"মুজিব প্রচন্ড ব্যস্ত। ক্লান্ত মানুষটি ঘরে ফিরলে রেণু তাঁর সেবাযত্ন করে, পরিপাটি করে তাঁর প্রিয় খাদ্যবস্তু যথাসাধ্য তাঁর সামনে তুলে দেয়, সারাদিনের কর্মব্যস্ততার কাহিনি শোনে। তারপর আলোচনা হয় ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে। রেণুকে সবকথা না বললে মুজিবের স্বস্তি নেই। রেণু বড় বুদ্ধিমতী। অনেক সময় আশ্চর্যজনকভাবে তাঁকে সুপরামর্শ দেয়। একারণে সবসময়েই রেণুর ব্যক্তিত্ব ও বুদ্ধিমত্তাকে মুজিব সর্বদা সম্মান ও মর্যাদা দিয়েছেন। জীবনের প্রথমে যেমন ছিলেন, শেষদিনে রাষ্ট্রপতিরূপেও একই আচরণ করেছেন প্রিয়তম সহধর্মিণীর প্রতি।"
উপর্যুক্ত
মর্মস্পর্শী ও তাৎপর্যপূর্ণ কথাগুলো
স্বাধীনতাত্তোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা
বিভাগের চেয়ারম্যান কালজয়ী বিদগ্ধা ব্যক্তিত্ব প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. নীলিমা ইব্রাহীমের।
প্রয়াত নীলিমা ইব্রাহীমের বলে যাওয়া কথাগুলো
যে যথার্থ, সে সম্পর্কে কয়েকটি
ঘটনার উদ্ধৃত করার আগে বলে
নিচ্ছি যে, বেগম মুজিবকে
তাঁর অনুরোধেই 'তুমি' সম্মোধন করতেন ড. নীলিমা ইব্রাহীম।
ছোট্ট বোনের মতো আদর করতেন
রেণুকে। তিনি লিখেছেন, কী
ছিল রেণুর ভেতর যা আমাকে
চুম্বকের মতো আকর্ষণ করেছিল?
আমি তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবের পত্নী হিসাবে কখনও অতিরিক্ত সমীহ
করিনি, প্রধানমন্ত্রীর বেগম হিসাবেও কুর্নিশ
করিনি, রাষ্ট্রপতির মহিষীরূপেও আভূমি আনত সালাম জানাইনি।
আমি শুধু রেণুকে ভালবেসেছি।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সবসময়ই
যেতাম অসীম শক্তিধর মহাপুরুষের
কাছে। কারণ যেকোন সমস্যা
হলেই তো কোনরকমে ওই
মহাপুরুষ বঙ্গবন্ধু পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলেই সমাধান। অনেক সময় সঙ্গে
সঙ্গে পাইনি, অপেক্ষা করতে হলে তখন
গিয়ে বসেছি রেণুর কাছে। রেণু আশাব্যঞ্জক কথা
বলে ধরে রাখতো - 'আপা,
বসুন এই তো এক্ষুণি
এসে যাবে।' একদিন অপেক্ষায় থেকে দেখলাম বঙ্গবন্ধু
লুঙ্গিপরা, গেঞ্জিগায়ে চটি ফটফট করতে
করতে সিঁড়ি দিয়ে উঠলেন। দেখে
বললেন, -'আপা কতোক্ষণ'? এই
শব্দ দু'টি সব
সময় ব্যবহার করতেন। আমি বললাম -'এত
রাতে একা এভাবে গিয়েছিলেন
কোথায়'?
কোথায়
আর যাব, এই তো
বোনের বাড়ি মণিদের ওখানে।'
ভয়ভীতি কোন শব্দই তাঁর
অভিধানে ছিল না।
১৯৬৯
সাল। তুমুল ছাত্র গণআন্দোলনের মুখে টালমাটাল পাকিস্তানের
লৌহমানব খ্যাত প্রেসিডেন্ট ফিল্ডমার্শাল আইউব খান। নানারকম কানাঘুঁষা সর্বত্র। এই পরিস্থিতিতে শেখ
ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্বামীকে সোজাসাপটা জানিয়ে দিলেন যে, "তুমি যদি এখন
প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পিন্ডি যাওয়া
স্থির কর - তাহলে আমি
ছেলেমেয়ে নিয়ে আত্মঘাতী হব।
তোমার একদিকে আইউব খান অন্যদিকে
জনগন। তোমার জনগণকেই বেছে নিতে হবে
- এটা আমারও দাবি।'
যাঁর
উদ্দেশ্যে এ অসীম সাহসী
উচ্চারণ তিনি তো আর
কেউ নন, তিনি শেখ
মুজিবুর রহমান।
ইতিহাস
এই মর্মে জানান দেয় যে - শেখ
ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের এই দুঃসাহসিক সিদ্ধান্তের
বদৌলতে শেখ মুজিবুর রহমানের
রাজনীতি গতিপ্রকৃতি ঐতিহাসিক রূপ পরিগ্রহ করেছিল।
শেখ মুজিবের রূপান্তর ঘটে বঙ্গবন্ধুতে। পতন
ঘটে আইউবের। নতুন সামরিক শাসক
জেনারেল ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে প্রবলবেগে ধেয়ে আসে ১৯৭০
এর জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচন।
আর সেই নির্বাচনের ফলাফলের
ফলশ্রুতিতেই বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠেন পাকিস্তানের
মূল প্রতিপক্ষ। আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের সংগ্রামে বিজয়ী হয়েও যখন বাঙালির
ক্ষমতালাভের স্বপ্ন ভুলুন্ঠিত হয়, এবং চালানো
হয় ববর্বরোচিত গণহত্যা- তখনই বঙ্গবন্ধু পরিণত
হন জাতির পিতায়। মূলত, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাকে কেন্দ্র করে ফুঁসে উঠেছে
পুরোদেশ। দিকবিদিকশুন্য মানুষ। ছাত্রজনতার আন্দোলন তুঙ্গে।চারদিকে কানাঘুঁষা। ঠিক সেই মুহূর্তে
মুজিবের প্যারোলে পিন্ডি যাওয়ার ছড়ানো ছিটানো কথাবার্তা। গণঅভ্যুত্থান তখনো সংঘটিত হয়নি।
ওই সময়ে পাকিস্তান সরকার
প্যারোলে মুক্তির প্রস্তাব আসে। আর বেঁকে
বসেন শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব।
