রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতির পর ডলার সংকটে পড়ে দেশ। ডলার সাশ্রয়ের নানা উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। তবুও রিজার্ভের ওপর চাপ কমছে না। বরং আমদানি বিল পরিশোধে প্রতিনিয়তই রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে।
গত সেপ্টেম্বরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে আসে। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ অথরাইজড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনকে (বাফেদা) ডলারের দাম নির্ধারণে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
তবে সংকট নিরসনের পরিবর্তে গত বছরের মার্চ থেকে তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। এতে ডলারের মজুত কমছেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশের রিজার্ভের পরিমাণ ৩০ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার।
চলতি সপ্তাহের শেষে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্যভুক্ত দেশ হিসেবে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন ডলার। আকু সদস্য দেশের মধ্যে রয়েছে- ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। শ্রীলঙ্কার অবস্থা শোচনীয় হওয়ায় তারা আকু থেকে বেরিয়ে গেছে।
সদস্য দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতি দুই মাস অন্তর আকু আমদানি বিল পরিশোধ করে থাকে। আকু বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ নামবে ২৯ দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলারে।
আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী- আন্তর্জাতিক গণনা পদ্ধতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আরও ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। তাহলে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়াবে ২৪ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফেরাতে আমদানি দায় কমানোর উদ্যোগসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবুও সংকট কাটছে না। ডলার বিক্রয়সহ অন্য খাতে ব্যয় কমাতে না পারলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বেই। এসব কারণে অর্থনীতিতে সংকট কাটছে না।
এদিকে, মঙ্গলবারও (২ মে) বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ বাংক। গত সপ্তাহে ডলারের দাম ছিল ১০৩ টাকা।
আইএমফকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী- আগামী জুনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম ১০৬ টাকা নির্ধারণ করতে পারে। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের মধ্যে ব্যবধান দুই টাকায় নেমে আসতে পারে। যেটি আন্তর্জাতিক মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত।
এতদিন প্রবাসী আয়ে (রেমিট্যান্স) ডলারের দাম ছিল ১০৭ টাকা। আর রপ্তানি আয়ে ছিল ১০৫ টাকা। এখন থেকে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে আবারও ডলারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবিবি ও বাফেদা। রোববার (৩০ এপ্রিল) এবিবি ও বাফেদার ভার্চুয়াল সভায় ডলারের দাম আরেক দফা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
নতুন এ সিদ্ধান্তের ফলে এখন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে দাম পাবেন ১০৮ টাকা, যেটা আগে ছিল ১০৭ টাকা। একইভাবে রপ্তানিকারকরা রপ্তানি আয়ের ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পাবেন ১০৬ টাকা, যা আগে ১০৫ টাকা ছিল।
নতুন এ সিদ্ধান্ত সোমবার (১ মে) থেকেই কার্যকর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন বাফেদার চেয়ারম্যান ও সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আফজাল করিম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে দেশে, যা দিয়ে পাঁচ মাসের বেশি আমদানি বিল পরিশোধ করা যাবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদন্ড তিন মাস। তবে দেশের মধ্যে ডলারের সংকট তৈরি হয়েছে, ডলার সাশ্রয়ে নীতি অবলম্বন করায় আমদানি বিলও কমে এসেছে।
মন্তব্য করুন
ব্যাংকগুলোর পিছু ছাড়ছে না তারল্য সংকট। দৈনন্দিন কার্যক্রম মেটাতেও
এখন ধার করতে হচ্ছে। গেল বুধবার (২৪ এপ্রিল) এক দিনে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ধার করেছে
২৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে
ধার করেছে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা।
কলমানি মার্কেট ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে বিভিন্ন স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি
ধার করেছে আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) এক ব্যাংক আরেক ব্যাংক
থেকে ধার করেছে ৪ হাজার কোটি টাকার বেশি।
সূত্র জানায়, ঈদের আগে ব্যাংকগুলোতে গ্রাহকের বাড়তি চাহিদা ছিল
টাকা তোলার। এ কারণে ওই সময়ে তারল্য সংকট বেড়েছিল। ঈদের পর গ্রাহকদের চাপ কমে গেছে।
তারপরও ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক একীভূত করার ঘোষণা দেওয়ায় দুর্বল ব্যাংক
