আদর্শহীনতা আছে; কিন্তু প্রধান নেতার প্রতি আনুগত্যের ঘাটতি নেই। প্রতিপক্ষ
হীন রাজনীতির মাঠে ‘কোন্দল’ই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তৎপর রেখেছে। অন্যদিকে বিএনপির
চরম শাস্তির কৌশল নেতাকর্মীদের আতঙ্কের ঘরে বন্দি করেছে। সারা জীবন দলের জন্য অবদান
একটি ভুলে মূল্যহীন হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে দলে হতাশা ছড়িয়ে পড়ছে মহামারির মতো। দলে সবাই
কুণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। গণতন্ত্র চর্চার বদলে ষড়যন্ত্র
ডালপালা মেলেছে। যোগ্যতার বদলে চাটুকারিতা, তোষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আস্তে আস্তে
বিএনপি সংগঠনটি অস্তিত্বের সংকটে পড়ছে।
শুধু রাজনীতি নয়, কোনো ক্ষেত্রেই চরম শাস্তি সমাধান নয়। আর সেই শাস্তি যদি উপযুক্ত বিচার ছাড়াই হয়; তাহলে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। যে কারণে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, ঠিক একই কারণে, একটি ভুলেই দল থেকে বহিষ্কার মধ্যযুগীয় বর্বরতার শামিল। গণতান্ত্রিক ধারা বিশ্বাস করলে চরম অপরাধীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। তার কথাও শুনতে হবে। একটি গণতন্ত্র বিশ্বাসী রাজনৈতিক দল ফ্যাসিস্ট কায়দায় চলতে পারে না।
আওয়ামী লীগ বিএনপি জাতীয় সংসদ নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
দেশের মানুষের এমনিতেই নাভিশ্বাস অবস্থা। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ সংকটে চেয়েও বড় অস্থিরতা হলো জিনিস পত্রের দাম। অস্থির সময়ে মানুষের জন্য বিনোদনের কোন খোরাক নেই। তবে প্রধান নির্বাচন কাজী হাবিবুল আউয়াল মানুষের জন্য অস্বস্তির তাপদাহে এক পশলা বৃষ্টির মতো, বিনোদনের খোরাক যোগালেন। প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত ১৩৯ টি উপজেলার নির্বাচনের পর সাংবাদিকদের তিনি বললেন, ‘ধান কাটার কারণে অনেক ভোটার ভোট দিতে আসেননি।’ নিষ্প্রাণ উপজেলা নির্বাচনে সিইসির বক্তব্যই একমাত্র চমক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু আবার বাংলাদেশ সফরে আসছেন। নানা কারণে ডোনাল্ড লু বাংলাদেশে অত্যন্ত আলোচিত একটি নাম। বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তাঁর তৎপরতা বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছিল। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি একাধিক গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন এবং বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাঁর সরাসরি হস্তক্ষেপ এবং বেশ কিছু কথাবার্তা রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ বিএনপির পথে হাঁটল না। উপজেলা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করল না আওয়ামী লীগ। বরং কৌশলী অবস্থান নিয়ে ‘অপরাধী’দের উৎকণ্ঠায় রাখল। বিএনপি অবশ্য সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়া শুরু করেছে। উপজেলায় প্রার্থী হওয়া বিএনপির শতাধিক স্থানীয় নেতা এরই মধ্যে বহিষ্কৃত হয়েছেন। একজন রাজনৈতিক কর্মীর সর্বোচ্চ শাস্তি হলো ‘বহিষ্কার’। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়ে তৈমূর আলম খন্দকার বলেছিলেন, ‘বিনা বিচারে আমাকে দল থেকে বের করে দেওয়া হলো। এটা ক্রসফায়ার, বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড।’ বিএনপি এখন শৃঙ্খলা ভঙ্গের ব্যাপারে শূন্য সহিষ্ণুতা নীতিতে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দলের সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে ধীরে চলো নীতিতে। কোনটা সঠিক কৌশল?
একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন সবটুকু জীবনী শক্তি নিঃশেষ করে দেয়। সেই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি যদি হন রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী, তাহলে তো কথাই নেই। অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত টেনশনে শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায় প্রায়। আমার জন্য ৩০ এপ্রিল ছিলো তেমন একটি দিন। কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন। গত বছর ১৭ মে ‘কমিউনিটি ক্লিনিক: দ্য শেখ হাসিনা ইনিশিয়েটিভ’ হিসেবে জাতিসংঘে স্বীকৃতি পায়। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বললেন, এবার কমিউনিটি ক্লিনিকের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী করতে হবে ঘটা করে। তার মতে জাতিসংঘের এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের বিরাট অর্জন।