সত্যিই প্যারোলে নয়, গণ-অভ্যুত্থানেই
শেখ মুজিবের মুক্তি মেলে। ১৯৬৯ সালের ২৩
ফেব্রুয়ারি দশ লক্ষাধিক ছাত্রজনতা
কর্তৃক "বঙ্গবন্ধু" হয়ে ওঠেন। গণ-অভ্যুত্থানের মহানায়ক ও ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের
আহবায়ক ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ
এক আবেগঘন বক্তৃতার মাধ্যমে শেখ মুজিবুর রহমানকে
'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করার প্রস্তাব করলে
মুহূর্মুহু করতালি ও গগনবিদারী শ্লোগানের
মাধ্যমে তা সমর্থন করে।
বেগম
ফজিলাতুন্নেছার স্বামীর বর্তমানে- অবর্তমানে নেতৃত্বের ওপর ছিলো ব্যাপক
প্রভাব। ১৯৭১ সালের ৭
মার্চের ভাষণদান
প্রশ্নেও তাঁর দূরদর্শী মতামত
ছিল। আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রযুব
নেতৃত্ব অর্থাৎ ছাত্রলীগের সাবেক এবং তৎকালীন নেতারা
সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে জোরালো মত দিলেও বঙ্গবন্ধু
শুধু শ্রবণ করেন। রাতে খাবার টেবিলে
অবস্থা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু নিজ সহধর্মিণীর মতামত
জানতে চান। ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে
বেগম মুজিব স্বামীকে বলেছিলেন,'তোমার মন থেকে যা
আসবে তাই বলবে।'
বেগম
ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের আরেক বিশিষ্ট ভুমিকার
কথা উল্লেখ না করলেই নয়।
১৯৫৬
সাল। তখনো পূর্ব পাকিস্তানে
চলচ্চিত্র শিল্প গড়ে ওঠেনি। বাংলা
সিনেমা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমদানি করা
হতো। উত্তম-সূচিতা জুটি তখন তুমুল
জনপ্রিয়। একদিন বেগম মুজিব তাঁর
স্বামীকে বললেন, "ভারতীয় ছবিগুলো দেখানো হচ্ছে বেশ ভালো, আমরা
বিনোদনের সুযোগ পাচ্ছি। তবে আমাদের দেশেও
তো প্রতিভা আছে। এ দেশেও
তো গড়ে উঠতে পারে
সিনেমা শিল্প, কেন হচ্ছে না?
প্রতিত্তোরে নবনিযুক্ত শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রী
শেখ মুজিব বললেন, সিনেমা করার জন্য যে
অবকাশ দরকার তা কোথায় এখানে?
বঞ্চনা তো সর্বক্ষেত্রেই। পার্টিশনের
আগে পশ্চিম পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ছিলো বোম্বেতে। কিন্তু
গত ৯ বছরে পশ্চিম
পাকিস্তানে গড়ে উঠেছে চলচ্চিত্র
শিল্প। কিছুূদিনের মধ্যেই শেখ মুজিব সরকারি
অর্থানুকূল্যে স্টুডিও গড়ার উদ্যোগ নেন।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী
লীগ সভাপতি ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে
এ বিষয়ে পরামর্শ করেন। ক'দিনের ব্যবধানে
"ফ্লিম ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (এফডিসি) নামে স্বায়ত্তশাসিত একটি
সংস্থা গঠনের অনুমোদন আসে কেন্দ্রীয় সরকারের
পক্ষ থেকে। সঙ্গে এক কোটি টাকার
অনুদান। বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
এভাবেই বিভিন্ন ভুমিকায় অবতীর্ণ ছিলেন।
প্রসঙ্গতঃ
প্রায় দুশো বছর আগেকার
যৌবনমদে মত্তা মধুমতীর লাস্যময়ী গতি থেকে জন্ম
হয় অববাহিক বাইগার শাখা স্রোতের, যা
পরে নদীতে পরিণতি লাভ করে। চঞ্চলা
মধুমতী তার ছন্দোময় লাস্যে
সরে যায় গ্রামের এ
প্রান্ত থেকে। তাই বাইগার এ
বনানীকুঞ্জের স্তন্য-দায়িনী ধাত্রী। এই ধীর স্নিগ্ধ
বাইগারের তীরে গড়ে উঠেছে
গ্রাম, জনপদ, আর সেই সঙ্গে
আম, জাম, কাঁঠাল, আমড়া,
পেয়ারা শোভিত মানববসতি। দূরে দূরে বট,
অশ্বত্থ বাঁশঝাড় যেন মধুবনী নিকুঞ্জ।
চারদিকে অবিরাম সঙ্গীতের ঝর্ণাধারার মতো পাখির কলকাকলি।
পূর্বের আকাশে আলো ফুটবার মুহূর্তে
গাছে গাছে ডানা ঝাপটা
না কতো নাম না
জানা পাখপাখালির নিদ্রাভঙ্গের আয়োজন। মোরগের ডাক 'গৃহস্থ জাগো'
আল্লাহকে স্মরণ করবার সময় হয়েছে, গ্রামবাসীকে
সজাগ করে। কোকিলের ডাকে
বাসিন্দারা বসন্তের আগামনী জানতে পারে, পথে ঝরে থাকে
শিউলী, বকুল, কখনও বালিকাবধূ তুলে
নিয়ে মালা গাঁথে। হঠাৎ
করে তাকে সজাগ করে
ডেকে ওঠে, চোখ গেল
চোখ গেল, ত্রস্ত হয়ে
গৃহবধূরা দৈনন্দিন কাজে হাত দেয়।
আবার কখনও বালিকাবধূ বিরহকাতর
হয়ে দাওয়ায় বসে, অভিমান ভাঙ্গায়
এই পাখিরা। 'বউ কথা কও'
বউ কথা কও'।
ইস্টকুটুম ইত্যাদি। এতোক্ষণ যে গ্রামের কথা
বললাম তার নাম টুঙ্গিপাড়া।
সেই
টুঙ্গিপাড়ায় বেড়ে ওঠা এক
মহীয়সী নারীর নাম শেখ ফজিলাতুন্নেছা।
সত্যিই জগৎসংসারে নিজেকে নিঃশেষে বিলিয়ে দেবার উদাহরণ খুবই বিরল। আর
তা যদি হয় স্বাধীনতার
জন্যে- স্বাধীনতার মহানায়কের জন্যে তাহলে তা তো অতি