থেকে গ্রাহকরা নগদ টাকা তুলে নিচ্ছেন। এমনকি দীর্ঘমেয়াদি সঞ্চয়ী প্রকল্পে জমা রাখা
অর্থও তুলে নিচ্ছেন। এতে করে কিছু দুর্বল ব্যাংকে তারল্য সংকট বেড়েছে। ওইসব ব্যাংক
এখন ধারের প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) কলমানি মার্কেট থেকে কিছু দুর্বল ব্যাংক
৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধার করেছে। এতে সর্বোচ্চ সুদ ছিল সাড়ে ৯ শতাংশ। সর্বনিম্ন সুদ
ছিল ৮ শতাংশ। এ সুদহার কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানাভাবে মৌখিক নির্দেশনা দিয়ে একটি সীমার
মধ্যে রেখে দিয়েছে। এছাড়া স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ধার করেছে প্রায় ২৫০ কোটি টাকা। এতে
সুদহার ছিল ১০ থেকে প্রায় ১২ শতাংশ।
এর আগে, ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এক দিনে সর্বোচ্চ ২৬
হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত ধার করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, ব্যাংকগুলো আমদানি ব্যয়
মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার কেনায় মোটা অঙ্কের অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আটকে
গেছে। এছাড়া বিভিন্ন ট্রেজারি বিল ও বন্ডেও বিনিয়োগ করেছে। ট্রেজারি বিল পুনরায় কিনে
নেওয়ার চুক্তি বা রেপোর আওতায় ওইসব অর্থ ব্যাংকগুলোকে স্বল্পমেয়াদে ধার দিচ্ছে।
এদিকে, ব্যাংকগুলোতে এখনো আমানত বাড়ার চেয়ে ঋণ বাড়ছে বেশি হারে।
ঋণ হিসাবে বিতরণ করা অর্থ আদায় হচ্ছেও কম। এসব কারণে ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট বেড়েছে।
এছাড়া বাজারে নিত্যপণ্যের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় মানুষের
সঞ্চয় করার মতো সক্ষমতা কমে গেছে। এমনকি আগের সঞ্চয় ভেঙে জীবিকা নির্বাহ করছে।
এতে করেও ব্যাংকে সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ছে না। পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংকগুলোতে নানা সংকটের কারণে গ্রাহকদের মধ্যে নানা ধরনের বিভ্রান্তিও তৈরি হয়েছে।
তারল্য সংকট ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংক
মন্তব্য করুন
দাম কমানোর একদিন পরই আবারও ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর করা হয়েছে।
নতুন দাম অনুযায়ী প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম পড়বে ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৯ হাজার টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৫ হাজার ২০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর আগে গত ২৩ এপ্রিল দুই দিনের ব্যবধানে ভরিতে ৩ হাজার ১৩৮ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৬ হাজার ২৯০ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১০ হাজার ৯৯৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৫ হাজার ১৪৩ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৬ হাজার ৫৮৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৪টা থেকে কার্যকর হয়েছিল।
আর গত ২১ এপ্রিল একদিনের ব্যবধানে ভরিতে ৬৩০ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৪ হাজার ৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ৭০৯ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৮ হাজার ৬৬২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছিল।
এছাড়া গত ২০ এপ্রিল সবচেয়ে ভালো মানের ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণ ৮৪০ টাকা কমিয়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৭৯৮ টাকা নির্ধারণ করেছিল বাজুস। আর ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ১৩ হাজার ৩৯৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ৯৭ হাজার ১৯৬ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৭৮ হাজার ২৪২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। যা সেদিন বিকেল ৩টা ৩০ মিনিট থেকে কার্যকর হয়েছিল।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই দেশের বাজারে ১২ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। যেখানে ৭ বার দাম বাড়ানো হয়েছে, আর কমানো হয়েছে ৫ বার। এর মধ্যে এপ্রিলেই দাম সমন্বয় হয়েছে ৭ বার। আর ২০২৩ সালে দাম সমন্বয় করা হয়েছিল ২৯ বার।
স্বর্ণ বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি বাজুস
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ ব্যাংক বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস বিসিএস
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন বাজুস
মন্তব্য করুন
দাম কমানোর একদিন পরই আবারও ভরিতে ২ হাজার ১০০ টাকা কমিয়ে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম ১ লাখ ১৪ হাজার ১৯০ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস)। বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ৫০ মিনিট থেকেই নতুন এ দাম কার্যকর করা হয়েছে।