বিরল! সেই অতি বিরল
মানুষটি বেগম ফজিলাতুন্নেছার
জন্ম আট আগস্ট। বেঁচে
থাকলে যাঁর বয়স তিরানব্বই
বছর। যাঁর জীবন বড়
বিচিত্র, বড় ঘটনা বহুল।
শেখ মুজিবের সঙ্গে তাঁর বিয়ের গল্পটাও
এক রূপকথার গল্প। শেখ মুজিবের বয়স
তের বছর। রেণুর বয়স
মোটে তিন।
উল্লেখ্য,
হযরত বায়েজিদ বোস্তামী পঞ্চদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ইসলাম প্রচারের
উদ্দেশ্যে চট্টগ্রামে (ইসলামাবাদ)আসেন। সঙ্গীদলের অন্যতম ছিলেন দরবেশ শেখ মোহাম্মদ আউয়াল।
বাগদাদের হাসানপুরে জন্মগ্রহণকারী শেখ আউয়াল বংশের
অষ্টম পুরুষ হলেন শেখ মুজিবুর
রহমান। শেখ আউয়াল ঢাকার
সোনারগাঁও এসে ঘাঁটি বাঁধেন।
তিনি বিয়ে করে সোনারগাঁও
বসবাস শুরু করেন। শেখ
আউয়ালের পুত্র জহিরউদ্দিন কোলকাতায় স্থায়ী নিবাস গড়ে তোলেন। জহির
উদ্দিনের পুত্র শেখ জান মাহমুদও
কোলকাতা পাইকারি ব্যবসায়ী ছিলেন। শেখ জান উদ্দিন
মাহমুদের পুত্র শেখ বোরহান উদ্দিন
পূর্ববঙ্গে আসেন এবং এখানেই
ব্যবসায় মনোযোগ দেন। একপর্যায়ে টুঙ্গিপাড়ার
কাজী পরিবারে বিয়ে করেন। শেখ
বোরহান উদ্দিনের তিন পুত্র শেখ
একরাম, শেখ তাজ এবং
শেখ কুদরত উল্লাহ। কুদরত পিতার ন্যায় কাজী পরিবারেই বিয়ে
করেন। তাঁর তিনপুত্র শেখ
মজিদ, শেখ হামিদ ও
শেখ রশিদ। শেখ মুজিবুর রহমানের
পিতা হলেন শেখ হামিদের
পুত্র। আর শেখ মুজিবের
মা হলেন শেখ মজিদের
কন্যা। অর্থাৎ শেখ মুজিবের পিতা-মাতা হলেন আপন
চাচাতো ভাইবোন। শেখ মুজিব এবং
শেখ ফজিলাতুন্নেছাও আপন চাচাতো ভাইবোন।
শেখ মুজিবুর রহমান নামটি রাখেন নানা শেখ আবদুল
মজিদ।
ঢাকা
থেকে ৬০ মাইল দক্ষিণ
পশ্চিমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া। শেখ রশিদ ভাইয়ের
পুত্র শেখ লুৎফরকে একদিন
বললেন, "তোমার বড় ছেলের সাথে
আমার নাতনী ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দিতে হবে। কারণ
আমি সমস্ত সম্পত্তি ওদের দুই বোনকে
লিখে দিয়ে যাবো।" রেণুর
দাদা শেখ লুৎফর রহমানের
চাচা। মুরব্বী বলে কথা। শেখ
মুজিবের সঙ্গে রেণুর বিবাহ রেজিস্ট্রি হলো। রেণুর বয়স
তখন তিন বছর। পাঁচ
বছর বয়সে রেণু তাঁর
মা হারান। ফলে সাত বছর
বয়সে রেণুকে নিয়ে আসা হয়
শেখ মুজিবের মা সায়েরা খাতুনের
কাছে। কন্যাস্নেহে সায়রা খাতুন ফজিলাতুন্নেছাকে
লালনপালন করেন। ১৯৪২ সালে শেখ
মুজিব ও শেখ ফজিলাতুন্নেসার
মধ্যে ফুলশয্যা হয়। যখন শেখ
মুজিব রাজনীতিতে জড়িয়ে গেছেন পুরোদমে। কলকাতা চলে যান এর
পরপরই। পাঁচ বছরের মাথায়
জীবনের এক মহামুহূর্ত হাজির
হলো- ২৮ সেপ্টেম্বর -১৯৪৭।
মুজিব-রেণু দম্পতির প্রথম
সন্তান শেখ হাসিনা ভুমিষ্ঠ
হলেন। মানুষের বেদনা ভিন্ন নয়, কিন্তু বেদনার
ঊর্ধ্বেও আছে মানুষের গৌরব।
দেশবিভাগের ঘোরে তন্দ্রাবেশী শেখ
মুজিব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন কলকাতায়।
টেলিগ্রাম পেয়েও সন্তান হবার খবরে খুশি
হলেও ছুটে আসতে পারেননি
সুশীতল ছায়াচ্ছন্ন টুঙ্গীপাড়ার নিজ ভিটেমাটিতে। চেতনা,
প্রতিজ্ঞা ও স্বপ্ন নিয়ে
কাজ করবার দিন হয়ে উঠেছিল
সেই সময়গুলো। উচ্ছ্বসিত কণ্ঠ ভেঙে গিয়েছিল
বাংলা বিভাগে। তাই সঙ্কুচিত কণ্ঠ
নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন
শেখ মুজিব। "আমার নেতা" বলে
সম্মোহিত করা হোসেন শহীদ
সোহরাওয়ার্দীর কাছ থেকে বিদায়
নিয়ে কলকাতার পাঠ চুকিয়ে ঢাকায়
ঘাট বাঁধেন শেখ মুজিব। ভালোদিন
পথের বাঁকেই অপেক্ষা করছে, যেন একটু এগিয়ে
যেতে হবে। দ্রুত মুজিবীয়
কণ্ঠের সাবলীল উচ্চারণ মানুষের মুখে মুখে, আড্ডায়-আলাপ ছাপিয়ে রাজনীতির
মাঠে ময়দানের উপাদান হয়ে উঠলো। সেবক
ও সহচরের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে
অজেয় শক্তিতে পরিণত করলো। আর এ ক্ষেত্রে
যিনি স্বামীকে পথ বাতলে দিলেন
তিনি বেগম ফজিলাতুন্নেছা। ভাষা
আন্দোলনের বীর শেখ মুজিব
কারামুক্ত হলেন। ১৯৫৩ সাল। স্বামীর
কাছে চিঠিতে ঢাকায় আসার ইচ্ছাপোষণ করলেন।
১৯৪৭
সালের ২৮ সেপ্টেম্বর শেখ
হাসিনা, ১৯৪৯ সালের ৫
আগস্ট শেখ কামাল ও
১৯৫৩ সালের ২৮ এপ্রিল জামালের
জন্ম হয়। তিন সন্তানের
জননী রেণু এক দীপ্ত
প্রতিষ্ঠিত গৃহিণী। এভাবে গ্রামে থেকে স্বামীকে ছন্নছাড়া
জেল-জুলুমের মুখে ঠেলে দেওয়াটা
সমীচীন মনে করলেন না।
কিন্তু শশুর বাঁধ সাধলেন।
রাগস্বরে বললেন, "রেণু, ওর নিজেরই কোন
স্থিতি নেই এখন এ
অবস্থায় তোমার যাওয়া ঠিক হবে না।
কিন্তু শেখ মুজিব নিজেই
গিয়ে নিয়ে আসলেন পত্নীকে।
উঠলেন ফুফাতো ভাই মমিনুল হক
খোকার ঢাকার ৮/৩ রজনী
বোস লেন, ঢাকার একটি
ছোট্ট বাসায়। ১৯৪৯ সালের ২৩
জুন রোজগার্ডেনে আওয়ামী লীগ গঠিত হলে
কারাগারে থেকেই তাঁর যুগ্ম সম্পাদক
হন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ
মুজিব। বাসার ছোট্ট কক্ষেই নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের দেনদরবার হতো। এরই মধ্যে
এলো যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী বিজয়। ১৯৫৪ সালের ১৪
মে সকাল দশটায় শেরেবাংলা
ফজলুল হকের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে
শেখ মুজিবও মন্ত্রী হন। রাতে আদমজীতে
সৃষ্টি করা হয় দাঙ্গা।
শেখ মুজিব ওদিনই রজনীবোস লেনের বাসা ছেড়ে ওঠেন
মিন্টোরোডের সরকারি বাসায়। কিন্তু দাঙ্গার পর ৯২-ক
ধারা প্রয়োগ করে মন্ত্রিসভা বাতিল
করে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী শেরেবাংলাকে আখ্যায়িত
করলেন পাকিস্তানের দুশমন হিসাবে। শেখ মুজিবকে বাসা
ছেড়ে নাজিরা বাজারে গিয়ে উঠলেন (প্রয়াত
মেয়র মোহাম্মদ হানিফের বাসায়)। কিন্তু মুজিব
পরিবার বেকায়দায় পড়ে গেলো। প্রবল
বন্যায় নাজিরা বাজার ডুবে গেছে। ফলে
তৎকালীন ঢাকা নগর আওয়ামী
লীগ সভাপতি হাফেজ মোহাম্মদ মুসার আরমানিটোলা বাড়িতে গিয়ে উঠতে হলো।
১৯৫৫
সালের ৬ সেপ্টেম্বর। পূর্ব
পাকিস্তানে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারে। শুধু
তাই নয় প্রধানমন্ত্রী হোসেন
শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারেও আওয়ামী লীগ। প্রাদেশিক সরকারে
শেখ মুজিবুর রহমান শিল্প, বাণিজ্য ও দুর্নীতি দমন
মন্ত্রী। এবার ওঠেন আব্দুল
গণি রোডস্থ সরকারি বাসভবনে। ভালোদিন পথের বাঁকেই অপেক্ষা
করছে, যেন একটু এগিয়ে
যেতে হবে। দ্রুত মুজিবীয়
কন্ঠের সাবলীল উচ্চারণ মানুষের মুখে মুখে, আড্ডায়-আলাপ ছাপিয়ে রাজনীতির
মাঠে ময়দানের উপাদান হয়ে উঠলো। সেবক
ও সহচরের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়ে
অজেয় শক্তিতে পরিণত করলো। কিন্তু পরিবারের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্প্রীতির মায়াজাল তাতে ছিন্ন হলো।
একজন ছিপেছিপে, দীর্ঘদেহী, ঘন ওল্টানো চুল
মাথায়, খবরের কাগজ হাতে দাঁড়ানো
শেখ মুজিব বক্তৃতায় বক্তৃতায় একদিন স্বপ্ন দেখলেন বাঙালি জাতির দেশ ও রাষ্ট্রস্বপ্নের
কথা। ১৯৫৩ সালে শেখ
মুজিবের পরিবারের ঢাকায় আসা। কবি সুফিয়া
কামাল যেদিন নারী শিক্ষা মন্দিরে
(বর্তমান শেরে-বাংলা বালিকা
বিদ্যালয়) শেখ হাসিনার হাতে
শিক্ষার প্রদীপ জ্বলে দিয়েছিলেন, সেদিনও মেয়ের পাশে ছিলেন শুধু
মা। বাবা শেখ মুজিব
ছিলেন কারাগারে। আজকের যে প্রাণবন্ত একটি
মানুষ শেখ হাসিনা। তার
কারিগর মা ফজিলাতুন্নেছা। যার
হাসিমাখা শ্যামলীময়া মুখখানিতে মায়েরই প্রতিচ্ছবি। আত্মপরিচয় এবং আত্মস্বার্থ কতখানি
বিসর্জন দিয়ে শেখ হাসিনার
সেবক হয়ে ওঠাও যেনো
মায়ের আদর্শ ব্রত হয়ে পাওয়া।
স্বামীর নিত্য সাহচর্যে ছিলেন না ফজিলাতুন্নেছা। রয়েছে
তার ঘটনা পরস্পরা ও
অশ্রুতপূর্ব বিরল
বিষাদময় কত জানি ঘটনা। সর্বংসহা,
ধৈর্যের প্রতিমূর্তি, শত দুঃখ-কষ্টের
মধ্যেও যাকে দেখা যায়নি
এক মুহূর্তের তরে বিচলিত,
সংগ্রামী
স্বামীকে অহর্নিশ প্রেরণাদানকারী, মরণেও হয়েছেন যার সঙ্গী, সেই
রমনী ফজিলাতুন্নেসার পরিবারের গল্পে অশ্রুসজল হয়ে ওঠে আমাদের
মানবিক চোখ। বেগম ফজিলাতুন্নেছা
মুজিব ছিলেন সদা হাস্যোচ্ছ্বল এক
প্রাণময়ী নারী। পুরুষোত্তম স্বামীর সংগ্রামী আদর্শে উজ্জীবীত মহীয়সী নারী। তাইতো সর্বংসহা
মায়ের অসীম ধৈর্যই বুঝি
শেখ হাসিনার জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যাবার পুঁজি। আজ পিতার সোনারবাংলা
গড়ার দৃপ্ত শপথ নেয়া চতুর্থবারের
প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা যখন
বিয়ের পিঁড়িতে, তখন পিতা শেখ
মুজিব ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে
বন্দী। ১৯৬৭ সালের কথা।
ফজলুল হক হলের ভিপি
এমএ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ের
বন্দোবস্তটা মূলত তৎকালীন ছাত্রলীগ
নেতারাই করেছিলেন বেগম মুজিবের পরামর্শে।
আত্মীয়-পরিজনহীন বিয়ের আসরের নাটকীয় পরিবেশ হয়তো কোন দিন
মুছে যাবার নয়। চট্টগ্রামে বিবাহোত্তর
সংবর্ধনার মধ্য দিয়ে যার
মধুরেণ সমাপয়েৎ। ১৯৬৭ সালে ইডেন
কলেজ ছাত্রী সংসদ নির্বাচনে ভিপি
পদে মেয়ে শেখ হাসিনার
জয়ের খবরটিও পৌঁছে দিয়েছিলেন কারাগারে অন্তরীণ স্বামীকে। আগরতলা ষষড়যন্ত্র মামলার পর একাত্তর। ধানমণ্ডির
৩২ নম্বর ছেড়ে ১৮ নম্বর
রোডের বাসাতে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রহরায় অন্তরীণের দুঃসহ দিনগুলোর কথা। পহেলা এপ্রিল
থেকে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব
জামাতা এম এ ওয়াজেদ
মিয়া শেখ হাসিনা, শেখ
রেহানা ও শেখ রাসেলকে
নিয়ে খিলগাঁও চৌধুরীপাড়ায় একটি বাসায় ওঠেন।
১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই রাত
আটটা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালে ডা. ওয়াদুদের তত্ত্বাবধানে
জন্ম হলো জয়ের। পাশে
ছিলেন লিলি ফুপু বঙ্গবন্ধুর
ছোট বোন এটিএম সৈয়দ
হোসেনের স্ত্রী)। নানী ফজিলাতুন্নেসা
মুজিব আদুরে নাম রাখেন স্বামীর
সঙ্গে মিলিয়ে সজিব। শেখ হাসিনা তার
সঙ্গে জুড়ে দেন তার
স্বামীর নাম ওয়াজেদ। সেই
সজীব ওয়াজেদ জয় ডিজিটাল বাংলাদেশের
স্বপ্নদ্রষ্টা। যে বাংলাদেশ তার
মায়ের নেতৃত্বে হাঁটছে স্মার্ট বাংলাদেশ বির্নিমানে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আজ থেকে চার বছর আগে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মোকাবেলায় প্রায় সব দেশেই জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল যার জের আজও চলছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা এতোই তীব্র যে, কে কখন আক্রান্ত হয়েছে বা কে নীরব আক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে আছে তা তাৎক্ষণিক যাচাই করাও কঠিন ছিল। পরীক্ষার সীমিত ব্যবস্থাদি বা সুযোগের সীমাবদ্ধতার প্রধান কারণ সবগুলো দেশ প্রায় একই সাথে আক্রান্ত হয়েছে ও পরীক্ষার কীট ও যন্ত্রপাতি সব দেশে সমান্তরাল রীতিতে বিতরণ নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্যে এই সঙ্কট আরও জটিল কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে আয়ত্তাধীন রাখতে সক্ষম হয়েছে।
কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশের সাধারণ স্বাস্থ্য ও হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থার নিয়মগুলো সঠিকভাবে বজায় রাখা। কোভিড ও নন-কোভিডের পার্থক্য নিরূপণ প্রথম শর্ত না কি মানুষের স্বাস্থ্য জটিলতার আপাত নিরসণ কাম্য – এই নিয়ে সরব তর্ক চলেছে দেশ জুড়ে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসক সমাজকে সংখ্যানুপাতে বেশী মানুষের সেবা দিতে হয় ও তাঁদের ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কোন অংশে কম নয়। শুধু চিকিৎসকই নয়, স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত অন্যান্য জনশক্তির সংখ্যা সামর্থ্যও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। বাংলাদেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত একটি বিপুল জনগোষ্ঠী ও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের পরিবারের সদস্যগণও আক্রান্ত হয়েছেন। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মী মারাও গেছেন যা বাংলাদেশের জন্যে অপূরণীয় ক্ষতি। আমাদের এ-ও বিবেচনায় রাখতে হবে পরিবারের কোন সদস্য আক্রান্ত হলে বা দুর্ভাগ্যবশত মারা গেলে সমগ্র পরিবারেই তার প্রভাব পড়ে ফলে স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কর্মীদের পারিবারিক দুর্গতি ও মানসিক স্বাস্থ্যের কথাও আমাদের ভাবতে হবে।
ফলে আমরা চিকিৎসা কেন্দ্রে তখন রোগী কম দেখে বা চিকিৎসকদের একটি নিয়মের মধ্যে সেবা দিতে দেখে পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে বলে যে হইচই করেছি তা বাস্তবসম্মত ছিল না। যেমন ধরুন, করোনা পরিস্থিতির আগে আমাদের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোর যে উপচে পড়া ভিড়ের চিত্র আমরা দেখেছি শেষের দিকে তা ছিল না। এর অন্যতম প্রধান কারণ আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বেড়েছে ও বেশিরভাগ মানুষ উপসর্গ অনুযায়ী বাড়ি বসে চিকিৎসা নিয়েছে ও যথাসম্ভব ভালো থেকেছে। সামান্য উপসর্গে মানুষের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার যে সাধারণ প্রবণতা তা অনেক কমে এসেছে ও তাতে চিকিৎসকদের উপর চাপও কমেছে। আমার বন্ধু চিকিৎসকদের অনেকেই বলেছেন তখন শান্তিতে অন্তত মনোযোগ দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পেরেছি, আগে এতো ভিড়ের চাপে রোগী সামলানো কঠিন ছিল। সবচেয়ে বড়ো কথা, চিকিৎসকগণ সানন্দে এগিয়ে এসেছেন যাতে সাধারণ মানুষ ঘরে বসেই ফোনের মাধ্যমে তাঁদের পরামর্শ সেবা পেয়ে ভালো থাকেন। বাংলাদেশের অনেক চিকিৎসক বিনামূল্যে এই সেবা দিয়েছেন এমন কি মোবাইল ফোনের ভিডিওতেও রোগীর সাথে কথা বলে, লক্ষণের সামগ্রিক বিবরণ শুনে ব্যবস্থাপত্র দিয়েছেন ও ফলো-আপ করছেন। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে রোগীকে চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবার পরামর্শও দিয়েছেন।
এই বাস্তবতা মাথায় রেখে আমাদের বুঝতে হবে চিকিৎসা কেন্দ্রে বেশী মানুষের উপস্থিতি চিকিৎসার মান মোটেও নিশ্চিত করে না বা ব্যবস্থাপনার সাফল্য নির্দেশ করে না। অসুস্থ বা রোগপ্রায় মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়ে ও যথাযথ চিকিৎসা সেবা দিতে পেরে যুগপৎ জনসাধারণ ও চিকিৎসক সমাজ কতখানি নিশ্চিত বোধ করছেন সেখানেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সাফল্য নির্ভর করে। ফলে আমাদের সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন নিশ্চিত করতে হবে যেখানে দেশের সব মানুষ সেবার আওতায় আসবে। আমার বিশ্বাস গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতার আলোকে দূর-নিরীক্ষণ পরামর্শ সেবা তা নিশ্চিত করতে পারে যা মোবাইল ফোন, ভিডিও কথোপকথন ওই ইন্টারনেটের অন্যান্য সুবিধা দিয়ে নিশ্চিত করা যায়।
স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরামর্শ সেবার বহির্বিভাগের চাপ কমাতে আরও বিনিয়োগ না বাড়িয়েও আমরা খুব সহজে ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা সম্প্রসারণ করতে পারি কারণ সরকারের উদ্যোগে এখন প্রায় সব গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উচ্চ গতির ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে। একটি গ্রামের প্রশিক্ষিত ও সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত স্বাস্থ্যকর্মী ইন্টারনেট পরিষেবায় শারীরিক লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ তৈরি করিয়ে দিতে পারে (শুধু লক্ষ্য রাখতে হবে সেসব চিকিৎসক যেন সরকার স্বীকৃত নিবন্ধনপ্রাপ্ত হয় নতুবা এই সেবায় এক শ্রেণীর ফড়িয়া চিকিৎসা সেবার নামে প্রতারণাও করতে পারে)। একটি কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ থেকে চিকিৎসকের তথ্য নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশে প্রাথমিক পরামর্শ সেবা ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব। আর এই সেবার বাস্তবায়ন, তত্ত্বাবধান ও মনিটরিং-এর দায়িত্ব দেয়া যাবে নানা স্তরে- কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোকে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় এরকম একটি দূর-নিরীক্ষা চিকিৎসা পরামর্শ সেবা ২০০৯ সাল থেকে চালু আছে খুলনা ও বাগেরহাটের গ্রামাঞ্চলে। ‘আমাদের গ্রাম’ পরিচালিত এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে একটি মডেল হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। পরামর্শের জন্যে আগত সকল রোগীর বিস্তারিত তথ্য একটি নির্ধারিত ইন্টারনেটভিত্তিক সফটওয়্যারে সংরক্ষিত থাকে। এরকম ক্ষেত্রে কেবল চিকিৎসার দ্বিতীয় ধাপে সন্দেহভাজন বা সম্ভাব্য রোগীকে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের এরকম আরও অনেক অভিজ্ঞতা দেশের নানা স্থানে ছড়িয়ে আছে যেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ও আধুনিক ভাবনার সাথে মিলিয়ে আমরা একটি নতুন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারি। এখানে একটি বিষয় হয়তো সামনে আসবে সে হলো চিকিৎসার নৈতিক শর্ত যা হলো রোগীকে উপস্থিত স্পর্শ করে পরীক্ষা করা যাকে আমরা ‘ইন্টারমেডিয়ারী’ বলি তা কেমন করে নিশ্চিত হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে প্রযুক্তির হাতে তাপমাত্রা নিরীক্ষণ বা নাড়ী নিরীক্ষণ-সহ অনেক চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা অনেক আগেই আমরা ছেড়ে দিয়েছি। সে ক্ষেত্রে একজন প্রশিক্ষিত ও নিবন্ধিত স্বাস্থ্য কর্মী শর্ত অনুযায়ী যেটুকু নিরীক্ষা করা সঙ্গত তার একটি প্রাথমিক নীতিমালা/গাইডলাইন নিশ্চয়ই আমরা তৈরি করে নিতে পারি।
দেশের বেশিরভাগ মানুষের জন্যে একটি উপযুক্ত দূর-নিরীক্ষণ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা প্রক্রিয়া গঠন ও তা মানসম্মত উপায়ে সমুন্নত রাখা এখন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। সদাশয় সরকার ও আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিকল্পনার সাথে যুক্ত সকলে মিলে এই ভাবনার বাস্তব ও নীতিসঙ্গত উপায় তৈরি করে নেয়া এখন জরুরি। আশা করি সংশ্লিষ্ট সবাই বিষয়টি ভেবে দেখবেন।
--রেজা সেলিম
পরিচালক, আমাদের গ্রাম গবেষণা প্রকল্প
দূর-নিরীক্ষণ স্বাস্থ্য সেবা রেজা সেলিম মতামত মাটির টানে
মন্তব্য করুন
আশ্রয়ণ প্রকল্প বিতর্ক আম্পায়ারিং
মন্তব্য করুন
প্রকাশ: ০১:০১ পিএম, ১১ জুন, ২০২৪
আজ ১১ জুন। এদিন দীর্ঘ ১১ মাস জেল খাটার পর দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জেল থেকে মুক্তি পান। এই মুক্তিটি অনেক অর্থ বহন করে। এই ১১ মাসে তাকে মূলত যে মানসিক কষ্ট দেয়া হয়েছে তা চিন্তার বাইরে। সেসময় তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলার সমস্ত রকমের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন তিনি কোন অন্যায় করেননি এবং করেন না। জনগণের মঙ্গলের জন্যই তিনি কাজ করেছেন এবং কাজ করে চলেছেন।
আমরা
যখন জেলাখানায় তাকে দেখতে যেতাম
সেসময় তিনি আমাদের মুখ
কালো দেখলেই বলতেন, ‘আপনাদের মুখ কালো কেন?’
এরকমভাবেই তিনি আমাদের উজ্জীবিত
করতেন। আমি অবাক হয়ে
তখন ভাবতাম, তিনি জেলে থাকার
কারণে আমাদের মন খারাপ আর
উল্টো তিনি আমাদের সৎ
সাহস দিচ্ছেন যে তিনি সৎ
পথে আছেন তার কিছুই
হবে না এবং তিনি
কারামুক্ত হবেন। এজন্য কারামুক্তি দিবসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি
জেলে থাকতেই তার দার্শনিক চিন্তাকে
কিভাবে বাস্তবে রূপান্তরিত করবেন সেই সব বিষয়গুলো
ঠিক করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন
তাঁর কারামুক্তির পরই নির্বাচন হবে
এবং নির্বাচনে কাদের মনোনয়ন দিবেন সেটির চিন্তাও তিনি সেসময় করে
রেখেছিলেন। তাছাড়া ‘আমার বাড়ি আমার
খামার’ থেকে শুরু করে
বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, কমিউনিটি ক্লিনিক, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প’ গুলোর মতো জনবান্ধব কর্মসূচির চিন্তা
তিনি জেলে থাকতেই ঠিক
করে রেখেছিলেন।
২০০৮
সালের ১১ জুন থেকে
২০২৪ সালের ১১ জুন পর্যন্ত
যদি চিন্তা করি তাহলে একটি
জিনিস খুবই পরিষ্কার হয়ে
যায়। তাহলো আজকের বাংলাদেশের অপর নাম শেখ
হাসিনা। এটি তিনি রূপান্তরিত
করতে সক্ষম হয়েছেন। একারণেই ১১ জুন বারবার
মনে করা দরকার। এবং
এটি মনে করে আমাদের
নতুনভাবে উজ্জীবিত হয়ে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক
শেখ হাসিনার প্রতিটি কাজে অত্যন্ত আন্তরিক
এবং সততার সাথে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ
করতে হবে। না হয়
আমরা আমাদের বিবেকের কাছে অপরাধী হবো।
অপরাধী হবো বঙ্গবন্ধুর কাছে
এবং বঙ্গবন্ধু
কন্যা শেখ হাসিনার কাছে।
কেননা আমরা দাবি করি,
আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাস করি এবং আমাদের
চলার পথে পাথেয় হচ্ছেন
শেখ হাসিনা। এই যদি বলি
তাহলে দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার দর্শনকে
এড়িয়ে ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য নিয়ে চলি তাহলে
আমরা আমাদের বিবেকের কাছে দায়ী।
জিল্লুর
রহমান, মতিয়া চৌধুরী, আতাউর রহমান খান কায়সার, সৈয়দ
আশরাফ, হাছান মাহমুদ থেকে শুরু করে
অনেকেই সেসময় দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার মুক্তির
জন্য চেষ্টা করে গেছেন। আর
অনেকেই ভেবেছিল, বিভিন্ন ষড়যন্ত্র শেখ হাসিনাকে অন্ধকার
টানেলের ভেতরে ফেলে দিতে সক্ষম
হয়েছে যেখান থেকে তিনি আর
বেরোতে পারবেন না। তারা যে
সংস্কারবাদী হয়েছিল সেটি ষড়যন্ত্রের অংশ।
তারা হয়তো ভেবেছিল কোন
দিন শেখ হাসিনা আর
আলোর মুখ দেখবে না।
সেই
সকল ভেতরের ষড়যন্ত্র, বাইরের ষড়যন্ত্র, ভবিষ্যতের দেশ গড়ার যে
পরিকল্পনা সমস্ত কিছুই দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা একা
সামলেছেন। আমি বিশ্বাস করি
১১ জুন আমাদের শিক্ষা
দেয় দেশ গড়ার যদি
মানসিকতা থাকে এবং মনের
দৃঢ়তা থাকে তাহলে কোন
বাধায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়
না। দেশ গড়ার জন্য
শেখ হাসিনা গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। অর্থাৎ মানুষের মৌলিক যে চাহিদা তার
প্রত্যেকটির ব্যবস্থা করেছেন। এটিই হচ্ছে দার্শনিক
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার বড়
প্রাপ্তি। যদিও তিনি বলেন,
এগুলো জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি উৎসর্গ করেন।
সেজন্য আমি বলবো, আজকের
বাংলাদেশের অপর নাম শেখ
হাসিনা।
কারামুক্তি দিবস শেখ হাসিনা এক এগারো ওয়ান ইলাভেন দেশ গড়ার শিক্ষা
মন্তব্য করুন
স্বেচ্ছায় ক্যাডার চাকুরী ছেড়ে দেয়ার অনেক নজির রয়েছে। কিন্তু স্বেচ্ছায় পদাবনতি। স্বেচ্ছায় ক্যাডার চাকুরী ছেড়ে নন ক্যাডার চাকুরী গ্রহণ। এসব খবর সচরাচর শোনা যায় না। সম্প্রতি বিসিএস তথ্য ক্যাডারের একজন কর্মকর্তা ক্যাডার চাকুরী ছেড়ে দিয়ে সাব রেজিস্ট্রার হয়েছেন। সাব রেজিস্ট্রার পদটি নন ক্যাডার ভুক্ত। পদোন্নতির সম্ভাবনা সীমিত। কিন্তু এখানে নিজের অর্থনৈতিক উন্নতির অপার সম্ভাবনা। বিয়ের বাজারেও খুব দাম। অফিস কক্ষটিতে একটা আদালত ভাব রয়েছে। সভা কক্ষটি যেন একটি এজলাস। শান শওকত মন্দ নয়। আশে পাশে শুধু টাকা আর টাকা। বোধ করি সেজন্যই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিরাট হৈচৈ। সবাই তাকে নিয়ে ট্রল করছে। অনেকেই বলছেন, তিনি বুদ্ধিমান, তিনি স্মার্ট। টাকার খনির মালিক হবার জন্য তার এ স্বেচ্ছায় পদাবনতি।
টি-২০ ফরম্যাটে যে কোন দল অন্য দলকে হারাতে পারে। তাই বলে র্যাংকিং এর ৮৮ নম্বরের একেবারে তলানির দল ক্রোয়েশিয়া, এক নম্বর দল ভারতকে হারাবে সেটি নিশ্চয়ই কেউ বিশ্বাস করবে না। ব্যতিক্রম যে হয় না, তা নয়। যেমন ৭ নম্বর দল পাকিস্তান সেদিন ১৭ নম্বর দল আমেরিকার কাছে হেরেছে। সেসব ব্যতিক্রম সব সময় হয় না, কালে ভদ্রে হয়।
আজ থেকে চার বছর আগে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মোকাবেলায় প্রায় সব দেশেই জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষা একটি চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়েছিল যার জের আজও চলছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের মাত্রা এতোই তীব্র যে, কে কখন আক্রান্ত হয়েছে বা কে নীরব আক্রান্তের ঝুঁকির মধ্যে আছে তা তাৎক্ষণিক যাচাই করাও কঠিন ছিল। পরীক্ষার সীমিত ব্যবস্থাদি বা সুযোগের সীমাবদ্ধতার প্রধান কারণ সবগুলো দেশ প্রায় একই সাথে আক্রান্ত হয়েছে ও পরীক্ষার কীট ও যন্ত্রপাতি সব দেশে সমান্তরাল রীতিতে বিতরণ নিশ্চিত করা যাচ্ছিল না। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্যে এই সঙ্কট আরও জটিল কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সময়োচিত পদক্ষেপ নেয়ার ফলে বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে আয়ত্তাধীন রাখতে সক্ষম হয়েছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হয়েছে। প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টটি চলছে আমেরিকায়। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি ২০টি দল খেলছে এ টুর্নামেন্টে। বাংলাদেশ ইতিমধ্যে দুটি খেলেছে। একটিতে জয়। আরেকটিতে হার। জয়টি নিয়ে যতটা না আলোচনা, হারটি নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তার চেয়ে ঢের বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষের খেলাটির আম্পায়ারিং নিয়ে তুমুল সমালোচনা। আম্পায়ার কেন মাহমুদউল্লাহকে আউট দিল। ভুল আউট টি না দিলে বাংলাদেশ চার রান পাওয়া থেকে বঞ্চিত হয় না। চার রান পেলে বাংলাদেশ ম্যাচটি জিতে যেত। আম্পায়ার কেন কয়েকটি ওয়াইডও দেয়নি যা ওয়াইড ছিল। এসবের মধ্যে আরেকটি ক্রিকেট ম্যাচ দেখলাম ছিন্নমূল, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের মাঝে দলিলসহ জমি-ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে। অন্যান্য ক্রিকেট ম্যাচের মত এ অনুষ্ঠানটিও টিভিতে সরাসরি সম্প্রচার হচ্ছিল। সেখানেও ছিল বিতর্কিত আম্পায়ারিং।
আজ ১১ জুন। এদিন দীর্ঘ ১১ মাস জেল খাটার পর দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা জেল থেকে মুক্তি পান। এই মুক্তিটি অনেক অর্থ বহন করে। এই ১১ মাসে তাকে মূলত যে মানসিক কষ্ট দেয়া হয়েছে তা চিন্তার বাইরে। সেসময় তাকে মানসিকভাবে ভেঙ্গে ফেলার সমস্ত রকমের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তিনি অত্যন্ত সুদৃঢ় ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন তিনি কোন অন্যায় করেননি এবং করেন না। জনগণের মঙ্গলের জন্যই তিনি কাজ করেছেন এবং কাজ করে চলেছেন।